সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন এক ধার্মিক জীবনযাপন সুখ নিয়ে আসে

কেন এক ধার্মিক জীবনযাপন সুখ নিয়ে আসে

অধ্যায় ১৩

কেন এক ধার্মিক জীবনযাপন সুখ নিয়ে আসে

১. কেন আমরা বলতে পারি যে যিহোবার পথ আনন্দ নিয়ে আসে?

 যিহোবা “সুখী ঈশ্বর” এবং তিনি চান আপনি জীবন উপভোগ করুন। (১ তীমথিয় ১:১১, NW) তাঁর পথে গমন করে, আপনি নিজে উপকৃত হতে পারেন এবং প্রশান্তির অভিজ্ঞতা লাভ করবেন যা গভীর ও স্থায়ী, চির-প্রবাহিত এক নদীর মত। ঈশ্বরের পথে গমন একজনকে ক্রমাগত ধার্মিকতার কাজ সকল করে চলতে অনুপ্রাণিতও করে, যা “সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায়।” এটি নিয়ে আসে প্রকৃত সুখ।—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

২. খ্রীষ্টানগণ কেন সুখী হতে পারেন যদিও কখনও কখনও তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা হয়?

অনেকে আপত্তি করতে পারে, ‘যা ন্যায্য তা করার জন্য মানুষ কখনও কখনও কষ্টভোগ করে থাকে।’ সত্য, আর ঠিক তাই ঘদুটছিল যীশুর প্রেরিতদের ক্ষেদুত্র। তাড়িত হওয়া সত্ত্বেও, কিন্তু, তারা আনন্দ করেছিলেন এবং “যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন।” (প্রেরিত ৫:৪০-৪২) এখান থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। একটি হচ্ছে যে ধার্মিক জীবনযাপন করা আমাদের নিশ্চয়তা দেয় না যে আমাদের সাথে সর্বদাই ভাল ব্যবহার করা হবে। “আর,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।” (২ তীমথিয় ৩:১২) এর কারণ এই যে শয়তান ও তার জগৎ তাদের বিরোধিতা করে যারা ধার্মিকতার পথে জীবনযাপন করে। (যোহন ১৫:১৮, ১৯; ১ পিতর ৫:৮) কিন্তু প্রকৃত সুখ বাহ্যিক বস্তুসমূহের উপরে নির্ভর করে না। বরং, এটি আসে এক দৃঢ় বিশ্বাস থেকে যে যা ন্যায্য তা আমরা করছি এবং তাই ঈশ্বরের সহর্ষ অনুমোদন আমাদের প্রতি রয়েছে।—মথি ৫:১০-১২; যাকোব ১:২, ৩; ১ পিতর ৪:১৩, ১৪.

৩. যিহোবার উপাসনা কোন ব্যক্তির জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করা উচিত?

অনেক লোক আছে যারা মনে করে যে সাময়িকভাবে ধার্মিকতার কাজগুলি করার দ্বারাই তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারবে কিন্তু অন্যান্য সময়ে তাঁকে ভুলে যেতেও পারে। যিহোবা ঈশ্বরের সত্য উপাসনা সেরূপ নয়। এটি এক ব্যক্তির আচরণকে প্রভাবিত করে তার জীবনের সমস্ত সময়ে, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। এই কারণে একে আরও বলা হয়েছে “সেই পথ।” (প্রেরিত ১৯:৯; যিশাইয় ৩০:২১) এটি জীবনযাপনের এক ধার্মিক পথ যার জন্য আমাদের প্রয়োজন ঈশ্বরের বাক্যের সাথে সঙ্গতি রেখে কথা বলা এবং কাজ করা।

৪. ঈশ্বরের পথ অনুসারে জীবনযাপন করতে পরিবর্তনগুলি করা উপকারজনক কেন?

বাইবেলের নতুন ছাদুত্ররা যখন দেখে যে যিহোবাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের জীবনে কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন, তারা ভাবতে পারে, ‘এক ধার্মিক জীবনযাপনের কি প্রকৃতই মূল্য আছে?’ আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যে আছে। কেন? কারণ “ঈশ্বর প্রেম,” আর তাই তাঁর পথসমূহ আমাদের উপকারের জন্যই। (১ যোহন ৪:৮) ঈশ্বর প্রজ্ঞাবানও এবং জানেন যে আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম কী। যেহেতু যিহোবা ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, কোন মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে আমাদের ইচ্ছাটি পূর্ণ করার শক্তি দিতে তিনি সক্ষম। (ফিলিপীয় ৪:১৩) আসুন ধার্মিক জীবনযাপনের সাথে জড়িত কিছু নীতি আমরা বিবেচনা করি ও দেখি সেগুলির প্রয়োগ কিভাবে আনন্দ নিয়ে আসে।

সততার ফল আনন্দ

৫. মিথ্যা বলা এবং চুরি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে?

যিহোবা “সত্যের ঈশ্বর।” (গীতসংহিতা ৩১:৫) নিঃসন্দেহে, আপনি চান তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে এবং একজন সত্যবাদী ব্যক্তি বলে পরিচিত হতে। সততা আত্মসম্মানবোধ এবং এক মঙ্গলভাব উপলব্ধি করায়। যেহেতু এই পাপপূর্ণ জগতে অসাধুতা এত সাধারণ ব্যাপার, সেইজন্য, খ্রীষ্টানদের এটি মনে রাখা প্রয়োজন: “প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও . . . চোর আর চুরি না করুক, বরং স্বহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করুক, যেন দীনহীনকে দিবার জন্য তাহার হাতে কিছু থাকে।” (ইফিষীয় ৪:২৫, ২৮) খ্রীষ্টীয় কর্মীরা দিনে পূর্ণসময়ের কাজ দেয়। তাদের কর্মকর্তা অনুমতি না দিলে তারা কর্মকর্তার কোন বস্তু নিয়ে যায় না। কর্মক্ষেদুত্র, স্কুলে, অথবা গৃহে, যেখানেই হোক যিহোবার একজন উপাসক অবশ্যই ‘সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ’ করবে। (ইব্রীয় ১৩:১৮) যে কেউ মিথ্যা বলা বা চুরি করা অভ্যাস করবে সে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে পারে না।—দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.

৬. এক ধার্মিক ব্যক্তির সততা কিভাবে যিহোবার প্রতি মহিমা আনে?

সৎ হওয়া বহু আশীর্বাদ নিয়ে আসে। সেলিনা একজন অভাবগ্রস্ত আফ্রিকাবাসী বিধবা যে যিহোবা ঈশ্বর এবং তাঁর ধার্মিক নীতিসমূহ ভালবাসে। একদিন, সে একটি হাতব্যাগ পেয়েছিল যার মধ্যে ছিল একটি ব্যাঙ্কের বই ও প্রচুর পরিমাণে অর্থ। দুটলিফোন ডাইরেক্টরি ব্যবহার করে, সে এর মালিককে খুঁজে পায়—এক গুদামরক্ষক যাকে লুঠ করা হয়। লোকটি তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না যখন সেলিনা, যদিও বেশ অসুস্থ, তার কাছে আসে ও ব্যাগের সমস্ত কিছু ফেরত দেয়। “এরূপ সততা অবশ্যই পুরস্কৃত হওয়া উচিত,” সে বলেছিল এবং সেলিনাকে কিছু অর্থ দিয়েছিল। আরও গুরুত্বপূর্ণ, এই লোকটি সেলিনার ধর্মের প্রশংসা করেছিল। হ্যাঁ, সৎকর্ম বাইবেল শিক্ষাকে অলঙ্কৃত করে, যিহোবা ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করে এবং তাঁর সৎ উপাসকদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে।—তীত ২:১০; ১ পিতর ২:১২.

উদারতা আনন্দ নিয়ে আসে

৭. জুয়াখেলার মধ্যে অন্যায় কী রয়েছে?

উদার হওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে, যেখানে লোভী ব্যক্তিরা “ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার” পাবে না। (১ করিন্থীয় ৬:১০) লোভের এক সাধারণ উদাহরণ জুয়াখেলা, যা অন্যদের ক্ষতির মধ্যে দিয়ে অর্থ উপায়ের চেষ্টা। তাদের প্রতি যিহোবার অনুমোদন নেই যারা “কুৎসিত লাভের আকাঙ্ক্ষী।” (১ তীমথিয় ৩:৮) এমনকি যেখানে জুয়াখেলা আইনসম্মত এবং কোন ব্যক্তি আনন্দের জন্য জুয়া খেলে, সেও আসক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এক অভ্যাসকে উৎসাহ দেবে যা বহু জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। জুয়াখেলা প্রায়ই জুয়াড়ির পরিবারের জন্য দরিদ্রতা নিয়ে আসে, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বস্ত্রের জন্য অতি সামান্য অর্থই তাদের থেকে যায়।—১ তীমথিয় ৬:১০.

৮. যীশু কিভাবে উদারতার এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন এবং আমরা কিভাবে উদার হতে পারি?

তাদের প্রেমপূর্ণ উদারতার জন্য, খ্রীষ্টানগণ অন্যদের সাহায্য করতে আনন্দ পায়, বিশেষত অভাবী সহ-বিশ্বাসীদের। (যাকোব ২:১৫, ১৬) যীশু পৃথিবীতে আসার পূর্বে, তিনি মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের উদারতা দেখেছিলেন। (প্রেরিত ১৪:১৬, ১৭) যীশু নিজে তাঁর সময়, তাঁর দক্ষতা এবং এমনকি তাঁর জীবন মানবজাতির নিমিত্তে দান করেছিলেন। তাই, তিনি প্রকৃতই যোগ্য ছিলেন বলতে: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:৩৫) যীশু সেই দারিদ্রা বিধবাকেও ভাল বলেছিলেন যে উদারতার সাথে মন্দিরের ভাণ্ডারের মধ্যে দুটি ক্ষুদ্র মুদ্রা রেখেছিল, কারণ সে তার “সমস্ত জীবনোপায়” রেখেছিল। (মার্ক ১২:৪১-৪৪) প্রাচীন ইস্রায়েলীয়েরা ও প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানগণ মণ্ডলী এবং রাজ্যের কাজের প্রতি বস্তু সাহায্য দেওয়ার আনন্দপূর্ণ উদারতার উদাহরণ সকল স্থাপন করেছিল। (১ বংশাবলি ২৯:৯; ২ করিন্থীয় ৯:১১-১৪) এই উদ্দেশ্যগুলির জন্য বস্তুসামগ্রী দান ছাড়াও, বর্তমান দিনের খ্রীষ্টানগণ সুখী মনে ঈশ্বরকে প্রশংসা দেয় এবং তাঁর পরিচর্যায় তাদের জীবনকে ব্যবহার করে। (রোমীয় ১২:১; ইব্রীয় ১৩:১৫) সত্য উপাসনায় সহায়তা করতে ও পৃথিবীব্যাপী রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজকে অগ্রসর করাতে তাদের সময়, শক্তি ও অন্যান্য সঙ্গতি যার, অন্তর্ভুক্ত অর্থও, ব্যবহারের জন্য যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেন।—হিতোপদেশ ৩:৯, ১০.

অন্যান্য বিষয়গুলি যা আনন্দ বৃদ্ধি করে

৯. অত্যধিক মাত্রায় মদ্যজাতীয় পানীয় গ্রহণ অন্যায় কেন?

সুখী হতে হলে, খ্রীষ্টানদের অবশ্যই ‘পরিণামদর্শিতাও রক্ষা করতে হবে।’ (হিতোপদেশ ৫:১, ২) এর জন্য প্রয়োজন তাদের ঈশ্বরের বাক্য এবং উপকারজনক বাইবেল সাহিত্যাদি পড়া এবং সেগুলির উপরে চিন্তা করা। কিন্তু কিছু বিষয় এড়িয়ে চলার আছে। উদাহরণস্বরূপ, অত্যধিক মাত্রায় মদ্যপান কোন ব্যক্তির চিন্তাশক্তির উপরে নিয়ন্ত্রণকে নষ্ট করে দিতে পারে। এরূপ এক অবস্থায়, বহু ব্যক্তি অনৈতিক আচরণে লিপ্ত হয়ে পড়ে, হিংস্রতার কাজ করে এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটায়। আশ্চর্য নয় বাইবেল বলে যে মাতাল ব্যক্তিরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাবে না! (১ করিন্থীয় ৬:১০) মানসিকভাবে “সংযত” থাকতে দৃঢ়সংকল্প হোন, প্রকৃত খ্রীষ্টানগণ মত্তাবস্থাকে এড়িয়ে চলে, আর সেটি তাদের মধ্যে আনন্দ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।—তীত ২:২-৬.

১০. (ক) খ্রীষ্টানেরা তামাক ব্যবহার করে না কেন? (খ) নেশাকর অভ্যাস সকল ত্যাগ করা থেকে কী কী উপকার আসে?

১০ এক শুচিশুদ্ধ দেহ আনন্দ দান করে। তবুও, অনেকেই ক্ষতিকারক দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, তামাকের ব্যবহার সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিবরণ দেয় যে ধূমপান “প্রতি বছরে ৩০ লক্ষ লোককে মেরে ফেলে।” নেশাসক্তি ত্যাগ করাতে সাময়িক অস্থিরতাবোধের লক্ষণের কারণে তামাকের অভ্যাস ছাড়া শক্ত হতে পারে। অপর দিকে, পূর্বে-ধূমপায়ী ছিলেন এমন অনেক ব্যক্তি দেখেন যে তাদের স্বাস্থ্য অনেক ভাল হয়েছে এবং গৃহের প্রয়োজনের জন্য অধিক অর্থও থাকে। হ্যাঁ, তামাকের নেশা অথবা অন্যান্য ক্ষতিকারক বস্তুর প্রতি আসক্তিকে জয় করা দেবে এক শুচিশুদ্ধ দেহ, এক পরিষ্কার বিবেক এবং প্রকৃত আনন্দ।—২ করিন্থীয় ৭:১.

বিবাহিত জীবনে আনন্দ

১১. এক বৈধ এবং স্থায়ী আদরণীয় বিবাহের জন্য কী প্রয়োজন?

১১ যারা স্বামী এবং স্ত্রী হিসাবে একদুত্র বাস করেন তারা অবশ্যই নিশ্চিত হবেন যে তাদের বিবাহ যথাযথরূপে আইনত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। (মার্ক ১২:১৭) বিবাহবন্ধনকে এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসাবে দেখাও তাদের প্রয়োজন। সত্য, ইচ্ছাকৃতভাবে ভরণপোষণ বন্ধ, চরম নির্যাতন অথবা আধ্যাত্মিকতার নিশ্চিত বিপন্নতা, এইগুলির ক্ষেদুত্র আলাদাভাবে থাকতে হয়ত প্রয়োজন হতে পারে। (১ তীমথিয় ৫:৮; গালাতীয় ৫:১৯-২১) কিন্তু ১ করিন্থীয় ৭:১০-১৭ পদে প্রেরিত পৌলের কথাগুলি বিবাহিত সাথীদের একদুত্র থাকতে উৎসাহ দেয়। প্রকৃত সুখের জন্য, অবশ্য, তাদের একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতেই হবে। পৌল লিখেছিলেন: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) “বিবাহ শয্যা” কথাটির অর্থ একে অপরের সাথে আইনত বিবাহিত এক পুরুষ ও নারীর মধ্যে যৌনসম্পর্ক। অন্য আর কোন যৌনসম্পর্ক, যেমন একের অধিক স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহকে, “সকলের মধ্যে আদরণীয়” বলে বর্ণনা করা যাবে না। আরও, বিবাহ-পূর্ব যৌনসম্পর্ক এবং সমকামিতাকে বাইবেল অপরাধ বলে রায় দেয়।—রোমীয় ১:২৬, ২৭; ১ করিন্থীয় ৬:১৮.

১২. ব্যভিচারের কিছু কুফল কী?

১২ ব্যভিচার কয়েক মুহূর্তের দৈহিক সুখ নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু তা প্রকৃত আনন্দদায়ক হয় না। এটি ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এবং সেই ব্যক্তির বিবেককে কলঙ্ক চিহ্নিত করতে পারে। (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৫) অনৈতিক যৌনসম্পর্কের দুঃখজনক ফল এইডস ও অন্যান্য যৌন রোগব্যাধি হতে পারে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট বলে, “হিসাব করা হয়েছে যে প্রতি বছরে সারা পৃথিবীতে ২৫ কোটিরও বেশি লোকে গনোরিয়ায় এবং প্রায় ৫ কোটি লোকে সিফিলিসে আক্রান্ত হয়।” এছাড়া অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের সমস্যাও রয়েছে। দি ইন্টারন্যাশন্যাল প্ল্যান্‌ড্‌ পেরেন্টহুড্‌ ফেডারেশন বিবরণ দেয় যে, সারা বিশ্বে, ১ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা গর্ভবতী হয় এবং তাদের এক তৃতীয়াংশ গর্ভপাত করায়। এক সমীক্ষা দেখিয়েছিল যে আফ্রিকার একটি দেশে, সমস্ত কিশোরীদের মৃত্যুর মধ্যে ৭২ শতাংশ মৃত্যু গর্ভপাত-জনিত জটিলতার ফল। কিছু ব্যভিচারী হয়ত রোগব্যাধি ও গর্ভধারণ এড়াতে পারে কিন্তু মানসিক ক্ষতিকে নয়। অনেকে তাদের আত্ম-সম্মান হারায় এবং এমনকি নিজেদের ঘৃণা করে।

১৩. পারদার্যের কারণে অতিরিক্ত কী কী সমস্যার উদ্ভব হয় এবং যারা ক্রমাগত ব্যভিচার ও পারদার গমন করে চলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হয়?

১৩ যদিও পারদার্য ক্ষমা করা যেতে পারে, নির্দোষ সাথীর ক্ষেদুত্র বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য এটি একটি যুক্তিপূর্ণ শাস্ত্রীয় ভিত্তি। (মথি ৫:৩২; হোশেয় ৩:১-৫ তুলনা করুন।) যখন এরূপ অনৈতিকতার ফল হয় একটি বিবাহে ভাঙন, তা নির্দোষ সাথী এবং সন্তানদের উপরে গভীর মানসিক ক্ষতচিহ্ন রেখে যেতে পারে। মনুষ্য পরিবারের উপকারের জন্য, ঈশ্বরের বাক্য নির্দেশ করে যে অনুতপ্তহীন পারদারিক এবং ব্যভিচারীদের উপরে তাঁর প্রতিকূল বিচার আসবে। আরও, এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে যারা যৌন অনৈতিকতা অভ্যাস করে তারা “ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।”—গালাতীয় ৫:১৯, ২১.

“জগতের অংশ নয়”

১৪. (ক) প্রতিমাপূজার কয়েকটি প্রকার কী যা এক ধার্মিক ব্যক্তি পরিহার করেন? (খ) যোহন ১৭:১৪ এবং যিশাইয় ২:৪ পদে কী নির্দেশ দেওয়া রয়েছে?

১৪ যারা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করতে এবং রাজ্যের আশীর্বাদ সমূহ উপভোগ করতে চায়, তারা সর্বপ্রকার প্রতিমাপূজা পরিহার করে। বাইবেল দেখায় যে মূর্তি তৈরি এবং উপাসনা করা অন্যায়, যার অন্তর্ভুক্ত খ্রীষ্টের, অথবা যীশুর মাতা, মরিয়মের মূর্তিও। (যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫; ১ যোহন ৫:২১) তাই, প্রকৃত খ্রীষ্টানগণ প্রতিমা, ক্রুশ এবং ছবিকে শ্রদ্ধা করে না। আরও প্রতিমাপূজার অধিক কৌশলী প্রকারগুলিকেও তারা পরিহার করে, যেমন পতাকার প্রতি ভক্তিজনক কাজ এবং সেই গানগুলি গাওয়া যা জাতিগুলিকে মহিমান্বিত করে। এরূপ কাজগুলি করার জন্য চাপ এলে, তারা শয়তানের প্রতি যীশুর কথাগুলিকে স্মরণ করে: “তোমার ঈশ্বর যিহোবাকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।” (মথি ৪:৮-১০, NW) যীশু বলেছিলেন যে তাঁর অনুগামীরা “জগতের অংশ নয়।” (যোহন ১৭:১৪, NW) এর অর্থ রাজনৈতিক বিষয় সমূহে নিরপেক্ষ থাকা এবং শান্তিপূর্ণভাবে যিশাইয় ২:৪ পদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাস করা, যা বলে: “তিনি [যিহোবা ঈশ্বর] জাতিগণের মধ্যে বিচার করিবেন, এবং অনেক দেশের লোক সম্বন্ধে নিষ্পত্তি করিবেন; আর তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না।”

১৫. মহতী বাবিল কী এবং বহু নতুন বাইবেল ছাত্র তা থেকে বেরিয়ে আসতে কী করে?

১৫ “জগতের অংশ নয়” এটি আরও বোঝায় “মহতী বাবিল,” মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করা। প্রাচীন বাবিল থেকে অশুচি উপাসনা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল যে পর্যন্ত না তা সমস্ত পৃথিবীর মানুষের উপরে ক্ষতিকারক আত্মিক আধিপত্য লাভ করতে পেরেছিল। “মহতী বাবিল” এর অন্তর্ভুক্ত সমস্ত ধর্মগুলি যাদের মতবাদ এবং অভ্যাসগুলি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ৫, ১৫) যিহোবার কোন বিশ্বস্ত উপাসকই বিভিন্ন ধর্মগুলির উপাসনায় অংশ নেওয়ার অথবা মহতী বাবিলের কোন অংশের সাথেই আধ্যাত্মিক অংশীদার হওয়ার দ্বারা ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসের কাজগুলিতে রত হবে না। (গণনাপুস্তক ২৫:১-৯; ২ করিন্থীয় ৬:১৪) ফলস্বরূপ, অনেক নতুন বাইবেল ছাত্র তারা যে ধর্মীয় সংগঠনের অংশ ছিল সেখানে একটি ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেয়। এটি তাদের সত্য ঈশ্বরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে নিয়ে এসেছে, যেমন প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল: “‘তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্‌ হও,’ ইহা প্রভু কহিতেছেন, ‘এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না; তাহাতে আমিই তোমাদিগকে গ্রহণ করিব।’” (২ করিন্থীয় ৬:১৭; প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪, ৫) আমাদের স্বর্গীয় পিতার দ্বারা এরূপ স্বীকৃতিরই কি আপনি আকুল আকাঙ্ক্ষা করেননি?

বাৎসরিক পর্বাদি উদ্‌যাপন বিবেচনা করা

১৬. সত্য খ্রীষ্টানেরা বড়দিন পালন করে না কেন?

১৬ এক ধার্মিক জীবন ভারস্বরূপ জাগতিক ছুটির দিনগুলি উদ্‌যাপন করা থেকে প্রায়ই আমাদের মুক্ত রাখে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল যীশুর জন্মের সঠিক দিনটিকে প্রকাশ করে না। ‘আমি ভেবেছিলাম যীশু ২৫শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন!’ কেউ হয়ত বিস্ময়ের সাথে বলতে পারেন। এটি সম্ভব নয় কারণ তিনি সাড়ে ৩৩ বছর বয়সে সা.শ. ৩৩ সালের বসন্তকালে মারা গিয়েছিলেন। তাছাড়া, তাঁর জন্মের সময়ে, মেষপালকেরা “মাদুঠ অবস্থিতি করিতেছিল, এবং রাত্রিকালে আপন আপন পাল চৌকি দিতেছিল।” (লূক ২:৮) ইস্রায়েল দেশে, ডিসেম্বরের শেষ খুব ঠাণ্ডা, বর্ষার সময় যখন সমস্ত রাত মেষেদের শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে খোঁয়াড়ের ভিতরে রাখতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, রোমীয়েরা ২৫শে ডিসেম্বরকে আলাদা করে রেখেছিল তাদের সূর্যদেবের জন্মদিন হিসাবে। যীশুর পৃথিবীতে থাকার অনেক শতাব্দী পরে, ধর্মভ্রষ্ট খ্রীষ্টানেরা এই দিনটিকে খ্রীষ্টের জন্মোৎসব পালনের জন্য বেছে নিয়েছিল। সেইজন্য, প্রকৃত খ্রীষ্টানগণ বড়দিন পালন অথবা মিথ্যা ধর্মীয় বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করা অন্য কোন ছুটির দিন উদ্‌যাপন করে না। যেহেতু তারা একমাত্র যিহোবাকেই একাগ্র ভক্তি প্রদান করে, তারা অন্য ছুটির দিনগুলিও পালন করে না যেগুলি পাপী মানুষদের অথবা জাতিগুলিকে উপাস্য পাদুত্র পরিণত করে।

১৭. ধার্মিক ব্যক্তিরা জন্মদিন পালন করেন না কেন এবং খ্রীষ্টীয় ছেলেমেয়েরা তা সত্ত্বেও সুখী কেন?

১৭ বাইবেল বিশেষভাবে শুধুমাত্র দুটি জন্মদিন উদ্‌যাপনের উদুল্লখ করে, যে দুটির সাথেই যুক্ত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের সেবক ছিল না। (আদিপুস্তক ৪০:২০-২২; মথি ১৪:৬-১১) যেহেতু শাস্ত্র সিদ্ধ মানব যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন প্রকাশ করে না, তাহলে অসিদ্ধ মানুষদের জন্মদিনের প্রতি আমরা বিশেষ মনোযোগ দেব কেন? (উপদেশক ৭:১) অবশ্যই, ধার্মিক পিতামাতা তাদের সন্তানদের প্রতি ভালবাসা দেখাতে কোন বিশেষ দিনের অপেক্ষা করে না। এক ১৩ বছর বয়সী খ্রীষ্টীয় মেয়ে মন্তব্য করেছিল: “আমার পরিবার ও আমি খুব মজা করি। . . . পিতামাতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব নিবিড় আর যখন অন্য ছেলেমেয়েরা জিজ্ঞাসা করে যে আমি কেন ছুটির দিনগুলি উদ্‌যাপন করি না, আমি তাদের বলি যে আমি প্রতিটি দিনই তা উদ্‌যাপন করি।” ১৭ বছর বয়স্ক এক খ্রীষ্টীয় যুবক বলেছিল: “আমাদের গৃহে, উপহার দেওয়া সারা বছর ধরে চলে।” উপহার যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেওয়া হয় তার ফল হয় অনেক বেশি আনন্দদায়ক।

১৮. কোন্‌ একটি বাৎসরিক উদ্‌যাপন রাখতে যীশু তাঁর অনুগামীদের আদেশ দিয়েছিলেন এবং তা আমাদের কী স্মরণ করিয়ে দেয়?

১৮ যারা এক ধার্মিক জীবনের অনুধাবন করেন, তাদের জন্য প্রতি বছরে একটি দিন রয়েছে যা বিশেষভাবে পালনীয়। এটি হল প্রভুর সান্ধ্য ভোজ, প্রায়ই যাকে বলা হয়ে থাকে খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক দিবস। এ সম্পর্কে, যীশু তাঁর অনুগামীদের আদেশ দিয়েছিলেন: “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” (লূক ২২:১৯, ২০; ১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৫) যখন যীশু সা.শ. ৩৩ সালে নিশান মাসের ১৪ তারিখের রাদুত্র এই ভোজের প্রবর্তন করেছিলেন, তিনি তাড়িশূন্য রুটি এবং লাল দ্রাক্ষারস ব্যবহার করেছিলেন, যা তাঁর নিষ্পাপ মানব শরীর এবং তাঁর সিদ্ধ রক্তকে চিত্রিত করে। (মথি ২৬:২৬-২৯) ঈশ্বরের পবিত্র আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানগণ এই প্রতীক চিহ্নগুলি গ্রহণ করেন। তাদের নতুন চুক্তি এবং রাজ্যের চুক্তির মধ্যে নেওয়া হয়েছে আর তাদের এক স্বর্গীয় আশা আছে। (লূক ১২:৩২; ২২:২০, ২৮-৩০; রোমীয় ৮:১৬, ১৭; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৫) তথাপি, প্রাচীন যিহূদী ক্যালেণ্ডারে ১৪ই নিশানের যথাযথ সন্ধ্যায় যারা উপস্থিত থাকেন তারা সকলেই উপকৃত হন। যাদের ঐশিক অনুগ্রহ আছে তাদের জন্য অনন্ত জীবন সম্ভব করে যা, সেই পাপ-মোচনের মুক্তি-মূল্যরূপ বলিদানের মধ্যে যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা প্রদর্শিত প্রেম তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।—মথি ২০:২৮; যোহন ৩:১৬.

চাকুরি এবং আমোদপ্রমোদ

১৯. খ্রীষ্টানেরা জীবিকার্জনের জন্য কোন্‌ সমস্যার সম্মুখীন হয়?

১৯ সত্য খ্রীষ্টানগণ পরিশ্রমসহ কাজ করতে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সংস্থান করতে বাধ্য। এটি সম্পন্ন করা পরিবারের কর্তাদের এক পরিতৃপ্তি বোধ করায়। (১ থিষলনীকীয় ৪:১১, ১২) অবশ্যই, কোন খ্রীষ্টীয় ব্যক্তির চাকুরি যদি বাইবেলের সাথে সংঘাত বাধায়, তা তাকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবে। তবুও, কখনও কখনও বাইবেলের মানগুলির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চাকুরি পাওয়া কোন খ্রীষ্টানের পক্ষে কঠিন হয়। উদাহরণস্বরূপ, মালিকের জন্য কিছু কর্মচারীদের খরিদ্দারদের ঠকানোর প্রয়োজন হয়। অপর দিকে, বহু মালিক এক সৎ কর্মচারীর বিবেক রক্ষার দাবিকে মেনে নেন, যাতে এক বিশ্বস্ত কর্মচারীকে হারাতে না হয়। কিন্তু, যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে ঈশ্বর আপনার প্রচেষ্টাকে আশীর্বাদ করবেন কোন চাকুরি পেতে যা আপনাকে এক পরিষ্কার বিবেক দেয়।—২ করিন্থীয় ৪:২.

২০. আমোদপ্রমোদ পছন্দের বিষয়ে আমাদের বাছাই করে নেওয়া উচিত কেন?

২০ যেহেতু ঈশ্বর চান তাঁর সেবকেরা সুখী হোক, আমাদের প্রয়োজন পরিশ্রমী কাজের সাথে পরিতৃপ্তিদানকারী আমোদপ্রমোদ এবং বিশ্রামের সময়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। (মার্ক ৬:৩১; উপদেশক ৩:১২, ১৩) শয়তানের জগৎ অধার্মিক আমোদপ্রমোদের প্রশ্রয় দেয়। কিন্তু ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে, আমাদের অবশ্যই বেছে নিতে হবে যে কী বই আমরা পড়ব, কী রেডিও প্রোগ্রাম এবং সঙ্গীত আমরা শুনব, আর কোন্‌ কন্সার্ট, ছায়াছবি, নাটক, দুটলিভিশন প্রোগ্রাম ও ভিডিও আমরা দেখব। যে আমোদপ্রমোদ আমরা অতীতে বেছে নিয়েছিলাম তা যদি দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২, গীতসংহিতা ১১:৫ এবং ইফিষীয় ৫:৩-৫ এরূপ শাস্ত্রপদগুলিতে দেওয়া সাবধানবাণীর সাথে সংঘাত বাধায়, তাহলে যদি আমরা রদবদল করে নিই, আমরা যিহোবাকে খুশি করব এবং বেশি আনন্দ পাব।

জীবন ও রক্তের প্রতি সম্মান

২১. জীবনের প্রতি সম্মান গর্ভপাতের উপরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আর সেইসঙ্গে আমাদের অভ্যাস সকল এবং আচরণের উপরেও কিভাবে প্রভাবিত করা উচিত?

২১ প্রকৃত আনন্দের জন্য, আমাদের প্রয়োজন মানব জীবনকে পবিত্ররূপে দেখা, এমনকি যেমন যিহোবাও দেখেন। তাঁর বাক্য আমাদের হত্যা করতে নিষেধ করে। (মথি ১৯:১৬-১৮) বস্তুতপক্ষে, ইস্রায়েলের প্রতি ঈশ্বরের নিয়ম দেখায় যে তিনি অজাত শিশুকে এক মহামূল্যবান জীবনরূপে দেখেন—নষ্ট করার কোন বস্তু নয়। (যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩) এই কারণেই, আমরা তামাকের ব্যবহার, নেশাকর দ্রব্য অথবা মদ্যপান দ্বারা আমাদের দেহের অপব্যবহার করে, অথবা অনাবশ্যক ঝুঁকি নিয়ে, জীবনকে অল্পমূল্যের ধরে নিয়ে সেইভাবে এর প্রতি আচরণ করব না। আমরা কোন জীবন-বিপন্নকারী পেশায় লিপ্ত হব না, অথবা সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে অগ্রাহ্য করব না, যা হয়ত রক্তপাতের অপরাধে দায়ী করতে পারে।—দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৮.

২২. (ক) রক্ত এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে ধার্মিক দৃষ্টিভঙ্গি কী? (খ) একমাত্র কার রক্ত প্রকৃতই জীবন-রক্ষাকারী?

২২ যিহোবা নোহ ও তার পরিবারকে বলেছিলেন যে রক্ত, প্রাণ অথবা জীবনের প্রতীকস্বরূপ। সুতরাং, ঈশ্বর তাদের কোন প্রকার রক্ত ভোজন করতে নিষেধ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৯:৩, ৪) যেহেতু আমরা তাদের বংশধর, আমরা সকলেই সেই নিয়মের বাধ্যবাধকতার অধীনে। যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন যে রক্ত ভূমিতে ঢেলে দিতে হবে এবং মানুষের নিজ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:১৫, ১৬) আর রক্তের উপরে ঈশ্বরের নিয়ম পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল যখন প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল: “রক্ত . . . হইতে পৃথক্‌ থাকা তোমাদের উচিত।” (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) জীবনের পবিত্রতার প্রতি শ্রদ্ধার জন্য, ধার্মিক ব্যক্তিগণ দেহের শিরার মাধ্যমে রক্তগ্রহণ করেন না, এমনকি অন্যেরা যদি জোরও করে যে এরূপ এক প্রক্রিয়া জীবন-রক্ষাকারী হতে পারে। যিহোবার সাক্ষীদের কাছে গ্রহণযোগ্য বহু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি অতীব কার্যকারী প্রমাণিত হয়েছে এবং তা এক ব্যক্তিকে রক্তগ্রহণের ঝুঁকি সমূহের সম্মুখীন করে না। খ্রীষ্টানগণ জানেন যে একমাত্র যীশুর পাতিত রক্তই প্রকৃতই জীবন-রক্ষাকারী। এতে বিশ্বাস, ক্ষমা এবং অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা নিয়ে আসে।—ইফিষীয় ১:৭.

২৩. ধার্মিক পথে জীবনযাপন করার কিছু পুরস্কার কী?

২৩ স্পষ্টতই, এক ধার্মিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন প্রচেষ্টার। এর ফল হতে পারে পরিবারের সদস্যদের অথবা পরিচিতদের কাছ থেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। (মথি ১০:৩২-৩৯; ১ পিতর ৪:৪) কিন্তু এরূপ এক জীবনযাপনের পুরস্কারসমূহের মূল্য যে কোন পরীক্ষাকে বহুগুণ ছাপিয়ে যায়। এর ফল হয় এক পরিষ্কার বিবেক এবং এটি যিহোবার সহউপাসকদের সাথে উপকারজনক সংসর্গ দান করে। (মথি ১৯:২৭, ২৯) এরপরে, আরও, কল্পনা করুন ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকা। (যিশাইয় ৬৫:১৭, ১৮) আর বাইবেলের উপদেশ মেনে চলা এবং এইভাবে যিহোবার চিত্তকে আনন্দিত করার মধ্যে কী আনন্দই না রয়েছে! (হিতোপদেশ ২৭:১১) আশ্চর্য নয় যে এক ধার্মিক জীবনযাপন আনন্দ নিয়ে আসে!—গীতসংহিতা ১২৮:১, ২.

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

এক ধার্মিক জীবনযাপন কেন আনন্দ নিয়ে আসে তার কয়েকটি কারণ কী?

ধার্মিক জীবনযাপনের জন্য কী কী পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে?

কেন আপনি এক ধার্মিক জীবনযাপন করতে চান?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২৪, ১২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

চিত্তবিনোদনের সময়গুলির সঙ্গে ভারসাম্য রাখা আত্মিক কার্যাবলি, যারা এক ধার্মিক জীবনযাপন করেন তাদের আনন্দবৃদ্ধিতে সহায়তা করে