যিহোবার সাক্ষীরা শিক্ষাকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখে থাকেন
সমস্ত পিতামাতার মত, যিহোবার সাক্ষীরাও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন। সুতরাং তারা শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। “শিক্ষার উচিত সমাজের উপকারী সদস্য হতে লোকেদের সাহায্য করা। এছাড়া তাদের সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য এবং আরও সন্তোষজনক জীবনযাপনের প্রতি সূক্ষ্ম সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এটির সাহায্য করা উচিত।”
১ তীমথিয় ৫:৮) বিদ্যালয়ে অতিবাহিত বছরগুলি সন্তানদের তাদের পরবর্তী জীবনে দায়িত্বগুলি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। সেই কারণে, সাক্ষীরা উপলব্ধি করেন যে শিক্ষাকে খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে নেওয়া উচিত।
দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে নেওয়া এই উদ্ধৃতিটি যেমন প্রস্তাব করে, বিদ্যালয় শিক্ষার একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল সন্তানদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলা, যার অন্তর্ভুক্ত হল যে একদিন তারা একটি পরিবারের চাহিদাগুলির প্রতি যত্ন নিতে সমর্থ হবে। যিহোবার সাক্ষীরা এটিকে একটি পবিত্র দায়িত্ব হিসাবে মনে করেন। এই সম্বন্ধে স্বয়ং বাইবেল বলে: “কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (“শিক্ষার উচিত সমাজের উপকারী সদস্য হতে লোকেদের সাহায্য করা। এছাড়া তাদের সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য এবং আরও সন্তোষজনক জীবনযাপনের প্রতি সূক্ষ্ম সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এটির সাহায্য করা উচিত।”—দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া
সাক্ষীরা বাইবেলের আদেশ মেনে জীবনযাপন করার জন্য প্রচেষ্টা করে থাকেন: “আপনি যা কিছুই করুন না কেন সম্পূর্ণ হৃদয়ে তা করুন এটি মনে করে যে, যেন আপনি আপনার প্রভুর জন্য কাজ করছেন, মানুষের জন্য নয়।” (কলসীয় ৩:২৩, আজকের ইংরাজি সংস্করণ) এই নীতিটি প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়। সাক্ষীরা তাই তাদের অল্পবয়স্কদের পরিশ্রমের সাথে অধ্যয়ন করতে ও বিদ্যালয়ে তাদের যে কার্যভারের জন্য নিযুক্ত করা হয় তা গুরুত্বসহকারে নিতে উৎসাহিত করেন।
“আপনি যা কিছুই করুন না কেন সম্পূর্ণ হৃদয়ে তা করুন এটি মনে করে যে, যেন আপনি আপনার প্রভুর জন্য কাজ করছেন, মানুষের জন্য নয়।”—কলসীয় ৩:২৩, আজকের ইংরাজি সংস্করণ
এক ব্যক্তি যে দেশে বাস করেন সেখানকার আইনের প্রতি বশীভূত হতেও বাইবেল শিক্ষা দেয়। তাই একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত যখন বিদ্যালয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক, যিহোবার সাক্ষীরা এই আইনের সাথে একমত হন।—রোমীয় ১৩:১-৭.
প্রাত্যহিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের গুরুত্বকে লঘু না করেও বাইবেল দেখায় যে এটিই শিক্ষার একমাত্র অথবা মুখ্য লক্ষ্য নয়। এক সফল শিক্ষার উচিত সন্তানদের মধ্যে জীবনযাপনের আনন্দ প্রদান করা ও সুপরিণত ব্যক্তিবিশেষ হিসাবে সমাজে তার স্থানটি গ্রহণ করতে সাহায্য করা। তাই, যিহোবার সাক্ষীরা মনে করেন যে শ্রেণীকক্ষ বহির্ভূত কার্যকলাপ নির্বাচনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা বিশ্বাস করেন যে গঠনমূলক অবসর বিনোদন, সংগীত, শখ, শারীরিক ব্যায়াম, গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা পরিদর্শন এবং এইরকম আরও অন্যান্য বিষয়গুলি এক ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকন্তু, তারা তাদের সন্তানদের বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্মান করতে এবং তাদের সাহায্য করার জন্য সুযোগ খুঁজে নিতে শেখান।
অতিরিক্ত শিক্ষা সম্বন্ধে কী?
নতুন প্রযুক্তির কারণে চাকরির বাজার প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলস্বরূপ, অনেক অল্পবয়স্কদের সেই সমস্ত ক্ষেত্র অথবা পেশাগুলিতে কাজ করতে হবে যে সম্বন্ধে তাদের কোন নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ নেই। এইধরনের পরিস্থিতিতে, তাদের কাজের অভ্যাস ও ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ, বিশেষত পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের
সক্ষমতা তাদের কাছে এমনকি আরও অনেক বেশি মূল্যবান। সেই কারণে, এটি উত্তম যে ছাত্রেরা ‘এক উত্তম-পরিপূর্ণ মস্তিষ্কের চেয়ে বরং এক উত্তম-কার্যকারী মস্তিষ্কের অধিকারী’ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত হয়, যেভাবে নবজাগরণের প্রবন্ধকার মন্টেন এটিকে প্রকাশ করেন।দরিদ্র ও ধনী উভয় দেশগুলিকেই বেকারত্ব প্রভাবিত করছে যা প্রায়ই সেই সমস্ত যুবক-যুবতীদের কষ্ট দেয় যারা পর্যাপ্তভাবে যোগ্য নয়। সুতরাং, চাকরির বাজার যদি আইনের দ্বারা স্বীকৃত ন্যূনতম শিক্ষার চেয়ে আরও অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ দাবি করে তখন এটি পিতামাতার দায়িত্ব যে তারা সম্ভাব্য উপকার ও যে আত্মত্যাগ এই অতিরিক্ত অধ্যয়নের অপরিহার্য পরিণামস্বরূপ আসে এই উভয় বিষয় সম্বন্ধে বিবেচনা করে তাদের সন্তানদের অতিরিক্ত শিক্ষা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচালনা দেবেন।
কিন্তু, সম্ভবত আপনি একমত হবেন যে জীবনে সফলতা লাভ করা কেবলমাত্র বস্তুগত সমৃদ্ধির চেয়ে আরও বেশি কিছুকে জড়িত করে। সম্প্রতিকালে সেই সব পুরুষ ও নারীরা যাদের সম্পূর্ণ জীবন তাদের জীবিকার পিছনে নিবিষ্ট ছিল তারা চাকরি হারানোর ফলে তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। কিছু পিতামাতারা তাদের পারিবারিক জীবনকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন আর সন্তানদের বড় করে তুলতে সাহায্য করার জন্য যে সময় তারা ব্যয় করতে পারতেন সেই সুযোগকে হারিয়েছেন কারণ তারা তাদের জাগতিক কাজে নিমগ্ন ছিলেন।
স্পষ্টতই, এক ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষার এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে সাহায্য করা উচিত যে আমাদের প্রকৃতই সুখী করার জন্য বস্তুগত সমৃদ্ধির চেয়েও আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন। মথি ৪:৪, নতুন আন্তর্জাতিক সংস্করণ, ইংরাজি) খ্রীষ্টান হিসাবে, যিহোবার সাক্ষীরা নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গুণাবলী উন্নত করার গুরুত্বকে উপলব্ধি করেন আর সেই সাথে নিজেদের বস্তুগত চাহিদা পূরণ করার জন্যও প্রস্তুত হন।
যীশু খ্রীষ্ট উল্লেখ করেছিলেন: “এটি লিখিত আছে: ‘মানুষ শুধুমাত্র রুটিতে বাঁচে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখনির্গত প্রত্যেক বাক্যের দ্বারাই বাঁচে।’” (