সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরবর্তী বছরগুলি

পরবর্তী বছরগুলি

অধ্যায় ১৩

পরবর্তী বছরগুলি

যদি আমাদের জীবন দৈহিক বা মানসিক কর্মতৎপরতা দ্বারা পূর্ণ না থাকে, তাহলে জীবন একঘেয়ে হয়ে যায়। জীবনে শূন্যতা বোধ হয় ও আমরা অস্থির হয়ে পড়ি। অনেক সময় এই সমস্যা বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দেয় যখন তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে আলাদা হয়ে যায়। বিগত বহু বছর ধরে তাদের জীবন পিতামাতার দায়িত্বে পূর্ণ ছিল। এখন এই সকল কাজ ও পরিবারকে গড়ে তোলার দায়িত্ব হঠাৎ থেমে যায়।

তাছাড়া, বছর অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে দৈহিক পরিবর্তনও হতে আরম্ভ করে। চামড়া কুঁচকাতে, চুল সাদা হতে আরম্ভ করে, চুল কমে আসে এবং ব্যথা বেদনা যেগুলিকে আগে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হত না তা এখন দেখা দেয়। বাস্তব বিষয়টি হল, আমাদের বয়স হচ্ছে। বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, কিছু ব্যক্তি চরম প্রচেষ্টা করে এই প্রমাণ করতে যে তারা অগেকার মতই কমবয়সী আছে। তারা হঠাৎ সামাজিকরূপে খুবই সক্রিয় হয়ে ওঠে—পার্টি করে বা খেলাধূলায় খুব যোগ দিতে আরম্ভ করে। হঠাৎ এই কর্মতৎপরতাগুলি কিছু কাজ প্রদান করলেও, তা কি চিরকালীন তৃপ্তি আনে? তা কি সেই ব্যক্তির প্রকৃতই প্রয়োজন আছে বলে বোধ করায় ফলে তার জীবনে প্রকৃত অর্থ রাখে?

মনোরঞ্জন নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। আপনার জীবনের পরবর্তী বছরগুলিতে আপনি দেখবেন যে আপনি এখন অনেক কিছু করতে পারেন যা আপনি আপনার ছেলেমেয়ে ছোট থাকার সময় করতে পারেননি। কিন্তু আনন্দ উপভোগ করাকে মূখ্য উদ্দেশ্য করে তুললে গভীর সমস্যা আসতে পারে।—২ তীমথিয় ৩:৪, ৫; লূক ৮:৪-৮, ১৪.

বিশ্বস্ত থাকার শোভা

জীবনের এই সন্ধিক্ষণে অনেকেই মনে করেন যে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সামনে তারা এখনও আকর্ষণীয় আছেন তা তাদের প্রমাণ করতে হবে। সামাজিক মেলামেশায় বা অন্য কোথাও তারা কারুর সাথে প্রণয়ের ভাব করতে আরম্ভ করেন। বিশেষভাবে পুরুষেরা কমবয়সী স্ত্রীলোকদের সাথে “সম্পর্ক” রাখে এবং এই “নব নৈতিকতা”-র যুগে বহু স্ত্রীলোকেরা বিবাহের বাইরে “সম্পর্ক” রেখে নিশ্চয়তা পেতে চায়। হয়ত অনেক বছর বিবাহিত থাকার পরেও নতুন বিবাহ সঙ্গীর সাথে “নতুন জীবন” শুরু করার কথা অনেকে চিন্তা করে। তাদের সঙ্গীর দোষত্রুটিগুলি দেখিয়ে দিয়ে তারা যা করছে সেটিকে সঠিক প্রমাণিত করতে চেষ্টা করে—সাধারণত নিজেদের দোষত্রুটিকে তার সাথে তাদের সঙ্গী ও ধার্মিক নীতির প্রতি নিজেদের বিশ্বস্ততাকেও হাল্কা করে দেখে।

তারা হয়ত জানে যে যীশু বলেছিলেন: “ব্যভিচার [পর্নিয়া: প্রচণ্ড রকমের যৌন অনৈতিকতা], দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে।” যদিও যীশু এখানে দেখাচ্ছিলেন যে “যে সে কারণে,” আপন সঙ্গীকে পরিত্যাগ করা ঠিক নয়, তারা পরিত্যাগ করার জন্য যে কোন কারণ ব্যবহার করতে রাজি ছিল যা দেশের নিয়ম অনুমতি দিত। (মথি ১৯:৩-৯) এরপর তারা নতুন সঙ্গী পাওয়ার চেষ্টা করে, সাধারণত তাদেরই পেতে চায় যাদের সাথে বিবাহবিচ্ছেদের আগে তারা জড়িত ছিল। সেইরূপ আচরণ সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য কী বলে তা জানা সত্ত্বেও তারা যুক্তি দেয় যে ঈশ্বর ত প্রচুর দয়ালু তাই তিনি বিষয়টি “বুঝতে পারবেন।”

সেই প্রকৃতির অনৈতিক চিন্তাধারা দ্বারা প্রলুব্ধ না হওয়ার জন্য, যিহোবা তাঁর ভাববাদী মালাখির দ্বারা ইস্রায়েলের লোকদের যা বলেছিলেন, তা বিবেচনা করলে আমরা ভাল করব: “তোমাদের . . . অপকর্ম্ম এই, তোমরা অশ্রুপাতে, রোদনে ও আর্ত্তস্বরে সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদি আচ্ছন্ন করিয়া থাক, কারণ তিনি আর নৈবেদ্যের প্রতি [অনুমোদন সহকারে] দৃক্‌পাত করেন না, ও তোমাদের হস্ত হইতে কিছু তুষ্টিজনক বলিয়া কিছু গ্রাহ্য করেন না। তথাপি তোমরা বলিতেছ ইহার কারণ কি? কারণ এই, সদাপ্রভু তোমার যৌবনকালীন স্ত্রীর ও তোমার মধ্যে সাক্ষী হইয়াছেন; ফলতঃ তুমি তাহার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছ; . . . অতএব তোমরা আপন আপন আত্মার বিষয়ে সাবধান হও, এবং কেহ আপন যৌবনকালীন স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করুক। কেননা আমি বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘৃণা করি, ইহা বাহিনীগণের যিহোবা কহেন।” (মালাখি ২:১৩-১৬, NW) হ্যাঁ, বিবাহ সঙ্গীর সাথে আচরণে বিশ্বাসঘাতকতা, বিবাহ চুক্তির প্রতি অমর্যাদা—এই সকলই ঈশ্বর নিন্দা করেন; তা জীবন-দাতার সাথে সম্পর্ক হানি করে।

এটি কি আরও উত্তম জীবনের পথ? কখনই নয়। সেই প্রকৃতির ব্যক্তিদের নতুন বিবাহ নড়বড়ে ভিত্তিতে স্থাপিত হয়। এমন কি তারা দেখিয়ে দিয়েছেন যে এই অমূল্য সম্বন্ধেতেও তাদের ভরসা করা যায় না। নতুন সঙ্গীর ব্যক্তিত্বের মধ্যে কোন আকর্ষণীয় কিছু তারা দেখতে পেয়েছেন তা সত্য, যা আগের সঙ্গীর মধ্যে ছিল না। কিন্তু তা পেতে তারা মর্মবেদনা দিয়েও নিজেদের আনন্দ পেতে চেয়েছেন। বৈবাহিক সুখে নিশ্চয় এই গুণটি উপযোগী নয়।

বিবাহ সঙ্গীর প্রতি সততা বজায় রাখার সৌন্দর্য যে কোন অন্য দৈহিক সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে যায়। বছর অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে দৈহিক সৌন্দর্য নিশ্চয় ম্লান হয়ে যায়, কিন্তু প্রতিটি বছর গত হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বস্ত অনুরক্ততার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। অপরের সুখ সম্বন্ধে চিন্তা করলে ও স্বামী বা স্ত্রীয়ের আগ্রহটি নিজের থেকে আগে রাখলে চিরকালীন তৃপ্তি আসবে, কারণ “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:৩৫) যদি দুজনে বহু বছর ধরে বিবাহিত থাকেন ও পরস্পর ভাব-বিনিময় করে থাকেন ও একে অপরকে সুখদুঃখের কথা বলে থাকেন, যদি তারা কাজ, লক্ষ্য, আশা এবং সুখদুঃখের সময় পরস্পরের সাথে ভাগ করে নিয়ে থাকেন—আর এই সকলই করেন ভালবেসেই—তাদের জীবন প্রকৃতপক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হবে, সংযুক্ত হবে। তাদের অনেক কিছু একই ছিল—মানসিকরূপে, আবেগজনিতরূপে ও আত্মিকরূপে। বিবাহের আগে তাদের প্রণয়পূর্ণ প্রেম হয়ত পরস্পরের দোষত্রুটির প্রতি কিছুটা অন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু এখন হৃদয়ের অনুরক্ততা পরস্পরকে দোষত্রুটিতে সাহায্য করতে, প্রয়োজনগুলি মিটাতে সুযোগ দেয়। তারা জানে যে কোন সমস্যা আসুক না কেন তারা পরস্পরের সাথেই থাকবে তাই তাদের মধ্যে থাকে প্রকৃত বিশ্বাস ও সুরক্ষা বোধ। তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয়টি হল পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। যেমন মীখা ৬:৮ পদ বলে: “হে মনুষ্য, যাহা ভাল, তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুতঃ ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?”—মার্জিনাল রিডিং।

বয়স্ক ছেলেমেয়েরা—এক নতুন সম্পর্ক

যদিও স্বামী ও স্ত্রীকে সারা জীবন একত্রে থাকতে হবে কিন্তু পিতামাতা ও তাদের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে স্রষ্টার ব্যবস্থা তা নয়। যখন ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছিল তখন তাদের প্রতিদিন আপনার সাহায্যের যে প্রয়োজন হচ্ছিল, তা সত্য। শুধুমাত্র তাদের দৈহিক চাহিদা মিটাতে হত তাই নয়, তাদের নির্দেশেরও প্রয়োজন ছিল। যদি তারা তৎক্ষণাৎ সাড়া না দিত তাহলে আপনি হয়ত তাদেরই মঙ্গলের জন্য বিশেষ কিছু বিষয়ে জোরও করতেন। কিন্তু যখন তাদের নিজেদের পরিবার হয়ে যায় তখন আপনারও তাদের মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা পরিবর্তন হয়। (আদিপুস্তক ২:২৪) এর অর্থ এই নয় যে তাদের প্রতি আপনার অনুভূতির পরিবর্তন হয়, কিন্তু দায়িত্বের স্থানান্তর হয়। সুতরাং তাদের জন্য আপনি যেভাবে কোন কিছু করতেন তার পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।

১০ অনেক সময় তাদের পরামর্শেরও প্রয়োজন হয়ে থাকে। যাদের জীবনে বেশি অভিজ্ঞতা আছে তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞ পরামর্শ শোনাও বিচক্ষণতার পরিচয়। (হিতোপদেশ ১২:১৫; ২৩:২২) কিন্তু ছেলে বা মেয়ে যারা এখন আলাদা বাস করে তাদের পরামর্শ দেওয়ার সময় এমনভাবে দিতে হবে যা প্রদর্শন করবে যে আপনি উপলব্ধি করেন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের উপর নির্ভর করছে।

১১ যদি তারা বিবাহিত হয় তাহলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু দেশ আছে যেখানে বহুদিনের স্থাপিত রীতি ঘরের বউকে শাশুড়ীর তত্ত্বাবধানের অধীনে রাখে। অন্যান্য জায়গায়, শ্বশুর-শাশুড়ী পরিবারিক বিষয় সম্পর্কে প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু তা কি প্রকৃত সুখ আনে? কোন্‌টি ভাল তা পরিবারের স্রষ্টা জানেন, এবং তিনি বলেন: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (আদিপুস্তক ২:২৪) সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব এখন, স্বামীর পিতামাতার উপর বা স্ত্রীয়ের পিতামাতার উপরে আসে না, কিন্তু স্বামীর উপর আসে। “স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক,” ঈশ্বরের বাক্য বলে। (ইফিষীয় ৫:২৩) যদি এই ব্যবস্থার প্রতি সম্মান থাকে তাহলে আপনার বয়স্ক ছেলেমেয়ে এবং পরে নাতি-নাতনিদের জন্য কোন কিছু করার আনন্দ আরও বেড়ে যায়।

আপরের জন্য কিছু করে আনন্দ উপভোগ করুন

১২ আমাদের জীবন কার্যকারী ও জীবনে যে এক অর্থ আছে তা সকলের উপলব্ধি করা দরকার। আপনার নিজের মঙ্গলের জন্য এই চাহিদা মিটানো গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ছেলেমেয়ে ছাড়াও অন্য ব্যক্তিদের জীবনেও চাহিদা পূরণে আপনি সাহায্য করতে পারেন। আপনার নিজের বৈবাহিক সঙ্গীর সম্পর্কে বা কী? আপনার ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার সময় আপনার বেশির ভাগ মনোযোগ তাদের প্রতিই ছিল। এখন পরস্পরের প্রতি ব্যক্তিগতরূপে অনেক কিছু করার আপনার সুযোগ আছে। এটি আপনার সম্পর্ককে গভীর করতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনার দয়ার কাজগুলি শুধু পরিবারের জন্যই আপনি সীমিত করবেন কেন? আপনার পাড়াপড়শি অসুস্থ হলে সাহায্য করে বা নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ ব্যক্তিদের সাথে সময় ব্যয় করে বা যারা নিজেদের দোষে নয় কিন্তু অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তাদের যতটা সম্ভব বস্তু-সাহায্য করে আপনি ‘প্রসারিত’ হতে পারেন। (২ করিন্থীয় ৬:১১, ১২) বাইবেল আমাদের দর্কা নামক এক স্ত্রীয়ের সম্বন্ধে বলে, যিনি সকলের খুব ভালবাসা পান কারণ তিনি বিধবাদের জন্য “নানা সৎক্রিয়া ও দানকার্য্যে ব্যাপৃতা ছিলেন।” (প্রেরিত ৯:৩৬, ৩৯) অভাবগ্রস্তদের প্রতি যারা দয়া দেখায় বাইবেল তাদের প্রশংসা করে। (হিতোপদেশ ১৪:২১) ‘ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করাকে’ উপাসনার মুখ্য অংশরূপে শাস্ত্র জড়িত করে যা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে। (যাকোব ১:২৭) আর বাইবেল আমাদের সকলকে উৎসাহ দেয়: “উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিও না, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।”—ইব্রীয় ১৩:১৬.

১৩ এর অর্থ কি শুধুমাত্র মানব কল্যাণের কাজে নিজেকে সম্পূর্ণ নিমগ্ন করাই সুখের চাবিকাঠি? আসলে, যদি প্রেরণা আত্মিক প্রকৃতির না হয়, প্রেম প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে অনুকরণ করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে তা হবে হতাশাজনক। (১ করিন্থীয় ১৩:৩; ইফিষীয় ৫:১, ২) কেন? কারণ যখন লোকে আপনার দয়াকে উপলব্ধি করে না বা আপনার উদারতার অন্যায়ভাবে সুযোগ নেয় তখন নিরাশা আসতে পারে।

১৪ অপরপক্ষে, যখন কেউ প্রকৃতই নিজের জীবনকে ঈশ্বরের সেবায় কাজে লাগায় তখন তার সবথেকে বেশি তৃপ্তি আসে এই জেনে যে সে যা করছে তা তার স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করে। তার অপরের জন্য কোন কিছু করা শুধুমাত্র বস্তুর মধ্যেই সীমিত থাকে না। তার কাছে “পরম ধন্য ঈশ্বর” যিহোবার “সেই গৌরবের সুসমাচার” আছে এবং সেটি অপরের সাথে ভাগ করে নেওয়ারও তার সুযোগ আছে। (১ তীমথিয় ১:১১) বর্তমান সমস্যার মোকাবিলা কিভাবে করতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বর যে মহান উদ্দেশ্য রেখেছেন তা সে বাইবেল থেকে জানে। সেই সুসমাচারটি অপরকে জানানো এবং তারপর তাদের মনোযোগ, এর উৎস যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আকর্ষণ করা কতই না আনন্দদায়ক! যেমন গীতসংহিতা ১৪৭:১ পদের অনুপ্রাণিত লেখক বলেন: “তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, কেননা আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা গান করা উত্তম; তাহা মনোহর; প্রশংসার উপযুক্ত।”

১৫ যখন আমরা জীবন সম্পর্কে যিহোবার উদ্দেশ্যকে বুঝতে পারি এবং তাঁকে মর্যাদা দিই তখন আমাদের জীবন অর্থে পরিপূর্ণ হয়। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী অপরের সাথে বাইবেলের সত্য আলোচনা করতে আপনি সম্পূর্ণরূপে অংশ গ্রহণ করলে, প্রকৃত তৃপ্তি হবে আপনার। যদিও আপনার ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে কিন্তু ‘আত্মিক ছেলেমেয়েকে’ বড় হতে সাহায্য করে আপনি হয়ত আনন্দ পেতে পারেন। যখন আপনি তাদের পরিপক্ক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিতে পরিণত হতে দেখবেন তখন আপনি প্রেরিত পৌলের মত বোধ করবেন, যিনি এইভাবে সাহায্য করা কিছু লোকেদের লিখেছিলেন: “আমাদের প্রত্যাশা, বা আনন্দ, বা শ্লাঘার মুকুট কি? . . . তোমরাই কি নও? বাস্তবিক তোমরাই আমাদের গৌরব ও আনন্দভূমি।”—১ থিষলনীকীয় ২:১৯, ২০.

পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে মানিয়ে নিন

১৬ সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে অনেকেই দেখেন যে তারা আর আগের মত কাজ করতে পারছেন না। তাদের নমনীয় হতে হবে, মানিয়ে নিতে হবে। যদি স্বাস্থ্যের সমস্যা হয় তাহলে তার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। কিন্তু এতে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, এই সম্পর্কে এমন মগ্ন হওয়া উচিৎ নয় যে জীবনে প্রতিদিন যে সুযোগগুলি আসে তা একজন দেখতে ব্যর্থ হবে। সমস্যা থাকবেই, যদি কোন কিছু গঠনমূলক করার সাধ্য থাকে তাহলে তা করা বিজ্ঞতার কাজ হবে। উদ্বিগ্নতা কিছুই সম্পাদন করতে পারে না, বিষয়গুলির পরিবর্তন হোক এমন আশাও সেগুলিকে পরিবর্তন করে না। তাই, অতীতের প্রতি অনুরক্ত না হয়ে, বর্তমানের সুযোগটি গ্রহণ করুন।

১৭ সেই একই বিষয় প্রযোজ্য হয়, যদি আপনার পরবর্তী জীবনকালে আপনি একা হয়ে পড়েন। আপনার যদি সুখী বৈবাহিক জীবন হয়ে থাকে, সন্দেহ নেই অত্যন্ত প্রিয় স্মৃতিগুলিকে আপনি মনে করতে ভালবাসবেন। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না, আর এখানেই মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। নতুন চ্যালেঞ্জগুলিকে আপনাকে মোকাবিলা করতে হবে এবং যদি আপনার জীবনধারা প্রদর্শন করে যে আপনি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখেন তাহলে মোকাবিলা করতে আপনি একা থাকবেন না।—গীতসংহিতা ৩৭:২৫; হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

১৮ জীবনের অপ্রীতিকর দিকগুলি থাকা সত্ত্বেও, অনেক কিছু আছে যা আনন্দ দান করে—উত্তম বন্ধু, অপরের জন্য কিছু করার সুযোগ, ভাল খাদ্য খাওয়ার আনন্দ, চমৎকার সূর্যাস্ত, পাখির গান। তাছাড়া, আমাদের বর্তমানের পরিস্থিতি আদর্শরূপ না হলেও, আমাদের কাছে ঈশ্বরের নিশ্চয়তা আছে যে তিনি দুষ্টতার শেষ করবেন এবং মানবজাতির সমস্ত দুঃখ, যন্ত্রণা, রোগব্যাধি এবং এমন কি মৃত্যুও দূর করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.

১৯ যে ব্যক্তি জীবনে বেশির ভাগই পার্থিব দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছে, সে পরবর্তী জীবনে যে শূন্যতা বোধ করবে তা সত্য। উপদেশকের লেখক এই বলে সেই প্রকৃতির জীবন-যাপনের পরিণতি বর্ণনা করেন: “সকলই অসার।” (উপদেশক ১২:৮) কিন্তু বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের, যেমন অব্রাহাম, ইস্‌হাক সম্বন্ধে বাইবেল বলে যে তারা জীবনের শেষে “বৃদ্ধ ও তৃপ্ত” ছিলেন। (আদিপুস্তক ২৫:৮; ৩৫:২৯, NW) কী পার্থক্য ঘটায়? এই সকল ব্যক্তিদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ছিল। তাদের দৃঢ় প্রত্যয় ছিল যে ঈশ্বরের সময়ানুসারে মৃতেরা আবার জীবিত হবে এবং তারা সেই সময়ের আশায় ছিলেন যখন ঈশ্বর নিজে সমস্ত মানবজাতির জন্য এক ধার্মিক সরকার স্থাপন করবেন।—ইব্রীয় ১১:১০, ১৯.

২০ আপনার এই পরিস্থিতিতেও, আপনি যদি বর্তমানের সমস্যাগুলিকে আপনার চারিপাশের উত্তম বিষয়গুলির প্রতি এবং ঈশ্বর তাঁর দাসদের জন্য যে অপূর্ব ভবিষ্যৎ রেখেছেন তার প্রতি আপনাকে অন্ধ করাতে না দেন তাহলে আপনার জীবন হবে অর্থপূর্ণ ও প্রতিটি দিনই আপনাকে পরিতৃপ্ত করবে, পরিতৃপ্ত করবে পরবর্তী বছরগুলিতেও।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. (ক) ছেলেমেয়েরা আলাদা হয়ে গেলে কোন্‌ সমস্যাগুলি দেখা দেয়? (খ) বয়সকালের সমস্যাগুলিকে অনেকে কিভাবে মোকাবিলা করতে চেষ্টা করেন?

৩. মনোরঞ্জন আনন্দদায়ক হলেও, কী এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ?

৪, ৫. যখন এক বয়স্ক ব্যক্তি বোধ করেন যে তাকে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির কাছে আকর্ষণীয় থাকতেই হবে তখন ফল কী হতে পারে?

৬. বিবাহ চুক্তির প্রতি অমর্যাদা যিহোবা ঈশ্বর কিরূপে দেখেন?

৭. বিবাহ চুক্তির প্রতি অমর্যাদা সুখী করে না কেন?

৮. বিবাহে দৈহিক সৌন্দর্যের চেয়ে কী বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

৯-১১. (ক) ঈশ্বরের কি উদ্দেশ্য যে সারা জীবন পিতামাতা ও ছেলেমেয়ের সম্পর্ক একই থাকুক? (খ) বয়স্ক ছেলেমেয়ের প্রতি পিতামাতা পরামর্শ দেওয়ার সময় এই বিষয়টি কী সম্পর্ক রাখে? (গ) ছেলেমেয়েরা বিবাহিত হলে, কার মস্তকের ব্যবহারকে পিতামাতা সম্মান করবেন?

১২. (ক) ছেলেমেয়েরা নিজেদের গৃহ স্থাপন করলে, পিতামাতারা কিভাবে পরস্পরের প্রতি প্রেমকে গভীর করতে পারেন? (খ) তাদের জীবন আরও অর্থপূর্ণ করতে তারা আর কী করতে পারেন?

১৩. কোন্‌ প্রেরণা অপরকে সাহায্য করাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে?

১৪, ১৫. জীবনকে কী প্রকৃত সুখী ও পরিতৃপ্ত করে?

১৬, ১৭. (ক) সমস্যা এলে, কী এড়িয়ে চলা দরকার? (খ) এমন কি মৃত্যুতে কেউ তার সাথীকে হারালেও, নতুন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে একা না হয়ে পড়তে কী তাকে সাহায্য করবে?

১৮-২০. পরবর্তী বছরগুলিতেও কোন্‌ বিষয়গুলি জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে?

[১৭৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

দুটি জীবন যত বেশি জড়িত হয়, তত বেশি দুজনে এক হয়