সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সত্য ঈশ্বর কে?

সত্য ঈশ্বর কে?

অধ্যায় ৩

সত্য ঈশ্বর কে?

১. কেন বাইবেলের প্রথম শব্দগুলির সঙ্গে অনেকেই একমত?

 যখন কোন পরিষ্কার রাদুত্র আপনি আকাশের দিকে তাকান, বহু সংখ্যক তারা দেখে আপনি কি চমৎকৃত হন না? তাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আপনি কী ব্যাখ্যা দেন? আর পৃথিবীর উপরে জীবিত বিষয়গুলি সম্পর্কেই বা কী বলা যায়—রঙবেরঙের ফুলগুলি, তাদের সুমধুর গান সহ পাখিগুলি, শক্তিশালী তিমিগুলি যা সমুদ্রে লাফায়? এই তালিকার শেষ নেই। এ সমস্ত কিছুই হঠাৎই সৃষ্টি হতে পারে না। আশ্চর্য নয় অনেকেই বাইবেলের প্রথম শব্দগুলির সাথে একমত: “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন”!—আদিপুস্তক ১:১.

২. বাইবেল ঈশ্বর সম্বন্ধে কী বলে এবং এটি আমাদের কী করতে উৎসাহ দেয়?

ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রশ্নে মানুষ বহু বিভক্ত। অনেকে মনে করে ঈশ্বর এক নৈর্ব্যক্তিক শক্তি। কোটি কোটি ব্যক্তি মৃত পূর্বপুরুষদের উপাসনা করে, বিশ্বাস করে ঈশ্বর এত দূরে যে তিনি দুরভিগম্য। কিন্তু বাইবেল প্রকাশ করে যে সত্য ঈশ্বর হলেন এক প্রকৃত ব্যক্তি যিনি আমাদের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। এইজন্যই এটি আমাদের উৎসাহ দেয় “ঈশ্বরের অন্বেষণ” করতে, বলে: “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।”—প্রেরিত ১৭:২৭.

৩. ঈশ্বরের কোন প্রতিমূর্তি তৈরি করা কেন অসম্ভব?

ঈশ্বরের রূপ কেমন? তাঁর কতিপয় সেবক তাঁর মহিমান্বিত উপস্থিতিকে দর্শনের মাধ্যমে দেখেছেন। এগুলিতে তিনি নিজেকে চিত্রিত করেছেন যেন এক সিংহাসনের উপরে বসে রয়েছেন, বিস্ময়কর দীপ্তি তাঁর থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে। কিন্তু, যারা এরূপ দর্শন দেখেছিলেন কখনই কোন পরিষ্কার মুখমণ্ডলের বর্ণনা দেননি। (দানিয়েল ৭:৯, ১০; প্রকাশিত বাক্য ৪:২, ৩) এর কারণ “ঈশ্বর আত্মা”; তাঁর কোন পার্থিব দেহ নেই। (যোহন ৪:২৪) বাস্তবে, আমাদের সৃষ্টিকর্তার একটি সঠিক পার্থিব প্রতিমূর্তি তৈরি করা অসম্ভব, কারণ “ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই।” (যোহন ১:১৮; যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০) তবুও, বাইবেল ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের অনেক কিছু শেখায়।

সত্য ঈশ্বরের একটি নাম আছে

৪. কয়েকটি অর্থপূর্ণ উপাধি কী যা বাইবেলে ঈশ্বরের প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছে?

বাইবেলে, সত্য ঈশ্বরকে শনাক্ত করা হয়েছে এই অভিব্যক্তিগুলি দ্বারা যেমন “সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর,” ‘পরাৎপর,’ “সৃষ্টিকর্ত্তা,” “শিক্ষক,” “হে স্বামিন্‌,” এবং “যুগপর্য্যায়ের রাজা।” (আদিপুস্তক ১৭:১; গীতসংহিতা ৫০:১৪; উপদেশক ১২:১; যিশাইয় ৩০:২০; প্রেরিত ৪:২৪; ১ তীমথিয় ১:১৭) এই উপাধিগুলির উপরে চিন্তা করা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান বাড়াতে আমাদের সাহায্য করতে পারে।

৫. ঈশ্বরের নাম কী এবং ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীতে তা কত বার ব্যবহার করা হয়েছে?

যদিও, ঈশ্বরের এক অদ্বিতীয় নাম রয়েছে যা শুধু ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীতে প্রায়, ৭,০০০ বার দেখতে পাওয়া যায়—তাঁর যে কোন উপাধির চেয়ে বেশি। প্রায় ১,৯০০ বছর আগে, যিহূদীরা কুসংস্কারবশত এই ঐশিক নাম উচ্চারণ বন্ধ করে দিয়েছিল। বাইবেলের ইব্রীয় ভাষা লিখিত হয়েছিল স্বরবর্ণ ছাড়াই। তাই, নির্ভুলভাবে জানার কোন উপায় নেই যে মোশি, দায়ূদ, অথবা প্রাচীনকালের অন্যান্যেরা কিভাবে সেই চারটি ব্যঞ্জনবর্ণকে (יהוה) উচ্চারণ করতেন যা দিয়ে সেই ঐশিক নাম গঠিত হত। কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি ধারণা দেন যে ঈশ্বরের নামকে হয়ত “ইয়াওয়ে” বলে উচ্চারণ করা হত, কিন্তু তারা নিশ্চিত হতে পারেন না। “যিহোবা” এই উচ্চারণ বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং অন্যান্য বহু ভাষায় এর সদৃশ শব্দ বর্তমানে ব্যাপকরূপে গৃহীত।—কিং জেমস্‌ ভারসন যাত্রাপুস্তক ৬:৩ এবং যিশাইয় ২৬:৪ পদ দেখুন।

ঈশ্বরের নাম কেন আপনার ব্যবহার করা উচিত

৬. গীতসংহিতা ৮৩:১৮ পদ যিহোবা সম্পর্কে কী বলে এবং কেন আমরা তাঁর নাম ব্যবহার করব?

ঈশ্বরের অদ্বিতীয় নাম, যিহোবা, তাঁকে অন্য সকল দেবতাদের থেকে পৃথক করতে সাহায্য করে। এই কারণেই ঐ নাম এত বারবার বাইবেলে দেখা যায়, বিশেষত এর ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীতে। বহু অনুবাদকই সেই ঐশিক নাম ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু গীতসংহিতা ৮৩:১৮ পদ স্পষ্টভাবে বলে: “তুমি, যাঁহার নাম সদাপ্রভু, [“যিহোবা,” NW] একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” তাই আমরা যখন ঈশ্বরের সম্বন্ধে বলি তাঁর ব্যক্তিগত নাম ব্যবহার করা আমাদের জন্য যথোপযুক্ত।

৭. যিহোবা নামের অর্থ ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়?

এই নাম যিহোবা একটি ইব্রীয় ক্রিয়াপদের রূপ যার অর্থ “অস্তিদুত্ব আনা।” তাই, ঈশ্বরের নামের অর্থ “তিনি অস্তিদুত্ব আনেন।” যিহোবা ঈশ্বর এইভাবে নিজেকে মহান উদ্দেশ্যকারী রূপে শনাক্ত করেন। তিনি সর্বদাই তাঁর উদ্দেশ্যসকল বাস্তবে পরিণত করেন। শুধুমাত্র সত্য ঈশ্বরই যথার্থই এই নাম ধারণ করতে পারেন, কারণ মানুষ কখনই নিশ্চিত হতে পারে না যে তাদের পরিকল্পনা সফল হবেই। (যাকোব ৪:১৩, ১৪) একমাত্র যিহোবাই বলতে পারেন: “আমার মুখনির্গত বাক্য তেমনি হইবে; . . . যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।”—যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.

৮. মোশির মাধ্যমে যিহোবা কোন্‌ উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন?

ইব্রীয় কুলপতিগণ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোব প্রত্যেকেই “যিহোবার নামে” ডেকেছিলেন, কিন্তু তারা সেই ঐশিক নামের পূর্ণ অর্থ জানতেন না। (আদিপুস্তক ২১:৩৩, NW; ২৬:২৫; ৩২:৯; যাত্রাপুস্তক ৬:৩) যখন যিহোবা পরে তাদের বংশধর, ইস্রায়েলীয়দের, মিশরে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার এবং তাদের এক ‘দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ’ দেওয়ার তাঁর উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করেছিলেন, তা হয়ত অসম্ভব মনে হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৭) তবুও, ঈশ্বর তাঁর নামের চিরস্থায়ী অর্থের উপরে জোর দিয়েছিলেন তাঁর ভাববাদী মোশিকে এই বলে: “তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে এই কথা বলিও, ‘যিহোবা [সদাপ্রভু], তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাদের নিকদুট আমাকে পাঠাইয়াছেন; আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী, এবং এতদ্দ্বারা আমি পুরুষে পুরুষে স্মরণীয়।”—যাত্রাপুস্তক ৩:১৫.

৯. ফরৌণ যিহোবাকে কী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছিলেন?

প্রান্তরে যিহোবাকে উপাসনা করতে ইস্রায়েলীয়দের ছেড়ে দেওয়ার জন্য মিশরের রাজা, ফরৌণকে মোশি বলেছিলেন। কিন্তু ফরৌণ, যিনি নিজেই এক দেবতা রূপে পরিচিত ছিলেন ও যিনি অন্য মিস্রীয় দেবতাদের উপাসনা করতেন, উত্তর দিয়েছিলেন: “যিহোবা কে, যে আমি তার কথা শুনে ইস্রায়েলকে ছেড়ে দেব? আমি যিহোবাকে জানি না, ইস্রায়েলকেও ছেড়ে দেব না।”—যাত্রাপুস্তক ৫:১, ২, NW.

১০. প্রাচীন মিশরে, ইস্রায়েলীয়দের সাথে জড়িত তাঁর উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করতে যিহোবা কী কাজ করেছিলেন?

১০ তখন যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছিলেন, তাঁর নামের অর্থের সাথে সঙ্গতি রেখে। প্রাচীন মিস্রীয়দের উপরে তিনি দশটি আঘাত এনেছিলেন। শেষ আঘাত মিশরের সমস্ত প্রথমজাতকের উপরে মৃত্যু এনেছিল, গর্বিত ফরৌণের পুত্র সমেত। তখন মিস্রীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের ছেড়ে দিতে আগ্রহী হয়েছিল। কিন্তু, কিছু মিস্রীয় যিহোবার শক্তিতে এতই অভিভূত হয়েছিল যে তারা মিশর ত্যাগ করতে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যোগ দেয়।—যাত্রাপুস্তক ১২:৩৫-৩৮.

১১. লোহিত সাগরে যিহোবা কোন্‌ অলৌকিক কাজ করেছিলেন এবং তাঁর শত্রুরা কী স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল?

১১ একগুঁয়ে ফরৌণ এবং তার সৈন্যদল, তাদের ৬০০ যুদ্ধরথ নিয়ে, তার ক্রীতদাসদের পুনরাধিকার করতে পশ্চাতে ধাবিত হয়েছিলেন। যখন মিস্রীয়েরা কাছে এসে পড়েছিল, ঈশ্বর অলৌকিকভাবে লোহিত সাগরকে বিভক্ত করেছিলেন যাতে ইস্রায়েলীয়েরা শুষ্ক ভূমির উপর দিয়ে পার হতে পারে। যখন পশ্চাৎ ধাবনকারীরা সমুদ্রতলে প্রবেশ করেছিল, যিহোবা “তাদের রথের চাকা সরালেন, তাতে তারা খুব কষ্টে রথ চালাল।” মিস্রীয় যোদ্ধারা চীৎকার করে উদুঠছিল: “চল, আমরা ইস্রায়েলের সামনে থেকে পালিয়ে যাই, কারণ যিহোবা তাদের পক্ষে মিস্রীয়দের বিপক্ষে যুদ্ধ করছেন।” কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। জলের বিশাল প্রাচীর ভেঙ্গে পড়েছিল এবং “ফরৌণের সমস্ত সৈন্যদলের যুদ্ধরথ ও অশ্বারূঢ়দেরকে আচ্ছাদন করল।” (যাত্রাপুস্তক ১৪:২২-২৫, ২৮ NW) এইভাবে যিহোবা তাঁর নিজের জন্য এক মহান নাম কিনেছিলেন এবং সেই ঘটনা আজ পর্যন্ত ভুলে যাওয়া হয়নি।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২:৯-১১.

১২, ১৩. (ক) বর্তমানে ঈশ্বরের নাম আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে? (খ) লোকেদের এখনই কী শেখা প্রয়োজন এবং কেন?

১২ ঈশ্বর তাঁর নিজের জন্য যে নাম কিনেছিলেন বর্তমানে আমাদের জন্য তার গভীর অর্থ রয়েছে। তাঁর নাম, যিহোবা, এক নিশ্চয়তাস্বরূপ স্থাপিত যে, যা কিছু তিনি উদ্দেশ্য করেছেন তা সত্য হওয়া তিনি ঘটাবেনই। এটি অন্তর্ভুক্ত করে তাঁর আদি উদ্দেশ্যকে সম্পাদন করা যে আমাদের পৃথিবী এক পরমদেশ হোক। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:৮) এই কারণেই, তাঁর সার্বভৌমত্বের সকল বিরোধীদের তিনি নিশ্চিহ্ন করবেন, কারণ তিনি বলেছেন: “তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই যিহোবা।” (যিহিষ্কেল ৩৮:২৩, NW) তারপর ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন তাঁর উপাসকদের ধার্মিকতার এক নূতন পৃথিবীতে পরিত্রাণ দিতে।—২ পিতর ৩:১৩.

১৩ সবাই যারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ চায়, বিশ্বাসের সাথে তাঁর নামে অবশ্যই ডাকতে শিখবে। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “যে কেউ যিহোবার নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাবে।” (রোমীয় ১০:১৩, NW) হ্যাঁ, যিহোবা নামটি অতিশয় অর্থপূর্ণ। যিহোবাকে আপনার ঈশ্বর এবং মুক্তিদাতা হিসাবে ডাকা অনন্ত সুখের প্রতি আপনাকে পরিচালিত করতে পারে।

সত্য ঈশ্বরের গুণাবলি

১৪. ঈশ্বরের কোন্‌ মৌলিক গুণগুলির উপরে বাইবেল আলোকপাত করে?

১৪ মিশর থেকে ইস্রায়েলের মুক্তির ঘটনা অধ্যয়ন আলোকপাত করে চারটি মৌলিক গুণাবলিকে, যা ঈশ্বর নিখুঁত ভারসাম্যতায় রক্ষা করেন। ফরৌণের সাথে তাঁর আচরণ তাঁর বিস্ময়কর শক্তিকে প্রকাশ করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ৯:১৬) সেই জটিল পরিস্থিতিকে ঈশ্বর যে কর্তৃত্বব্যঞ্জক উপায়ে পরিচালনা করেছিলেন তা তাঁর অতুলনীয় প্রজ্ঞাকে দেখিয়েছিল। (রোমীয় ১১:৩৩) তাঁর ন্যায়বিচার তিনি প্রকাশ করেছিলেন একগুঁয়ে বিরোধীবর্গের ও তাঁর প্রজাদের উপর অত্যাচারীদের উপরে শাস্তি বন্টন করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) ঈশ্বরের এক সর্বোৎকৃষ্ট গুণ প্রেম। অব্রাহামের বংশধরদের সম্পর্কে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করার দ্বারা যিহোবা অনন্যসাধারণ প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৮) তিনি কিছু মিস্রীয়কে মিথ্যা দেবতাদের ত্যাগ করে ও একমাত্র সত্য ঈশ্বরের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রচুর পরিমাণে উপকৃত হতে অনুমতি দিয়েও প্রেম দেখিয়েছিলেন।

১৫, ১৬. কী কী উপায়ে ঈশ্বর প্রেম প্রদর্শন করেছেন?

১৫ যখন আপনি বাইবেল পড়বেন, আপনি লক্ষ্য করবেন যে প্রেম হচ্ছে ঈশ্বরের মুখ্য গুণ এবং বহুভাবে তিনি তা প্রদর্শন করেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রেমবশতই তিনি এক সৃষ্টিকর্তা হয়েছিলেন ও প্রথমে জীবনের আনন্দ বন্টন করে নিয়েছিলেন আত্মিক প্রাণীদের সঙ্গে। সেই কোটি কোটি স্বর্গদূতেরা ঈশ্বরকে প্রেম করে ও তাঁর প্রশংসা করে। (ইয়োব ৩৮:৪, ৭; দানিয়েল ৭:১০) ঈশ্বর আরও প্রেম দেখিয়েছিলেন পৃথিবী সৃষ্টি করে ও সুখী মানব অস্তিত্বের জন্য একে প্রস্তুত করে।—আদিপুস্তক ১:১, ২৬-২৮; গীতসংহিতা ১১৫:১৬.

১৬ ঈশ্বরের প্রেম থেকে কত উপায়ে যে আমরা উপকৃত হই তা বলে শেষ করা যায় না। যেমন, ঈশ্বর প্রেম সহকারে এমন এক বিস্ময়কর উপায়ে আমাদের দেহকে তৈরি করেছেন যে আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি। (গীতসংহিতা ১৩৯:১৪) এইভাবে তাঁর প্রেম প্রদর্শিত হয় যে তিনি “আকাশ হইতে . . . বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে [আমাদের] হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৭) ঈশ্বর এমনকি “ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৫) প্রেম আরও আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে পরিচালিত করে আমাদের ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান অর্জন করতে ও তাঁর উপাসকরূপে আনন্দের সঙ্গে তাঁর পরিচর্যা করায় সাহায্য করে। বাস্তবিকই, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বের আরও বহু দিক রয়েছে।

“এক দয়াশীল ও করুণাময় ঈশ্বর”

১৭. ঈশ্বর সম্বন্ধে যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭ পদে আমরা কী শিখি?

১৭ ইস্রায়েলীয়েরা লোহিত সাগর পার হয়ে আসার পরেও, ঈশ্বরকে আরও ভালভাবে জানার তখনও তাদের প্রয়োজন ছিল। মোশি এই প্রয়োজন উপলব্ধি করেন ও প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়া থাকি, তবে বিনয় করি, আমি যেন তোমাকে জানিয়া তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই, এই জন্য আমাকে তোমার পথ সকল জ্ঞাত কর।” (যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৩) মোশি আরও ভালভাবে ঈশ্বরকে জেনেছিলেন ঈশ্বরের নিজ ঘোষণা শোনার দ্বারা: “যিহোবা, যিহোবা, দয়াশীল ও করুণাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌; সহস্র সহস্র পুরুষ পর্য্যন্ত দয়ারক্ষক, ভুলত্রুটির, অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী; কিন্তু তিনি অবশ্যই শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেবেন না।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭, NW) ঈশ্বর তাঁর প্রেমের ভারসাম্যতা বজায় রাখেন ন্যায়বিচারের সাথে, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত পাপীদের তাদের অন্যায় কাজের প্রতিফল থেকে রক্ষা না করে।

১৮. যিহোবা দয়াশীল তা কিভাবে প্রমাণ করেছেন?

১৮ যেমন মোশি শিখেছিলেন, যিহোবা দয়া দেখান। কোন দয়াশীল ব্যক্তি, যারা কষ্ট পাচ্ছে তাদের প্রতি সমবেদনা বোধ করেন এবং পরিত্রাণ আনতে চেষ্টা করেন। এইভাবে ঈশ্বর মানবজাতির প্রতি করুণা দেখিয়েছেন দুঃখকষ্ট, রোগব্যাধি এবং মৃত্যু থেকে চিরস্থায়ী পরিত্রাণের জন্য ব্যবস্থা করে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫) এই দুষ্ট জগৎ পরিস্থিতির জন্য ঈশ্বরের উপাসকদের চরম দুর্দশার অভিজ্ঞতা হতে পারে, অথবা তারা হয়ত নির্বুদ্ধিতার কাজ করে ঝামেলায় পড়তে পারে। কিন্তু যদি তারা নম্রভাবে সাহায্যের জন্য যিহোবার প্রতি ফেরে, তিনি তাদের সান্ত্বনা ও সাহায্য দেবেন। কেন? কারণ তাঁর উপাসকদের জন্য তিনি স্নেহশীলতায় সহানুভূতি দেখান।—গীতসংহিতা ৮৬:১৫; ১ পিতর ৫:৬, ৭.

১৯. আমরা কেন বলতে পারি যে ঈশ্বর করুণাময়?

১৯ কর্তৃত্বে রয়েছেন এমন বহু ব্যক্তি অন্যদের সাথে রূঢ় আচরণ করে। বিপরীতে, তাঁর নম্র সেবকদের প্রতি যিহোবা কত করুণাময়! যদিও বিশ্বজগতে সর্বাধিক কর্তৃত্বের অধিকারী, তিনি সাধারণত সমগ্র মানবজাতির প্রতি লক্ষণীয়রূপে কৃপা দেখিয়ে থাকেন। (গীতসংহিতা ৮:৩, ৪; লূক ৬:৩৫) যিহোবা ব্যক্তিগতভাবেও মানুষের প্রতি করুণাময়, অনুগ্রহের জন্য তাদের বিশেষ মিনতিরও উত্তর দেন। (যাত্রাপুস্তক ২২:২৬, ২৭; লূক ১৮:১৩, ১৪) অবশ্যই, যে কোন ব্যক্তির প্রতিই ঈশ্বর অনুগ্রহ অথবা দয়া দেখাতে বাধ্য নন। (যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৯) সুতরাং, ঈশ্বরের দয়া ও করুণার জন্য আমাদের গভীর উপলব্ধিবোধ প্রকাশের প্রয়োজন আছে।—গীতসংহিতা ১৪৫:১, ৮.

ক্রোধে ধীর, পক্ষপাতহীন এবং ধার্মিক

২০. কী দেখায় যে যিহোবা দুক্রাধে ধীর ও পক্ষপাতহীন উভয়ই?

২০ যিহোবা দুক্রাধে ধীর। তবুও, এর অর্থ নয় যে তিনি কার্যে হস্তক্ষেপ করেন না, কারণ তিনি তা করেছিলেন লোহিত সাগরে উদ্ধত ফরৌণ ও তার সৈন্যবাহিনীকে ধ্বংস করে। যিহোবা পক্ষপাতহীনও। তাই, তাঁর অনুগ্রহের ব্যক্তি, ইস্রায়েলীয়েরা, তাদের ক্রমাগত অন্যায় কাজের জন্য অবশেষে তাঁর অনুগ্রহ হারিয়েছিল। ঈশ্বর সকল জাতির লোক থেকে তাঁর উপাসকদের গ্রহণ করেন, কিন্তু শুধু তাদেরই যারা তাঁর ধার্মিক পথ সকল মেনে চলে।—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.

২১. (ক) প্রকাশিত বাক্য ১৫:২-৪ পদ ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়? (খ) কী আমাদের জন্য সহজ করবে ঈশ্বর যা সঠিক বলেন তা করতে?

২১ বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য পুস্তক ঈশ্বরের “ধর্ম্মক্রিয়া” সম্বন্ধে শেখার গুরুত্বের উপরে আলোকপাত করে। এটি আমাদের বলে যে স্বর্গীয় প্রাণীরা গান করে: “মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু [“যিহোবা,” NW] ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্‌; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে যুগপর্য্যায়ের রাজন্‌! হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], কে না ভীত হইবে? এবং তোমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু, কেননা সমস্ত জাতি আসিয়া তোমার সম্মুখে ভজনা করিবে, কেননা তোমার ধর্ম্মক্রিয়া সকল প্রকাশিত হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৫:২-৪) তিনি যা ন্যায়সম্মত বলেন তা মেনে চলে আমরা যিহোবার প্রতি উপকারজনক ভয় অথবা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং প্রেম সম্বন্ধে নিজেদের স্মরণ করিয়ে দিলে এটি সহজ হয়ে যায়। তাঁর সকল আজ্ঞা আমাদের মঙ্গলের জন্যই।—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

“আমাদের ঈশ্বর যিহোবা একই”

২২. যারা বাইবেলকে গ্রহণ করে তারা কেন কোন ত্রিত্বের উপাসনা করে না?

২২ প্রাচীন মিস্রীয়েরা বহু দেবতাদের উপাসনা করত, কিন্তু যিহোবা হলেন “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্‌যোগী ঈশ্বর।” (যাত্রাপুস্তক ২০:৫) মোশি ইস্রায়েলীয়দের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে “আমাদের ঈশ্বর যিহোবা একই যিহোবা।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪, NW) যীশু খ্রীষ্ট ঐ কথাগুলির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। (মার্ক ১২:২৮, ২৯) সুতরাং, যারা বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে গ্রহণ করে তারা একের মধ্যে তিন ব্যক্তি অথবা দেবতা অন্তর্ভুক্ত এরূপ কোন ত্রিত্বের উপাসনা করে না। বাস্তবে, “ত্রিত্ব” শব্দটি বাইবেলে কোথাও পাওয়া যায় না। সত্য ঈশ্বর একজনই ব্যক্তি, যীশু খ্রীষ্ট থেকে পৃথক। (যোহন ১৪:২৮; ১ করিন্থীয় ১৫:২৮) ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা কোন ব্যক্তি নয়। এটি যিহোবার সক্রিয় শক্তি, সর্বশক্তিমান দ্বারা ব্যবহৃত হয় তাঁর উদ্দেশ্য সকল সাধনের জন্য।—আদিপুস্তক ১:২; প্রেরিত ২:১-৪, ৩২, ৩৩; ২ পিতর ১:২০, ২১.

২৩. (ক) ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেম কিভাবে বৃদ্ধি পাবে? (খ) ঈশ্বরের প্রতি প্রেম সম্বন্ধে যীশু কী বলেছিলেন এবং খ্রীষ্ট সম্পর্কে আমাদের কী শেখা প্রয়োজন?

২৩ যখন আপনি চিন্তা করেন যিহোবা কত বিস্ময়কর, আপনি কি স্বীকার করেন না যে তিনি আপনার উপাসনার যোগ্য? যখন আপনি তাঁর বাক্য, বাইবেল অধ্যয়ন করেন, আপনি আরও ভালভাবে তাঁকে জানবেন ও শিখবেন আপনার কাছ থেকে তিনি কী চান আপনার চিরস্থায়ী মঙ্গল এবং সুখের জন্য। (মথি ৫:৩, ৬) সেইসঙ্গে, ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেম বৃদ্ধি পাবে। এটি উপযুক্ত, কারণ যীশু বলেছিলেন: “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করবে।” (মার্ক ১২:৩০, NW) স্পষ্টতই, ঈশ্বরের প্রতি যীশুর এরূপ প্রেম ছিল। কিন্তু বাইবেল যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কে কী প্রকাশ করে? যিহোবার উদ্দেশ্যের মধ্যে তাঁর ভূমিকা কী?

আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন

ঈশ্বরের নাম কী ও কত বার তা ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীতে ব্যবহার করা হয়েছে?

কেন আপনার ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা উচিত?

যিহোবা ঈশ্বরের কোন্‌ গুণগুলি বিশেষভাবে আপনার মর্মস্পর্শ করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তাকে কত উত্তমরূপে আপনি জানেন?