কেন ঈশ্বর কষ্টভোগের অনুমতি দিয়েছেন?
অধ্যায় ৮
কেন ঈশ্বর কষ্টভোগের অনুমতি দিয়েছেন?
১, ২. মানুষের দুঃখকষ্টের প্রতি লোকেদের প্রতিক্রিয়া প্রায়ই কিরূপ হয়?
যখন আকস্মিক দুর্ঘটনাসকল আসে, ভূ-সম্পত্তির ধ্বংস ও বহু জীবনহানি করে, অনেকেই বুঝতে পারে না এরূপ ভয়ানক ঘটনাগুলি কেন ঘদুট। অনেকেই অপরাধ এবং দৌরাত্ম্যের ব্যাপকতা, হিংস্রতা ও উদ্দেশ্যহীনতা দ্বারা কষ্ট পায়। আপনিও হয়ত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, ‘কেন ঈশ্বর কষ্টভোগের অনুমতি দেন?’
২ যেহেতু তারা এই প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর পায়নি, অনেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাস হারিয়েছে। তারা মনে করে যে তিনি আর মানবজাতির প্রতি আগ্রহী নন। অন্যেরা যারা কষ্টভোগকে জীবনের এক অঙ্গ হিসাবে গ্রহণ করে নেয়, তারা তিতিবিরক্ত হয়ে মানবসমাজে সকল অশুভ বিষয়ের জন্য ঈশ্বরকে দোষ দেয়। যদি আপনার এরূপ মনোভাব থাকে, সম্ভবত আপনি খুবই আগ্রহী হবেন এই বিষয়গুলির উপরে বাইবেলের বিবৃতিসমূহে।
কষ্টভোগ ঈশ্বর থেকে নয়
৩, ৪. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে মন্দ বিষয় এবং কষ্টভোগ যিহোবা হতে নয়?
৩ বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয় যে আমাদের চারিপাশে আমরা যে কষ্টভোগ দেখি তা যিহোবা ঈশ্বর দ্বারা ঘটানো হয় না। উদাহরণস্বরূপ, খ্রীষ্টান শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “পরীক্ষার সময়ে কেহ না বলুক, ঈশ্বর হইতে আমার পরীক্ষা হইতেছে; কেননা মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না।” (যাকোব ১:১৩) এই কারণে, বহুসংখ্যক দুঃখকষ্ট যা মানবজাতির উপরে অভিশাপ বিশেষ, তা ঈশ্বর হতে ঘটানো হয়নি। স্বর্গে জীবনের জন্য মানুষকে উপযুক্ত করতে তিনি তাদের উপরে পরীক্ষা আনেন না, অথবা তিনি মানুষকে কষ্টভোগ করান না তাদের মন্দ কার্যাদির জন্য যা তারা মনে করে কোন পূর্ব জীবনে করেছিল।—রোমীয় ৬:৭.
৪ সেইসঙ্গে আরও, যদিও বহু শোচনীয় বিষয় ঈশ্বর অথবা খ্রীষ্টের নামে সংঘটিত হয়েছে, বাইবেলে কোন কিছু নেই যা ইঙ্গিত দেয় যে তাঁদের কেউই এইধরনের কাজগুলিকে কখনও অনুমোদন করেছেন। ঈশ্বর এবং খ্রীষ্টের তাদের সাথে কোন অংশ নেই যারা তাঁদের উপাসনা করে বলে দাবি করে অথচ যারা ঠকায় ও প্রতারণা করে, হত্যা ও লুণ্ঠন করে এবং আরও বহু কিছু করে যা মানুষের কষ্টভোগ জন্মায়। বাস্তবে, “দুষ্টদের পথ সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ।” ঈশ্বর “দুষ্টদের হইতে দূরে থাকেন।”—হিতোপদেশ ১৫:৯, ২৯.
৫. যিহোবার কয়েকটি গুণাবলি কী ও তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের সম্পর্কে তিনি কিরূপ বোধ করেন?
৫ বাইবেল যিহোবার বর্ণনা দেয় “প্রভু স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” (যাকোব ) এটি ঘোষণা করে যে “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” ( ৫:১১গীতসংহিতা ৩৭:২৮; যিশাইয় ৬১:৮) তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ নন। তিনি তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের করুণা সহকারে যত্ন নেন এবং সকলকেই তাদের মঙ্গলের জন্য উত্তম জিনিস দেন। (প্রেরিত ১৪:১৬, ১৭) পৃথিবীতে জীবনের সেই শুরু থেকে যিহোবা এরূপ করেছেন।
এক নিখুঁত আরম্ভ
৬. মানবজাতির প্রাথমিক ইতিহাসে পরিস্থিতি সম্বন্ধে কয়েকটি পৌরাণিক কাহিনী কিভাবে পরোক্ষভাবে উদুল্লখ করে?
৬ আমরা সকলেই দুঃখ ও কষ্ট দেখতে এবং ভোগ করতে অভ্যস্ত। তাই কষ্টভোগ নেই এরকম এক সময় কল্পনা করা হয়ত কঠিন হবে, কিন্তু সেইরূপই সবকিছু ছিল মানব ইতিহাসের প্রারম্ভে। এমনকি কিছু কিছু জাতির রূপকথা এরূপ এক সুখময় আরম্ভের পরোক্ষভাবে উদুল্লখ করে। গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে, “মানুষের পাঁচটি যুগের” প্রথমটিকে “সুবর্ণযুগ” বলা হয়েছিল। এতে মানুষ সুখী জীবন যাপন করত, পরিশ্রম, কষ্ট এবং বার্ধক্যের অবক্ষয় ছাড়াই। চৈনিকেরা বলে যে পৌরাণিক কাহিনীর পীত সম্রাটের (হোয়াং ডি) রাজত্বকালে, লোকে শান্তিতে বাস করত, এমনকি আবহাওয়া ও বন্য জন্তুদের সাথেও এক সন্ধির সম্পর্ক উপভোগ করত। পারস্য, মিশর, তিব্বত, পেরু এবং মেক্সিকোর অধিবাসীগণ সকলেরই পৌরাণিক কাহিনীগুলিতে রয়েছে মানবজাতির ইতিহাসের প্রারম্ভে সুখ ও সার্বিক সিদ্ধতার এক সময় সম্পর্কে।
৭. ঈশ্বর কেন পৃথিবী ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন?
৭ জাতিগুলির পৌরাণিক কাহিনীসকল শুধু মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে পুরাতন লিখিত বিবরণ, বাইবেলকে পুনরাবৃত্তি করে মাত্র। বাইবেল আমাদের জানায় যে প্রথম মানব দম্পতি, আদম ও হবাকে, ঈশ্বর এদন উদ্যান নামক এক পরমদেশে স্থাপন করেছিলেন ও তাদের আদেশ দিয়েছিলেন: “প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) আমাদের প্রথম পিতামাতা পূর্ণ সিদ্ধতা উপভোগ করত এবং সমস্ত পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত হতে দেখবার সম্ভাবনা তাদের ছিল যেখানে এক সম্পূর্ণ সিদ্ধ মানব পরিবার চিরস্থায়ী সুখ এবং শান্তিতে বাস করবে। পৃথিবী এবং মানবজাতি সৃষ্টির মধ্যে এটিই ছিল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য।—যিশাইয় ৪৫:১৮.
এক বিদ্বেষপরায়ণ চ্যালেঞ্জ
৮. আদম ও হবা কোন্ আজ্ঞা পালন করবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু কী ঘদুটছিল?
৮ ঈশ্বরের অনুগ্রহে থাকতে হলে, আদম ও হবাকে “সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ” তার ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) যদি তারা যিহোবার আইন মেনে চলত, মানুষের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে কোন কষ্টভোগ থাকত না। ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করার দ্বারা, যিহোবার প্রতি প্রেম ও তাঁর প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা তারা প্রদর্শন করতে পারত। (১ যোহন ৫:৩) কিন্তু যেমন আমরা ৬ অধ্যায়ে শিখেছিলাম, ঘটনাসকল সেইরূপ হয়নি। শয়তান দ্বারা প্ররোচিত হয়ে, হবা সেই বৃক্ষের ফল খেয়েছিল। পরে, আদমও সেই নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করেছিল।
৯. যিহোবাকে জড়িত করে শয়তান কী বিচার্য বিষয়ের উত্থাপন করেছিল?
৯ যা ঘদুটছিল তার গুরুত্ব কি আপনি বুঝতে পারছেন? পরাৎপররূপে যিহোবার স্থানকে শয়তান আক্রমণ করছিল। “কোন ক্রমে মরিবে না,” বলার দ্বারা, দিয়াবল, “সেই দিন মরিবেই মরিবে,” ঈশ্বরের এই বাক্যের প্রতিবাদ করেছিল। শয়তানের পরবর্তী কথাগুলিতে ইঙ্গিত ছিল যে যিহোবা আদম ও হবাকে ঈশ্বরের সদৃশ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে অজ্ঞানতায় রেখে দিয়েছেন, এইভাবে কী ভাল এবং কী মন্দ তা স্থির করার জন্য তাঁর প্রয়োজন থাকবে না। সুতরাং শয়তানের চ্যালেঞ্জ সার্বিক সার্বভৌমরূপে যিহোবার স্থানের অধিকার এবং বৈধতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিল।—আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:১-৬.
১০. মানুষ সম্পর্কে শয়তান কী পরোক্ষ ইঙ্গিত করেছিল?
১০ এছাড়াও শয়তান দিয়াবল পরোক্ষে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে মানুষ যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকবে শুধু ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। অন্যভাবে বললে, মানুষের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। শয়তান অভিযোগ করেছিল যে কোন মানুষই স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে না। শয়তানের এই বিদ্বেষপূর্ণ দাবি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে যিহোবার এক বিশ্বস্ত সেবক, ইয়োব সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণে, যিনি এক বিরাট পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন সা.শ.পূ. ১৬০০ সালের কিছুকাল পূর্বে। যখন আপনি ইয়োবের পুস্তকের প্রথম দুটি অধ্যায় পড়েন, মানুষের দুঃখকষ্টের কারণ এবং যিহোবা কেন তা অনুমতি দেন সে সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারবেন।
১১. ইয়োব কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু শয়তান কী অভিযোগ করেছিল?
১১ ইয়োব, এক “সিদ্ধ ও সরল” ব্যক্তি, শয়তানের আক্রমণের শিকার হয়েছিল। প্রথমত, শয়তান ইয়োবের প্রতি অসৎ উদ্দেশ্যের অভিযোগ এনেছিল এই প্রশ্ন তুলে, “ইয়োব কি বিনা লাভে ঈশ্বরকে ভয় করে?” তারপর, দিয়াবল ধূর্ততার সাথে ঈশ্বর এবং ইয়োব উভয়েরই মর্যাদাহানি করেছিল এই অভিযোগ দ্বারা যে যিহোবা তাকে সুরক্ষা ও আশীর্বাদ করার দ্বারা ইয়োবের বিশ্বস্ততাকে ক্রয় করেছিলেন। “কিন্তু তুমি একবার,” শয়তান যিহোবাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, “হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার সর্ব্বস্ব স্পর্শ কর, তবে সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।”—ইয়োব ১:৮-১১.
১২. (ক) কোন্ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া যেতে পারে একমাত্র যদি ঈশ্বর ইয়োবকে পরীক্ষা করতে শয়তানকে অনুমতি দেন? (খ) ইয়োবের পরীক্ষার ফল কী হয়েছিল?
১২ ইয়োব কি যিহোবার পরিচর্যা করছিলেন শুধুমাত্র এইজন্য যে ঈশ্বর থেকে সমস্ত কিছু উত্তম তিনি পেয়েছিলেন বলে? পরীক্ষার সময়ে ইয়োবের বিশ্বস্ততা কি বজায় থাকবে? বিপরীতে, যিহোবার কি যথেষ্ট আস্থা ছিল তাঁর সেবকের উপরে যে তাকে পরীক্ষিত হতে দেওয়ার অনুমতি তিনি দেবেন? এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া যেতে পারত যদি যিহোবা শয়তানকে অনুমতি দেন ইয়োবের উপরে কঠিনতম পরীক্ষাসকল নিয়ে আসতে। ইয়োবের পুস্তকে যেমন বর্ণনা রয়েছে, কঠিন পরীক্ষা যা ঈশ্বর অনুমতি দিয়েছিলেন তার মধ্যেও ইয়োবের বিশ্বস্ত আচরণ, যিহোবার ধার্মিকতা এবং মানুষের বিশ্বস্ততার পূর্ণরূপে সত্যতা প্রতিপাদনের, প্রমাণ হয়েছিল।—ইয়োব ৪২:১, ২, ১২.
১৩. এদনে এবং ইয়োবের প্রতি যা ঘদুটছিল তার সাথে আমরা কিভাবে জড়িত রয়েছি?
১৩ এদন উদ্যানে এবং মানুষ ইয়োবের প্রতি যা ঘদুটছিল, তার কিন্তু, এক গভীর অর্থ রয়েছে। শয়তান যে বিচার্য বিষয়গুলির উত্থাপন করেছিল তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে সমগ্র মানবজাতি, বর্তমানে আমাদেরও অন্তর্ভুক্ত করে। ঈশ্বরের নামকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল এবং তাঁর সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। ঈশ্বরের সৃষ্টি, মানুষের সাধুতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। এই বিচার্য বিষয়গুলির নিষ্পত্তি হওয়ার প্রয়োজন ছিল।
বিচার্য বিষয়গুলি কিভাবে সমাধান করা যায়
১৪. কোন বিদ্বেষপরায়ণ অভিযোগের সম্মুখীন হলে, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি হয়ত কী করবেন?
১৪ উদাহরণ দ্বারা বোঝাতে, ধরা যাক আপনি এক সুখী পরিবারে কয়েকটি সন্তানসহ একজন প্রেমময় পিতা বা মাতা। মনে করুন আপনার একজন প্রতিবেশী মিথ্যা রটাচ্ছে, আপনি খুব খারাপ পিতা বা মাতা এই অভিযোগ করে। যদি আপনার প্রতিবেশী বলে যে আপনার সন্তানেরা আপনাকে ভালবাসে না, তারা আপনার সঙ্গে থাকে শুধু এইজন্য, কারণ অন্য কোন পরিস্থিতি তাদের জানা নেই বলে এবং যদি কেউ তাদের কোন রাস্তা দেখিয়ে দেয় তাহলে তারা চলে যাবে। ‘একেবারেই অসম্ভব!’ আপনি হয়ত বলবেন। হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কিভাবে তা প্রমাণ করবেন? কোন কোন পিতামাতা হয়ত প্রচণ্ড দুক্রাধের বশে কাজ করতে পারেন। আরও সমস্যার সৃষ্টি করা ছাড়াও, এরূপ উগ্র প্রতিক্রিয়া সেই মিথ্যার সপক্ষেই সাক্ষ্য দেবে। এরূপ এক সমস্যার মীমাংসা করার এক সন্তোষজনক পথ হবে আপনার অভিযোগকারীকে তার দাবি প্রমাণ করার এবং আপনার সন্তানেরা আপনাকে আন্তরিকভাবে ভালবাসে তাদের সেই সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।
১৫. শয়তানের অভিযোগের মীমাংসা করতে যিহোবা কিভাবে বেছে নিয়েছিলেন?
১৫ যিহোবা সেই প্রেমময় পিতামাতার ন্যায়। আদম ও হবাকে সন্তানদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে এবং শয়তান সেই মিথ্যাবাদী প্রতিবেশীর ভূমিকা নিয়েছে। বিজ্ঞতার সাথে ঈশ্বর শয়তান, আদম ও হবাকে তৎক্ষণাৎ ধ্বংস করেননি কিন্তু কিছুকালের জন্য এই অন্যায়কারীদের বেঁচে থাকতে অনুমতি দিয়েছিলেন। এটি আমাদের প্রথম পিতামাতাকে মনুষ্য পরিবার শুরু করার সময় দিয়েছিল এবং দিয়াবলকে তার দাবি যে সত্য তা প্রমাণ করার এক সুযোগ দিয়েছিল যাতে বিচার্য বিষয়গুলি সমাধান করা যেতে পারে। শুরু থেকেই, কিন্তু, ঈশ্বর জানতেন যে কিছু মানুষ তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে ও এইভাবে শয়তানকে এক মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করবে। আমরা কত কৃতজ্ঞ যে যারা তাঁকে ভালবাসে যিহোবা চিরকাল তাদের আশীর্বাদ ও সাহায্য করে এসেছেন!—২ বংশাবলি ১৬:৯; হিতোপদেশ ১৫:৩.
কী প্রমাণিত হয়েছে?
১৬. জগৎ কিভাবে শয়তানের ক্ষমতার অধীনে এসেছে?
১৬ প্রায় সমস্ত মানব ইতিহাসে, শয়তানের, মানবজাতির উপরে প্রভাব বিস্তার করতে তার চক্রান্তগুলি করার, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, সে রাজনৈতিক শক্তিগুলির উপরে তার প্রভাব বিস্তার করেছে এবং ধর্মসমূহের উৎপত্তি করেছে যা যিহোবার প্রতি যাওয়ার পরিবর্তে কৌশলে উপাসনাকে তার প্রতি নিয়ে যায়। এইভাবে দিয়াবল হয়েছে “এই যুগের দেব,” এবং তাকে বলা হয় “এ জগতের অধিপতি।” (২ করিন্থীয় ৪:৪; যোহন ১২:৩১) বাস্তবিকই, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ) এর অর্থ কি এই যে শয়তান তার দাবি প্রমাণ করেছে যে সমুদয় মানবজাতিকে সে যিহোবার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে? অবশ্যই নয়! শয়তানকে অস্তিত্বে থাকতে দেওয়ার অনুমতিকালীন সময়ে, যিহোবা তাঁর নিজের উদ্দেশ্য সাধনেও কার্যকারী হয়েছেন। তাহলে, দুষ্টতা থাকতে দিতে ঈশ্বরের অনুমতিদান সম্পর্কে বাইবেল কী প্রকাশ করে? ৫:১৯
১৭. দুষ্টতা এবং কষ্টভোগের কারণ সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
১৭ দুষ্টতা ও কষ্টভোগ যিহোবার দ্বারা ঘটান হয় না। যেহেতু শয়তান এই জগতের অধিপতি ও এই যুগের দেব, সে এবং যারা তার পক্ষে তারাই মানবসমাজের বর্তমান পরিস্থিতি ও মানবজাতি যে সমস্ত কিছু দুর্দশা ভোগ করেছে তার জন্য দায়ী। কেউই যথার্থরূপে বলতে পারবে না যে এরূপ কষ্টের কারণ ঈশ্বর।—রোমীয় ৯:১৪.
১৮. দুষ্টতা ও কষ্টভোগ সম্পর্কে যিহোবার অনুমতিদান ঈশ্বর থেকে স্বাধীন থাকার ধারণা সম্বন্ধে কী প্রমাণ করেছে?
১৮ দুষ্টতা ও কষ্টভোগ সম্পর্কে যিহোবার অনুমতিদান প্রমাণ করেছে যে ঈশ্বর থেকে স্বাধীন থাকা আরও উত্তম এক জগৎ এনে দেয়নি। অনস্বীকার্যভাবেই, ইতিহাস একটার পর একটা বিপর্যয় দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। এর কারণ এই যে মানুষ তার নিজের স্বাধীন পথে ধাবিত হওয়া বেছে নিয়েছে ও ঈশ্বরের বাক্য অথবা ইচ্ছার প্রতি কোন প্রকৃত শ্রদ্ধা দেখায়নি। যখন যিহোবার প্রাচীন প্রজারা ও তাদের নেতারা অবিশ্বস্ততার সাথে “জনপ্রিয় পথে” ধাবিত হয়েছিল এবং তাঁর বাক্য পরিহার করেছিল, ফল হয়েছিল শোচনীয়। তাঁর ভাববাদী যিরমিয়ের মাধ্যমে, ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন: “জ্ঞানীরা লজ্জিত হইল, ব্যাকুল ও ধৃত হইল; দেখ, তাহারা সদাপ্রভুর বাক্য অগ্রাহ্য করিয়াছে, তবে তাহাদের জ্ঞান কি প্রকার?” (যিরমিয় ৮:৫, ৬, ৯) যিহোবার মানসকল অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়ে, ব্যাপকরূপে মানবজাতি হয়েছে হাল ছাড়া এক জাহাজের মত, এক অশান্ত সমুদ্রে বিপর্যস্ত হচ্ছে।
১৯. কী প্রমাণ রয়েছে যে শয়তান সকল মানুষকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারবে না?
১৯ দুষ্টতা ও কষ্টভোগ সম্পর্কে যিহোবার অনুমতিদান আরও প্রমাণ করেছে যে শয়তান সমস্ত মানবজাতিকে যিহোবার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে পারেনি। ইতিহাস দেখায় যে সবসময়েই কিছু ব্যক্তিরা ছিলেন যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন যত প্রলোভন অথবা প্রতিকূল অবস্থাই তাদের উপরে আনা হয়ে থাকুক না কেন। বহু শতাব্দী ধরে, তাঁর সেবকদের পক্ষে যিহোবার শক্তি প্রদর্শিত হয়েছে এবং তাঁর নাম সমস্ত পৃথিবীতে ঘোষণা করা হয়েছে। (যাত্রাপুস্তক ৯:১৬; ১ শমূয়েল ১২:২২) ইব্রীয় পুস্তক ১১ অধ্যায় বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের এক দীর্ঘ তালিকা সম্বন্ধে আমাদের বলে, যার অন্তর্ভুক্ত হেবল, হনোক, নোহ, অব্রাহাম এবং মোশি। ইব্রীয় ১২:১ পদ তাদের বলে ‘এক বৃহৎ সাক্ষিমেঘ।’ যিহোবার প্রতি অটল বিশ্বাসের তারা উদাহরণ ছিলেন। আধুনিক সময়েও, ঈশ্বরের প্রতি অবিচল বিশ্বস্ততার জন্য অনেকেই তাদের জীবন দিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস এবং প্রেম দ্বারা, এই ব্যক্তিরা চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করেন যে শয়তান সকল মানুষকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে না।
২০. দুষ্টতা এবং কষ্টভোগ চলতে দিতে যিহোবার অনুমতিদান ঈশ্বর ও মানবজাতি সম্পর্কে কী প্রমাণ করেছে?
২০ সবশেষে, দুষ্টতা ও কষ্টভোগ চলতে দিতে যিহোবার অনুমতিদান এই প্রমাণ দিয়েছে যে তাদের চিরস্থায়ী আশীর্বাদ ও সুখের জন্য একমাত্র যিহোবার, সৃষ্টিকর্তার, মানবজাতির উপরে শাসন করার ক্ষমতা এবং অধিকার রয়েছে। শতাব্দী ধরে, মানবজাতি বহু ধরনের শাসন-ব্যবস্থা চেষ্টা করেছে। কিন্তু কী ফল হয়েছে? বর্তমানে জাতিগুলি যে জটিল সমস্যা ও সঙ্কটগুলির সম্মুখীন তা যথেষ্ট প্রমাণ যে সত্যই, যেমন বাইবেল বিশেষভাবে উদুল্লখ করে, “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।” (উপদেশক ৮:৯) একমাত্র যিহোবাই পারেন আমাদের রক্ষা করতে এবং তাঁর আদি উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে। কিভাবে তিনি তা করবেন এবং কখন?
২১. শয়তানের প্রতি কী করা হবে এবং তা সম্পাদন করতে কাকে ব্যবহার করা হবে?
২১ আদম ও হবা শয়তানের চক্রান্তের শিকার হওয়ার ঠিক পরেই, ঈশ্বর পরিত্রাণের এক উপায় সম্পর্কে তাঁর উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন। শয়তান সম্পর্কে যিহোবা যা ঘোষণা করেছিলেন তা এই: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) ঐ ঘোষণা নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে চিরকালের জন্য দিয়াবলকে তার মন্দ কাজ করে যেতে দেওয়া হবে না। মশীহ রাজ্যের রাজা হিসাবে, সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ, যীশু খ্রীষ্ট, ‘শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবেন।’ হ্যাঁ, “ত্বরায়,” যীশু বিদ্রোহী শয়তানকে ধ্বংস করবেন!—রোমীয় ১৬:২০.
আপনি কী করবেন?
২২. (ক) কোন্ প্রশ্নগুলির অবশ্যই আপনাকে সম্মুখীন হতে হবে? (খ) যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত যদিও শয়তান তাদের প্রতি প্রচণ্ড দুক্রাধ প্রকাশ করে, কী সম্বন্ধে তারা নিশ্চিত থাকতে পারে?
২২ জড়িত বিচার্য বিষয়গুলি জেনে, আপনি কার পক্ষে থাকবেন? আপনার কার্যাদি দ্বারা কি প্রমাণ করবেন যে আপনি যিহোবার এক বিশ্বস্ত সমর্থক? যেহেতু শয়তান জানে যে তার সময় সংক্ষিপ্ত, যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে চায় তাদের উপরে তার ক্রোধ প্রকাশ করতে যা কিছু পারে সে তা করবে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২) কিন্তু সাহায্যের জন্য আপনি ঈশ্বরের প্রতি তাকাতে পারেন কারণ “ইহাতে জানি, প্রভু ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।” (২ পিতর ২:৯) আপনার সহ্যের অতিরিক্ত পরীক্ষা তিনি ঘটতে দেবেন না এবং রক্ষার পথও তিনি করে দেবেন যেন আপনি পরীক্ষা সহ্য করতে পারেন।—১ করিন্থীয় ১০:১৩.
২৩. পূর্ণ আস্থাসহকারে আমরা কিসের প্রতীক্ষা করতে পারি?
২৩ পূর্ণ আস্থাসহকারে, আসুন আমরা সেই সময়ের প্রতীক্ষা করি যখন রাজা যীশু খ্রীষ্ট শয়তান ও তার সকল অনুগামীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩) যীশু তাদের সকলকে নিশ্চিহ্ন করবেন যারা মানবজাতির অশান্তি ও দুর্দশাভোগের দায়িত্বে অংশ নিয়েছে। সেই সময় পর্যন্ত, কষ্টভোগের এক বিশেষ যন্ত্রণাদায়ক রূপ হল, মৃত্যুতে আমাদের প্রিয়জনদের হারানো। পরবর্তী অধ্যায়টি পড়ুন তাদের কী ঘদুট তা জানতে।
আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন
আমরা কিভাবে জানি যে যিহোবা মানুষের কষ্টভোগ ঘটান না?
এদনে শয়তান দ্বারা কোন্ বিচার্য বিষয়গুলি উত্থাপিত হয়েছিল ও ইয়োবের সময়ে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল?
কষ্টভোগের জন্য ঈশ্বরের অনুমতিদান কী প্রমাণ করেছে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]