সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার পিতামাতার হৃদয়কে আনন্দিত করা

আপনার পিতামাতার হৃদয়কে আনন্দিত করা

অধ্যায় ১২

আপনার পিতামাতার হৃদয়কে আনন্দিত করা

আমরা এখনও খুবই ছোট আছি, প্রাপ্তবয়স্ক হতে চলেছি অথবা এখনই এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা স্ত্রীতে পরিণত হয়েছি, যাই হই আমরা সকলেই কারুর না কারুর ছেলেমেয়ে। শিশুকাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর অবধি আমাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই প্রতি কৃত যত্ন, কাজ, ব্যয়িত অর্থ এবং আত্ম-ত্যাগের প্রচেষ্টার মূল্য নির্ধারণ করা কষ্টকর। বাস্তবে, পিতামাতারা আমাদের প্রত্যেককে এমন কিছু দিয়েছেন যার প্রতিদান দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, আমরা অন্য যে কোন জিনিসের জন্য ঋণী থাকি না কেন, আমাদের জীবনের জন্য আমরা নিশ্চয়ই তাদের কাছে ঋণী। তাদের ব্যতিরেকে আমরা হতে পারতাম না। এই বাস্তব সত্যটিই যথেষ্ট কারণ হবে, আমাদের এই ঐশিক আজ্ঞাটি পালন করার জন্য: “‘তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও,’—এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা—‘যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও।’”—ইফিষীয় ৬:২, ৩.

সকল জীবনের প্রকৃত উৎসরূপে যেমন আমরা প্রথমেই স্রষ্টার কাছে ঋণী, আমাদের পিতামাতার প্রতিও আমরা যে ঋণী তা আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করা দরকার। তারা আমাদের যা দিয়েছেন তার পরিবর্তে আমরা তাদের কী দিতে পারি? ঈশ্বরের পুত্র বলেন যে জগতের সমস্ত সম্পত্তিও জীবন কিনতে সমর্থ নয় কারণ আপনি জীবনের উপর দামের একটা লেবেল লাগাতে পারেন না। (মার্ক ৮:৩৬, ৩৭; গীতসংহিতা ৪৯:৬-৮) ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে: “তোমরা কাহারও কিছুই ধারিও না, কেবল পরস্পর প্রেম ধারিও।” (রোমীয় ১৩:৮) আমরা যতদিন বেঁচে থাকব এবং তারাও যতদিন বেঁচে থাকবেন, আমরা পিতামাতার কাছে কিছু ধার করেছি এই হিসাবে আমাদের বিশেষ উপায়ে তাদের প্রতি ভালবাসা দেখাতে প্ররোচিত হওয়া দরকার। তারা যেমন আমাদের জীবন দিয়েছেন ঠিক সেইরূপে আমরা যেহেতু তাদের জীবন দিতে পারি না, তাই তাদের আমরা এমন কিছু দিতে পারি যা তাদের বেঁচে থাকাকে অর্থবহ করে তুলবে। তাদের আনন্দ ও গভীর তৃপ্তিবোধে আমরা সাহায্য করতে পারি। যা অন্য কেউ করতে সক্ষম নয় কিন্তু আমরাই বিশেষ উপায়ে তা করতে পারি, কারণ আমরা তাদেরই ছেলেমেয়ে।

হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫ পদ যেমন বলে: “ধার্ম্মিকের পিতা মহা-উল্লাসিত হন, জ্ঞানবানের জন্মদাতা তাহাতে আনন্দ করেন। তোমার পিতামাতা আহ্লাদিত হউন, তোমার জননী উল্লাসিতা হউন।” ছেলেমেয়েরা যা কিছুই করে তাতে গর্ব বোধ করা ও আনন্দিত হওয়ার ইচ্ছাটি পিতামাতাদের কাছে স্বাভাবিক। আমাদের পিতামাতার ক্ষেত্রেও কি তাই?

আমরা তাদের স্থানকে প্রকৃতই সম্মান দিই ও তাদের উপদেশ শুনি কি না তার উপর সেটি অনেকটা নির্ভর করে। যারা এখনও ছোট আছে, তাদের জন্য ঈশ্বরের উপদেশ হল: “সন্তানেরা, তোমরা সর্ব্ববিষয়ে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহাই প্রভুতে তুষ্টিজনক।” (কলসীয় ৩:২০) “সর্ব্ববিষয়ে”-এর অর্থ এই নয় যে ঈশ্বরের বাক্যের বিপরীত বিষয়গুলি দাবি করতে পিতামাতার অধিকার আছে, কিন্তু এটি এও প্রদর্শন করে যে ছোটবেলায় আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিচালনা করা হল তাদের দায়িত্ব।—হিতোপদেশ ১:৮.

তোমার কি এখন বয়স অল্প? একদিন হয়ত তুমি পিতা বা মাতা হবে। তুমি কি এমন সন্তান চাইবে যারা তোমাকে সম্মান করবে, অথবা যারা অবজ্ঞা করে, হয়ত শুনছে বলে ভান করে কিন্তু চোখের আড়াল হলেই অবাধ্য হয়? তা আনন্দ আনে না, কিন্তু হিতোপদেশ ১৭:২৫ পদ বলে: “হীন বুদ্ধি পুত্ত্র পিতার বিরক্তি জন্মায় এবং জন্মদাত্রীর বেদনাদায়ক।” (দ্যা বাইবেল ইন লিভিং ইংলিশ) তোমার পিতামাতাকে আনন্দিত করতে যেমন তোমার বিশেষ ক্ষমতা আছে ঠিক সেইভাবে যে কোন ব্যক্তির চাইতে, তুমিই তাদের জন্য গভীর দুঃখ ও নিরাশা আনতে পার। তোমার আচরণই নির্ধারণ করবে তা কিরূপ হবে।

প্রজ্ঞা অর্জন করতে সময় লাগে

প্রজ্ঞা অর্জন করতে বয়স হল এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা কমবয়সীদের উপলব্ধি করা ভাল। তুমি কি এখন ১০ বছরের? তুমি এখন দেখতে পাচ্ছ যে, তোমার পাঁচ বছরের বয়সের থেকে তুমি এখন বেশি জান, তাই নয় কি? তুমি কি ১৫ বছরের? তুমি ১০ বছর বয়সে যা জানতে তার থেকে এখন বেশি জান, তাই নয়? তুমি কি ২০ বছরে পা দেবে? তুমি ১৫ বছরে যা জানতে তার থেকে এখন নিশ্চয় বেশি জান বলে উপলব্ধি কর। অতিবাহিত বছরগুলি তোমাকে প্রজ্ঞাবান করেছে তা দেখা সহজ কিন্তু সম্মুখে তাকিয়ে এই সত্যটি স্বীকার করা কষ্টকর। এক কমবয়স্ক ব্যক্তি যতই নিজেকে প্রজ্ঞাবান মনে করুক না কেন, সেই ছেলেকে বা মেয়েকে এটি স্বীকার করতেই হবে যে ভবিষ্যৎ আরও বেশি প্রজ্ঞা আনতে পারে ও আনবেই।

এর মধ্যে কী বিষয় আছে? তা হল, পিতামাতারা যেহেতু তোমার থেকে বড় তাই তাদের অভিজ্ঞতা তোমার থেকে বেশি, জীবনের সমস্যার মোকাবিলা করতে যুক্তিসঙ্গতরূপেই তোমার থেকে তারা বেশি বিজ্ঞ। বহু কমবয়সী ব্যক্তিদের পক্ষে এটি স্বীকার করা কঠিন। তারা হয়ত বয়স্ক ব্যক্তিদের “সেকেলে” বলে সম্বোধন করতে পারে। কেউ কেউ হতে পারে, কিন্তু সকলে হয় না, ঠিক যেমন কেউ কেউ দায়িত্বহীন হলেও সমস্ত কমবয়সী ব্যক্তিরাই দায়িত্বহীন হয় না। কমবয়স্কদের বড়দের থেকে নিজেদের বিজ্ঞ মনে করা কিছু অস্বাভাবিক নয়। ইস্রায়েলের এক রাজা এই সাঙ্ঘাতিক ভুলটি করেন, যার জন্য আসে ধ্বংসাত্মক ফলাফল। যখন ৪১ বছর বয়সে রহবিয়াম তার পিতা শলোমনের সিংহাসনে রাজা হিসাবে বসেন, লোকেরা অনুরোধ করে যে তাদের ভার যেন লাঘব করা হয়। তখন রহবিয়াম এই সম্পর্কে বৃদ্ধদের সাথে আলোচনা করেন যারা তাকে মৃদু ও দয়ালু হতে মন্ত্রণা দেন। তারপর তিনি যুবকদের কাছে যান যারা তাকে আরও ভার চাপাতে বলে। তিনি তাদের মন্ত্রণা গ্রহণ করেন। ফলাফল? দ্বাদশ বংশের মধ্যে দশটি বংশ বিদ্রোহ করে, রহবিয়ামের জন্য অবশিষ্ট থাকে মাত্র তার রাজ্যের এক ষষ্ঠমাংশ। যুবকেরা নয়, কিন্তু বয়স্করাই বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিলেন। “প্রাচীনদের নিকটে প্রজ্ঞা আছে, দীর্ঘায়ু বুদ্ধিসমন্বিত।”—ইয়োব ১২:১২; ১ রাজাবলি ১২:১-১৬; ১৪:২১.

যেহেতু তোমার পিতামাতা আর যুবক-যুবতী নেই তাই তাদের পরামর্শকে সেকেলে মনে করবে না। পরিবর্তে, যেমন ঈশ্বরের বাক্য বলে: “তোমার জন্মদাতা পিতার কথা শুন, তোমার মাতা বৃদ্ধা হইলে তাঁহাকে তুচ্ছ করিও না।” বয়সের মর্যাদা আছে। “তুমি পক্ককেশ প্রাচীনের সম্মুখে উঠিয়া দাঁড়াইবে, বৃদ্ধ লোককে সমাদর করিবে, ও আপন ঈশ্বরের প্রতি ভয় রাখিবে; আমি সদাপ্রভু।” সত্য যে বহু যুবক-যুবতী এই আজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে। কিন্তু অবজ্ঞা করা আনন্দ আনেনি—তাদের জন্যও আনেনি এবং তাদের পিতামাতাদের জন্যও নিশ্চয়ই আনেনি।—হিতোপদেশ ২৩:২২; লেবীয় পুস্তক ১৯:৩২.

তোমার অংশটি কর

এর কোন অন্যথা নেই—তুমি যা কর অন্যদের উপরে তার প্রভাব পড়েই। যদি পরিবারের একটি সদস্য কষ্ট পায় তাহলে সকলেই বিচলিত হয়। আবার যদি একজন অভিযোগকারী বা বিদ্রোহী হয় তাহলে সমস্ত পরিবারের শান্তি হরণ হয়। সুখী পরিবার গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেকের নিজের অংশটি করা দরকার।—তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১২:২৬.

১০ ইতিবাচক, গঠনমূলক বিষয়গুলি তুমি করতে পার। পরিবারের যত্ন নিতে পিতামাতারা খুব পরিশ্রম করেন। তুমি যদি ছোট হও, ঘরে বাস কর তাহলে তুমি সাহায্য করতে পার। জীবনের অধিকাংশ সময় কাজেতেই অতিবাহিত হয়। কিছু লোকে এই সম্পর্কে অভিযোগ করে। কিন্তু তুমি যদি ভাল করে কাজ করতে শেখ এবং উত্তম অভিপ্রায় নিয়েই সেটি কর, তাহলে তা প্রকৃত তৃপ্তি আনবে। অপরপক্ষে, যে নিজের অংশটি করে না আর আশা করে অপরে তার জন্য সমস্ত কিছু করে দেবে, সে সেই তৃপ্তি যে কী তা কখনই জানতে পারে না, সকলের বিরক্তির কারণ হয়, যেমন বাইবেল বলে, তারা যেন কারুর ‘চক্ষের পক্ষে ধূমের’ মত। (হিতোপদেশ ১০:২৬; উপদেশক ৩:১২, ১৩) তাই বাড়িতে যখন তোমাকে কোন কাজ করতে দেওয়া হয়, সেটি কর এবং ভাল করে কর। আর যদি তুমি প্রকৃতই পিতামাতাকে খুশি করতে চাও তাহলে তারা না বললেও আরও বেশি করে কাজ করে দাও। তুমি সই কাজকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করবে—কারণ তুমি নিজে থেকেই তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তা করেছ।

১১ যদি লোকেরা কোন কমবয়সী ব্যক্তিকে দেখে প্রভাবিত হন তাহলে তারা জিজ্ঞাসা করেন যে সেই ছেলেটি বা মেয়েটি কাদের। যুবক দায়ূদ যখন আশ্চর্যজনক সাহস ও বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন, তখন শৌল সরাসরি জিজ্ঞাসা করেন: “ঐ বালকটী কাহার পুত্ত্র?” (১ শমূয়েল ১৭:৫৫-৫৮) তুমি তোমার পরিবারের নাম বহন কর। তুমি যা কর এবং তুমি যে ধরনের ব্যক্তি তা সেই নামের ও নাম দাতা পিতামাতার প্রতি লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। বহু উপায়ে তুমি পিতামাতার সম্মান আনতে পার—পাড়াপড়শিতে ও তোমার স্কুলে—দয়ালু, সাহায্যকারী হয়ে, সম্মান দেখিয়ে এবং অপরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে। এটি করার দ্বারা তুমি সেই সঙ্গে স্রষ্টার সম্মান কর।—হিতোপদেশ ২০:১১; ইব্রীয় ১৩:১৬.

১২ তোমার সুখের সাথে তোমার পিতামাতার সুখও জড়িত। তোমাকে তাদের শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যই হল তুমি যাতে জীবনের পথ উত্তমরূপে আরম্ভ করতে পার। তাদের সাথে সহযোগিতা কর, তাদের তুমি মহা আনন্দ দেবে, কারণ তারা তোমার মঙ্গল চান। যেমন অনুপ্রাণিত লেখক বিষয়টি এইভাবে প্রকাশ করেন: “বৎস, তোমার চিত্ত যদি জ্ঞানশালী হয়, তবে আমারও চিত্ত আনন্দিত হইবে।” (হিতোপদেশ ২৩:১৫) তোমাকে সঠিক প্রজ্ঞাতে পরিচালনা করার ঈশ্বরের সামনে তাদের দায়িত্বটি যদি তোমার পিতামাতা উপলব্ধি করেন, তাহলে সেই দায়িত্বটি পালন করতে তাদের সাহায্য কর। “পরামর্শ শুন, শাসন গ্রহণ কর, যেন তুমি শেষকালে জ্ঞানবান হও।”—হিতোপদেশ ১৯:২০.

১৩ অনেক সময় তুমি হয়ত মনে কর যে পিতামাতা তোমার কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করছেন বা বাধ্যবাধকতাগুলি অনেক বেশি। শাসন করার ক্ষেত্রে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ নয়। তোমার কোন দিন যদি পরিবার হয়, তাহলে তুমি দেখবে যে তোমারও সেই একই সমস্যা এসেছে। পিতামাতারা যদি বিশেষ কিছু ছেলেমেয়েদের সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করেন বা নেশাকর ওষুধ নেওয়া থেকে রক্ষা করেন অথবা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীসাথীদের সাথে মেলামেশাকে কিছু মাত্রায় সীমিত করেন, তাহলে একটু ভেবে দেখ, যে পিতামাতারা চিন্তাই করেন না তাদের থেকে শাসনরত পিতামাতা থাকা কতই না ভাল! (হিতোপদেশ ১৩:২০; ৩:৩১) তাদের শাসন মান। তোমার উপকার হবে এবং তাদেরও হৃদয়কে আনন্দিত করবে।—হিতোপদেশ ৬:২৩; ১৩:১; ১৫:৫; ইব্রীয় ১২:৭-১১.

১৪ অবশ্যই, ঘরে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যা তোমার সৃষ্ট নয়। কিন্তু তুমি যেরূপে প্রতিক্রিয়া কর তা ঘরের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। বাইবেল পরামর্শ দেয়: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।” (রোমীয় ১২:১৮) তা করা সবসময় সহজ নয়। আমরা সকলেই বিভিন্ন প্রকৃতির। আমরা বিষয়গুলি ভিন্নরূপে দেখি এবং ভিন্নরূপে প্রতিক্রিয়াও করি। মতামত, অভিপ্রায়ের পার্থক্য থাকবেই। হয়ত তোমার ভাই বা বোনের সাথে মত-পার্থক্য হয়েছে। তুমি হয়ত মনে করতে পার যে অপরজন স্বার্থপর। তুমি কী করতে পার?

১৫ কিছু ছেলেমেয়েরা সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে নালিশ করে এবং বাবামায়ের মধ্যে কেউ যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন তা তারা চায়। অথবা বিষয়টিকে তারা নিজের হাতে নিয়ে নেয়, স্বার্থ সাধন করার জন্য মারামারি, ধাক্কাধাক্কি করে। কিন্তু অনুপ্রাণিত হিতোপদেশ বলে: “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে।” (হিতোপদেশ ১৯:১১) কিরূপে? ক্ষমা করে দেওয়ার পরিস্থিতি সম্বন্ধে এটি তাকে বিবেচনা করায়। (হয়ত কাজটি ইচ্ছা করে করা হয়নি।) সে নিজেও কতবার ভুল করেছে সেটি তাকে মনে করিয়ে দেয়। (আর ঈশ্বরের ক্ষমার জন্য সে কতই না কৃতজ্ঞ!) যদিও তার ভাই বা বোন ভুল করেছে, কিন্তু সে রেগে গিয়ে সমস্ত ঘরের শান্তি নষ্ট করলে তার পক্ষে যে আরও ভুল হবে, তা উপলব্ধি করতেও সেটি সাহায্য করবে। যে ব্যক্তির সেই প্রকৃতির অন্তর্দৃষ্টি আছে, হিতোপদেশ তাদের সম্বন্ধে আরও বলে: “আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা।”—আরও দেখুন কলসীয় ৩:১৩, ১৪.

১৬ ঈশ্বর-ভীরু পিতামাতাদের যা আনন্দিত করে মুখ্যত সেটিই যিহোবার হৃদয়কেও আনন্দিত করে। তাদের যা দুঃখিত করে তাঁকেও তাই দুঃখিত করে। (গীতসংহিতা ৭৮:৩৬-৪১) যে সকল পিতামাতা যিহোবার মন জানেন না তাদের সন্তানেরা যদি জগতে জনপ্রিয় হয়, সুনাম কেনে, প্রচুর টাকাপয়সা উপার্জন ইত্যাদি করে তাহলে তারা আনন্দিত হন। কিন্তু, যে সকল পিতামাতার ঈশ্বর যিহোবা, তারা জানেন যে এই জগৎ ও তার অভিলাষ বয়ে যাচ্ছে কিন্তু “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৫-১৭) তাই তাদের সন্তানেরা স্রষ্টার বাধ্য হলে, তাঁর ইচ্ছা পালন ও তাঁর গুণগুলি প্রতিফলিত করলে, তাদের প্রকৃত আনন্দিত করে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়ায় ভাল করলে ঈশ্বর-ভীরু পিতামাতারা যে আনন্দিত হন তা সত্য। কিন্তু যখন স্কুলে বা অন্য কোথাও ছেলেমেয়েদের আচরণ ঈশ্বরের মানের প্রতি বিশ্বস্ততাকে প্রতিফলিত করে ও তাঁকে খুশি করার ইচ্ছাটি প্রকাশ করে তখন তারা আরও বেশি খুশি হন। আর যখন সেই ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও যিহোবার পথে আনন্দিত থাকতে চেষ্টা করে তখন তারা বিশেষভাবে খুশি হন।

পিতামাতাকে যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব

১৭ বড় হওয়ার পর আমরা যদি ঘর ছেড়ে যাই তখন যেন পিতামাতার প্রতি আমাদের চিন্তা শীতল হয়ে না পড়ে। আমরা চাই তারা যেন সারা জীবন আনন্দিত থাকেন। বহু বছর ধরে তারা আমাদের চাহিদাগুলি পূর্ণ করেছেন, অনেক সময় বেশ কিছু স্বার্থ ত্যাগ করেই। আমরা যে উপলব্ধি করি তা এখন কিভাবে দেখাতে পারি?

১৮ ঈশ্বরীয় আবশ্যকতাটি আমরা মনে রাখতে পারি: “পিতা ও মাতাকে সমাদর করিও।” (মথি ১৯:১৯) আমরা হয়ত ব্যস্ত থাকতে পারি। কিন্তু আমাদের এটি উপলব্ধি করা উচিৎ যে আমাদের খবরগুলি শোনা ও আমাদের সাক্ষাৎ তাদের কাছে অনেক অর্থ রাখে।

১৯ বছর অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে “সমাদর” অন্যান্য উপায়েও করা যেতে পারে। যদি বস্তু সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে তারা আপনার জন্য যা কিছুই করেছেন ও যিহোবার ধার্মিক আবশ্যকতার জন্য উপলব্ধি প্রদর্শন করে সাহায্য করুন। যারা বয়স্ক তাদের সম্পর্কে প্রেরিত পৌল লেখেন: “কিন্তু যদি কোন বিধবার পুত্ত্র কি পৌগিণ থাকে, তবে তাহারা প্রথমতঃ নিজ বাটীর লোকদের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করিতে ও পিতামাতার প্রত্যুপকার করিতে শিক্ষা করুক; কেননা তাহাই ঈশ্বরের সাক্ষাতে গ্রাহ্য।”—১ তীমথিয় ৫:৩, ৪.

২০ “সমাদর” করার মধ্যে পিতামাতাকে বস্তু দিয়ে সাহায্য করা যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তা শাস্ত্র স্পষ্টভাবে বলে। একবার ফরীশীরা যীশুর সম্মুখবর্তী হয় এবং পরম্পরাগত রীতিনীতি মেনে না চলার জন্য তাঁর শিষ্যদের অভিযুক্ত করেন। যীশু প্রত্যুত্তরে বলেন: “তোমরাও আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের আজ্ঞার লঙ্ঘন কর কেন? কারণ ঈশ্বর বলিয়াছেন, “তুমি আপন পিতাকে ও আপন মাতাকে সমাদর করিও;” আর “যে কেহ পিতার কি মাতার নিন্দা করে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে।” কিন্তু তোমরা বলিয়া থাক, যে ব্যক্তি পিতাকে কি মাতাকে বলে, ‘আমা হইতে যাহা দিয়া তোমার উপকার হইতে পারিত, তাহা ঈশ্বরকে দত্ত হইয়ছে,’ সে আপন পিতাকে বা আপন মাতাকে আর সমাদর করিবে না; এইরূপে তোমরা আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের বাক্য নিৰল করিয়াছ।”—মথি ১৫:১-৬.

২১ তাদের টাকাপয়সা বা সম্পত্তি “ঈশ্বরকে দত্ত হইয়াছে” বলে তারা পরম্পরাগত রীতি অনুযায়ী পিতামাতাকে যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব থেকে মুক্ত হত। কিন্তু এই সম্পর্কে যীশু একমত ছিলেন না। বর্তমানে আমাদেরও বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করা উচিৎ। “সমাজ কল্যাণ”-এর জন্য বহু দেশে বয়স্ক পিতামাতাদের চাহিদা কিছুটা মিটে যায়, তা সত্য। কিন্তু সেই ব্যবস্থাটি কি যথেষ্ট? যদি যথেষ্ট না হয় বা সেইরূপ ব্যবস্থা একেবারেই না থাকে, তাহলে সন্তানেরা যারা তাদের পিতামাতাদের সমাদর করেন তারা সেই প্রকৃত অভাবটি পূরণ করতে চেষ্টা করবেন। বাস্তবিক, যাদের প্রয়োজন আছে সেইরূপ বয়স্ক পিতামাতাদের যত্ন নেওয়া হল যেমন প্রেরিত পৌল বলেছেন, “ঈশ্বরীয় ভক্তি” প্রদর্শনের প্রমাণ, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, যিনি হলেন পারিবারিক ব্যবস্থার উদ্ভাবক।

২২ কিন্তু, আমাদের কখনই মনে করা উচিৎ নয় যে পিতামাতাদের বয়সকালে খাদ্য, বস্ত্র, আচ্ছাদন আছে বলে আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। তাদেরও মানসিক ও আত্মিক চাহিদা আছে। তাদের চাই ভালবাসা, ভরসাদায়ক মনোযোগ, অনেক সময় খুব বেশিভাবেই। সারা জীবন ধরে আমাদের এই জানা দরকার, যে কেউ আমাদের ভালবাসে ও আমরা কারুর, আমরা একা নই। বয়স্ক পিতামাতাদের দৈহিক বা মানসিক যে কোন চাহিদাকে সন্তানদের অগ্রাহ্য করা উচিৎ নয়। “যে পিতার প্রতি উপদ্রব করে ও মাতাকে তাড়াইয়া দেয়, সে লজ্জাকর ও অপমানজনক পুত্ত্র।”—হিতোপদেশ ১৯:২৬.

২৩ জীবনের যৌবনকাল থেকে প্রাপ্তবয়স অবধি, সন্তানেরা পিতা-মাতার জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অনেক ছেলেমেয়েরা দুঃখ ও হতাশার কারণ হয়। কিন্তু যদি আপনি পিতামাতার স্থানকে মর্যাদা দেন ও তাদের পরামর্শ শোনেন, আপনি যদি তাদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা এবং প্রীতি দেখান তাহলে আপনি প্রতিদিন তাদের হৃদয়ের আনন্দের উৎস হতে পারেন। হ্যাঁ, “তোমার পিতা ও মাতার আনন্দের কারণ হও, তোমার জননী উল্লাসিত হউক।”—হিতোপদেশ ২৩:২৫, নিউ ইংলিশ বাইবেল।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১. পিতামাতাকে সম্মান করা কেন যথাযথ?

২. পিতামাতার কাছে আমরা ঋণী বোধ করি কেন?

৩. হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫ পদ অনুসারে, সন্তানের কোন্‌ গুণগুলি তার পিতামাতার আনন্দের কারণ হবে?

৪. কলসীয় ৩:২০ পদ সন্তানদের কী করতে নির্দেশ দেয়?

৫. এক কমবয়সী ব্যক্তি তার নিজের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে কী আশা করবে বলে নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন?

৬. কোন্‌ দৃষ্টান্ত দেখায় যে বয়সের সাথে সাথে প্রজ্ঞা আসে?

৭. রাজা রহবিয়মের প্রতি দেওয়া পরামর্শ থেকে প্রজ্ঞা সম্পর্কে আমরা কী শিক্ষা পাই?

৮. পিতামাতাসহ বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি বাইবেল কিরূপ আচরণ করতে উৎসাহ দেয়?

৯. পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একজন যদি অহেতুক অভিযোগ করে বা বিদ্রোহ করে তাহলে পরিবার কিভাবে প্রভাবিত হয়?

১০. ছেলেমেয়েদের পক্ষে উত্তম কাজ করতে শেখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১১. সন্তানের কথা বা আচরণ তার পিতামাতার প্রতি কিরূপে উত্তম প্রভাব আনতে পারে?

১২. সন্তানদের শিক্ষা দিতে পিতামাতার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করা কেন সন্তানদের পক্ষে ভাল?

১৩. পিতামাতার দত্ত বাধ্যবাধকতার প্রতি সঠিক দৃষ্টিকোণ রাখতে সন্তানকে কী সাহায্য করতে পারে?

১৪, ১৫. পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে পরিবারে শান্তি বজায় রাখতে বাইবেলের কোন্‌ নীতির প্রয়োগ সন্তানকে সাহায্য করবে?

১৬. ছেলেমেয়ের কিরূপ আচরণ ঈশ্বর-ভীরু পিতামাতাদের আনন্দিত করে?

১৭-১৯. প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে কিরূপে প্রদর্শন করতে পারেন যে তারা পিতামাতাদের উপলব্ধি করেন?

২০, ২১. (ক) মথি ১৬:১-৬ পদ অনুসারে, পিতামাতাকে সমাদর করার মধ্যে কী জড়িত আছে? (খ) এইরূপে পিতামাতাকে সমাদর করতে একজনকে কি কোন কিছু অব্যাহতি দিতে পারে?

২২. পিতামাতাদের বস্তু ছাড়াও আর কী আমাদের দেওয়া উচিৎ?

২৩. পিতামাতার কাছে সন্তান কিভাবে আনন্দের এক উৎস হতে পারে?