সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বর যা করেছেন

মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বর যা করেছেন

অধ্যায় ৭

মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বর যা করেছেন

১, ২. (ক) কিভাবে এক রোমীয় শতপতি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বরের পুত্র কে? (খ) যীশুকে মৃত্যুবরণ করতে দিতে যিহোবা কেন অনুমতি দিয়েছিলেন?

 এক বসন্তের অপরাহ্ণে প্রায় ২,০০০ বছর পূর্বে, এক রোমীয় শতপতি তিন ব্যক্তির ধীরগতি, নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দেখেছিলেন। ঐ সৈন্যটি বিশেষভাবে তাদের মধ্যে একজনকে লক্ষ্য করেছিল—যীশু খ্রীষ্টকে। যীশুকে একটি কাষ্ঠদণ্ডে পেরেক বিদ্ধ করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর মুহূর্ত এগিয়ে আসার সাথে সাথে মধ্যাহ্ণের আকাশ কালো হয়ে এসেছিল। যখন তিনি মারা গিয়েছিলেন, ভীষণভাবে ভূকম্পন হয়েছিল, আর সেই সৈন্যটি বিস্ময়ে বলে উদুঠছিল: “সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্ত্র ছিলেন।”—মার্ক ১৫:৩৯.

ঈশ্বরের পুত্র! ঐ সৈন্যটি ঠিকই বলেছিল। পৃথিবীতে কখনও ঘটতে পারে এমন ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি সবেমাত্র সে দেখেছিল। এর পূর্বের উপলক্ষগুলিতে, ঈশ্বর নিজে যীশুকে তাঁর প্রিয় পুত্র বলেছিলেন। (মথি ৩:১৭; ১৭:৫) কেন যিহোবা তাঁর পুত্রকে মারা যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন? কারণ এটিই ছিল পাপ ও মৃত্যু থেকে মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের উপায়।

এক বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য মনোনীত

৩. মানবজাতি সম্পর্কে এক বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য ঈশ্বরের একজাত পুদুত্রর মনোনীত হওয়া যথোপযুক্ত ছিল কেন?

যেমন আমরা এই বইয়ে আগে জেনেছি, যীশুর এক মনুষ্য-পূর্ব অস্তিত্ব ছিল। তাঁকে ঈশ্বরের “একজাত পুত্ত্র” বলা হয় কারণ যিহোবা তাঁকে সরাসরি সৃষ্টি করেছিলেন। তারপরে ঈশ্বর বাকি সমস্ত কিছু অস্তিত্বে আনার জন্য যীশুকে ব্যবহার করেছিলেন। (যোহন ৩:১৮; কলসীয় ১:১৬) যীশুর বিশেষভাবে মানবজাতির প্রতি ভালবাসা ছিল। (হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১) আশ্চর্য নয় যে মানবজাতি যখন মৃত্যুর দণ্ডাদেশের অধীনে এসেছিল যিহোবা তাঁর একজাত পুত্রকে মনোনীত করেছিলেন এক বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করতে!

৪, ৫. যীশুর পৃথিবীতে আসার পূর্বে, মশীহ সম্বন্ধীয় বংশ সম্পর্কে বাইবেল কী প্রকাশ করেছিল?

এদন উদ্যানে আদম, হবা এবং শয়তানের উপরে দণ্ডাদেশ ঘোষণার সময়ে, ঈশ্বর ভবিষ্যৎ উদ্ধারকারীকে এক “বংশ” রূপে উদুল্লখ করেছিলেন। এই বংশ, অথবা বংশধর, মুক্ত করবে সেই ভয়ানক দুঃখদুর্দশা থেকে যা শয়তান দিয়াবল, “সেই পুরাতন সর্প” নিয়ে এসেছিল। বাস্তবে, সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ শয়তান এবং যারা তার অনুগামী তাদের সকলকে চূর্ণ করবে।—আদিপুস্তক ৩:১৫; ১ যোহন ৩:৮; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.

বহু শতাব্দী ধরে, ঈশ্বর ক্রমশ এই বংশ, যাকে মশীহও বলা হয়, সেই সম্বন্ধে আরও বেশি প্রকাশ করেছেন। যেমন ৩৭ পৃষ্ঠার তালিকায় দেখানো হয়েছে, বহু ভাববাণী পৃথিবীতে তাঁর জীবনের বহু বিষয় সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে তাঁর ভূমিকা পূর্ণ করার জন্য তাঁকে ভয়ানক দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছিল।—যিশাইয় ৫৩:৩-৫.

কেন মশীহ মৃত্যুবরণ করবেন

৬. দানিয়েল ৯:২৪-২৬ পদ অনুসারে, মশীহ কী সম্পাদন করবেন ও কিভাবে?

দানিয়েল ৯:২৪-২৬ পদে লিপিবদ্ধ ভাববাণী বলেছিল যে সেই মশীহ—ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তি—এক মহান উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। অনন্তকালের জন্য “অধর্ম্ম সমাপ্ত করিবার জন্য, পাপ শেষ করিবার জন্য, অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য, . . . ধার্ম্মিকতা আনয়ন করিবার জন্য” তিনি পৃথিবীতে আসবেন। মশীহ বিশ্বস্ত মানবজাতি থেকে মৃত্যুর দণ্ডাদেশ দূরীভূত করবেন। কিন্তু কিভাবে তিনি তা করবেন? ভাববাণী ব্যাখ্যা করে যে তিনি “উচ্ছিন্ন হইবেন,” অথবা তাঁর মৃত্যু হবে।

৭. যিহূদীরা পশুবলি উৎসর্গ করত কেন এবং এগুলি কিসের পূর্বাভাস ছিল?

প্রাচীন ইস্রায়েলীয়েরা অপরাধের জন্য প্রায়শ্চিত্তের ধারণা সম্বন্ধে পরিচিত ছিল। ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে যা তাদের দিয়েছিলেন সেই ব্যবস্থার অধীনে তাদের উপাসনায়, তারা নিয়মিতরূপে পশুবলি উৎসর্গ করত। এগুলি ইস্রায়েল জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিত যে মানুষের, তাদের পাপসমূহের প্রায়শ্চিত্তের অথবা মার্জনার জন্য, কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। প্রেরিত পৌল এই নীতিটির এইভাবে সারাংশ করেছিলেন: “রক্তসেচন ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না।” (ইব্রীয় ৯:২২) খ্রীষ্টানগণ মোশির ব্যবস্থা এর প্রয়োজনগুলি সহ, যেমন বলি উৎসর্গ, তার অধীনে নেই। (রোমীয় ১০:৪; কলসীয় ২:১৬, ১৭) তারা আরও জানে যে পশুবলি উৎসর্গ পাপের জন্য চিরস্থায়ী এবং পূর্ণরূপে ক্ষমা প্রদান করতে পারে না। পরিবর্তে, এই বলিরূপ উৎসর্গগুলি আরও অনেক বেশি মূল্যবান এক প্রায়শ্চিত্তের পূর্বাভাস ছিল—মশীহ, অথবা খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তের। (ইব্রীয় ১০:৪, ১০; গালাতীয় ৩:২৪ পদ তুলনা করুন।) তবুও, আপনি হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘সত্যই কি মশীহের জন্য মৃত্যু বরণ করার প্রয়োজন ছিল?’

৮, ৯. কী মূল্যবান বিষয়সমূহ আদম ও হবা হারিয়েছিল এবং তাদের কাজ তাদের বংশধরদের কিভাবে প্রভাবিত করেছিল?

হ্যাঁ, যদি মানবজাতিকে রক্ষা পেতে হয় মশীহকে মৃত্যু বরণ করতেই হবে। কেন বুঝতে, আমাদের অবশ্যই এদন উদ্যানকে স্মরণ করতে হবে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যখন তারা বিদ্রোহ করেছিল তখন আদম ও হবা যা হারিয়েছিল, তার বিশালতাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। তাদের সামনে অনন্ত জীবন রাখা হয়েছিল! ঈশ্বরের সন্তানরূপে, তারাও তাঁর সঙ্গে এক সরাসরি সম্পর্ক উপভোগ করত। কিন্তু যখন তারা যিহোবার শাসনকে অগ্রাহ্য করেছিল, তারা সেই সমস্ত কিছু হারিয়েছিল এবং মনুষ্য জাতির উপরে পাপ ও মৃত্যু এনেছিল।—রোমীয় ৫:১২.

এটি ছিল যেন আমাদের প্রথম পিতামাতা ঋণের এক গভীর গহ্বরে নিজেরা পড়ে গিয়ে এক বিপুল সম্পদের অপব্যয় করেছিল। আদম ও হবা সেই ঋণ তাদের বংশধরদের উপরে হস্তান্তরিত করে দিয়েছিল। যেহেতু আমরা সিদ্ধ এবং পাপহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করিনি, আমরা প্রত্যেকেই পাপী এবং মারা যাই। যখন আমরা অসুস্থ হই অথবা দুঃখদায়ক কিছু বলি যা ইচ্ছা হয় যেন পারলে আমরা ফিরিয়ে নিই, আমরা আমাদের উত্তরাধিকার সূদুত্র প্রাপ্ত ঋণ—মানুষের অসিদ্ধতার—প্রভাব অভিজ্ঞতা করছি। (রোমীয় ৭:২১-২৫) যা আদম হারিয়েছিল তা পুনরুদ্ধার করার মধ্যেই আমাদের একমাত্র আশা রয়েছে। কিন্তু, আমরা সিদ্ধ মনুষ্য জীবন লাভ করতে পারি না। যেহেতু সমস্ত অসিদ্ধ মানুষ পাপ করে, আমরা সকলেই মৃত্যু লাভ করি, জীবন নয়।—রোমীয় ৬:২৩.

১০. আদম যা হারিয়েছিল তা পুনরুদ্ধার করার জন্য কিসের প্রয়োজন ছিল?

১০ তবুও, আদম যে জীবন স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছিল তার পরিবর্তে কিছু কি উৎসর্গ করা যেতে পারে? ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের মান ভারসাম্যতা দাবি করে, “প্রাণের পরিশোধে প্রাণ।” (যাত্রাপুস্তক ২১:২৩) তাই যে জীবন হারানো হয়েছিল তার মূল্য দেওয়ার জন্য আর একটি জীবন উৎসর্গ করার ছিল। যে কোন মানুষের জীবনই যথেষ্ট ছিল না। গীতসংহিতা ৪৯:৭, ৮ পদ অসিদ্ধ মানব সম্বন্ধে বলে: “তাহাদের মধ্যে কেহই কোন মতে ভ্রাতাকে মুক্ত করিতে পারে না, কিম্বা তাহার প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরকে কিছু দিতে পারে না, (কেননা তাহাদের প্রাণের মুক্তি দুর্মূল্য, এবং চিরকালেও অসাধ্য)।” সুতরাং পরিস্থিতি কী একেবারেই হতাশাজনক ছিল? না, নিশ্চয়ই নয়।

১১. (ক) ইব্রীয় ভাষায় “মুক্তির মূল্য” শব্দটি কী অর্থ বোঝায়? (খ) একমাত্র কে মানবজাতিকে পরিত্রাণ করতে পারে ও কেন?

১১ ইব্রীয় ভাষায়, “মুক্তির মূল্য” শব্দটির অর্থ কোন বন্দীকে মুক্ত করতে যে অর্থ প্রদান করা হয় এবং আরও বোঝায় সমতুল্যতা। একমাত্র সম্পূর্ণ সিদ্ধ মানবজীবনসহ কোন ব্যক্তিই আদম যা হারিয়েছিল তার সমতুল্য কিছু উৎসর্গ করতে পারত। আদমের পরে, একমাত্র সম্পূর্ণ সিদ্ধ মানব যিনি পৃথিবীতে জন্ম নেন, তিনি ছিলেন যীশু খ্রীষ্ট। তাই, বাইবেল যীশুকে বলে “শেষ আদম” এবং আমাদের আশ্বস্ত করে যে খ্রীষ্ট “সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন।” (১ করিন্থীয় ১৫:৪৫; ১ তীমথিয় ২:৫, ৬) যেখানে আদম তার সন্তানদের মধ্যে মৃত্যু সঞ্চারিত করেছিল, সেখানে যীশু উত্তরাধিকার দেন অনন্ত জীবনের। প্রথম করিন্থীয় ১৫:২২ ব্যাখ্যা করে: “আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে।” উপযুক্তরূপেই, তাহলে, যীশুকে বলা হয় “সনাতন পিতা।”—যিশাইয় ৯:৬, ৭.

কিভাবে মুক্তির মূল্য প্রদান করা হয়েছিল

১২. কখন যীশু মশীহ হয়েছিলেন এবং তারপর তিনি কোন্‌ জীবনপথে অগ্রসর হয়েছিলেন?

১২ সা.শ. ২৯ সালের শরৎকালে, যীশু তাঁর আত্মীয় যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিতে গিয়েছিলেন আর এইভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনার্থে নিজেকে উপস্থাপিত করেছিলেন। সেই উপলক্ষে যিহোবা যীশুকে পবিত্র আত্মা দিয়ে অভিষিক্ত করেছিলেন। এইভাবে যীশু হয়েছিলেন মশীহ, অথবা খ্রীষ্ট, ঈশ্বর দ্বারা অভিষিক্ত ব্যক্তি। (মথি ৩:১৬, ১৭) তারপর যীশু তাঁর সাড়ে তিন বছরের পরিচর্যা কাজে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। ঈশ্বরের রাজ্য সম্পর্কে প্রচার করে এবং বিশ্বস্ত অনুগামীদের সংগ্রহ করে তিনি তাঁর নিজ দেশের সর্বত্র ভ্রমণ করেছিলেন। কিন্তু, যেমন ভাববাণী করা ছিল, শীঘ্রই তাঁর প্রতি বিরোধিতা বেড়ে উদুঠছিল।—গীতসংহিতা ১১৮:২২; প্রেরিত ৪:৮-১১.

১৩. একজন বিশ্বস্ততা রক্ষাকারী রূপে যীশুর মৃত্যু হওয়ার আগে কোন্‌ ঘটনাগুলি ঘটে?

১৩ যীশু সাহসিকতার সাথে ধর্মীয় নেতাদের কপটতার মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন এবং তারা তাঁর মৃত্যুর চেষ্টা করেছিল। অবশেষে তারা এক জঘন্য চক্রান্ত করেছিল যার সাথে যুক্ত ছিল বিশ্বাসঘাতকতা, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার, এক বেআইনী বিচার এবং রাজদ্রোহের এক মিথ্যা অভিযোগ। যীশুকে আঘাত করা হয়েছিল, থুথু দেওয়া হয়েছিল, বিদ্রূপ করা হয়েছিল এবং একটি বেত্র দ্বারা মারা হয়েছিল যা তাঁর মাংস বিদীর্ণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাত তারপর তাঁকে এক যাতনা দণ্ডের উপরে মৃত্যুর দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। তাঁকে এক কাদুঠর খুঁটিতে পেরেকবিদ্ধ করা হয়েছিল ও সেখানে খাড়াভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রতিটি নিঃশ্বাস নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক ছিল ও তাঁর মৃত্যু হতে বেশ কয়েক ঘন্টা লেগেছিল। সেই কদুঠার পরীক্ষায় সমস্তক্ষণ ধরে, যীশু ঈশ্বরের প্রতি নিখুঁত বিশ্বস্ততা রক্ষা করেছিলেন।

১৪. ঈশ্বর কেন তাঁর পুত্রকে কষ্ট পেতে ও মরতে অনুমতি দিয়েছিলেন?

১৪ এইভাবে, সা.শ. ৩৩ সালের নিশান মাসের ১৪ তারিখে, যীশু তাঁর জীবন “অনেকের পরিবর্ত্তে . . . মুক্তির মূল্যরূপে” প্রদান করেছিলেন। (মার্ক ১০:৪৫; ১ তীমথিয় ২:৫, ৬) স্বর্গ থেকে, যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্ত্রকে কষ্ট পেতে ও মরতে দেখেছিলেন। এমন এক শোচনীয় বিষয় ঘটতে দিতে ঈশ্বর কেন অনুমতি দিয়েছিলেন? তিনি তা দিয়েছিলেন কারণ তিনি মানবজাতিকে ভালবেসেছিলেন। যীশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) যীশুর মৃত্যু আমাদের আরও শেখায় যে যিহোবা নিখুঁত ন্যায়বিচারের এক ঈশ্বর। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) কেউ কেউ হয়ত ভাবতে পারে যে ঈশ্বর কেন প্রাণের পরিশোধে প্রাণ তাঁর ন্যায়বিচারের এই নিয়মের দাবিকে পরিত্যাগ করলেন না এবং আদমের পাপাত্মক পথের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ মূল্যকে অগ্রাহ্য করলেন না। কারণ এই যে, যিহোবা সর্বদাই তাঁর নীতিসমূহ পালন করে চলেন ও সেগুলিকে উন্নীত রাখেন, এমনকি নিজেকে উচ্চ মূল্য দিতে হলেও।

১৫. যেহেতু যীশুর অস্তিত্বকে চিরস্থায়ীরূপে শেষ হতে দেওয়া অন্যায় হত, তাই যিহোবা কী করেছিলেন?

১৫ যিহোবার ন্যায়বিচার আরও দাবি করেছিল যেন যীশুর মৃত্যুর এক সুখময় ফল হয়। ভেবে দেখুন, ন্যায়বিচার কি হবে যদি বিশ্বস্ত যীশুকে মৃত্যুতে চিরকাল ঘুমিয়ে থাকতে দেওয়া হয়? অবশ্যই নয়! ইব্রীয় শাস্ত্রাবলি ভাববাণী করেছিল যে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত ব্যক্তি কবরের ভিতরে থাকবে না। (গীতসংহিতা ১৬:১০; প্রেরিত ১৩:৩৫) তিন দিনের কিছু অংশের জন্য তিনি মৃত্যুতে ঘুমিয়েছিলেন এবং তারপরে যিহোবা ঈশ্বর তাঁকে জীবনে এক বিক্রমশালী আত্মিক প্রাণীরূপে পুনরুত্থিত করেছিলেন।—১ পিতর ৩:১৮.

১৬. স্বর্গে ফিরে গিয়ে যীশু কী করেছিলেন?

১৬ তাঁর মৃত্যুতে, যীশু চিরকালের জন্য তাঁর মনুষ্য জীবনকে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন। স্বর্গে জীবনে উত্থিত হয়ে, তিনি এক জীবন-দায়ী আত্মা হয়েছিলেন। এছাড়াও, যখন যীশু বিশ্বের পবিত্রতম স্থানে আরোহণ করেছিলেন, তিনি তাঁর প্রিয় পিতার সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয়েছিলেন এবং প্রথানুযায়ী তাঁর সিদ্ধ মানব জীবনের মূল্য তাঁকে প্রদান করেছিলেন। (ইব্রীয় ৯:২৩-২৮) সেই মহামূল্য জীবনের মূল্য তখন বাধ্য মানবজাতির পক্ষে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্য এবং আপনি

১৭. খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ আমরা কিভাবে গ্রহণ করতে পারি?

১৭ তিনটি উপায় বিবেচনা করুন যার দ্বারা খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান এমনকি এখনই আপনাকে উপকৃত করে। প্রথমত, এটি আনে পাপের ক্ষমা। যীশুর পাতিত রক্তে বিশ্বাসের মাধ্যমে, আমরা “মুক্তির মূল্য দ্বারা মুক্তি,” হ্যাঁ, “অপরাধ সকলের মোচন” পাই। (ইফিষীয় ১:৭, NW) তাই এমনকি আমরা যদি কোন গুরুতর পাপ করেও থাকি, যীশুর নামে আমরা ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইতে পারি। যদি আমরা প্রকৃতই অনুতপ্ত হই, যিহোবা তাঁর পুদুত্রর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মূল্য আমাদের প্রতি প্রয়োগ করেন। ঈশ্বর আমাদের ক্ষমা করেন, পাপ করার জন্য মৃত্যুর শাস্তি দাবি করার পরিবর্তে, এক সৎ সংবেদের আশীর্বাদ দান করেন।—প্রেরিত ৩:১৯; ১ পিতর ৩:২১.

১৮. কোন্‌ উপায়ে যীশুর বলিদান আমাদের আশা প্রদান করতে পারে?

১৮ দ্বিতীয়ত, খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশার ভিত্তি প্রদান করে। দর্শনে, প্রেরিত যোহন দেখেছিলেন যে “বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না” তারা এই বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগত মহাধ্বংস থেকে রক্ষা পাবে। কেন তারা রক্ষা পাবে যখন ঈশ্বর অন্যান্য বহু ব্যক্তিকে বিনাশ করবেন? এক স্বর্গদূত যোহনকে বলেছিলেন যে সেই বিস্তর লোক যীশু খ্রীষ্টের, “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যীশু খ্রীষ্টের পাতিত রক্তে বিশ্বাস করি এবং ঐশিক প্রয়োজনগুলির সাথে মিল রেখে জীবনযাপন করি, ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা পরিচ্ছন্ন থাকব এবং অনন্ত জীবনের আশা রাখতে পারব।

১৯. খ্রীষ্টের বলিদান কিভাবে প্রমাণ করে যে তিনি এবং তাঁর পিতা আপনাকে প্রেম করেন?

১৯ তৃতীয়ত, মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান চূড়ান্তভাবে যিহোবার প্রেমের প্রমাণ। খ্রীষ্টের মৃত্যু বিশ্বের ইতিহাসে দুটি সর্বাপেক্ষা মহান প্রেমের পরিচয়কে বাস্তবে রূপায়িত করেছিল: (১) আমাদের জন্য তাঁর পুত্রকে মৃত্যুবরণ করতে পাঠানোর মধ্যে ঈশ্বরের প্রেম; (২) মুক্তির মূল্যস্বরূপ নিজেকে স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করার মধ্যে যীশুর প্রেম। (যোহন ১৫:১৩; রোমীয় ৫:৮) যদি আমরা প্রকৃতই বিশ্বাস প্রদর্শন করি, এই প্রেম আমাদের প্রত্যেকে এবং সকলের উপরে প্রয়োগসাধ্য হবে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: ‘ঈশ্বরের পুত্ত্র . . . আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন।’—গালাতীয় ২:২০; ইব্রীয় ২:৯; ১ যোহন ৪:৯, ১০.

২০. যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপরে আমাদের কেন বিশ্বাস প্রদর্শন করা উচিত?

২০ সুতরাং, আসুন যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপরে বিশ্বাস প্রদর্শন করে আমরা ঈশ্বর এবং খ্রীষ্ট দ্বারা প্রদর্শিত প্রেমের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাই। তা করা অনন্ত জীবনের প্রতি পরিচালিত করে। (যোহন ৩:৩৬) তবুও, আমাদের পরিত্রাণ পৃথিবীতে যীশুর জীবন এবং মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ নয়। না, তাঁর প্রধান উদ্বেগ ছিল আরও বড় এক বিচার্য বিষয়, এক সর্বব্যাপী বিষয়। যেমন পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখব, ঐ বিচার্য বিষয়ের সাথে আমরা সকলেই সম্পর্কযুক্ত যেহেতু এটি দেখায় কেন ঈশ্বর এই পৃথিবীতে এতদিন পর্যন্ত দুষ্টতা ও দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন।

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

মানবজাতিকে রক্ষা করতে যীশুকে কেন মরতে হয়েছিল?

মুক্তির মূল্য কিভাবে প্রদান করা হয়েছিল?

মুক্তির মূল্য থেকে আপনি কী কী উপায়ে উপকৃত হন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৬৭ পৃষ্ঠার চিত্র]