সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“যেন পরীক্ষায় না পড়”

“যেন পরীক্ষায় না পড়”

“যেন পরীক্ষায় না পড়”

“জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।”—মথি ২৬:৪১.

চাপ তীব্র ছিল—আগে তিনি যা ভোগ করেছিলেন, সেগুলোর সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। ঈশ্বরের পুত্র, যিশু খ্রিস্টের পার্থিব জীবন প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছেছিল। যিশু বুঝতে পেরেছিলেন যে, শীঘ্রই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে এবং যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হবে। তিনি জানতেন যে, তাঁর প্রতিটা সিদ্ধান্ত এবং কাজ তাঁর পিতার নামকে প্রতিফলিত করবে। যিশু এও জানতেন যে, মানবজাতির ভবিষ্যৎ জীবনের প্রত্যাশা অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এই সমস্ত চাপের মুখোমুখি হয়ে, তিনি কী করেছিলেন?

যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে গেৎশিমানী বাগানে গিয়েছিলেন। এটা যিশুর প্রিয় জায়গা ছিল। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে অল্প কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলেন। যখন একা ছিলেন, তখন তিনি শক্তির জন্য তাঁর স্বর্গীয় পিতার দিকে ফিরেছিলেন, ঐকান্তিক প্রার্থনায় তাঁর হৃদয় ঢেলে দিয়েছিলেন—শুধু একবার নয়, তিনবার। সিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও, যিশু মনে করেননি যে তিনি নিজে নিজে এই চাপ মোকাবিলা করতে পারবেন।—মথি ২৬:৩৬-৪৪.

আজকে, আমরাও চাপের মধ্যে রয়েছি। এই ব্রোশারের শুরুতে, আমরা যে এই দুষ্ট ব্যবস্থার চূড়ান্ত দিনগুলোতে বাস করছি, তার প্রমাণ সম্বন্ধে বিবেচনা করেছি। শয়তানের জগতের পরীক্ষা বা প্রলোভন ও পীড়নগুলো দিন দিন তীব্র হচ্ছে। আমরা যারা সত্য ঈশ্বরকে সেবা করছি বলে দাবি করি, আমাদের প্রত্যেকের সিদ্ধান্ত ও কাজগুলো তাঁর নামকে প্রতিফলিত করে এবং তাঁর নতুন জগতে আমাদের প্রত্যেকের জীবনের প্রত্যাশার ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলে। আমরা যিহোবাকে ভালবাসি। আমরা “শেষ পর্য্যন্ত স্থির” থাকতে চাই—আমাদের জীবনের শেষ বা এই ব্যবস্থার শেষ পর্যন্ত, তা যেটাই আগে হোক না কেন। (মথি ২৪:১৩) কিন্তু আমরা কীভাবে আমাদের তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে ও জেগে থাকতে পারি?

এ ছাড়া, তাঁর শিষ্যরা—সেই সময়ের এবং আজকের—চাপের অধীনে থাকবে তা জেনে, যিশু জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।” (মথি ২৬:৪১) আজকে আমাদের জন্য সেই কথাগুলোর অর্থ কী? আপনি কোন পরীক্ষা বা প্রলোভনগুলোর মুখোমুখি হন? আর আপনি কীভাবে ‘জাগিয়া থাকিতে’ পারেন?

কী করার প্রলোভন?

আমরা সকলে প্রতিদিন ‘দিয়াবলের ফাঁদে’ পড়ার প্রলোভনের মুখোমুখি হই। (২ তীমথিয় ২:২৬) বাইবেল আমাদের সতর্ক করে যে, শয়তান বিশেষ করে যিহোবার উপাসকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। (১ পিতর ৫:৮; প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) কোন উদ্দেশ্যে? এটা যে সবসময় আমাদের জীবন নেওয়ার জন্য, তা নয়। আমরা যদি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে মারা যাই, তা হলে এটা শয়তানের জন্য জয় নয়। শয়তান জানে যে, যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময়ে পুনরুত্থানের মাধ্যমে মৃত্যুকে দূর করবেন।—লূক ২০:৩৭, ৩৮.

শয়তান আমাদের বর্তমান জীবনের চেয়ে আরও মূল্যবান কিছুকে—ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠাকে—ধ্বংস করতে চায়। শয়তান এটা প্রমাণ করার জন্য মরিয়া যে, সে যিহোবার কাছ থেকে আমাদের সরিয়ে নিতে পারে। তাই, আমাদের যদি সে অবিশ্বস্ত হওয়ার জন্য—সুসমাচার প্রচার ছেড়ে দেওয়া বা খ্রিস্টীয় মানগুলো পরিত্যাগ করার জন্য—প্ররোচিত করতে পারে, তা হলে শয়তানের জন্য সেটা হবে এক জয়! (ইফিষীয় ৬:১১-১৩) তাই সেই “পরীক্ষক” বা প্রলোভনকারী আমাদের সামনে প্রলোভনগুলো রাখে।—মথি ৪:৩.

শয়তানের ‘প্রতারণাপূর্ণ চাতুরীগুলো’ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়। (ইফিষীয় ৬:১১, জুইশ নিউ টেস্টামেন্ট) সে হয়তো আমাদের বস্তুবাদিতা, ভয়, সন্দেহ বা আমোদপ্রমোদের মাধ্যমে প্রলোভিত করতে পারে। কিন্তু, তার সবচেয়ে কার্যকারী পদ্ধতিগুলোর একটা হল নিরুৎসাহ। এক চতুর সুযোগসন্ধানী হিসেবে সে জানে যে নিরাশা আমাদের দুর্বল করতে পারে, আমরা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি। (হিতোপদেশ ২৪:১০) আর তা বিশেষ করে যখন আমরা আবেগগতভাবে ‘ক্ষুণ্ণ হই,’ তখন সে আমাদের হাল ছেড়ে দিতে প্রলোভিত করে।—গীতসংহিতা ৩৮:৮.

আমরা যতই শেষকালের শেষে এগিয়ে যাচ্ছি, নিরুৎসাহিত হওয়ার কারণগুলো বেড়ে চলেছে বলে মনে হয় আর আমরা এগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত নই। (“কিছু বিষয় যা নিরুৎসাহিত করে” বাক্সটি দেখুন।) কারণ যা-ই হোক না কেন, নিরুৎসাহ আমাদের শক্তি নিঃশেষ করে দিতে পারে। আধ্যাত্মিক দায়িত্বগুলো—যার অন্তর্ভুক্ত বাইবেল অধ্যয়ন করা, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া এবং পরিচর্যায় অংশ নেওয়া—এগুলোর জন্য “সুযোগ কিনিয়া” নেওয়া কঠিন হতে পারে যদি আপনি শারীরিক, মানসিক ও আবেগগতভাবে পরিশ্রান্ত থাকেন। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) মনে রাখবেন যে, প্রলুব্ধকারী চায় আপনি যেন হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু, এটা ধীর হওয়ার বা আমরা যে-সময়ে আছি, সেই সম্বন্ধে আপনার তৎপরতার মনোভাব হারানোর সময় নয়! (লূক ২১:৩৪-৩৬) আপনি কীভাবে প্রলোভন প্রতিরোধ করতে ও জেগে থাকতে পারেন? চারটে পরামর্শের কথা বিবেচনা করুন, যা সাহায্য করতে পারে।

“প্রার্থনা কর”

প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার ওপর নির্ভর করুন। গেৎশিমানী বাগানে যিশুর উদাহরণের কথা মনে করুন। তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে থাকাবস্থায়, তিনি কী করেছিলেন? তিনি সাহায্যের জন্য যিহোবার দিকে ফিরেছিলেন, এতটা ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন যে, “তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল।” (লূক ২২:৪৪) এই বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। যিশু শয়তানকে ভালভাবে জানতেন। ঈশ্বরের দাসদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় শয়তান যে-প্রলোভনগুলো ব্যবহার করেছিল, যিশু তার সমস্তই স্বর্গ থেকে দেখেছিলেন। কিন্তু তবুও যিশু মনে করেননি যে, প্রলুব্ধকারী যা কিছুই তার সামনে রাখুক না কেন, তিনি তা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ঈশ্বরের সিদ্ধ পুত্র যদি ঐশিক সাহায্য ও শক্তির জন্য প্রার্থনার প্রয়োজন অনুভব করে থাকেন, তা হলে আমাদের আরও কতই না বেশি অনুভব করা উচিত!—১ পিতর ২:২১.

১০ এটাও মনে রাখুন যে, তাঁর শিষ্যদের ‘প্রার্থনা করিবার’ জোরালো পরামর্শ দেওয়ার পর যিশু বলেছিলেন: “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।” (মথি ২৬:৪১) যিশু কার মাংস সম্বন্ধে বলছিলেন? নিঃসন্দেহে তাঁর নিজের সম্বন্ধে নয়; তাঁর সিদ্ধ মানব মাংসে কোনো দুর্বলতাই ছিল না। (১ পিতর ২:২২) কিন্তু তাঁর শিষ্যদের অবস্থা ভিন্ন ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অসিদ্ধতা ও পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোর কারণে তাদের প্রলোভনকে প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সাহায্যের দরকার ছিল। (রোমীয় ৭:২১-২৪) এই জন্য তিনি তাদের—এবং তাদের পরের সমস্ত সত্য খ্রিস্টানকে—প্রলোভন মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করার জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (মথি ৬:১৩) যিহোবা এইরকম প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) কীভাবে? অন্তত দুটো উপায়ে।

১১ প্রথমত, ঈশ্বর আমাদের প্রলোভনগুলো চিনতে সাহায্য করেন। শয়তানের প্রলোভনগুলো এক অন্ধকার পথে ছড়িয়ে থাকা ফাঁদের মতো। আপনি যদি সেগুলোকে না দেখেন, তা হলে হয়তো ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন। বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলোর মাধ্যমে, যিহোবা শয়তানের ফাঁদগুলোকে প্রকাশ করে দেন আর এভাবে আমাদের প্রলোভনে পড়া এড়াতে সাহায্য করেন। বছরের পর বছর ধরে, মুদ্রিত সাহিত্যাদি এবং সম্মেলন কার্যক্রমগুলো বার বার আমাদের লোকভয়, যৌন অনৈতিকতা, বস্তুবাদিতা এবং শয়তানের অন্য প্রলোভনগুলোর মতো বিপদগুলো সম্বন্ধে সতর্ক করেছে। (হিতোপদেশ ২৯:২৫; ১ করিন্থীয় ১০:৮-১১; ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) আপনি কি শয়তানের পরিকল্পনাগুলো সম্বন্ধে আমাদের সর্তক করার জন্য যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ নন? (২ করিন্থীয় ২:১১) এই সমস্ত সতর্কবাণী প্রলোভন প্রতিরোধ করতে সাহায্যের জন্য আপনার করা প্রার্থনাগুলোর এক উত্তর।

১২ দ্বিতীয়ত, যিহোবা প্রলোভন সহ্য করার শক্তি দিয়ে আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন। তাঁর বাক্য বলে: “ঈশ্বর . . . তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন।” (১ করিন্থীয় ১০:১৩) আমরা যদি সবসময় তাঁর ওপর নির্ভর করে চলি, তা হলে ঈশ্বর কখনোই একটা প্রলোভনকে এত বেশি চরম হতে দেবেন না যে তা প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তির অভাব হবে। তিনি কীভাবে আমাদের জন্য ‘রক্ষার পথ করিয়া’ দেন? তিনি ‘যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করেন।’ (লূক ১১:১৩) সেই আত্মা আমাদের বাইবেলের নীতিগুলো মনে করতে সাহায্য করতে পারে, যা সঠিক বিষয়টা করার জন্য আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করে এবং বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করে। (যোহন ১৪:২৬; যাকোব ১:৫, ৬) এটা আমাদের ভুল প্রবণতাগুলোকে জয় করার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলি প্রদর্শন করতে সাহায্য করতে পারে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) ঈশ্বরের আত্মা এমনকি সহবিশ্বাসীদেরকে ‘আমাদের সান্ত্বনাজনক হইতে’ পরিচালিত করতে পারে। (কলসীয় ৪:১১) আপনি কি কৃতজ্ঞ নন যে, যিহোবা সাহায্যের জন্য আপনার করা প্রার্থনাগুলোর প্রতি এইরকম প্রেমময় উপায়ে সাড়া দেন?

আপনার প্রত্যাশাগুলোর ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হোন

১৩ জেগে থাকার জন্য, আমাদের প্রত্যাশাগুলোর ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হওয়া দরকার। জীবনের চাপগুলোর কারণে, আমরা সকলে মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই পুরনো ব্যবস্থায় আমাদের এক সমস্যামুক্ত জীবন হবে বলে ঈশ্বর কখনোই প্রতিজ্ঞা করেননি। এমনকি বাইবেলের সময়ে, ঈশ্বরের দাসদের প্রতিকূল অবস্থাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যেগুলো মধ্যে ছিল তাড়না, দরিদ্রতা, হতাশা এবং অসুস্থতা।—প্রেরিত ৮:১; ২ করিন্থীয় ৮:১, ২; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৪; ১ তীমথিয় ৫:২৩.

১৪ আজকে, আমাদেরও সমস্যাগুলো রয়েছে। আমরা তাড়নার মুখোমুখি হতে পারি, অর্থনৈতিক উদ্বেগগুলো ভোগ করতে পারি, হতাশার সঙ্গে লড়াই করতে পারি, অসুস্থ হতে এবং অন্যান্যভাবে কষ্ট ভোগ করতে পারি। যিহোবা যদি সমস্ত ক্ষতি থেকে অলৌকিকভাবে আমাদের রক্ষা করতেন, তা হলে সেটা কি যিহোবাকে টিটকারি দিতে শয়তানকে একটা ভিত্তি জোগাত না? (হিতোপদেশ ২৭:১১) যিহোবা তাঁর দাসদের প্রলোভিত ও পরীক্ষিত হতে দেন, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিরোধীদের হাতে অকালে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে দেন।—যোহন ১৬:২.

১৫ তা হলে, যিহোবা কী প্রতিজ্ঞা করেছেন? আমরা আগে যেমন উল্লেখ করেছি যে, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করব ততক্ষণ পর্যন্ত যেকোনো প্রলোভনের মুখোমুখিই আমরা হই না কেন, তা প্রতিরোধ করতে তিনি আমাদের সমর্থ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) তাঁর বাক্য, আত্মা ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে, তিনি আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করেন, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করেন। সেই সম্পর্ককে নষ্ট না করে আমরা যদি এমনকি মারাও যাই, আমরা জয়ী হই। কোনোকিছুই—এমনকি মৃত্যুও—ঈশ্বরকে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের পুরস্কৃত করা থেকে বাধা দিতে পারে না। (ইব্রীয় ১১:৬) আর নতুন জগতে, যা এখন একেবারে কাছে, সেখানে যিহোবা যারা তাঁকে ভালবাসে তাদের জন্য করা বাকি চমৎকার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করতে ব্যর্থ হবেন না।—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬.

বিচার্য বিষয়গুলো মনে রাখুন

১৬ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকার জন্য, ঈশ্বর যে-দুষ্টতাকে থাকতে দিয়েছেন, সেটার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে যদি আমাদের সমস্যাগুলোকে অতিরিক্ত বলে মনে হয় এবং আমরা হাল ছেড়ে দিতে প্রলুব্ধ হই, তা হলে আমাদের নিজেদের মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতাকে শয়তান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করেছে। এই প্রতারক ঈশ্বরের দাসদের ভক্তি ও নীতিনিষ্ঠা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। (ইয়োব ১:৮-১১; ২:৩, ৪) সেই বিচার্য বিষয়গুলো ও যিহোবা যেভাবে সেগুলো সমাধান করা বেছে নিয়েছেন, তা আমাদের যে কারোর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা কীভাবে?

১৭ ঈশ্বর অস্থায়ীভাবে কষ্ট থাকতে দিয়ে অন্যদের সত্যকে নিজের করে নিতে সময় দিয়েছেন। এই বিষয়ে চিন্তা করুন: যিশু কষ্ট ভোগ করেছিলেন যাতে আমরা জীবন পেতে পারি। (যোহন ৩:১৬) আমরা কি সেজন্য কৃতজ্ঞ নই? কিন্তু, আমরা কি আরেকটু বেশি সময় কষ্ট ভোগ করতে ইচ্ছুক, যাতে অন্যেরা জীবন পেতে পারে? শেষ পর্যন্ত স্থির থাকার জন্য, আমাদের স্বীকার করতে হবে যে যিহোবার প্রজ্ঞা আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। (যিশাইয় ৫৫:৯) তিনি সেই সময়ে দুষ্টতা শেষ করবেন, যা বিচার্য বিষয়গুলো চিরকালের জন্য মীমাংসা করার ও আমাদের চিরকালীন মঙ্গলের জন্য সর্বোত্তম সময়। সত্যিই, এর চেয়ে ভাল উপায় আর কী হতে পারে? ঈশ্বরে কোনো অবিচার নেই!—রোমীয় ৯:১৪-২৪.

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও”

১৮ আমাদের তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখার জন্য, আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী থাকা দরকার। কখনও ভুলে যাবেন না যে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের ভাল সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য শয়তান তার সমস্ত শক্তি কাজে লাগাচ্ছে। শয়তান আমাদের বিশ্বাস করাতে চায় যে, শেষ আসবে না এবং সুসমাচার প্রচার করা বা বাইবেলের মানগুলো মেনে জীবনযাপন করার কোনো উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু সে “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা।” (যোহন ৮:৪৪) “দিয়াবলের প্রতিরোধ” করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এমন কিছু, যেটাকে আমাদের কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। বাইবেল আমাদের প্রেমের সঙ্গে পরামর্শ দেয়: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৭, ৮) কীভাবে আপনি যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারেন?

১৯ প্রার্থনাপূর্ণ ধ্যান অত্যন্ত জরুরি। জীবনের চাপগুলোকে যখন চরম বলে মনে হয়, তখন যিহোবার কাছে আপনার হৃদয় উজাড় করে দিন। আপনি যত নির্দিষ্ট হবেন, ততই আপনার অনুরোধগুলোর উত্তর দেখা সহজ হবে। উত্তর হয়তো সবসময় আপনার মনে যা রয়েছে ঠিক তা হবে না কিন্তু তাঁকে সম্মান করা ও নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা যদি আপনার আকাঙ্ক্ষা হয়, তা হলে আপনার প্রয়োজনীয় সাহায্য তিনি জোগাবেন যাতে আপনি সফলভাবে স্থির থাকতে পারেন। (১ যোহন ৫:১৪) আপনি যখন আপনার জীবনে তাঁর নির্দেশনা দেখবেন, তখন তাঁর আরও নিকটবর্তী হবেন। এ ছাড়া, বাইবেলে প্রকাশিত যিহোবার গুণ ও পথগুলো পড়া ও সেই সম্বন্ধে চিন্তা করাও আবশ্যক। এইরকম ধ্যান তাঁকে আরও ভালভাবে জানতে আপনাকে সাহায্য করে, এটা আপনার হৃদয়কে আলোড়িত করে এবং তাঁর প্রতি আপনার ভালবাসাকে আরও গভীর করে। (গীতসংহিতা ১৯:১৪) আর অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে সেই ভালবাসা আপনাকে আরও বেশি প্রলোভন প্রতিরোধ করতে ও জেগে থাকতে সাহায্য করবে।—১ যোহন ৫:৩.

২০ এ ছাড়া, যিহোবার নিকটবর্তী থাকার জন্য আমাদের সহবিশ্বাসীদের নিকটবর্তী থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। এটা এই ব্রোশারের শেষ বিভাগে আলোচনা করা হবে।

অধ্যয়ন প্রশ্নগুলো

• যিশু যখন তাঁর পার্থিব জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে চরম চাপের মধ্যে ছিলেন, তখন কী করেছিলেন এবং তিনি তাঁর শিষ্যদের কী করতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন? (অনু. ১-৪)

• শয়তান কেন যিহোবার উপাসকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং সে কোন কোন উপায়ে আমাদের প্রলোভিত করে? (অনু. ৫-৮)

• প্রলোভনকে প্রতিরোধ করার জন্য, আমাদের কেন অবিরত প্রার্থনা করতে হবে (অনু. ৯-১২), আমাদের প্রত্যাশাগুলোর ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হতে হবে (অনু. ১৩-১৫), বিচার্য বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে (অনু. ১৬-১৭) এবং ‘ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে’ হবে (অনু. ১৮-২০)?

[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স]

কিছু বিষয় যা নিরুৎসাহিত করে

স্বাস্থ্য/বয়স। আমরা যদি কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগে থাকি অথবা বাধর্ক্য যদি বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে আসে, তা হলে আমরা হয়তো ঈশ্বরের সেবায় বেশি কিছু করতে পারি না বলে হতাশ হতে পারি।—ইব্রীয় ৬:১০.

হতাশা। ঈশ্বরের বাক্য প্রচারে আমাদের প্রচেষ্টায় অল্প লোককে সাড়া দিতে দেখে আমরা হয়তো নিরুৎসাহিত হতে পারি।—হিতোপদেশ ১৩:১২.

অযোগ্যতার অনুভূতি। বছরের পর বছর ধরে খারাপ ব্যবহারের শিকার হয়ে, একজন ব্যক্তি হয়তো মনে করতে পারেন যে তাকে কেউ ভালবাসে না, এমনকি যিহোবাও নন।—১ যোহন ৩:১৯, ২০.

বেদনাদায়ক অনুভূতি। কেউ যদি একজন সহবিশ্বাসীর দ্বারা প্রচণ্ড আঘাত পান, তা হলে তিনি হয়তো এতটাই ক্ষুব্ধ হতে পারেন যে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া বা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিতে প্রলুব্ধ হতে পারেন।—লূক ১৭:১.

তাড়না। যারা আপনার বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয় তারা হয়তো আপনাকে বিরোধিতা, তাড়না বা উপহাস করতে পারে।—২ তীমথিয় ৩:১২; ২ পিতর ৩:৩, ৪.

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু প্রলোভনের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করার জন্য আমাদের সবসময় ‘প্রার্থনা করিবার’ জোরালো পরামর্শ দেন