সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কিভাবে আপনি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারেন

কিভাবে আপনি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারেন

অধ্যায় ১৬

কিভাবে আপনি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারেন

১. বহু ধর্মগুলির মধ্যে কী কী সাদৃশ্য স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান?

 এক পর্যটনকারিণী প্রাচ্যের এক দেশে ভ্রমণ করার সময়ে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে ধর্মীয় রীতিনীতি দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। যদিও মূর্তিগুলি মরিয়ম বা খ্রীষ্টের ছিল না, রীতিনীতির অনেকগুলিই তার দেশের গির্জার রীতিনীতির সাথে মিলে গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, তিনি জপমালার ব্যবহার এবং প্রার্থনা স্তুতি গাওয়া লক্ষ্য করেছিলেন। অন্যেরাও এরূপ তুলনা সকল করেছেন। পূর্ব অথবা পশ্চিম, ভক্তেরা যে সকল উপায়ে ঈশ্বরের অথবা তাদের উপাসনার বস্তুগুলির নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করে সেগুলি লক্ষণীয়রূপে একই।

২. প্রার্থনার কিভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং কেন বহু লোকে প্রার্থনা করে?

অনেকেই বিশেষভাবে চেষ্টা করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার। প্রার্থনার বর্ণনা করা হয়েছে এইভাবে “মনুষ্য দ্বারা পূত অথবা পবিত্র—ঈশ্বর, দেবতাগণ, অতীন্দ্রিয় জগৎ, অথবা অতিপ্রাকৃত শক্তিগুলির সাথে যোগাযোগ রক্ষার এক কার্য।” (দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা) প্রার্থনায় ঈশ্বরের নিকদুট উপস্থিত হয়ে, যদিও, কিছু ব্যক্তি শুধু চিন্তা করে যে তা থেকে তারা কী উপকার পাবে। উদাহরণস্বরূপ, একবার এক ব্যক্তি যিহোবার সাক্ষীদের একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “যদি আপনি আমার জন্য প্রার্থনা করেন, আমার পরিবারে, কর্মক্ষেদুত্র এবং আমার স্বাস্থ্যের যে সকল সমস্যা আছে সেগুলির সমাধান হবে কি?” আপাতরূপে ব্যক্তিটি তাই ভেবেছিল, কিন্তু অনেকেই প্রার্থনা করে এবং দেখে যে তাদের সমস্যাগুলি থেকেই যায়। তাই আমরা হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারি, ‘কেন আমাদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া উচিত?’

কেন ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া উচিত

৩. কার প্রতি আমাদের প্রার্থনা নিবেদিত হওয়া উচিত এবং কেন?

প্রার্থনা কোন অর্থহীন রীতি নয়, অথবা এটি শুধুমাত্র কোন পথ নয় যার দ্বারা কিছু লাভ করা যায়। ঈশ্বরের নিকদুট উপস্থিত হওয়ার একটি প্রধান কারণ হল তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা। সুতরাং আমাদের প্রার্থনা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিত হওয়া উচিত। “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে,” বলেছিলেন গীতরচক দায়ূদ। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৮) যিহোবা আমাদের আমন্ত্রণ দেন তাঁর সঙ্গে এক শান্তির সম্পর্কে আসতে। (যিশাইয় ১:১৮) যারা এই আমন্ত্রণের প্রতি সাড়া দেয় তারা সেই গীতরচকের সাথে একমত যিনি বলেছিলেন: “ঈশ্বরের নিকদুট থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল।” কেন? কারণ যারা যিহোবা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হবে তারা প্রকৃত সুখ ও মানসিক শান্তি উপভোগ করবে।—গীতসংহিতা ৭৩:২৮.

৪, ৫. (ক) ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ কেন? (খ) প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে কিধরনের সম্পর্ক আমরা গড়ে তুলতে পারি?

সাহায্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা কী দরকার যদি তিনি ‘তাঁর কাছে আমাদের চাইবার পূর্বেই জানেন আমাদের কী প্রয়োজন’? (মথি ৬:৮; গীতসংহিতা ১৩৯:৪) প্রার্থনা দেখায় যে আমাদের ঈশ্বরে বিশ্বাস আছে এবং তাঁকে আমরা দেখি “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর” সমূহের উৎসরূপে। (যাকোব ১:১৭; ইব্রীয় ১১:৬) আমাদের প্রার্থনায় যিহোবা আনন্দিত হন। (হিতোপদেশ ১৫:৮) আমাদের উপলব্ধি এবং প্রশংসার অর্থপূর্ণ অভিব্যক্তিগুলি শুনে তিনি খুশি হন, ঠিক যেমন কোন পিতা আনন্দিত হয় তার ছোট শিশুর মুখ থেকে কৃতজ্ঞতার আন্তরিক কথাগুলি শুনে। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৮) যেখানে এক ভাল পিতা-সন্তান সম্পর্ক আছে, সেখানে উত্তম ভাববিনিময়ও রয়েছে। এক শিশু যাকে ভালবাসা হয় সে তার পিতার সঙ্গে কথা বলতে চায়। ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেদুত্রও এটিই সত্য। যিহোবা সম্বন্ধে আমরা যা শিখছি এবং যে প্রেম তিনি আমাদের জন্য প্রদর্শন করেছেন তা যদি আমরা উপলব্ধি করি, তাঁর কাছে প্রার্থনায় নিজেদের প্রকাশ করতে আমাদের এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা হবে।—১ যোহন ৪:১৬-১৮.

পরাৎপর ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার সময়ে, আমাদের শ্রদ্ধাপূর্ণ হওয়া উচিত, যদিও সঠিক কোন্‌ শব্দগুলি আমরা ব্যবহার করব সে সম্বন্ধে অত্যধিক উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। (ইব্রীয় ৪:১৬) আমাদের সর্বদাই যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার অধিকার রয়েছে। আর এটি কী মহান সুযোগ যে আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় ‘আমাদের মনের কথা ভেঙ্গে বলতে পারি!’ (গীতসংহিতা ৬২:৮) যিহোবার প্রতি উপলব্ধিবোধ তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্কে পৌঁছে দেয়, যেমন সেই বিস্বস্ত ব্যক্তি অব্রাহাম উপভোগ করেছিলেন ঈশ্বরের বন্ধুরূপে। (যাকোব ২:২৩) কিন্তু বিশ্বের সার্বভৌম প্রভুর কাছে প্রার্থনা করার সময়ে, তাঁর নিকদুট উপস্থিত হওয়ার জন্য তাঁর প্রয়োজনগুলি আমরা অবশ্যই মানব।

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি

৬, ৭. আমাদের প্রার্থনা শুনতে যদিও ঈশ্বর অর্থ দাবি করেন না, তবুও তিনি আমাদের থেকে কী চান যখন আমরা প্রার্থনা করি?

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কি অর্থের প্রয়োজন আছে? বহু ব্যক্তি যাজকদের অর্থ দেয় তাদের জন্য প্রার্থনা করতে। কেউ কেউ এমনকি বিশ্বাস করে যে তাদের দেওয়া দানের পরিমাণ অনুযায়ী তাদের প্রার্থনা শোনা হবে। যদিও, ঈশ্বরের বাক্য বলে না যে আমাদের জন্য আর্থিক দানের প্রয়োজন আছে প্রার্থনায় যিহোবার নিকদুট উপস্থিত হতে। তাঁর আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাসকল এবং প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে এক সম্পর্কের আশীর্বাদগুলি বিনামূল্যেই প্রাপ্তিসাধ্য।—যিশাইয় ৫৫:১, ২.

তাহলে, কী প্রয়োজন আছে? হৃদয়ের এক সঠিক মনোভাব এক অপরিহার্য বিষয়। (২ বংশাবলি ৬:২৯, ৩০; হিতোপদেশ ১৫:১১) আমাদের হৃদয়ে আমরা অবশ্যই যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখব যে তিনি “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” এবং “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (গীতসংহিতা ৬৫:২; ইব্রীয় ১১:৬) আমাদের অবশ্যই এক নম্র হৃদয়ও থাকবে। (২ রাজাবলি ২২:১৯; গীতসংহিতা ৫১:১৭) তাঁর উদাহরণগুলির একটিতে, যীশু খ্রীষ্ট দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের নিকদুট নম্র মনোভাব সহ এক নিরহঙ্কারী করগ্রাহী এক উদ্ধত ফরীশীর চেয়েও অধিক ধার্মিক প্রমাণিত হয়েছিল। (লূক ১৮:১০-১৪) যখন আমরা প্রার্থনায় ঈশ্বরের নিকদুট উপস্থিত হই, আসুন আমরা মনে রাখি “যে কেহ হৃদয়ে গর্ব্বিত, সে সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ।”—হিতোপদেশ ১৬:৫.

৮. যদি আমরা চাই যে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন, কী থেকে আমাদের নিজেদের অবশ্যই শুচি করতে হবে?

যদি আমরা চাই যে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন, পাপপূর্ণ আচরণ থেকে নিজেদের শুচি করতে হবে। যখন শিষ্য যাকোব ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে অন্যদের উৎসাহ দিয়েছিলেন, তিনি যোগ করেছিলেন: “হে পাপিগণ, হস্ত শুচি কর; হে দ্বিমনা লোক সকল, হৃদয় বিশুদ্ধ কর।” (যাকোব ৪:৮) এমনকি অন্যায়কারীরাও যিহোবার সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে আসতে পারে যদি তারা অনুতপ্ত হয় এবং তাদের পূর্বের জীবন-পথ ত্যাগ করে। (হিতোপদেশ ২৮:১৩) যদি আমরা শুধুমাত্র ভান করি যে আমাদের পথ আমরা শুচি করেছি, তাহলে আমাদের কথা শোনাবার সুযোগ যিহোবা দেবেন না। “ধার্ম্মিকগণের প্রতি প্রভুর চক্ষু আছে; তাহাদের বিনতির প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে; কিন্তু প্রভুর মুখ দুরাচারদের প্রতিকূল,” ঈশ্বরের বাক্য বলে।—১ পিতর ৩:১২.

৯. কার মাধ্যমে আমাদের যিহোবার নিকদুট উপস্থিত হওয়া উচিত এবং কেন?

বাইবেল ঘোষণা করে: “এমন ধার্ম্মিক লোক পৃথিবীতে নাই, যে সৎকর্ম্ম করে, পাপ করে না।” (উপদেশক ৭:২০) সুতরাং আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন: ‘কিভাবে, তাহলে, আমরা যিহোবা ঈশ্বরের নিকদুট উপস্থিত হতে পারি?’ বাইবেল উত্তর দেয়: “যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট।” (১ যোহন ২:১) যদিও আমরা পাপী, যীশু খ্রীষ্ট, যিনি আমাদের জন্য মুক্তিমূল্যরূপ বলি হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তাঁর মাধ্যমে মুক্তকণ্ঠে আমরা ঈশ্বরের নিকদুট উপস্থিত হতে পারি। (মথি ২০:২৮) তিনি হলেন একমাত্র পথ যার মাধ্যমে আমরা যিহোবা ঈশ্বরের নিকদুট উপস্থিত হতে পারি। (যোহন ১৪:৬) আমরা ধরে নেব না যে যীশুর মুক্তিমূল্যরূপ বলিদান আপনা থেকেই আমাদের পাপরাশি আচ্ছাদন করবে এমনকি যদিও স্বেচ্ছাপূর্বক আমরা পাপ করে চলি। (ইব্রীয় ১০:২৬) কিন্তু, যা মন্দ তা থেকে বিরত থাকবার যদি আমরা তীব্র প্রচেষ্টা করি অথচ কখনও কখনও ভুল করে ফেলি, আমরা অনুতপ্ত হতে পারি এবং ঈশ্বরের নিকদুট ক্ষমা চাইতে পারি। যখন আমরা নম্র হৃদয়ে তাঁর নিকদুট উপস্থিত হই, তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন।—লূক ১১:৪.

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার সুযোগ সকল

১০. প্রার্থনা করার সময়ে, কিভাবে আমরা যীশুর অনুকরণ করতে পারি এবং ব্যক্তিগত প্রার্থনার জন্য কয়েকটি উপলক্ষ কী?

১০ যীশু খ্রীষ্ট যিহোবার সাথে তাঁর সম্পর্ককে অতি মূল্যবান বলে গণনা করতেন। সুতরাং, ব্যক্তিগত প্রার্থনায় ঈশ্বরের সাথে কথা বলার জন্য যীশু সময় করে নিতেন। (মার্ক ১:৩৫; লূক ২২:৪০-৪৬) যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করা এবং নিয়মিত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা আমাদের জন্য ভাল হবে। (রোমীয় ১২:১২) প্রার্থনা করে দিন শুরু করা উপযুক্ত এবং ঘুমাতে যাবার আগে, আমরা যথার্থভাবেই দিনের কার্যাদির জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাতে পারি। সারা দিনের মধ্যে, “সর্ব্বসময়ে” ঈশ্বরের নিকদুট উপস্থিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। (ইফিষীয় ৬:১৮) যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনতে পান তা জেনে, এমনকি আমরা নীরবে মনে মনেও প্রার্থনা করতে পারি। একান্তে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সাহায্য করে এবং প্রতিদিন যিহোবার কাছে প্রার্থনা তাঁর আরও নিকটবর্তী হতে আমাদের সাহায্য করে।

১১. (ক) পরিবারগুলির কেন একদুত্র প্রার্থনা করা উচিত? (খ) কোন প্রার্থনার শেষে যখন আপনি “আমেন্‌” বলেন তার অর্থ কী?

১১ দলবদ্ধভাবে লোকেদের পক্ষে উৎসর্গ করা প্রার্থনাও যিহোবা শোনেন। (১ রাজাবলি ৮:২২-৫৩) পরিবারের কর্তা প্রার্থনায় নেতৃত্ব নিয়ে, আমরা একটি পরিবার রূপে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারি। এটি পরিবারের একতাবন্ধনকে দৃঢ় করে এবং যখন ছোটরা তাদের পিতামাতাকে ঈশ্বরের কাছে নম্রভাবে প্রার্থনা করতে শোনে, যিহোবা তাদের কাছে বাস্তব হয়ে ওদুঠন। যদি কোন ব্যক্তি প্রার্থনায় একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করে, হয়ত যিহোবার সাক্ষীদের কোন সভায়, তখন কী হয়? যদি আমরা শ্রোতাদের মধ্যে থাকি, আসুন আমরা মনোযোগ সহকারে শুনি যাতে প্রার্থনার শেষে, সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বলতে পারি “আমেন্‌,” যার অর্থ “তাহাই হউক।”—১ করিন্থীয় ১৪:১৬.

যে প্রার্থনা সকল যিহোবা শোনেন

১২. (ক) কেন ঈশ্বর কিছু প্রার্থনার উত্তর দেন না? (খ) প্রার্থনার সময়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রয়োজনগুলির উপরে মনোযোগ দেওয়া আমাদের উচিত নয় কেন?

১২ কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে ঈশ্বর তাদের প্রার্থনার উত্তর দেন না এমনকি যদিও তারা খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন। কিন্তু, প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “যদি [ঈশ্বরের] ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন।” (১ যোহন ৫:১৪) সুতরাং, ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে আমাদের যাচ্ঞা করা প্রয়োজন। যেহেতু তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য আগ্রহী, আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে প্রভাবিত করে এরূপ যে কোন বিষয় প্রার্থনার পক্ষে উপযুক্ত। শুধুমাত্র দৈহিক প্রয়োজনগুলির উপরে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার প্রলোভনকে আমাদের অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, রোগব্যাধির সাথে যুদ্ধ করতে অন্তর্দৃষ্টি এবং সহিষ্ণুতার জন্য প্রার্থনা করা উপযুক্ত, কিন্তু স্বাস্থ্য সম্পর্কে অযথা উদ্বিগ্নতা যেন আমাদের আধ্যাত্মিক আগ্রহগুলিকে স্তিমিত না করে দেয়। (গীতসংহিতা ৪১:১-৩) স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজের অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা সম্বন্ধে সচেতন হয়ে, এক খ্রীষ্টীয় মহিলা তার অসুস্থতার প্রতি উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গির জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। ফলে, তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি অতি সামান্য ব্যাপারে পরিণত হয় এবং তিনি অনুভব করেছিলেন যেন তাকে “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দেওয়া হয়েছে। (২ করিন্থীয় ৪:৭) অন্যদের আধ্যাত্মিক সাহায্য করতে তার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়েছিল এবং তিনি এক পূর্ণ-সময় রাজ্যের ঘোষক হয়েছিলেন।

১৩. মথি ৬:৯-১৩ পদে যেমন দেখানো হয়েছে, কিছু উপযুক্ত বিষয় কী যা আমরা আমাদের প্রার্থনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি?

১৩ আমাদের প্রার্থনায় আমরা কী অন্তর্ভুক্ত করতে পারি যাতে যিহোবা সেগুলি শুনে খুশি হন? যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন কিভাবে প্রার্থনা করতে হয়। মথি ৬:৯-১৩ পদে লিপিবদ্ধ সেই আদর্শ প্রার্থনায়, তিনি কয়েকটি বিষয়ের নমুনা দেন যে সম্পর্কে আমরা উপযুক্তরূপেই প্রার্থনা করতে পারি। মুখ্য চিন্তার বিষয় আমাদের প্রার্থনায় কী হওয়া উচিত? যিহোবা ঈশ্বরের নাম এবং রাজ্যের অবশ্যই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। আমাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসকলের জন্য প্রার্থনা করা উপযুক্ত। আমাদের পাপের ক্ষমা এবং প্রলোভনগুলি ও সেই পাপাত্মা, শয়তান দিয়াবল থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। যীশু চাননি যে আমরা এই প্রার্থনা গান করি অথবা বারবার পুনরাবৃত্তি করি, এর অর্থ সম্পর্কে না ভেবে মুখস্থ বলি। (মথি ৬:৭) কিধরনের সম্পর্ক তা হবে যদি কোন সন্তান তার পিতার সঙ্গে কথা বলার জন্য সবসময় একই শব্দগুলি ব্যবহার করে?

১৪. আবেদনসমূহ ছাড়া, আর কী প্রার্থনা আমাদের উৎসর্গ করা উচিত?

১৪ আবেদন এবং আন্তরিক বিনতি ছাড়াও, আমাদের উচিত প্রশংসা এবং ধন্যবাদের প্রার্থনা উৎসর্গ করা। (গীতসংহিতা ৩৪:১; ৯২:১; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৮) আমরা অন্যদের জন্যও প্রার্থনা করতে পারি। আমাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনেরা যারা দুর্দশাগ্রস্ত অথবা উৎপীড়িত তাদের জন্য প্রার্থনা তাদের সম্পর্কে আমাদের আগ্রহকে প্রকাশ করে এবং আমাদের কাছ থেকে ঐরূপ উদ্বেগ প্রকাশ শুনতে যিহোবা খুশি হন। (লূক ২২:৩২; যোহন ১৭:২০; ১ থিষলনীকীয় ৫:২৫) বাস্তবে, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।”—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকুন

১৫. কী আমাদের স্মরণে রাখা উচিত যদি মনে হয় আমাদের প্রার্থনাগুলির উত্তর দেওয়া হচ্ছে না?

১৫ যদিও আপনি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান অর্জন করছেন, আপনার বোধ হতে পারে যে কখনও কখনও আপনার প্রার্থনার উত্তর পান না। এরূপ অবস্থা হতে পারে কারণ কোন বিশেষ প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার ঈশ্বরের সময় হয়ত তখনও আসেনি। (উপদেশক ৩:১-৯) কোন পরিস্থিতি কিছুকাল চলতে দেওয়ার অনুমতি যিহোবা হয়ত দিতে পারেন, কিন্তু প্রার্থনার উত্তর তিনি দেন এবং তা দেওয়ার সবচেয়ে ভাল সময় তিনি জানেন।—২ করিন্থীয় ১২:৭-৯.

১৬. কেন আমাদের প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকা উচিত এবং তা করা ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ককে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে?

১৬ প্রার্থনায় আমাদের নিবিষ্ট থাকা প্রকাশ করে যে ঈশ্বরের কাছে আমরা যা বলছি তাতে আমাদের আন্তরিক আগ্রহ রয়েছে। (লূক ১৮:১-৮) উদাহরণস্বরূপ, কোন এক দুর্বলতাকে জয় করতে আমরা হয়ত যিহোবার কাছে সাহায্য চাইতে পারি। প্রার্থনায় নিবিষ্ট থেকে এবং আমাদের আবেদনগুলির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করে, আমরা আমাদের আন্তরিকতা প্রদর্শন করি। আমাদের আবেদনগুলি নির্দিষ্ট ও আন্তরিক হওয়া উচিত। যখন আমরা কোন প্রলোভনের সম্মুখীন হই, তখন একাগ্রভাবে প্রার্থনা করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। (মথি ৬:১৩) আমাদের পাপপূর্ণ ইচ্ছাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার সাথে যখন আমরা প্রার্থনা করে চলি, আমরা দেখতে পাব যিহোবা কিভাবে আমাদের সাহায্য করেন। তা আমাদের বিশ্বাস গড়ে তুলবে এবং তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।—১ করিন্থীয় ১০:১৩; ফিলিপীয় ৪:১৩.

১৭. ঈশ্বরের পরিচর্যায় এক প্রার্থনাপূর্ণ মনোভাব থেকে কিভাবে আমরা উপকৃত হব?

১৭ যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি পবিত্র পরিচর্যা প্রদান করতে এক প্রার্থনাপূর্ণ মনোভাব অনুশীলন করার দ্বারা, আমরা উপলব্ধি করতে পারব যে আমরা নিজেদের শক্তিতে তাঁর সেবা করি না। যিহোবাই আমাদের শক্তি দেন তাঁকে সেবা করতে। (১ করিন্থীয় ৪:৭) এটি স্বীকার করা আমাদের নম্র হতে সাহায্য করবে এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতিসাধন করবে। (১ পিতর ৫:৫, ৬) হ্যাঁ, আমাদের যুক্তিপূর্ণ কারণ রয়েছে প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকার। আমাদের আন্তরিক প্রার্থনা এবং কিভাবে আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার নিকটবর্তী হওয়া যায় সেই বহুমূল্য জ্ঞান আমাদের জীবনকে প্রকৃতই সুখী করবে।

যিহোবার সাথে ভাববিনিময় একতরফা নয়

১৮. কিভাবে আমরা ঈশ্বরের কথা শুনতে পারি?

১৮ যদি আমরা চাই যে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা শুনবেন, তিনি যা বলেন তা অবশ্যই আমাদেরও শুনতে হবে। (সখরিয় ৭:১৩) ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত ভাববাদিগণের মাধ্যমে তিনি আর তাঁর বার্তা সকল প্রেরণ করেন না এবং নিশ্চিতরূপেই প্রেতচর্চার উপায়গুলিকে ব্যবহার করেন না। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২) কিন্তু তাঁর বাক্য, বাইবেল অধ্যয়ন করার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের কথা শুনতে পারি। (রোমীয় ১৫:৪; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) দৈহিক খাদ্য যা আমাদের জন্য উপকারী তার স্বাদ ঠিক যেমন আমাদের গড়ে তোলার প্রয়োজন হতে পারে, তেমনি “পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা” করবার জন্য আমাদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার দ্বারা আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রতি এক আসক্তি গড়ে তুলুন।—১ পিতর ২:২, ৩; প্রেরিত ১৭:১১.

১৯. বাইবেলে আপনি যা পড়েন তার উপরে ধ্যান করার উপকার কী?

১৯ বাইবেলে আপনি যা পড়েন তার উপরে ধ্যান করুন। (গীতসংহিতা ১:১-৩; ৭৭:১১, ১২) তার অর্থ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা। একে আপনি খাদ্য হজম করার সাথে তুলনা করতে পারেন। আধ্যাত্মিক খাদ্য আপনি হজম করতে পারেন যা আপনি পড়ছেন, তা ইতিমধ্যেই যে বিষয়গুলি জানেন তার সাথে সম্পর্কযুক্ত করে। বিষয়টি আপনার জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করে, অথবা তা যিহোবার গুণাবলি এবং আচরণ সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। এইভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে, যিহোবা যে আধ্যাত্মিক খাদ্য দেন তা আপনি গ্রহণ করতে পারেন। এটি আপনাকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী করাবে এবং দৈনন্দিন সমস্যাগুলির সমাধানে সাহায্য করবে।

২০. খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে উপস্থিত হওয়া কিভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে আমাদের সাহায্য করে?

২০ ঠিক যেমন জনসমক্ষে ব্যবস্থা-পুস্তক পড়া শুনতে একত্রিত হয়ে ইস্রায়েলীয়েরা মনোযোগের সাথে তা শুনেছিল, তেমনি খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে তাঁর বাক্যের আলোচনা শোনার দ্বারা আপনিও ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারেন। সেই সময়ের শিক্ষকেরা তাদের ব্যবস্থা-পুস্তক পাদুঠর মধ্যে তার অর্থও করে দিয়েছিলেন, এইভাবে তাদের শ্রোতাদের সাহায্য করেছিলেন তা বুঝতে এবং যা তারা শুনেছে তা প্রয়োগ করার প্রেরণা পেতে। এটি তাদের অতিশয় আনন্দ পেতে পরিচালিত করেছিল। (নহিমিয় ৮:৮, ১২) সুতরাং যিহোবার সাক্ষীদের সভাগুলিতে উপস্থিত থাকাকে আপনার অভ্যাস করে তুলুন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এটি আপনাকে সাহায্য করবে বুঝতে ও তারপর ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান আপনার জীবনে প্রয়োগ করতে এবং আপনার জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে। বিশ্বব্যাপী খ্রীষ্টীয় ভ্রাতৃসমাজের অংশ হওয়া আপনাকে সাহায্য করবে যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে। আর আমরা যেমন দেখব, ঈশ্বরের প্রজাদের মধ্যে আপনি প্রকৃত নিরাপত্তা খুঁজে পাবেন।

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

কেন আপনার যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া উচিত?

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় বিষয় কী?

আপনার প্রার্থনার মধ্যে আপনি কী অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন?

কেন আপনার প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকা উচিত?

বর্তমানে কিভাবে যিহোবার কথা আপনি শুনতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫৭ পৃষ্ঠার চিত্র]