সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার বিবাহের এক উত্তমভিত্তি স্থাপন করা

আপনার বিবাহের এক উত্তমভিত্তি স্থাপন করা

অধ্যায় ২

আপনার বিবাহের এক উত্তমভিত্তি স্থাপন করা

একটি গৃহ, একটি জীবন বা এক বিবাহ, তখনই উত্তম হয় যখন তার ভিত্তি উত্তম হয়। যীশুর দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে একটিতে তিনি দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেন—এক জন ছিল বিজ্ঞ যে তার বাড়ি পাথরের উপর তৈরি করে এবং অপর ব্যক্তিটি ছিল মূর্খ যে তার বাড়ি বালি-মাটির উপর তৈরি করে। যখন এক ঝড় ওঠে, বন্যা আসে ও বাতাস এসে বাড়িতে আঘাত করে, যে বাড়িটি পাথরের উপর তৈরি সেটি ভেঙ্গে পড়ে না, কিন্তু বালির উপর তৈরি বাড়িটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।

কিভাবে বাড়ি তৈরি করতে হয় তা যীশু লোকেদের শেখাচ্ছিলেন না। উত্তম ভিত্তিতে তাদের জীবনকে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তিনি জোর দিচ্ছিলেন। ঈশ্বরের বার্তাবাহকরূপে, তিনি বলেন: “যে কেহ আমার এই সকল বাক্য শুনিয়া পালন করে” সে সেই ব্যক্তির মত যে পাথরের উপরে বাড়ি তৈরি করে। কিন্তু “যে কেহ আমার এই সকল বাক্য শুনিয়া পালন না করে” সে তার মত যে বালির উপরে ঘর তৈরি করে।—মথি ৭:২৪-২৭.

লক্ষ্য করুন যে দুটি ক্ষেত্রেই যীশু শুধুমাত্র বিজ্ঞ পরামর্শ শোনা এবং কি করতে হবে তা জানা সম্বন্ধে বলেননি। সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে বিজ্ঞ পরামর্শ যা বলে তা পালন করা। “এ সকল যখন তোমরা জান, ধন্য তোমরা, যদি এ সকল পালন কর।”—যোহন ১৩:১৭.

বিবাহের ক্ষেত্রে এটি প্রকৃতই সত্য। যদি আমরা আমাদের বিবাহকে পাথররূপ ভিত্তিতে স্থাপন করি তাহলে তা জীবনের কঠিন চাপগুলির সম্মুখীন হতে পারবে। কিন্তু কোথা থেকে এই উত্তম ভিত্তিটি আসতে পারে? বিবাহের স্রষ্টা, যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে। তিনি যখন প্রথম মানব যুগলকে স্বামী ও স্ত্রীরূপে একত্রিত করেন তখনই তিনি বিবাহের সূত্রপাত করেন। তারপর তাদের ভালোর জন্যই তিনি বিজ্ঞ পরামর্শ দেন। এই বিজ্ঞ পরামর্শ অনুসরণ করার উপরেই নির্ভর করবে তাদের চিরন্তন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বা একেবারে ভবিষ্যতহীন জীবন। দুজনেই ঈশ্বরের নির্দেশ সম্বন্ধে জানত, কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাদের স্বার্থপরতার জন্য তারা এই নির্দেশগুলি পালন করতে অসমর্থ হয়। তারা পরামর্শকে উপেক্ষা করা বেছে নেয়, যার ফলে তাদের বিবাহ ও জীবন, বালির উপর তৈরি ঝড়েতে ভেঙ্গে পড়া বাড়ির মত হয়।

যিহোবা ঈশ্বর প্রথম যুগলকে বিবাহে একত্রীত করেন, কিন্তু তিনি বর্তমানে দম্পতিদের জন্য ব্যক্তিগতরূপে বিবাহের ব্যবস্থা করেন না। সুখী বিবাহের জন্য তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ পরামর্শ কিন্তু আজও পাওয়া যায়। যারা বর্তমানে বিবাহ করছেন তাদের প্রত্যেকের উপর নির্ভর করছে যে তারা পরামর্শগুলি কাজে লাগাবেন কি না। ঈশ্বরের বাক্য প্রদর্শনও করে যে ভাবী সঙ্গী সম্পর্কে বিজ্ঞতাসহকারে নির্বাচন করতে আমরা তাঁর সাহায্য চাইতে পারি।—যাকোব ১:৫, ৬.

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, নিশ্চয় পরিস্থিতির বেশ পার্থক্য দেখা যায়। আজ বহু জায়গায় পুরুষ ও মহিলারা বিবাহ সঙ্গী নিজেরাই পছন্দ করে নেয়। কিন্তু পৃথিবীর জনসংখ্যার বেশ কিছু অংশে, পিতামাতারাই বিবাহ স্থির করেন, অনেক সময় “ঘটকের” মাধ্যমে। অনেক জায়গায় পুরুষ, একজন স্ত্রী পেতে পারে মেয়ের পিতামাতাকে “বধূ-পণ” দেওয়ার পরই, এবং সেই মূল্য এতই বেশি হয় যে বিবাহ করা ভুলে যেতে হয়। যাইহোক, যে কোন পরিস্থিতি হোক না কেন, বাইবেল পরামর্শ দেয় যা বিবাহে স্থায়ী সফলতা আনতে সাহায্য করতে পারে।

প্রথমে নিজেকে জানুন

বিবাহ থেকে আপনি কী পেতে চান? আপনার চাহিদাগুলি কী—দৈহিক, মানসিক, আত্মিক? আপনি এগুলিকে কতটা মূল্য দেন, আপনার লক্ষ্য এবং তা অর্জন করতে উপায়গুলি কী কী? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে হলে আপনার অবশ্যই নিজেকে জানা প্রয়োজন। যা একজন মনে করতে পারে সেই তুলনায় এটি অত সহজ নয়। নিজেদের যাচাই করার জন্য মানসিক পরিপক্কতার প্রয়োজন এবং এমনকি তবুও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে নিজেদের নিজেরা জানা সম্ভব হয় না। খ্রীষ্টীয় প্রেরিত পৌল ১ করিন্থীয় ৪:৪ পদে এটি লেখার সময় এই ইঙ্গিত করেন: “আমি আমার নিজের বিরুদ্ধে কিছু জানি না, তথাপি ইহাতে আমি নির্দ্দোষ বলিয়া প্রতিপন্ন হইতেছি না; কিন্তু যিনি আমার বিচার করেন, তিনি প্রভু।”

কোন একটি পরিস্থিতিতে স্রষ্টা চেয়েছিলেন যে ইয়োব নামক ব্যক্তিটি যেন বিষয়গুলি উপলব্ধি করতে পারেন যা করতে তিনি অসমর্থ হয়েছিলেন ও ঈশ্বর তাকে বলেন: “আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি আমাকে বুঝাইয়া দেও।” (ইয়োব ৩৮:৩) প্রশ্ন আমাদের নিজেদের ও অভিপ্রায়গুলি জানতে সাহায্য করে। তাই বিবাহের প্রতি আপনার আগ্রহ সম্বন্ধে নিজেকে প্রশ্ন করুন।

দৈহিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে আপনি কি বিবাহিত হতে চান—খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান? আমাদের প্রত্যেকেরই জন্য সেগুলি প্রাথমিক চাহিদা, যেমন বাইবেল বলে: “গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।” আর যৌনবাসনার জন্য? সেটিও এক স্বাভাবিক ইচ্ছা। “কামনার আগুনে জ্বলা অপেক্ষা বিবাহ করা ভাল।” (১ তীমথিয় ৬:৮; ১ করিন্থীয় ৭:৯, NW) সঙ্গী পাওয়ার জন্য কি? ঈশ্বরের বিবাহ ব্যবস্থা স্থাপন করার সেটি হল একটি প্রধান কারণ। আর একটি হল কাজেতে দুজনে দুজনকে সাহায্য করা। (আদিপুস্তক ২:১৮; ১:২৬-২৮) ভাল কাজ সম্পাদন করায় তৃপ্তি আনে এবং তাতে পুরস্কারও পাওয়া যায়: “প্রত্যেক মনুষ্য যে ভোজন পান ও সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে সুখভোগ করে, ইহাও ঈশ্বরের দান।”—উপদেশক ৩:১৩.

১০ প্রেমিকেরা অনেকদিন ধরেই ভেবে আসছেন যে হৃদয় হল অনুভূতির উৎস। কিন্তু, বাইবেল হৃদয় সম্পর্কে বিচলিত করে এমন এক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে: “কে তাহা জানিতে পারে?” (যিরমিয় ১৭:৯) আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার হৃদয়ে কী আছে তা আপনি জানেন?

১১ অনেক সময়, দৈহিক আকর্ষণ মানসিক চাহিদাগুলি সম্পর্কে অন্ধ করে দেয়। সঙ্গী খোঁজার সময়, আপনাকে বুঝতে পারা, দয়া ও সমবেদনা দেখানোর চাহিদা সম্পর্কে আপনি কি গুরুত্ব দেন? আমাদের সকলের প্রাথমিক চাহিদাগুলি হল: কেউ যেন খুব কাছের হোক, যাকে সব ব্যক্ত করা যেতে পারে, আঘাত না পেয়ে নিজের সম্বন্ধে যাকে প্রকাশ করা যেতে পারে; এমন কেউ যে আমাদের প্রতি “আপন করুণা রোধ” করবে না। (১ যোহন ৩:১৭) এই সব কিছুই কি আপনি আপনার সঙ্গীকে দিতে পারেন এবং সেই পুরুষ বা স্ত্রী আপনাকেও পরিবর্তে তা দিতে পারে?

১২ যীশু বলেন: “সুখী তারাই যারা আত্মিক চাহিদা সম্পর্কে সচেতন।” (মথি ৫:৩, NW) আপনার আত্মিক চাহিদাটি কী? কর্মজীবনের উপায় খুঁজে পাওয়ার সাথে কি তা সম্বন্ধযুক্ত? অর্থ? সম্পদ? আচ্ছা, এই সকল অভীষ্ট বস্তু কি আমাদের অন্তরের শান্তি ও তৃপ্তি যোগায়? সাধারণত নয়। তাই আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে দৈহিক চাহিদাগুলি পূরণ করার পরেও আমাদের প্রত্যেকের ভিতরেই আত্মার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়। আমাদের আত্মা পরিচয় পেতে আকাঙ্ক্ষা করে—আমরা কে, আমরা কী, আমরা কেন এখানে আছি ও আমরা কোথায় যাচ্ছি। আপনি কী এসকল আত্মিক চাহিদাগুলি ও কিভাবে তা পূর্ণ করা যায় সে সম্বন্ধে সচেতন?

মানিয়ে নেওয়া

১৩ আপনি যদি দেহ, মন ও আত্মার চাহিদাগুলি বুঝতে পারেন তাহলে আপনি কি জানেন আপনার ভাবী সাথীটিও তা বুঝতে পারে কি না? বিবাহে সুখী হতে হলে শুধুমাত্র আপনার নিজের বিশেষ চাহিদাগুলি আপনি জানবেন তা নয় কিন্তু আপনার সঙ্গীর চাহিদাগুলিও আপনাকে জানতে হবে। আপনি নিশ্চয় চান যেন আপনার সঙ্গীও সুখী হোক। একজন অসুখী হলে অপরেও অসুখী হবে।

১৪ মানিয়ে না নেওয়ার দরুনই বহু বিবাহ অসুখী হয়েছে অথবা বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে। মানিয়ে না নেওয়া হল একটি বড় শব্দ, কিন্তু বিবাহে এর গুরুত্ব এমনকি আরও বেশি। যদি দুই ব্যক্তি দল হিসাবে মানানসই না হয় তাহলে পরে কষ্ট হতে পারে। এই পরিস্থিতি, মোশির নিয়মের ব্যবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যাতে দুটি ভিন্ন গঠন ও শক্তির পশুকে একই যোঁয়ালিতে বাঁধা করুণাবশত উপযুক্তরূপেই নিষিদ্ধ ছিল কারণ তাতে কষ্ট হতে পারত। (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:১০) ঠিক সেইরূপেই এক পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রেও হতে পারে, যারা মানানসই নয় কিন্তু তবুও বিবাহে একত্রীত হয়েছে। যখন সঙ্গীদের মধ্যে ভিন্ন আগ্রহ থাকে, বন্ধুবান্ধব ও আমোদপ্রমোদ ভিন্ন রুচির হয় এবং খুব কমই বিষয় সাধারণ থাকে তখন বিবাহ বন্ধন খুবই চাপের সম্মুখীন হয়।

১৫ “মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়,” বাইবেল আমাদের বলে। (হিতোপদেশ ১৫:২২) বিবাহ সম্বন্ধে বিবেচনা করার সময় কি ব্যবহারিক বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়েছে? স্বামীর কর্মবৃত্তি বিবাহে কোথায় স্থান পাবে? আপনি কোথায় বাস করবেন ও দৈনন্দিন চাহিদাগুলি মিটাতে কত অর্থ উপার্জন করা হবে তার উপরই এইগুলি নির্ভর করবে। হিসাবনিকাশ কে করবে? স্ত্রীয়ের বাইরে কাজ করার কি প্রয়োজন আছে ও তা কি উপযুক্ত হবে? আত্মীয়স্বজনদের সাথে সম্পর্ক কেমন থাকবে, বিশেষভাবে দুই পক্ষের পিতামাতাদের সঙ্গে? দুজনেই সহবাস, সন্তান ও সন্তানদের শিক্ষা সম্বন্ধে কি মনে করে? একজন কি অপরের উপর কর্তৃত্ব করতে চায় অথবা সদয় বিবেচনা সম্পর্ককে পরিচালনা করবে?

১৬ এই সকল প্রশ্ন ও তার সাথে অন্যান্য প্রশ্নগুলিও কি শান্তভাবে এবং যুক্তিপূর্ণরূপে আলোচনা করে এমনভাবে কি সমাধান করা যেতে পারে যাতে আপনারা উভয়েই ভালভাবে বাস করতে পারেন? একসঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করে সমাধান করা যেতে পারে কি ও ভাববিনিময়ের পথ কি সবসময় খোলা রাখা সম্ভব? সেটিই হল সফল বিবাহের খুঁটি।

১৭ একই পটভূমিকার দুই ব্যক্তি সাধারণত খুব ভালভাবেই মানিয়ে নিতে পারে। ইনসাইট অন্‌ দ্যা স্ক্রিপচারস্‌, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৪০-এ বইটি বাইবেলের সময়কালে বিবাহ সম্বন্ধে বলে:

“একজন পাত্রের সাধারণত আত্মীয়স্বজন বা স্বজাতির মধ্যে পাত্রী খোঁজা, মনে হয় প্রথা ছিল। যাকোবের প্রতি লাবনের উক্তিগুলি এই নীতিটিকে ইঙ্গিত করে: ‘অন্য পাত্রকে [আমার কন্যাকে] দান করা অপেক্ষা তোমাকে দান করা উত্তম হবে।’ (আদিপুস্তক ২৯:১৯) বিশেষভাবে যিহোবার সেবকেরা তা পালন করত, যা অব্রাহামের উদাহরণ প্রদর্শন করে, যিনি কনানীয়দের মাঝে বসবাস করলেও তার পুত্র ইস্‌হাকের জন্য তাদের কন্যাদের থেকে পাত্রী না নিয়ে পাত্রীর জন্য স্বদেশে আত্মীয়দের কাছে লোক পাঠান। (আদিপুস্তক ২৪:৩, ৪)”

১৮ নিশ্চয়, এর অর্থ এই নয় যে বর্তমানে একজন খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে বিবাহ করতে পারে, কারণ তাতে প্রজনন সমস্যা দেখা দিতে পারে যার ফলে ত্রুটিযুক্ত সন্তানও জন্মাতে পারে। কিন্তু লোকে যে মান নির্ণয় করে তার সাথে পরিবারের পটভূমিকা বেশ অনেকটা জড়িত আছে। শৈশবকালে ও যৌবনে পরিবারের পরিবেশ একজনের আচার-ব্যবহার ও ভাবাবেগকে সাধারণত প্রভাবিত করে। যখন উভয় পক্ষের পটভূমিকা এক হয় তখন তারা সহজেই ‘একই ভূমি ও একই আবহাওয়ায় বৃদ্ধি পায়।’ কিন্তু ভিন্ন পটভূমিকার ও ভিন্ন জায়গার ব্যক্তিরাও বিবাহে একে অপরকে মানিয়ে নিতে পারেন, বিশেষভাবে যখন উভয়েই মানসিকরূপে পরিপক্ক থাকেন।

১৯ আপনার ভাবী সঙ্গীর পরিবার সম্বন্ধে আপনি যদি কিছু জানেন তাহলে নিশ্চয় উপকার হয়। কিন্তু এটিও দেখুন যে সে পরিবারের সাথে কিরূপে ব্যবহার করে—পিতামাতার সাথে এবং ভাইবোনের সাথে। সে বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করে, বা ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে কেমন মানিয়ে চলে?

২০ সমস্ত সাবধানতা গ্রহণ করার পরেও আপনার এটি মনে রাখা উচিৎ: দুই ব্যক্তির মধ্যে মানিয়ে চলা কখনও নিখুঁত হবে না। দুজনেরই ভুল হবে। কিছু বিবাহের আগেই তারা জানতে পারবে; কিছু পরে জানতে পারবে। তখন কী হবে?

২১ ভুলভ্রান্তির জন্যই যে বিবাহ ব্যর্থ হয় তা নয়, কিন্তু সঙ্গী সেটিকে যেভাবে দেখে তা বিবাহকে ব্যর্থ করে দেয়। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, উত্তম বিষয়গুলি ভুলভ্রান্তিগুলিকে ছাপিয়ে যায় অথবা আপনি মন্দ বিষয়গুলিকে তুলে ধরে সেটিকেই বার বার জোর দেন? আপনি কি সহজেই দোষত্রুটিগুলি মেনে নেন যেমন আপনি চান যে সেইরূপ আপনার প্রতিও করা হোক? প্রেরিত পিতর বলেন, “প্রেম পাপরাশি আচ্ছাদন করে।” (১ পিতর ৪:৮) যাকে আপনি বিবাহ করবেন ভাবছেন তার প্রতি কি আপনার এইরূপ প্রেম আছে? যদি তা না থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তিকে বিবাহ করা আপনার পক্ষে ভাল হবে না।

‘আমি ওকে পাল্টাতে পারি’

২২ আপনি কি বলেন, ‘আমি সেই পুরুষকে’ বা ‘নারীকে’ পাল্টাতে পারি, যেমন সাধারণত হয়ে থাকে? কিন্তু আপনি কাকে ভালবেসেছেন? পুরুষ বা নারী হিসাবে সেই ব্যক্তিকে অথবা পরিবর্তন করার আপনার প্রচেষ্টার পর যে ব্যক্তি হবে তাকে? নিজেদেরই পরিবর্তন করা কঠিন তাহলে অপরকে পরিবর্তন করা আরও কত কষ্টকর। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্যের শক্তিশালী সত্যগুলি একজনকে নিজের পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। এক ব্যক্তি “পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ,” করে আপন মনের ভাবের দ্বারা নবীনীকৃত হতে পারে। (ইফিষীয় ৪:২২, ২৩) কিন্তু আপনার জন্য হঠাৎ এই পরিবর্তন করার ভাবী সাথীর প্রতিজ্ঞাগুলি সম্পর্কে সন্দেহপ্রবণ হোন! যদিও বা মন্দ অভ্যাসকে সংশোধন করা বা ঠিক করা যায় কিন্তু এইগুলি করতে সময় লাগে, এমনকি অনেক বছরও লেগে যায়। এমনকি এটিও উপেক্ষা করতে পারি না যে আমরা বংশপরম্পরাগতভাবে যে গুণগুলি পেয়েছি এবং যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছি তা আমাদের মধ্যে এক বিশেষ মনোভাবের সৃষ্টি করেছে ও এক স্বতন্ত্র ব্যক্তিতে পরিণত করতে বিশেষ রূপে গঠন করেছে। প্রকৃত প্রেম, একে অপরকে উন্নতি করতে এবং দুর্বলতাগুলিকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে কিন্তু সেটি আমাদের সাথীকে এক নতুন ও অস্বাভাবিক ধারায় পরিবর্তন করতে পরিচালিত করবে না যা সেই পুরুষ বা নারীর ব্যক্তিত্বকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে।

২৩ অনেকে তাদের মনে আদর্শের এক কল্পনা করে রাখে এবং তাদের প্রত্যেকটি মোহ তারা এই আদর্শের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করে। যাইহোক, কেউই অবাস্তব স্বপ্ন বাস্তব করতে পারে না, কিন্তু মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তি সেগুলিকে জোর করে ধরে রাখতে চায় এবং অপরকে তা পূর্ণ করার জন্য জোর করতে চেষ্টা করে। যখন তা ব্যর্থ হয়, সেই পুরুষ বা নারীর স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় এবং এই কাল্পনিক আদর্শকে সে অন্য কোথাও খোঁজে। কিন্তু সেই প্রকৃতির ব্যক্তিরা কখনই তাদের আদর্শকে খুঁজে পায় না। তারা যে স্বপ্নের ব্যক্তিকে চায় সে তাদের স্বপ্নজগৎ ছাড়া আর কোথাও থাকে না। যে ব্যক্তিরা এইরূপ ধারণা করে তারা বিবাহের জন্য ভাল উপাদান নয়।

২৪ হয়ত আপনারও সেইরূপ স্বপ্ন ছিল। আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যক্তিই তাদের জীবনে কোন না কোন সময়ে তা দেখেছে; বহু অল্পবয়স্করা দেখে থাকে। কিন্তু মানসিক পরিপক্কতা আসার সাথে সাথে আমরা বুঝতে পারি যে সেই কল্পনাগুলিকে অবাস্তব হিসাবে সরিয়ে দেওয়া দরকার। বিবাহে বাস্তবতার প্রয়োজন হয়, শুধুমাত্র কল্পনার নয়।

২৫ যেমন অনেকে মনে করেন প্রকৃত প্রেম অতটা অন্ধ নয়। তা বহু পাপ আচ্ছাদন করবে, কিন্তু প্রকৃত প্রেম সেগুলিকে ভুলে যাবে না। প্রেম নয়, মোহই হল অন্ধ, যে সমস্যা অন্যেরা দেখতে পাচ্ছে সেটি দেখতে অস্বীকার করে। এমনকি নিজের বিরক্তিকর সন্দেহগুলিকেও চাপা দিয়ে রাখে; কিন্তু নিশ্চিত থাকুন তা পরে স্পষ্ট প্রতীয়মান হবেই। বিবাহ-পূর্ব মেলামেশার সময় রূঢ় সত্যের প্রতি চোখ বন্ধ করে রাখলে, বিবাহের পরে আপনাকে নিশ্চয় তার সম্মুখীন হতে হবে। যাকে আমরা সন্তুষ্ট বা আকর্ষণ করতে চাই তার সামনে নিজেদের সবচেয়ে ভাল বাহ্যিক রূপকে প্রকাশ করার স্বাভাবিক প্রবণতা আমাদের আছে, কিন্তু সময়ে সম্পূর্ণ ও প্রকৃত চিত্রটি দেখা যায়। সেই পুরুষ বা নারী, প্রকৃতই যে কী তা জানতে নিজেকে সেই সময় দিন ও আপনি নিজে প্রকৃত যা সেটি প্রকাশ করতে অকপট হোন। সঙ্গী খোঁজার সময়ে ১ করিন্থীয় ১৪:২০ পদের প্রেরিতের উৎসাহটিও প্রযোজ্য হয়: “বালক হইও না . . . বুদ্ধিতে পরিপক্ক হও।”

বিবাহে কৃত প্রতিশ্রুতিগুলি

২৬ বিবাহে যে প্রতিশ্রুতিগুলি করা হয় তা একজনের শান্তভাবে বিবেচনা করা উচিৎ। দুজনের মধ্যে একজনের প্রতিশ্রুতি যদি সুদৃঢ় ও অটুট না হয়, তাহলে বিবাহ হয়ত নড়বড়ে ভিত্তিতে থাকতে পারে। বর্তমানে জগতের বহু অংশে, বিবাহ করা হয় ও তারপর তা শীঘ্রই ভেঙ্গে দেওয়া হয়। প্রায়ই তা হয় কারণ যারা বিবাহিত হয় তারা অনেক সময় বিবাহকে এক নৈতিক বন্ধন হিসাবে দেখে না, পরিবর্তে মনে করে ‘যদি সফল না হয়, তাহলে আমি সেটিকে ভেঙ্গে ফেলব।’ যেখানেই সেই দৃষ্টিভঙ্গি থাকে সেখানে বিবাহ প্রথম থেকেই পতনের দিকে যায়, সুখ আনার পরিবর্তে সাধারণত দুঃখই আনে। পরিবর্তে বাইবেল দেখায় বিবাহ এক জীবনব্যাপী সম্পর্ক হওয়া উচিৎ। প্রথম দম্পতি সম্পর্কে ঈশ্বর বলেন, দুজনে যেন “একাঙ্গ” হয়। (আদিপুস্তক ২:১৮, ২৩, ২৪) পুরুষের জন্য কোন অন্য স্ত্রী নয় এবং নারীর জন্য কোন অন্য পুরুষ নয়। এই বিষয়টি ঈশ্বরের পুত্র আরও সুদৃঢ় করেন এই বলে: “তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” শুধুমাত্র যৌন অবিশ্বস্ততাই বিবাহ বন্ধনকে ভঙ্গ করার যথাযথ ভিত্তি হতে পারে।—মথি ১৯:৩-৯.

২৭ বিবাহের এই গুরুত্বটি মনে রেখে, কোন স্ত্রী যদি বিবাহে সফল হতে চায় তাহলে সে যে পুরুষকে একমাত্র সম্মান করতে পারবে তাকেই বিবাহ করলে ভাল করবে—যে দৃঢ়, ভারসাম্য রাখে, ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, দায়িত্বভার পালন করে ও সাহায্যকারী সমালোচনাগুলি গ্রহণ করতে যথেষ্ট পরিপক্ক হয়। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: সে কি এক উত্তম অন্নসংস্থানকারী হবে, সন্তানের উত্তম পিতা হবে যারা এই যোগবন্ধনে আশীর্বাদস্বরূপ আসবে? তার কি উন্নত নৈতিক মান রয়েছে ফলে বিবাহ শয্যাকে সম্মানীয় ও বিমল রাখতে আপনারা দুজনেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে পারেন? সে কি নম্রতা ও শোভনতা প্রদর্শন করে অথবা সে গর্বিত ও একগুঁয়ে, মস্তকের ব্যবহার দুর্বিনীতরূপে করে, নিজেকে সবসময় সঠিক মনে করে ও কোন বিষয় সম্পর্কে যুক্তি করতে অনিচ্ছুক থাকে? বিবাহের পূর্বে যথেষ্ট সময় সেই পুরুষের সাথে মেলামেশা করলে এই বিষয়গুলি নির্ধারণ করা যায় বিশেষকরে যখন বাইবেল নীতিগুলিকে বিচারের মান হিসাবে ধরা হয়।

২৮ অনুরূপে, যে পুরুষ তার বিবাহে সফলতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে সেও এমন স্ত্রী খুঁজবে যাকে সে নিজের দেহের মত ভালবাসতে পারবে। ঘর বাঁধতে সঙ্গী হিসাবে স্ত্রীয়ের, তার পরিপূরক হওয়া উচিৎ। (আদিপুস্তক ২:১৮) বিভিন্ন দায়িত্বভারসহ উত্তম গৃহপালিকা হওয়া এক খুবই দাবিসম্পন্ন কার্যভার। এর মধ্যে জড়িত রয়েছে রাঁধুনি, সজ্জাশিল্পী, মিতব্যয়ী, মা, শিক্ষিকা ও আরও অনেক কিছু হয়ে দক্ষতা দেখানো। স্ত্রীর ভূমিকা সৃজনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে পারে যাতে নিজেকে প্রস্ফুটিত করতে ও তৃপ্ত হওয়ার সুযোগ দেয়। এক উত্তম স্ত্রী, যোগ্য স্বামীর মত, এক কর্মীও: “তিনি আপন পরিবারের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখেন, তিনি আলস্যের খাদ্য খান না।”—হিতোপদেশ ৩১:২৭.

২৯ হ্যাঁ, তারা যা দেখবে তার প্রতি দুজনেরই চিন্তা করা ভাল হবে—ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সুশৃঙ্খলা আছে অথবা তার অভাব দেখা যায়; অধ্যবসায় না পরিবর্তে অলসতা; যুক্তিসম্পন্নতা ও সুবিবেচনা অথবা একগুঁয়ে বা গর্বের ভাব; মিতব্যয়ী না অপব্যয়ী; উপভোগ্য কথোপকথন করতে চিন্তাশক্তি ও আত্মিক পরিপক্কতা আছে না পরিবর্তে অলস মনোভাব যা দৈনন্দিন দৈহিক চাহিদাগুলি মিটাতে জীবনকে একঘেয়ে করা ছাড়া আর কিছুই করে না।

৩০ পরস্পরের প্রতি আন্তরিক সম্মান হল সফল বিবাহের মূল উপাদান। বিবাহ-পূর্ব মেলামেশার সময় অনুরাগ প্রদর্শনের অভিব্যক্তিগুলির ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। বিবাহের পূর্বে অহেতুক ঘনিষ্ঠতা ও লাগামহীন প্রবল আবেগ, সম্পর্ককে মামুলি করে দেয়। যৌন নীতিহীনতা এক উত্তম ভিত্তি নয় যার উপর বিবাহকে গঠন করতে আরম্ভ করা যায়। তা অপর ব্যক্তির ভবিষ্যৎ সুখের প্রতি এক স্বার্থপর বেপরোয়া মনোভাবকে প্রকাশ করে। কামাগ্নির প্রবলতা যেটি কিছুক্ষণের জন্য যেন এক অটুট বন্ধনকে সৃষ্টি করে, কিন্তু যা অতি শীঘ্রই ঠাণ্ডা হয়ে যায় ও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বা এমনকি কিছু দিনের মধ্যেই বিবাহ হয়ত ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে।—২ শমূয়েল ১৩:১-১৯ পদে বর্ণিত তামরের প্রতি আম্নোনের কামাবেগের বিবরণটি তুলনা করুন।

৩১ বিবাহ-পূর্ব মেলামেশায় কামাবেগ প্রদর্শন সন্দেহের বীজ রোপন করতে পারে যা পরে বিবাহের প্রকৃত অভিপ্রায় সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলতে পারে। তা কি কামাবেগ প্রশমনের মাত্র এক উপায় ছিল অথবা সেটি কি ব্যক্তি হিসাবে যাকে প্রকৃতই ভালবাসা ও উপলব্ধি করা যায় তার সাথে জীবন ভাগ করে নেওয়া ছিল? বিবাহের পূর্বে আত্মসংযমের অভাব প্রায়ই বিবাহের পরেও তার অভাবকে ইঙ্গিত করে, যার ফলে বিবাহে অবিশ্বস্ততা দেখা যায় ও অসুখী হতে হয়। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) বিবাহ-পূর্ব নীতিহীনতার মন্দ স্মৃতিগুলি বিবাহিত জীবনের প্রথম দিকে সুন্দর মানসিক বোঝাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

৩২ আরও গুরুতর বিষয় হল, সেই প্রকৃতির নীতিহীনতা স্রষ্টার সাথে একজনের সম্বন্ধের হানি করে, যার সাহায্য আমাদের অতি প্রয়োজন। “ফলতঃ ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, তোমাদের পবিত্রতা;—যেন তোমরা ব্যভিচার হইতে দূরে থাক . . . কেহ যেন সীমা অতিক্রম করিয়া এই ব্যাপারে আপন ভ্রাতাকে (অথবা যুক্তিপূর্ণরূপে একজনের ভগ্নিকে) না ঠকায়; . . . এই জন্য যে ব্যক্তি অগ্রাহ্য করে, সে মনুষ্যকে অগ্রাহ্য করে তাহা নয়, বরং ঈশ্বরকেই অগ্রাহ্য করে, যিনি নিজ পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে প্রদান করেন।”—১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৮.

পাথরের এক ভিত্তি

৩৩ আপনার পরিজনবর্গ, পরিবার কি পাথরের ভিত্তিতে না বালির ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে? অংশত তা সঙ্গী পছন্দ করার সময় আপনি কি পরিমাণ প্রজ্ঞা ব্যবহার করেছেন তার উপর নির্ভর করে। সৌন্দর্য এবং সহবাস যথেষ্ট নয়। সেগুলি মানসিক ও আত্মিকরূপে বেমানান পরিস্থিতিকে মুছে দেয় না। ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শ, বিবাহে পাথরের ভিত্তি প্রদান করে।

৩৪ বাইবেল দেখায় যে বাহ্যিক চেহারার থেকে ভিতরের ব্যক্তিত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ। “লাবণ্য মিথ্যা, সৌন্দর্য্য অসার,” বলে অনুপ্রাণিত হিতোপদেশ, “কিন্তু যে স্ত্রী সদাপ্রভুকে ভয় করেন, তিনিই প্রশংসনীয়া।” (হিতোপদেশ ৩১:৩০) বিবাহিত ব্যক্তি, প্রেরিত পিতর “হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য” এবং “মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা”-কে “ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য” রূপে উল্লেখ করেন। (১ পিতর ৩:৪) ঈশ্বর ‘মানুষের বাহ্যিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না,’ তাই ভাবী বিবাহ সঙ্গীর বাহ্যিক চেহারামাত্র দেখে অহেতুক প্রভাবিত না হওয়ার জন্য আমরা তাঁর উদাহরণ থেকে উপকৃত হতে পারি।—১ শমূয়েল ১৬:৭.

৩৫ জ্ঞানী রাজা শলোমন যিনি জীবন সম্বন্ধে চিন্তা করেছিলেন তিনি এই পরিসমাপ্তিতে আসেন: “ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।” (উপদেশক ১২:১৩) ইস্রায়েলীয়েরা যারা ঈশ্বরের নিয়ম পালন করতে চুক্তিবদ্ধ ছিল তাদের অন্য ধর্মের লোকেদের বিবাহ না করতে বিশেষ আজ্ঞা দেওয়া হয় পাছে তা তাদের সত্য ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। “তাহাদের সহিত বিবাহ-সম্বন্ধ করিবে না; তুমি তাহার পুত্ত্রকে আপনার কন্যা দিবে না, ও আপন পুত্ত্রের জন্য তাহার কন্যা গ্রহণ করিবে না। কেননা সে তোমার সন্তানকে আমার অনুগমন হইতে ফিরাইবে, আর তাহারা অন্য দেবগণের সেবা করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩, ৪.

৩৬ সেই একই কারণে যারা ঈশ্বরের “নূতন চুক্তি”-তে বদ্ধ, যারা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে আছেন তাদেরও পরামর্শ দেওয়া হয় একমাত্র “প্রভুতে” বিবাহ করতে। (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৩; ১ করিন্থীয় ৭:৩৯) এটি কোন গোঁড়ামি প্রদর্শন নয় বরং প্রজ্ঞা ও প্রেম দ্বারা পরিচালিত। স্রষ্টার প্রতি একত্রে ভক্তি ছাড়া আর কিছুই বিবাহ বন্ধনকে অধিক সুদৃঢ় করতে পারে না। আপনি যদি কাউকে বিবাহ করেন যার ঈশ্বরে ও তাঁর বাক্যের প্রতি বিশ্বাস আছে এবং আপনার মতই সেও তার অর্থ বুঝতে পারে, তাহলে পরামর্শের জন্য আপনাদের একই উৎস হবে। আপনি হয়ত এই বিষয়কে অতটা জরুরী নাও মনে করতে পারেন, কিন্তু “ভ্রান্ত হইও না, কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) যাইহোক, এমনকি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতেও, ভাবী বিবাহ সঙ্গী সম্বন্ধে জেনে নেওয়া ভাল যে সে প্রকৃতই সম্পূর্ণ হৃদয়ে ঈশ্বরের সেবক না জগতের আচার-ব্যবহারের প্রতি বেশি ঝোঁক দেখিয়ে নামেমাত্র খ্রীষ্টান হিসাবে জীবনযাপন করছে। আপনি ঈশ্বরের সাথে চলে জগতের সাথে দৌড়াতে পারবেন না।—যাকোব ৪:৪.

৩৭ “দুর্গ নির্ম্মাণ করিতে ইচ্ছা হইলে,” যীশু জিজ্ঞাসা করেন, “তোমাদের মধ্যে কে অগ্রে বসিয়া ব্যয় হিসাব করিয়া না দেখিবে, সমাপ্ত করিবার সঙ্গতি তাহার আছে কি না? কি জানি ভিত্তিমূল বসাইলে পর যদি সে সমাপ্ত করিতে না পারে।” (লূক ১৪:২৮, ২৯) সেই একই নীতি বিবাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেহেতু ঈশ্বর বিবাহকে চিরকালের বন্ধন রূপে দেখেন তাই বিবাহ সঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা একেবারেই উচিৎ নয়। যা শুরু করেছেন তা শেষ করতে পারবেন বলে আপনি নিজে নিশ্চিত থাকুন। এমনকি বিবাহ-পূর্ব মেলামেশাকে হাল্কাভাবে, খেলার ছলে নেওয়া যেতে পারে না। অপরের আবেগ নিয়ে খেলা হল এক নিষ্ঠুর প্রকৃতির ক্রীড়া এবং এর ফলে যে মানসিক আঘাত ও গভীর বেদনা আসে তা অনেক দিন থেকে যায়।—হিতোপদেশ ১০:২৩; ১৩:১২.

৩৮ যে বিচক্ষণ যুবক-যুবতীরা বিবাহ সম্বন্ধে বিবেচনা করছেন তারা বয়স্ক ব্যক্তিদের পরামর্শ শুনলে ভাল করবেন, বিশেষভাবে যারা দেখান যে তারা আপনাদের হৃদয় থেকে ভাল চান। ইয়োব ১২:১২ (NW) পদ এর মূল্য সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেয় এই প্রশ্ন করে: “প্রাচীনদের কাছে কি প্রজ্ঞা আছে এবং দীর্ঘায়ু কি বুদ্ধিসমন্বিত?” এই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কথা শুনুন। সর্বোপরি, “সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর, তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

৩৯ যারা এই বিষয়গুলি পড়ছেন তাদের অনেকে হয়ত ইতিমধ্যেই বিবাহিত। বলতে গেলে আপনাদের ভিত্তি স্থাপন হয়ে গেলেও, যেখানে প্রয়োজন সেখানে ঠিক করে নিতে বাইবেল আপনাদের সাহায্য করতে পারে, যাতে আসবে উত্তম ফল। আপনার বৈবাহিক জীবন যে অবস্থায় থাকুক না কেন পারিবারিক সুখ সম্বন্ধে স্রষ্টার আরও পরামর্শের দ্বারা তার উন্নতি করা যায়।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১-৩. মথি ৭:২৪-২৭ পদ অনুসারে, কিসের উপর জীবনে সফলতা নির্ভর করে?

৪. প্রথম দম্পতির বিবাহ থেকে আমরা কী কী বিষয় শিখতে পারি? (আদিপুস্তক ২:২২–৩:১৯)

৫, ৬. বিবাহিত ব্যক্তিদের জন্য ও যারা বিবাহ করবেন বলে বিবেচনা করছেন তাদের জন্য ঈশ্বর কী সাহায্য প্রদান করেছেন?

৭-১০. (ক) বিবাহ সম্বন্ধে বিবেচনা করার সময় একজনকে নিজের সম্বন্ধে কী জানতে হবে? সে কিভাবে তা জানতে পারে? (খ) বিবাহ করার কারণের প্রতি যৌক্তিকতা সম্পর্কে বাইবেল কী বলে?

১১. বিবাহে কোন্‌ মূল মানসিক চাহিদাগুলি পূরণ করা উচিৎ?

১২. দৈহিক ও মানসিক চাহিদা পূরণ করা কেন সুখী বিবাহের জন্য যথেষ্ট নয়?

১৩. সুখী বিবাহের জন্য নিজের চাহিদা ব্যতীত আপনাকে আরও কী নির্ধারণ করতে হবে?

১৪. অনেক বিবাহে কেন সঙ্গীরা মনে করেন যে তারা পরস্পরের পক্ষে বেমানান?

১৫, ১৬. ভাবী বিবাহ সঙ্গীর সাথে কী বিষয়গুলি আলোচনা করতে হবে এবং কিভাবে?

১৭-১৯. বিবাহিত জীবনে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের পটভূমিকা কেন এক মূল্য রাখে?

২০, ২১. সঙ্গী পছন্দ করার সময়, ব্যক্তিগত দোষত্রুটিকে কিভাবে দেখতে হবে?

২২-২৪. কোন ব্যক্তির পথ পরিবর্তন করার প্রতিজ্ঞার উপর ভিত্তি করে অথবা ব্যক্তিটিকে পরিবর্তন করার উদ্দেশ্য নিয়ে বিবাহ করা অজ্ঞতার কাজ হবে কেন?

২৫. প্রকৃত প্রেম ও মোহের মধ্যে পার্থক্য কী?

২৬. শাস্ত্র অনুসারে বিবাহ বন্ধন কত দৃঢ়? (রোমীয় ৭:২, ৩)

২৭-২৯. (ক) ভাবী বিবাহ সঙ্গী সম্পর্কে কী দেখা এক নারীর পক্ষে ভাল হবে? (খ) ভাবী বিবাহ সঙ্গী সম্পর্কে এক পুরুষ বিজ্ঞতার সাথে কী দেখতে পারে?

৩০, ৩১. বিবাহ-পূর্ব মেলামেশায় নীতিহীন আচরণ কেন উত্তম বৈবাহিক জীবন উপভোগ করতে ব্যাঘাতস্বরূপ হয়?

৩২. বিবাহ-পূর্ব মেলামেশায় নীতিহীন আচরণ কিভাবে ঈশ্বরের সাথে একজনের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে?

৩৩, ৩৪. বিবাহ সাথী খোঁজার সময় বাহ্যিক চেহারার থেকেও শাস্ত্র কোন্‌ গুণগুলি আরও গুরুত্বপূর্ণ দেখায়?

৩৫, ৩৬. (ক) যে ব্যক্তির ঈশ্বরে ও তাঁর বাক্যে বিশ্বাস আছে তাকে বিবাহ করা গুরুত্বপূর্ণ কেন? (খ) ভাবী সঙ্গী কত দূর পর্যন্ত সেই বিশ্বাস প্রদর্শন করুক বলে আপনি আশা করেন?

৩৭, ৩৮. (ক) বিবাহ-পূর্ব মেলামেশা অথবা বিবাহ করতে একজনের তাড়াহুড়ো করা উচিৎ নয় কেন? (খ) যারা বিবাহ করতে বিবেচনা করছেন তারা কার পরামর্শ শুনলে ভাল করবেন?

৩৯. যারা ইতিমধ্যেই বিবাহিত তাদের বাইবেল কিভাবে সাহায্য করতে পারে?

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার বৈবাহিক জীবন কি ঝড়-ঝঞ্ঝাকে প্রতিরোধ করতে পারে?