সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিবাহের পরে

বিবাহের পরে

অধ্যায় ৩

বিবাহের পরে

আপনার বিবাহ সবে হয়েছে, আপনি ও আপনার সঙ্গী এক স্বতন্ত্র পরিবার হিসাবে জীবন আরম্ভ করেছেন। আপনার সুখ কি পূর্ণ হয়েছে? আপনি আর একা নন, কিন্তু আপনার এক সাথী আছে যার কাছে আপনি সব কিছু ব্যক্ত করতে পারেন, আনন্দ ও সমস্যা ভাগ করে নিতে পারেন। আপনার ক্ষেত্রে উপদেশক ৪:৯, ১০ পদের কথাগুলি কি আপনি সত্য মনে করেন?—“এক জন অপেক্ষা দুই জন ভাল, কেননা তাহাদের পরিশ্রমে সুফল হয়। কারণ তাহারা পড়িলে এক জন আপন সঙ্গীকে উঠাইতে পারে; কিন্তু ধিক্‌ তাহাকে, যে একাকী, কেননা সে পড়িলে তাহাকে তুলিতে পারে, এমন দোসর কেহই নাই।” এইরূপ সহযোগিতার দ্বারা কি আপনার বিবাহ সফলতা লাভ করছে? দুই জীবনকে এই আনন্দময় সংমিশ্রণ করতে সাধারণত কিছু সময় লাগে ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, অনেক বিবাহে তা কখনই হয়ে ওঠে না।

প্রেম কাহিনীতে, সাধারণত সমস্যাটি থাকে দুই প্রেমিককে একত্রিত করার। কিন্তু তারপর তারা আজীবন সুখে জীবনযাপন করে। বাস্তবে, বিবাহের পরে সুখে থাকা, দিনের পর দিন সুখে থাকা প্রকৃত চ্যালেঞ্জ আনে। বিয়ের দিনের আনন্দের পর আসে, দৈনন্দিন জীবনের রুটিন: ভোরে ওঠা, কাজে যাওয়া, বাজার করা, রান্না করা, বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি।

বৈবাহিক জীবনে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। আপনারা দুজনেই কিছু আশা ও আদর্শ নিয়ে এতে পদক্ষেপ করেছেন যা হয়ত অতটা ব্যবহারিক এবং বাস্তব ছিল না। যদি সেগুলি পূর্ণ না হয় তাহলে প্রথম কয়েক সপ্তাহের পর কিছু আশাভঙ্গ হতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি আপনার জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন করেছেন। আপনি আর একা বা আপনি সারা জীবন যে পরিবারের সাথে বাস করছিলেন তাদের সাথে আর বাস করছেন না। এখন আপনি এক নতুন ব্যক্তির সাথে বাস করছেন, যার সম্বন্ধে আপনি ভেবেছিলেন যে যতটা ভালভাবে জানেন এখন দেখবেন অতটা জানেন না। আপনার কার্যতালিকাও নতুন, আপনার কাজও হয়ত নতুন হতে পারে, আপনার আয়ব্যয় এখন ভিন্ন, আর নতুন বন্ধু ও কুটুম্ব রয়েছে যাদের সাথে আপনাকে পরিচিত হতে হবে। বৈবাহিক জীবনে সফলতা ও সুখ নির্ভর করে মানিয়ে নিতে আপনার ইচ্ছার উপর।

আপনি কি নমনীয়?

অনেকের গর্বের জন্য নমনীয় হতে কষ্ট হয়। কিন্তু বাইবেল যেমন বলে, “দুর্দশার পূর্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্বে একগুঁয়েভাব।” একগুঁয়েমি করে গেলে বিপজ্জনক হতে পারে। (হিতোপদেশ ১৬:১৮, নিউ ইংলিশ বাইবেল) যীশু নমনীয় হতে ও মেনে নিতে সুপারিশ করেন যখন তিনি বলেন যে যদি কেউ আপনার “আঙ্‌রাখা লইতে চায়, তাহাকে চোগাও লইতে দেও,” আর যদি কেউ আপনার সাথে “এক ক্রোশ” যেতে চায় তাহলে “তাহার সঙ্গে দুই ক্রোশ যাও।” আপনার নিকট জনের সাথে তর্ক না করে, প্রেরিত পৌল বলেন: “বরং নিজের প্রতি অন্যায় হওয়াকে মেনে নাও না কেন?” (মথি ৫:৪০, ৪১; ১ করিন্থীয় ৬:৭, NW) অপরের সাথে শান্তি রাখতে যদি এক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি এত দূর পর্যন্ত যেতে পারেন তাহলে নিশ্চয় দুই বিবাহিত ব্যক্তি যারা একে অপরকে ভালবাসে তাদের এই নতুন সম্বন্ধকে সফল করতে মানিয়ে নেওয়া উচিৎ।

একজনের সুখী বা অসুখী হওয়ার অনেকগুলি কারণ হতে পারে। আপনি কিসের প্রতি সতর্ক থাকবেন? আপনি কি ইতিবাচক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না নেতিবাচক বিষয়ের উপর চিন্তা করবেন? নতুন স্ত্রী হয়ত ভাবতে পারে: ‘আমরা এখন বিবাহিত, সেই প্রেমিকটি এখন কোথায়, যে আমাকে ভাল ভাল জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেত, আমার সাথে সময় ব্যয় করত? সে একঘেয়ে হয়ে গেছে। সে আমাকে গ্রাহ্য করে না। আমি যাকে আগে জানতাম সে সেই মানুষ নয়!’ অথবা স্ত্রী কি বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারে যে সে এখন পরিবারের উত্তম অন্নসংস্থানকারী হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে? এবং এই নতুন স্বামীটি কি লক্ষ্য করে যে তার স্ত্রী রান্না করতে ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিশ্রম করে, অনেকসময় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে ও নিজেকে সুন্দরী দেখাতে তার সাজবার সময় থাকে না? অথবা স্বামী নিজেকে বলে: ‘সেই আকর্ষণীয়া সুন্দরী যুবতীটির কি হয়েছে যাকে আমি বিবাহ করেছিলাম? তার পরিবর্তন হয়েছে, যেহেতু কি সে এখন তার স্বামী পেয়ে গেছে’?

উভয়েরই পরিপক্ক হওয়া ও উপলব্ধি করা দরকার যে বিবাহের আগে যে সব বিষয়গুলি করা হত তা করতে দুজনের মধ্যে কারুরই সেই সময় ও উদ্যম নেই। নমনীয়তা দেখাবার ও বিবাহকে সফল করতে অতি পরিতৃপ্তিকর দায়িত্বভার গ্রহণ করার এখনই হচ্ছে সময়। বৈবাহিক জীবনকে ভেঙ্গে ফেলতে একজনের দরকার হয় কিন্তু তা সফল করতে দুজনের প্রয়োজন হয়। বিবাহকে সফল করা এক সাধন-কার্য করা। সমস্যা সত্ত্বেও কোন কিছু সম্পাদন করা হল সাধন-কার্য। যখন আপনাদের মধ্যে দুজনেই এই প্রচেষ্টায় একত্রিত হন তখন আপনাদের দুজনেরই কিছু অংশ এই সাধ-কার্যে মিশ্রিত হয়। একই লক্ষ্য নিয়ে দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দুজনকে একত্রে বাঁধে; দুজনকে ঘনিষ্ঠ করে; দুজনকে একাঙ্গ করে। অবশেষে এটি এক প্রেমের বন্ধনের সৃষ্টি করে যা বৈবাহিক জীবন সম্বন্ধে ভাবা সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় আর সেই সমন্বয়কারী সুখই পরস্পরের দোষত্রুটিকে মেনে নিতে সহজ করে তোলে।

ভালবাসা গভীর হলে অহঙ্কার আবছা হয়ে যায়। দেওয়ার মধ্যেই শুধু আনন্দ হয় তা নয় মেনে নেওয়া, নতি স্বীকার করার মধ্যেও হয়, যেখানে ব্যক্তিগত মতামত জড়িত থাকে কিন্তু নীতি জড়িত থাকে না। তা হয়ত, ছুটি কিভাবে কাটানো হবে বা ঘরের জন্য কোন জিনিস কেনার ক্ষেত্রে হতে পারে। অপরের আনন্দের প্রতি যখন বিবেচনা দেখানো হয় তখন দম্পতি প্রেরিত পৌলের বাক্য নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে আরম্ভ করে: “প্রত্যেক জন আপন বিষয়ে নয় কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।”—ফিলিপীয় ২:৪.

সহবাসের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি

বাইবেল যৌন সহবাস সম্পর্কে অতি শালীনতার ভান করে না। বাইবেল কাব্যিক ভাষায় দেখায় যে সেটি স্বামীস্ত্রীকে আনন্দিত করা উচিৎ; এবং এটি জোর দেয় সহবাস যেন স্বামীস্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এই পংক্তিটি হিতোপদেশ ৫:১৫-২১ পদে পাওয়া যায়:

“তুমি নিজ জলাশয়ের জল পান কর, নিজ কূপের স্রোতোজল পান কর। তোমার উনুই কি বাহিরে বিস্তারিত হইবে? চকে কি জলস্রোত হইয়া যাইবে? উহা কেবল তোমারই হউক, তোমার সহিত অপর লোকের না হউক। তোমার উনুই ধন্য হউক, তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর। সে প্রেমিকা হরিণী ও কমনীয়া বাতপ্রমীবৎ; তাহারই কুচযুগ দ্বারা তুমি সর্ব্বদা আপ্যায়িত হও, তাহার প্রেমে তুমি সতত মোহিত থাক। বৎস, তুমি পরকীয়া স্ত্রীতে কেন মোহিত হইবে? বিজাতীয়ার বক্ষ কেন আলিঙ্গন করিবে? মনুষ্যের পথ ত সদাপ্রভুর দৃষ্টিগোচর; তিনি তাহার সকল পথ সমান করেন।”

যাইহোক, সহবাসকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ভুল হবে যেখানে বলা হতে পারে যে দম্পতির সম্ভোগের জীবনের উপরেই নির্ভর করছে বৈবাহিক জীবনের সফলতা বা সেটি স্বামীস্ত্রী সম্পর্কের অন্যান্য ক্ষেত্রের গুরুতর দোষগুলিকে মার্জনা করাতে পারে। বই, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে যৌন সম্বন্ধীয় প্রচুর বিষয়বস্তু—বেশির ভাগ কামনা উদ্রেক করার উদ্দেশ্যে—সম্ভোগকে এতটা মুখ্য বিষয় করে তোলে। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য এর বিরুদ্ধে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আত্মসংযমের জন্য তা বলে থাকে। এমনকি বৈবাহিক জীবনে, সকল সংযম ত্যাগ করা এমন আচরণগুলিতে পরিচালিত করতে পারে যা বৈবাহিক সম্পর্ককে খেলো করে দেয়।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩; ইব্রীয় ১৩:৪.

১০ সহবাসে মানিয়ে নেওয়া প্রায়ই অসুবিধাজনক হয়ে থাকে ও বিবাহের পরে সময় লাগতে পারে। সাধারণত তা হয়ে থাকে সঙ্গীর চাহিদাগুলি বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ও সেই সম্পর্কে কম জ্ঞান থাকার জন্য। সম্মানীয় বিবাহিত বন্ধুর সাথে আগে আলোচনা করে নিলে উপকৃত হওয়া যায়। শুধুমাত্র নারী ও পুরুষ পৃথকরূপে সৃষ্ট নয়, তাদের অনুভূতিও ভিন্ন প্রকারের হয়। কোমলতার প্রতি নারীর চাহিদাটিকে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। সহবাস হল এক লজ্জার বিষয়, এরূপ কোন নেতিবাচক মিথ্যা বিনয়ভাব বা অত্যন্ত শালীনতা দেখানোর মনোভাব পোষণ করা উচিৎ নয়। আবার, যেমন অনেক পুরুষেরা মনে করে থাকেন, তা কিন্তু কোন জয়ের উপলক্ষও নয়। “স্বামী স্ত্রীকে তাহার প্রাপ্য দিউক,” বাইবেল বলে এবং “তদ্রূপ স্ত্রীও স্বামীকে দিউক।” আর তা করলে এই বাইবেল নীতি খুবই উপযুক্ত হয়: “কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।” যদি দুজনেরই সেরকম ভালবাসা ও পরস্পরকে সন্তুষ্ট করতে ইচ্ছা থাকে, তাহলে ভালভাবে মানিয়ে নেওয়া যাবে।—১ করিন্থীয় ৭:৩; ১০:২৪.

অসম্মত হয়েও বিবদমান না হওয়া

১১ পৃথিবীতে কখনই দুটি ব্যক্তি একেবারে এক নয়। প্রত্যেকে স্বতন্ত্ররূপে ভিন্ন। এর অর্থ আরও এই যে সকল বিষয়ে দুজন ব্যক্তি যে সবসময় একমত হবে তা নয়। বেশির ভাগ মতভেদ হয়ত নগণ্য হতে পারে কিন্তু কিছু হয়ত গুরুতর হতে পারে। অনেক সংসার আছে যেখানে মতভেদ শীঘ্রই চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি, মারামারি, জিনিসপত্র ছোঁড়াতে পরিণত হয়; দুজনের মধ্যে একজন হয়ত কিছু দিনের বা সপ্তাহের জন্য ঘর ছেড়ে চলে যায় বা পরস্পরের সাথে কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দেয়। সেই প্রকৃতির পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে মতভেদ রাখা সম্ভব। কিভাবে? কয়েকটি মূল সত্যগুলির সম্মুখীন হয়ে।

১২ আমরা সকলেই অসিদ্ধ, আমাদের সকলেরই দোষত্রুটি আছে, প্রচুর চেষ্টা করেও দুর্বলতা প্রকাশ পায়। প্রেরিত পৌল তার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সত্য বলে বুঝতে পারেন: “আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি।” (রোমীয় ৭:১৯) আমাদের প্রথম পিতামাতা থেকে আমরা পাপ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। সিদ্ধতা আমাদের শক্তির বাইরে। তাই “কে বলিতে পারে আমি চিত্ত বিশুদ্ধ করিয়াছি, আমার পাপ হইতে শুচি হইয়াছি?”—হিতোপদেশ ২০:৯; গীতসংহিতা ৫১:৫; রোমীয় ৫:১২.

১৩ আমরা নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করি ও তার জন্য অজুহাত দেখাই। আমরা কি আমাদের বিবাহ-সঙ্গীর দুর্বলতাগুলি স্বীকার করতে বা ক্ষমা করে দিতে পারব না? আমরা যে পাপী তা নিঃসন্দেহে আমরা স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকি, কিন্তু বিশেষ কোন পাপ স্বীকার করতে কি আমরা প্রতিরোধ করি বা অসম্মত হই? আর আমাদের কি বোঝার শক্তি আছে যে ভুল করেছি স্বীকার করতে অসম্মত হওয়া হল লোকেদের সাধারণ গুণ, এমনকি বিবাহ-সাথীরও, এবং আমরা কি তা ক্ষমা করে দিই? “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে, আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা,” বলে অনুপ্রাণিত হিতোপদেশ। অন্যদের মত আপনিও “সুবর্ণ নিয়ম”-এর নীতিটির সাথে নিঃসন্দেহে একমত। যীশু তাঁর বিখ্যাত পর্বত দত্ত উপদেশে বলেন: “সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” বেশির ভাগ লোক সেটি মাত্র মুখে বলে, সামান্যই তা কাজে লাগায়। বৈবাহিক সম্পর্কসহ মানুষের সম্পর্কের সমস্যাকেও এই নীতির প্রকৃত প্রয়োগ দূর করবে।—হিতোপদেশ ১৯:১১; মথি ৭:১২.

১৪ আমরা প্রত্যেকেই চাই, যেন এক স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে আমাদের প্রতি চিন্তা ও আচরণ করা হোক। যদি কোন ব্যক্তি আমাদের গুণ বা দক্ষতাকে তুচ্ছ মনে করে অন্যায়ভাবে অপরের সাথে তুলনা করে, তাহলে আমরা কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাই? সাধারণত আমরা দুঃখিত বা ক্রুদ্ধ হই। বাস্তবে আমরা বলি, ‘আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি আমিই।’ সেই প্রকৃতির তুলনা সাধারণত উৎসাহজনক হয় না কারণ আমরা চাই আমাদের সাথে জ্ঞানপূর্ণ আচরণ করা হোক।

১৫ এই বিষয়টি ব্যখ্যা করতে হলে: আপনি যিনি স্বামী, আপনি কি স্ত্রী যা খাবার রান্না করে তাতে উপলব্ধি প্রকাশ করেন অথবা সে আপনার মায়ের মত রান্না করতে পারে না বলে অভিযোগ করেন? আপনার মা যখন নববিবাহিতা ছিলেন তখন তিনি কতটা ভাল রাঁধতেন তা কি আপনি জানেন? সেই তুলনায় আপনার স্ত্রী আপনার মায়ের থেকে হয়ত ভাল রাঁধে। আপনার স্ত্রীকে তার নতুন কর্তব্যগুলিতে অভ্যস্ত ও দক্ষ হতে সুযোগ দিন। আর স্ত্রী, আপনি কি অভিযোগ করেন যে আপনার এই নবস্বামীটি আপনার বাবার মত অর্থ উপার্জন করে না? আপনার বাবা যখন নববিবাহিত হন তখন তিনি কত উপার্জন করতেন? এমনকি এই বিষয়গুলি অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিষয়টি হল, আপনার স্বামীকে আপনি কতটা সাহায্য করেন। স্বামী কাজে যাওয়ার আগে আপনি কি সকালে উঠে তার জন্য জলখাবার তৈরি করেন, যাতে সে বুঝতে পারে যে আপনি তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন ও উপলব্ধি করেন? পরস্পরের সাথে শ্বশুর-শাশুড়ী নিয়ে কি কলহ করেন, কী প্রকৃতির বন্ধুবান্ধব রাখা হবে বা আমোদপ্রমোদ করা হবে সে সম্বন্ধে কি দ্বিমত হন? এইগুলি ও অন্যান্য তর্কবিতর্ক হয়ত হতে পারে। আপনি কী করে তার নিত্তি করবেন?

১৬ কিছু আধুনিক মনোবিজ্ঞানী বলেন যে সমস্যার সমাধান করতে ঝগড়া ভাল। তাদের মতে, নৈরাশ্যবোধ বেড়ে যেতে যেতে চাপের সৃষ্টি করে, অবশেষে তা প্রচণ্ড ঝগড়ায় ফেটে পড়ে। সেই ঝগড়া ও রাগারাগির মাধ্যমে অনেকদিনের চেপে থাকা বিষয়গুলি বেরিয়ে আসে, আর মন হাল্কা হয়ে যায়—এইভাবে সিদ্ধান্তটি বলে থাকে। যতক্ষণ না তা ঘটে সেই নৈরাশ্যগুলি ভিতরে চেপে থাকে ও পরে সেটি ফেটে বেরিয়ে পড়ে। সেই রকম ঝগড়াঝাটির পরিস্থিতিতে কিন্তু বিপদও আছে যেমন আপনি হয়ত এমন কিছু বলে ফেলতে পারেন, যা আপনি হয়ত বলতে চাননি, আর তা এমন দুঃখ দিতে পারে যা কখনও ভুলে যাওয়া যায় না। আপনি হয়ত সাথীর সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করতে পারেন যাতে আপনাদের দুজনের সম্বন্ধের মধ্যে এমন এক প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি হয়, যা পরে আর সরানো যায় না। যেমন হিতোপদেশ ১৮:১৯ পদ সাবধান করে দেয়: “বিরক্ত ভ্রাতা দৃঢ় নগর অপেক্ষা [দুর্জ্জয়], আর বিবাদ দুর্গের অর্গলস্বরূপ।” বাইবেলে উত্তম পরামর্শ পাওয়া যায়: “বিবাদ শুরু হওয়ার পূর্বেই তা ত্যাগ কর।”—হিতোপদেশ ১৭:১৪, রিভাইসড্‌ স্ট্যাণ্ডারড ভারশান।

ভাব-বিনিময় করুন!

১৭ আপনার মনে মতভেদগুলিকে বৃদ্ধি করে সেই চরম বিস্ফোরণের পরিস্থিতিতে না নিয়ে এসে তার আগেই আলোচনা করে নিলে ভাল হয়। কোন ভুলের প্রতি গুম হয়ে চিন্তা করলে প্রকৃতপক্ষে সেটি যত না মন্দ তার থেকে আরও বেশি মন্দ বলে মনে হয়। সেটি তখনই আলোচনা করুন না হলে তা ভুলে যান। সেটি কি এক মন্তব্য মাত্র? তাহলে ছেড়ে দিন। সেই সম্বন্ধে কি আলোচনা করা প্রয়োজন? আপনার সঙ্গী কি এমন কিছু করেছে যে তা আপনাকে দুঃখ দিয়েছে? সরাসরি দোষ দেবেন না; প্রশ্নের মাধ্যমে সেই বিষয়টি তুলতে চেষ্টা করুন, অথবা কোন প্রস্তাব করুন যা আলোচনা করতে পরিচালিত করবে। যেমন, আপনি হয়ত বলতে পারেন: ‘শোন, কিছু একটা হয়েছে যা আমি বুঝতে পারছি না। তুমি কি আমাকে বলবে?’ বিষয়টি শুনুন। অপরের মতামতটিও বুঝতে চেষ্টা করুন। হিতোপদেশ ১৮:১৩ পদের সাবধানবাণীটি পালন করুন: “শুনিবার পূর্ব্বে যে উত্তর করে, তাহা তাহার পক্ষে অজ্ঞানতা ও অপমান।” কেউ যদি আমাদের সম্বন্ধে ভুল পরিসমাপ্তিতে আসে, তাহলে আমরা কেউই তা পছন্দ করি না। বরং শীঘ্রই তার প্রতিক্রিয়া না করে পরিবর্তে সেইরূপ আচরণ করার উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়টি জানতে চেষ্টা করুন। যেমন হিতোপদেশ ২০:৫ পদ বলে সেইরূপ করুন: “মনুষ্যের হৃদয়ের পরামর্শ গভীর জলের ন্যায়; কিন্তু বুদ্ধিমান তাহা তুলিয়া আনিবে।”

১৮ আপনি কি মেজাজি? মেজাজি ব্যক্তির সাথে জীবনযাপন করা কষ্টকর। কিছু ব্যক্তিরা বলেন যে মেজাজ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কারণ তা মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেটি সত্য হোক বা না হোক, অনুভূতি সংক্রমণকারী। আমাদের আশপাশের ব্যক্তিদের দ্বারা, আমরা হয় খুশি হব না হয় দুঃখিত হব। সঙ্গীত আমাদের মনে বিভিন্ন প্রকৃতির মেজাজ আনতে পারে। গল্পও তা করতে পারে। আমরা মনে যে চিন্তা পোষণ করি তা আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। আপনি যদি নেতিবাচক বিষয়গুলির উপর চিন্তা করেন তাহলে আপনি বিষণ্ণ হবেন; ইচ্ছা করলে আপনি মনের জোরে ইতিবাচক বিষয়গুলি চিন্তা করতে ও আশাবাদী হতে পারেন। সেইগুলি সম্পর্কে চিন্তা করুন। (ফিলিপীয় ৪:৮) যদি আপনি তা করতে কষ্টবোধ করেন তাহলে খুব কায়িক শ্রম করুন—কিছু কঠোর পরিশ্রম করুন, এমনকি তা বাগানের আগাছা পরিষ্কার বা মেঝে ঘসাও হতে পারে; বাইরে বার হোন, দৌড়ান বা মাঠে হাঁটুন অথবা অন্যের জন্য কিছু সাহায্য করে দিতে পারলে আরও ভাল হবে—আপনার মনোযোগ ও শক্তিকে অন্য কোথাও পরিচালিত করতে কোন কিছু করা। মন্দ মেজাজ পোষণ করার চাইতে ভাল মেজাজ পোষণ করা অনেক ভাল। তা আপনাকে খুশি করবে আর নিশ্চয় আপনার সঙ্গীকেও!

১৯ যাইহোক, অনেকসময় কোন ঘটনা আপনাকে খুবই দুঃখ দিতে পারে বা প্রচণ্ড অসুখ ও ব্যথা আপনাকে কাতর করতে পারে। অথবা, আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে ঋতুচক্র বা গর্ভাবস্থার সময়ে শক্তিশালী হরমোনের ক্ষরণেরও খুবই পরিবর্তন দেখা যায় যা স্নায়ু ব্যবস্থা ও আবেগকে প্রভাবিত করে থাকে। স্ত্রী হয়ত না জেনেই ঋতুচক্রের পূর্ব-উত্তেজনা ভোগ করে। এই মূল বিষয়টি স্বামীকে মনে রাখতে হবে যাতে সে সেই সময় ক্রুদ্ধ না হয়ে বিবেচনাপূর্ণ আচরণ করে। সেই সব বিশেষ পরিস্থিতিতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই উপলব্ধি করা দরকার যে কেন মেজাজের পরিবর্তন হয়েছে এবং তার প্রতিক্রিয়া গঠনমূলক রীতিতে করতে হবে। “জ্ঞানবানের হৃদয় তাহার মুখকে বুদ্ধি দেয়, তাহার ওষ্ঠে পাণ্ডিত্য যোগায়।” এবং “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে।”—হিতোপদেশ ১৬:২৩; ১৭:১৭.

২০ আপনার বিবাহ সাথীটি কি ঈর্ষাপরায়ণ? নিজের ও এমনকি বিবাহেরও সুনাম রক্ষা করতে ঈর্ষান্বিত হওয়া ভাল। যেমন অ্যাড্রেন্যালাইন হৃৎস্পন্দনকে আবার শুরু করে, ঠিক তেমনই ঈর্ষা, যেটিকে ভালবাসা যায় সেটিকে রক্ষা করতে হৃদয়কে উদ্দীপিত করে। ঈর্ষার বিপরীত হল উদাসীনতা, আর আমাদের বিবাহের প্রতি উদাসীন হওয়া উচিৎ নয়।

২১ কিন্তু আর এক প্রকারের ঈর্ষা আছে, যা নিরাপত্তাহীন মনোভাবের দ্বারা পরিচালিত ও কল্পনা দ্বারা সৃষ্ট। সেইরূপ অযৌক্তিক, অত্যধিক ঈর্ষা বিবাহকে এক অপ্রীতিকর খাঁচায় পরিণত করে যেখানে বিশ্বাস ও প্রকৃত ভালবাসা আর থাকে না। ‘প্রেম এই ধরনের ঈর্ষা করে না’ এবং ঈর্ষাতে আবিষ্ট থাকলে “সকল অস্থির পচনস্বরূপ” হয়।—১ করিন্থীয় ১৩:৪; হিতোপদেশ ১৪:৩০.

২২ ঈর্ষার কারণেই আপনার সঙ্গী যদি নিরাপত্তাহীন বোধ করে তাহলে সেই কারণটি তৎক্ষণাৎ সরিয়ে দিন। যদি কোন প্রকৃত কারণ না থাকে তাহলে আপনার ক্ষমতার মধ্যে যতটা সম্ভব কথাবার্তা বলে ও এমনকি আরও গুরুত্বপূর্ণ হল আচরণের মাধ্যমে ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির মনে দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপন করুন। হৃদয়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করুন!

২৩ বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে কি বাইরের লোক সাহায্যকারী হতে পারে? সম্ভবত হতে পারে, কিন্তু দুইজনের মত না থাকলে সেইরূপ ব্যক্তিদের ডাকা উচিৎ নয়। প্রথমে, “প্রতিবাসীর সহিত তোমার বিবাদ মিটাইয়া ফেল, কিন্তু পরের গুপ্ত কথা প্রকাশ করিও না।” (হিতোপদেশ ২৫:৯) সালিসি করতে শ্বশুর-শাশুড়ীকে ডেকে আনলে এক বিশেষ ঝুঁকি আছে। তারা কখনই নিরপেক্ষ হবেন না। তাই বিজ্ঞতার সাথে বাইবেল বলে: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২:২৪) স্ত্রীর বাবামা ও স্বামীর সম্বন্ধেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য হয়। সালিসি করার জন্য বাবামা বা শ্বশুর-শাশুড়ীকে ডেকে একে অপরের বিপক্ষে না গিয়ে, স্বামীস্ত্রীর দুজনেরই একপক্ষে থাকা ভাল এই মনে করে যে তারা দুজনেই সেই সমস্যার মধ্যে রয়েছে ও দুজনকে মিলে সেটির সমাধান করতে হবে। অপরজনের মত না নিয়ে বাইরের লোকের কাছে পরামর্শের জন্য গেলে তা দুজনকেই অন্যদের চোখে নিচু করিয়ে দেয়। যদি আপনারা খোলাখুলি, আন্তরিকভাবে, প্রেমের সাথে ভাব-বিনিময় করেন তাহলে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান না করার কোন কারণই থাকে না। পরামর্শের জন্য অন্য কোন পরিপক্ক ব্যক্তির সাথে আলোচনা করা যেতে পারে কিন্তু অবশেষে সমাধান আপনার ও আপনার সঙ্গীর উপরেই নির্ভর করে।

২৪ “আত্মগর্বিত হয়েও না বা নিজেকে বড় মনে কর না,” প্রেরিত পৌল পরামর্শ দেন। (রোমীয় ১২:৩, নিউ ইংলিশ বাইবেল) তারপর তিনি আরও বলেন: “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) অনেকসময় যখন আমাদের গর্ব খর্ব হয় তখন তা আমাদের, আমরা যে অত বড় নই সেটি দেখতে সাহায্য করে। পৃথিবীর তুলনায় আমরা নিশ্চয়ই বড় নই, আর সৌরজগতের মধ্যে পৃথিবী নিজেই ছোট, আবার মহা-বিশ্বের তুলনায় সৌরজগতও অনেক ছোট। যিহোবার চোখে “সমস্ত জাতি অবস্তুবৎ, . . . তাহাদিগকে অসার ও শূন্য জ্ঞান করেন।” (যিশাইয় ৪০:১৭) তর্কবিতর্ক যাতে সেইরূপ এক গুরুগম্ভীর বিষয় না হয় তাই এইরূপ চিন্তাধারা বিষয়গুলিকে সেই অনুপাতে দেখতে সাহায্য করে।

২৫ অনেকসময় রসিকতা নিজেদের সম্পর্কে অতি গম্ভীরভাবে বিবেচনা না করতে সাহায্য করে। নিজেদের ভুলে নিজেরাই হাসা হল পরিপক্কতার চিহ্ন ও তা জীবনের অনেক সমস্যাকে সহজ করে দেয়।

“তুমি জলের উপরে রুটি ছড়াইয়া দেও”

২৬ যদি আপনার সঙ্গীটি সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণরূপে করতে আপনার প্রচেষ্টায় সাড়া দিতে না চায়, তাহলে কি করবেন? বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করুন: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না।” অনুকরণ করার জন্য যীশু হলেন আমাদের আদর্শ: “তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না।” লোকেদের মধ্যে সাধারণ আচরণ হল প্রতিশোধে প্রতিশোধ নেওয়া। কিন্তু আপনি যদি এই পথ অনুসরণ করেন তাহলে আপনি অপরকে, আপনাকে পরিবর্তন করতে, আপনি যেমন সেইরূপ ব্যক্তিতে পরিণত করতে তাদের সুযোগ দেন। আসলে, তারা আপনাকে তাদের মত ব্যক্তিতে পরিণত করে। যদি তা হতে দেওয়া হয়, তা হবে আপনার নিজেকে, আপনার মতামত ও আপনার প্রিয় নীতিগুলিকে অস্বীকার করা। পরিবর্তে, যীশুকে অনুকরণ করুন, যিনি নিজের সম্বন্ধে সত্যটি ধরে রেখেছিলেন, আশপাশের ব্যক্তিদের দুর্ব্বলতাগুলি তাকে পরিবর্তন করেনি: “আমরা যদি অবিশ্বস্ত হই, তিনি বিশ্বস্ত থাকেন; কারণ তিনি আপনাকে অস্বীকার করিতে পারেন না।”—রোমীয় ১২:১৭; ১ পিতর ২:২৩; ২ তীমথিয় ২:১৩.

২৭ কোন মন্দ প্রতিক্রিয়াকে উত্তম প্রতিক্রিয়া দ্বারা পরিবর্তন করতে আপনি যথেষ্ট দৃঢ় হলে, আপনি হয়ত উত্তম বিষয়টি শুরু করতে পারেন। “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে।” (হিতোপদেশ ১৫:১) দুর্বলতা থেকে মৃদু উত্তর আসে না পরিবর্তে দৃঢ়তা থেকেই আসে, আর আপনার সঙ্গীটি তা বুঝতে সক্ষম হবে। যেহেতু অনেকেই মন্দের পরিবর্তে মন্দ প্রতিক্রিয়া করে থাকে, তাই আপনার এই ভিন্ন রকমের ভাল ব্যবহার মন্দ প্রতিক্রিয়াকে উত্তম করে দেবে। কিছু শাস্ত্রপদ তা বলে থাকে। “জল-সেচনকারী আপনিও জলে সিক্ত হয়।” “তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদেরও নিমিত্তে পরিমাণ করা যাইবে।” “তুমি জলের উপরে রুটি ছড়াইয়া দেও, কারণ অনেক দিন পরে তাহা পাইবে।” (হিতোপদেশ ১১:২৫; লূক ৬:৩৮; উপদেশক ১১:১, রিভাইসড্‌ স্ট্যাণ্ডারড ভারশান) আপনার ভাল ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার সাথীর কাছ থেকে ফসলস্বরূপ উত্তম ব্যবহার পেতে সময় লাগতে পারে। আপনি নিশ্চয় আজ বীজ রোপন করে পরের দিন ফসল কাটেন না। যাইহোক, “মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে। . . . আর আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; কেননা ক্লান্ত না হইলে যথা সময়ে শস্য পাইব।”—গালাতীয় ৬:৭-৯.

২৮ এখানে কিছু শাস্ত্রপদ ও প্রশ্নগুলি আছে যা বিবাহিত দম্পতিরা বিবেচনা করতে পারেন:

হিতোপদেশ ১৪:২৯: “যে ক্রোধে ধীর, সে বড় বুদ্ধিমান; কিন্তু অশুক্রোধী অজ্ঞানতা তুলিয়া ধরে।” আপনি যদি সময় নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে আপনি কি অনেকসময় দেখেছেন যে আপনার ক্রুদ্ধ হওয়ার প্রকৃতই কোন কারণ ছিল না?

হিতোপদেশ ১৭:২৭: “যে বাক্য সম্বরণ করে, সে জ্ঞানবান; অর যে শীতলাত্মা, সে বুদ্ধিমান।” আপনি কি নিজেকে ঠাণ্ডা রাখেন, এমন কোন কথা বলা সম্বরণ করেন যা আপনার সাথীকে ক্রুদ্ধ করে দিতে পারে?

হিতোপদেশ ২৫:১১: “উপযুক্ত সময় কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের তুল্য।” যে কথাগুলি একসময় সঠিক হয় তা অন্য সময় উপযুক্ত নাও হতে পারে। উপযুক্ত সময়ে কোন্‌ কথাটি উপযুক্ত, আপনি কি তা বুঝতে পারেন?

হিতোপদেশ ১২:১৮: “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্গাঘাতের মত, কিন্তু জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।” কথা বলার আগে আপনি কি একটু থেমে, ভেবে নেন যে আপনার কথাগুলি আপনার সঙ্গীর উপর কী প্রভাব আনতে পারে?

হিতোপদেশ ১০:১৯: “বাক্যের বাহুল্যে অধর্ম্মের অভাব নাই; কিন্তু যে ওষ্ঠ দমন করে, সে বুদ্ধিমান।” যখন আমরা বিচলিত হই তখন আমরা কিছু না ভেবেই অনেক কিছু বলি ও পরে আমরা দুঃখিত হই। আপনি কি তা করা থেকে বিরত থাকবেন?

হিতোপদেশ ২০:৩: “বিবাদ হইতে নিবৃত্ত হওয়া মনুষ্যের গৌরব, কিন্তু মুর্খমাত্রেই বিবাদ করিবে।” তর্কবিতর্ক করতে দুই ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। প্রথমেই তর্ক করা বন্ধ করতে আপনি কি যথেষ্ট পরিপক্ক?

হিতোপদেশ ১০:১২: “দ্বেষ বিবাদের উত্তেজক, কিন্তু প্রেম সমস্ত অধর্ম্ম অচ্ছাদন করে।” আপনি কি ক্রমাগত পুরনো তর্কবিতর্কগুলি মনে করেন, অথবা আপনি আপনার সাথীকে এতই ভালবাসেন যে সেগুলি ভুলে যান?

হিতোপদেশ ১৪:৯, “নিউ ইংলিশ বাইবেল”: “শান্তি স্থাপন করতে মূর্খ খুবই একগুঁয়ে হয়, উত্তম ব্যক্তি জানে মেনে নেওয়ার অর্থ।” মেনে নিতে ও বৈবাহিক জীবনে শান্তি স্থাপন করতে আপনি কি খুবই অহঙ্কারী?

হিতোপদেশ ২৬:২০: “কাষ্ঠ শেষ হইলে অগ্নি নিভিয়া যায়।” আপনি কি তর্কবিতর্ক করা বন্ধ করতে পারেন, বা আপনাকেই শেষ কথাগুলি বলতে হবেই?

ইফিষীয় ৪:২৬: “সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক।” আপনি কি সেই দ্বিমত পোষণ করেই যান, ফলে আপনার ও আপনার সঙ্গীর মধ্যে সেই কষ্টের মনোভাবটি রেখেই দেন?

২৯ জ্ঞানের পরামর্শগুলি থেকে তখনই উপকার পাওয়া যায় যখন তা কাজে লাগান হয়। চেষ্টা করে দেখুন। অনুরূপে, আপনার সঙ্গীটি যে প্রস্তাব করে সেটিও কাজে লাগাতে চেষ্টা করুন। দেখুন তা কাজে লাগে কি না। যদি কিছুর ভুল হয় তাহলে কাকে দোষী করা হবে? সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। নমনীয় হোন, আপনার অসম্মতি ব্যক্ত করুন, আলোচনা করুন এবং নিজেকে খুব বেশি গুরুত্ব দেবেন না। ভাব-বিনিময় করুন! আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে ‘নিজের মত প্রেম করেন’ তাহলে বিবাহিত জীবনে মানিয়ে নিয়ে সেটিকে সুখময় করা কোন কষ্টকর বিষয় হবে না।—মথি ১৯:১৯.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১. উপদেশক ৪:৯, ১০ পদে বর্ণিত সহযোগিতা কিভাবে বৈবাহিক জীবনে উপকার আনে?

২, ৩. (ক) বিবাহের পরেরদিনে জীবনের কোন্‌ বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়? (খ) বিবাহ করার পরেই মানিয়ে নেওয়াটি আশা করা কেন একমাত্র যুক্তিসম্পন্ন?

৪. বিবাহিত ব্যক্তিকে কোন্‌ শাস্ত্রীয় নীতিগুলি মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে? (১ করিন্থীয় ১০:২৪; ফিলিপীয় ৪:৫)

৫. বিবাহ সঙ্গী সম্পর্কে কিভাবে একজন নেতিবাচক বা ইতিবাচক বিষয় চিন্তা করতে পারে?

৬. যখন স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই তাদের বিবাহকে সফল করতে সচেষ্ট হন, তখন সেটি তাদের পরস্পরের সম্বন্ধকে কিভাবে প্রভাবিত করে?

৭. সিদ্ধান্ত নিতেই হলে, কখন মেনে নেওয়া ভাল?

৮, ৯. বৈবাহিক ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি কী?

১০. বিবাহিত ব্যক্তিদের সহবাসে মানিয়ে নিতে কোন্‌ বিষয়গুলি বিবেচনা করলে সাহায্যকারী হতে পারে?

১১-১৩. যখন মতের অমিল হয় তখন এই পার্থক্য যাতে গভীর ফাটলে পরিণত না হয় তাই আমাদের কী মনে রাখা দরকার?

১৪, ১৫. (ক) যখন এক বিবাহ সঙ্গী তার সঙ্গীকে অন্যায়ভাবে অপরের সাথে তুলনা করে তখন কী হয়? (খ) কোন্‌ ক্ষেত্রে অজ্ঞতার সাথে অনেকসময় সেইরূপ তুলনা করা হয়?

১৬. প্রচণ্ড ঝগড়া সমস্যার সমাধান করে এই সিদ্ধান্তটির মধ্যে কী ভুল আছে?

১৭. মতভেদগুলি মনের মধ্যে পোষণ করে ফেটে যাওয়ার মত চরম পর্যায়ে না নিয়ে যেতে কী করা যেতে পারে?

১৮. নেতিবাচক মেজাজ ত্যাগ করতে আমাদের কী সাহায্য করতে পারে?

১৯. বিবাহ-সাথীর মেজাজের সাথে কিভাবে একজন উপলব্ধিমূলক ব্যবহার করতে পারে?

২০-২২. (ক) অহেতুক ঈর্ষা আমাদের কেন এড়াতে হবে? (খ) বিবাহ সাথীকে নিরাপত্তা-বোধ প্রদান করতে কী করা যেতে পারে?

২৩. বৈবাহিক সমস্যা সমাধান করতে যখন একজন বাইরের লোকের সাহায্য নিতে ইচ্ছুক হয় তখন কী বিবেচনা করা উপকারী হবে?

২৪, ২৫. বৈবাহিক সমস্যা মিটাতে যখন গর্ব বাধা দেয় তখন সেই ব্যক্তি কী করতে পারে?

২৬, ২৭. শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা মিটাবার প্রচেষ্টায় সাড়া দিতে একজনের বিবাহ সঙ্গীটি রাজি না হয় তখন কোন্‌ বাইবেল নীতিগুলি কাজে লাগান যায় এবং কেন?

২৮. বাইবেলের পুস্তক হিতোপদেশে কোন্‌ উত্তম নীতিগুলি পাওয়া যায় যা সুখী বিবাহিত জীবনযাপন করতে সাহায্য করে এবং কিভাবে?

২৯. সুখী বিবাহিত জীবনযাপন করতে চাইলে কোন্‌ মূল বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে?