সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রেমে শাসন করার মূল্য

প্রেমে শাসন করার মূল্য

অধ্যায় ১০

প্রেমে শাসন করার মূল্য

বাধ্য, প্রেমপরায়ণ, ভদ্র ছেলেমেয়ে আপনা-আপনিই হয় না। উদাহরণ ও শাসনের মাধ্যমে তাদের গড়ে তৈরি করা হয়।

বহু শিশু মনস্তত্ত্ববিদেরা সন্তানদের উপর “হাত তুলবেন না” বলেন, যেমন, একজন বলেন: “মায়েরা আপনারা কি উপলব্ধি করতে পারছেন যে, যতবার আপনি সন্তানের উপর হাত তোলেন ততবার আপনি ব্যক্ত করেন যে আপনি সন্তানকে ঘৃণা করেন?” কিন্তু তাঁর বাক্যে ঈশ্বর বলেন: “যে প্রহার করে না, সে পুত্রকে দ্বেষ করে, কিন্তু যে তাহাকে প্রেম করে, সে সযত্নে শাস্তি দেয়।” (হিতোপদেশ ১৩:২৪, রিভাইসড্‌ স্ট্যাণ্ডারড ভারশন) কিছু দশক পূর্বে, বিশেষভাবে পশ্চিমের দেশগুলিতে, শাসনবিহীন তত্ত্বগুলিসহ শিশু শিক্ষা সম্বন্ধে বইগুলি বাজারে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। মনস্তত্ত্ববিদেরা বলেন শাসন করলে সন্তানকে দমন করা হবে এবং তার বৃদ্ধি রোধ করবে; আর প্রহার করা, সেটি ভাবলেই তারা বিভীষিকা বোধ করে। তাদের তত্ত্বের সাথে যিহোবা ঈশ্বরের পরামর্শের সংঘর্ষ লাগে। তাঁর বাক্য বলে তোমরা ‘যা বুনবে তাই কাটবে।’ (গালাতীয় ৬:৭) কিছু দশক ধরে শাসনবিহীন এই বীজ রোপন, কী প্রমাণ করে?

অতিরিক্ত মাত্রায় অপরাধ ও শিশু অপরাধ সম্পর্কীয় ফসল সর্বজনবিদিত। শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলিতে গুরুতর অপরাধগুলির মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি অপরাধগুলি হল কিশোর-অপরাধ। জগতের কোন কোন অংশে পাঠব্যবস্থা বন্ধ, মারামারি, গালিগালাজ এবং অশ্লীলতা, বর্বরের ন্যায় ধ্বংস করা, অত্যাচার, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, ধর্ষণ, নেশাকর ওষুধ ও হত্যার দ্রুত বৃদ্ধির স্থান হল স্কুল ক্যাম্পাসগুলি। এক প্রধান দেশের শিক্ষক গোষ্ঠীর মুখপাত্র লক্ষ্য করেন, শাসন সমস্যার কারণ হল ছেলেমেয়েদের ছোটবেলায় হৃদয় স্পর্শ করতে স্কুলগুলির ব্যর্থতা এবং পারিবারিক অবনতি ও ছেলেমেয়েদের আচরণ সম্বন্ধে যুক্তিসঙ্গত মান নির্ণয় করতে পিতামাতার অনিচ্ছার কারণেই শিশু অপরাধ ঘটছে। ‘পরিবারের কোন এক সদস্য কেন দুষ্কৃতিকারীতে পরিণত হয় এবং অপরেরা কেন হয় না,’ এই প্রশ্নটি বিবেচনা করতে গিয়ে দ্যা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে: “পরিবারে শাসন করার নিয়ম, হয় খুব শিথিল নয় খুব কঠিন অথবা অসঙ্গত ছিল। মার্কিন গবেষণা বলে যে হয়ত বিচক্ষণতাহীন নয় শাসনের জন্য ৭০ শতাংশ দুষ্কৃতিকারীর সৃষ্টি হয়েছে।”

পরিণাম অভিজ্ঞতা করার পর অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে শাসন করার বিষয়ে ফিরে এসেছে।

শাসন-দণ্ড

শাসন হয়ত সন্তানের পক্ষে জীবন রক্ষাকারী হতে পারে কারণ ঈশ্বরের বাক্য বলে: “বালককে শাসন করিতে ত্রুটি করিও না; তুমি দণ্ড দ্বারা তাহাকে মারিলে সে মরিবে না। তুমি দণ্ড দ্বারা তাহাকে প্রহার করিবে, পাতাল [কবর] হইতে তাহার প্রাণকে রক্ষা করিবে।” আবার, “বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে, কিন্তু শাসন-দণ্ড তাহা তাড়াইয়া দিবে।” (হিতোপদেশ ২৩:১৩, ১৪; ২২:১৫) পিতামাতারা যদি সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন তাহলে তারা কোন গুরুত্ব না দিয়ে বা অমনোযোগী হয়ে শাসন করাকে অবহেলা করবেন না। প্রয়োজন হলে প্রেম তাদের শাসন করতে উদ্যত করবে, বিজ্ঞতার সাথে ও ন্যায্যভাবে।

শাসন করা শুধুমাত্র শাস্তি দেওয়াতে সীমিত থাকে না। শাসন করার মূল অর্থ হল ‘এক নির্দিষ্ট নিয়ম বা কাঠামো অনুসারে নির্দেশ এবং শিক্ষা দেওয়া।’ সেই কারণেই হিতোপদেশ ৮:৩৩ পদ বলে, ‘শাসন অনুভব করতে,’ নয় কিন্তু “শাসনে অবধান কর, জ্ঞানবান হও।” খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিদের ২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫ (NW) পদ অনুসারে, “সকলের প্রতি কোমল, শিক্ষাদানে নিপুণ, সহনশীল হওয়া, এবং মৃদু ভাবে বিরোধিগণকে নির্দেশ দেওয়া . . . উচিৎ।” এখানে “নির্দেশ দেওয়া” শব্দটি শাসনের গ্রীক শব্দ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। সেই একই শব্দ ইব্রীয় ১২:৯ পদে অনুবাদ করা হয়: “আমাদের মাংসিক পিতাদের আমরা সমাদর করিয়াছি যাঁরা আমাদের শাসন করেছিলেন; তবে আত্মিক পিতার প্রতি কি আমরা অনেকগুণ অধিক পরিমাণে বশীভূত হইয়া জীবন ধারণ করিব না?”—নিউ ইংলিশ বাইবেল।

এক জন বাবা অথবা মা যিনি শাসন করতে ব্যর্থ হন তিনি সন্তানের কাছ থেকে সম্মান পাবেন না, ঠিক যেমন একজন শাসক কোন শাস্তি না দিয়ে অন্যায় করতে অনুমতি দিলে নাগরিকদের কাছ থেকে কোন সম্মান পান না। সঠিকরূপে শাসন করলে সন্তান উপলব্ধি করতে পারে যে পিতামাতা তার যত্ন নেন। এর ফলে ঘর হয় শান্তিময়, কারণ “তদ্দ্বারা যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে, তাহা পরে তাহাদিগকে ধার্ম্মিকতার শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে।” (ইব্রীয় ১২:১১) অবাধ্য, অভদ্র সন্তান যে কোন ঘরেতেই বিরক্তির কারণ হয় ও সেই প্রকৃতির ছেলেমেয়েরা কখনই সুখী হয় না এমন কি নিজেদের প্রতিও না। “তোমার পুত্ত্রকে শাস্তি দেও, সে তোমাকে শান্তি দিবে, সে তোমার প্রাণকে আনন্দিত করিবে।” (হিতোপদেশ ২৯:১৭) প্রেমের সাথে কিন্তু দৃঢ় শাসন করার পর সন্তান বেশ কিছুটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পায় ও নতুন করে শুরু করে এবং বেশির ভাগ সময়ে অনেক ভাল সঙ্গীতে পরিণত হয়। শাসন, বাস্তবিকই, “শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে।”

“প্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন।” (ইব্রীয় ১২:৬) যে পিতামাতারা সন্তানদের প্রকৃতই মঙ্গল কামনা করেন তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। ভালবাসার জন্যই শাসন করা উচিৎ। সন্তানের অন্যায় কাজের জন্য রেগে যাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু বাইবেল যেমন বলে একজনকে “সহনশীল” হতে হবে। (২ তীমথিয় ২:২৪) শান্ত হওয়ার পরে ছেলেমানুষি অন্যায়কে বড় বলে মনে হয় না: “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে, আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা।” (হিতোপদেশ ১৯:১১; আরও দেখুন উপদেশক ৭:৮, ৯.) ক্ষমা করা যায় এমন পরিস্থিতিও হতে পারে: সন্তান হয়ত অত্যন্ত ক্লান্ত বা তার শরীর ভাল নেই। তাকে যা বলা হয়েছিল সে হয়ত তা ভুলে গেছে; বড়রাও সেই রকমই করে থাকে, তাই না? অন্যায় কাজকে উপেক্ষা না করলেও, শাসন করা এক অনিয়ন্ত্রিত হঠাৎ চিৎকার অথবা প্রহারে পরিণত হওয়া উচিৎ নয় যা পিতামাতাদের মানসিক চাপকে এর মাধ্যমে হাল্কা করে। শাসনের সাথে যুক্ত আছে নির্দেশ আর ক্রোধান্বিত হয়ে চিৎকার করলে সন্তান আত্ম-সংযম নয় কিন্তু এর অভাবের শিক্ষাটিই গ্রহণ করবে। উত্তমরূপে নির্দেশিত শাসনের মাধ্যমে তাকে যে যত্ন করা হয় সন্তানের এই উপলব্ধি বোধটি এখানে অনুপস্থিত থাকে। তাই, ভারসাম্যের প্রয়োজন এবং এতে শান্তি আসে।

দৃঢ় সীমাগুলি নির্ধারণ করা

ছেলেমেয়েদের নির্দেশ দেওয়ার কর্তব্য হল পিতামাতাদের। “বৎস, তুমি আপন পিতার আজ্ঞা পালন কর, আপন মাতার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না। উহা সর্ব্বদা তোমার হৃদয়ে গাঁথিয়া রাখ, তোমার কষ্ঠদেশে বাঁধিয়া রাখ। গমনকালে সে তোমাকে পথ দেখাইবে, শয়নকালে তোমার প্রহরী হইবে, জাগরণকালে তোমার সহিত আলাপ করিবে। কেননা আজ্ঞা প্রদীপ ও ব্যবস্থা আলোক, এবং শিক্ষাজনক অনুযোগ জীবনের পথ।” পিতামাতার এই আদেশগুলি সন্তানকে পরিচালনা ও সুরক্ষা প্রদান এবং সন্তানের মঙ্গল ও সুখের প্রতি পিতামাতার চিন্তাকে প্রতিফলিত করে।—হিতোপদেশ ৬:২০-২৩.

১০ এই ক্ষেত্রে যে পিতা ব্যর্থ হন তিনি তার জন্য দায়ী হন। প্রাচীন ইস্রায়েলের মহাযাজক এলি তার ছেলেদের লোভ, অসম্মান প্রদর্শন ও অনৈতিকতা চরিতার্থ করতে প্রশ্রয় দেন। তিনি তাদের সামান্য মৌখিক বাধা দিলেও এই মন্দকাজ বন্ধ করার জন্য কোন প্রকৃত পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ঈশ্বর বলেন: “সে যে অপরাধ জানে, সেই অপরাধের জন্য আমি যুগানুক্রমে তাহার কুলকে দণ্ড দিব; কেননা তাহার পুত্ত্রেরা আপনাদিগকে শাপগ্রস্ত করিতেছে, তথাপি সে তাহাদিগকে নিবৃত্ত করে নাই।” (১ শমূয়েল ২:১২-১৭, ২২-২৫; ৩:১৩) অনুরূপে মা যদি তার কর্তব্যে ব্যর্থ হন তাহলে তিনিও অপমানিত হন: “দণ্ড ও অনুযোগ প্রজ্ঞা দেয়; কিন্তু অশাসিত বালক [অথবা বালিকা] মাতার লজ্জাজনক।”—হিতোপদেশ ২৯:১৫.

১১ ছেলেমেয়েদের জন্য সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তা না থাকলে তারা অস্থির বোধ করে। সেই সীমা থাকা ও তা মেনে চলা সন্তানদের, একটি দলভুক্ত এই উপলব্ধিবোধ দেয়; তারা সেই আবশ্যকতাগুলি মেনে চলে বলেই তারা সেই দলের অন্তর্ভুক্ত এবং দলও তাদের স্বীকার করে। বিনা শাসনে ছোটরা পরিত্যক্ত হয় ও নাজেহাল হওয়ার জন্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলাফল দেখায় যে, সন্তানদের প্রয়োজন এমন পিতামাতার, যাদের সীমা সম্পর্কে দৃঢ়তা আছে ও তা আরোপ করতে পারেন। সন্তানদের উপলব্ধি করা দরকার যে পৃথিবীতে সকলের জন্য সীমা নির্ধারণ করা আছে এবং তা ব্যক্তিগত সুখ ও মঙ্গল আনে। স্বাধীনতা একমাত্র তখনই উপভোগ করা যায় যখন অপরে আমাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রটি উপলব্ধি করতে পারে এবং আমরা তাদেরটি উপলব্ধি করতে পারি। উপযুক্ত সীমাকে পেরিয়ে যাওয়ার অর্থই হল যে পেরিয়েছে সে ‘সীমা অতিক্রম করিয়া এই ব্যাপারে আপন ভ্রাতাকে ঠকাইতেছে।’—১ থিষলনীকীয় ৪:৬.

১২ যখন সন্তানেরা শেখে যে উপযুক্ত সীমা পার হলে কোন না কোনভাবে শাস্তি পেতেই হয়, তখন তারা নিজেদের সীমা বুঝতে পারে ও পিতামাতার দৃঢ়তা ও নির্দেশের মাধ্যমে তৃপ্তিমূলক জীবন-যাপনের প্রয়োজনীয় আত্ম-সংযম তারা গড়ে তোলে। হয় আমরা নিজেকে নিজে শাসন করি না হয় বাইরের কোন উৎস আমাদের শাসন করে। (১ করিন্থীয় ৯:২৫, ২৭) যদি আমরা নিজেকে সংযত করতে শিখি এবং আমাদের সন্তানদেরও তাই করতে শিক্ষা দিই, আমাদের এবং তাদের জীবন হবে আনন্দের, সমস্যা ও দুঃখ থেকে মুক্ত।

১৩ সন্তানদের জন্য নির্দেশ ও সীমাগুলি যেন স্পষ্ট, ন্যায্য এবং করুণাপূর্ণ হয়। খুব বেশি আশা করবেন না আবার খুব কমও আশা করবেন না। তাদের বয়সটি স্মরণ করুন কারণ বয়স অনুযায়ী তারা আচরণ করে। ছোট্ট এক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বলে তাদের মনে করবেন না। প্রেরিত পৌল বলেন যখন তিনি শিশু ছিলেন তখন তিনি শিশুর মত আচরণ করতেন। (১ করিন্থীয় ১৩:১১) কিন্তু একবার যখন যুক্তিসঙ্গত নিয়মগুলি স্থাপন করা হয়ে যায় আর আপনার ছেলেমেয়েরা তা উপলব্ধি করতে পারে তখন সঙ্গতি রেখে তৎক্ষণাৎ নিয়মগুলি বলবৎ করুন। “তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক।” (মথি ৫:৩৭) যে পিতামাতারা তাদের কথা রাখেন, সঙ্গতি রেখে চলেন, যাদের বোঝা যায়, সন্তানেরা প্রকৃতই তাদের উপলব্ধি করে কারণ তারা পিতামাতার সমর্থনের শক্তি বোধ করে এবং সমস্যা এলে, সাহায্যের প্রয়োজন হলে তারা যে এর উপর নির্ভর করতে পারবে সেটি তারা উপলব্ধি করতে পারে। তাদের ভুলকে সংশোধন করার ক্ষেত্রে যদি পিতামাতা ন্যায্য ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন, তা সন্তানদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করায়। নিজেরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বলে সন্তানেরা জানতে চায় এবং সেই প্রকৃতির পিতামাতা থাকলে তারা নিশ্চয় তা জানতে পারে।

১৪ পিতামাতার আদেশ পালন করতে যখন সন্তান উপেক্ষা করে তখন পিতামাতাকে দৃঢ়তা দেখাতে হলে দৃঢ় নিশ্চয়তার প্রয়োজন হয়। কিছু পিতামাতা আবার শাস্তি দেওয়ার ভয় দেখান, সন্তানের সাথে অযথা তর্ক করেন বা সন্তানকে যা করতে বলা হয়েছে তা করানোর জন্য তাকে ঘুষ দিতে চেষ্টা করেন। প্রায়ই যা প্রয়োজন হয় তা হচ্ছে শুধুমাত্র খুবই দৃঢ় হওয়ার এবং দৃঢ়তার সাথে সন্তানকে বলা যে, তাকে করতেই হবে এবং এখনই। যদি সন্তান গাড়ির সামনে পড়ার মুখোমুখি হয় তাহলে পিতামাতা কোন অনিশ্চিত চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বলেন না যে কী করতে হবে। এই বিষয় সম্পর্কে কিছু গবেষক যেমন বলেন: “প্রায় প্রত্যেক পিতামাতা সন্তানদের স্কুলে পাঠান . . . দাঁত মাজান, খোলা ছাদে যেতে দেন না, স্নান করান ইত্যাদি। সন্তানেরা প্রায়ই বাধা দেয়। কিন্তু তারা মেনে নেন, কারণ তারা জানে পিতামাতা তাদের সেগুলি করাবেনই।” যদি আপনি সঙ্গতি রেখে তাদের নিয়মগুলি দেন তাহলে আপনি ‘আপনার নির্দেশ ও আজ্ঞা সকল ক্রমাগত তাদের হৃদয়ে গেঁথে রাখতে’ আশা করতে পারেন।—হিতোপদেশ ৬:২১.

১৫ খেয়াল-খুশি বা মেজাজ অনুযায়ী রেগে গিয়ে যখন পিতামাতারা নির্দেশগুলি চাপাতে থাকেন অথবা অনেকদিন ধরে শাসন না করা হয়, তখন ছেলেমেয়েরা নিয়মগুলি অমান্য করার সুযোগ পেয়ে এই দেখে, যে তারা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে ও শাস্তি না পেয়ে কতদিন থাকতে পারে। যখন শাস্তি না দেওয়া হয়, ছেলেমেয়েরা বড়দের মত অন্যায় কাজ করার জন্য সাহসী হয়ে যায়। “দুষ্কর্ম্মের দণ্ডাজ্ঞা ত্বরায় সিদ্ধ হয় না, এই কারণ মনুষ্যসন্তানদের অন্তঃকরণ দুষ্কর্ম্ম করিতে সম্পূর্ণরূপে রত হয়।” (উপদেশক ৮:১১) সুতরাং, আপনি যা বলেন তাই করুন। তখন আপনার সন্তান বুঝতে পারবে যে সঠিক বিষয়টি কী এবং অসন্তোষে ঠোঁট উল্টান, তর্ক করা বা আপনি নিষ্ঠুর ও ভালবাসা দেখান না বলে কোন নাটক করা, যে কোন কাজে লাগবে না তা সে বুঝতে পারবে।

১৬ এর জন্য প্রয়োজন কথা বলার আগে চিন্তা করা। হঠাৎ তৈরি করা নিয়ম বা আদেশ সাধারণত অযৌক্তিক হয়। “তোমাদের প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হউক।” (যাকোব ১:১৯) যদি শাসন ন্যায্য বা সঙ্গতি রেখে না হয় তাহলে সন্তানদের যে স্বাভাবিক ন্যায় বোধ আছে তা ক্ষুব্ধ হয় ও অসন্তোষের সৃষ্টি হতে আরম্ভ করে।

আমোদপ্রমোদ নিয়ন্ত্রণের অধীনে রাখুন

১৭ শিশুর জীবনে খেলা হল এক স্বাভাবিক অঙ্গ। (সখরিয় ৮:৫) সন্তানের জীবনে ধীরে ধীরে কাজের উপলব্ধি ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার সাথে সাথে পিতামাতার এ সম্বন্ধে বোঝা দরকার। তখন, সন্তান যে কোন কাজই প্রথমেই সবচেয়ে ভাল করে করবে; খেলা হবে দ্বিতীয় বিষয়।

১৮ কিছু ছেলেমেয়েরা অন্য কোথাও আমোদ-প্রমোদের অন্বেষণের জন্য “রাস্তার ছেলেমেয়ে” বা ঘরেতে প্রায় অপরিচিত ব্যক্তির মত হয়ে যায়। যদি সঙ্গী-সাথী মন্দ হয় তাহলে প্রভাবও মন্দ হয়। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) লোকেদের সম্বন্ধে জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য ঘরের বাইরে কিছুটা মেলামেশা করা নিশ্চয় সন্তানের পক্ষে উপকারী হয়। কিন্তু যদি ঘরের বাইরে অতিরিক্ত মেলামেশা করা হয় বা নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে পারিবারিক বৃত্ত দুর্বল হয়ে পড়ে বা এমন কি টুকরো-টুকরো হয়ে যায়।

১৯ এটি সংশোধন করতে তারা যে শাসন করেন তার সাথে পিতামাতাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিৎ যে ঘরকে ছেলেমেয়েদের জন্য উপভোগ্য করে তুলতে তারা কী করতে পারেন; তারা কী তাদের সাথে যথেষ্ট সময় ব্যয় করছেন, মাত্র নির্দেশ দেওয়া ও শাসন করার জন্য নয় কিন্তু সন্তানদের প্রকৃত বন্ধু ও সাথী হয়েও। সাধারণত ছেলেমেয়েদের সাথে সময় ব্যয় করতে, খেলা করতে আপনি কি “অত্যন্ত ব্যস্ত” থাকেন? সন্তানের সাথে তা করার সুযোগ একবার হারিয়ে গেলে আর তা ফিরে আসবে না। সময় একদিক অভিমুখী এবং সন্তানও থেমে থাকে না সেও বৃদ্ধি পায় ও পরিবর্তিত হয়। ঋতুর পরিবর্তন হয়, মনে হয় যেন গতকালের কথা, আপনার ছেলে শিশু ছিল হাঁটতে শিখছিল, আর হঠাৎ আপনি দেখলেন যে সে যুবক হয়ে গেছে এবং আপনার ছোট্ট মেয়েটি যুবতীতে পরিণত হয়েছে। যদি আপনি উত্তম ভারসাম্য বজায় রাখেন ও নিজের সময় ব্যয় করতে সংযত হন তাহলে এই মূল্যবান সময়ের সুযোগকে তুচ্ছ করা এড়াতে পারেন—অথবা ছোটবেলাতেই ছেলেমেয়েদের আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরিস্থিতিকে এড়াতে পারবেন।—হিতোপদেশ ৩:২৭.

২০ যেখানে মনোরঞ্জনের জন্য টিভি হল এক সাধারণ উৎস, তা দেখার ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করা দরকার। কিছু পিতামাতারা বাচ্চাকে চুপ করিয়ে রাখার জন্য টিভিকে ব্যবহার করেন। সেটি সুবিধাজনক ও সস্তা বলে মনে হতে পারে; কিন্তু বাস্তবে তা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ বলে প্রমাণিত হতে পারে। দূরদর্শনের কার্যক্রমগুলি বেশির ভাগ সময় দৌরাত্ম্য ও যৌন বিষয় দিয়ে পূর্ণ থাকে। এতে ধারণা দেওয়া হয় যে সমস্যা সমাধানের উপায় হল দৌরাত্ম্য; অবৈধ যৌন সম্পর্ক দৈনন্দিন জীবনের অনুমোদিত অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। বহু সমীক্ষা দেখায় যে সেটি এক ব্যক্তিকে সেই সকল অভ্যাসের প্রতি সংবেদনহীন করে তোলে, বিশেষভাবে যুবক ব্যক্তিদের। আপনার ছেলেমেয়েরা যে খাবার খায় তা দূষিত না হয়ে যেন স্বাস্থ্যকর হয় বলে আপনি চিন্তিত থাকেন। তাদের মনে কী ঢুকছে সেই সম্পর্কে আপনার আরও বেশি চিন্তা করা দরকার। যেমন যীশু দেখান খাদ্য হৃদয়ে যায় না, কিন্তু আমরা যে সকল বিষয় মনে নিয়ে থাকি তা আমাদের হৃদয়ে যায়।—মার্ক ৭:১৮-২৩.

২১ টিভিতে দেখা কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং এর সামনে ব্যয় করা সময়েরও নিয়ন্ত্রণ করলে শিশুর বিকাশেরও বিরাট পরিবর্তন ঘটে। দূরদর্শন কিছু আনন্দদায়ক ও এমন কি শিক্ষামূলক মনোরঞ্জনও প্রদান করতে পারে; কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত রাখলে তা নেশায় পরিণত হতে পারে, প্রচুর সময় নিয়ে নিতে পারে। সময় হল জীবন ও সেই সময়ের কিছুটা নিশ্চয় অন্যান্য উপকারমূলক উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ দূরদর্শন কাজ করার পরিবর্তে শুধুমাত্র দেখাকে প্রতিস্থাপন করে। এটি শুধুমাত্র দৈহিক কার্যকে সরিয়ে দেয় না, সরিয়ে দেয় পড়া ও কথাবার্তা বলাকেও। এক পরিবারের দরকার ভাব-বিনিময়, ঘনিষ্ঠ হওয়ার, কিন্তু একই ঘরে সকলে মিলে নির্বাক টিভি দেখে গেলে সেই চাহিদাটিকে পূর্ণ করবে না। যে সব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টিভি দেখা একটি সমস্যা হয়ে উঠেছে সেই ক্ষেত্রে পিতামাতারা ছেলেমেয়েদের মধ্যে দূরদর্শনের পরিবর্তে অন্যান্য বিষয়ের প্রতি উপলব্ধি গড়ে তুলতে পারেন—গঠনমূলক খেলা, পড়া, পারিবারিক কর্মতৎপরতা—বিশেষকরে পিতামাতারা যদি নেতৃত্ব নেন ও উদাহরণ স্থাপন করেন।

যখন শাসন করেন, বুঝিয়ে দিন

২২ বাবামায়ের মধ্যে একজন এই অভিজ্ঞতাটি বলেন:

“যখন আমার ছেলে তিন বছরের ছিল, আমি তাকে মিথ্যা কথা বলা সম্বন্ধে বড় উপদেশ দিই, হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯ পদ ও অন্যান্য শাস্ত্র ব্যবহার করে ঈশ্বর মিথ্যাবাদীদের কিরূপ ঘৃণা করেন সেই সম্বন্ধেও বলি। সে শোনে ও দেখায় যেন বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, সে বিষয়টি বুঝতে পারেনি। তাই আমি জিজ্ঞাসা করি, ‘বাবা, তুমি জান মিথ্যা মানে কী?’ সে বলে, ‘না।’ তারপর থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে নিই যে কথাগুলির অর্থ কী ও তাকে কেন শাসন করা হয়েছে তা যেন সে বুঝতে পারে।”

২৩ সন্তানেরা যখন শিশু থাকে, তখন পিতামাতারা কিছু বিষয়গুলিকে শুধুমাত্র “না-না” বলেন, যেমন হল গরম স্টোভকে ছোঁয়া। কিন্তু এমন কি ওই সাধারণ সাবধানতার সাথেও কারণ দেওয়া যেতে পারে। হয়ত বলা যেতে পারে যে স্টোভ “গরম!” আছে হাত দিলে “পুড়ে যাবে!” প্রথম থেকেই সন্তানের সামনে এর সাথে জড়িত তার মঙ্গলের নীতিটি স্থাপন করুন; তারপর দয়া, বিবেচনা ও প্রেমের মত গুণাবলি যে কাম্য সেটি তুলে ধরুন। এই গুণাবলির মধ্যেই যে রয়েছে প্রকৃত আবশ্যকতা বা বাধ্যবাধকতা সন্তানকে তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করুন। তাছাড়া, বিশেষ কোন আচরণ কেন এই কাম্য গুণাবলি প্রকাশ করে বা করে না সেই সম্পর্কে জোর দিন। যখন তা ক্রমাগত করা হয় তখন আপনি সন্তানের শুধুমাত্র মন নয় হৃদয়ও স্পর্শ করতে পারেন।—মথি ৭:১২; রোমীয় ১৩:১০.

২৪ অনুরূপে, কর্তৃপক্ষের প্রতি বাধ্যতা ও সম্মানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধীরে ধীরে শেখানো যেতে পারে। সন্তান বড়দের আদেশ পালন করতে ইচ্ছুক বা অনিচ্ছুক তা তার প্রথম বছরেই প্রকাশ পেতে আরম্ভ করে। সন্তানের মানসিক বিকাশ যখনই তা করতে অনুমতি দেয় তখনই ঈশ্বরের প্রতি পিতামাতার দায়িত্বটি সম্পর্কে তাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করুন। সেটি সন্তানের সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য আনে। এটি ব্যতিরেকে, তারা হয়ত বাধ্যতাকে এইরূপ মনে করতে পারে, যেহেতু পিতামাতারা তাদের থেকে বড় ও শক্তিশালী তাই তাদের বাধ্য হতে হবে। পরিবর্তে, যদি সন্তানকে এটি দেখতে সাহায্য করা হয় যে পিতামাতারা নিজেদের কোন ধারণা দিচ্ছে না কিন্তু স্রষ্টা যা বলেন, তাঁর বাক্য যা বলে তাই বলছেন, তাহলে তা পিতামাতার পরামর্শ ও নির্দেশে শক্তি যোগাবে যা অন্য কিছু দিতে পারবে না। যখন সন্তানের কিশোর জীবনে কষ্টকর সময় আসতে আরম্ভ করে ও ছেলে বা মেয়ে প্রলোভন এবং চাপের সম্মুখে সঠিক নীতি তুলে ধরতে কষ্ট এবং কঠিন চাপ বোধ করে, তখন এটি শক্তির এক প্রকৃত উৎস হতে পারে।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৯-১১১; হিতোপদেশ ৬:২০-২২.

২৫ “যে অধর্ম্ম আচ্ছাদন করে, সে প্রেমের অন্বেষণ করে; কিন্তু যে পুনঃ পুনঃ এক কথা বলে, সে মিত্রভেদ জন্মায়।” (হিতোপদেশ ১৭:৯) এটি পিতামাতা-সন্তান সম্পর্কেও সত্য। সন্তানকে একবার যখন তার ভুল সম্পর্কে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং কেন তাকে শাসন করা হবে সে জানে এবং তাকে শাসন করাও হয়ে গেছে, তখন পিতামাতার ভালবাসা সেই ভুল সম্পর্কে বারে বারে বলা থেকে বিরত রাখবে। যা কিছুই করা হয়েছে, তার কারণটি স্পষ্ট করতে নিশ্চিত হোন যে, আপনি সন্তানকে ঘৃণা করেন না কিন্তু ভুলটিকে ঘৃণা করেন। (যিহুদা ২৩) সন্তান হয়ত মনে করতে পারে ‘অন্যায়ের ফল সে ভোগ করেছে’ এবং সেই সম্পর্কে বারবার বলা তাকে অহেতুক নিচু করা হচ্ছে। এর ফলে সে হয়ত পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের বিরোধী হয়ে যেতে পারে। যদি এক মন্দ উদাহরণ গড়ে উঠছে বলে পিতামাতারা চিন্তিত থাকেন তাহলে বিষয়টি কোন পারিবারিক আলোচনায় পরে আলোচনা করা যেতে পারে। অতীতের ঘটনাটি সম্পর্কে অহেতুক পুনরুক্তি ও পুনরালোচনা করবেন না, পরিবর্তে এর সাথে জড়িত নীতিটি, কিরূপে সেগুলি প্রয়োগ করা হয় এবং স্থায়ী সুখের জন্য কেন সেগুলি এত গুরুত্বপূর্ণ তা আলোচনা করুন।

শাসন করার বিভিন্ন উপায়

২৬ “বুদ্ধিমানের মনে অনুযোগ যত লাগে, হীনবুদ্ধির মনে এক শত প্রহারও তত লাগে না।” (হিতোপদেশ ১৭:১০) বিভিন্ন সন্তানকে বিভিন্ন উপায়ে শাসন করার প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক সন্তানের মেজাজ ও স্বভাব সম্পর্কে বিবেচনা করতে হবে। একটি সন্তান হয়ত খুব অনুভবশীল হয় তাই দৈহিক শাস্তি, যেমন প্রহার করার সবসময় প্রয়োজন হয় না। আর এক সন্তানের কাছে প্রহারও কোন কাজ করে না। অথবা সন্তান হয়ত হিতোপদেশ ২৯:১৯ পদে বর্ণিত সেই দাসের মত যার “বাক্য দ্বারা . . . শাসন হয় না, কেননা সে বুঝিলেও কথা মানিবে না।” সেই ক্ষেত্রে সন্তানের দৈহিক শাস্তির প্রয়োজন হয়।

২৭ একজন মা বলেন:

“আমার ছেলে মাত্র দুই বছরের ছিল যখন সে দেওয়ালে দাগ কাটে—ছোট ছোট লাল দাগগুলি মেঝে থেকে খুব দূরে ছিল না। ওর বাবা ওকে সেগুলি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাও করেন। সে খালি চোখ গোল গোল করে চেয়েই থাকে, হ্যাঁ বা না কিছুই বলে না। অবশেষে, তার বাবা বলেন, ‘জান সোনা, আমি যখন তোমার মত ছিলাম আমিও দেওয়ালে লিখে ছিলাম। লিখতে মজা লাগে, তাই না?’ ছোট ছেলেটি তখন স্বস্তি বোধ করে, তার মুখ হাসিতে ভরে ওঠে এবং দেওয়ালে লিখলে যে কত মজা লাগে সে সম্পর্কে সে স্বতঃস্ফুর্ত আলোচনা করতে থাকে। সে জানে যে বাবা বুঝতে পারেন! যাইহোক, তাকে বলে দেওয়া হয় যে যদিও বা সেটি মজার, দেওয়াল দাগ কাটার জায়গা নয়। ভাব-বিনিময় স্থাপিত হয় এবং এই সন্তানের ক্ষেত্রে একটু যুক্তি দিয়ে আলোচনাই যথেষ্ট ছিল।”

২৮ শাসন করার সময়, শিক্ষা ও নির্দেশ দিতে হলে যুক্তি দেওয়া ভাল কিন্তু সন্তানের সাথে সাধারণত তর্ক করা ভাল নয়। যখন তার সন্তান কোন কাজ করার জন্য তর্ক করে, একজন মা শুধু এই বলেন: “তুমি কাজটি শেষ করলে আমরা পার্কে যাব,” যা সেই দিনের জন্য সন্তানের কাছে একটি আনন্দের সময় হবে। দেওয়া কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আনন্দ বা বাইরে যাওয়াকে বন্ধ রাখা যেতে পারে। যদি তিনি এসে দেখেন যে কাজটি তখনও শেষ হয়নি, তিনি তখন বলতেন, “ও, এখনও শেষ হয়নি? তুমি শেষ করলে আমরা যাব।” তিনি তর্ক করেননি কিন্তু তিনি ফলাফল পেলেন।

২৯ অন্যায় কাজের জন্য অবাঞ্ছিত ফলভোগ করা সন্তানকে সঠিক নীতির প্রজ্ঞাটি বুঝতে সাহায্য করে। বাচ্চা কি নোংরা করেছে? তাকে দিয়ে পরিষ্কার করালে তার মনে গভীর প্রভাব পড়বে। সে কি অযৌক্তিক বা রূঢ় আচরণ করেছে? ক্ষমা চাইতে শিখলে মন্দ প্রবণতাটি সংশোধিত হবে। সে হয়ত রেগে গিয়ে কোন কিছু ভেঙ্গে ফেলেছে। যদি সে যথেষ্ট বড় হয় তাহলে সেটিকে আবার কিনতে তাকেই পয়সা রোজগার করতে হবে। কোন কোন ছেলেমেয়েদের কিছু সময়ের জন্য বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা না দিলে তারা প্রয়োজনীয় শিক্ষা পায়। খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে অন্যায় করেছে এমন কিছু ব্যক্তিকে লজ্জা দেওয়ার জন্য তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মেলামেশা বন্ধ করা হয়। (২ থিষলনীকীয় ৩:৬, ১৪, ১৫) ছোটদের ক্ষেত্রে প্রহার করার চাইতে তার সাথে সাময়িক পারিবারিক মেলামেশা বন্ধ করে দেওয়া আরও কার্যকারী হবে। কিন্তু চরম, যেমন, বাচ্চাকে বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দেওয়া, প্রেম পরিচালিত অভিব্যক্তিকে লঙ্ঘন করে। যে কোন উপায় ব্যবহার করা হোক না কেন, সন্তানদের বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে তাদের আচরণের জন্য তাদেরই শাস্তি ভোগ করতে হবে। এটি তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়।

প্রেমে শাসন করুন

৩০ “যাহা কিছু শ্রেয় তাহা যেন চিনিয়া লইতে পার,” এই মনে রেখে “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা . . . বিবেচক।” (ফিলিপীয় ১:১০, NW; যাকোব ৩:১৭, NW) স্মরণে রাখবেন ছোট্ট ছেলেমেয়েদের অফুরন্ত শক্তি আছে, যা মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে এবং তারা শেখার ও আবিষ্কার করার জন্য এবং নতুন নতুন জিনিসগুলি পরীক্ষা করার জন্য ব্যস্ত। সীমা নির্ধারণ ও আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম বিচক্ষণতা প্রদর্শন করুন এবং বাছাই করুন। কোন্‌টি প্রয়োজন বা কোন্‌টি নয় তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সন্তানকে সীমাগুলি জানিয়ে দিয়ে তাকে প্রতি পদে নিয়ন্ত্রণ না করে, সেই সীমার মধ্যে স্বাধীনভাবে ও দৃঢ় নিশ্চয়তার সাথে চলাফেরা করার আনন্দ দিন। (হিতোপদেশ ৪:১১, ১২) তা না হলে আপনার সন্তানেরা “ক্রুদ্ধ” হবে এবং তাদের “মনোভঙ্গ” হবে এবং যে বিষয়গুলির বিশেষ গুরুত্ব নেই সেগুলিকে বড় করে তুলেছেন বলে আপনিও বিরক্ত হবেন।—কলসীয় ৩:২১.

৩১ সুতরাং, পিতামাতারা “তোমার পুত্ত্রকে [বা কন্যাকে] শাসন কর, কারণ আশা আছে,” কিন্তু ঈশ্বরের রীতিতে, প্রেমে। তাঁকে অনুকরণ করুন: “কেননা সদাপ্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাস্তি প্রদান করেন, যেমন পিতা প্রিয় পুত্ত্রের প্রতি করেন।” আপনার স্রষ্টার মতই সেই শাসনগুলিকে মূল্যবান ও প্রেমপূর্ণ করে তুলুন, কারণ সেই প্রকৃতির “শিক্ষাজনক অনুযোগ জীবনের পথ।”—হিতোপদেশ ১৯:১৮; ৩:১২; ৬:২৩.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১. ছেলেমেয়েকে যদি বাধ্য হতে হয় তাহলে কিসের প্রয়োজন?

২. বহু শিশু মনস্তত্ত্ববিদের দৃষ্টিভঙ্গি কিভাবে বাইবেলের পরামর্শের সাথে সংঘর্ষ আনে?

৩, ৪. ঘরেতে উপযুক্ত শাসন না করার জন্য কী ফল হয়েছে এবং তাই অনেকে কী সুপারিশ করে থাকেন?

৫. প্রহার করা সম্পর্কে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

৬. শাসনের মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত আছে?

৭. পিতামাতা শাসন করলে কী উপকার হয়?

৮. পিতামাতারা কিভাবে প্রেমের সাথে শাসন করতে পারেন?

৯. হিতোপদেশ ৬:২০-২৩ পদ অনুসারে ছেলেমেয়েদের জন্য পিতামাতার কী প্রদান করা দরকার?

১০. পিতামাতারা ছেলেমেয়েকে শাসন করতে ব্যর্থ হলে কী হতে পারে?

১১. ছেলেমেয়েদের জন্য সীমা নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয় কেন?

১২. আত্ম-সংযম কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং সন্তানদের তা গড়ে তুলতে পিতামাতারা কিভাবে সাহায্য করতে পারেন?

১৩. সন্তানদের জন্য নির্দেশাবলী নির্ধারণ করার সময় পিতামাতাদের কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মনে রাখা দরকার?

১৪. সন্তানেরা পিতামাতার নির্দেশের অবাধ্য হলে কেন দৃঢ়তার প্রয়োজন হয়?

১৫. নির্দেশাবলী প্রয়োগ করার সময় পিতামাতারা অসঙ্গতিপূর্ণ হলে সন্তানেরা কিভাবে প্রভাবিত হয়?

১৬. অযৌক্তিক আদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পিতামাতার কী করা উচিৎ?

১৭. কাজ ও খেলার সম্পর্কে কী প্রকৃতির দৃষ্টিভঙ্গি সন্তানদের উপলব্ধি করা উচিৎ?

১৮. সন্তানের উপর সঙ্গী-সাথীরা কী প্রভাব আনতে পারে?

১৯. পিতামাতারা সন্তানদের জন্য গৃহকে এক আনন্দ উপভোগের স্থান করছেন কি না তা নির্ধারণ করার জন্য কোন্‌ বিষয়গুলি তারা পুনরালোচনা করতে পারেন?

২০, ২১. ঘরে টেলিভিশন থাকলে পিতামাতাদের কী দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিৎ এবং কেন?

২২. পিতামাতারা যে শব্দগুলি ব্যবহার করেন তা ছেলেমেয়েদের কেন বোঝা উচিৎ?

২৩. বিশেষ প্রকৃতির আচরণ অনুসরণ করার যথার্থতা সন্তানদের শিখানোর পরিপ্রেক্ষিতে কী অন্তর্ভুক্ত থাকে?

২৪. কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা সন্তানের পক্ষে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

২৫. হিতোপদেশ ১৭:৯ পদের পরামর্শ কিরূপে পিতামাতাদের সন্তানদের সঠিকরূপে শাসন করতে সাহায্য করে?

২৬. একই প্রকৃতির শাসনের প্রতি কেন প্রত্যেক সন্তান আশানুরূপ আচরণ করে না?

২৭. এক পিতা কিভাবে তার ছোট্ট ছেলেকে দেওয়ালে দাগ কাটা বন্ধ করতে সাহায্য করেন?

২৮. পিতামাতা কিভাবে সন্তানের সাথে তর্ক করা এড়াতে পারেন?

২৯. সন্তানের অন্যায়ের জন্যই তাকে যে অবাঞ্ছিত ফলভোগ করতে হচ্ছে তা বুঝাবার জন্য কী করা যেতে পারে?

৩০. পিতামাতারা সন্তানের জন্য নিদের্শাবলী স্থাপন করার সময়ে কেন ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ?

৩১. শাসন করা সম্পর্কে যিহোবা ঈশ্বর কী উদাহরণ স্থাপন করেন?