সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে এমন এক পরিবার গড়ে তোলা

ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে এমন এক পরিবার গড়ে তোলা

অধ্যায় ১৫

ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে এমন এক পরিবার গড়ে তোলা

১-৩. বিবাহিত জীবনে এবং পিতৃত্ব বা মাতৃত্বে সাধারণ সমস্যাগুলিও সমাধান করতে কেন কিছু ব্যক্তি অসমর্থ হন, কিন্তু বাইবেল কেন সাহায্য করতে পারে?

 মনে করুন আপনি পরিকল্পনা করলেন নিজের বাড়ি তৈরি করবেন। প্রথমে আপনি জমি কিনলেন। সাগ্রহ প্রত্যাশায়, আপনার মনশ্চক্ষে আপনি নিজের নতুন গৃহ দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু যদি নির্মাণের জন্য কোন সরঞ্জাম অথবা দক্ষতা আপনার না থাকে তাহলে কী? কী নৈরাশ্যজনকই না হবে আপনার প্রচেষ্টা!

বহু দম্পতি বিবাহিত জীবন আরম্ভ করে এক সুখী পরিবারের স্বপ্ন নিয়ে, কিন্তু তা গড়ে তোলবার জন্য না থাকে তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি, না থাকে তাদের দক্ষতা। বিবাহের অল্পকাল পরেই, বিপরীত নিদর্শন দেখা যায়। লড়াই ও ঝগড়াঝাঁটি দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়। যখন সন্তানদের জন্ম হয়, নব পিতামাতা দেখে যে বিবাহিত জীবনের মতই পিতামাতার কর্তব্য পালনেও তাদের দক্ষতা অতি সামান্যই।

সুখের বিষয়, বাইবেল কিন্তু, সাহায্য করতে পারে। এর নীতি সকল সেই সরঞ্জামগুলি যা আপনাকে সক্ষম করে এক সুখী পরিবার গড়ে তুলতে। (হিতোপদেশ ২৪:৩) আসুন আমরা দেখি কিভাবে।

এক সুখী বিবাহিত জীবন গড়ে তোলার সরঞ্জাম সকল

৪. বিবাহিত জীবনে সমস্যা আশা করা যায় কেন এবং বাইবেলে কী মানসমূহ দেওয়া রয়েছে?

কোন বিবাহিত দম্পতিকে যত মানানসই বলেই মনে হোক না কেন, তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে মানসিক গঠনে, বাল্যাবস্থার অভিজ্ঞতায় এবং পারিবারিক পটভূমিকায়। সুতরাং, আশা করা যায় বিবাহের পরে কিছু সমস্যা আসবেই। সেগুলির মোকাবিলা করা যাবে কিভাবে? হ্যাঁ, নির্মাতারা যখন গৃহ নির্মাণ করে, তারা স্থপতির প্ল্যানগুলির পরামর্শ নেয়। এগুলি হল নির্দেশসমূহ যা অনুসরণ করতে হবে। এক সুখী পরিবার গড়ে তোলার জন্য বাইবেল ঈশ্বরের নির্দেশসমূহ প্রদান করে। আসুন এর কয়েকটি এখন পরীক্ষা করা যাক।

৫. বিবাহিত জীবনে বিশ্বস্ততার গুরুত্বের উপর বাইবেল কিভাবে জোর দেয়?

বিশ্বস্ততা। যীশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” a (মথি ১৯:৬) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) সুতরাং বিবাহিত ব্যক্তিদের তাদের সাথীদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য যিহোবার প্রতি এক নৈতিক বাধ্যতাবোধ থাকা উচিত।—আদিপুস্তক ৩৯:৭-৯.

৬. এক বিবাহকে রক্ষা করতে বিশ্বস্ততা কিভাবে সাহায্য করবে?

বিশ্বস্ততা বিবাহিত জীবনকে সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়। বিশ্বস্ত সাথীরা জানে যে, যাই ঘটুক না কেন, একে অপরকে সাহায্য করবে। (উপদেশক ৪:৯-১২) সামান্য সমস্যার সূত্রপাতেই যারা তাদের বিবাহকে ভেঙ্গে দেয় তাদের থেকে কতই না পৃথক! এইধরনের ব্যক্তিরা শীঘ্র সিদ্ধান্ত করে নেয় যে ‘তারা ভুল সাথীকে বেছে নিয়েছিল,’ তারা ‘আর একে অপরকে ভালবাসে না,’ ও এক নতুন সাথীই হল এর সমাধান। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত স্বামী বা স্ত্রী কাউকেই মানসিকভাবে গঠিত হয়ে ওঠার সুযোগ দেয় না। পরিবর্তে, এরূপ অবিশ্বস্ত ব্যক্তিরা নতুন বিবাহ সাথীদের কাছে একই সমস্যাগুলি উপস্থিত করে। যখন কোন ব্যক্তির একটি সুন্দর গৃহ থাকে অথচ দেখে যে ছাদ থেকে জল পড়ছে, নিশ্চয়ই সে তা সারাবার চেষ্টা করে। অনুরূপে, বিবাহিত জীবনে ঝগড়াঝাঁটির উৎসের কারণগুলি সমাধানের পথ সাথী পরিবর্তন করা নয়। যখন সমস্যার উদ্ভব হয়, বিবাহকে ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না, কিন্তু তাকে রক্ষা করার জন্য কদুঠার প্রচেষ্টা করুন। এরূপ বিশ্বস্ততা বিবাহবন্ধনকে সেইভাবে দেখে যেন তা সুরক্ষা, তত্ত্বাবধান এবং অভিলাষের যোগ্য।

৭. বিবাহিত ব্যক্তিদের পক্ষে ভাববিনিময় প্রায়ই কঠিন হয় কেন, কিন্তু “নূতন মনুষ্যকে পরিধান” কিভাবে সাহায্য করতে পারে?

ভাববিনিময়। “মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়,” বলে বাইবেলের একটি প্রবাদ। (হিতোপদেশ ১৫:২২) তবুও, কিছু বিবাহিত দম্পতিদের জন্য ভাববিনিময় কঠিন হয়ে পড়ে। এরূপ হয় কেন? কারণ মানুষের ভাববিনিময়ের ধরন বিভিন্ন। এটি এক বাস্তব সত্য যা প্রায়ই যথেষ্ট পরিমাণে ভুল বোঝাবুঝিতে এবং নিরাশায় পরিচালিত করে। ছেলেবেলায় লালনপালনের এক ভূমিকা এর মধ্যে থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হয়ত কেউ এমন পরিবেশে বড় হয়ে উদুঠছে যেখানে বাবামা সর্বদাই ঝগড়া করত। এখন প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত ব্যক্তিরূপে, তারা হয়ত জানে না কিভাবে তাদের সাথীদের সঙ্গে স্নেহ ও ভালবাসা সহকারে কথা বলতে হয়। তবুও, আপনার গৃহ ‘এক বিবাদযুক্ত গৃহে’ অবনতি হওয়ার প্রয়োজন নেই। (হিতোপদেশ ১৭:১) বাইবেল “নূতন মনুষ্যকে পরিধান” করার উপরে জোর দেয় এবং এটি বিদ্বেষপূর্ণ তিক্ততা, চিৎকার ও কটুভাষণকে ক্ষমা করে না।—ইফিষীয় ৪:২২-২৪, ৩১.

৮. যখন আপনার সাথীর সঙ্গে মতানৈক্য হয়, কী সাহায্যদায়ক হতে পারে?

যখন মতানৈক্য হয় তখন আপনি কী করতে পারেন? আপনি ও আপনার সাথী উভয়েই যদি মেজাজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে হিতোপদেশ ১৭:১৪ পদের উপদেশ অনুসরণ করলে হয়ত ভাল করবেন: “উচ্চণ্ড হইবার পূর্ব্বে বিবাদ ত্যাগ কর।” হ্যাঁ, পরবর্তী সময়ের জন্য আলোচনা স্থগিত রাখতে পারেন, যখন আপনি ও আপনার সাথী উভয়েই শান্ত হয়েছেন। (উপদেশক ৩:১, ৭) যাই ঘটুক না কেন, চেষ্টা করুন “শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর” হতে। (যাকোব ১:১৯) আপনার লক্ষ্য হবে পরিস্থিতির সংশোধন করা, তর্কের জয় নয়। (আদিপুস্তক ১৩:৮, ৯) কথা এবং বলবার ধরনকে বেছে নিন যা আপনাকে ও আপনার সাথীকে শান্ত করবে। (হিতোপদেশ ১২:১৮; ১৫:১, ৪; ২৯:১১) সর্বোপরি, রাগান্বিত অবস্থায় থাকবেন না, কিন্তু একদুত্র নম্রভাবে প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্যের অন্বেষণ করুন।—ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭; ৬:১৮.

৯. কেন বলা যেতে পারে যে ভাববিনিময়ের শুরু হৃদয়ের মাঝে?

বাইবেলের একটি প্রবাদ বলে: “জ্ঞানবানের হৃদয় তাহার মুখকে বুদ্ধি দেয়, তাহার ওষ্ঠে পাণ্ডিত্য যোগায়।” (হিতোপদেশ ১৬:২৩) প্রকৃতই, তাহলে, ভাববিনিময়ে সাফল্যের চাবিটি রয়েছে হৃদয়ের মাঝে, মুখে নয়। আপনার সাথীর প্রতি আপনার মনোভাব কী? বাইবেল খ্রীষ্টানদের উৎসাহ দেয় “পরদুঃখে দুঃখিত” হতে। (১ পিতর ৩:৮) আপনি কী তা হন যখন আপনার বিবাহ-সাথী নিদারুণ মর্মপীড়া অনুভব করে? যদি হন, তা আপনাকে সাহায্য করবে জানতে কিভাবে উত্তর দিতে হবে।—যিশাইয় ৫০:৪.

১০, ১১. কিভাবে এক স্বামী ১ পিতর ৩:৭ পদের পরামর্শ প্রয়োগ করত পারে?

১০ সম্মান এবং শ্রদ্ধা। খ্রীষ্টীয় স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের সাথে “জ্ঞানপূর্ব্বক, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলে সমাদরের সাথে” বাস করতে বলা হয়েছে। (১ পিতর ৩:৭, NW) কোন ব্যক্তির তার স্ত্রীকে সম্মান করার সাথে যুক্ত রয়েছে স্ত্রীর মূল্য উপলব্ধি করা। কোন স্বামী যে তার স্ত্রীর সাথে “জ্ঞানপূর্ব্বক” বাস করে, তার উত্তম বিবেচনা রয়েছে স্ত্রীর অনুভূতি, ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা এবং মর্যাদার প্রতি। আরও তিনি শিখতে চাইবেন যিহোবা কোন্‌ দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীদের দেখেন এবং কিরূপ আচরণ তিনি তাদের প্রতি চান।

১১ আপনার গৃহে, ধরা যাক যে আপনার খুবই কার্যোপযোগী একটি পাত্র আছে যা বিশেষভাবে ভঙ্গুর। আপনি কি সেটিকে অত্যন্ত যত্নের সাথে ব্যবহার করবেন না? হ্যাঁ, পিতর “দুর্ব্বল পাত্র” কথাটি অনুরূপ এক চিন্তাধারায় ব্যবহার করেছিলেন এবং এটিই এক খ্রীষ্টীয় স্বামীকে তার প্রিয় স্ত্রীর প্রতি স্নেহপূর্ণ বিবেচনা দেখাতে পরিচালিত করা উচিত।

১২. কিভাবে এক স্ত্রী দেখাতে পারে যে সে তার স্বামীকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে?

১২ কিন্তু বাইবেল এক স্ত্রীকে কী উপদেশ দেয়? পৌল লিখেছিলেন: “স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে গভীর শ্রদ্ধা করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩, NW) ঠিক যেমন কোন স্ত্রীর প্রয়োজন আছে বোঝার যে তার স্বামী তাকে সম্মান দেয় ও গভীরভাবে ভালবাসে, তেমনি এক স্বামীরও প্রয়োজন রয়েছে বোঝার যে তার স্ত্রী তাকে শ্রদ্ধা করে। এক শ্রদ্ধাপূর্ণ স্ত্রী অবিবেচকের মত তার স্বামীর ভুলগুলি চতুর্দিকে বলে বেড়াবে না, স্বামী খ্রীষ্টান হোক বা অবিশ্বাসী হোক। লোকচক্ষুর আড়ালে অথবা সামনে, তার সমালোচনা করে এবং তাকে ছোট করে সে তার স্বামীর মর্যাদাহানি করবে না।—১ তীমথিয় ৩:১১; ৫:১৩.

১৩. কিভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতামত প্রকাশ করা যেতে পারে?

১৩ এর অর্থ এই নয় যে এক স্ত্রী তার মতামত প্রকাশ করতে পারবে না। যদি কোন কিছু তাকে বিচলিত করে, সে শ্রদ্ধার সাথে তা প্রকাশ করতে পারে। (আদিপুস্তক ২১:৯-১২) স্বামীকে কোন অভিপ্রায় জানানো তার প্রতি একটি বল ছোঁড়ার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। স্ত্রী আস্তে ছুঁড়তে পারে যাতে স্বামী সহজেই তা ধরতে পারে, অথবা স্ত্রী এত জোরে ছুঁড়তে পারে যাতে স্বামীকে তা আহত করে। কত অধিক উত্তম হয় যখন উভয় সাথীই দোষারোপ করাকে এড়িয়ে চলে, বরং, ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মায়’ কথা বলে!—মথি ৭:১২; কলসীয় ৪:৬; ১ পিতর ৩:৩, ৪.

১৪. যদি আপনার সাথী বিবাহিত জীবনে বাইবেল নীতিগুলির প্রয়োগে আগ্রহ না দেখায় তাহলে আপনার কী করা উচিত?

১৪ যেমন আমরা দেখেছি, বাইবেল নীতিগুলি এক সুখী বিবাহিত জীবন গড়ে তুলতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু বাইবেল যা বলে যদি আপনার সাথী তাতে সামান্যই আগ্রহ দেখায় তাহলে কী? তথাপি অনেক কিছু অর্জন করা যেতে পারে যদি আপনি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান আপনার ভূমিকায় প্রয়োগ করেন। পিতর লিখেছিলেন: “হে, ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।” (১ পিতর ৩:১, ২) অবশ্যই, এটি এক স্বামীর প্রতিও প্রযোজ্য হবে যার স্ত্রী বাইবেলের প্রতি উদাসীন। আপনার সাথী যাই করা বেছে নিক না কেন, বাইবেল নীতিগুলিকে আপনাকে এক অধিক উত্তম স্বামী বা স্ত্রীরূপে পরিণত করুক। ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান আপনাকে উত্তম পিতামাতাও করতে পারে।

সন্তানদের ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান অনুসারে মানুষ করে তোলা

১৫. সন্তানপালনের ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি কখনও কখনও কিভাবে সঞ্চারিত হয়, কিন্তু এই নিদর্শন কিভাবে ভাঙা যেতে পারে?

১৫ কেবলমাত্র একটি করাত বা একটি হাতুড়ি থাকলেই কেউ এক দক্ষ সূত্রধর তৈরি হয় না। একইভাবে, শুধু সন্তান থাকলেই এক দক্ষ পিতামাতা তৈরি হয় না। জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে, পিতামাতারা প্রায়ই তাদের সন্তানদের মানুষ করে তোলেন যেভাবে তারা নিজেরা মানুষ হয়েছিলেন। এইভাবে, সন্তানপালনের ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি কখনও কখনও একটি বংশ থেকে পরেরটিতে স্থানান্তরিত হয়। একটি প্রাচীন ইব্রীয় প্রবাদ বলে: “পিতৃপুরুষেরা অম্ল দ্রাক্ষাফল খায়, তাই সন্তানদের দাঁত টকিয়া যায়।” তবুও, শাস্ত্রাবলী দেখায় যে কোন ব্যক্তিকে তার পিতামাতা দ্বারা প্রদর্শিত পথই যে অনুসরণ করতে হবে তা নয়। সে এক ভিন্ন পথ বেছে নিতে পারে, যা যিহোবার নিয়ম দ্বারা প্রভাবিত।—যিহিষ্কেল ১৮:২, ১৪, ১৭.

১৬. আপনার পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং এর অন্তর্ভুক্ত কী?

১৬ যিহোবা আশা করেন যে খ্রীষ্টীয় পিতামাতারা তাদের সন্তানদের উপযুক্ত পথনির্দেশ দেবেন এবং যত্ন নেবেন। পৌল লিখেছিলেন: “কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৫:৮) কী শক্তিশালী কথা! যোগানদাতারূপে আপনার ভূমিকা পূর্ণ করা, যার অন্তর্ভুক্ত আপনার সন্তানদের দৈহিক, আধ্যাত্মিক এবং মানসিক প্রয়োজনগুলির যত্ন নেওয়া, একজন ঈশ্বরীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ এবং দায়িত্ব। বাইবেল প্রয়োজনীয় নীতি সকল দেয় যা পিতামাতাদের সাহায্য করতে পারে তাদের সন্তানদের জন্য এক সুখী পরিবেশ গড়ে তুলতে। এর কয়েকটি বিবেচনা করুন।

১৭. যদি ঈশ্বরের নিয়ম আপনার সন্তানদের হৃদয়ে থাকতে হয় তাহলে কিসের প্রয়োজন আছে?

১৭ এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করুন। ইস্রায়েলীয় পিতামাতাদের আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল: “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে [ঈশ্বরের বাক্য] যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাদুত্রাত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের ঈশ্বরের মান সকল শিক্ষা দিতে হয়েছিল। কিন্তু এই আদেশের ভূমিকা করা হয়েছিল এই দৃঢ় উক্তি দ্বারা: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) হ্যাঁ, পিতামাতাদের যা নেই তা তারা দিতে পারে না। ঈশ্বরের নিয়ম সকল অবশ্যই প্রথমে আপনাদের নিজেদের হৃদয়ের উপরে খোদিত রাখতে হবে যদি আপনারা চান যে সেগুলি আপনাদের সন্তানদের হৃদয়ের উপরে লিখিত থাকুক।—হিতোপদেশ ২০:৭; লূক ৬:৪০ তুলনা করুন।

১৮. প্রেম প্রকাশে, যিহোবা পিতামাতাদের জন্য কিভাবে এক অপূর্ব উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

১৮ আপনার প্রেমের প্রতিশ্রুতি দিন। যীশুর বাপ্তিস্মের সময়ে, যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “তুমি আমার প্রিয় পুত্ত্র, তোমাতেই আমি প্রীত।” (লূক ৩:২২) যিহোবা এইভাবে তাঁর পুত্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, স্পষ্টভাবে যীশুর প্রতি অনুমোদন প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর প্রেম সম্বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যীশু পরে তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “জগৎ পত্তনের পূর্ব্বে তুমি আমাকে প্রেম করিয়াছিলে।” (যোহন ১৭:২৪) ঈশ্বরীয় পিতামাতা হিসাবে, সুতরাং, আপনার সন্তানদের বুঝতে দিন তাদের জন্য আপনার প্রেমের মৌখিক এবং দৈহিক অভিব্যক্তিগুলি—এবং প্রায়ই তা করুন। সর্বদা স্মরণ রাখবেন যে “প্রেমই গাঁথিয়া তুলে।”—১ করিন্থীয় ৮:১.

১৯, ২০. সন্তানদের উপযুক্ত শাসনের সঙ্গে কী জড়িত রয়েছে এবং যিহোবার উদাহরণ থেকে পিতামাতারা কিভাবে উপকৃত হতে পারেন?

১৯ শাসন। প্রেমপূর্ণ শাসনের গুরুত্বের উপর বাইবেল জোর দেয়। (হিতোপদেশ ১:৮) যে পিতামাতারা আজ তাদের সন্তানদের পথনির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যান, কাল তারা হৃদয়বিদারক ফলাফলের প্রায় নিশ্চিত সম্মুখীন হবেন। অপরদিকে, পিতামাতাদের সাবধানও করা হয় চরমে না যেতে। “পিতারা,” পৌল লিখেছিলেন, “তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” (কলসীয় ৩:২১) সন্তানদের অতিশাসন করা অথবা তাদের ত্রুটিগুলির ক্রমাগত খুঁত ধরা ও তাদের প্রচেষ্টার সমালোচনা করাকে পিতামাতারা অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন।

২০ যিহোবা ঈশ্বর, আমাদের স্বর্গীয় পিতা, শাসন প্রদানের উদাহরণ স্থাপন করেন। তাঁর শাসন কখনও চরম হয় না। “আমি বিচারানুরূপ শাস্তি দিব,” ঈশ্বর তাঁর প্রজাদের বলেছিলেন। (যিরমিয় ৪৬:২৮) পিতামাতাদের উচিত এই বিষয়ে যিহোবাকে অনুকরণ করা। শাসন যা পরিমিত মাত্রা ছাড়িয়ে যায় অথবা সংশোধন এবং শিক্ষার উদ্দেশ্যকে অতিক্রম করে তা নিশ্চিত দুক্রাধ উৎপাদন করে।

২১. কিভাবে পিতামাতারা সুনিশ্চিত হবেন যে তাদের শাসন ফলপ্রসূ কি না?

২১ কিভাবে পিতামাতারা সুনিশ্চিত হবেন যে তাদের শাসন ফলপ্রসূ কি না? তারা নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘আমার শাসন কী সম্পাদন করে?’ এটি শিক্ষা দেওয়া উচিত। আপনার সন্তানের বোঝা উচিত যে কেন তাকে শাসন করা হচ্ছে। তাদের সংশোধনের পরবর্তী ফল সম্বন্ধেও পিতামাতাদের চিন্তিত থাকা উচিত। সত্য, প্রায় সব ছেলেমেয়েরাই শাসনের সময় প্রথমে বিরক্ত হয়। (ইব্রীয় ১২:১১) কিন্তু শাসন যেন কখনই কোন সন্তানকে ভীত বা পরিত্যক্ত বোধ না করায় অথবা এই ছাপ না ফেলে যে সে সহজাতভাবেই দুষ্ট। তাঁর প্রজাদের শাসন করার পূর্বে, যিহোবা বলেছিলেন: “ভয় করিও না, কেননা আমি তোমার সহবর্ত্তী।” (যিরমিয় ৪৬:২৮) হ্যাঁ, এমনভাবে শাসন করা উচিত যেন আপনার সন্তান বুঝতে পারে যে আপনি তার সঙ্গে রয়েছেন একজন স্নেহশীল, সাহায্যকারী পিতা বা মাতা রূপে।

“সুমন্ত্রণা লাভ” করা

২২, ২৩. এক সুখী পরিবার গড়ে তুলবার নির্দেশ আপনি কিভাবে পেতে পারেন?

২২ আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি যে যিহোবা এক সুখী পরিবার গড়ে তুলবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি আমাদের দিয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র সরঞ্জামের অধিকারী হওয়াই যথেষ্ট নয়। সেগুলি উপযুক্তরূপে ব্যবহার করতে আমরা অবশ্যই অভ্যাস করব। উদাহরণস্বরূপ, একজন নির্মাতা যেভাবে তার সরঞ্জাম সকল ব্যবহার করে, তার দ্বারা সে হয়ত খুবই মন্দ অভ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে। সে হয়ত কিছু সরঞ্জাম সম্পূর্ণ ভুল কাজে ব্যবহার করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, তার কার্যপ্রণালীর ফল হবে স্বাভাবিকভাবেই এক নিকৃষ্ট মানের কাজ। অনুরূপে, আপনি হয়ত এতক্ষণে জানতে পেরেছেন যে কিছু বিপজ্জনক অভ্যাস আপনার পরিবারে অজ্ঞাতসারে প্রবেশ করেছে। কিছু অভ্যাস হয়ত গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে গিয়েছে এবং পরিবর্তন করা কঠিন। তবুও, বাইবেলের উপদেশ অনুসরণ করুন: “জ্ঞানবান শুনিবে ও পাণ্ডিত্যে বৃদ্ধি পাইবে, বুদ্ধিমান সুমন্ত্রণা লাভ করিবে।”—হিতোপদেশ ১:৫.

২৩ ক্রমাগত ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান অর্জন করলে আপনি সুমন্ত্রণা লাভ করতে পারবেন। পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করা যায় এরূপ বাইবেল নীতিগুলির প্রতি সদা সচেতন থাকুন এবং যেখানে প্রয়োজন পরিবর্তন করুন। পরিপক্ব খ্রীষ্টানদের মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করুন যারা বিবাহ-সাথী এবং পিতামাতারূপে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। তাদের সাথে কথা বলুন। সর্বোপরি, প্রার্থনায় যিহোবাকে আপনার উদ্বেগ সকল জ্ঞাত করুন। (গীতসংহিতা ৫৫:২২; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) তিনি আপনাকে সাহায্য করতে পারেন এক সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে যা তাঁকে সম্মান দেবে।

[পাদটীকাগুলো]

a পুনর্বিবাহ করার অনুমতি দিতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য একমাত্র শাস্ত্রীয় ভিত্তি হল “ব্যভিচার”—বিবাহিত জীবনের বাইরে যৌনসম্পর্ক।—মথি ১৯:৯.

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

বিশ্বস্ততা, ভাববিনিময়, সম্মান এবং শ্রদ্ধা কিভাবে এক সুখী বিবাহিত জীবনে পরিণত করে?

কী কী উপায়ে পিতামাতারা তাদের সন্তানদের তাদের ভালবাসা সম্বন্ধে প্রত্যাশা দান করতে পারেন?

উপযুক্ত শাসনের সঙ্গে কী কী বিষয় জড়িত রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪৭ পৃষ্ঠার চিত্র]