পিতামাতা হিসাবে আপনাদের ভূমিকা
অধ্যায় ৮
পিতামাতা হিসাবে আপনাদের ভূমিকা
জীবনে বহু ঘটনা খুব কমই আমাদের প্রভাবিত করে থাকে। আবার কিছু ঘটনা স্থায়ী ও গভীর প্রভাব ফেলে। শিশুর জন্ম হল স্পষ্টতই পরবর্তী ঘটনাটি। স্বামী ও স্ত্রীয়ের জীবন এরপর আর আগের মত থাকবে না। যদিও খুব ছোট্ট, কিন্তু সেই নতুন ব্যক্তিত্বটি ঘরেতে তার স্বর ও উপস্থিতির মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করায় যাকে অবহেলা করা যায় না।
২ পিতামাতার জীবন নিশ্চয় সুখ ও সমৃদ্ধিপূর্ণ হয়। কিন্তু তা এক চ্যালেঞ্জের উপস্থাপনা করে এবং উত্তম ফলাফলের জন্য বাবামা দুজনেরই সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া দরকার। শিশুকে জন্ম দিতে আপনাদের দুজনেরই প্রয়োজন হয়েছিল এবং জন্মের পর থেকে শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনারা দুজনেই এক মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। আন্তরিক, ঐক্যবদ্ধ—এবং নম্র—সহযোগিতা এখন আগের থেকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
৩ পিতামাতার মধ্যে দুজনেরই ভূমিকাকে জানা এবং সেই দুই ভূমিকা কিভাবে সঙ্গতি রাখতে পারে জানলে, তা আপনার শিশুর চাহিদা পূরণ করতে খুবই সাহায্য করবে যা উত্তম ফল প্রদান করবে। ভারসাম্য রাখার প্রয়োজন আছে। মন যদিও বা যুক্তিপূর্ণ হতে চেষ্টা করে কিন্তু আবেগ অনেক সময় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আমাদের হয়ত চরমে যাওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে, খুব কম থেকে খুব বেশিতে, আবার খুব কমে ফিলিপীয় ৪:৫.
ফিরে আসতে পারি। পিতার মস্তক-ব্যবস্থার ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়, কিন্তু তিনি যদি তা অতিরিক্ত করেন তাহলে উৎপীড়কে পরিণত হতে পারেন। ছেলেমেয়েকে শিক্ষা দিতে ও শাসন করতে মায়ের অংশ গ্রহণ করা ভাল, কিন্তু এই কাজটি পিতাকে বাদ দিয়ে করলে পারিবারিক গঠনের ক্ষতি করে। ভাল বিষয় সবসময় ভাল কিন্তু তাকে চরমে নিয়ে গেলে ভাল বিষয়ও খারাপ হয়ে যায়।—মায়ের চূড়ান্ত ভূমিকা
৪ নবজাত শিশু, তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের জন্য সম্পূর্ণরূপে মায়ের উপর নির্ভর করে। যদি মা ভালবাসার সাথে এই চাহিদাগুলি পূর্ণ করে শিশু সুরক্ষিত বোধ করে। (গীতসংহিতা ২২:৯, ১০) শিশুকে যথেষ্ট আহার দিতে হবে, পরিষ্কার ও যথাযথ তাপমাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে হবে এবং তাপ প্রদান করতে হবে; কিন্তু দৈহিক চাহিদা পূরণ করাই যথেষ্ট নয়। মানসিক চাহিদাগুলিও এদের মতই গুরুত্বপূর্ণ। যদি শিশু ভালবাসা না পায় তাহলে সে নিরাপদ বোধ করে না। শিশু মনোযোগ পেতে চাইলে মা খুব শীঘ্রই বুঝে যায় যে শিশুর সেটি কতখানি প্রয়োজন। যদি শিশুর কান্না ক্রমাগত উপেক্ষা করা হয় তাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। যদি বেশ কিছু কাল ধরে শিশুকে মানসিকরূপে বঞ্চিত করা হয় তাহলে সারা জীবনের জন্য তার মানসিক বৃদ্ধি রোধ হতে পারে।
৫ বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষাগুলি এই বিষয়কে অনুমোদন করে: কথাবার্তা, স্পর্শ, আদর ইত্যাদির মাধ্যমে প্রদর্শিত ভালবাসা থেকে শিশু বঞ্চিত হলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এমন কি মারা পর্যন্ত যেতে পারে। (তুলনা করুন যিশাইয় ৬৬:১২; ১ থিষলনীকীয় ২:৭.) এইগুলি যদিও বা অন্যেরা করতে পারে কিন্তু মা যার গর্ভে এই শিশু জীবন পায় এবং জীবনের প্রথম কয়েক মাসে প্রতিপালিত হয়, সেই মা যে এই কাজ করতে প্রকৃত যোগ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। মা ও শিশুর মধ্যে স্বাভাবিকরূপেই পরস্পরের প্রতি এক প্রতিক্রিয়া ঘটে। নবজাত শিশুকে বুকে তুলে নেওয়ার মায়ের সহজাত ইচ্ছার সাথে মিলে যায় শিশুর সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী মায়ের স্তন খোঁজা।
৬ গবেষণা দেখায় যে শিশুর মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় হয় এবং স্পর্শ, শ্রবণ, দর্শন ও ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়গুলিকে উদ্দীপিত করা হলে তার মানসিক বিকাশ ঘটে। যখন শিশু দুধ খায় তখন সে মায়ের দেহের উষ্ণতা ও চামড়ার গন্ধ বুঝতে পারে। মা তাকে দুধ খাওয়াবার সময় প্রায় সবসময়েই সে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মা গান গাইলে বা কথা বললে সে শুধুমাত্র তার স্বর শোনে তাই নয় কিন্তু তার হৃদস্পন্দনও শুনতে পায়, সেই স্পন্দন যা সে গর্ভে থাকার সময়ে শুনেছিল। এক নরওয়েজিয়ান প্রকাশনায়, শিশু মনস্তত্ত্ববিদ অ্যান-ম্যারিট দুভে লক্ষ্য করেন:
“চোখের তারার সক্রিয়তা যেহেতু মস্তিষ্কের কার্যকারিতার মান প্রদর্শন করে, তাই প্রচুর পরিমাণে স্পর্শ, প্রচুর পরিমাণে যোগাযোগ—দুধ খাওয়াবার সময়ের যোগাযোগও কিছু কম নয়—যে মানসিক সক্রিয়তাকে উদ্দীপিত করে তা বিশ্বাস করার আমাদের যুক্তি আছে, যা পরিশেষে পরিণত বয়সে বেশি বুদ্ধি ক্ষমতা ধারণ করতে পরিচালিত করে।”
৭ তাই মা যখন শিশুকে কোলে তোলে, আদর করে বা স্নান করায় ও গা মুছিয়ে দেয়, তখন শিশু বারে বারে মায়ের ছোঁয়া পাওয়াতে যে উদ্দীপনা পায় সেটি তার বিকাশে এবং পরবর্তী জীবনে সে যে কিরূপ ব্যক্তি হবে সে সম্বন্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রাত্রিবেলা উঠে ক্রন্দনরত শিশুকে সামলান, অতিবাহিত করার মত এক ভাল সময় না হলেও, পরবর্তীকালে উপকারের জ্ঞান নিশ্চয় ঘুম না হওয়ার ক্ষতিপূরণ করতে পারে।
ভালবাসা পাওয়ার মাধ্যমে ভালবাসা শেখা
৮ শিশুর মানসিক দিক দিয়ে বিকাশের জন্য শিশুকে ভালবাসা অত্যন্ত জরুরী। ভালবাসা পাওয়ার মাধ্যমে, ভালবাসার মাঝে থেকে সে ভালবাসতে শেখে। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ১ যোহন ৪:১৯ পদ বলে, “আমরা প্রেম করি, কারণ তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।” প্রেম সম্বন্ধে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার ভার প্রধানত মায়ের উপরে পড়ে। বিছানায় শুয়ে থাকা শিশুর উপর মা উপুড় হয়ে ঝুঁকে পড়ে শিশুর বুকে হাত দিয়ে মৃদুভাবে নাড়িয়ে তার মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে, ‘এই যে! এই যে!’ শিশু নিশ্চয় সেই কথাগুলি বুঝতে পারে না (প্রকৃতপক্ষে সেই কথাগুলি কোন অর্থও রাখে না)। কিন্তু সে আহ্লাদে নড়ে ওঠে ও আওয়াজ করে, কারণ সে বুঝতে পারে যে সেই হাতের দোলা ও স্বর তাকে স্পষ্ট বলছে, ‘আমি সোনাকে ভালবাসি! আমি সোনাকে ভালবাসি!’ এতে সে দৃঢ় আস্থা পায় ও সুরক্ষিত বোধ করে।
৯ যেসব শিশুদের ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভালবাসা দেখানো হয় তারা তা উপলব্ধি করে এবং সেই ভালবাসাকে অনুকরণ করে, ছোট্ট হাত দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে উৎসাহের সঙ্গে কিশি দিয়ে তা প্রদর্শন করে। এর ফলে মায়ের কাছ থেকে আবেগভরা আন্তরিক সাড়া পেয়ে তারা খুশি হয়। ভালবাসা দিয়ে এবং তার সাথে ভালবাসা পেয়ে আনন্দ পাওয়া যায় অর্থাৎ ভালবাসা রোপন করে পরিবর্তে তার ফসল কাটা যায় এই মুখ্য শিক্ষাটি তারা শিখতে আরম্ভ করে। (প্রেরিত ২০:৩৫; লূক ৬:৩৮) সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখায় যে যদি মায়ের সাথে প্রথমদিকে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্থাপন না করা যায়, তাহলে পরবর্তীকালে সন্তান অপরের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হতে ও প্রতিশ্রুতি দান করতে কষ্ট বোধ করে।
১০ যেহেতু ছেলেমেয়েরা জন্মের পরই শিখতে আরম্ভ করে, তাই প্রথম কয়েকটি বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই বছরগুলিতে মায়ের ভালবাসা খুবই জরুরী। মা যদি সফল হন ভালবাসা দেখাতে ও ভালবাসতে শেখাতে—প্রশ্রয় নয়—তাহলে তিনি চিরকালের জন্য মঙ্গল করবেন; কিন্তু যদি ব্যর্থ হন তাহলে তিনি চিরকালের জন্য ক্ষতি করতে পারেন। উত্তম মা হওয়া হল স্ত্রীলোকের সমস্ত কাজের মধ্যে এক সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের ও পুরস্কারস্বরূপ কাজ। এই কাজের সকল কষ্ট ও দাবি থাকা সত্ত্বেও, জগতে আর কী “বৃত্তি” আছে যা এত গুরুত্বপূর্ণ এবং চিরন্তন তৃপ্তি দিতে পারে?
পিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
১১ শিশুর জীবনের প্রথম দিকে মায়ের মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করা স্বাভাবিক। কিন্তু শিশুর জন্মের পর থেকে বাবাকেও শিশুর জগতের অংশ হতে হবে। এমন কি সন্তান যখন শিশু থাকে তখনও বাবা সময়ে সময়ে শিশুর যত্ন নিতে, তার সাথে খেলা করতে, কাঁদলে কান্না থামাতে, বাবা অংশ নিতে পারেন এবং তার অংশ নেওয়াও উচিৎ। এইরূপে বাবা শিশুর মনে গেঁথে যায়। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে বাবার ভূমিকা লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। যদি তিনি শুরু করতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করেন তাহলে শিশু কৈশোরে পৌঁছালে বিশেষকরে যে সমস্যা দেখা যায় তার সৃষ্টি হতে পারে এবং শাসন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কিশোর বয়স্ক ছেলের বিশেষভাবে বাবার সাহায্যের দরকার হতে পারে। কিন্তু যদি পূর্বে উত্তম সম্বন্ধ স্থাপন না করা হয় তাহলে এতকাল ধরে যে ব্যবধানের সৃষ্টি হয়েছে তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দূর করা যায় না।
১২ সন্তান ছেলে বা মেয়ে যাই হোক, বাবার পুরুষসুলভ গুণাবলি সর্বাঙ্গীন, ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশের উপর তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ঈশ্বরের বাক্য দেখায় যে পিতা হবেন পরিবারের মস্তক। তাদের ভরণপোষণ করার দায়িত্ব তার। (১ করিন্থীয় ১১:৩; ১ তীমথিয় ৫:৮) তবুও, “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচে না, কিন্তু সদাপ্রভুর মুখ হইতে যাহা যাহা নির্গত হয় তাহাতেই মনুষ্য বাঁচে।” ছেলেমেয়েদের সম্বন্ধে পিতাকে আজ্ঞা দেওয়া হয় যে “প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩; ইফিষীয় ৬:৪) সন্তানের প্রতি তার স্বাভাবিক স্নেহ তাকে প্ররোচিত করলেও, সবার উপরে স্রষ্টার প্রতি তার দায়িত্বের উপলব্ধি এই ঐশিক কার্যভার, যেটি হল তারই, তা যতদূর সম্ভব উত্তমরূপে পালন করতে তাকে পরিচালিত করা উচিৎ।
১৩ মায়ের দেওয়া স্নেহ, মমতা ও কোমলতার সাথে বাবা দৃঢ়তা ও সঠিক পরিচালনার দ্বারা স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। ঈশ্বরদত্ত তার কার্যভার বাবা যেভাবে পালন করেন তা পরবর্তীকালে মানুষ এবং ঐশিক, উভয় অধিকর্তার প্রতিই সন্তানের আচরণের উপরে এক দৃঢ় প্রভাব ফেলে, যেমন তারা সেই অধিকর্তাকে সম্মান দেয় কি না এবং বিরক্তি প্রকাশ বা বিদ্রোহ না করে অন্যের পরিচালনার অধীনে উত্তমরূপে কাজ করতে পারে কি না।
১৪ যদি তার ছেলে থাকে তাহলে বাবার উদাহরণ এবং যেভাবে বিষয়গুলির প্রতি আচরণ করেন তার উপর অনেকটা নির্ভর করে ছেলে বড় হয়ে দুর্বল, দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তিত্বের হবে অথবা পুরুষসুলভ, অচঞ্চল, দৃঢ় নিশ্চয়তা প্রদর্শন করতে সাহসী এবং দায়িত্ব ভার নিতে ইচ্ছুক এমন প্রকৃতির হবে। সেটি ছেলে পরবর্তী জীবনে কিরূপ স্বামী বা পিতা হবে তার উপর প্রভাব ফেলে—সে কঠোর, অযৌক্তিক, কর্কশ হবে বা ভারসাম্যযুক্ত, নির্ণয়কারী ও দয়ালু হবে। যদি পরিবারে মেয়ে থাকে তাহলে বাবার প্রভাব ও সম্পর্ক সকল পুরুষের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে এবং তা তাকে সাহায্য করতে পারে অথবা ভবিষ্যতে বৈবাহিক সম্পর্কে সফলতায় তা ব্যাঘাতও আনতে পারে। বাবার এই প্রভাব শিশুবস্থা থেকে পড়তে আরম্ভ করে।
১৫ শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাবার বিশাল দায়িত্ব সম্পর্কে ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি তাঁর নির্দেশ দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭ পদে প্রদর্শিত হয়: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”
গীতসংহিতা ১৯:১, ২) এই সকল বিষয় ব্যবহার করতে তৎপর হয়ে এবং বিশেষভাবে দৈনন্দিন জীবনে সঠিক নীতিগুলির উদাহরণ দিয়ে ও তার প্রতি জোর দিয়ে এবং ঈশ্বরের পরামর্শের প্রজ্ঞা ও উপকার সম্পর্কে দেখিয়ে বাবা শিশুর মনে ও হৃদয়ে ভবিষ্যতের জন্য এক সবচেয়ে আবশ্যক ভিত্তি স্থাপন করেন: ঈশ্বর যে আছেন, শুধুমাত্র সেই দৃঢ় বিশ্বাসই নয়, কিন্তু ‘যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।’—ইব্রীয় ১১:৬.
১৬ ঈশ্বরের বাক্যে যে কথাগুলি পাওয়া যায় শুধুমাত্র সেগুলি নয় কিন্তু সেটি যে বার্তা বহন করে থাকে তা শিশুর মনকে প্রতিদিন প্রভাবিত করা উচিৎ। সুযোগ সব সময় রয়েছে। বাগানের ফুল, বাতাসে ওড়া কীটপতঙ্গ, গাছের পাখি বা কাঠবিড়ালী, সমুদ্রতীরের ঝিনুক, পাহাড়ের পাইন ফল, রাতের আকাশে ঝিকিমিকি তারা—এই সকল আশ্চর্য বিষয়গুলি স্রষ্টার সম্বন্ধে বলে এবং ছেলেমেয়েকে আপনার তাদের প্রকাশ করা কথাগুলির অর্থ বলে দেওয়া উচিৎ। গীতরচক বলেন: “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে। দিবস দিবসের কাছে বাক্য উচ্চারণ করে, রাত্রি রাত্রির কছে জ্ঞান প্রচার করে।” (১৭ শাসন করাও হল পিতার ভূমিকার আর একটি অংশ। “পিতা যাহাকে শাসন না করেন এমন পুত্ত্র কোথায়?” এই প্রশ্নটি ইব্রীয় ১২:৭ পদে জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু শাসন যাতে চরমে না যায়, বিরক্ত বা এমন কি হয়রান হওয়ার মত অতিরিক্ত শাসন করা না হয় সেই দায়িত্ব হল তার। ঈশ্বরের বাক্য পিতাদের বলে, “তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” (কলসীয় ৩:২১) বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন আছে, কিন্তু অনেকসময় আমরা নিয়মগুলিকে বাড়িয়েই যাই যতক্ষণ না পর্যন্ত সেগুলি ভারগ্রস্ত ও নিরুৎসাহজনক হয়ে পড়ে।
১৮ প্রাচীনকালের ফরীশীরা নিয়ম খুব ভালবাসত; তারা নিয়ম জড়ো করে ঢিবি তৈরি করে প্রচুর কপট ব্যক্তি তৈরি করেছিল। অতিরিক্ত নিয়মের সৃষ্টি করে সমস্যার সমাধান হবে মনে করা শুধু মানুষের চিন্তামাত্র; কিন্তু জীবনের অভিজ্ঞতা দেখায় যে হৃদয় স্পর্শ করা হল প্রকৃত চাবিকাঠি। তাই নিয়মের ক্ষেত্রে একটু শিথিল হন; পরিবর্তে নীতির প্রয়োগ করুন, ঈশ্বর যেভাবে করেন সেইরূপে আপনিও করুন: “আমি তাহাদের চিত্তে আমার ব্যবস্থা দিব, আর তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব।”—বাবা ও মা হলেন অংশীদার
১৯ বাবা সাধারণত পরিবারের ভরণপোষণ করেন এবং বাড়ি ফিরে আসার পর তিনি হয়ত ক্লান্ত থাকেন আর তার অন্যান্য কাজও থাকে। তবুও তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের জন্য সময় ব্যয় করা উচিৎ। পরিবারের সাথে তার কথাবার্তা বলা উচিৎ, পারিবারিক আলোচনা করতে ও সমস্ত পরিবার মিলে কোন কিছু তৈরি করতে এবং একসঙ্গে ঘুরে-বেড়াতে ও আনন্দ করতে তার সময় রাখা দরকার। এইভাবে পারিবারিক একতা ও অভিন্নতা গড়ে ওঠে। ছেলেমেয়ে জন্মাবার আগে হয়ত তিনি ও স্ত্রী একসঙ্গে বাইরে বহু সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু সেইভাবে এখন চলা, এখানে ওখানে যাওয়া এবং হয়ত রাত অবধি সময় ব্যয় করা পিতামাতার দায়িত্বানুরূপ হবে না। তাদের ছেলেমেয়েদের প্রতি তা হবে অন্যায়। বাবামায়ের এই নিয়মানুবর্তিতা ও দায়িত্বের অভাবের জন্য তাদের আজ নয় কাল তার মূল্য দিতেই হবে। যখন ছেলেমেয়েদের জীবনে প্রয়োজনীয় স্থিরতা ও নিয়মানুবর্তিতা থাকে তখন তারাও বড়দের মত উন্নতি করে; তাতে মানসিক, দৈহিক ও আবেগজনিত স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। বাবামায়েরা অহেতুক আরও সুখদুঃখ যোগ না দিলেও পারিবারিক জীবনের দৈনন্দিন কার্যসূচীতে সবসময় সুখদুঃখ থাকেই।—তুলনা করুন মথি ৬:৩৪; কলসীয় ৪:৫.
মার্ক ৩:২৫) শাসন যেভাবে করা হবে সেই সম্বন্ধে বাবামায়েরা আগে থেকে আলোচনা করে নিলে ভাল করবেন; তাহলে শাসন সম্পর্কে তাদের মধ্যে একতার অভাব ছেলেমেয়েরা দেখতে পাবে না। যদি তা না করা হয় তাহলে তারা ‘ভিন্ন হতে ও জয় করতে’ ছেলেমেয়েদের সুযোগ দিতে পারেন। সত্য যে কোন কোন ক্ষেত্রে বাবামায়েরা হয়ত খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখান ও রেগে যান, অতিরিক্ত শাসন করে থাকেন কিন্তু, যখন সবকিছু বিবেচনা করে দেখা হয়, তখন দেখা যায় যে সেইরকম শাসনের হয়ত কোন দরকার ছিল না। এই বিষয়ে বাবামায়েরা হয়ত নির্জনে নিজেরা কথা বলতে পারেন এবং বাবামায়ের মধ্যে যিনি একটু অন্যায়ভাবে আচরণ করেছেন তিনি হয়ত সন্তানের সাথে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি আবার ঠিক করে নিতে পারেন। অথবা, যেখানে নির্জনে কথা বলার সুযোগ থাকে না আর কেউ মনে করেন যে সাথীকে সমর্থন করা হবে অন্যায়কে সমর্থন করা, তাহলে তিনি এই প্রকৃতির কিছু বলতে পারেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে কেন তুমি রেগে গিয়েছ আর আমিও হয়ত রেগে যেতাম। কিন্তু একটি বিষয় হয়ত তোমার অবগত ছিল না, সেটি হল . . . ’ তারপর যে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। শাসিত সন্তানের সামনে অমিল ও দ্বিমত না দেখিয়ে তা শান্ত প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন অনুপ্রাণিত হিতোপদেশ বলে: “অহঙ্কারে কেবল বিবাদ উৎপন্ন হয়; কিন্তু যাহারা পরামর্শ মানে, প্রজ্ঞা তাহাদের সহবর্ত্তী।”—হিতোপদেশ ১৩:১০; আরও দেখুন উপদেশক ৭:৮.
২০ ছেলেমেয়ের সাথে ব্যবহার করার, শিক্ষা দেওয়ার, তাদের জন্য বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করার, শাসন করার, ভালবাসার সময় বাবামাকে সহযোগিতা করতে হবে। ‘কোন পরিবার যদি আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তবে সেই পরিবার স্থির থাকিতে পারে’ না। (২১ ইব্রীয় শাস্ত্র দেখায় শাসন করা হবে দ্বৈত ভূমিকা: “বৎস, তুমি তোমার পিতার উপদেশ শুন, তোমার মাতার ব্যবস্থা ছাড়িও না।” খ্রীষ্টীয় হিতোপদেশ ১:৮; ইফিষীয় ৬:১.
গ্রীক শাস্ত্রও তাই বলে: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য।” অনেক সময় বাবারা মনে করেন ছেলেমেয়েকে শাসন করা হল মায়ের দায়িত্ব। অথবা, মা হয়ত এর বিপরীত মনে করতে পারেন এবং বাচ্চা দুষ্টুমি করলে, ‘দাঁড়াও, বাবা ঘরে আসুক!’ এই বলে শুধু ভয় দেখান ছাড়া কিছুই করেন না। কিন্তু যদি পরিবারে সুখ পেতে হয়, বাবামা প্রত্যেকেই যদি ছেলেমেয়ের কাছ থেকে ভালবাসা ও সম্মান পেতে চান, তাহলে দায়িত্বকে ভাগ করে নিতে হবে।—২২ এই ক্ষেত্রে বাবামায়ের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা এবং দুজনের মধ্যে প্রত্যেকের নিজের দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছাটি ছেলেমেয়ের দেখতে পাওয়া দরকার। বাচ্চা কিছু চাইলে সে সবসময় যদি শোনে বাবা বলে, ‘যাও, মাকে জিজ্ঞাসা কর,’ অথবা মা যদি একইরূপে সবসময় সিদ্ধান্তের জন্য বাবার কাছে যেতে বলেন, তখন তারা দেখেন যে যাকে (বাবা অথবা মা) সেই আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে ‘না’ বলতে হবে তাকে শত্রুতে পরিণত করায়। নিশ্চয়, এমন কোন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন বাবা হয়ত বলতে পারেন, ‘তুমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যেতে পার—কিন্তু মাকে জিজ্ঞাসা করে যাও যে কখন খাবার তৈরি হয়ে যাবে।’ অথবা মা অনেক সময় বাচ্চার অনুরোধ আপত্তিজনক মনে না করলেও, স্বামীর এই বিষয়ে কিছু বলা ভাল মনে করতে পারেন। কিন্তু সন্তান নিজের স্বার্থ সাধন করতে বাবামাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে ফেলতে বা উৎসাহ দিতে না পারে তার প্রতি তারা যেন সজাগ থাকেন। এক বিজ্ঞা স্ত্রী, স্বামীকে অবজ্ঞা করে সন্তানের কাছ থেকে বেশি ভালবাসা পাওয়ার জন্য প্রশ্রয় দিয়ে নিজের অধিকারের অংশকে প্রতিযোগিতামূলক উপায়ে ব্যবহার করা থেকেও নিজেকে সংযত করবেন।
২৩ আসলে, পারিবারিক সিদ্ধান্তে প্রত্যেক সদস্যেরই কোন কোন ক্ষেত্র থাকে যেখানে তাদের সিদ্ধান্তকেই বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হয়। হিতোপদেশ ৩১:১১, ২৭) ছেলেমেয়েরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের খেলার জায়গা সম্বন্ধে, পোশাক-আশাক পছন্দের ক্ষেত্রে অথবা ব্যক্তিগত কোন বিষয় সম্পর্কে তাদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এইক্ষেত্রে যাতে যুক্তিপূর্ণ নীতিগুলি অনুসরণ করা হয়, সন্তানের বিপদাশঙ্কা না থাকে এবং অপরের অধিকার লঙ্ঘন না করা হয়, তা দেখার জন্য পিতামাতার যথেষ্ট তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন। এটি ছেলেমেয়েকে ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত-গ্রহণ করতে শেখাবে।
পরিবারের সর্বাঙ্গীন কল্যাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বাবার থাকে, অন্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে এবং তাদের ইচ্ছা ও পছন্দকে বিবেচনা করে বেশির ভাগ সময় তা করা হয়ে থাকে। মা রান্না ও গৃহস্থালীসংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। (পিতামাতারা আপনাদের সম্মান করা কি সহজ?
২৪ সন্তানদের বলা হয়, “তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও।” (ইফিষীয় ৬:২; যাত্রাপুস্তক ২০:১২) তাদের পক্ষে তা করা হল ঈশ্বরের আজ্ঞাকেও সমাদর করা। তাদের কি সেটি করা আপনি সহজ করে দেন? স্ত্রী যে আপনি, স্বামীকে সমাদর ও সম্মান করতে আপনাকে বলা হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য স্বামীর কাছ থেকে যা আশা করে তা করতে সে যদি খুব সামান্য বা একেবারেই প্রচেষ্টা না করে তাহলে আপনার পক্ষে কি তাকে সম্মান প্রদর্শন করা কষ্টকর হয় না? স্বামী, আপনাকে প্রিয় সাহায্যকারিনী হিসাবে আপনার স্ত্রীকে অত্যন্ত ভালবাসতে ও সমাদর করতে হবে। সে যদি সাহায্যকারিনী না হয়, তাহলে কি কষ্টকর হবে না? তাই আপনাদের অর্থাৎ তাদের বাবামাকে সমাদর করার ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করতে আপনার ছেলেমেয়েদের জন্য সহজ করে দিন। এক শন্তিপূর্ণ ঘর, উত্তম মান, আপনাদের নিজেদের আচরণের এক উত্তম উদাহরণ, সুযুক্তিপূর্ণ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে প্রেমময় শাসন করে আপনারা সম্মান অর্জন করতে পারবেন।
উপদেশক ৪:৯) দুজন রাস্তায় চলার সময় একজন পড়ে গেলে, আর একজন থাকে তাকে সাহায্য করার জন্য। সেইরূপে, স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই তাদের নিজেদের ভূমিকা অনুসারে পরস্পরকে সমর্থন ও উৎসাহিত করতে পারে। পিতামাতার কর্তব্যের বহু ক্ষেত্রে সেই ভূমিকাগুলি একে অপরকে আবৃত করে এবং সেটি পারিবারিক একতার জন্য ভাল। একটি সাধারণ কাজে তাদের ঐক্যবদ্ধ করে ছেলেমেয়েদের বাবামাকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আনা উচিৎ। কিন্তু অনেক সময় সন্তানকে কিভাবে শিক্ষা দেওয়া ও শাসন করা হবে সে সম্পর্কে বিভেদমূলক প্রশ্ন উঠতে পারে। অনেক সময় স্ত্রী সন্তানের প্রতি এত বেশি মনোযোগ দেন যে স্বামী অবহেলিত বোধ করেন, এমন কি অসন্তুষ্টও হন। এটি স্বামীর সন্তানের প্রতি মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি সন্তানের প্রতি শীতল মনোভাবাপন্ন হতে পারেন অথবা, পরিবর্তে, তার প্রতি প্রচুর স্নেহ দেখাতে পারেন আর স্ত্রীয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া কম করতে পারেন। যখন স্বামী অথবা স্ত্রী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তখন তাদের এর জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হয়।
২৫ “একজন অপেক্ষা দুই জন ভাল,” লক্ষ্য করেন রাজা শলোমন, “কেননা তাহাদের পরিশ্রমে সুফল হয়।” (২৬ আবার আর একটি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যখন একটি সন্তান থাকাকালীন আর একটি নবজাত শিশু আসে। নবজাত শিশুটির সাথে মাকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। বড় শিশুটি যাতে অবহেলিত বোধ না করে ও হিংসাপরায়ণ না হয়, তাই বাবা বড় শিশুটির প্রতি একটু বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।
২৭ এটি সত্যি যে একজনের চেয়ে দুজন ভাল কিন্তু কেউ না থাকার চাইতে একজন থাকা ভাল। এমন হতে পারে যে, কোন পরিস্থিতির জন্য ১ পিতর ৩:১-৪.
মাকে বাবার সাহায্য ব্যতিরেকেই ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে হয়। অথবা, বাবাকে এইরূপ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় পরিবার ধর্মের দিক দিয়ে বিভক্ত হতে পারে, সেইক্ষেত্রে পিতামাতার মধ্যে একজন যিহোবা ঈশ্বরের সেবক হওয়ার জন্য বাইবেলের পরামর্শের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখে কিন্তু অপরজন রাখে না। যে ক্ষেত্রে স্বামী একজন উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি, সেখানে পরিবারের মস্তক হিসাবে সন্তানের শিক্ষা ও শাসনের বিষয়ে তার বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকে। কিন্তু, তাকে হয়ত চরম সহিষ্ণুতা, আত্মসংযম ও ধৈর্য দেখাতে হতে পারে; গুরুতর কোন প্রশ্ন উঠলে তাকে দৃঢ় হতে হবে, আবার উত্তেজিত হওয়ার মত পরিস্থিতি এলে তাকে শান্ত ও যুক্তিসঙ্গতও হতে হবে এবং যেখানে সম্ভব তাকে নমনীয়ও হতে হবে। যদি স্ত্রী বিশ্বাসী হন তাহলে স্বামীর প্রতি বশ্যতা তিনি কিভাবে দেখাবেন এর অনেকটা নির্ভর করবে স্বামীর আচরণের উপরে। তিনি কি শুধুমাত্র বাইবেলের প্রতি আগ্রহী নন অথবা স্ত্রীকে তার নিজস্ব বিশ্বাস অনুসরণ করতে এবং সেই বিশ্বাস স্ত্রী ছেলেমেয়েদের শেখাতে চেষ্টা করলে তিনি বিরোধিতা করেন? যদি তিনি তাকে বিরোধিতা করেন তাহলে স্ত্রীকে প্রেরিতের নির্দেশিত পথের প্রতি নির্ভর করতে হবে: স্ত্রীয়ের কর্তব্যগুলি উদাহরণযোগ্যরূপে পালন করে এবং সম্মানসূচক মনোভাব দেখিয়ে “বাক্য বিহীনে” তার স্বামীকে লাভ করা যেতে পারে। ছেলেমেয়েকে বাইবেল নীতিগুলি শিক্ষা দেওয়ার জন্য তার যে সকল সুযোগ আছে স্ত্রী সেইগুলিও ব্যবহার করবেন।—গৃহের পরিস্থিতি
২৮ বাবামায়ের দুজনের ভূমিকা হল গৃহেতে ভালবাসার এক পরিবেশ সৃষ্টি করা। যদি ছেলেমেয়েরা তা অনুভব করে তাহলে তারা বাবামাকে কোন কিছু বলতে ভয় করে তাদের মনে অনিশ্চয়তা ও ভুলত্রুটিগুলি জড়ো করবে না। তারা জানে যে তারা কথাবার্তা বলতে পারে এবং ১ যোহন ৪:১৭-১৯; ইব্রীয় ৪:১৫, ১৬.) গৃহ শুধুমাত্র এক আচ্ছাদন হবে না তা আশ্রয়স্থলও হবে। বাবামায়ের স্নেহ ছেলেমেয়ের মানসিকতার বৃদ্ধি ও উন্নতি করতে সাহায্য করবে।
বাবামা তাদের বুঝতে পারেন এবং সেই বিষয়টি প্রেমের সাথে বিবেচনা করা হবে। (তুলনা করুন২৯ সিরকায় একটি স্পঞ্জ চুবিয়ে সেটি জল শোষণ করবে বলে আপনি আশা করতে পারেন না। চারিপাশে যা আছে সেটি শুধুমাত্র তাই শোষণ করতে পারে। যদি স্পঞ্জটিকে জলে চুবানো হয় তাহলেই তা শুধুমাত্র জল শোষণ করবে। সন্তানেরাও চারিপাশের পরিস্থিতিকে আত্মভূত করে। তারা তাদের চারিপাশের মনোভাব উপলব্ধি করে এবং আচরণগুলিকে লক্ষ্য করে এবং সেগুলি তারা স্পঞ্জের মত শুষে নেয়। আপনার মনোভাবকে সন্তানেরা বুঝতে পারে, সেটি স্নায়ুর চাপ, না হাল্কা শান্তিপূর্ণ মেজাজ। এমন কি শিশুরাও ঘরের পরিস্থিতির গুণাবলি আয়ত্ব করতে পারে তাই বিশ্বাস, প্রেম, আত্মিকতা এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরতা হল অমূল্য গুণাবলি।
৩০ নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: আপনার সন্তানেরা কিরূপ মান অনুযায়ী চলবে বলে আপনি আশা করেন? পিতামাতারা আপনারা উভয়ে কি সেই মান অনুযায়ী চলেন? আপনার পরিবার কিসের পক্ষে দাঁড়ায়? সন্তানদের জন্য আপনি কিরূপ উদাহরণ? আপনি কি অভিযোগ করেন, দোষত্রুটি খোঁজেন, অপরের সমালোচনা করেন, নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন? আপনি কি সেই প্রকৃতির সন্তান চান? অথবা, আপনার পরিবারের জন্য আপনি কি এক উচ্চ মান রেখেছেন, সেই অনুসারে চলেন এবং আশা করেন আপনার সন্তানেরাও তা অনুসরণ করুক? সন্তানেরা কি বুঝতে পারে যে তারা এই পরিবারের হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু অবশ্যকরণীয় বিষয়গুলি তাদের করতে হবে, বিশেষ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য এবং বিশেষ কিছু ধরনের আচরণ ও ক্রিয়াগুলি গ্রহণযোগ্য নয়? তারা যে কারোর সন্তান, এমন সুরক্ষা পেতে সন্তানেরা
ভালবাসে, তাই তারা যখন পারিবারিক মান অনুযায়ী চলে তখন তাদের আপনাদের অনুমোদন ও স্বীকৃতি বোধ করতে দিন। লোকেদের কাছ থেকে যেরকম আশা করা হয় সেই অনুসারে জীবনযাপন করতে লোকে জানে। সন্তানকে যদি আপনি খারাপ হিসাবে মূল্যায়ন করেন তাহলে হয়ত সে আপনাকে সঠিক প্রতীয়মান করবে। তার কাছ থেকে ভাল আশা করুন এবং সেই অনুযায়ী চলতে তাকে উৎসাহ দিন।৩১ কথার থেকেও আচরণের দ্বারা বেশি লোককে বিচার করা হয়। সন্তানেরাও ঠিক তাই, কথার উপর বেশি মনোযোগ না থাকলেও তাদের আচরণের উপর বেশি মনোযোগ থাকে এবং বেশির ভাগ সময় তারা যে কোন ভণ্ডামি তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে। খুব বেশি কথাবার্তা আপনার সন্তানকে বিভ্রান্ত করতে পারে। আপনার কথাগুলির সাথে আপনার আচরণের যাতে সামঞ্জস্য থাকে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হন।—১ যোহন ৩:১৮.
৩২ আপনি বাবা অথবা মা, যাই হোন আপনার ভূমিকা হল এক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু জীবনদাতার পরামর্শ অনুসরণ করে উত্তম ফলাফলের সাথে সেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া যায়। যেন তাঁর প্রতি করছেন এইরূপে আপনাকে প্রদত্ত ভূমিকাটি পূর্ণ বিবেকের সাথে পালন করুন। (কলসীয় ৩:১৭) চরমে যাওয়া এড়িয়ে চলুন, ভারসাম্য বজায় রাখুন এবং আপনার “শান্ত ভাব মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক,” তার সাথে আপনার সন্তানদের কাছেও।—ফিলিপীয় ৪:৫.
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
১-৩. (ক) শিশুর জন্ম পিতামাতার উপর কী প্রভাব আনতে পারে? (খ) পিতামাতা হিসাবে বাবা ও মায়ের ভূমিকাটি জানা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
৪. মায়ের কাছ থেকে শিশুর কী কী প্রয়োজন হয়?
৫-৭. সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে মায়ের ভালবাসা ও স্নেহ দ্বারা শিশু কিভাবে প্রভাবিত হয়?
৮-১০. (ক) মায়ের ভালবাসা থেকে শিশু কী শেখে? (খ) কেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ?
১১. (ক) পিতা কিভাবে সন্তানের মনে তার ভূমিকাটি স্থাপন করতে পারেন? (খ) কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
১২, ১৩. (ক) পরিবারে পিতার ভূমিকা কী? (খ) পিতার সঠিকরূপে কর্তব্য পালন কিভাবে অধিকর্তার প্রতি সন্তানের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে?
১৪. পিতার উত্তম উদাহরণ তার ছেলে বা মেয়ের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে?
১৫, ১৬. (ক) বাইবেল পিতার উপর শিক্ষার কোন্ দায়িত্বভার ন্যস্ত করে? (খ) সেটি কিরূপে পালন করা যেতে পারে?
১৭, ১৮. (ক) পিতা কিভাবে সন্তানকে শাসন করবেন? (খ) বহু নিয়ম করার চাইতে কোন্ বিষয়টি বেশি কার্যকারী?
১৯. ঘরেতে উত্তম ভাব-বিনিময় স্থাপনের জন্য কী করা যেতে পারে?
২০. সন্তানকে শাসন করার ক্ষেত্রে পিতামাতারা কী করতে পারেন যাতে তারা তাদের প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেন?
২১. পিতামাতার মধ্যে একজনের উপর কি শাসন করার দায়িত্বভার ন্যস্ত করা যেতে পারে? কেন অথবা কেন নয়?
২২. সন্তানের অনুরোধ রাখার সময় কী এড়িয়ে চলতে হবে এবং কেন?
২৩. পরিবারের সিদ্ধান্ত-গ্রহণ কি পিতাতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ?
২৪. সন্তানদের পিতামাতাকে সমাদর করা উচিৎ এই বিষয়টি পিতামাতার উপর কোন্ দায়িত্ব আনে?
২৫. সন্তানকে কিভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে সেই সম্বন্ধে পিতামাতারা ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কোন্ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে?
২৬. যখন মাকে নবজাত শিশুর প্রতি বেশি সময় দিতে হয় তখন বড় শিশুটি যাতে হিংসাপরায়ণ না হয় তাই কী করা যেতে পারে?
২৭. দম্পতির মধ্যে একজন অবিশ্বাসী হলে সন্তানদের কিরূপে আত্মিকভাবে সাহায্য করা যেতে পারে?
২৮, ২৯. কোন্ প্রকৃতির গৃহ পরিবেশ আকাঙ্ক্ষিত এবং কেন?
৩০. সন্তানদের প্রতি উত্তম নির্দেশ প্রদান করছেন কি না তা নির্ধারণ করতে পিতামাতারা কোন্ প্রশ্নগুলি নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন?
৩১. পিতামাতার নির্দেশের সাথে সবসময় কিসের সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন?
৩২. কার পরামর্শ সবসময় অনুসরণ করা দরকার?
[১০০ পৃষ্ঠার চিত্র]
মায়ের দৃষ্টি, স্পর্শ এবং কষ্ঠস্বর তার শিশুকে বলে, “আমি সোনাকে ভালবাসি”
[১০৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি ছেলেমেয়ের সাথে কিছু করার পরিকল্পনা করেন?