সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নিরাপত্তা লাভ করুন

ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নিরাপত্তা লাভ করুন

অধ্যায় ১৭

ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নিরাপত্তা লাভ করুন

১, ২. মানবজাতির পরিস্থিতি কিভাবে এক ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকার লোকেদের পরিস্থিতির সাথে তুলনীয়?

 কল্পনা করুন যে এক প্রচণ্ড ঝড় যেখানে আপনি বাস করেন সেই এলাকাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। আপনার গৃহ ধ্বংস হয়েছে এবং সমস্ত জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খাদ্য দুষ্প্রাপ্য। পরিস্থিতি মনে হয় নিরাশাজনক। আর তখন, অপ্রত্যাশিতভাবে ত্রাণসামগ্রী এসে পৌঁছাল। প্রয়োজনের অধিক খাদ্য ও বস্ত্র সরবরাহ করা হল। আপনার জন্য একটি নতুন গৃহ নির্মিত হল। নিশ্চয়ই আপনি সেই ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন যিনি এসমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন।

বর্তমানে তুলনীয় সেরূপ কিছু ঘটছে। সেই ঝড়ের মত, আদম ও হবার বিদ্রোহ মানবজাতির জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়েছিল। মানুষের পরমদেশ গৃহ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে, মনুষ্য সরকার মানুষকে যুদ্ধ, অপরাধ এবং অবিচার থেকে আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মগুলি বহুসংখ্যক ব্যক্তিদের উন্নতিসাধক আধ্যাত্মিক খাদ্য থেকে বঞ্চিত করেছে। আধ্যাত্মিকরূপে চিন্তা করলে, কিন্তু, যিহোবা ঈশ্বর এখন খাদ্য, বস্ত্র এবং আশ্রয় প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করছেন। তিনি কিভাবে তা করছেন?

“বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস”

৩. মানবজাতির জন্য যিহোবা কিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরবরাহ করেন, যা কোন্‌ উদাহরণ দ্বারা দেখানো হয়েছে?

ত্রাণসামগ্রী সাধারণত কোন সংগঠিত প্রণালীর মাধ্যমে বন্টন করা হয়ে থাকে এবং অনুরূপভাবেই যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলীয়েরা প্রায় ১,৫০০ বছর যাবৎ “সদাপ্রভুর সমাজ” ছিল। তাদের মধ্যে ছিল সেই ব্যক্তিরা যারা ঈশ্বরের প্রণালীরূপে কাজ করেছিল তাঁর ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা দিতে। (১ বংশাবলি ২৮:৮; ২ বংশাবলি ১৭:৭-৯) সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে, যিহোবা খ্রীষ্টীয় সংগঠনকে উৎপন্ন করেছিলেন। মণ্ডলীগুলি তৈরি হয়েছিল এবং সেগুলি প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ দ্বারা গঠিত এক পরিচালক-গোষ্ঠীর নির্দেশে কাজ করত। (প্ররিত ১৫:২২-৩১) অনুরূপে বর্তমানে, যিহোবা তাঁর লোকেদের সাথে এক সংগঠিত গোষ্ঠীর মাধ্যমে আচরণ করেন। আমরা কিভাবে তা জানতে পারি?

৪. বর্তমান সময়ে কে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” রূপে প্রমাণিত হয়েছে এবং কিভাবে ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা সকল প্রাপ্তিসাধ্য করা হয়েছে?

যীশু বলেছিলেন যে রাজ্যের ক্ষমতায় তাঁর উপস্থিতির সময়ে, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস”-কে দেখতে পাওয়া যাবে তাঁর অনুগামীদের “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য সরবরাহ” করতে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) যখন যীশু ১৯১৪ সালে স্বর্গীয় রাজারূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন, এই “দাস” হিসাবে কে প্রমাণিত হয়েছিল? খ্রীষ্টজগতের যাজকবর্গ নিশ্চয়ই নয়। অধিকাংশ ক্ষেদুত্রই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাদের নিজেদের জাতীয় সরকারের সমর্থনমূলক মত ও নীতির প্রচার দ্বারা তারা তাদের মেষেদের পুষ্টিবিধান করছিল। কিন্তু উপযুক্ত এবং সময়োচিত আধ্যাত্মিক খাদ্য বন্টন করা হয়েছিল প্রকৃত খ্রীষ্টানদের দলটি দ্বারা যারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিল এবং যীশু যাকে “ক্ষুদ্র মেষপাল” বলেছিলেন তার অংশ ছিল। (লূক ১২:৩২) এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানগণ মানুষের সরকারগুলির পরিবর্তে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচার করেছিলেন। যার ফলে, বিগত বছরগুলি ধরে লক্ষ লক্ষ ধার্মিক-মনা “অপর মেষ” অভিষিক্ত “দাসের” সাথে যোগদান করেছে সত্য ধর্ম পালন করতে। (যোহন ১০:১৬, NW) ‘বিশ্বস্ত দাস’ এবং এর বর্তমান-দিনের পরিচালক-গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে, ঈশ্বর তাঁর সংগঠিত লোকেদের নির্দেশ দেন আধ্যাত্মিক খাদ্য, বস্ত্র এবং আশ্রয় তাদের সকলকে সরবরাহ করবার জন্য যারাই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।

“উপযুক্ত সময়ে খাদ্য”

৫. বর্তমানে জগতের আধ্যাত্মিক পরিস্থিতি কী, কিন্তু যিহোবা এ সম্পর্কে কী করছেন?

যীশু বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।” (মথি ৪:৪) দুঃখের বিষয়, যদিও, অধিকাংশ লোকেই ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্যের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে না। যেমন যিহোবার ভাববাদী আমোষ দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, এক দুর্ভিক্ষ থাকবে যা “অন্নের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণের।” (আমোষ ৮:১১) এমনকি খুব ধার্মিক ব্যক্তিরাও আধ্যাত্মিকভাবে অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। তবুও, যিহোবার ইচ্ছা “যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৩, ৪) সেই অনুসারে, তিনি প্রয়োজনাধিক পরিমাণে আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহ করছেন। কিন্তু কোথায় তা পাওয়া যেতে পারে?

৬. অতীত কালে যিহোবা কিভাবে তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক পুষ্টিসাধন করেছেন?

সমগ্র ইতিহাসে, যিহোবা তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক খাদ্য বন্টন করেছেন একটি দল হিসাবে। (যিশাইয় ৬৫:১৩) উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলীয় যাজকগণ পুরুষ, স্ত্রী এবং বালক-বালিকাদের একত্রিত করতেন ঈশ্বরের ব্যবস্থায় দলগতরূপে শিক্ষাদান করতে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:৯, ১২) পরিচালক-গোষ্ঠীর নির্দেশাধীনে, প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানগণ মণ্ডলীগুলিকে সংগঠিত এবং সভার ব্যবস্থা করেছিলেন সকলকে শিক্ষা ও উৎসাহদান করতে। (রোমীয় ১৬:৫; ফিলীমন ১, ২) যিহোবার সাক্ষীরা এই আদর্শ অনুসরণ করে। তাদের সকল সভায় উপস্থিত থাকতে আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ করা হচ্ছে।

৭. খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে নিয়মিত উপস্থিতি জ্ঞান এবং বিশ্বাসের সাথে কিভাবে জড়িত রয়েছে?

অবশ্যই, আপনার ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন থেকে হয়ত ইতিমধ্যেই আপনি অনেক কিছু শিখেছেন। হয়ত কোন সাক্ষী আপনাকে সাহায্য করেছে। (প্রেরিত ৮:৩০-৩৫) কিন্তু আপনার বিশ্বাসকে একটি চারাগাছের সাথে তুলনা করা যেতে পারে যা শুকিয়ে গিয়ে মারা যাবে যদি না তার উপযুক্ত যত্ন নেওয়া হয়। সুতরাং, আপনাকে অবশ্যই উপযুক্ত আধ্যাত্মিক পুষ্টিলাভ করতে হবে। (১ তীমথিয় ৪:৬) খ্রীষ্টীয় সভাগুলি শিক্ষাদানের এক অবিরাম কর্মসূচি প্রদান করে যা আপনাকে আধ্যাত্মিক পুষ্টিলাভ করতে এবং ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানবৃদ্ধির সাথে আপনার বিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে।—কলসীয় ১:৯, ১০.

৮. যিহোবার সাক্ষীদের সভাগুলিতে উপস্থিত হতে আমাদের উৎসাহ দেওয়া হয় কেন?

সভাগুলি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সাধন করে। পৌল লিখেছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) যে গ্রীক শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে “উদ্দীপিত করিয়া” তা “সতেজ করিয়া” অর্থও হতে পারে। একটি বাইবেল প্রবাদ বলে: “লৌহ লৌহকে সতেজ করে, তদ্রূপ মনুষ্য আপন মিদুত্রর মুখ সতেজ করে।” (হিতোপদেশ ২৭:১৭) আমাদের সকলেরই ক্রমাগত ‘সতেজ হওয়া’ প্রয়োজন। জগতের দৈনন্দিন চাপসমূহ আমাদের বিশ্বাসকে শিথিল করে দিতে পারে। যখন আমরা খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে উপস্থিত হই, সেখানে এক পারস্পরিক উৎসাহ বিনিময় হয়। (রোমীয় ১:১১, ১২) মণ্ডলীর সদস্যগণ প্রেরিত পৌলের উপদেশ “তোমরা পরস্পরকে আশ্বাস দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল” তা অনুসরণ করে, আর এই জিনিসগুলি আমাদের বিশ্বাসকে সতেজ করে। (১ থিষলনীকীয় ৫:১১) খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে নিয়মিত উপস্থিতি আরও দেখায় যে আমরা ঈশ্বরকে প্রেম করি এবং আমাদের সুযোগ দেয় তাঁর প্রশংসা করতে।—গীতসংহিতা ৩৫:১৮.

“তোমরা প্রেম পরিধান কর”

৯. প্রেম প্রদর্শনে যিহোবা কিভাবে উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা প্রেম পরিধান কর, কেননা তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কলসীয় ৩:১৪, NW) যিহোবা পরম অনুগ্রহ সহকারে আমাদের জন্য এই বস্ত্র প্রদান করেছেন। কী উপায়ে? খ্রীষ্টানগণ প্রেম প্রদর্শন করতে পারেন কারণ এটি যিহোবার পবিত্র আত্মার ঈশ্বর-দত্ত ফলগুলির মধ্যে একটি। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) যিহোবা নিজে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রেম প্রদর্শন করেছেন তাঁর একজাত পুত্রকে পাঠিয়ে যাতে আমরা অনন্ত জীবন লাভ করতে পারি। (যোহন ৩:১৬) প্রেমের এই সর্বোচ্চ নিদর্শন এই গুণ প্রকাশ করতে আমাদের জন্য এক আদর্শস্বরূপ। “ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য।”—১ যোহন ৪:১১.

১০. “সমগ্র ভ্রাতৃসমাজ” থেকে আমরা কিভাবে উপকৃত হতে পারি?

১০ কিংডম হলে সভাগুলিতে উপস্থিত হওয়া আপনাকে প্রেম প্রদর্শনের এক অপূর্ব সুযোগ দেবে। সেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবেন। সন্দেহ নেই তাদের মধ্যে অনেকের প্রতিই আপনি সঙ্গে সঙ্গে আকর্ষিত বোধ করবেন। অবশ্যই, এমনকি যিহোবার পরিচর্যা করে তাদের মধ্যেও ব্যক্তিত্বের পার্থক্য আছে। হয়ত অতীতে আপনি সেইসব ব্যক্তিদের এড়িয়ে গেছেন শুধুমাত্র তাদের আপনার মত একই আগ্রহ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল না বলে। খ্রীষ্টানদের, কিন্তু, “সমগ্র ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম” করতে হবে। (১ পিতর ২:১৭, NW) সুতরাং, কিংডম হলে সবার সঙ্গে পরিচিত হওয়াকে আপনার লক্ষ্য করুন—এমনকি তাদের সঙ্গেও যাদের বয়স, ব্যক্তিত্ব, জাতি অথবা শিক্ষার মান আপনার থেকে হয়ত পৃথক। সম্ভবত আপনি দেখবেন যে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু আদরণীয় গুণে বিশিষ্ট।

১১. যিহোবার লোকেদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের কারণে আপনার বিচলিত হওয়া উচিত নয় কেন?

১১ মণ্ডলীতে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের কারণে আপনার বিচলিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। উদাহরণ দিলে, মনে করুন একটি রাস্তা দিয়ে আপনার গাড়ির সঙ্গে আরও বহু গাড়ি চলেছে। সব গাড়িই একই গতিতে যাচ্ছে না অথবা সব গাড়ির একই অবস্থাও নয়। কিছু অনেক দূরত্ব অতিক্রম করেছে, কিন্তু আবার আপনার মত, অন্যগুলি সবেমাত্র যাত্রা শুরু করেছে। এই পার্থক্যগুলি থাকা সত্ত্বেও, কিন্তু, সব গাড়িই রাস্তা ধরে চলেছে। কোন মণ্ডলীতে বিভিন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেদুত্রও এটি অনুরূপ। সকলেই একই গতিতে খ্রীষ্টীয় গুণাবলি অর্জন করে না। এছাড়া, সকলেরই দৈহিক অথবা মানসিক পরিস্থিতি এক নয়। কিছু ব্যক্তি বহু বছর যাবৎ যিহোবার উপাসনা করে আসছেন; কিছু সবে শুরু করেছেন। তবুও, সকলেই অনন্ত জীবনের পথ ধরে চলেছেন, “উপযুক্তরূপে ঐক্যবদ্ধ এক মনে ও এক বিচারে।” (১ করিন্থীয় ১:১০, NW) সুতরাং, মণ্ডলীর মধ্যে ব্যক্তিদের দুর্বলতাগুলির চেয়ে তাদের উৎকৃষ্ট গুণগুলিকে দেখুন। তা করা আপনার হৃদয়কে আনন্দিত করবে, কারণ আপনি উপলব্ধি করবেন যে ঈশ্বর প্রকৃতই এই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন। আর নিশ্চিত যে এই স্থানেই আপনি থাকতে চান।—১ করিন্থীয় ১৪:২৫.

১২, ১৩. (ক) মণ্ডলীতে যদি কেউ আপনাকে অসন্তুষ্ট করে, আপনি কী করতে পারেন? (খ) বিদ্বেষ পোষণ না করা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

১২ যেহেতু সকল মানুষই অসিদ্ধ, কখনও কখনও মণ্ডলীতে কেউ হয়ত কিছু বলতে অথবা করতে পারে যা আপনাকে বিচলিত করে। (রোমীয় ৩:২৩) শিষ্য যাকোব বাস্তবতার সাথেই লিখেছিলেন: “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই। যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ।” (যাকোব ৩:২) যদি কেউ আপনাকে অসন্তুষ্ট করে আপনি কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? এক বাইবেল প্রবাদ বলে: “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে দুক্রাধে ধীর করে, আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা।” (হিতোপদেশ ১৯:১১) বুদ্ধি থাকার অর্থ কোন পরিস্থিতির গভীরে লক্ষ্য করা, অন্তর্নিহিত কারণগুলি বোঝা যা কোন ব্যক্তিকে বিশেষ কিছু বলায় বা করায়। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই নিজেদের ভুলগুলির কৈফিয়ত দিতে অনেক বুদ্ধি ব্যবহার করি। অন্যদের অসিদ্ধতাগুলিও বুঝতে এবং ঢাকতে তাকে ব্যবহার করি না কেন?—মথি ৭:১-৫; কলসীয় ৩:১৩.

১৩ কখনও ভুলবেন না যে আমাদের অবশ্যই অপরকে ক্ষমা করতে হবে যদি আমাদের নিজেদের যিহোবার ক্ষমা পেতে হয়। (মথি ৬:৯, ১২, ১৪, ১৫) যদি আমরা সত্যে চলি, অপরের সাথে আমরা প্রেমপূর্ণ আচরণ করব। (১ যোহন ১:৬, ৭; ৩:১৪-১৬; ৪:২০, ২১) সুতরাং যদি মণ্ডলীতে কারও সাথে কোন সমস্যার উদ্ভব হয়, বিদ্বেষ পোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন। যদি আপনি প্রেম পরিধান করে থাকেন, সমস্যার সমাধান করতে আপনি প্রচেষ্টা করবেন এবং যদি আপনি দোষ করে থাকেন, দোষ স্বীকার করে নিতে ইতস্তত করবেন না।—মথি ৫:২৩, ২৪; ১৮:১৫-১৭.

১৪. কী কী গুণ আমাদের পরিধান করা উচিত?

১৪ আমাদের আধ্যাত্মিক বস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত প্রেমের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত অন্যান্য গুণগুলি। পৌল লিখেছিলেন: “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর।” প্রেম দ্বারা পরিবেষ্টিত, এই বৈশিষ্ট্যগুলি ধার্মিক “নূতন মনুষ্য” এর অংশ। (কলসীয় ৩:১০, ১২) এইভাবে নিজেকে পরিহিত করতে কি আপনি চেষ্টা করবেন? বিশেষভাবে আপনি যদি ভ্রাতৃপ্রেম পরিধান করেন, যীশুর শিষ্যদের এক শনাক্তকরণ চিহ্নকে আপনি ধারণ করবেন, কারণ তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ১৩:৩৫.

নিরাপত্তার এক স্থান

১৫. মণ্ডলী কিভাবে এক আশ্রয়স্বরূপ?

১৫ মণ্ডলী এক আশ্রয়, এক নিরাপত্তামূলক অবলম্বন রূপেও কাজ করে, যেখানে আপনি নিরাপদ বোধ করবেন। এখানে আপনি সহৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তিদের পাবেন যারা ঈশ্বরের চক্ষুতে যা ন্যায় তা করার প্রচেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই সেই মন্দ অভ্যাস ও মনোভাবগুলি দূর করেছে যেগুলিকে জয় করার জন্য আপনি হয়ত যুদ্ধ করে চলেছেন। (তীত ৩:৩) তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে, কারণ আমাদের বলা হয়েছে “তোমরা পরস্পর এক জন অন্যের ভার বহন কর।” (গালাতীয় ৬:২) স্বভাবতই, এক পথের অনুধাবন করা যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে তা চুড়ান্তরূপে আপনারই নিজের দায়িত্ব। (গালাতীয় ৬:৫; ফিলিপীয় ২:১২) তবুও, যিহোবা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে দিয়েছেন সাহায্য এবং সমর্থনের জন্য এক অপূর্ব মাধ্যম হিসাবে। আপনার সমস্যা যত দুর্দশাপূর্ণই হোক না কেন, আপনার প্রাপ্তিসাধ্য এক মূল্যবান সাহায্যোপায় রয়েছে—এক প্রেমময় মণ্ডলী যা আপনার পাশে দাঁড়াবে দুর্দশা অথবা ক্ষতির সময়গুলিতে।—তুলনা করুন লূক ১০:২৯-৩৭; প্রেরিত ২০:৩৫.

১৬. মণ্ডলীর প্রাচীনেরা কী সাহায্য দিয়ে থাকেন?

১৬ আপনাকে যারা সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসবে তাদের মধ্যে রয়েছেন “নানা বর”—মণ্ডলীতে নিযুক্ত প্রাচীনগণ, অথবা অধ্যক্ষেরা, যারা ইচ্ছাপূর্বক এবং উৎসুকভাবে পালের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। (ইফিষীয় ৪:৮, ১১, ১২; প্রেরিত ২০:২৮; ১ পিতর ৫:২, ৩) তাদের সম্পর্কে, যিশাইয় ভাববাণী করেছিলেন: “যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্য তদ্রূপ হইবেন।”—যিশাইয় ৩২:২.

১৭. (ক) বিশেষভাবে কিধরনের সাহায্য যীশু দিতে চেয়েছিলেন? (খ) ঈশ্বর তাঁর লোকেদের জন্য কী ব্যবস্থা করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?

১৭ যখন যীশু পৃথিবীতে ছিলেন, ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা প্রেমপূর্ণ সতর্ক যত্নের খুবই অভাব ছিল। লোকেদের অবস্থা তাঁকে গভীর বেদনা দিয়েছিল এবং বিশেষভাবে তিনি তাদের আধ্যাত্মিক সাহায্য দিতে চেয়েছিলেন। যীশু তাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হয়েছিলেন কারণ “তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।” (মথি ৯:৩৬) কী উত্তমরূপেই না এটি বর্ণনা করে বহু ব্যক্তির বর্তমান-দিনের দুরবস্থাকে যারা নিদারুণ সমস্যাগুলি সহ্য করছে অথচ আধ্যাত্মিক সাহায্য এবং সান্ত্বনা পেতে কারও কাছে যাওয়া যায় এমন কেউ নেই! কিন্তু যিহোবার লোকেদের জন্য আধ্যাত্মিক সাহায্য রয়েছে, কারণ তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি তাহাদের উপরে এমন পালকগণকে নিযুক্ত করিব, যাহারা তাহাদিগকে চরাইবে; তখন তাহারা আর ভীত কি নিরাশ হইবে না, এবং কেহ নিরুদ্দেশ হইবে না।”—যিরমিয় ২৩:৪.

১৮. যদি আমাদের আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন হয় আমরা প্রাচীনের কাছে কেন যাব?

১৮ মণ্ডলীতে নিযুক্ত প্রাচীনদের সাথে পরিচিত হন। ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োগে তাদের বহু অভিজ্ঞতা রয়েছে, কারণ বাইবেলে প্রদর্শিত অধ্যক্ষদের জন্য যোগ্যতাগুলি তারা পূরণ করেছেন। (১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৫-৯) যদি ঈশ্বরের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির সাথে সংঘাত বাধায় এরূপ কোন অভ্যাস বা বৈশিষ্ট্যকে জয় করতে আপনার আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে কোন জনের কাছে যেতে ইতস্তত করবেন না। আপনি দেখতে পাবেন যে প্রাচীনেরা পৌলের উপদেশ অনুসরণ করেন: “ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর, দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও।”—১ থিষলনীকীয় ২:৭, ৮; ৫:১৪.

যিহোবার লোকেদের সাথে নিরাপত্তা উপভোগ করুন

১৯. যারা তাঁর সংগঠনের মধ্যে নিরাপত্তার অন্বেষণ করে যিহোবা তাদের কী আশীর্বাদসকল প্রদান করেছেন?

১৯ যদিও আমরা এখন অসিদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছি, যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিক খাদ্য, বস্ত্র এবং আশ্রয় প্রদান করেন। অবশ্যই, আমরা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন পৃথিবীর জন্য অপেক্ষা করব যাতে এক পার্থিব পরমদেশের উপকারসমূহ অভিজ্ঞতা করতে পারি। কিন্তু যারা যিহোবার সংগঠনের অংশ তারা বর্তমানেই এক আধ্যাত্মিক পরমদেশের নিরাপত্তা উপভোগ করছে। তাদের সম্পর্কে, যিহিষ্কেল ভাববাণী করেছিলেন: “তাহারা নির্ভয়ে বাস করিবে, কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—যিহিষ্কেল ৩৪:২৮; গীতসংহিতা ৪:৮.

২০. তাঁর উপাসনার নিমিত্তে যা কিছু ত্যাগস্বীকার আমরা হয়ত করি, যিহোবা কিভাবে তার ক্ষতিপূরণ করবেন?

২০ আমরা কত কৃতজ্ঞ হতে পারি যে যিহোবা তাঁর বাক্য এবং সংগঠনের মাধ্যমে প্রেমপূর্ণ আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা সকল করেছেন! ঈশ্বরের লোকেদের নিকটবর্তী হন। ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনার সম্বন্ধে বন্ধুরা অথবা আত্মীয়েরা কী ভাববে সেই ভয়ে বাধাপ্রাপ্ত হবেন না। আপনি যিহোবার সাক্ষীদের সাথে মিলিত হচ্ছেন এবং কিংডম হলে সভাগুলিতে উপস্থিত থাকছেন বলে কেউ কেউ হয়ত অনুমোদন করবে না। কিন্তু তাঁর উপাসনার নিমিত্ত যা কিছু ত্যাগস্বীকার আপনি করছেন ঈশ্বর তার অনেক অধিক ক্ষতিপূরণ করে দেবেন। (মালাখি ৩:১০) এছাড়া, যীশু বলেছিলেন: “এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে, এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে।” (মার্ক ১০:২৯, ৩০) হ্যাঁ, যা কিছু আপনি ত্যাগ অথবা সহ্য করেছেন, আপনি ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে আনন্দপূর্ণ সংসর্গ এবং আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা পেতে পারেন।

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

“সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” কে?

আমাদের আধ্যাত্মিক পুষ্টিসাধনের জন্য যিহোবা কী ব্যবস্থা করেছেন?

খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে যারা আছেন তারা কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬৫ পৃষ্ঠার চিত্র]