সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এটাই হল শেষ কাল!

এটাই হল শেষ কাল!

অধ্যায় ১১

এটাই হল শেষ কাল!

১. জগৎ পরিস্থিতি সম্বন্ধে চিন্তা করে কেন অনেকেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে, কিন্তু জগৎ ঘটনাবলির এক নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা কোথায় পাওয়া যেতে পারে?

 আমাদের অশান্ত পৃথিবী এই অবস্থায় পৌঁছালো কিভাবে? আমাদের জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে রয়েছে? কখনও আপনি কি এইধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন? অনেকেই বেশ হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে যখন তারা জগৎ পরিস্থিতির দিকে তাকায়। যুদ্ধবিগ্রহ, রোগব্যাধি এবং অপরাধ এই বাস্তব ঘটনাগুলি মানুষকে ভাবায় যে ভবিষ্যতে কী রয়েছে। সরকারের নেতৃবৃন্দ সামান্যই আশা দেয়। কিন্তু, এই দুর্দশাপূর্ণ দিনগুলির এক নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা ঈশ্বর হতে তাঁর বাক্যের মাধ্যমে পাওয়া যায়। বাইবেল নির্ভরযোগ্যরূপে আমাদের দেখতে সাহায্য করে যে সময়ের প্রবাহে আমরা কোথায় রয়েছি। এটি দেখায় যে বর্তমান বিধিব্যবস্থার “শেষ কালে” আমরা বাস করছি।—২ তীমথিয় ৩:১.

২. তাঁর শিষ্যেরা যীশুকে কোন্‌ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং তিনি কিভাবে উত্তর দিয়েছিলেন?

উদাহরণস্বরূপ, তাঁর শিষ্যদের দ্বারা উত্থাপিত কিছু প্রশ্নের, যীশুর দেওয়া উত্তর বিবেচনা করুন। যীশুর মৃত্যুর তিনদিন পূর্বে, তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” a (মথি ২৪:৩) উত্তরে, যীশু বিশেষ জগৎ ঘটনাবলি এবং পরিস্থিতি সম্বন্ধে বলেছিলেন যা স্পষ্টভাবে দেখাবে যে এই অনৈশ্বরিক বিধিব্যবস্থা তার শেষ দিনগুলিতে প্রবেশ করেছে।

৩. যখন যীশু শাসন শুরু করেছিলেন পৃথিবীতে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছিল কেন?

যেমন পূর্ববর্তী অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে, বাইবেল কাল নিরূপণ বিদ্যা এই সিদ্ধান্তে পরিচালিত করে যে ঈশ্বরের রাজ্য ইতিমধ্যেই শাসন শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু কিভাবে তা হতে পারে? পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, ভাল নয়। বাস্তবিক এটিই এক শক্তিশালী নিদর্শন যে ঈশ্বরের রাজ্য শাসন শুরু করেছে। তা কেন? কারণ, গীতসংহিতা ১১০:২ পদ আমাদের জানায় যে একটি সময়ে যীশু ‘তাঁর শত্রুদের মধ্যে’ শাসন করবেন। সত্যই, স্বর্গীয় রাজারূপে তাঁর প্রথম কাজ হয়েছিল শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের পৃথিবীর সন্নিকদুট নিক্ষেপ করা। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) ফল কী হয়েছিল? ঠিক তাই যা প্রকাশিত বাক্য ১২:১২ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকদুট নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।” আমরা এখন সেই ‘সংক্ষিপ্ত কালের’ মধ্যে বাস করছি।

৪. শেষ কালের কিছু বৈশিষ্ট্য কী এবং এগুলি কী ইঙ্গিত করে? (বক্স দেখুন।)

সুতরাং, আশ্চর্য নয়, যখন যীশুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তাঁর আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কী হবে, তাঁর উত্তর প্রশান্তজনক ছিল। সেই চিহ্নের বিভিন্ন অংশগুলি ১০২ পৃষ্ঠায় বক্সে পাওয়া যাবে। যেমন আপনি দেখতে পারেন, খ্রীষ্টীয় প্রেরিত পৌল, পিতর এবং যোহন শেষ কাল সম্পর্কে আমাদের আরও বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। সত্য যে, চিহ্ন এবং শেষ কালের অধিকাংশ বিষয়ই দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতির সাথে জড়িত। তবুও, এই ভাববাণীগুলির পরিপূর্ণতা আমাদের দৃঢ়প্রত্যয় করবে যে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা তার শেষের সন্নিকদুট। আসুন আমরা শেষ কালের কয়েকটি প্রধান বিষয়কে ভালভাবে পরীক্ষা করি।

শেষ কালের বিষয়গুলি

৫, ৬. যুদ্ধবিগ্রহ এবং দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে ভাববাণীগুলি কিভাবে পূর্ণ হচ্ছে?

“জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে।” (মথি ২৪:৭; প্রকাশিত বাক্য ৬:৪) লেখক আরনেস্ট হেমিংওয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে বলেছিলেন “সবচেয়ে বিশাল, খুনী, কু-পরিচালিত হত্যালীলা যা আগে কখনও পৃথিবীর উপরে সংঘটিত হয়নি।” দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন দ্যা ক্রুসিবেল্‌—১৯১৪-১৯১৯ এই বই অনুসারে, এটি ছিল “যুদ্ধের এক নতুন সম্প্রসার, মানবজাতির অভিজ্ঞতায় প্রথম সম্পূর্ণ যুদ্ধ। এর স্থিতিকাল, প্রচণ্ডতা এবং মাত্রা, পূর্বে জানা অথবা সাধারণত আশা করা হয়ে থাকে, এমন যে কোন কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।” তারপর এসেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হয়েছিল। “বিংশ শতাব্দী,” ইতিহাসের অধ্যাপক হিউ থমাস বলেন, “মেশিনগান, ট্যাঙ্ক, বি-৫২ বোমারু বিমান, পারমাণবিক বোমা এবং সবশেষে, ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। যে কোন সময়ের যুদ্ধের চেয়ে এটি অনেক বেশি রক্তাক্ত এবং বিধ্বংসী যুদ্ধগুলি দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে।” সত্য, ঠাণ্ডা লড়াই শেষ হওয়ার পরে নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছিল। তবুও, একটি বিবরণ সম্ভাব্য হিসাব দেয় যে প্রস্তাবিত হ্রাসের পরেও প্রায় ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার থেকে যাবে—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে ৯০০ গুণেরও অধিক।

“দুর্ভিক্ষ হইবে।” (মথি ২৪:৭; প্রকাশিত বাক্য ৬:৫, ৬, ৮) ১৯১৪ সালের পর থেকে অন্তত ২০টি সাংঘাতিক দুর্ভিক্ষ হয়েছে। দুর্দশাগ্রস্ত এলাকাগুলির অন্তর্ভুক্ত হল ইথিয়োপিয়া, কাম্বোডিয়া, গ্রীস, চীন, নাইজিরিয়া, বাংলাদেশ, বুরুন্ডী, ভারত, রাশিয়া, রুয়ান্ডা, সোমালিয়া এবং সুদান। কিন্তু খাদ্যের অভাবের জন্যই সর্বদা দুর্ভিক্ষ হয় না। “সাম্প্রতিক দশকগুলিতে পৃথিবীর খাদ্য সরবরাহ তার জনসংখ্যার চাইতে অধিক দ্রুত বেড়েছে,” বলে উপসংহার করেছিল কৃষি-বৈজ্ঞানিক ও অর্থবিজ্ঞানীদের একটি দল। “কিন্তু যেহেতু অন্তত ৮০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে, . . . এই দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি থেকে তাদের মুক্ত করতে প্রাচুর্যের মধ্য থেকে যথেষ্ট ক্রয় করতে তারা অক্ষম।” অন্যান্য ক্ষেদুত্র জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. আবদেলগালীল এলমেকি দুটি উদাহরণ উদুল্লখ করেন যেখানে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে রয়েছে অথচ তাদের দেশ বিপুল পরিমাণে খাদ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। মনে হয় সরকারগুলি তাদের দেশবাসীদের খাওয়ানোর পরিবর্তে তাদের যুদ্ধে অর্থ বিনিয়োগের জন্য বিদেশী মুদ্রা অর্জন করতে অনেক বেশি আগ্রহী। ডা. এলমেকির উপসংহার? দুর্ভিক্ষ হল প্রায়ই “বন্টন এবং সরকারি কূটনীতির এক বিষয়।”

৭. বর্তমানে মহামারী সম্পর্কীয় তথ্যগুলি কী?

“মহামারী।” (লূক ২১:১১; প্রকাশিত বাক্য ৬:৮) স্প্যানিশ ইন্‌ফ্লুয়েঞ্জা ১৯১৮-১৯ সালে অন্তত ২.১ কোটি মানুষের জীবন নিয়েছিল। এ. এ. হোয়েলিং দি গ্রেট এপিডেমিক্‌ বইয়ে লেখেন: “ইতিহাসে কখনও পৃথিবী এমন এক হত্যাকারী দ্বারা বিধ্বস্ত হয়নি যে এত শীঘ্র এত বহুসংখ্যক মানুষকে মেরে ফেলেছিল।” বর্তমানে, মহামারী বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর, ক্যানসার ৫০ লাখ মানুষকে হত্যা করে, উদরের রোগে ৩০ লাখেরও অধিক শিশু ও বাচ্চাদের জীবনহানি করে এবং যক্ষ্মারোগের কারণে মৃত্যু হয় ৩০ লাখ। শ্বাস-সংক্রান্ত সংক্রমণ, প্রধানত নিউমোনিয়া, বৎসরে পাঁচ বছরের নিচে ৩৫ লক্ষ শিশুদের হত্যা করে। আর এক বিস্ময়কর সংখ্যক ২৫০ কোটি—পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেক—সেই রোগে আক্রান্ত যার কারণ হল অপর্যাপ্ত অথবা দূষিত জল এবং অপর্যাপ্ত ময়লা-নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এইডস মহামারী আরও স্মরণ করিয়ে দেয় যে মানুষ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার উদুল্লখযোগ্য সফলতা সত্ত্বেও, মহামারী নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম নয়।

৮. মানুষ কিভাবে “অর্থপ্রিয়” বলে প্রমাণিত হচ্ছে?

“মনুষ্যেরা . . . অর্থপ্রিয় . . . হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:২, ৪) পৃথিবীর সমস্ত দেশে, মনে হয় আরও অধিক সম্পদের জন্য মানুষের এক অতৃপ্ত ক্ষুধা রয়েছে। “সফলতা” প্রায়ই মাপা হয় একজনের উপার্জনের পরিমাণ দ্বারা, “কৃতিত্ব” সম্পত্তির কত অধিকারী তার দ্বারা। “আমেরিকার সমাজে বস্তুবাদিতা প্রেরণার শক্তিগুলির মধ্যে একটি . . . এবং চাহিদার অন্যান্য বড় বাজারগুলিতেও এক ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে চলতেই থাকবে,” এক বিজ্ঞাপন এজেন্সির ভাইস প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন। যেখানে আপনি বাস করেন সেখানে কি এই ঘটছে?

৯. ভাববাণী করা পিতামাতার প্রতি অবাধ্যতা সম্পর্কে কী বলা যেতে পারে?

“পিতামাতার অবাধ্য।” (২ তীমথিয় ৩:২) বর্তমান-দিনের পিতামাতা, শিক্ষক এবং অন্যদের কাছে সরাসরি প্রমাণ আছে যে বহু ছেলেমেয়েরাই অসম্মানকারী এবং অবাধ্য। এই অল্পবয়স্কদের কেউ কেউ তাদের পিতামাতাদের অশোভন আচরণের প্রতি এই প্রতিক্রিয়া দেখায় অথবা তাদের অনুকরণ করে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ছেলেমেয়েরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে—এবং বিদ্রোহ করছে—বিদ্যালয়, আইন, ধর্ম এবং তাদের পিতামাতাদের প্রতি। “এক ঝোঁক হিসাবে,” অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক বিদ্যালয়-শিক্ষক বলেন: “মনে হয় কোন কিছুর প্রতিই তাদের অতি অল্পই শ্রদ্ধা আছে।” যদিও, আনন্দের বিষয়, ঈশ্বর-ভীরু বহু ছেলেমেয়েরাই তাদের আচরণে আদর্শস্বরূপ।

১০, ১১. কী প্রমাণ রয়েছে যে মানুষ প্রচণ্ড এবং স্বাভাবিক স্নেহরহিত?

১০ “প্রচণ্ড।” (২ তীমথিয় ৩:৪) যে গ্রীক শব্দটির অনুবাদ করা হয়েছে “প্রচণ্ড” তার অর্থ ‘অ-বশ্য, অসংযত, মানবিক করুণা ও অনুভূতিহীন।’ বর্তমান দিনের দৌরাত্ম্য সাধনকারীদের কী উত্তম বর্ণনা! “জীবন এত মর্মপীড়াদায়ক, এত রক্তাক্ত বিভীষিকাপূর্ণ যে দৈনিক সংবাদ পড়ার জন্য এক লৌহ হৃদয়ের প্রয়োজন আছে,” এক সম্পাদকীয় বিভাগ বলেছিল। অ্যাপার্টমেন্ট গৃহের নিরাপত্তা-রক্ষক এক সার্জেন্ট লক্ষ্য করেছিলেন যে বহু যুবকেরা তাদের কাজের ফলাফলের প্রতি একেবারে অন্ধ। তিনি বলেছিলেন: “এক মনোভাব রয়েছে যে, ‘কাল কী হবে আমি জানি না। আজ আমি যা চাই তা আমি নেবই।’”

১১ “স্নেহরহিত।” (২ তীমথিয় ৩:৩) এই শব্দটি অনুবাদ করা হয়েছে এক গ্রীক শব্দ থেকে যার অর্থ “হৃদয়হীন, অমানুষিক” এবং এক “স্বাভাবিক পারিবারিক স্নেহের অভাব” চিত্রিত করে। (দ্যা নিউ ইন্টারন্যাশানাল ডিক্‌শনারী অফ নিউ টেস্টামেন্ট থিওলজি) হ্যাঁ, যে পরিবেশে সবচেয়ে বৃদ্ধি হওয়া উচিত—গৃহে—সেখানে প্রায়ই স্নেহের অভাব দেখা যায়। বিবাহিত সাথী, ছোট ছেলেমেয়ে ও এমনকি বয়স্ক পিতামাতাদের প্রতিও অপব্যবহারের বিবরণ চিন্তাজনকভাবে সাধারণ হয়ে পড়েছে। এক গবেষক দল মন্তব্য করেছিল: “মানুষের হিংস্রতা—তা যাই হোক একটি চড় বা ধাক্কা, ছুরি মারা বা গুলি চালানো—আমাদের সমাজে অন্য যে কোন স্থানের চেয়ে পারিবারিক বৃত্তের মধ্যেই অধিক বারবার ঘদুট থাকে।”

১২. মানুষ যে শুধুমাত্র ভক্তির অবয়বধারী তা কেন বলা যেতে পারে?

১২ “লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:৫) জীবনকে ভালর দিকে পরিবর্তন করার বাইবেলের শক্তি রয়েছে। (ইফিষীয় ৪:২২-২৪) তবুও, বর্তমানে অনেকেই তাদের ধর্মকে একটি পর্দারূপে ব্যবহার করে যার পিছনে ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন অধার্মিক কার্যাদি চালিয়ে যায়। মিথ্যা বলা, চুরি করা এবং অশোভন যৌন আচরণ বেশির ভাগ ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়। বহু ধর্ম প্রেমের প্রচার করে কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহকে সমর্থন করে। “সর্বোচ্চ সৃষ্টিকর্তার নামে,” ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ মন্তব্য করে, “মানুষ তার সহ-মানবদের প্রতি সবচেয়ে ঘৃণিত নৃশংস দুষ্কার্য করেছে।” বাস্তবে, সাম্প্রতিক কালের দুটি সবচেয়ে রক্তাক্ত যুদ্ধ—প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ—শুরু হয়েছিল খ্রীষ্টজগতের মধ্যস্থলে।

১৩. কী প্রমাণ আছে যে পৃথিবীর সর্বনাশ করে দেওয়া হচ্ছে?

১৩ “পৃথিবীকে নাশ করা।” (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮, NW) সারা পৃথিবী থেকে ১,৬০০ এর অধিক বৈজ্ঞানিক, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল ১০৪ জন নোবেল পুরস্কার বিজেতা, ইউনিয়ন অফ কন্‌সারণ্ড সায়েনটিস্টস্‌ (ইউসিএস) দ্বারা প্রকাশিত এক সাবধান-বার্তায় সই করেছিলেন, যা বলেছিল: “মানুষ এবং প্রাকৃতিক জগৎ এক সংঘর্ষের পথে রয়েছে। . . . মাত্র কয়েক দশক আর রয়েছে যখন বিপর্যয় এড়াবার সমস্ত সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে।” বিবরণ বলেছিল যে মানুষের জীবন-হানিকর কাজগুলি “পৃথিবীকে এমনভাবে পরিবর্তিত করতে পারে যে আমরা যে উপায়ে জানি সেইভাবে জীবন সংরক্ষণ করতে তা অক্ষম হবে।” ওজোন হ্রাস, জল দূষণ, বনভূমি বিনাশকরণ, মৃত্তিকার উর্বরতা নাশ এবং বহু জীব ও উদ্ভিদ কুলের বিলোপসাধন অতীব জরুরি সমস্যা বলে উদুল্লখ করা হয়েছিল যার প্রতিকার অবশ্য করা উচিত। “জীবনের পরস্পর-মুখাপেক্ষী বিন্যাস কাঠামোর উপরে আমাদের হস্তক্ষেপ,” ইউসিএস বলেছিল, “বহুবিস্তৃত ফলাফল শুরু করে দিতে পারে, জীববিজ্ঞান ব্যবস্থার ধ্বংসকে অন্তর্ভুক্ত করে যার গতিবিজ্ঞান আমরা অসম্পূর্ণভাবে বুঝি।”

১৪. কিভাবে আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে মথি ২৪:১৪ পদ আমাদের দিনে পরিপূর্ণ করা হচ্ছে?

১৪ “রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে।” (মথি ২৪:১৪) যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, সর্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য রাজ্যের সুসমাচার পৃথিবীব্যাপী প্রচার করা হবে। ঐশিক সাহায্য এবং আশীর্বাদ নিয়ে, লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষীরা কোটি কোটি ঘন্টা ব্যয় করছে এই প্রচার এবং শিষ্যকরণ কাজে। (মথি ২৮:১৯, ২০) হ্যাঁ, সাক্ষীরা জানে যে তারা রক্তের দায়ে দায়ী হবে যদি তারা সুসমাচার ঘোষণা না করে। (যিহিষ্কেল ৩:১৮, ১৯) কিন্তু তারা আনন্দিত যে প্রতি বছর হাজার হাজার ব্যক্তি কৃতজ্ঞতার সাথে রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দেয় এবং সত্য খ্রীষ্টান হিসাবে পদক্ষেপ নেয়, অর্থাৎ, যিহোবার সাক্ষীরূপে নিজেদের পরিচিত করে। এটি এক অমূল্য সুযোগ যিহোবাকে সেবা করবার ও এইভাবে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রসারিত করার। আর সমুদয় জগতে এই সুসমাচার প্রচার করার পরে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আসবে।

সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রতি সাড়া দিন

১৫. বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থা কিভাবে শেষ হবে?

১৫ এই বিধিব্যবস্থা কিভাবে শেষ হবে? বাইবেল এক “মহাক্লেশ” সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে যা আরম্ভ হবে “মহতী বাবিল,” মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের উপরে এই পৃথিবীর রাজনৈতিক অংশটি দ্বারা এক আক্রমণের সাথে। (মথি ২৪:২১; প্রকাশিত বাক্য ১৭:৫, ১৬) যীশু বলেছিলেন যে এই সময়ে ‘সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দেবে না, আকাশ থেকে তারাগণের পতন হবে ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হবে।’ (মথি ২৪:২৯) এটি গগনস্থ ব্যাপারগুলিকে আক্ষরিকভাবে বোঝাতে পারে। যাই হোক না কেন, ধর্মীয় জগতের দীপ্তিমান উদুল্লখযোগ্য ব্যক্তিদের মুখোস উন্মোচন করা হবে এবং তারা দূরীভূত হবে। তারপর শয়তান, যাকে “মাগোগ দেশীয় গোগ” বলা হয়েছে, যিহোবার লোকেদের উপরে এক সামগ্রিক আক্রমণ করতে দুর্নীতিপূর্ণ মানুষদের ব্যবহার করবে। কিন্তু শয়তান সফল হবে না, কারণ ঈশ্বর তাদের রক্ষা করবেন। (যিহিষ্কেল ৩৮:১, ২, ১৪-২৩) “মহাক্লেশ” তার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে হর্‌মাগিদোনে ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধ।’ শয়তানের পার্থিব সংগঠনের প্রতিটি শেষ চিহ্নকে পর্যন্ত এটি মুছে দেবে, রক্ষাপ্রাপ্ত মানবজাতির প্রতি সীমাহীন আশীর্বাদ সকল বর্ষিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিয়ে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; ১১:১৫; ১৬:১৪, ১৬; ২১:৩, ৪.

১৬. আমরা কিভাবে জানি যে ভবিষ্যদ্বাণী করা শেষ কালের বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের সময়ের প্রতি প্রযোজ্য?

১৬ তুলনা করলে, শেষ কালের বর্ণনা দেওয়া ভাববাণীগুলির কিছু বৈশিষ্ট্যকে ইতিহাসের অন্য সময়ের প্রতিও প্রযোজ্য বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যখন সংযুক্ত করা হয়, ভাববাণী করা প্রমাণগুলি আমাদের দিনকে নির্ভুলভাবে দেখিয়ে দেয়। উদাহরণ দিতে: কোন ব্যক্তির হস্তাঙ্গুলির রেখাসমূহের ছাপ একটি নমুনা গঠন করে যা অন্য কোন ব্যক্তির হতে পারে না। একইভাবে, শেষ কালের তার নিজস্ব ছাপ, অথবা ঘটনাবলির নমুনা রয়েছে। এটি এক “হস্তাঙ্গুলির ছাপ” গঠন করে যা অন্য কোন সময়কালের হতে পারে না। ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য যে এখন শাসন করছে সে সম্বন্ধে বাইবেলের ইঙ্গিতগুলি নিয়ে যখন বিবেচনা করা হয়, সাক্ষ্যপ্রমাণ এক দৃঢ় ভিত্তি দেয় এই উপসংহারে আসতে যে, এই সময় বাস্তবিকই সেই শেষ কাল। আরও, স্পষ্ট শাস্ত্রীয় প্রমাণ রয়েছে যে বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শীঘ্রই ধ্বংস হবে।

১৭. এই সময়ই যে শেষ কাল এই জ্ঞান আমাদের কী করতে পরিচালিত করা উচিত?

১৭ এই সময়ই যে শেষ কাল সেই সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রতি আপনি কিভাবে সাড়া দেবেন? এটি বিবেচনা করুন: যদি এক ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্মক ঝড় আসন্ন হয়, দেরি না করে আমরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এই বর্তমান বিধিব্যবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে তা আমাদের কার্যে পরিচালিত করা উচিত। (মথি ১৬:১-৩) আমরা পরিষ্কার দেখতে পারি যে এই জগৎ ব্যবস্থার শেষ সময়কালে আমরা বাস করছি। ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য যে কোন প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে তাই আমাদের অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। (২ পিতর ৩:৩, ১০-১২) পরিত্রাণের জন্য নিজেকে প্রতিনিধিরূপে উদুল্লখ করে, যীশু জরুরি ডাক দেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতলনিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে। কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুদুত্ত্রর সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্‌ হও।”—লূক ২১:৩৪-৩৬.

[পাদটীকাগুলো]

a কিছু বাইবেল ‘যুগ’ কথাটির পরিবর্তে “জগৎ” শব্দটি ব্যবহার করে। ডবলু. ই. ভাইনের এক্সপোজিদুটারী ডিক্‌শনারী অফ নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডস্‌ বলে যে গ্রীক শব্দ অইয়ন “এক অনির্দিষ্ট সময়কালকে, অথবা ঘটনাবলির সাথে জড়িত সময়কালকে বোঝায়।” পার্কহার্সদুটর গ্রীক অ্যান্ড ইংলিশ লেক্সিকন টু দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট (পৃষ্ঠা ১৭) ইব্রীয় ১:২ পদে অইয়নস্‌ (বহুবচন) ব্যবহারের আলোচনা প্রসঙ্গে “এই যুগ” অভিব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত করে। তাই ‘যুগ’ এই অনুবাদ মূল গ্রীক শাস্ত্রের সাথে সঙ্গতি রাখে।

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

খ্রীষ্টের শাসনের প্রারম্ভে পৃথিবীতে লক্ষণাদি প্রকাশ সম্পর্কে বাইবেল কী ভাববাণী করেছিল?

শেষ কালের কিছু বৈশিষ্ট্য কী কী?

কী আপনাকে নিশ্চিত করে যে এটাই হল শেষ কাল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০২ পৃষ্ঠার বাক্স]

শেষ কালের কিছু বৈশিষ্ট্য

• নজিরবিহীন যুদ্ধবিগ্রহ।—মথি ২৪:৭; প্রকাশিত বাক্য ৬:৪.

• দুর্ভিক্ষ।—মথি ২৪:৭; প্রকাশিত বাক্য ৬:৫, ৬, ৮.

• মহামারী।—লূক ২১:১১; প্রকাশিত বাক্য ৬:৮.

• অধর্মের বৃদ্ধি।—মথি ২৪:১২.

• পৃথিবীকে নাশ করা।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.

• ভূমিকম্প।—মথি ২৪:৭.

• বিষম সময় যা মোকাবিলা করা কঠিন।—২ তীমথিয় ৩:১, NW.

• অত্যধিক অর্থপ্রিয়।—২ তীমথিয় ৩:২.

• পিতামাতার অবাধ্য।—২ তীমথিয় ৩:২.

• স্নেহরহিত।—২ তীমথিয় ৩:৩.

• ঈশ্বরপ্রিয় নয় বরং বিলাসপ্রিয়।—২ তীমথিয় ৩:৪.

• অজিতেন্দ্রিয়।—২ তীমথিয় ৩:৩.

• সদ্‌বিদ্বেষী।—২ তীমথিয় ৩:৩.

• আসন্ন বিপদ সম্বন্ধে ভ্রূক্ষেপ করছে না।—মথি২৪:৩৯.

• উপহাসকেরা শেষ কালের প্রমাণ অগ্রাহ্য করে।—২ পিতর ৩:৩, ৪.

• পৃথিবীব্যাপী ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচার।—মথি ২৪:১৪.

[১০১ পৃষ্ঠার চিত্র]