সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের মৃত প্রিয়জনদের কী অবস্থা হয়?

আমাদের মৃত প্রিয়জনদের কী অবস্থা হয়?

অধ্যায় ৯

আমাদের মৃত প্রিয়জনদের কী অবস্থা হয়?

১. যখন কোন প্রিয়জনের মৃত্যু হয় লোকে কিরূপ বোধ করে?

 “মানুষ কষ্টভোগ করে যখন কোন প্রিয়জন মারা যায়, কারণ মৃত্যু হল এক বিচ্ছেদ যা সকল বোধগম্যতার বাইরে এক শূন্যতা।” এটিই এক পুত্র বলেছিল যখন তার পিতার ও কিছু পরেই তার মাতার মৃত্যু হয়েছিল। যন্ত্রণা এবং বিচ্ছেদের গভীর অনুভূতিতে তার বোধ হয়েছিল যেন সে “মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে অসহায় হয়ে পড়েছে।” হয়ত আপনিও অনুরূপভাবে কষ্টভোগ করেছেন। আপনি হয়ত ভেবেছেন আপনার প্রিয়জনেরা কোথায় এবং আবার কখনও তাদের দেখতে পাবেন কি না।

২. মৃত্যু সম্পর্কে কোন্‌ জটিল প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়?

কিছু শোকার্ত পিতামাতাকে বলা হয়েছে, “স্বর্গে নিজের কাছে নেওয়ার জন্য ঈশ্বর সবচেয়ে সুন্দর ফুলগুলি তুলে নেন।” সত্যই কী তাই? আমাদের মৃত প্রিয়জনেরা কী এক আত্মিক রাজ্যে গিয়েছে? কেউ কেউ যা বলেন এটি কী সেই নির্বাণ, যার বর্ণনা করা হয় সকল বেদনা ও আকাঙ্ক্ষাবিহীন এক পরম সুখী অবস্থারূপে? আমাদের যারা প্রিয় তারা কী এক প্রবেশপথের মধ্য দিয়ে পরমদেশে অমর জীবনে পৌঁছে গিয়েছে? অথবা যেমন অন্যেরা দাবি করে, যারা ঈশ্বরের নিকদুট পাপ করে মৃত্যু তাদের জন্য অনন্ত যন্ত্রণায় এক পতন? মৃতেরা কি আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে? এরূপ প্রশ্নগুলির যথার্থ উত্তর পেতে, আমাদের প্রয়োজন ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলের পরামর্শ নেওয়া।

মানুষের মধ্যে “আত্মা” কী?

৩. মৃতদের সম্পর্কে সদুক্রটিস এবং প্লেদুটার কী ধারণা ছিল এবং বর্তমানে লোকেদের তা কিভাবে প্রভাবিত করে?

প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক সদুক্রটিস এবং প্লেদুটা মনে করতেন যে পুরুষ ও নারীর মধ্যে অবশ্যই একটা কিছু রয়েছে যা প্রকৃতিগতভাবে অবিনশ্বর—এক প্রাণ যা মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় ও প্রকৃতই কখনও মরে না। সমস্ত পৃথিবীতে, কোটি কোটি ব্যক্তি বর্তমানে এটি বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাস প্রায়ই মৃতদের প্রতি যতটা ভীতি উৎপাদন করায় ঠিক ততটাই তাদের মঙ্গলের জন্য চিন্তার উদ্রেক করায়। মৃতদের সম্বন্ধে বাইবেল সম্পূর্ণ আলাদা কিছু আমাদের শিক্ষা দেয়।

৪. (ক) প্রাণ সম্বন্ধে আদিপুস্তক আমাদের কী বলে? (খ) আদমকে জীবিত করতে ঈশ্বর তার মধ্যে কী দিয়েছিলেন?

মৃতদের অবস্থা বিবেচনা করতে গিয়ে, আমরা অবশ্যই স্মরণে রাখব যে আমাদের আদি পিতা, আদমের কাছে কোন প্রাণ ছিল না। সে এক প্রাণ ছিল। সৃষ্টির এক বিস্ময়কর কাজের মাধ্যমে, ঈশ্বর মানুষ—প্রাণকে—পৃথিবীর মূল উপাদানগুলি থেকে গঠন করেছিলেন এবং তারপরে তার মধ্যে ফুঁ দিয়ে “প্রাণবায়ু” সঞ্চারিত করেছিলেন। আদিপুস্তক ২:৭ পদ আমাদের বলে: “সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী [“প্রাণ,” NW] হইল।” আদমের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল বায়ুর শ্বাসপ্রশ্বাস দ্বারা। তবুও, মানুষের ফুসফুসে বায়ু প্রবেশ করানো ছাড়াও আরও অধিক কিছু জড়িত ছিল যখন ঈশ্বর আদমের মধ্যে প্রাণবায়ু সঞ্চারিত করেছিলেন। বাইবেল “জীবনী-শক্তি” সম্বন্ধে বলে যা পৃথিবীর জীবিত প্রাণীদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে।—আদিপুস্তক ৭:২২, NW.

৫, ৬. (ক) “জীবনী-শক্তি” কী? (খ) যখন গীতসংহিতা ১৪৬:৪ পদে উদুল্লখিত “আত্মা” দেহকে প্রাণচঞ্চল রাখা থামিয়ে দেয় তখন কী ঘদুট?

এই “জীবনী-শক্তি” কী? এটি জীবনের সেই অত্যাবশ্যক সজীবতা যা ঈশ্বর আদমের প্রাণহীন দেহে সঞ্চার করেছিলেন। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া দ্বারা এই শক্তিকে তারপর সক্রিয় রাখা হয়েছিল। আর গীতসংহিতা ১৪৬:৪ (NW) পদে উদুল্লখিত “আত্মা,” এটি কী? যে মারা যায় তার সম্বন্ধে ওই পদ বলে, “তার আত্মা নির্গত হয়, সে নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” যখন বাইবেল লেখকগণ “আত্মা” শব্দটিকে এইভাবে ব্যবহার করেছিলেন, তাদের মনে কোন বিদেহী প্রাণের ধারণা ছিল না যা দেহের মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে।

মৃত্যুতে যে “আত্মা” মানুষের দেহ থেকে নির্গত হয়, তা হল জীবনী-শক্তি যা আমাদের সৃষ্টিকর্তা থেকে উৎপন্ন। (গীতসংহিতা ৩৬:৯; প্রেরিত ১৭:২৮) যে প্রাণীটিকে জীবনী-শক্তি প্রাণচঞ্চল করছে তার কোন রকম বৈশিষ্ট্য এই জীবনী-শক্তির মধ্যে থাকে না, ঠিক যেমন বিদ্যুৎ যে যন্ত্রপাতিকে শক্তি দেয় সেই যন্ত্রের কোন বৈশিষ্ট্য বিদ্যুৎ গ্রহণ করে না। যখন কেউ মারা যায়, আত্মা (জীবনী-শক্তি) দেহ কোষগুলিকে আর প্রাণচঞ্চল করে না, ঠিক যেমন একটি আলো নিভে যায় যখন বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যখন জীবনী-শক্তি মনুষ্য দেহকে বাঁচিয়ে রাখা বন্ধ করে দেয়, মানুষ—প্রাণটি—মারা যায়।—গীতসংহিতা ১০৪:২৯; উপদেশক ১২:১, ৭.

“তুমি ধূলিতে প্রতিগমন করিবে”

৭. যদি আদম ঈশ্বরের অবাধ্য হত তাহলে তার কী হত?

পাপী আদমের জন্য মৃত্যুর অর্থ কী তা যিহোবা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। ঈশ্বর বলেছিলেন: “তুমি ঘর্ম্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে; তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৯) আদম কোথায় ফিরে যাবে? মৃত্তিকায়, ধূলিতে যা থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। মৃত্যুতে আদম শুধুমাত্র অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে!

৮. প্রাণ হিসাবে, প্রাধান্যে মানুষ পশুদের চেয়ে বড় নয় কিভাবে?

এই বিষয়ে, মানুষের মৃত্যু পশুদের মৃত্যু থেকে আলাদা নয়। তারাও প্রাণ এবং একই আত্মা, অথবা জীবনী-শক্তি, তাদের কর্মচঞ্চল করে তোলে। (আদিপুস্তক ১:২৪) উপদেশক ৩:১৯, ২০ পদে, জ্ঞানী ব্যক্তি শলোমন আমাদের বলেন: “এ যেমন মরে, সে তেমনি মরে; এবং তাহাদের সকলেরই নিঃশ্বাস [“আত্মা,” NW] এক; [মৃত্যুতে] পশু হইতে মানুষের কিছু প্রাধান্য নাই . . . সকলেই ধূলি হইতে উৎপন্ন, এবং সকলেই ধূলিতে প্রতিগমন করে।” প্রাধান্যে মানুষ পশুদের উপরে এই অর্থে যে তাকে ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছিল, যিহোবার গুণাবলিকে প্রতিফলিত করে। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭) তবুও, মৃত্যুতে মানুষ ও পশু একইভাবে ধূলিতে ফিরে যায়।

৯. মৃতদের অবস্থা কী এবং তারা কোথায় যায়?

মৃত্যুর কী অর্থ শলোমন আরও ব্যাখ্যা করেছিলেন, এই বলে: “জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না।” হ্যাঁ, মৃতেরা সম্পূর্ণরূপে কিছুই জানে না। এই কারণেই, শলোমন উপদেশ দিয়েছিলেন: “তোমার হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তোমার শক্তির সহিত তাহা কর; কেননা তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” (উপদেশক ৯:৫, ১০) মৃতেরা কোথায় যায়? শিওলে (ইব্রীয়, শিওল), মানবজাতির সাধারণ কবরে। আমাদের মৃত প্রিয়জনেরা কোন কিছু সম্বন্ধেই সচেতন নয়। তারা কষ্ট পাচ্ছে না এবং তারা কোনভাবেই আমাদের প্রভাবিত করতে পারে না।

১০. আমরা কেন বলতে পারি যে মৃত্যুতেই সমাপ্তি হবে তা আবশ্যিক নয়?

১০ তাহলে আমরা সকলে এবং আমাদের প্রিয়জনেরা কী অবশ্যই মাত্র কয়েক বছরের জন্য জীবিত থাকব এবং তারপরে চিরকালের জন্য অস্তিত্বহীন হয়ে যাব? বাইবেল অনুসারে নয়। আদমের বিদ্রোহের সময়ে, যিহোবা ঈশ্বর মানুষের পাপের ভয়ঙ্কর পরিণতিকে পালদুট দেওয়ার তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা করেছিলেন। মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে মৃত্যুর কোন অংশ ছিল না। (যিহিষ্কেল ৩৩:১১; ২ পিতর ৩:৯) সুতরাং, মৃত্যুই যে আমাদের অথবা আমাদের প্রিয়জনদের জন্য পূর্ণ সমাপ্তি তা আবশ্যিক নয়।

“নিদ্রা গিয়াছে”

১১. যীশু তাঁর মৃত বন্ধু লাসারের অবস্থার বর্ণনা কিভাবে করেছিলেন?

১১ আমাদের এবং আমাদের মৃত প্রিয়জনদের আদমজনিত মৃত্যু থেকে উদ্ধার করা যিহোবার উদ্দেশ্য। তাই, ঈশ্বরের বাক্য মৃতদের প্রতি এইভাবে উদুল্লখ করে যেন তারা নিদ্রা গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর বন্ধু লাসার মারা গিয়েছে জেনে, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমাদের বন্ধু লাসার নিদ্রা গিয়াছে, কিন্তু আমি নিদ্রা হইতে তাহাকে জাগাইতে যাইতেছি।” যেহেতু শিষ্যেরা সঙ্গে সঙ্গে এই কথার অর্থ বুঝতে পারেনি, যীশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “লাসার মরিয়াছে।” (যোহন ১১:১১, ১৪) তারপর যীশু বৈথনিয়া নগরে গিয়েছিলেন, যেখানে লাসারের বোনেরা মার্থা ও মরিয়ম তাদের ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য বিলাপ করছিল। যখন যীশু মার্থাকে বলেছিলেন, “তোমার ভাই আবার উঠিবে,” তখন সে মানব পরিবারের উপরে মৃত্যুর প্রভাবকে পালদুট দেওয়ার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের উপরে তার বিশ্বাসকে প্রকাশ করেছিল। সে বলেছিল: “আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে।”—যোহন ১১:২৩, ২৪.

১২. মৃতদের সম্বন্ধে শোকার্ত মার্থার কী আশা ছিল?

১২ মৃত্যুর পরে অন্য কোথাও এক অমর প্রাণের বেঁচে থাকা সম্বন্ধে মার্থা কিছু বলেনি। সে এই বিশ্বাস করেনি যে লাসার তার অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে ইতিমধ্যেই কোন আত্মিক রাজ্যে চলে গিয়েছে। মৃত্যু থেকে এক পুনরুত্থান, মার্থার এই অপূর্ব আশার উপরে বিশ্বাস ছিল। সে বুঝেছিল যে লাসারের দেহ থেকে কোন অমর প্রাণ বেরিয়ে চলে যায়নি, কিন্তু তার মৃত ভাই অস্তিত্বহীন হয়ে গিয়েছে। প্রতিকারের উপায় হবে তার ভাইয়ের পুনরুত্থান।

১৩. কোন্‌ ঈশ্বর-দত্ত ক্ষমতা যীশুর রয়েছে এবং তিনি কিভাবে এই ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন?

১৩ মানবজাতিকে পুনরুদ্ধার করতে যীশু খ্রীষ্ট হলেন সেই ব্যক্তি যাকে যিহোবা ঈশ্বর শক্তি দিয়েছেন। (হোশেয় ১৩:১৪) সুতরাং, মার্থার কথার উত্তরে, যীশু বলেছিলেন: “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে।” (যোহন ১১:২৫) এ সম্পর্কে যীশু তাঁর ঈশ্বর-দত্ত ক্ষমতাকে প্রদর্শন করেছিলেন যখন তিনি লাসারের কবরে গিয়েছিলেন, যে চার দিন যাবৎ মারা গিয়েছিল এবং তাকে আবার জীবিত করেছিলেন। (যোহন ১১:৩৮-৪৪) তাদের আনন্দকে শুধু কল্পনা করুন যারা এই পুনরুত্থান অথবা যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা কৃত অন্য পুনরুত্থানগুলি দেখেছিল!—মার্ক ৫:৩৫-৪২; লূক ৭:১২-১৬.

১৪. পুনরুত্থান এবং এক অমর প্রাণের ধারণা কেন অসংগত?

১৪ এই বিষয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করতে থামুন: কাউকেই পুনরুত্থিত করার, অথবা আবার জীবিত করবার প্রয়োজন হবে না, যদি মৃত্যুর পরে কোন অমর প্রাণ জীবিত থেকে থাকে। বাস্তবিক, লাসারের মত কাউকে পৃথিবীতে অসিদ্ধ জীবনে আবার পুনরুত্থিত করা কোন করুণার কাজ হবে না যদি সে ইতিমধ্যেই এক অপূর্ব স্বর্গীয় পুরস্কার পেয়ে গিয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, “অমর প্রাণ” এই অভিব্যক্তি বাইবেল কখনও ব্যবহার করেনি। পরিবর্তে, শাস্ত্র বলে, যে পাপ করছে এরূপ মানব প্রাণ প্রকৃতই মারা যায়। (যিহিষ্কেল ১৮:৪, ২০) তাই বাইবেল মৃত্যুর প্রকৃত সমাধান হিসাবে এক পুনরুত্থান ব্যবস্থার প্রতি নির্দেশ করে।

“কবরস্থ সকলে”

১৫. (ক) “পুনরুত্থান” শব্দটির অর্থ কী? (খ) যিহোবা ঈশ্বরের জন্য ব্যক্তিদের পুনরুত্থান কোন সমস্যার সৃষ্টি করবে না কেন?

১৫ যীশুর শিষ্যেরা “পুনরুত্থানের” জন্য যে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন তার আক্ষরিক অর্থ “উঠানো” বা “উঠে দাঁড়ানো।” এটি হল মৃত্যুর নির্জীব অবস্থা থেকে জেগে ওঠা—যেন, মানবজাতির সাধারণ কবর থেকে বেরিয়ে উদুঠ দাঁড়ানো। যিহোবা ঈশ্বর সহজেই কোন ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করতে পারেন। কেন? কারণ যিহোবা হলেন জীবনের সৃষ্টিকর্তা। আজ, মানুষে পুরুষ ও নারীর কণ্ঠস্বর এবং ছবি ভিডিও দুটপে রেকর্ড করে রাখতে পারে এবং সেই ব্যক্তিরা মারা যাওয়ার পরে পুনরায় সেই দুটপ চালাতে পারে। তাহলে, নিশ্চয়ই, আমাদের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা কোন ব্যক্তির বিশদ বিবরণ রেকর্ড করে রাখতে এবং এক নব-গঠিত শরীর দিয়ে ঐ একই ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করতে পারেন।

১৬. (ক) কবরস্থ সকলের সম্পর্কে যীশু কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) একজন ব্যক্তির পুনরুত্থানের ফল কী হবে তা কী নির্ধারণ করবে?

১৬ যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার [যীশুর] রব শুনিবে, এবং যাহারা সৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা জীবনের পুনরুত্থানের জন্য, ও যাহারা অসৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) সকলেই যারা যিহোবার স্মৃতিতে রয়েছে তারা পুনরুত্থিত এবং তাঁর পথসমূহে শিক্ষিত হবে। কারণ যারা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করবে, তাদের জন্য ফল হবে জীবনের পুনরুত্থান। কিন্তু, যারা ঈশ্বরের শিক্ষা এবং শাসনকে অস্বীকার করবে তাদের জন্য এটি হবে দণ্ডনীয় বিচারের এক পুনরুত্থান।

১৭. কারা পুনরুত্থিত হবে?

১৭ স্বাভাবিকভাবেই, যারা যিহোবার সেবকরূপে এক ধার্মিক পথ অনুসরণ করেছে, তারা পুনরুত্থিত হবে। বাস্তবে, পুনরুত্থানের আশাই অনেককে মৃত্যুর সম্মুখীন হতে শক্তি দিয়েছে, এমনকি প্রচণ্ড নির্যাতনের ঘটনার মধ্যেও। তারা জানত যে ঈশ্বর আবার তাদের জীবিত করতে পারবেন। (মথি ১০:২৮) কিন্তু ঈশ্বরের ধার্মিক মানসমূহ মেনে চলবে কি না তা না দেখিয়েই কোটি কোটি ব্যক্তি মারা গিয়েছে। তারাও পুনরুত্থিত হবে। এই সম্পর্কে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নিশ্চিত, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমি ঈশ্বরে এই প্রত্যাশা করিতেছি যে, ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫.

১৮. (ক) প্রেরিত যোহন পুনরুত্থানের কী দর্শন পেয়েছিলেন? (খ) ‘অগ্নিহ্রদে’ কী ধ্বংস করা হয় এবং এই ‘হ্রদ’ কী চিত্রিত করে?

১৮ প্রেরিত যোহন ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে তার এক রোমাঞ্চকর দর্শন পেয়েছিলেন। যোহন তারপর লিখেছিলেন: “সমুদ্র আপনার মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও পাতাল [“হেডিস্‌,” NW] আপনাদের মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন কার্য্যানুসারে বিচারিত হইল। পরে মৃত্যু ও পাতাল অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু।” (প্রকাশিত বাক্য ২০:১২-১৪) ভাবুন বিষয়টিকে! সকল মৃতেরা যারা ঈশ্বরের স্মৃতিশক্তিতে রয়েছে হেডিস্‌ (গ্রীক, হেইডিস্‌), অথবা শিওল, মানবজাতির সাধারণ কবর থেকে তাদের মুক্তির প্রত্যাশা রয়েছে। (গীতসংহিতা ১৬:১০; প্রেরিত ২:৩১) তাদের কার্যাদি দ্বারা প্রদর্শন করার এক সুযোগ তারা পাবে যে ঈশ্বরের সেবা তারা করবে কি না। তারপর “মৃত্যু ও পাতাল” (হেডিস্‌) যাকে বলা হয়েছে “অগ্নিহ্রদ” তাতে নিক্ষিপ্ত হবে, যা সম্পূর্ণ ধ্বংসকে চিত্রিত করে, ঠিক যেমন “গিহেন্না” শব্দটিও চিত্রিত করে থাকে। (লূক ১২:৫) মানবজাতির সাধারণ কবরকেও খালি করে দেওয়া হবে এবং পুনরুত্থান সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে তার আর কোন অস্তিত্বও থাকবে না। বাইবেল থেকে এটি জানা কতই সান্ত্বনাদায়ক যে ঈশ্বর কাউকে যাতনা দেন না!—যিরমিয় ৭:৩০, ৩১.

কোথায় পুনরুত্থান হবে?

১৯. মানবজাতির মধ্যে কিছু ব্যক্তিকে কেন স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে এবং ঈশ্বর তাদের কী ধরনের দেহ দেবেন?

১৯ এক সীমিত সংখ্যক পুরুষ এবং নারী স্বর্গে জীবনের জন্য পুনরুত্থিত হবে। যীশুর সঙ্গে রাজা এবং যাজকরূপে, মৃত্যুর সকল প্রভাবকে সরিয়ে দিতে তারা অংশ নেবে যা মানবজাতি প্রথম পুরুষ, আদম থেকে উত্তরাধিকারসূদুত্র পেয়েছিল। (রোমীয় ৫:১২; প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০) খ্রীষ্টের সঙ্গে শাসন করতে কতজনকে ঈশ্বর স্বর্গে নিয়ে যাবেন? বাইবেল অনুসারে, মাত্র ১,৪৪,০০০ জনকে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৪; ১৪:১) পুনরুত্থিত এই ব্যক্তিদের প্রত্যেককে যিহোবা এক আত্মিক দেহ দেবেন যাতে তারা স্বর্গে বাস করতে পারে।—১ করিন্থীয় ১৫:৩৫, ৩৮, ৪২-৪৫; ১ পিতর ৩:১৮.

২০. পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে, বাধ্য মানবজাতির কী অভিজ্ঞতা লাভ হবে?

২০ আজ পর্যন্ত যারা মারা গিয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশকেই এক পরমদেশ পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হবে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১, ২৯; মথি ৬:১০) কিছু ব্যক্তিকে স্বর্গে পুনরুত্থিত করার আংশিক কারণ হল পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করা। স্বর্গে যীশু খ্রীষ্ট ও ১,৪৪,০০০ জন ক্রমশ বাধ্য মানবজাতিকে পূর্ণ সিদ্ধতায় ফিরিয়ে আনবেন যা আমাদের আদি পিতামাতা হারিয়েছিল। এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে পুনরুত্থিতেরাও, যীশু যা ইঙ্গিত করেছিলেন যখন তিনি তাঁর পাশে কাষ্ঠদণ্ডে বিদ্ধ সেই মরণাপন্ন ব্যক্তিটিকে বলেছিলেন: “তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।”—লূক ২৩:৪২, ৪৩.

২১. ভাববাদী যিশাইয় এবং প্রেরিত যোহন অনুসারে, মৃত্যুর কী ঘটবে?

২১ পরমদেশ পৃথিবীতে, মৃত্যুকে, যা আজ এত ব্যর্থতা উৎপন্ন করে, সরিয়ে দেওয়া হবে। (রোমীয় ৮:১৯-২১) ভাববাদী যিশাইয় ঘোষণা করেছিলেন যে যিহোবা ঈশ্বর “মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট” করবেন। (যিশাইয় ২৫:৮) প্রেরিত যোহনকে সেই সময়ের এক দর্শন দেওয়া হয়েছিল যখন বাধ্য মানবজাতি যাতনা ও মৃত্যু থেকে স্বাধীনতার অভিজ্ঞতা করবে। হ্যাঁ, “ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন। . . . আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪.

২২. পুনরুত্থান সম্বন্ধে জ্ঞান আপনাকে কিভাবে প্রভাবিত করে?

২২ বাইবেলের স্পষ্ট শিক্ষাগুলি মৃতদের কী অবস্থা হয় সে সম্বন্ধে বিভ্রান্তি দূর করে। শাস্ত্র পরিষ্কারভাবে বলে “শেষ শত্রু” মৃত্যু তাকে ধ্বংস করা হবে। (১ করিন্থীয় ১৫:২৬) পুনরুত্থানের আশার জ্ঞান থেকে আমরা কত শক্তি ও সান্ত্বনা লাভ করতে পারি! আর আমরা কত খুশি হতে পারি যে আমাদের মৃত প্রিয়জনেরা যারা ঈশ্বরের স্মৃতিশক্তিতে রয়েছে তারা সকল উত্তম বস্তু যা তিনি তাদের জন্য সঞ্চিত রেখেছেন যারা তাঁকে প্রেম করে, তা উপভোগ করতে মৃত্যুর নিদ্রা থেকে জেগে উঠবে! (গীতসংহিতা ১৪৫:১৬) এরূপ আশীর্বাদ সকল ঈশ্বরের রাজ্যের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে। কিন্তু তার শাসন কখন শুরু হওয়ার ছিল? আসুন দেখি।

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

মানুষের মধ্যে যে আত্মা আছে তা কী?

আপনি মৃতদের অবস্থা কিভাবে বর্ণনা করবেন?

কারা পুনরুত্থিত হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যেমন যীশু লাসারকে কবর থেকে ডেকেছিলেন, তেমনি কোটি কোটি ব্যক্তি পুনরুত্থিত হবে

[৮৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আনন্দ পরিব্যাপ্ত হবে যখন ‘ঈশ্বর মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করবেন’