সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কাদের উপাসনা ঈশ্বর গ্রহণ করেন?

কাদের উপাসনা ঈশ্বর গ্রহণ করেন?

অধ্যায় ৫

কাদের উপাসনা ঈশ্বর গ্রহণ করেন?

১. উপাসনা সম্বন্ধে এক শমরীয় স্ত্রীলোক কী জানতে চেয়েছিল?

 আপনি কি কখনও চিন্তা করেছেন, ‘কাদের উপাসনা ঈশ্বর গ্রহণ করেন?’ কোন একটি স্ত্রীলোকের মনে হয়ত এই প্রশ্ন এসেছিল যখন সে শমরিয়ায় গরিষীম পর্বতের নিকদুট যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে কথা বলেছিল। শমরীয় এবং যিহূদীদের উপাসনার মধ্যে পার্থক্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে, সে বলেছিল: “আমাদের পিতৃপুরুষেরা এই পর্ব্বতে ভজনা করিতেন, আর আপনারা বলিয়া থাকেন, যে স্থানে ভজনা করা উচিত, সে স্থানটি যিরূশালেমেই আছে।” (যোহন ৪:২০) যীশু কি শমরীয় স্ত্রীলোকটিকে বলেছিলেন যে ঈশ্বর সব উপাসনাই গ্রহণ করেন? অথবা তিনি কি বলেছিলেন যে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে নির্দিষ্ট বিষয়সমূহের প্রয়োজন আছে?

২. শমরীয় স্ত্রীলোকটিকে উত্তর দিতে, যীশু কী বলেছিলেন?

যীশুর চমকপ্রদ উত্তর ছিল: “এমন সময় আসিতেছে, যখন তোমরা না এই পর্ব্বতে, না যিরূশালেমে পিতার ভজনা করিবে।” (যোহন ৪:২১) শমরীয়েরা বহুদিন ধরে যিহোবাকে ভয় করত এবং গরিষীম পর্বতের উপরে অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা করত। (২ রাজাবলি ১৭:৩৩) এখন যীশু খ্রীষ্ট বললেন যে না সেই স্থান না যিরূশালেম সত্য উপাসনার জন্য প্রয়োজন হবে।

আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করুন

৩. (ক) শমরীয়েরা ঈশ্বরকে প্রকৃতই জানত না কেন? (খ) বিশ্বস্ত যিহূদীরা ও অন্যেরা কিভাবে ঈশ্বরকে জানতে পারত?

যীশু শমরীয় স্ত্রীলোকটিকে আরও বলেছিলেন: “তোমরা যাহা জান না, তাহার ভজনা করিতেছ; আমরা যাহা জানি, তাহার ভজনা করিতেছি, কারণ যিহূদীদের মধ্য হইতেই পরিত্রাণ।” (যোহন ৪:২২) শমরীয়দের মিথ্যা ধর্মীয় মতবাদ সকল ছিল এবং শুধুমাত্র বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বইকে অনুপ্রাণিত হিসাবে গ্রহণ করেছিল—আর শুধুমাত্র এইগুলিই তাদের নিজেদের সংশোধিত গ্রন্থে শমরীয় পেন্ট্যাটিউক রূপে পরিচিত ছিল। সুতরাং, তারা ঈশ্বরকে প্রকৃতই জানত না। কিন্তু, যিহূদীদের কাছেই শাস্ত্রজ্ঞান গচ্ছিত রাখা হয়েছিল। (রোমীয় ৩:১, ২) ঈশ্বরকে জানার জন্য তাদের যা প্রয়োজন তা বিশ্বস্ত যিহূদী এবং অন্যেরা যারা শুনবে শাস্ত্র তা প্রদান করেছিল।

৪. যীশুর বাক্য অনুসারে, যিহূদী ও শমরীয় উভয়েরই কী করার প্রয়োজন ছিল যদি ঈশ্বরের কাছে তাদের উপাসনাকে গ্রহণযোগ্য হতে হয়?

প্রকৃতপক্ষে, যীশু দেখিয়েছিলেন যে যিহূদী ও শমরীয়গণ উভয়েরই, তাদের উপাসনার পথকে সংশোধন করতে হবে যেন ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে। তিনি বলেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, বরং এখনই উপস্থিত, যখন প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন। ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে।” (যোহন ৪:২৩, ২৪) বিশ্বাস ও প্রেমপূর্ণ হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমাদের “আত্মায়,” ঈশ্বরকে উপাসনা করা প্রয়োজন। তাঁর বাক্য, বাইবেল অধ্যয়ন এবং তাঁর প্রকাশিত সত্য অনুসারে তাঁকে উপাসনা করার দ্বারা ঈশ্বরকে “সত্যে” উপাসনা করা সম্ভব। আপনি কি তা করতে আগ্রহী?

৫. (ক) “উপাসনা”-র অর্থ কী? (খ) আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে যদি আমরা চাই ঈশ্বর আমাদের উপাসনা গ্রহণ করুন?

যীশু জোর দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর সত্য উপাসনা চান। এটি দেখায় যে সেই ধরনের উপাসনা আছে যা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈশ্বরকে উপাসনার অর্থ তাঁকে সশ্রদ্ধ সম্মান এবং তাঁকে পবিত্ররূপে পরিচর্যা করা। যদি আপনি কোন শক্তিশালী শাসককে সম্মান দেখাতে চান, সম্ভবত আপনি তাকে পরিচর্যা করতে ও যা তাকে সন্তুষ্ট করবে তাই করতে আগ্রহী হবেন। তাহলে অবশ্যই, আমরা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাই। ‘আমার ধর্ম আমাকে সন্তুষ্ট করে,’ শুধুমাত্র এই বলার পরিবর্তে বরং, আমাদের নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন আছে যে আমাদের উপাসনা ঈশ্বরের প্রয়োজনগুলি পূর্ণ করে কি না।

পিতার ইচ্ছা পালন করা

৬, ৭. যারা তাঁর শিষ্য বলে দাবি করে তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিকে কেন যীশু স্বীকার করেন না?

আসুন আমরা মথি ৭:২১-২৩ পড়ি ও দেখি একটি চূড়ান্ত বিষয়কে শনাক্ত করতে পারি কি না যা নির্ধারণ করে যে সব উপাসনা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না। যীশু বলেছিলেন: “যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পাইবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলিবে, হে প্রভু, হে প্রভু, আপনার নামেই কি আমরা ভাববাণী বলি নাই? আপনার নামেই কি ভূত [মন্দ আত্মিক প্রাণীসকল] ছাড়াই নাই? আপনার নামেই কি অনেক পরাক্রম-কার্য্য করি নাই? তখন আমি তাহাদিগকে স্পষ্টই বলিব, আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্ম্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।”

সত্য উপাসনায় যীশু খ্রীষ্টকে প্রভুরূপে স্বীকার করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু যারা যীশুর শিষ্য বলে দাবি করে তাদের মধ্যে অনেকেরই উপাসনায় কিছু বিষয় বাদ পড়ে যায়। তিনি বলেছিলেন যে কিছু লোকে “পরাক্রম-কার্য্য” করবে, যেমন মনে হবে অলৌকিকভাবে আরোগ্যসাধন করছে। কিন্তু, যীশু যাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেছিলেন তা করতে তারা ব্যর্থ হবে। তারা “[তাঁর] পিতার ইচ্ছা পালন” করবে না। যদি আমরা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাই, আমাদের অবশ্যই জানতে হবে পিতার ইচ্ছা কী ও তারপর তা করতে হবে।

যথার্থ জ্ঞান—এক সুরক্ষা

৮. যদি আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে হয়, কী প্রয়োজন রয়েছে এবং কোন্‌ ভ্রান্তিজনক দৃষ্টিভঙ্গি আমরা অবশ্যই পরিত্যাগ করব?

ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনের জন্য প্রয়োজন যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট উভয়ের সম্বন্ধেই এক যথার্থ জ্ঞান। এরূপ জ্ঞান অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে। তাহলে, অবশ্যই, ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল থেকে যথার্থ জ্ঞান অর্জনের এই বিষয়টিকে আমরা সকলেই গুরুত্বের সাথে নিতে চাইব। কেউ কেউ বলেন যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের উপাসনায় আন্তরিক এবং উদ্যমী আছি ততক্ষণ চিন্তা করার কোন কারণ নেই। অন্যেরা দাবি করে, ‘যত কম আপনি জানেন, তত কম আপনার কাছ থেকে আশা করা হবে।’ তবুও, বাইবেল আমাদের উৎসাহ দেয় ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য বিষয়ক জ্ঞানে বৃদ্ধি পেতে।—ইফিষীয় ৪:১৩; ফিলিপীয় ১:৯; কলসীয় ১:৯.

৯. যথার্থ জ্ঞান কিভাবে আমাদের রক্ষা করে এবং আমাদের এরূপ রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে কেন?

আমাদের উপাসনাকে দূষিত করার বিরুদ্ধে এই জ্ঞান হল এক সুরক্ষা। প্রেরিত পৌল কোন এক আত্মিক প্রাণী সম্পর্কে বলেছিলেন যে “দীপ্তিময় দূতের” ভান করে। (২ করিন্থীয় ১১:১৪) এইভাবে ছদ্মবেশী, এই আত্মিক প্রাণী—শয়তান—ঈশ্বরের ইচ্ছার বিপরীতে কাজ করতে আমাদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। অন্যান্য আত্মিক প্রাণীরাও যারা শয়তানের সঙ্গী তারা মানুষের উপাসনাকে দূষিত করে চলেছে, কারণ পৌল বলেছিলেন: “বরং পরজাতিগণ যাহা যাহা বলিদান করে, তাহা ভূতদের উদ্দেশে বলিদান করে, ঈশ্বরের উদ্দেশে নয়।” (১ করিন্থীয় ১০:২০) সম্ভবতঃ, অনেকেই ভেবেছেন তারা সঠিক উপায়ে উপাসনা করছেন, যদিও ঈশ্বর যা চেয়েছিলেন তা তারা করছিলেন না। তাদের ভ্রান্ত করে অপবিত্র মিথ্যা উপাসনায় পরিচালিত করা হয়েছিল। আমরা শয়তান ও মন্দ দূতেদের সম্বন্ধে পরে আরও জানব, কিন্তু ঈশ্বরের এই শত্রুরা নিশ্চিতরূপেই মানবজাতির উপাসনাকে দূষিত করে চলেছে।

১০. যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার জল সরবরাহকে বিষাক্ত করে দিয়ে থাকে, আপনি কী করবেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের যথার্থ জ্ঞান আমাদের কী করতে সুসজ্জিত করে?

১০ যদি আপনি জানতেন যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার জল সরবরাহকে বিষাক্ত করে দিয়েছে, আপনি কি তা থেকে জল পান করেই চলবেন? অবশ্যই, আপনি তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেবেন নিরাপদ, বিশুদ্ধ জলের এক উৎসকে খুঁজে বার করতে। হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্যের যথার্থ জ্ঞান সত্য ধর্মকে শনাক্ত করতে এবং অপবিত্রতা সকল যা ঈশ্বরের নিকদুট উপাসনাকে অগ্রাহ্য করায় তা ত্যাগ করতে আমাদের সুসজ্জিত করে।

ধর্মসূত্র হিসাবে মনুষ্যদের আদেশ

১১. বহু যিহূদীদের উপাসনার মধ্যে অন্যায় কী ছিল?

১১ যখন যীশু পৃথিবীতে ছিলেন, বহু যিহূদী ঈশ্বরবিষয়ক যথার্থ জ্ঞান অনুসারে কাজ করেনি। তাই, তারা যিহোবার সম্মুখে পবিত্ররূপে দাঁড়াবার সুযোগ হারিয়েছিল। তাদের সম্বন্ধে, পৌল লিখেছিলেন: “আমি তাহাদের পক্ষে এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, ঈশ্বরের বিষয়ে তাহাদের উদ্যোগ আছে, কিন্তু তাহা জ্ঞানানুযায়ী নয়।” (রোমীয় ১০:২) ঈশ্বরকে কিভাবে উপাসনা করবে সেই সম্বন্ধে তিনি যা বলেছিলেন তা শোনার পরিবর্তে তারা নিজেরাই তা স্থির করে নিয়েছিল।

১২. ইস্রায়েল জাতির উপাসনাকে কী দূষিত করেছিল ও তার ফল কী হয়েছিল?

১২ আদিতে ইস্রায়েলীয়েরা ঈশ্বর-দত্ত বিশুদ্ধ ধর্ম অভ্যাস করেছিল, কিন্তু পরে তা মানুষের শিক্ষা ও দর্শনবাদ দ্বারা দূষিত হয়ে পড়েছিল। (যিরমিয় ৮:৮, ৯; মালাখি ২:৮, ৯; লূক ১১:৫২) যদিও যিহূদী ধর্মীয় নেতারা যারা ফরীশী বলে পরিচিত ছিল, ভেবেছিল তাদের উপাসনা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল, যীশু তাদের বলেছিলেন: “কপটীরা, যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে বিলক্ষণ ভাববাণী বলিয়াছেন, যেমন লেখা আছে, ‘এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সম্মান করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে। ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্ম্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।’”—মার্ক ৭:৬, ৭.

১৩. ফরীশীরা যা করেছিল আমরা কিভাবে তা করতে পারি?

১৩ এটি কি সম্ভব যে ফরীশীরা যা করেছিল আমরাও তা করতে পারি? এটি ঘটতে পারে যদি উপাসনা সম্পর্কে ঈশ্বর যা বলেছেন তা পরীক্ষা করার পরিবর্তে আমরা বংশ পরম্পরাগত ধর্মীয় রীতিনীতিগুলিকে অনুসরণ করে চলি। এই প্রকৃত বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে, পৌল লিখেছিলেন: “আত্মা স্পষ্টই বলিতেছেন, উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।” (১ তীমথিয় ৪:১) তাই শুধু ভেবে নেওয়াই যথেষ্ট নয় যে আমাদের উপাসনা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে। যীশুর সাথে যে শমরীয় স্ত্রীলোকটির সাক্ষাৎ হয়েছিল, তার মত হয়ত আমরাও আমাদের পিতামাতার কাছ থেকে আমাদের উপাসনা পদ্ধতির অধিকারী হয়েছি। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে আমরা যে বিষয়গুলি করছি তা যেন ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করে।

ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করা থেকে সতর্ক থাকুন

১৪, ১৫. ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে কিছু জ্ঞান এমনকি যদি আমাদের থাকেও, আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কেন?

১৪ যদি আমরা সতর্ক না থাকি, ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কিছু আমরা করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, “তাঁহাকে ভজনা করিবার জন্য” প্রেরিত যোহন এক স্বর্গদূতের চরণে পড়েছিলেন। কিন্তু দূত তাকে সাবধান করেছিলেন: “দেখিও, এমন কর্ম্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার যে ভ্রাতৃগণ যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদেরও সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর।” (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০) তাই আপনি কি এ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন বুঝতে পারছেন যে আপনার উপাসনা কোন রকম প্রতিমাপূজা দ্বারা দূষিত হয়ে পড়েনি?—১ করিন্থীয় ১০:১৪.

১৫ যখন কিছু খ্রীষ্টানেরা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে না এরূপ ধর্মীয় রীতিনীতিগুলির অভ্যাস শুরু করেছিল, পৌল জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “তবে কেমন করিয়া পুনর্ব্বার ঐ দুর্ব্বল অকিঞ্চন অক্ষরমালার প্রতি ফিরিতেছ, আবার ফিরিয়া সেগুলির দাস হইতে চাহিতেছ? তোমরা বিশেষ বিশেষ দিন, মাস, ঋতু ও বৎসর পালন করিতেছ। তোমাদের বিষয়ে আমার ভয় হয়; কি জানি, তোমাদের মধ্যে বৃথা পরিশ্রম করিয়াছি।” (গালাতীয় ৪:৮-১১) ব্যক্তিগতভাবে যারা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান অর্জন করেছিল কিন্তু পরে ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন ধর্মীয় প্রথা ও ধর্মীয় পর্বদিনগুলি পালন করে তারা ভুল করেছিল। যেমন পৌল বলেছিলেন, আমাদের প্রয়োজন “প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা” করা।—ইফিষীয় ৫:১০.

১৬. যোহন ১৭:১৬ ও ১ পিতর ৪:৩ পদ ছুটির দিন এবং প্রথাসমূহ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে কি না তা নির্ধারণ করতে কিভাবে আমাদের সাহায্য করে?

১৬ আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে ঈশ্বরের নীতিসমূহকে লঙ্ঘন করে এমন ধর্মীয় ছুটির দিনগুলি এবং অন্যান্য প্রথাগুলিকে আমরা এড়িয়ে চলি। (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) উদাহরণস্বরূপ, যীশু তাঁর অনুগামীদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৬) এই জগতের বিষয়গুলির প্রতি নিরপেক্ষতার নীতিকে লঙ্ঘন করে এমন উৎসব ও ছুটির দিনগুলির সাথে কি আপনার ধর্ম জড়িয়ে রয়েছে? অথবা আপনার ধর্মের অনুগামীরা কখনও কখনও প্রথা ও উৎসবগুলিতে কি অংশ নেয় যাতে হয়ত প্রেরিত পিতরের বর্ণনার সমান সেইসব আচরণ জড়িত আছে? তিনি লিখেছিলেন: “পরজাতীয়দের বাসনা সাধন করিয়া, লম্পটতা, সুখাভিলাষ, মদ্যপান, রঙ্গরস পানার্থক সভা ও ঘৃণার্হ প্রতিমাপূজারূপ পথে চলিয়া যে কাল অতীত হইয়াছে, তাহাই যথেষ্ট।”—১ পিতর ৪:৩.

১৭. যা কিছু জগতের আত্মাকে প্রতিফলিত করে তা পরিত্যাগ করা আমাদের উচিত কেন?

১৭ যে কোন আচরণ যা আমাদের চারিপাশের এই ঈশ্বরভক্তিহীন জগতের মনোভাবকে প্রতিফলিত করে তা পরিত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তার উপরে প্রেরিত যোহন জোর দিয়েছিলেন। যোহন লিখেছিলেন: “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৫-১৭) আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে যারা “ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে” তারা অনন্তকাল স্থায়ী হবে? হ্যাঁ, যদি আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করি ও সেইসব ক্রিয়াকলাপ এড়িয়ে চলি যা এই জগতের মনোভাবকে প্রতিফলিত করে, তাহলে আমাদের অনন্ত জীবনের আশা থাকতে পারে!

ঈশ্বরের উচ্চ মানগুলি মেনে চলুন

১৮. আচরণ সম্পর্কে কিছু করিন্থীয় কিভাবে ভুল করেছিল এবং এর থেকে আমাদের কী শেখা উচিত?

১৮ ঈশ্বর তাদেরই তাঁর উপাসকরূপে চান যারা তাঁর উচ্চ নৈতিক মানগুলি মেনে চলে। প্রাচীন করিন্থে কেউ কেউ ভুল করে ভেবেছিল যে ঈশ্বর অনৈতিক আচরণ সহ্য করবেন। ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০ পদ পড়ে আমরা বুঝতে পারি তারা কত ভ্রান্ত ছিল। যদি গ্রহণযোগ্যরূপে আমাদের ঈশ্বরের উপাসনা করতে হয়, আমাদের অবশ্যই কথায় এবং কাজে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে হবে। আপনার উপাসনা পদ্ধতি কি তা করতে আপনাকে সক্ষম করে?—মথি ১৫:৮; ২৩:১-৩.

১৯. সত্য উপাসনা কিভাবে অপরের প্রতি আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে?

১৯ অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাদের আচরণও ঈশ্বরের মানকে প্রতিফলিত করা উচিত। যীশু খ্রীষ্ট আমাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন অন্যদের সাথে সেই ব্যবহার করতে যা আমরা চাই তারা আমাদের প্রতি করুক, কারণ এটি সত্য উপাসনার অংশ। (মথি ৭:১২) ভ্রাতৃপ্রেম প্রদর্শন সম্বন্ধেও তিনি কী বলেছিলেন তা লক্ষ্য করুন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) যীশুর শিষ্যেরা অবশ্যই একে অপরকে প্রেম করবে ও সহ-উপাসক এবং অন্যদের প্রতি সৎকর্ম করবে।—গালাতীয় ৬:১০.

পূর্ণ-হৃদয় উপাসনা

২০, ২১. (ক) কী ধরনের উপাসনা ঈশ্বর চান? (খ) মালাখির সময়ে ইস্রায়েল জাতির উপাসনা যিহোবা কেন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?

২০ মনে মনে, আপনি হয়ত ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য উপাসনা করতে চান। যদি তাই হয়, উপাসনায় আপনার অবশ্যই যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। শিষ্য যাকোব জোর দিয়েছিলেন যে আমাদের নয়, কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গিই হল গুরুত্বপূর্ণ। যাকোব বলেছিলেন: “ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা, এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্ম।” (যাকোব ১:২৭) ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার ইচ্ছা নিয়ে, আমাদের প্রত্যেকের নিজেদের উপাসনাকে পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে এই নিশ্চিত হতে যে এটি ঈশ্বরভক্তিহীন অভ্যাসগুলি দ্বারা দূষিত নয় অথবা এমন কিছু আমরা বাদ দিচ্ছি না যা তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।—যাকোব ১:২৬.

২১ কেবলমাত্র পবিত্র, পূর্ণ-হৃদয় উপাসনাই যিহোবাকে সন্তুষ্ট করে। (মথি ২২:৩৭; কলসীয় ৩:২৩) যখন ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরকে তার চেয়ে কম দিয়েছিল, তিনি বলেছিলেন: “পুত্ত্র পিতাকে এবং দাস প্রভুকে সমাদর করে; ভাল, আমি যদি পিতা হই, তবে আমার সমাদর কোথায়? আর আমি যদি প্রভু হই, তবে আমার প্রতি ভয় কোথায়?” তারা অন্ধ, খঞ্জ ও রুগ্ন পশু বলি উৎসর্গ করে ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করেছিল, আর তিনি ঐ ধরনের উপাসনা অগ্রাহ্য করেছিলেন। (মালাখি ১:৬-৮) যিহোবা সর্বাধিক বিশুদ্ধ উপাসনার যোগ্য এবং একাগ্র ভক্তি ছাড়া আর কিছু গ্রহণ করেন না।—যাত্রাপুস্তক ২০:৫; হিতোপদেশ ৩:৯; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

২২. যদি আমরা চাই ঈশ্বর আমাদের উপাসনা গ্রহণ করুন, আমরা কী পরিত্যাগ করব এবং কী করব?

২২ যীশুর সঙ্গে যে শমরীয় স্ত্রীলোকটি কথা বলেছিল মনে হয় সে ঐশিকরূপে অনুমোদিত পথে ঈশ্বরের উপাসনায় আগ্রহী ছিল। যদি আমাদের তাই ইচ্ছা হয়, আমরা সকল দুষিতকারী শিক্ষা এবং অভ্যাসগুলিকে এড়িয়ে চলব। (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৮) পরিবর্তে, আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে এক যথার্থ জ্ঞান অর্জন করতে ও তাঁর ইচ্ছা পালন করতে প্রাণপণে চেষ্টা করব। গ্রহণযোগ্য উপাসনার জন্য তাঁর প্রয়োজনগুলির সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠ সংযোগ রাখব। (১ তীমথিয় ২:৩, ৪) যিহোবার সাক্ষীরা ঠিক তাই করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করছে এবং তাদের সাথে “আত্মায় ও সত্যে” ঈশ্বরের উপাসনায় অংশ নিতে তারা আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছে। (যোহন ৪:২৪) যীশু বলেছিলেন: “বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন।” (যোহন ৪:২৩) আশা করা হচ্ছে যে আপনি সেইরূপ এক ব্যক্তি। সেই শমরীয় স্ত্রীলোকটির মত, নিঃসন্দেহে আপনি অনন্ত জীবন পেতে ইচ্ছা করবেন। (যোহন ৪:১৩-১৫) কিন্তু আপনি দেখছেন মানুষ বৃদ্ধ হয় ও মারা যায়। পরবর্তী অধ্যায় ব্যাখ্যা করে কেন।

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

যেমন যোহন ৪:২৩, ২৪ পদে দেখানো হয়েছে, কোন্‌ উপাসনা ঈশ্বর গ্রহণ করেন?

আমরা কিভাবে নির্ধারণ করতে পারি যে কিছু প্রথা এবং উৎসবের প্রতি ঈশ্বর সন্তুষ্ট আছেন কি না?

গ্রহণযোগ্য উপাসনার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় কী?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৪৪ পৃষ্ঠার চিত্র]