সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম কর”

“সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম কর”

“সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম কর”

“সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; . . . সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম কর।”—১ পিতর ৪:৭, ৮.

যিশু জানতেন যে, প্রেরিতদের সঙ্গে কাটানো তাঁর শেষ কয়েক ঘন্টা অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। তাদের জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেই সম্বন্ধে তিনি জানতেন। তাদের সম্পাদন করার জন্য এক বিরাট কাজ ছিল কিন্তু তারা ঘৃণিত ও তাড়িত হবে, যেমনটা তিনিও হয়েছিলেন। (যোহন ১৫:১৮-২০) সেই শেষ রাতে, তিনি শুধু একবার নয় অনেকবার তাদেরকে ‘পরস্পর প্রেম’ করার প্রয়োজন সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ১৫:১২, ১৩, ১৭.

প্রেরিত পিতর, যিনি সেই রাতে উপস্থিত ছিলেন তিনি যিশুর কথার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক বছর পর, যিরূশালেমের ধ্বংসের কিছু সময় আগে পিতর প্রেমের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; . . . সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম কর।” (১ পিতর ৪:৭, ৮) যারা এই বর্তমান বিধিব্যবস্থার “শেষ কালে” বাস করছে, তাদের জন্য পিতরের বাক্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (২ তীমথিয় ৩:১) ‘একাগ্র প্রেম’ কী? কেন অন্যদের জন্য এই প্রেম থাকা গুরুত্বপূর্ণ? আর আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে আমরা এইরকম প্রেম করি?

‘একাগ্র প্রেম’—এটা কী?

অনেকে প্রেমকে এমন এক অনুভূতি বলে মনে করে, যা স্বাভাবিকভাবে উদ্ভূত হবে। কিন্তু পিতর যেকোনো ধরনের প্রেম সম্বন্ধে বলছিলেন না; তিনি সর্বোত্তম প্রকারের প্রেম সম্বন্ধে বলছিলেন। ১ পিতর ৪:৮ পদে “প্রেম” শব্দটা আগাপে গ্রিক শব্দের অনুবাদ। সেটা নিঃস্বার্থ প্রেমকে বোঝায়, যা নীতির দ্বারা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত। একটি তথ্যগ্রন্থ বলে: “আগাপে প্রেম আদেশ করতে সমর্থ কারণ এটা মূলত কোনো আবেগ নয় কিন্তু কাজ করতে পরিচালিত করে এমন ইচ্ছার এক সিদ্ধান্ত।” আমাদের যেহেতু স্বার্থপরতার প্রতি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এক প্রবণতা রয়েছে, তাই আমাদের পরস্পর প্রেম করার বিষয়টা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার আর সেই প্রেম এমন উপায়গুলোর মাধ্যমে করা দরকার, যা ঈশ্বরীয় নীতিগুলো দ্বারা পরিচালিত।—আদিপুস্তক ৮:২১; রোমীয় ৫:১২.

কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমরা পরস্পরকে শুধুমাত্র কর্তব্যের খাতিরে প্রেম করব। আগাপে উষ্ণতা ও অনুভূতিশূন্য নয়। পিতর বলেছিলেন যে, আমাদের “পরস্পর একাগ্রভাবে [আক্ষরিক অর্থে, “প্রসারিত”] প্রেম” করতে হবে। a তবুও, এইরকম প্রেমের জন্য প্রচেষ্টা দরকার। ‘একাগ্র’ হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দ সম্বন্ধে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন: “এটা একজন ক্রীড়াবিদ দৌড় শেষ করার সময় তার শেষ শক্তি দিয়ে যেভাবে পেশীগুলোকে প্রসারিত করে, সেই চিত্র তুলে ধরে।”

অতএব, আমাদের প্রেম শুধু সহজ বিষয়গুলো বা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিদের প্রতি সীমিত থাকবে না। খ্রিস্টীয় প্রেমের জন্য আমাদের হৃদয়কে “প্রসারিত করা” দরকার, এমনকি সেই সময়েও প্রেমকে বিস্তৃত করা দরকার, যখন তা করা কঠিন হয়। (২ করিন্থীয় ৬:১১-১৩) স্পষ্টতই, এই ধরনের প্রেম এমন কিছু যা আমাদের গড়ে তোলা ও সেই বিষয়ে কাজ করে চলা দরকার, ঠিক যেমন একজন ক্রীড়াবিদকে তার দক্ষতাগুলোকে বাড়ানোর জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে ও কাজ করতে হবে। আমাদের পরস্পরের প্রতি এইরকম প্রেম থাকা অত্যন্ত জরুরি। কেন? অন্তত তিনটে কারণে।

আমাদের কেন পরস্পরকে প্রেম করা উচিত?

প্রথমত, “প্রেম ঈশ্বরের।” (১ যোহন ৪:৭) এই প্রীতিকর গুণের উৎস যিহোবা প্রথমে আমাদের প্রেম করেছিলেন। প্রেরিত যোহন বলেন: “আমাদিগেতে ঈশ্বরের প্রেম ইহাতেই প্রকাশিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্ত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাঁরা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি।” (১ যোহন ৪:৯) ঈশ্বরের পুত্র মানুষ হিসেবে ‘প্রেরিত’ হয়েছেন, তাঁর পরিচর্যা সম্পন্ন করেছেন এবং যাতনাদণ্ডে মারা গিয়েছেন—এই সমস্তকিছুই এইজন্য হয়েছে “যেন আমরা . . . জীবন লাভ করিতে পারি।” ঈশ্বরের প্রেমের এই শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তির প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত? যোহন বলেন: “ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন, তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য।” (১ যোহন ৪:১১) লক্ষ করুন যে যোহন লেখেন, “ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন”—শুধু আপনাকে নয় বরং আমাদেরকে। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) আসল বিষয়টা পরিষ্কার: ঈশ্বর যদি আমাদের সহবিশ্বাসীদের প্রেম করে থাকেন, তা হলে আমাদেরও তাদের প্রেম করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট,” তাই বর্তমানে আমাদের পরস্পরকে আরও বেশি প্রেম করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে আমাদের যে-ভাইদের প্রয়োজন তাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। (১ পিতর ৪:৭) আমরা ‘শেষ কালের বিষম সময়ে’ বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১) জগতের পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং বিরোধিতা আমাদের জন্য কষ্ট নিয়ে আসে। কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে, আমাদের পরস্পরের আরও নিকটবর্তী হওয়া দরকার। একাগ্র প্রেম আমাদের সকলকে একতাবদ্ধ করবে এবং ‘পরস্পরের জন্য . . . চিন্তা করিতে’ পরিচালিত করবে।—১ করিন্থীয় ১২:২৫, ২৬.

তৃতীয়ত, আমাদের পরস্পর প্রেম করা দরকার কারণ আমাদেরকে তার নিজের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য ‘দিয়াবলকে স্থান দিতে’ চাই না। (ইফিষীয় ৪:২৭) শয়তান সহবিশ্বাসীদের অসিদ্ধতাগুলোকে—তাদের দুর্বলতা, অক্ষমতা ও ভুলগুলোকে—প্রতিবন্ধক হিসেবে ব্যবহার করতে তৎপর। বিবেচনাহীন এক মন্তব্য বা নির্দয় কোনো কাজ কি আমাদেরকে মণ্ডলী থেকে দূরে সরিয়ে নেবে? (হিতোপদেশ ১২:১৮) আমরা সরে যাব না যদি পরস্পরের প্রতি আমাদের একাগ্র প্রেম থাকে! এইরকম প্রেম আমাদের শান্তি বজায় রাখতে ও “একযোগে” একতাবদ্ধভাবে ঈশ্বরের সেবা করতে সাহায্য করে।—সফনিয় ৩:৯.

আপনি যে অন্যদের প্রেম করেন তা যেভাবে দেখানো যায়

প্রেম প্রথমে ঘরে দেখাতে হবে। যিশু বলেছিলেন যে তাঁর প্রকৃত অনুসারীরা তাদের পরস্পরের মধ্যে থাকা প্রেমের দ্বারা শনাক্তিকৃত হবে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) প্রেম শুধু মণ্ডলীতে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পরিবারে—বিবাহ সাথিদের এবং বাবামা ও সন্তানদের মধ্যে স্পষ্ট হতে হবে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি শুধু প্রেম অনুভব করাই যথেষ্ট নয়; আমাদের এটা গঠনমূলক উপায়ে প্রকাশ করা দরকার।

১০ বিবাহসাথিরা কীভাবে একে অপরের প্রতি প্রেম দেখাতে পারে? যে-স্বামী তার স্ত্রীকে সত্যিই ভালবাসেন তিনি—সকলের সামনে ও আড়ালে—তাকে তার কথা ও কাজের মাধ্যমে জানান যে, স্ত্রী তার কত প্রিয়। তিনি তার ব্যক্তিগত মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখান এবং তার চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখান। (১ পিতর ৩:৭) তিনি নিজের আগে স্ত্রীর মঙ্গলের কথা ভাবেন এবং তিনি তার বস্তুগত, আধ্যাত্মিক ও আবেগগত প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য যথাসাধ্য করেন। (ইফিষীয় ৫:২৫, ২৮) যে-স্ত্রী তার স্বামীকে সত্যিই ভালবাসেন, তিনি তাকে “ভয় [“গভীর সম্মান,” NW]” করেন, এমনকি মাঝে মাঝে যদি স্বামী তার প্রত্যাশাগুলো পূরণ না-ও করেন। (ইফিষীয় ৫:২২, ৩৩) তিনি তার সাথিকে সমর্থন করেন ও তার বশীভূত থাকেন, অযৌক্তিক দাবিগুলো করেন না বরং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখার জন্য তাকে সহযোগিতা করেন।—আদিপুস্তক ২:১৮; মথি ৬:৩৩.

১১ বাবামায়েরা, আপনারা কীভাবে আপনাদের সন্তানদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারেন? তাদের বস্তুগত প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করার ইচ্ছা হল আপনাদের প্রেমের প্রমাণ। (১ তীমথিয় ৫:৮) কিন্তু সন্তানদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। তাদের যদি সত্য ঈশ্বরকে প্রেম করার ও তাঁর সেবা করার জন্য বড় করে তুলতে হয়, তা হলে তাদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। (হিতোপদেশ ২২:৬) এর মানে পরিবারগতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন, পরিচর্যায় অংশগ্রহণ ও খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করার জন্য সময় করে নেওয়া। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৭) এগুলো নিয়মিত করে চলার জন্য যথেষ্ট ত্যাগস্বীকার প্রয়োজন, বিশেষ করে এই কঠিন সময়ে। আপনাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য আপনাদের চিন্তা ও প্রচেষ্টাগুলো প্রেমের এক অভিব্যক্তি কারণ এভাবে আপনারা দেখান যে, তাদের অনন্তকালীন মঙ্গলের প্রতি আপনারা সত্যিই আগ্রহী।—যোহন ১৭:৩.

১২ এ ছাড়া, বাবামাদের সন্তানদের আবেগগত চাহিদাগুলো মেটানোর দ্বারা প্রেম দেখানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানেরা দুর্বল, তাদের কচি মনে আপনাদের ভালবাসার আশ্বাস দরকার। তাদের বলুন যে আপনারা তাদের ভালবাসেন এবং তাদের প্রচুর স্নেহ দেখান কারণ এইরকম অভিব্যক্তিগুলো তাদের আশ্বাস দেয় যে, তারা ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য ও মূল্যবান। তাদেরকে সাদরে ও অকপট প্রশংসা করুন কারণ এটা তাদের জানায় যে আপনারা তাদের প্রচেষ্টাগুলো দেখেন ও মূল্য দেন। তাদেরকে প্রেমের সঙ্গে শাসন করুন কারণ এইরকম সংশোধন তাদের বলে যে তারা যেরকম ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছে তাতে আপনাদের আগ্রহ রয়েছে। (ইফিষীয় ৬:৪) প্রেমের এইরকম গঠনমূলক অভিব্যক্তিগুলো সুখী, পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা রয়েছে এমন এক পরিবার গড়ে তোলে, যা এই শেষ কালের চাপগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য আরও ভালভাবে তৈরি।

১৩ প্রেম অন্যদের ত্রুটিগুলোকে উপেক্ষা করতে পরিচালিত করে। মনে করে দেখুন যে তার পাঠকদের ‘পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম করতে’ পরামর্শ দেওয়ার সময়, পিতর কেন এটা এত গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “কেননা ‘প্রেম পাপরাশি আচ্ছাদন করে।’” (১ পিতর ৪:৮) পাপরাশি “আচ্ছাদন” করার মানে গুরুতর পাপগুলোকে ‘আচ্ছাদিত করা’ নয়। এই পাপগুলো যথাযথভাবে জানাতে হবে এবং মণ্ডলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সেগুলো সমাধান করতে হবে। (লেবীয় পুস্তক ৫:১; হিতোপদেশ ২৯:২৪) চরম পাপীদেরকে ক্রমাগত নির্দোষ লোকেদের দুঃখ ও প্রতারিত করতে দেওয়া হবে সবচেয়ে বেশি প্রেমহীন ও অশাস্ত্রীয় কাজ।—১ করিন্থীয় ৫:৯-১৩.

১৪ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, সহবিশ্বাসীদের ভুলত্রুটিগুলো সাধারণ হয়ে থাকে। আমরা সকলে মাঝে মাঝে কথায় ও কাজে উছোট খাই, একে অন্যকে হতাশ করি বা এমনকি দুঃখ দিই। (যাকোব ৩:২) অন্যদের ত্রুটিগুলোকে কি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে প্রচার করা উচিত? এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু মণ্ডলীতে বিবাদ সৃষ্টি করবে। (ইফিষীয় ৪:১-৩) আমরা যদি প্রেমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই, তা হলে আমরা একজন সহউপাসকের ‘নিন্দা করিব’ না। (গীতসংহিতা ৫০:২০) আস্তর ও রং যেমন একটা দেয়ালের ত্রুটিগুলোকে ঢেকে দেয়, তেমনই প্রেম অন্যদের অসিদ্ধতাগুলোকে আচ্ছাদন করে।—হিতোপদেশ ১৭:৯.

১৫ যাদের প্রকৃত প্রয়োজন রয়েছে, প্রেম তাদের সাহায্য করতে আমাদের পরিচালিত করবে। শেষ কালের অবস্থা যেহেতু দিন দিন অবনতি হচ্ছে তাই এমন সময় আসতে পারে যখন আমাদের সহবিশ্বাসীদের বস্তুগত অথবা শারীরিক সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। (১ যোহন ৩:১৭, ১৮) উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আমাদের মণ্ডলীর কোনো সদস্য কি চরম অর্থনৈতিক সংকট ভোগ করেছেন বা চাকরি হারিয়েছেন? তা হলে, আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা হয়তো বস্তুগত সাহায্য করতে পারি। (হিতোপদেশ ৩:২৭, ২৮; যাকোব ২:১৪-১৭) একজন বয়স্কা বিধবার বাড়িতে কি কোনো মেরামত দরকার? তা হলে, আমরা হয়তো সেই কাজের কিছুটা সাহায্য করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারি।—যাকোব ১:২৭.

১৬ অন্যদের প্রতি আমাদের প্রেম দেখানো শুধু যারা আমাদের আশেপাশে থাকে, তাদের প্রতিই সীমাবদ্ধ নয়। মাঝে মাঝে আমরা হয়তো অন্য দেশের ঈশ্বরের দাসদের রিপোর্ট শুনতে পারি, যারা প্রচণ্ড ঝড়, ভূমিকম্প বা গৃহযুদ্ধের শিকার হয়েছে। তাদের হয়তো খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য জিনিসের প্রয়োজন হতে পারে। তারা অন্য কোনো জাতি বা উপজাতির হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের ‘ভ্রাতৃসমাজের প্রতি প্রেম রয়েছে।’ (১ পিতর ২:১৭) তাই, প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোর মতো আমরা ত্রাণ প্রচেষ্টাগুলোতে সমর্থন করতে উৎসুক, যেগুলো সাহায্য করার জন্য সংগঠিত হয়েছে। (প্রেরিত ১১:২৭-৩০; রোমীয় ১৫:২৬) আমরা যখন এই সমস্ত উপায়ে প্রেম দেখাই, তখন আমরা সেই বন্ধনকে শক্তিশালী করি, যা আমাদের এই শেষ কালে একতাবদ্ধ করে।—কলসীয় ৩:১৪.

১৭ প্রেম আমাদের অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে পরিচালিত করে। যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করুন। কেন তিনি প্রচার করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন? তিনি লোকেদের করুণ আধ্যাত্মিক অবস্থার জন্য তাদের প্রতি “করুণাবিষ্ট” হয়েছিলেন। (মার্ক ৬:৩৪) তারা সেইসব মিথ্যা ধর্মীয় পালকের দ্বারা উপেক্ষিত ও বিপথে পরিচালিত হয়েছিল, যাদের উচিত ছিল তাদেরকে আধ্যাত্মিক সত্যগুলো শেখানো ও আশা দেওয়া। তাই গভীর, আন্তরিক প্রেম ও সমবেদনার দ্বারা পরিচালিত হয়ে, যিশু “ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার” দ্বারা লোকেদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন।—লূক ৪:১৬-২১, ৪৩.

১৮ আজকেও, অনেক লোক আধ্যাত্মিকভাবে উপেক্ষিত ও বিপথে পরিচালিত এবং তাদের কোনো আশা নেই। আমরা যদি যিশুর মতো তাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোর প্রতি আমাদের চেতনাকে তীক্ষ্ণ করি যারা এখনও সত্য ঈশ্বরকে জানে না, তা হলে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার তাদের কাছে প্রচার করার জন্য প্রেম ও সমবেদনার দ্বারা পরিচালিত হব। (মথি ৬:৯, ১০; ২৪:১৪) যে-অল্প সময় বাকি আছে তার পরিপ্রেক্ষিতে, এই জীবনরক্ষাকারী বার্তা প্রচার করা কখনোই এত বেশি জরুরি হয়নি।—১ তীমথিয় ৪:১৬.

“সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট”

১৯ মনে রাখবেন, পিতর পরস্পরকে প্রেম করা সম্বন্ধীয় তার পরামর্শের ভূমিকা এই বাক্যগুলোর দ্বারা করেছিলেন: “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট।” (১ পিতর ৪:৭) শীঘ্রই এই দুষ্ট জগতের জায়গায় ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগৎ আসবে। (২ পিতর ৩:১৩) তাই, আজকে আত্মতুষ্টির সময় নেই। যিশু আমাদের সতর্ক করেছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে।”—লূক ২১:৩৪, ৩৫.

২০ তা হলে, যেকোনোভাবেই হোক আসুন আমরা ‘জাগিয়া থাকি,’ সময়ের প্রবাহে আমরা কোথায় রয়েছি সেই সম্বন্ধে সতর্ক হই। (মথি ২৪:৪২) শয়তানের যেকোনো প্রলোভন যা আমাদের বিক্ষিপ্ত করে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আসুন আমরা সতর্ক থাকি। আসুন আমরা এই শীতল, প্রেমহীন জগৎকে অন্যদের প্রতি আমাদের প্রেম দেখানোকে প্রতিরোধ করতে না দিই। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হল যে, আসুন আমরা সত্য ঈশ্বর যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই, যাঁর মশীহ রাজ্য এই পৃথিবীর প্রতি তাঁর চমৎকার উদ্দেশ্য শীঘ্রই পরিপূর্ণ করবে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.

[পাদটীকা]

a ১ পিতর ৪:৮ পদে, অন্য বাইবেল অনুবাদগুলো বলে যে আমাদের পরস্পরকে “অকপটভাবে,” “গভীরভাবে” বা “আন্তরিকভাবে” প্রেম করতে হবে।

অধ্যয়ন প্রশ্নগুলো

• মারা যাওয়ার আগে যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং কী দেখায় যে, পিতর এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন? (অনু. ১-২)

• ‘একাগ্র প্রেম’ কী? (অনু. ৩-৫)

• আমাদের কেন পরস্পরের প্রতি প্রেম করা উচিত? (অনু. ৬-৮)

• আপনি কীভাবে দেখাতে পারেন যে আপনি অন্যদের প্রেম করেন? (অনু ৯-১৮)

• কেন এটা আত্মতুষ্টির সময় নয় এবং আমাদের কী করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত? (অনু. ১৯-২০)

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা রয়েছে এমন এক পরিবার, এই শেষ কালের চাপগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য আরও ভালভাবে তৈরি

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যাদের প্রকৃত প্রয়োজন রয়েছে প্রেম তাদের সাহায্য করতে আমাদের পরিচালিত করে

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা প্রেমের একটা কাজ