সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যখন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করে

যখন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করে

অধ্যায় ১৯

যখন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করে

১, ২. যিহোবার সৃষ্টি কিরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?

 মনে করুন একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সবেমাত্র এক অপূর্ব চিত্রকর্ম সমাপ্ত করেছেন। যথার্থরূপেই তিনি এটিকে গণ্য করেন অতি উত্তম বলে—এক শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম! কিন্তু রাতারাতি এক ঈর্ষাপরায়ণ প্রতিদ্বন্দ্বী সেটিকে নষ্ট করে দেয়। বোঝা যায় যে, তা চিত্রশিল্পীর গভীর দুঃখের কারণ হয়। সেই বর্বরকে কারারুদ্ধ দেখতে তিনি কতই না আগ্রহী হবেন! আর তার সৃষ্টিকে এর পূর্বের সৌন্দর্যে পুনঃস্থাপিত করতে সেই চিত্রশিল্পীর আকুল আকাঙ্ক্ষাকে আপনি কল্পনা করতে পারেন।

সেই চিত্রশিল্পীর মত, পৃথিবীকে তৈরি এবং তার উপরে মানবজাতিকে স্থাপন করা, যিহোবার সৃষ্ট এক শ্রেষ্ঠ অবদান। নর ও নারীকে সৃষ্টি করার পর, তাঁর সকল পার্থিব কাজ সম্বন্ধে তিনি ঘোষণা করেছিলেন “অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:৩১) আদম ও হবা ঈশ্বরের নিজ সন্তান ছিল এবং তিনি তাদের ভালবাসতেন। তিনি তাদের জন্য এক সুখময়, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চিন্তা করেছিলেন। সত্য, শয়তান তাদের বিদ্রোহ করতে পরিচালিত করেছিল, কিন্তু ঈশ্বরের অপূর্ব সৃষ্টি অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।—আদিপুস্তক ৩:২৩, ২৪; ৬:১১, ১২.

৩. “প্রকৃতরূপে জীবন” কী?

ঈশ্বর বিষয়গুলিকে সংশোধন করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর আদি উদ্দেশ্য যেরূপ ছিল সেইভাবে আমাদের বাস করতে দেখতে তিনি অত্যন্ত আগ্রহী। আমাদের সংক্ষিপ্ত ও কষ্টপূর্ণ অস্তিত্ব “প্রকৃতরূপে জীবন” নয়, কারণ তা যিহোবার যা উদ্দেশ্য ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি নিকৃষ্ট। “প্রকৃতরূপে জীবন” যা ঈশ্বর আমাদের জন্য চান তা হল সিদ্ধ পরিস্থিতিতে “অনন্ত জীবন।”—১ তীমথিয় ৬:১২, ১৯.

৪, ৫. (ক) পরমদেশের আশা কিভাবে বাস্তবে পরিণত হবে? (খ) ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আশা সম্পর্কে আমরা চিন্তা করব কেন?

ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান যিহোবার প্রতি দায়িত্ববোধ আনে। (যাকোব ৪:১৭) কিন্তু সেই আশীর্বাদ সকল সম্বন্ধে চিন্তা করুন যা আপনি উপভোগ করবেন যদি ঐ জ্ঞান প্রয়োগ করেন ও অনন্ত জীবনের নাগাল পান। তাঁর বাক্য, বাইবেলে, যিহোবা ঈশ্বর পরমদেশ পৃথিবীতে যা খুবই সন্নিকদুট সেই জীবন কিরূপ হবে তার এক সুন্দর চিত্র অঙ্কিত করেছেন। অবশ্য, যিহোবার প্রজা হিসাবে শুধুমাত্র একটি পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষাতেই আমরা ঈশ্বরের পরিচর্যা করি না। আমরা ঈশ্বরের পরিচর্যা করি কারণ তাঁকে আমরা প্রেম করি। (মার্ক ১২:২৯, ৩০) আরও, যিহোবাকে পরিচর্যা করার দ্বারা আমরা জীবন অর্জন করি না। অনন্ত জীবন ঈশ্বরের এক অনুগ্রহ-দান। (রোমীয় ৬:২৩) এরূপ এক জীবন সম্বন্ধে চিন্তা করলে আমাদের উপকার হবে কারণ পরমদেশের আশা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যিহোবা কিধরনের ঈশ্বর—“যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) এক আশা যা আমাদের মনে ও হৃদয়ে প্রকৃতই উজ্জ্বল, শয়তানের জগতে দুঃখকষ্ট সহ্য করতে তা আমাদের সক্ষম করবে।—যিরমিয় ২৩:২০.

আসুন আমরা এখন ভবিষ্যৎ পার্থিব পরমদেশে অনন্ত জীবনের বাইবেল-ভিত্তিক আশার উপরে আমাদের মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করি। জীবন কেমন হবে যখন পৃথিবী ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়?

হর্‌মাগিদোনের পরে—এক পরমদেশ পৃথিবী

৬. হর্‌মাগিদোন কী এবং মানবজাতির জন্য এর অর্থ কী হবে?

যেমন পূর্বে দেখানো হয়েছে, যিহোবা ঈশ্বর শীঘ্রই বর্তমান এই দুষ্ট বিধি-ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবেন। জগৎ দ্রুত এগিয়ে চলেছে তার প্রতি যাকে বাইবেল বলে হর্‌মাগিদোন, অথবা আরমাগেডন। ঐ শব্দটি অনেক ব্যক্তিকেই এক ব্যাপক পারমাণবিক ধ্বংস সম্বন্ধে চিন্তা করাতে পারে যা যুদ্ধরত জাতিগণ দ্বারা আসবে, কিন্তু হর্‌মাগিদোন সে ধরনের কিছুই নয়। যেমন প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬ পদ দেখায়, হর্‌মাগিদোন ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধ।’ এটি এক যুদ্ধ যা “জগৎ সমুদয়ের রাজাদের,” অথবা জাতিগণকে জড়িত করে। যিহোবা ঈশ্বরের পুত্র, নিরূপিত রাজা, শীঘ্রই হর্‌মাগিদোনের যুদ্ধে প্রবেশ করবেন। ফলাফল সুনিশ্চিত। যারা ঈশ্বরের রাজ্যের বিরোধিতা করে ও যারা শয়তানের দুষ্ট ব্যবস্থার একটি অংশ তারা সকলেই নিশ্চিহ্ন হবে। একমাত্র যারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত তারাই রক্ষা পাবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; ১৯:১১-২১.

৭. খ্রীষ্টের সহস্র বৎসর রাজত্বকালে শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা কোথায় থাকবে এবং তা মানবজাতিকে কিভাবে উপকৃত করবে?

কল্পনা করুন যে আপনি সেই ব্যাপক ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নূতন জগতে পৃথিবীর উপরে জীবন কেমন হবে? (২ পিতর ৩:১৩) আমাদের অনুমান করার প্রয়োজন নেই, কারণ বাইবেল আমাদের বলে এবং এটি আমাদের যা বলে তা রোমাঞ্চকর। আমরা জানতে পারি যে শয়তান এবং তার মন্দ দূতেদের নিষ্ক্রিয় করা হবে, যীশু খ্রীষ্টের সহস্র বৎসর রাজত্বকালে কর্মহীন এক অগাধলোকে কারাবদ্ধ রাখা হবে। ঐ দুষ্ট, বিদ্বেষপরায়ণ প্রাণীরা অদৃশ্য থেকে আর প্রতীক্ষায় থাকবে না, অশান্তির প্ররোচনা দিতে এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আমাদের অবিশ্বস্ততার কাজে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করতে। কী এক স্বস্তি!—প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩.

৮, ৯. নতুন জগতে, দুঃখযন্ত্রণা, রোগব্যাধি এবং বার্ধক্যের কী ঘটবে?

যথাসময়ে, সকল প্রকার রোগব্যাধি নির্মূল হয়ে যাবে। (যিশাইয় ৩৩:২৪) খঞ্জেরা তখন দৃঢ়, স্বাস্থ্যবান পদদ্বয়ের উপরে দাঁড়াবে, হাঁটবে, দৌড়াবে এবং নৃত্য করবে। তাদের নিস্তব্ধ জগতে বহু বছর জীবনের পর, বধিরেরা তাদের চারিপাশে আনন্দধ্বনি শুনবে। অন্ধেরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাবে যখন তাদের চোখের সামনে রঙ ও আকৃতির এক অপূর্ব জগৎ উন্মোচিত হবে। (যিশাইয় ৩৫:৫, ৬) অবশেষে, তারা তাদের প্রিয়জনদের মুখমণ্ডল দেখবে! হয়ত তখন ক্ষণিকের জন্য আনন্দাশ্রুতে তাদের চোখের দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে যাবে।

শুধু ভাবুন! আর চশমা নেই, আর খঞ্জের যষ্ঠি এবং বৃদ্ধের ছড়ি নেই, আর ঔষধপত্র নেই, আর দন্তচিকিৎসালয় বা হাসপাতাল নেই! আর কখনও মানসিক ব্যাধি এবং বিষণ্ণতা মানুষকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবে না। কোন শিশু আর ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে ক্ষয় হয়ে যাবে না। বার্ধক্যের ক্ষয় বিপরীতমুখী হবে। (ইয়োব ৩৩:২৫) আমরা আরও স্বাস্থ্যবান, শক্তিশালী হয়ে উঠব। প্রতিদিন সকালে আমরা রাদুত্রর নিদ্রা থেকে জেগে উঠব সতেজ হয়ে, নব উদ্যম সহ প্রাণশক্তিতে পূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর জীবন ও সন্তোষজনক কাজের এক নূতন দিনের জন্য আগ্রহী হয়ে।

১০. হর্‌মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্তেরা কী কর্মভার গ্রহণ করবে?

১০ হর্‌মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্তদের করার জন্য বহু আনন্দদায়ক কাজ থাকবে। তারা এই পৃথিবীকে এক পরমদেশে রূপান্তরিত করবে। দূষিত পুরানো জগতের শেষ চিহ্নটুকু পর্যন্ত মুছে দেওয়া হবে। বস্তি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জায়গাগুলির উপরে পার্ক এবং উদ্যানসমূহ গড়ে উঠবে। প্রত্যেকেই আরামপ্রদ, মনোরম বাসগৃহ উপভোগ করবে। (যিশাইয় ৬৫:২১) যত সময় অতিবাহিত হবে, পৃথিবীতে ঐ পরমদেশতুল্য অংশগুলি বাড়তে এবং মিলিত হতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিকর্তা দ্বারা সেই এদন উদ্যানে স্থাপিত সৌন্দর্যের মান অনুযায়ী হয়। পুনঃস্থাপনের সেই কাজে অংশ নেওয়া কতই না তৃপ্তিদায়ক হবে!

১১. পৃথিবীর পরিবেশ এবং পশু-জীবনের সঙ্গে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কিরূপ হবে?

১১ এ সমস্ত কিছুই করা হবে ঐশিক পরিচালনার অধীনে যাতে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কোন ক্ষতি না হয়। মানুষ পশুদের সাথে শান্তিতে থাকবে। খেয়ালখুশি মত তাদের হত্যা করার পরিবর্তে, মানুষ এই পৃথিবীর উপরে পুনরায় তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তাদের প্রতি উত্তম যত্ন নেবে। মনশ্চক্ষে কল্পনা করুন নেকড়েবাঘ ও মেষশাবক, সিংহ ও গোবৎস, একদুত্র ভোজন করছে—এবং গৃহপালিত পশুরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এমনকি একটি ছোট শিশুরও বন্য পশুদের থেকে ভয় পাওয়ার আর কিছু থাকবে না, অথবা নিষ্ঠুর, হিংস্র লোকেদের দ্বারা নতুন জগৎটিতে শান্তি ভঙ্গ হবে না। (যিশাইয় ১১:৬-৮) কী শান্তিপূর্ণ এক নূতন জগৎ তা হবে!

মানবজাতি রূপান্তরিত

১২. যিশাইয় ১১:৯ পদ কিভাবে বর্তমানে পরিপূর্ণ হচ্ছে এবং পরমদেশে তা কিভাবে পূর্ণ হবে?

১২ যিশাইয় ১১:৯ (NW) পদ আমাদের বলে কেন সমগ্র পৃথিবীতে আর কোন ক্ষতি করা হবে না। এটি বলে: “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী যিহোবা-বিষয়ক জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ হবে।” এটি মানুষের বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কারণ পশুরা “যিহোবা-বিষয়ক জ্ঞান” নিতে ও পরিবর্তন করতে পারে না, যেহেতু তারা সহজাত প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু আমাদের সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান মানুষের পরিবর্তন ঘটায়। নিঃসন্দেহে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান আপনার জীবনে প্রয়োগ করার ফলে ইতিমধ্যেই আপনি কিছু পরিবর্তন নিজেই করেছেন। লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি তাই করেছেন। সুতরাং, এই ভবিষ্যদ্বাণী যারা যিহোবার পরিচর্যা করে তাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে। তবুও, এটি আরও এক সময়ের প্রতি নির্দেশ করে যখন সমগ্র পৃথিবীর মানুষ সমস্ত পাশবিক অথবা হিংস্র প্রবৃত্তি ত্যাগ করবে এবং চিরকালের জন্য শান্তিপ্রিয় হবে।

১৩. পৃথিবীর উপরে কোন্‌ শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে?

১৩ কী অপূর্বই হবে যখন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করবে! শিক্ষার এক ব্যাপক কর্মসূচি প্রবর্তিত হবে রাজা যীশু খ্রীষ্ট এবং তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহশাসকদের পরিচালনার অধীনে। নতুন “পুস্তক” সকল তখন ব্যবহৃত হবে। স্পষ্টতই এগুলি হবে ঈশ্বরের লিখিত নির্দেশাবলি যা পৃথিবীর অধিবাসীদের শিক্ষিত করার জন্য ভিত্তিস্বরূপ কাজ করবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১২) মানবজাতি যুদ্ধ নয়, কিন্তু, শান্তি শিখবে। সমস্ত ধ্বংসাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসমূহ চিরকালের জন্য নির্মূল হবে। (গীতসংহিতা ৪৬:৯) নতুন জগতের অধিবাসীদের তাদের সহ-মানবদের সাথে প্রেম, শ্রদ্ধা ও মর্যাদা সহকারে আচরণ করতে শিক্ষা দেওয়া হবে।

১৪. যখন মানবজাতি একটি একত্রিত পরিবার হবে তখন পৃথিবী কিভাবে ভিন্নরূপ হবে?

১৪ মানবজাতি একটি একত্রিত পরিবারে পরিণত হবে। একতা এবং ভ্রাতৃত্বে কোন বাধা থাকবে না। (গীতসংহিতা ১৩৩:১-৩) চোরের ভয়ে কারও গৃহ তালাবদ্ধ রাখার প্রয়োজন হবে না। প্রতিটি হৃদয়ে, প্রতিটি গৃহে, পৃথিবীর প্রতিটি অংশে শান্তি রাজত্ব করবে।—মীখা ৪:৪.

আনন্দময় পুনরুত্থান

১৫. পৃথিবীর উপরে কোন্‌ দুটি দল পুনরুত্থিত হবে?

১৫ সেই সহস্র বছর ধরে, পুনরুত্থান ঘটতে থাকবে। যারা স্বেচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা, অথবা সক্রিয় শক্তির বিরুদ্ধে পাপ করেছে, তার প্রকাশ অথবা পরিচালনার বিপরীতে অনুতাপহীন কাজ করার দ্বারা, তারা পুনরুত্থিত হবে না। (মথি ২৩:১৫, ৩৩; ইব্রীয় ৬:৪-৬) অবশ্য, ঈশ্বরই স্থির করবেন কারা সেইভাবে পাপ করেছে। কিন্তু দুটি স্বতন্ত্র দল পুনরুত্থিত হবে—“ধার্ম্মিক ও অধার্ম্মিক।” (প্রেরিত ২৪:১৫) যেহেতু উপযুক্ত ক্রমবিন্যাস থাকবে, এই সিদ্ধান্ত করা যুক্তিপূর্ণ যে পৃথিবীতে পুনর্জীবনে প্রথমে ধার্মিকদের স্বাগত জানান হবে, যারা বিশ্বস্ততার সাথে যিহোবার পরিচর্যা করেছিল।—ইব্রীয় ১১:৩৫-৩৯.

১৬. (ক) পৃথিবীর উপরে পুনরুত্থিত “ধার্ম্মিকদের” মধ্যে কারা অন্তর্ভুক্ত থাকবে? (খ) প্রাচীনকালের কোন্‌ বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বিশেষভাবে আপনি সাক্ষাৎ করতে চান এবং কেন?

১৬ যুদ্ধ, আকস্মিক বিপর্যয় এবং মৃত্যুর সংবাদের পরিবর্তে, যিহোবার সেবকেরা পুনরুত্থানের অপূর্ব সংবাদগুলি পাবে। হেবল, হনোক, নোহ, অব্রাহাম, সারা, ইয়োব, মোশি, রাহব, রূৎ, দায়ূদ, এলিয়, ইষ্টের এদের ন্যায় বিশ্বস্ত পুরুষ এবং নারীদের প্রত্যাবর্তন সম্বন্ধে জানা রোমাঞ্চকর হবে। কী উত্তেজনাপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যসমূহ তারা উপস্থাপিত করবেন যখন বহু বাইবেল ঘটনার পটভূমিকার বিশদ বিবরণ তারা দেবেন! সন্দেহ নেই তারা এবং আরও সাম্প্রতিক কালে ধার্মিক ব্যক্তি যারা মারা গিয়েছেন তারাও খুবই আগ্রহী হবেন শয়তানের বিধিব্যবস্থার শেষ এবং কিভাবে যিহোবা তাঁর পবিত্র নামকে পবিত্রীকৃত ও তাঁর সার্বভৌমত্বের যথার্থতা প্রতিপাদন করলেন তা জানতে।

১৭. অন্যেরা যারা পুনরুত্থিত হবে বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা তাদের কী সাহায্য দেবেন?

১৭ এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা কতই সাহায্যকারী হবেন পুনরুত্থানের পরবর্তী পর্যায়ে, যখন শত শত কোটি “অধার্ম্মিক” ব্যক্তিরা মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হবে! মানবজাতির অধিকাংশই যিহোবাকে জানবার কখনও কোন সুযোগ পায়নি। শয়তান ‘তাদের মনকে অন্ধ করে রেখেছিল।’ (২ করিন্থীয় ৪:৪) কিন্তু শয়তানের কাজকে বাতিল করে দেওয়া হবে। অধার্মিকেরা এক সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে ফিরে আসবে। তাদের অভ্যর্থনা জানাবে একদল মানুষ যারা যিহোবা এবং তাঁর রাজত্বকারী পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে তাদের শিক্ষা দিতে সুসংগঠিত। যখন শত শত কোটি পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে জানবে ও প্রেম করবে, যিহোবা-বিষয়ক জ্ঞান এক অভূতপূর্ব উপায়ে পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করবে।

১৮. আপনি কিরূপ বোধ করবেন বলে আপনার মনে হয় যখন পুনরুত্থিত প্রিয়জনদের অভ্যর্থনা জানাবেন?

১৮ পুনরুত্থান কী আনন্দই না আমাদের হৃদয়ে নিয়ে আসবে! আমাদের শত্রু মৃত্যুর কারণে কে না কষ্টভোগ করেছে? বাস্তবিক, কে না সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত বোধ করেছে যখন ভালবাসা অথবা বন্ধুত্বের কোন বন্ধন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে রোগব্যাধি, বার্ধক্য, দুর্ঘটনা, অথবা হিংস্রতা জনিত কোন প্রিয়জনের জীবনহানির কারণে? সুতরাং, কল্পনা করুন পরমদেশে সেই পুনর্মিলনের আনন্দকে। মাতা ও পিতা, পুত্র ও কন্যা, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন, সকলে একে অপরকে দৌড়ে গিয়ে আলিঙ্গন করছে, হাসছে ও আনন্দে কাঁদছে।

অবশেষে সিদ্ধতা!

১৯. হাজার বছরের মধ্যে কোন্‌ অলৌকিক কাজ সংঘটিত হবে?

১৯ সহস্র বছর ধরে, এক অপূর্ব অলৌকিক কাজ সংঘটিত হতে থাকবে। মানবজাতির জন্য, এটিই হবে সম্ভবত খ্রীষ্টের হাজার বছর রাজত্বকালের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয়। যিহোবা তাঁর পুত্রকে নির্দেশ দেবেন প্রতিটি বিশ্বস্ত এবং বাধ্য পুরুষ ও নারীর প্রতি মুক্তিমূল্যরূপ বলিদানের উপকারিতাকে প্রয়োগ করতে। ঐ উপায়ে, সমস্ত পাপ দূরীভূত হবে এবং মানবজাতি সিদ্ধতায় উন্নীত হবে।—১ যোহন ২:২; প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪.

২০. (ক) সিদ্ধ হওয়ার অর্থ কী? (খ) হর্‌মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্তেরা এবং পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা কখন থেকে সম্পূর্ণরূপে জীবিত থাকতে আরম্ভ করবে?

২০ সিদ্ধতা! এর অর্থ কী হবে? এর অর্থ হবে সেই জীবনে ফিরে যাওয়া যেভাবে আদম ও হবা তা উপভোগ করত যিহোবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাদের পাপ করার পূর্বে। দৈহিক, মানসিক, আবেগ, নৈতিক, আধ্যাত্মিকভাবে—সম্ভাব্য যে কোন উপায়ে—সিদ্ধ মানুষ ঈশ্বরের মানসমূহ সম্পূর্ণরূপে পূরণ করবে। কিন্তু সব মানুষ তখন কী হুবহু একই রকম হবে? নিশ্চয়ই নয়! যিহোবার সৃষ্টি সকল—বৃক্ষ, পুষ্প, পশু—সবই আমাদের শেখায় যে তিনি বৈচিত্র্য ভালবাসেন। সিদ্ধ মানুষদের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতা থাকবে। প্রত্যেকেই জীবন উপভোগ করবে যেমন ঈশ্বর চেয়েছিলেন। প্রকাশিত বাক্য ২০:৫ পদ বলে: “যে পর্য্যন্ত সেই সহস্র বৎসর সমাপ্ত না হইল, সে পর্য্যন্ত অবশিষ্ট মৃতেরা জীবিত হইল না।” হর্‌মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্ত বিস্তর লোকের মত, পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা পূর্ণরূপে জীবিত হবে যখন তারা পাপহীন সিদ্ধতায় পৌঁছাবে।

২১. (ক) খ্রীষ্টের হাজার বছর রাজত্বের শেষে কী ঘটবে? (খ) শয়তান এবং সকলে যারা তার পক্ষে সবশেষে তাদের কী ঘটবে?

২১ সিদ্ধ মানুষেরা একটি সর্বশেষ পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। হাজার বছরের শেষে, শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের অগাধলোক থেকে অল্পকালের জন্য মুক্ত করা হবে এবং যিহোবার কাছ থেকে মানুষদের দূরে সরিয়ে নেওয়ার এক সর্বশেষ প্রচেষ্টা করার অনুমতি দেওয়া হবে। কিছু লোকে মন্দ ইচ্ছাকে যিহোবার প্রেমের উপরে স্থান দেবে, কিন্তু এই বিদ্রোহকে সংক্ষিপ্ত করা হবে। শয়তান ও তার সকল মন্দ দূতেদের সাথে এই স্বার্থপর ব্যক্তিদের যিহোবা ধ্বংস করবেন। সমস্ত অন্যায়কারীরা তখন চিরতরে নির্মূল হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-১০.

আপনি কী করবেন?

২২. পরমদেশে কী কাজ করার জন্য আপনি সানন্দে প্রত্যাশা করেন?

২২ যিহোবা ঈশ্বরকে যারা প্রেম করে ও পরমদেশ পৃথিবীতে বাস করে তাদের সামনে চিরস্থায়িত্ব প্রসারিত হবে। তাদের আনন্দ আমরা কল্পনা করতে পারি, আর তাতে আপনিও অংশ নিতে পারেন। সঙ্গীত, কলা, শিল্প—কেন, সিদ্ধ মানবজাতির সম্পাদিত কার্য এই পুরাতন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশারদদের সেরা অবদানগুলিকেও ছাড়িয়ে যাবে! সর্বোপরি, মানুষ সিদ্ধ হবে ও তাদের সামনে সীমাহীন সময় থাকবে। কল্পনা করুন সিদ্ধ মানুষ হিসাবে আপনি যা করতে সক্ষম হবেন। আরও, ভাবুন, আপনি ও সহমানুষেরা যিহোবার সৃষ্টি সম্বন্ধে যা শিখবেন—বিশ্বব্যাপী শত শত কোটি ছায়াপথ থেকে ক্ষুদ্রতম পরমাণু কণিকা পর্যন্ত। যা কিছু মানবজাতি সাধন করবে তাই আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা, যিহোবার হৃদয়কে আরও অধিক আনন্দিত করবে।—গীতসংহিতা ১৫০:১-৬.

২৩. পরমদেশে জীবন কেন কখনও একঘেয়েমি হবে না?

২৩ জীবন তখন একঘেয়েমি হবে না। যত সময় অতিবাহিত হবে তা আরও অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। আপনি জানেন, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের শেষ নেই। (রোমীয় ১১:৩৩) চিরকাল ধরে, সর্বদাই আরও অধিক শেখবার এবং নবদিগন্ত আবিষ্কার করার থাকবে। (উপদেশক ৩:১১) আর যখন আপনি এইভাবে যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করে চলেন, আপনি জীবিত থাকবেন—মাত্র কয়েক বছরের জন্য নয় কিন্তু অনন্তকাল!—গীতসংহিতা ২২:২৬.

২৪, ২৫. ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের সাথে সঙ্গতি রেখে কেন এখনই আপনার জীবনযাপন করা উচিত?

২৪ এক পরমদেশ পৃথিবীতে এক অপূর্ব ভবিষ্যতের জন্য আপনার যে কোন প্রচেষ্টা অথবা ত্যাগস্বীকার যা আপনি করেন তা কি উপযুক্ত নয়? অবশ্যই তাই! হ্যাঁ, সেই চমৎকার ভবিষ্যতের চাবিটিকে যিহোবা আপনার প্রতি প্রসারিত করে দিয়েছেন। সেই চাবি হল ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান। আপনি কি তা ব্যবহার করবেন?

২৫ যদি আপনি যিহোবাকে প্রেম করেন, তাঁর ইচ্ছা পালন করতে আপনি আনন্দিত হবেন। (১ যোহন ৫:৩) যখন আপনি সেই পথে ধাবিত হন, কী আশীর্বাদ সমূহের অভিজ্ঞতা হবে আপনার! যদি আপনি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োগ করেন, এমনকি এই অশান্তিময় জগতেও তা আপনার জন্য এক অধিক সুখী জীবন আনতে পারে। আর ভবিষ্যতের পুরস্কার সকল অপরিমেয়, কারণ এটিই হল সেই জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে! আপনার জন্য এখন হল অনুকূল সময় কাজ করার। দৃঢ় সঙ্কল্প করুন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের সাথে সঙ্গতি রেখে জীবনযাপন করতে। যিহোবার প্রতি আপনার প্রেম প্রদর্শন করুন। তাঁর পবিত্র নামকে শ্রদ্ধা করুন ও শয়তানকে এক মিথ্যাবাদী প্রমাণ করুন। পরিবর্তে, যিহোবা ঈশ্বর, প্রকৃত প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের উৎস, তাঁর মহান এবং প্রেমময় হৃদয়ে আপনার জন্য আনন্দিত হবেন। (যিরমিয় ৩১:৩; সফনিয় ৩:১৭) আর তিনি আপনাকে অনন্তকালের জন্য প্রেম করবেন!

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

“প্রকৃতরূপে জীবন” কী?

হর্‌মাগিদোনের পরে, পৃথিবীর উপরে কী ঘটবে?

পৃথিবীর উপরে কারা পুনরুত্থিত হবে?

কিভাবে মানবজাতি সম্পূর্ণ সিদ্ধ হবে এবং সবশেষে পরীক্ষিত হবে?

পরমদেশ সম্পর্কে আপনার আশা কী?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮৮, ১৮৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি পরমদেশে বাস করার আশা করেন, যখন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করে?