ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অনুসারে এক নতুন জগৎ
ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অনুসারে এক নতুন জগৎ
ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাইবেল আমাদের আশা দেয় যখন এটা বলে: “তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।”—২ পিতর ৩:১৩.
‘নূতন আকাশমণ্ডল’ কী? বাইবেল আকাশমণ্ডল বা স্বর্গকে শাসনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে। (প্রেরিত ৭:৪৯) ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ হল এক নতুন সরকার, যেটা সমস্ত পৃথিবীর ওপরে শাসন করবে। এটা নতুন কারণ বর্তমান শাসনব্যবস্থার জায়গায় এটা আসবে; এ ছাড়া, এটা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার ক্ষেত্রেও এক নতুন পদক্ষেপ। এটাই হল সেই রাজ্য, যে-সম্বন্ধে যিশু আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (মথি ৬:১০) যেহেতু ঈশ্বর হলেন এর উৎস এবং তিনি স্বর্গে বাস করেন, তাই এটাকে ‘স্বর্গ-রাজ্য’ বলা হয়।—মথি ৭:২১.
‘নূতন পৃথিবী’ কী? এক নতুন গ্রহ নয় কারণ বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে, পৃথিবীতে চিরকাল বসতি থাকবে। ‘নূতন পৃথিবী’ হল এক নতুন মানবসমাজ। এটা নতুন হবে কারণ দুষ্টদের উচ্ছিন্ন করা হবে। (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) যারা সেই সময়ে বাস করবে তারা সকলে সৃষ্টিকর্তাকে সম্মান করবে ও তাঁর বাধ্য থাকবে এবং তিনি যা চান সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করবে। (গীতসংহিতা ২২:২৭) এখন সমস্ত জাতির লোকের সেই চাহিদাগুলো জানার ও সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আপনি কি তা করছেন?
ঈশ্বরের নতুন জগতে, প্রত্যেকে তাঁর শাসনকে সম্মান করবে। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম কি আপনাকে তাঁর বাধ্য থাকতে পরিচালিত করে? (১ যোহন ৫:৩) সেটা কি আপনার ঘরে, কাজের জায়গায় বা স্কুলে, আপনি যেভাবে আপনার জীবনকে কাজে লাগাচ্ছেন তাতে দেখা যায়?
সেই নতুন জগতে, মানবসমাজ সত্য ঈশ্বরের উপাসনায় একতাবদ্ধ হবে। আপনি কি স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করেন? আপনার উপাসনা কি সত্যিই আপনাকে সমস্ত জাতি, বংশ ও ভাষার সহউপাসকদের সঙ্গে একতাবদ্ধ করে?—গীতসংহিতা ৮৬:৯, ১০; যিশাইয় ২:২-৪; সফনিয় ৩:৯.
[১৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
ঈশ্বর যিনি এই বিষয়গুলো প্রতিজ্ঞা করেন
তিনি আক্ষরিক আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী গ্রহের সৃষ্টিকর্তা। তিনি হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁকে যিশু খ্রিস্ট ‘একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর’ বলে শনাক্ত করেছেন।—যোহন ১৭:৩.
মানবজাতির বেশির ভাগ লোক তাদের নিজেদের তৈরি দেবতাদের সম্মান করে। লক্ষ লক্ষ লোক প্রাণহীন প্রতিমাগুলোর কাছে প্রণিপাত করে। অন্যেরা মানব প্রতিষ্ঠানগুলো, বস্তুবাদী দর্শনগুলো বা তাদের নিজেদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে গৌরবান্বিত করে। এমনকি যারা বাইবেল ব্যবহার করে বলে দাবি করে, তারা সকলে সেই ব্যক্তির নামকে সম্মান করে না, যাঁকে বাইবেল “সত্যময় ঈশ্বর” বলে শনাক্ত করে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩৫.
তাঁর নিজের সম্বন্ধে সৃষ্টিকর্তা বলেন: “যিহোবা [সদাপ্রভু], তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, . . . আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী।” (যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) এই নাম বাইবেলের মূল ভাষায় প্রায় ৭,০০০ বার দেখা যায়। যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।”—মথি ৬:৯.
সত্য ঈশ্বর কী ধরনের ব্যক্তি? তিনি নিজেকে “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্” এবং এমন একজন হিসেবে শনাক্ত করেন, যিনি কোনোভাবেই সেই ব্যক্তিদের শাস্তি থেকে রেহাই দেন না, যারা ইচ্ছে করে তাঁর আজ্ঞাগুলো লঙ্ঘন করে। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭) মানবজাতির সঙ্গে তাঁর আচরণের ইতিহাস সেই বর্ণনার সত্যতাকে নিশ্চিত করে।
সেই নামের দ্বারা যে-নাম ও ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করা হয়, উভয়কেই মহিমান্বিত অথবা পবিত্র বলে গণ্য করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা ও নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম কর্তা হিসেবে, তিনি আমাদের বাধ্যতা ও আমাদের সমস্ত উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। আপনি কি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে তা দেন?
[১৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’ কোন পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসবে?
পৃথিবী পরমদেশে রূপান্তরিত লূক ২৩:৪৩
এমন এক বিশ্বসমাজ যেখানে সমস্ত
জাতি, বংশ, ভাষার লোকেরা প্রেমে একতাবদ্ধ যোহন ১৩:৩৫;
বিশ্বশান্তি, সকলের জন্য প্রকৃত নিরাপত্তা গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১;
মীখা ৪:৩, ৪
সন্তোষজনক কাজ, প্রচুর খাবার যিশাইয় ২৫:৬; ৬৫:১৭, ২১-২৩
অসুস্থতা, দুঃখ, মৃত্যু দূরীভূত যিশাইয় ২৫:৮;
সত্য ঈশ্বরের উপাসনায় একতাবদ্ধ এক জগৎ প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩, ৪
[১৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
আপনি কি উপকৃত হবেন?
ঈশ্বর মিথ্যা বলেন না!—তীত ১:২.
যিহোবা ঘোষণা করেন: “আমার . . . বাক্য . . . নিষ্ফল হইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না, কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সম্পন্ন করিবে, এবং যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।”—যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.
যিহোবা ইতিমধ্যেই ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও এক নূতন পৃথিবী’ সৃষ্টি করছেন। স্বর্গীয় সরকার ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। ‘নূতন পৃথিবীর’ ভিত্তি ইতিমধ্যেই স্থাপিত হয়েছে।
“এক নূতন আকাশ ও এক নূতন পৃথিবী” মানবজাতির জন্য যে-চমৎকার বিষয়গুলো নিয়ে আসবে, সেগুলোর কয়েকটা বলার পর প্রকাশিত বাক্য উদ্ধৃতি করে যে, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম কর্তা, স্বয়ং ঈশ্বর এই কথা বলেন: “দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি।” এ ছাড়াও, তিনি বলেন: “লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:১, ৫.
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হল, আমরা কি ‘নূতন আকাশমণ্ডলের’ অধীনস্থ সেই ‘নূতন পৃথিবীর’ অংশ হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে প্রয়োজনীয় সমন্বয়গুলো করছি?