সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করুন

মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করুন

অধ্যায় ১২

মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করুন

১. যীশু কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন যখন তিনি মন্দ আত্মাদের সম্মুখীন হয়েছিলেন?

 তাঁর বাপ্তিস্মের ঠিক পরেই, যীশু খ্রীষ্ট যিহূদিয়ার নির্জন প্রান্তরে প্রার্থনা এবং ধ্যান করার জন্য চলে গিয়েছিলেন। সেখানে শয়তান দিয়াবল তাঁকে দিয়ে ঈশ্বরের নিয়ম লঙ্ঘন করাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, যীশু দিয়াবলের প্রলোভনকে অগ্রাহ্য করেছিলেন এবং তার ফাঁদে ধরা পড়েননি। পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যাকালে যীশু অন্যান্য মন্দ আত্মাদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবুও, বারবার, তিনি তাদের ভর্ৎসনা এবং প্রতিরোধ করেছিলেন।—লূক ৪:১-১৩; ৮:২৬-৩৪; ৯:৩৭-৪৩.

২. কোন্‌ প্রশ্নগুলি আমরা বিবেচনা করব?

মন্দ আত্মাগণদের সম্মুখীন হওয়ার বাইবেলের ঐ বিবরণগুলি থেকে আমাদের প্রত্যয় জন্মানো উচিত যে মন্দ আত্মাগণদের অস্তিত্ব আছে। তারা মানুষকে ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু, আমরা এই দুষ্ট আত্মাদের প্রতিরোধ করতে পারি। কিন্তু কোথা থেকে এই মন্দ আত্মাদের উৎপত্তি হয়েছিল? কেন তারা মানুষকে প্রতারণা করার চেষ্টা করে? আর তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তারা কোন্‌ উপায়গুলি ব্যবহার করে? এইধরনের প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়া আপনাকে মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

মন্দ আত্মারা—তাদের উৎপত্তি এবং উদ্দেশ্য

৩. শয়তান দিয়াবলের কিভাবে উৎপত্তি হয়েছিল?

মানুষ সৃষ্টি করার বহু পূর্বে যিহোবা ঈশ্বর বহুসংখ্যক আত্মিক প্রাণীদের তৈরি করেছিলেন। (ইয়োব ৩৮:৪, ৭) যেমন ৬ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, এই স্বর্গদূতেদের একজন এক ইচ্ছা পোষণ করেছিল যে মানুষ যিহোবার উপাসনা করার পরিবর্তে তাকে উপাসনা করবে। ঐ উদ্দেশ্যে ধাবিত হয়ে, এই মন্দ স্বর্গদূত সৃষ্টিকর্তার বিরোধিতা করেছিল এবং তাঁকে অপবাদ দিয়েছিল, এমনকি প্রথম নারীকে এই ইঙ্গিতও দেয় যে ঈশ্বর একজন মিথ্যাবাদী। উপযুক্তভাবেই তাই, এই বিদ্রোহী আত্মিক প্রাণী পরিচিত হয়েছিল শয়তান (প্রতিরোধী) দিয়াবল (অপবাদক) রূপে।—আদিপুস্তক ৩:১-৫; ইয়োব ১:৬.

৪. কিছু স্বর্গদূত নোহের সময়ে কিভাবে পাপ করেছিল?

পরে, অন্য স্বর্গদূতেরা শয়তান দিয়াবলের পক্ষ নিয়েছিল। ধার্মিক ব্যক্তি নোহের সময়ে, এদের মধ্যে কিছু দূত স্বর্গে তাদের কাজ পরিত্যাগ করেছিল এবং মাংসিক দেহ ধারণ করেছিল পার্থিব নারীদের সাথে যৌন সংসর্গের লালসা পরিতৃপ্ত করতে। সন্দেহ নেই যে শয়তান ঐ দূতেদের প্রভাবিত করেছিল সেই অবাধ্যতার পথ গ্রহণ করতে। এর ফলে তারা নেফিলিম বলে অভিহিত এক বর্ণসঙ্কর সন্তানাদির জন্ম দেয়, যারা হিংস্র গুণ্ডায় পরিণত হয়েছিল। যখন যিহোবা সেই মহাজলপ্লাবন ঘটিয়েছিলেন, তা দুর্নীতিপরায়ণ মানবজাতি এবং সেই অবাধ্য দূতেদের এই অস্বাভাবিক বংশধরদের ধ্বংস করেছিল। বিদ্রোহী স্বর্গদূতেরা তাদের মাংসিক দেহ পরিত্যাগ করে এবং আত্মিক জগতে ফিরে গিয়ে ধ্বংস এড়িয়েছিল। কিন্তু ঈশ্বর এই মন্দ দূতেদের বহিষ্কৃত রূপে বিবেচনা করে তাদের আত্মিক অন্ধকারের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছিলেন। (আদিপুস্তক ৬:১-৭, ১৭; যিহূদা ৬) শয়তান, “মন্দ দূতগণের অধিপতি,” ও তার মন্দ দূতেরা কিন্তু তাদের বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছিল। (লূক ১১:১৫, NW) তাদের উদ্দেশ্য কী?

৫. শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের উদ্দেশ্য কী এবং মানুষকে ফাঁদে ফেলতে তারা কী ব্যবহার করে?

শয়তান ও মন্দ দূতেদের মন্দ উদ্দেশ্য হল লোকেদের যিহোবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া। তাই, এই দুষ্টেরা সমুদয় মানব ইতিহাসে মানুষকে ভুল পথে চালিত করেছে, ভয় দেখিয়েছে এবং আক্রমণ করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) আধুনিক দিনের উদাহরণ নিশ্চিত করে যে পূর্বে যা হয়েছিল তার চেয়েও মন্দ দূতেদের আক্রমণ এখন অনেক বেশি বিদ্বেষপূর্ণ। মানুষকে ফাঁদে ফেলতে, মন্দ দূতেরা প্রায়ই সবরকম আকারে প্রেতচর্চাকে ব্যবহার করছে। মন্দ দূতেরা এই ফাঁদ কিভাবে ব্যবহার করে এবং আপনি কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন?

মন্দ আত্মারা কিভাবে আপনাকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করে

৬. প্রেতচর্চা কী ও এর কয়েকটি প্রকার কিরূপ?

প্রেতচর্চা কী? এটি মন্দ দূতেদের, অথবা মন্দ আত্মাদের সঙ্গে, হয় সরাসরি অথবা কোন মানুষের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা। প্রেতচর্চা মন্দ দূতেদের জন্য সেই কাজ করে যা দুটাপ করে থাকে শিকারিদের জন্য: এটি শিকারকে আকর্ষণ করে। আর ঠিক যেমন কোন শিকারি বিভিন্ন রকমের দুটাপ ব্যবহার করে পশুদের প্রলুব্ধ করে তার ফাঁদে ফেলতে, একইভাবে মন্দ আত্মারা বিভিন্ন ধরনের প্রেতচর্চাকে উৎসাহ দেয় মানুষকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে। (তুলনা করুন গীতসংহিতা ১১৯:১১০.) এদের মধ্যে কয়েকটি হল ভবিষ্যৎ-গণনা, ইন্দ্রজাল, শুভ-অশুভ লক্ষণ দেখা, কুহকবিদ্যা, সম্মোহন শক্তিতে বাঁধা, ভর হওয়া ব্যক্তির পরামর্শ এবং মৃতদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন।

৭. প্রেতচর্চা কতটা ব্যাপক এবং কেন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এমনকি তথাকথিত খ্রীষ্টীয় দেশগুলিতেও?

দুটাপ কাজ করে, কারণ প্রেতচর্চা সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে আকৃষ্ট করে। জঙ্গলের গ্রামে যারা বাস করে তারা গুণিনদের কাছে যায় আর শহরে অফিস কর্মীরা পরামর্শ করে জ্যোতিষীদের সাথে। প্রেতচর্চা এমনকি তথাকথিত খ্রীষ্টীয় দেশগুলিতেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই, প্রায় ৩০টি পত্রিকা, যুক্তভাবে যাদের প্রচার-সংখ্যা ১,০০,০০,০০০, সেগুলি বিভিন্ন প্রকার প্রেতচর্চার আলোচনা করে। ব্রাজিলবাসীরা প্রেতচর্চায় ব্যবহৃত বস্তুগুলির উপরে প্রতি বছর ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করে। তবুও, উপাসনার জন্য সেই দেশে প্রেতচর্চার কেন্দ্রগুলিতে যারা যায় তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বাপ্তিস্মিত ক্যাথলিক যারা ম্যাস করতেও উপস্থিত থাকে। যেহেতু কিছু পাদ্রিরাও প্রেতচর্চা অভ্যাস করে, বহু ধার্মিক ব্যক্তি মনে করেন যে তা অভ্যাস করা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু তাই কি?

প্রেতচর্চার অভ্যাসকে বাইবেল কেন নিন্দা করে

৮. প্রেতচর্চা সম্পর্কে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি কী?

যদি আপনাকে শেখানো হয়ে থাকে যে কিছু প্রকারের প্রেতচর্চা ভাল আত্মাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের উপায়, বাইবেল প্রেতচর্চা সম্বন্ধে যা বলে তা জেনে হয়ত আপনি আশ্চর্য হবেন। যিহোবার লোকেদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল: “তোমরা ভূতড়িয়াদের ও গুণীদের অভিমুখ হইও না, তাহাদের কাছে অন্বেষণ করিও না, করিলে আপনাদিগকে অশুচি করিবে।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:৩১; ২০:৬, ২৭) বাইবেল পুস্তক প্রকাশিত বাক্য সাবধানবাণী দেয় যে যারা “মায়াবি” তাদের শেষ “অগ্নি ও গন্ধকে প্রজ্বলিত হ্রদে হইবে; ইহাই দ্বিতীয় [অনন্ত] মৃত্যু।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৮; ২২:১৫) সকল প্রকারের প্রেতচর্চা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে অস্বীকৃত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২) এরূপ কেন?

৯. আমরা কেন উপসংহার আসতে পারি যে আত্মিক জগৎ থেকে আসা বর্তমান-দিনের বার্তাগুলি যিহোবার কাছ থেকে নয়?

বাইবেল সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কিছু মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য যিহোবা ঈশ্বর ভাল আত্মাদের, অথবা ধার্মিক স্বর্গদূতেদের পাঠিয়েছিলেন। এটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর থেকে, গ্রহণযোগ্যরূপে যিহোবাকে সেবা করতে মানুষের প্রয়োজনীয় নির্দেশ ঈশ্বরের বাক্যই প্রদান করেছে। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭; ইব্রীয় ১:১, ২) তিনি তাঁর পবিত্র বাক্যকে পাশে সরিয়ে দেন না মাধ্যমদের কাছে বার্তা পাঠানোর দ্বারা। আত্মিক জগৎ থেকে বর্তমান-দিনের এরূপ সকল বার্তা মন্দ আত্মাদের কাছ থেকে আসে। প্রেতচর্চার অভ্যাস মন্দ আত্মাদের উৎপাত অথবা এমনকি মন্দ দূতেদের দ্বারা ভরপ্রাপ্ত হওয়া পরিচালিত করতে পারে। সুতরাং, ঈশ্বর প্রেমের সাথে আমাদের সাবধান করছেন যে কোন রকম প্রেতচর্চা অভ্যাসের সাথে আমরা যেন জড়িত না হই। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৪; গালাতীয় ৫:১৯-২১) আরও, এ সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি জানার পরেও যদি আমরা প্রেতচর্চার অভ্যাস চালিয়ে যাই, আমরা বিদ্রোহী মন্দ আত্মাদের পক্ষ নেব এবং ঈশ্বরের শত্রু হব।—১ শমূয়েল ১৫:২৩; ১ বংশাবলি ১০:১৩, ১৪; গীতসংহিতা ৫:৪.

১০. ভবিষ্যৎ-গণনা কী এবং কেন তা আমাদের পরিহার করা উচিত?

১০ প্রেতচর্চার একটি জনপ্রিয় পন্থা হল ভবিষ্যৎ-গণনা—আত্মাদের সাহায্যে ভবিষ্যৎ অথবা অজানা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা। ভবিষ্যৎ-গণনার কয়েকটি পদ্ধতি হচ্ছে জ্যোতিষী-বিদ্যা, কাচের গোলকের মধ্যে দেখা, স্বপ্নের ব্যাখ্যা, হস্তরেখা-বিচার এবং টারো তাসের ব্যবহার দ্বারা ভাগ্য-গণনা। অনেকেই ভবিষ্যৎ-গণনাকে নির্দোষ কৌতুক বলে মনে করে, কিন্তু বাইবেল দেখায় যে জ্যোতিষী এবং মন্দ আত্মারা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত ১৬:১৬-১৯ পদ এক “দৈবজ্ঞ আত্মা” সম্বন্ধে উদুল্লখ করে যা কোন একটি দাসীকে “ভাগ্য-কথন” অভ্যাস করতে সক্ষম করেছিল। কিন্তু, তার ভাগ্য-কথনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল যখন সেই মন্দ আত্মাকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। স্পষ্টতই, ভবিষ্যৎ-গণনা এক টোপ যা মন্দ দূতেরা মানুষকে প্রলোভিত করে তাদের ফাঁদে ফেলতে ব্যবহার করে।

১১. মৃতদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা কেন কোন ব্যক্তিকে এক ফাঁদে পরিচালিত করে?

১১ পরিবারে কোন প্রিয় সদস্য অথবা কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যুর কারণে যদি আপনি শোকার্ত থাকেন, আপনি সহজেই প্রলোভিত হতে পারেন আর একটি দুটাপ দ্বারা। কোন আত্মিক মাধ্যম আপনাকে বিশেষ সংবাদ দিতে পারে অথবা এক কণ্ঠস্বরে কথা বলতে পারে যা মনে হবে ঐ মৃত ব্যক্তির। সাবধান! মৃতদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা এক ফাঁদের মধ্যে পরিচালিত করে। কেন? কারণ মৃতেরা কথা বলতে পারে না। যেমন আপনার স্মরণে আছে, ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টভাবে বলে যে মৃত্যুতে কোন ব্যক্তি “নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” মৃতেরা “কিছুই জানে না।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৪; উপদেশক ৯:৫, ১০) আরও, প্রকৃতপক্ষে মন্দ দূতেরাই মৃতদের কণ্ঠস্বর অনুকরণ করে বলে জানা যায় এবং যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে তার সম্বন্ধে আত্মিক মাধ্যমকে সংবাদ দেয়। (১ শমূয়েল ২৮:৩-১৯) তাই যে কেউ “মৃতদের অন্বেষণ” করে সে মন্দ আত্মাদের দ্বারা ফাঁদে পড়ে যায় এবং যিহোবা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করছে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১১, ১২; যিশাইয় ৮:১৯.

আকর্ষণ থেকে আক্রমণ

১২, ১৩. কী প্রমাণ আছে যে মন্দ দূতেরা মানুষকে প্রলুব্ধ করার এবং হয়রান করার চেষ্টা চালিয়ে যায়?

১২ প্রেতচর্চা সম্বন্ধে যখন আপনি ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শ মেনে চলেন, মন্দ দূতেদের দুটাপ তখন আপনি প্রত্যাখ্যান করেন। (তুলনা করুন গীতসংহিতা ১৪১:৯, ১০; রোমীয় ১২:৯.) এর অর্থ কী এই যে মন্দ আত্মারা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা ছেড়ে দেবে? কখনই না! যীশুকে তিনবার প্রলোভিত করার পরে, শয়তান “কিয়ৎকালের জন্য তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া গেল।” (লূক ৪:১৩) অনুরূপে, দুর্দমনীয় আত্মারা শুধু মানুষকে আকর্ষিত করে না কিন্তু তাদের আক্রমণও করে।

১৩ ঈশ্বরের সেবক ইয়োবের উপরে শয়তানের আক্রমণ সম্বন্ধে আমাদের পূর্বের বিবেচনা স্মরণ করুন। দিয়াবল তার সমস্ত পশুধন নষ্ট করেছিল এবং তার অধিকাংশ ভৃত্যের মৃত্যু ঘটিয়েছিল। শয়তান এমনকি ইয়োবের সন্তানদেরও হত্যা করেছিল। পরে, সে ইয়োবকেও এক যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি দ্বারা আঘাত করেছিল। কিন্তু ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন এবং অপরিমেয় আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। (ইয়োব ১:৭-১৯; ২:৭, ৮; ৪২:১২) তারপর থেকে, মন্দ দূতেরা কিছু কিছু লোককে বোবা অথবা অন্ধ করেছে এবং মানুষের দুঃখকষ্টে আনন্দ পেয়ে এসেছে। (মথি ৯:৩২, ৩৩; ১২:২২; মার্ক ৫:২-৫) বর্তমানে, বিবরণ দেখায় যে মন্দ দূতেরা কিছু ব্যক্তিকে যৌনভাবে হয়রানি করে এবং অন্যদের মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটায়। আর কিছু ব্যক্তিকে তারা হত্যা ও আত্মহত্যা করায় প্ররোচনা দেয়, যা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৭; ১ যোহন ৩:১৫) তবুও, হাজার হাজার ব্যক্তি যারা একসময়ে এই মন্দ আত্মাদের কবলিত ছিল, তারা নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের জন্য কিভাবে তা সম্ভব হয়েছে? তারা তা করেছে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার দ্বারা।

মন্দ আত্মাদের কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

১৪. প্রথম শতাব্দীর ইফিষীয় খ্রীষ্টানদের উদাহরণের সাথে সঙ্গতি রেখে, আপনি কিভাবে মন্দ আত্মাদের প্রতিরোধ করতে পারেন?

১৪ একটি উপায় কী যার দ্বারা আপনি মন্দ আত্মাদের প্রতিরোধ এবং নিজেকে ও আপনার পরিবারকে তাদের ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে পারেন? ইফিষে প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানগণ যারা বিশ্বাসী হওয়ার পূর্বে প্রেতচর্চার অভ্যাস করত, তারা যথার্থ পদক্ষেপ নিয়েছিল। আমরা পড়ি যে “যাহারা যাদুক্রিয়া করিত, তাহাদের মধ্যে অনেকে আপন আপন পুস্তক আনিয়া একত্র করিয়া সকলের সাক্ষাতে পোড়াইয়া ফেলিল।” (প্রেরিত ১৯:১৯) এমনকি যদি আপনি প্রেতচর্চা অভ্যাস নাও করে থাকেন, প্রেতচর্চার জন্য ব্যবহৃত অথবা সম্পর্কীয় যে কোন বস্তু নষ্ট করে ফেলুন। এর অন্তর্ভুক্ত বই, পত্রিকা, ভিডিও, পোস্টার, সঙ্গীতের রেকর্ড এবং প্রেতচর্চার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বস্তুসমূহ। আরও এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিমা, কবচ ও রক্ষার্থে পরবার জন্য অন্যান্য বস্তু এবং প্রেতচর্চা অভ্যাসকারীদের কাছ থেকে পাওয়া উপহারসমূহ। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:২৫, ২৬; ১ করিন্থীয় ১০:২১) উদাহরণ দিলে: থ্যাইল্যাণ্ডে এক বিবাহিত দম্পতি বহুদিন যাবৎ মন্দ দূতেদের দ্বারা নাজেহাল হচ্ছিল। তখন প্রেতচর্চা সম্পর্কিত সমস্ত বস্তু তারা নষ্ট করে ফেলে। ফল কী হয়েছিল? মন্দ দূতেদের আক্রমণ থেকে তারা মুক্ত হয়েছিল এবং পরে প্রকৃত আধ্যাত্মিক উন্নতি করেছিল।

১৫. মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করতে, আর একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কী?

১৫ মন্দ আত্মাদের প্রতিরোধ করতে, আর একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হল ঈশ্বর-দত্ত সমগ্র আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরিধান করতে প্রেরিত পৌলের পরামর্শ প্রয়োগ করা। (ইফিষীয় ৬:১১-১৭) খ্রীষ্টানদের অবশ্যই মন্দ আত্মাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। এই পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত কী? “এই সকল ছাড়া,” পৌল বলেছিলেন, “বিশ্বাসের ঢালও গ্রহণ কর, যাহার দ্বারা তোমরা সেই পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে পারিবে।” বাস্তবিক, আপনার বিশ্বাস যত বেশি শক্তিশালী, তত বেশি হবে আপনার ক্ষমতা মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করতে।—মথি ১৭:১৪-২০.

১৬. আপনার বিশ্বাসকে কিভাবে শক্তিশালী করতে পারেন?

১৬ কিভাবে আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারেন? বাইবেল অধ্যয়ন বজায় রেখে এবং আপনার জীবনে এর পরামর্শ প্রয়োগ করে। একজনের বিশ্বাসের শক্তি বহুলাংশে নির্ভর করে কত দৃঢ় এর ভিত্তি—ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান। আপনি কি একমত নন যে বাইবেল পড়াকালীন যে সঠিক জ্ঞান আপনি অর্জন করেছেন ও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছেন, তা আপনার বিশ্বাসকে গড়ে তুলেছে? (রোমীয় ১০:১০, ১৭) সুতরাং, নিঃসন্দেহে, যখন আপনি এই অধ্যয়ন চালিয়ে যাবেন এবং যিহোবার সাক্ষীদের সভাগুলিতে উপস্থিত থাকা অভ্যাসে পরিণত করবেন তখন আপনার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে উঠবে। (রোমীয় ১:১১, ১২; কলসীয় ২:৬, ৭) মন্দ দূতেদের আক্রমণের বিরুদ্ধে তা হবে এক মহাশক্তিশালী সুরক্ষা।—১ যোহন ৫:৫.

১৭. মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করতে আর কী পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে?

১৭ আরও কী পদক্ষেপ নিতে পারেন কোন ব্যক্তি যে মন্দ আত্মাগণদের প্রতিরোধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ? ইফিষীয় খ্রীষ্টানগণের রক্ষার প্রয়োজন ছিল কারণ মন্দ দূত-সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে অধ্যুষিত এক নগরে তারা বাস করত। তাই, পৌল তাদের বলেছিলেন: “সর্ব্বসময়ে আত্মাতে প্রার্থনা কর।” (ইফিষীয় ৬:১৮) যেহেতু আমরা মন্দ দূত-অধ্যুষিত এক জগতে বাস করছি, মন্দ আত্মাদের প্রতিরোধ করতে ঈশ্বরের সুরক্ষার জন্য ঐকান্তিক প্রার্থনা অপরিহার্য। (মথি ৬:১৩) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে নিয়োজিত প্রাচীনদের আত্মিক সাহায্য এবং প্রার্থনা এই বিষয়ে উপকারী।—যাকোব ৫:১৩-১৫.

মন্দ আত্মাদের বিরুদ্ধে আপনার যুদ্ধকে বজায় রাখুন

১৮, ১৯. যদি মন্দ দূতেরা পুনরায় কোন ব্যক্তিকে প্তালাতন করে তাহলে কী করা যেতে পারে?

১৮ এই প্রাথমিক পদক্ষেপগুলি নেওয়া সত্ত্বেও, কিন্তু, কেউ কেউ মন্দ আত্মাদের দ্বারা হয়রান হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, কোট্‌ ডিভোর এক ব্যক্তি যিহোবার সাক্ষীদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করেন এবং তার সমস্ত কবচ নষ্ট করে ফেলেন। তারপর, তিনি চমৎকার উন্নতি করেন, যিহোবার প্রতি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং বাপ্তিস্মিত হন। কিন্তু তার বাপ্তিস্মের এক সপ্তাহ পরে, মন্দ দূতেরা আবার তাকে প্তালাতন করা শুরু করে এবং কিছু কণ্ঠস্বর তাকে তার নবপ্রাপ্ত বিশ্বাস ত্যাগ করতে বলে। যদি আপনার প্রতি এরূপ ঘদুট, এর অর্থ কি এই যে আপনি যিহোবার সুরক্ষা হারিয়েছেন? নিশ্চয় নয়।

১৯ যদিও সিদ্ধ মানব যীশু খ্রীষ্টের ঐশিক সুরক্ষা ছিল, তিনি মন্দ আত্মিক প্রাণী শয়তান দিয়াবলের কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন। যীশু দেখিয়েছিলেন এরূপ ক্ষেদুত্র কী করতে হবে। তিনি দিয়াবলকে বলেছিলেন: “দূর হও, শয়তান!” (মথি ৪:৩-১০) একইভাবে, আত্মিক জগৎ থেকে আসা কণ্ঠস্বরের প্রতি কর্ণপাত করতে আপনার অসম্মত হওয়া উচিত। সাহায্যের জন্য যিহোবাকে ডেকে মন্দ আত্মাদের প্রতিরোধ করুন। হ্যাঁ, ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে উচ্চকণ্ঠে প্রার্থনা করুন। হিতোপদেশ ১৮:১০ (NW) পদ বলে: “যিহোবার নাম দৃঢ় দূর্গ; ধার্ম্মিক তারই মধ্যে পালিয়ে রক্ষা পায়।” কোট্‌ ডিভোর সেই খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিটি এটিই করেছিলেন, আর মন্দ আত্মারা তাকে প্তালাতন করা বন্ধ করে দিয়েছিল।—গীতসংহিতা ১২৪:৮; ১৪৫:১৮.

২০. সংক্ষেপে, মন্দ আত্মাদের প্রতিরোধ করতে আপনি কী করতে পারেন?

২০ মন্দ আত্মাদের অস্তিত্বে থাকতে যিহোবা অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু তিনি তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করেন, বিশেষভাবে তাঁর প্রজাদের সপক্ষে, আর তাঁর নাম সমুদয় পৃথিবীতে ঘোষিত হচ্ছে। (যাত্রাপুস্তক ৯:১৬) যদি আপনি ঈশ্বরের নিকটবর্তী থাকেন, মন্দ আত্মাদের আপনার ভয় করার প্রয়োজন নেই। (গণনাপুস্তক ২৩:২১, ২৩; যাকোব ৪:৭, ৮; ২ পিতর ২:৯) তাদের ক্ষমতা সীমিত। নোহের সময়ে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, সাম্প্রতিক কালে তারা স্বর্গ থেকে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং এখন শেষ বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। (যিহূদা ৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯; ২০:১-৩, ৭-১০, ১৪) বাস্তবে, তাদের আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে তারা ভীত। (যাকোব ২:১৯) তাই, মন্দ আত্মারা কোন প্রকার টোপ দ্বারা আপনাকে আকর্ষিত করার অথবা যে কোন উপায়ে আক্রমণ করার চেষ্টাই করুক, আপনি তাদের প্রতিরোধ করতে পারবেন। (২ করিন্থীয় ২:১১) সব ধরনের প্রেতচর্চা পরিহার করুন, ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শ প্রয়োগ করুন এবং যিহোবার অনুমোদন প্রার্থনা করুন। দেরি না করে এটি করুন, কারণ আপনার জীবন নির্ভর করছে মন্দ আত্মাগণদের আপনার প্রতিরোধের উপরে!

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

মন্দ আত্মারা কিভাবে মানুষকে ভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে?

বাইবেল প্রেতচর্চাকে নিন্দা করে কেন?

মন্দ আত্মাগণদের থেকে একজন ব্যক্তি কিভাবে মুক্ত হতে পারে?

কেন আপনার মন্দ আত্মাদের প্রতিরোধ করা বজায় রাখা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিভিন্ন প্রকারের দুপ্রতচর্চাকে আপনি কোন্‌ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন?