সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করে

ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করে

অধ্যায় ১০

ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করে

১, ২. মনুষ্য সরকারগুলি কিভাবে অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে?

 হয়ত এরকম কোন অভিজ্ঞতা আপনার আছে যে একটি যন্ত্র আপনি কিনলেন, কিন্তু তারপর দেখলেন যে সেটি কাজ করছে না। ধরা যাক যে আপনি মেরামতের একজন মিস্ত্রিকে ডাকলেন। যন্ত্রটিকে সে “সারাবার” কিছুক্ষণ পরেই, কিন্তু, খারাপ হয়ে গেল। কী হতাশাজনক এটি!

মানুষের সরকারগুলি সম্বন্ধেও তাই। মানবজাতি সর্বদাই এক সরকারের আশা করেছে যা সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করবে। যদিও, সমাজের ভাঙনকে সারাবার কদুঠার প্রচেষ্টা প্রকৃতই সফল হয়নি। বহু সংখ্যক শান্তি চুক্তি করা হয়েছে—ও তারপর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আরও, কোন্‌ সরকার সক্ষম হয়েছে দারিদ্র্য, কুসংস্কার, অপরাধ, রোগব্যাধি এবং পরিবেশ ধ্বংসকে নিশ্চিহ্ন করতে? মানুষের শাসন সংশোধনের অতীত। এমনকি ইস্রায়েলের জ্ঞানী রাজা শলোমনও জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “মানুষ কেমন করিয়া আপন পথ বুঝিবে?”—হিতোপদেশ ২০:২৪.

৩. (ক) যীশুর প্রচারের বিষয়বস্তু কী ছিল? (খ) কিভাবে কিছু ব্যক্তি ঈশ্বরের রাজ্যের বর্ণনা করে?

হতাশ হবেন না! এক স্থায়ী পৃথিবীব্যাপী সরকার শুধু এক স্বপ্ন নয়। যীশুর শিক্ষার বিষয়বস্তু এটিই ছিল। তিনি একে বলেছিলেন “ঈশ্বরের রাজ্য” এবং তিনি তাঁর অনুগামীদের এর জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (লূক ১১:২; ২১:৩১) অবশ্যই, ধর্মীয় দলগুলিতে কখনও কখনও ঈশ্বরের রাজ্যের উদুল্লখ করা হয়। বাস্তবে, কোটি কোটি লোকে প্রতিদিন এর জন্য প্রার্থনা করে যখন তারা প্রভুর প্রার্থনা পুনরাবৃত্তি করে (যাকে আমাদের পিতার অথবা আদর্শ প্রার্থনাও বলা হয়ে থাকে)। কিন্তু লোকে নানাভাবে উত্তর দেয় যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, “ঈশ্বরের রাজ্য সেটি কী?” কেউ কেউ বলে, “এটি আপনার হৃদয়ের মধ্যে আছে।” অন্যেরা এটিকে স্বর্গ বলে। বাইবেল এক স্পষ্ট উত্তর দেয়, যা আমরা দেখব।

এক উদ্দেশ্যসহ এক রাজ্য

৪, ৫. কেন যিহোবা তাঁর সার্বভৌমত্বের এক নবপ্রকাশ দেখাতে মনস্থ করেছিলেন এবং তা কী সম্পাদন করবে?

যিহোবা ঈশ্বর সর্বদাই এই বিশ্বের রাজা, অথবা সার্বভৌম শাসক। তিনি যে সবকিছু সৃষ্টি করেছিলেন এই তথ্যই তাঁকে সেই সর্বোচ্চ স্থানে উন্নীত করে। (১ বংশাবলি ২৯:১১; গীতসংহিতা ১০৩:১৯; প্রেরিত ৪:২৪) কিন্তু যীশু যে রাজ্যের প্রচার করেছিলেন তা ঈশ্বরের সার্বিক সার্বভৌমত্বের অধীন, অথবা গৌণ রাজ্য। ঐ মশীহ রাজ্যের এক বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে, কিন্তু সেটি কী?

যেমন ৬ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, প্রথম মানব দম্পতি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। বিচার্য বিষয়গুলি উত্থাপিত হওয়ার কারণে, যিহোবা তাঁর সার্বভৌমত্বের এক নবপ্রকাশ দেখাতে মনস্থ করেছিলেন। ঈশ্বর এক “বংশ” উৎপন্ন করার তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন, যে সেই সর্প, শয়তানকে চূর্ণ করবে এবং মানবজাতির উত্তরাধিকারসূদুত্র প্রাপ্ত পাপের প্রভাবগুলিকে দূর করবে। মুখ্য “বংশ” হলেন যীশু খ্রীষ্ট এবং “ঈশ্বরের রাজ্য” হল সেই প্রতিনিধি স্থানীয় যা শয়তানকে সম্পূর্ণ পরাজিত করবে। এই রাজ্যের মাধ্যমে, যীশু খ্রীষ্ট যিহোবার নামে পৃথিবীর উপরে শাসনক্ষমতাকে পুনঃস্থাপিত করবেন এবং চিরকালের জন্য ঈশ্বরের ন্যায়সম্মত সার্বভৌমত্বের যথার্থতা প্রতিপাদন করবেন।—আদিপুস্তক ৩:১৫; গীতসংহিতা ২:২-৯.

৬, ৭. (ক) রাজ্য কোথায় এবং কারা রাজা ও তাঁর সহযোগী শাসক? (খ) রাজ্যের প্রজাবৃন্দ কারা?

দুষ্ট ফরীশীদের প্রতি যীশুর কথাগুলির একটি অনুবাদ অনুযায়ী, তিনি বলেছিলেন: “ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের মধ্যেই আছে।” (লূক ১৭:২১) যীশু কী বুঝিয়েছিলেন যে সেই রাজ্য ঐ দুর্নীতিগ্রস্ত লোকগুলির দুষ্ট হৃদয়ের মধ্যে রয়েছে? না। আদি গ্রীকের আরও সঠিক এক অনুবাদ লেখে: “ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের মাঝে আছে।” (নিউ ওয়ার্ল্ড ট্রান্সলেশন) যীশু, যিনি তাদের মাঝেই ছিলেন, ভবিষ্যৎ রাজা হিসাবে এইভাবে নিজের প্রতি নির্দেশ করেছিলেন। কোন ব্যক্তির হৃদয়ে আছে এমন কিছু হওয়া দূরে থাকুক, ঈশ্বরের রাজ্য হল এক প্রকৃত, কার্যকারী সরকার যার এক শাসক এবং প্রজাবৃন্দ আছে। এটি এক স্বর্গীয় শাসনব্যবস্থা, কারণ একে “স্বর্গরাজ্য” এবং “ঈশ্বরের রাজ্য” উভয়ই বলা হয়ে থাকে। (মথি ১৩:১১; লূক ৮:১০) দর্শনে, ভাববাদী দানিয়েল এর শাসককে দেখেছিলেন যেন “মনুষ্য-পুদুত্ত্রর ন্যায় এক পুরুষ” সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সম্মুখে আনীত হয়েছিল এবং অনন্তকালীন “কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব দত্ত হইল; লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে তাঁহার সেবা করিতে হইবে।” (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪) এই রাজা কে? আমরা জানি, বাইবেল যীশু খ্রীষ্টকে “মনুষ্যপুত্ত্র” বলে অভিহিত করে। (মথি ১২:৪০; লূক ১৭:২৬) হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর পুত্র, যীশু খ্রীষ্টকে, রাজা হওয়ার জন্য মনোনীত করেছিলেন।

যীশু একা শাসন করেন না। তাঁর সঙ্গে রয়েছে ১,৪৪,০০০ যারা “পৃথিবী হইতে ক্রীত” তাঁর সহযোগী রাজা এবং যাজক হওয়ার জন্য। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১, ৩; লূক ২২:২৮-৩০) ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজাবৃন্দ হবে পৃথিবীব্যাপী এক মনুষ্য পরিবার যারা খ্রীষ্টের নেতৃত্বের প্রতি বশ্যতা দেখাবে। (গীতসংহিতা ৭২:৭, ৮) কিন্তু, আমরা কিভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে সেই রাজ্য প্রকৃতই ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের যথার্থতা প্রতিপাদন করবে এবং আমাদের পৃথিবীর উপরে এক পরমদেশীয় পরিস্থিতি পুনঃস্থাপিত করবে?

ঈশ্বরের রাজ্যের বাস্তবতা

৮, ৯. (ক) ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতিজ্ঞাসমূহের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আমরা উদাহরণ দ্বারা কিভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি? (খ) রাজ্যের বাস্তবতা সম্বন্ধে আমরা কেন নিশ্চিত হতে পারি?

কল্পনা করুন যে একটি অগ্নিকাণ্ড আপনার গৃহকে ধ্বংস করেছে। এখন একজন বন্ধু যার তৈরি করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে সে আপনার গৃহ পুনর্নির্মাণ করে দেওয়ার এবং আপনার পরিবারের জন্য খাদ্য সরবরাহ করার প্রতিজ্ঞা করল। যদি ঐ বন্ধু সর্বদাই আপনাকে সত্য বলে থাকে, আপনি কি তাকে বিশ্বাস করবেন না? মনে করুন পরদিন আপনি কাজ থেকে ফিরে দেখলেন যে কর্মীরা ইতিমধ্যেই অগ্নি থেকে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে শুরু করেছে এবং আপনার পরিবারের জন্য খাবার আনা হয়েছে। নিঃসন্দেহে আপনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হবেন যে এক সময়ে, সবকিছু শুধু যে পুনঃস্থাপিত হবে তাই নয় কিন্তু পূর্বের চেয়ে এমনকি আরও ভাল হবে।

একইভাবে, রাজ্যের বাস্তবতা সম্বন্ধে যিহোবা আমাদের নিশ্চয়তা দেন। যেমন বাইবেলের ইব্রীয় পুস্তকে দেখানো হয়েছে, ব্যবস্থার বহু ক্ষেত্রই রাজ্যের ব্যবস্থার পূর্বাভাস দিয়েছিল। (ইব্রীয় ১০:১) ইস্রায়েল জাতির পার্থিব রাজ্যের মধ্যেও ঈশ্বরের রাজ্যের পূর্বদর্শনগুলি পরিস্ফুট হয়েছিল। সেটি কোন সাধারণ সরকার ছিল না, কারণ শাসকেরা “সদাপ্রভুর সিংহাসনে” বসতেন। (১ বংশাবলি ২৯:২৩) আরও, এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “যিহূদা হইতে রাজদণ্ড যাইবে না, তাহার চরণযুগলের মধ্য হইতে বিচারদণ্ড যাইবে না, যে পর্য্যন্ত শীলো না আইসেন; জাতিগণ তাঁহারই আজ্ঞাবহতা স্বীকার করিবে।” (আদিপুস্তক ৪৯:১০) a হ্যাঁ, এই যিহূদা বংশীয় রাজাদের মধ্যেই, ঈশ্বরের সরকারের চিরস্থায়ী রাজা, যীশুর জন্ম হওয়ার ছিল।—লূক ১:৩২, ৩৩.

১০. (ক) ঈশ্বরের মশীহ রাজ্যের ভিত্তি কখন স্থাপিত হয়েছিল? (খ) যীশুর সম্ভাব্য সহশাসকেরা পৃথিবীতে কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ কাজের অগ্রভাগে থাকতে পারতেন?

১০ ঈশ্বরের মশীহ রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল যীশুর প্ররিতদের মনোনয়নের সাথে। (ইফিষীয় ২:১৯, ২০; প্রকাশিত বাক্য ২১:১৪) ১,৪৪,০০০ ব্যক্তির মধ্যে এরা ছিলেন প্রথম যারা সহযোগী রাজারূপে যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গে শাসন করবেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন, এই সম্ভাব্য সহশাসকেরা এক সাক্ষ্যদান অভিযানের অগ্রভাগে থাকবেন, যীশুর এই আজ্ঞার সাথে সঙ্গতি রেখে: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুদুত্ত্রর ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।”—মথি ২৮:১৯.

১১. বর্তমানে রাজ্য-প্রচার কাজ কিভাবে করা হচ্ছে এবং তা কী সম্পাদন করছে?

১১ শিষ্যকরণের আজ্ঞা বর্তমানে পালিত হচ্ছে এক অভূতপূর্ব মাত্রায়। যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ রাজ্যের সেই সুসমাচার সমস্ত জগতে ঘোষণা করছে, যীশুর ভাববাণীমূলক কথাগুলির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪) রাজ্য-প্রচার কাজের একটি দিক হিসাবে, এক বিশাল শিক্ষামূলক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। যারা ঈশ্বরের রাজ্যের নিয়ম এবং নীতিসমূহের প্রতি বশ্যতা দেখায় তারা ইতিমধ্যেই এক শান্তি ও একতার অভিজ্ঞতা লাভ করছে যা মনুষ্য শাসনব্যবস্থা অর্জন করতে পারে না। এ সকলই স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে ঈশ্বরের রাজ্য এক বাস্তব বিষয়!

১২. (ক) রাজ্যের ঘোষকদের যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ বলা উপযুক্ত কেন? (খ) মানুষের সরকারগুলি থেকে ঈশ্বরের রাজ্য কিভাবে পৃথক?

১২ যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস।” (যিশাইয় ৪৩:১০-১২) যীশু, “বিশ্বস্ত সাক্ষী,” উদ্যম সহকারে রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ১:৫; মথি ৪:১৭) তাই এটি যথোপযুক্ত যে বর্তমান-দিনের রাজ্য ঘোষকেরা ঐশিকরূপে মনোনীত যিহোবার সাক্ষী এই নাম ধারণ করে। কিন্তু সাক্ষীরা অন্যদের সাথে ঈশ্বরের রাজ্য সম্পর্কে কথা বলতে এত সময় ও শক্তি ব্যয় করে কেন? তারা তা করে কারণ রাজ্যই মানবজাতির একমাত্র আশা। মনুষ্য সরকারগুলি আগে বা পরে একসময়ে শেষ হয়, কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্য কখনও শেষ হবে না। যিশাইয় ৯:৬, ৭ পদ এর শাসক, যীশুকে বলে “শান্তিরাজ” এবং যোগ করে: “তাঁহার রাজ্যের উপরে কর্ত্তৃত্ববৃদ্ধির ও শান্তির সীমা থাকিবে না।” ঈশ্বরের রাজ্য মানুষের সরকারের মত নয়—আজ আছে, কাল নেই। বাস্তবিক, দানিয়েল ২:৪৪ পদ বলে: “স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; . . . আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”

১৩. (ক) কিছু কিছু সমস্যা কী যা ঈশ্বরের রাজ্য সফলতার সাথে নিষ্পত্তি করবে? (খ) কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাসমূহ পূর্ণ হবেই?

১৩ কোন্‌ মনুষ্য রাজা যুদ্ধ, অপরাধ, রোগব্যাধি, অনাহার এবং গৃহহীনতা মুছে দিতে পারবে? এছাড়াও, পৃথিবীর কোন্‌ শাসক তাদের পুনরুত্থিত করতে পারবে যারা মারা গিয়েছে? ঈশ্বরের রাজ্য এবং এর রাজা এই বিষয়গুলির নিষ্পত্তি করবে। ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি যার ক্রমাগত মেরামতের প্রয়োজন হয়, তার মত রাজ্য নিজেকে ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ করবে না। পরিবর্তে, ঈশ্বরের রাজ্য সফল হবে, কারণ যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমার মুখনির্গত বাক্য . . . নিষ্ফল হইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না, কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সম্পন্ন করিবে, এবং যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।” (যিশাইয় ৫৫:১১) ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে না, কিন্তু কখন রাজ্য শাসন শুরু হওয়ার ছিল?

রাজ্য শাসন—কখন?

১৪. রাজ্য সম্বন্ধে যীশুর শিষ্যদের কী ভুল ধারণা ছিল, কিন্তু তাঁর রাজত্ব সম্বন্ধে যীশু কী জানতেন?

১৪ “প্রভু, আপনি কি এই সময়ে ইস্রায়েলের হাতে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবেন?” যীশুর শিষ্যদের দ্বারা এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা প্রকাশ করে যে তখনও পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যের উদ্দেশ্য এবং এর শাসন শুরু করার নির্দিষ্ট সময় তারা জানতেন না। এই বিষয় সম্বন্ধে অনুমান না করতে তাদের সাবধান করে, যীশু বলেছিলেন: “যে সকল সময় কি কাল পিতা নিজ কর্ত্তৃত্বের অধীন রাখিয়াছেন, তাহা তোমাদের জানিবার বিষয় নয়।” যীশু জানতেন যে পৃথিবীর উপরে তাঁর রাজত্ব ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত ছিল, তাঁর পুনরুত্থান এবং স্বর্গে উত্থিত হওয়ার বহু পরে। (প্রেরিত ১:৬-১১; লূক ১৯:১১, ১২, ১৫) শাস্ত্র এটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। তা কিভাবে?

১৫. গীতসংহিতা ১১০:১ পদ যীশুর রাজত্বের সময় সম্পর্কে কিভাবে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দেয়?

১৫ ভাববাণীমূলকভাবে যীশুকে “প্রভু” রূপে উদুল্লখ করে, রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি।” (গীতসংহিতা ১১০:১; প্রেরিত ২:৩৪-৩৬ তুলনা করুন।) এই ভাববাণী ইঙ্গিত করে যে যীশুর স্বর্গে উত্থিত হওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর রাজত্ব শুরু হবে না। বরং, তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণ হস্তে অপেক্ষা করবেন। (ইব্রীয় ১০:১২, ১৩) কত দীর্ঘকাল এই অপেক্ষা চলবে? কখন তাঁর রাজত্ব শুরু হবে? বাইবেল আমাদের সাহায্য করে উত্তরগুলি পেতে।

১৬. সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে কী ঘদুটছিল এবং এটি ঈশ্বরের রাজ্যের সাথে কিভাবে সম্বন্ধযুক্ত ছিল?

১৬ সমস্ত পৃথিবীর উপরে একমাত্র নগর যার উপরে যিহোবা তাঁর নাম স্থাপন করেছিলেন তা ছিল যিরূশালেম। (১ রাজাবলি ১১:৩৬) ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের প্রতীকস্বরূপ ঈশ্বর-অনুমোদিত এক পার্থিব রাজ্যের রাজধানীও ছিল এই নগর। সুতরাং, সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলনীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংস ছিল অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। এই ঘটনা পৃথিবীতে তাঁর প্রজাদের উপরে ঈশ্বরের সরাসরি শাসনের এক দীর্ঘ বিরতির শুরুকে চিহ্নিত করেছিল। প্রায় ছয় শতাব্দী পরে, যীশু ইঙ্গিত করেছিলেন যে শাসনের এই বিরামকাল তখনও চলছিল, কারণ তিনি বলেছিলেন: “জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ-দলিত হইবে।”—লূক ২১:২৪.

১৭. (ক) “জাতিগণের সময়” কী এবং কত সময় তা থাকার ছিল? (খ) “জাতিগণের সময়” কখন শুরু এবং শেষ হয়েছিল?

১৭ “জাতিগণের সময়” চলাকালীন, জাগতিক সরকারগুলিকে ঈশ্বর অনুমোদিত শাসনব্যবস্থাকে বাধা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। ঐ সময়কাল শুরু হয়েছিল সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার সাথে এবং দানিয়েল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তা চলবে “সাত কাল” পর্যন্ত। (দানিয়েল ৪:২৩-২৫) কত দীর্ঘ এটি? বাইবেল দেখায় যে সাড়ে তিন “কাল” ১,২৬০ দিনের সমান। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৬, ১৪) ঐ সময়ের দ্বিগুণ, অর্থাৎ সাত কাল, ২,৫২০ দিন হবে। কিন্তু উদুল্লখযোগ্য কোন কিছুই ঘদুটনি ঐ অল্প সময়কালের শেষে। দানিয়েলের ভাববাণীর প্রতি “এক এক দিনের জন্য এক এক বৎসর” প্রয়োগ করে এবং সা.শ.পূ. ৬০৭ সাল থেকে ২,৫২০ বছর গণনা করলে, কিন্তু, আমরা এসে পৌঁছাই সা.শ. ১৯১৪ সালে।—গণনাপুস্তক ১৪:৩৪; যিহিষ্কেল ৪:৬.

১৮. রাজ্যের ক্ষমতা গ্রহণের অল্পকাল পরেই যীশু কী করেছিলেন এবং তা পৃথিবীকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল?

১৮ ঐ সময়েই কী যীশু স্বর্গে রাজত্ব করা শুরু করেছিলেন? তিনি যে করেছিলেন তা বলার জন্য শাস্ত্রীয় কারণগুলি আলোচনা করা হবে পরবর্তী অধ্যায়ে। অবশ্যই, পৃথিবীতে সঙ্গে সঙ্গে শান্তি দ্বারা যীশুর শাসনের শুরু চিহ্নিত হবে না। প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১২ পদ দেখায় যে রাজ্য গ্রহণ করবার ঠিক পরেই, যীশু শয়তান এবং মন্দ দূতেদের স্বর্গ থেকে বহিষ্কৃত করবেন। এর অর্থ হবে পৃথিবীর জন্য দুঃখ-দুর্দশা, কিন্তু এটি পড়াও উৎসাহজনক যে দিয়াবলের “কাল সংক্ষিপ্ত।” শীঘ্রই, শুধু যে ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে সেই কারণে আমরা আনন্দ করতে পারব তা নয় কিন্তু এই জন্যও যে তা পৃথিবী এবং বাধ্য মানবজাতির উপরে আশীর্বাদসমূহ নিয়ে আসবে। (গীতসংহিতা ৭২:৭, ৮) আমরা কিভাবে জানি যে তা শীঘ্র ঘটবে?

[পাদটীকাগুলো]

a শীলো নামের অর্থ “এটি যাঁর, তিনি; যাঁহার অধিকার আছে, তিনি।” যথাসময়ে, এটি স্পষ্ট হয়েছিল যে “শীলো” ছিলেন যীশু খ্রীষ্ট, “যিহূদাবংশীয় সিংহ।” (প্রকাশিত বাক্য ৫:৫) যিহূদী অনুবাদগুলি (টারগম্‌) কিছু “শীলো” শব্দটিকে শুধু “মশীহ” অথবা “মশীহ রাজা” দ্বারা পরিবর্তিত করে দিয়েছে।

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

ঈশ্বরের রাজ্য কী এবং এটি কোথা থেকে শাসন করে?

রাজ্যে কে শাসন করেন এবং এর প্রজাবৃন্দ কারা?

যিহোবা কিভাবে আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে তাঁর রাজ্য হল বাস্তব?

“জাতিগণের সময়” কখন শুরু এবং শেষ হয়েছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯৪ পৃষ্ঠার বাক্স]

ঈশ্বরের রাজ্যর সাথ সম্বন্ধযুক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

• যিহোবা এক “বংশ” উৎপন্ন করার তাঁর উদ্দেশ্য ঘোষণা করেন, যে সর্পের, শয়তান দিয়াবলের, মস্তক চূর্ণ করবে।—আদিপুস্তক ৩:১৫.

• সা.শ.পূ. ১৯৪৩ সালে, যিহোবা ইঙ্গিত দেন যে এই “বংশ” অব্রাহামের এক মনুষ্য বংশধর হবে।—আদিপুস্তক ১২:১-৩, ৭; ২২:১৮.

• সা.শ.পূ. ১৫১৩ সালে ইস্রায়েলকে যে ব্যবস্থা চুক্তি দেওয়া হয়েছিল তা “আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়া” প্রদান করে।—যাত্রাপুস্তক ২৪:৬-৮; ইব্রীয় ১০:১.

• ইস্রায়েলের পার্থিব রাজ্য শুরু হয় সা.শ.পূ. ১১১৭ সালে এবং এটি পরে দায়ূদের বংশে চলতে থাকে।—১ শমূয়েল ১১:১৫; ২ শমূয়েল ৭:৮, ১৬.

• যিরূশালেম ধ্বংস হয় সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে এবং “জাতিগণের সময়” শুরু হয়।—২ রাজাবলি ২৫:৮-১০, ২৫, ২৬; লূক ২১:২৪.

• সা.শ. ২৯ সালে, যীশু রাজা-মনোনীত হিসাবে অভিষিক্ত এবং তাঁর পার্থিব পরিচর্যায় অগ্রসর হন।—মথি ৩:১৬, ১৭; ৪:১৭; ২১:৯-১১.

• সা.শ. ৩৩ সালে, যীশু স্বর্গে উত্থিত হন, তাঁর শাসন শুরু না হওয়া পর্যন্ত ঈশ্বরের দক্ষিণ হস্তে অপেক্ষা করতে।—প্রেরিত ৫:৩০, ৩১; ইব্রীয় ১০:১২, ১৩.

• যীশুকে সা.শ. ১৯১৪ সালে স্বর্গীয় রাজ্যে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করা হয় যখন “জাতিগণের সময়” শেষ হয়।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫.

• শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা পৃথিবীর সন্নিকদুট নিক্ষিপ্ত হয় এবং মানবজাতির জন্য অধিকতর দুঃখদুর্দশা আনে।—প্রকাশিত বাক্য ১২:৯-১২.

• যীশু ঈশ্বরের রাজ্যের পৃথিবীব্যাপী সুসমাচার প্রচারের তত্ত্বাবধান করেন।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.