পিতামাতাদের ভূমিকা
নিঃসন্দেহে, আজকের সমাজে সন্তানদের এক ভারসাম্যপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত করার জন্য প্রতিপালন করা সহজ কাজ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থা সফল হিসাবে বিবেচিত পিতামাতাদের উপর কৃত এক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছিল—যাদের সন্তানদের বয়স ২১ বছরের বেশি ছিল ও যাদের “সকলেই সক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক ছিল, যারা স্পষ্টতই আমাদের সমাজের সাথে উত্তম সমন্বয়সাধন করে চলছিল।” এই পিতামাতাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ‘আপনাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অন্যান্য পিতামাতাদের আপনারা কোন্ সর্বোত্তম
পরামর্শটি দেবেন?’ সর্বাপেক্ষা স্বচ্ছন্দ উত্তরগুলি ছিল এইরকম: ‘প্রচুরভাবে ভালবাসুন,’ ‘গঠনমূলকভাবে শাসন করুন,’ ‘একত্রে সময় অতিবাহিত করুন,’ ‘আপনার সন্তানকে সঠিক ও ভুলের প্রভেদ সম্বন্ধে শেখান,’ ‘পারস্পরিক সম্মান বিকশিত করুন,’ ‘প্রকৃতই তাদের কথা শুনুন,’ ‘বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে নির্দেশনা প্রদান করুন’ এবং ‘বাস্তববাদী হোন।’যাইহোক, এক উত্তম-সমন্বয়িত প্রাপ্তবয়স্ক যুবক ব্যক্তি গড়ে তুলতে কাজ করার জন্য কেবলমাত্র পিতামাতারা একাই জড়িত নন। এই ক্ষেত্রে শিক্ষকেরাও একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। একজন অভিজ্ঞ বিদ্যালয় উপদেষ্টা বলেছিলেন: “আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্যটি হল পিতামাতাদের এক দায়িত্বপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক যুবক ব্যক্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করা যারা বৌদ্ধিক, শারীরিক ও আবেগগতভাবে পূর্ণ-বিকশিত।”
সুতরাং পিতামাতা ও শিক্ষকেরা সমস্ত যুবকদের গড়ে তোলার অভিন্ন লক্ষ্যে অংশগ্রহণ করেন যারা পরবর্তী জীবনে পরিপক্ব ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত হবে এবং তাদের জীবন উপভোগ ও যে সমাজে তারা বাস করে সেখানে তাদের উপযুক্ত স্থানটি খুঁজে নিতে সমর্থ হবে।
সহকার্যকারী, প্রতিযোগী নয়
কিন্তু, সমস্যার সৃষ্টি হয় যখন পিতামাতারা শিক্ষকদের সাথে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হন। উদাহরণস্বরূপ, কিছু পিতামাতারা তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন; অন্যেরা শিক্ষকদের সাথে প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করেন। এই পরিস্থিতিটি সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে একটি ফরাসী পত্রিকা বলেছিল: “শিক্ষকই এখন আর মঞ্চের একমাত্র পরিচালক নন। পিতামাতারাও তাদের সন্তানদের সাফল্যে আবিষ্ট হয়ে পড়েন, পাঠ্যপুস্তক বিশ্লেষণ করেন, শিক্ষণ পদ্ধতির বিচার ও সমালোচনা করেন এবং তাদের সন্তানদের খারাপ মানের জন্য ত্বরিত প্রতিক্রিয়া দেখান।” এইধরনের কাজগুলি শিক্ষকের পদমর্যাদার প্রতি অবৈধ হস্তক্ষেপ হতে পারে।
যিহোবার সাক্ষীরা মনে করেন যে তাদের সন্তানেরা আরও বেশি উন্নতি করতে পারে যখন পিতামাতারা তাদের সন্তানদের শিক্ষার প্রতি এক সক্রিয়, উপকারজনক আগ্রহ দেখিয়ে শিক্ষকদের সাথে সহযোগিতা করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে এইধরনের সহযোগিতা, বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ একজন শিক্ষক হিসাবে আপনার কাজ ক্রমবর্ধিতভাবে কঠিন হয়ে উঠেছে।
আজকে বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলি
সমাজের একটি অংশ হিসাবে যখন বিদ্যালয় নিজেকে প্রতিফলিত করে তখন সাধারণভাবেই সামাজের সমস্যাগুলি থেকে এটি নিষ্কৃতি পায় না। বছরের পর বছর ধরে সামাজিক সমস্যাগুলি দ্রুতগতিতে তীব্রতর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস বিবৃতি দেয়: “ছাত্রেরা শ্রেণীকক্ষে ঘুমায়, তারা বিদ্যালয়ের স্লোগান লেখার দেওয়ালে একে অপরকে হুমকি দিয়ে লেখে, ভাল ছাত্রদের ছোট চোখে দেখে। . . . প্রায় সমস্ত ছাত্রদেরই শিশুদের দেখাশোনা, কারারুদ্ধ পিতামাতার মোকাবিলা ও দলগত দৌরাত্ম্য থেকে সুরক্ষিত থাকার মত সমস্যাগুলির সাথে মোকাবিলা করতে হয়। যে কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রায় এক পঞ্চমাংশ ছাত্র অনুপস্থিত থাকে।”
বিদ্যালয়ে দৌরাত্ম্য সম্পর্কিত বৃদ্ধিরত আন্তর্জাতিক সমস্যা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
কখনও কখনও মারপিট করা যার অন্তর্ভুক্ত ছিল ঠেলা মারা ও ধাক্কা দেওয়া তা এখন প্রায়ই গুলি করা ও ছুরিকাঘাতে পরিবর্তিত হয়েছে। অস্ত্রের ব্যবহার খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে, আক্রমণ আরও তীব্রতর হয়েছে, সন্তানেরা খুব তাড়াতাড়িই দৌরাত্ম্যের পথ অবলম্বন করে আর এমনকি খুবই অল্প বয়সে।নিশ্চিতভাবেই প্রত্যেকটি দেশ এই ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় না। কিন্তু, জগদ্ব্যাপী অনেক শিক্ষকেরা, ফরাসী সাপ্তাহিক ল পোয়ান যেমন উল্লেখ করে সেই পরিস্থিতিটির সম্মুখীন হন: “শিক্ষকেরা আর সম্মানিত হন না; তাদের কোন কর্তৃত্ব নেই।”
কর্তৃপক্ষের প্রতি এইধরনের অসম্মান সমস্ত সন্তানদের জন্য প্রকৃতই এক বিপদ উপস্থিত করে। তাই যিহোবার সাক্ষীরা তাদের সন্তানদের মধ্যে কর্তৃপক্ষের প্রতি বাধ্যতা ও তাদের সম্মান করার মনোভাব অনুপ্রবেশ করানোর জন্য চেষ্টা করেন, যে গুণাবলির অভাব আজকে বিদ্যালয়ে প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়।