সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ভাব-বিনিময়ের পথ খুলে রাখা

ভাব-বিনিময়ের পথ খুলে রাখা

অধ্যায় ১১

ভাব-বিনিময়ের পথ খুলে রাখা

ভাব-বিনিময় শুধুমাত্র কথা বলা ছাড়াও আরও কিছু। যেমন প্রেরিত পৌল বলেন: যদি শ্রবণকারী আপনার কথা বুঝতে না পারেন, তাহলে “তোমাদের কথা আকাশকেই বলা হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৪:৯) আপনি যা বলেন আপনার সন্তানেরা কি তা বুঝতে পারে এবং তারা আপনাকে কী বলার চেষ্টা করছে আপনি কি প্রকৃতই তা বুঝতে পারেন?

প্রকৃত ভাব-বিনিময়ের জন্য, অবশ্যই এক মন থেকে আর এক মনে চিন্তা, ধারণা ও অনুভূতিগুলি পাঠান প্রয়োজন। যদি ভালবাসাকে সুখী পারিবারিক জীবন-যাপনের হৃদয় বলা যায়, তাহলে ভাব-বিনিময়কে প্রাণরক্ত বলা যেতে পারে। বিবাহিত সাথীদের মধ্যে ভাব-বিনিময়ে ভাঙ্গন ধরলে সমস্যা আসে; পিতামাতা ও ছেলেমেয়ের মধ্যে সেই সমস্যা এলে তা অধিক সমস্যার সৃষ্টি না করলেও অনুরূপ সঙ্কটজনক হয়।

দূর-দৃষ্টি গ্রহণ করা

পিতামাতা ও ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাববিনিময়ে কঠিন সমস্যা আসে, সন্তানের জীবনের প্রথমদিকে নয় কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালে—“কৈশোরাবস্থায়।” এইরূপ হবে বলে পিতামাতাদের উপলব্ধি করতে হবে। যেহেতু ছেলেমেয়েদের আগের জীবন তুলনামূলকরূপে সমস্যা মুক্ত ছিল তাই পরবর্তী বছরগুলিও সেইরূপ হওয়া উচিৎ এটি আশা করা তাদের পক্ষে অবাস্তব হবে। সমস্যা নিশ্চয়ই আসবে ও সেই সমস্যাগুলিকে সমাধান করতে বা কম করতে স্পষ্ট এবং কার্যকারী ভাব-বিনিময় হবে সমাধান করার চাবি-কাঠি। সেটি উপলব্ধি করে, পিতামাতাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকান উচিৎ, ভবিষ্যতের বিষয় চিন্তা করা উচিৎ, কারণ “কার্য্যের আরম্ভ হইতে তাহার অন্ত ভাল।”—উপদেশক ৭:৮.

পরিবারে ভাব-বিনিময় স্থাপন, গঠন এবং বজায় রাখতে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। বছরের পর বছর ধরে স্বামী ও স্ত্রী গভীর আস্থা, বিশ্বাস এবং পরস্পর এক বোঝাপড়া গড়ে তোলে যা কথা ছাড়াই ভাব-বিনিময় করতে সম্ভব করে—শুধুমাত্র একটি দৃষ্টি, হাসি বা স্পর্শই তা বহুলাংশে প্রকাশ করে। ছেলেমেয়েদের সাথে ভাব-বিনিময় করার জন্য সেই একই দৃঢ় ভিত্তি গঠন করার লক্ষ্য তাদের রাখা দরকার। শিশু কথা বলা শেখার আগেই বাবামা তাকে সুরক্ষিত ও ভালবাসা বোধ প্রদান করেন। ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার সাথে সাথে যদি পরিবার কাজ, খেলা ও তার থেকেও বেশি, উপাসনা একসঙ্গে করে তাহলে ভাব-বিনিময়ের দৃঢ় পথ স্থাপিত হয়। সেই পথগুলি খোলা রাখার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত প্রচেষ্টা ও প্রজ্ঞা।

আপনার সন্তানকে ব্যক্ত করতে উৎসাহ দিন

প্রাচীন প্রবাদ বাক্য আছে, “ছেলেমেয়েদের দেখা দরকার, শোনা নয়।” অনেকসময়—সত্য। যেমন ঈশ্বরের বাক্য বলে, ছেলেমেয়েদের শেখা উচিৎ যে “নীরব থাকিবার ও কথা কহিবার কাল” আছে। (উপদেশক ৩:৭) কিন্ত সন্তান মনোযোগ পেতে চায় এবং সহজরূপে ব্যক্ত এই অভিব্যক্তিগুলিকে জোর করে চেপে দেওয়া থেকে পিতামাতাদের সাবধান হতে হবে। ছোটরা বড়দের মত অভিজ্ঞতাগুলির প্রতি প্রতিক্রিয়া করবে বলে আশা করবেন না। বড়রা একটি ছোট ঘটনাকে জীবনের বিস্তৃত দৃশ্যপটের শুধুমাত্র এক অংশরূপে মনে করেন। সন্তান কোন বিষয়ে আগ্রহী হলে সেই সম্পর্কে খুব উত্তেজিত ও এমন মগ্ন হয়ে যায় যে অন্য বিষয়গুলি প্রায় সে ভুলেই যায়। ছোট বাচ্চা হয়ত হঠাৎ ঘরে ঢুকে উত্তেজিত হয়ে তার বাবা অথবা মাকে বিষয়টি বর্ণনা করতে থাকে। যদি তাদের মধ্যে কেউ বিরক্ত হয়ে বাচ্চাকে “চুপ কর!” বলে থামিয়ে দেন বা রেগে গিয়ে অন্য কিছু বলেন তাহলে বাচ্চার উৎসাহ দমে যায়। ছেলেমানুষি কথাবার্তা বেশি কিছু অর্থ প্রকাশ করে না। কিন্তু আপনার সন্তানকে স্বাভাবিকরূপে নিজেকে প্রকাশ করতে দিলে, পরবর্তীকালে যে সকল বিষয়গুলি আপনি চান এবং দরকার আপনার জানা সেইগুলি তারা আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে না।

মার্জিত ও ভদ্র ব্যবহার উত্তম ভাব-বিনিময়ে সহায়তা করে। ছেলেমেয়েদের ভদ্র হতে শেখা দরকার, তাদের সাথে কথা বলার সময় ও অন্যান্য উপায়ে পিতামাতাদের তাদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করা উচিৎ। ভর্ৎসনার দরকার, প্রয়োজন হলে ভর্ৎসনা করতেই হবে এমনকি কঠোরতার সাথে। (হিতোপদেশ ৩:১১, ১২; ১৫:৩১; ৩২; তীত ১:১৩) কিন্তু, সন্তানেরা কথা বললে পিতামাতারা যদি তাদের সব সময় থামিয়ে দেন, ক্রমাগত শাসন করেন বা আরও খারাপ, তাদের যদি অবজ্ঞা এমনকি ঠাট্টা করেন, তাহলে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেবে—অথবা তারা কথা বলতে অন্য কারুর কাছে যাবে। ছেলে বা মেয়ে যতই বড় হতে থাকে ততই এই প্রকৃতির পরিস্থিতি আসে। আপনি এটি করুন না কেন—আজ দিনের শেষে, আপনার ছেলে বা মেয়ের সাথে আপনার কথাবার্তাগুলি পুনরালোচনা করুন এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: আমি কতবার এমন কিছু বলেছি যা উপলব্ধি, উৎসাহ, প্রশংসা বা উচ্ছ্‌বসিত প্রশংসা প্রকাশ করেছে। অপরপক্ষে, আমি কতবার এমন কথা বলেছি যা এর বিপরীতটি প্রকাশ করেছে, যা ‘ছেলে বা মেয়েকে নিরুৎসাহিত করেছে’ এবং যা অতৃপ্তি, বিরক্তি ও উত্যক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছে? আপনার পুনরালোচনার ফলাফল দেখে আপনি হয়ত আশ্চর্য হয়ে যাবেন।—হিতোপদেশ ১২:১৮.

পিতামাতাদের ধৈর্য ও আত্ম-সংযমের প্রায়ই প্রয়োজন হয়। ছোটরা সবসময় আবেগপ্রবণ হয়। হয়ত বড়দের কথাবার্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে নিজের মনে যা আছে তা হঠাৎ বলতে আরম্ভ করে। পিতা বা মাতা ছোটদের সরাসরি বকাবকি করতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় ভদ্র ও শান্তভাবে তাদের কথাগুলি শোনা বিজ্ঞতার কাজ হবে, ফলে তারা আত্ম-সংযমের এক উদাহরণ স্থাপন করবেন এবং সন্তানদের ছোট করে উত্তর দেওয়ার পর, ভদ্রতা ও বিবেচনা প্রদর্শন করার জন্য সন্তানকে ভালভাবে মনে করিয়ে দিতে পারেন। সুতরাং, এখানেও সেই পরামর্শ প্রযোজ্য হয় “শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হউক।”—যাকোব ১:১৯.

সন্তানেরা সমস্যায় পড়লে আপনি চান যে, নির্দেশের জন্য তারা আপনার কাছে আসুক। জীবনে আপনিও যে নির্দেশ চান এবং বাধ্যতার সাথে কারুর উপর নির্ভর করার জন্য, আপনার যে কেউ আছেন তা প্রদর্শন করে আপনি তাদের উৎসাহ দিতে পারেন। ছেলেমেয়েরা ছোট্ট থাকাকালীন কিভাবে উত্তম ভাব-বিনিময় স্থাপন করেছিলেন তা বলতে গিয়ে একজন পিতা এই বলেন:

“রাতে শোয়ার সময় প্রায় প্রত্যেকদিন রাত্রি আমি ছেলেমেয়েদের সাথে প্রার্থনা করতাম। তারা সাধারণত বিছানায় থাকত আর আমি পাশে হাঁটু গেড়ে তাদের জড়িয়ে ধরে থাকতাম। আমার প্রার্থনা বলার সাথে সাথে তারাও প্রায়ই পরে একটি প্রার্থনা বলত। আমাকে কিশি দিয়ে, ‘বাবা, আমি তোমাকে ভালবাসি,’ বলাটা তাদের পক্ষে অস্বাভাবিক ছিল না এবং তারপর তারা অনেক কিছু মনের কথা প্রকাশ করত। বিছানার উষ্ণতা ও বাবার আলিঙ্গনে সুরক্ষা বোধ করে তারা হয়ত কোন ব্যক্তিগত সমস্যা সম্পর্কে বলত যার সাহায্য তারা পেতে চায় অথবা ভালবাসার এক অভিব্যক্তি মাত্র প্রকাশ করত।”

খাবার সময় বা অন্যান্য সময়ে, আপনার প্রার্থনা—মুখস্থের মত না হয়ে—কিন্তু তা যদি সুস্পষ্ট, আন্তরিক এবং আপনার স্বর্গীয় স্রষ্টা ও পিতার সাথে আপনার প্রকৃত ব্যক্তিগত সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে, তাহলে তা আপনার সন্তানগণের সাথে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রভূতরূপে সাহায্য করবে।—১ যোহন ৩:২১; ৪:১৭, ১৮.

পরিবর্তনের বছরগুলি

বয়ঃসন্ধিকাল হল পরিবর্তনের কাল, এমন এক সময় যখন আপনার ছেলে বা মেয়ে আর শিশু থাকে না আবার প্রাপ্তবয়স্কও হয় না। কৈশোরাবস্থায় দেহে পরিবর্তন আসে এবং তা আবেগকে প্রভাবিত করে। কৈশোরকালের সমস্যা ও চাহিদাগুলির সাথে বাল্যকালের চাহিদাগুলির অনেক পার্থক্য দেখা যায়। সুতরাং সেই সমস্যাগুলির মোকাবিলা করা বা চাহিদা মিটানোর ক্ষেত্রে পিতামাতাকে মানিয়ে নিতে হবে, কারণ বাল্যাবস্থায় ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে যেগুলি কাজে লাগে সেইগুলি কৈশোরকালে সবসময় কাজে লাগে না। যুক্তি দেওয়ার আরও বেশি প্রয়োজন হয় এবং এর জন্য দরকার কম নয় কিন্তু আরও বেশি পরিমাণে ভাব-বিনিময়।

১০ উদাহরণস্বরূপ, যৌন বিষয় সম্পর্কে আপনার ছোট বাচ্চাকে দেওয়া সরল ব্যাখ্যা বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীর পক্ষে যথেষ্ট নয়। তারা যৌন আবেগ অনুভব করে কিন্তু লজ্জার জন্য তারা বাবামায়ের কাছে এই সম্পর্কে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধাবোধ করে। বাবামাকে এই সম্পর্কে প্রথমে আগ্রহ নিতে হবে ও তা করা তাদের পক্ষে সহজ হবে না যদি না তারা বিশেষকরে ছেলেমেয়েদের সাথে কাজ ও খেলার সময় আন্তরিক সঙ্গী হয়ে ভাব-বিনিময়ের উত্তম পথ স্থাপন না করেন এবং তা বজায় না রাখেন। ছেলেদের শুক্রপাত অথবা মেয়েদের রজঃস্রাব আরম্ভ হলে তা কম অস্বস্তিকর বলে মনে হবে যদি তা আগে থেকে ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়। (লেবীয় পুস্তক ১৫:১৬, ১৭; ১৮:১৯) বাবা হয়ত ছেলের সাথে হাঁটার সময় হস্তমৈথুন সম্পর্কে কথা তুলে বলতে পারেন যে, বেশির ভাগ যুবকের এই সম্পর্কে কিছু না কিছু সমস্যা আছে এবং জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘এ সম্পর্কে তুমি কী বল?’ অথবা ‘তোমার কি সমস্যা বলে মনে হচ্ছে?’ এমনকি কিছু পারিবারিক আলোচনায় কৈশোরাবস্থার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে যেখানে বাবা ও মা দুজনেই সহজভাবে এবং সরাসরি তাদের পরামর্শ দিতে পারেন।

কিশোর-কিশোরীদের চাহিদাগুলি বোঝা

১১ “তুমি প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর; সমস্ত উপার্জ্জন দিয়া সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর।” (হিতোপদেশ ৪:৭) পিতামাতা হিসাবে যুবকদের পথগুলি সম্পর্কে বিজ্ঞ থাকুন; তাদের অনুভূতির প্রতি অন্তর্দৃষ্টি প্রদর্শন করুন। আপনার কৈশোরাবস্থায় আপনি কেমন বোধ করেছিলেন তা ভুলে যাবেন না। এটিও মনে রাখুন যে, বড়রা প্রত্যেকেই একসময় যুবক-যুবতী ছিলেন এবং তারা জানেন যে যৌবনকাল কী প্রকৃতির হয়, কিন্তু কোন যুবক ব্যক্তিই কখনও প্রৌঢ়াবস্থা অভিজ্ঞতা করেনি। নব্য যুবক বা যুবতী চায় না যে তাদের সাথে আর শিশুর মত ব্যবহার করা হোক কিন্তু তবুও সে তখনও প্রাপ্তবয়স্ক নয় তাই প্রাপ্তবয়স্কের অনেক কিছুই তাকে আগ্রহী করে না। তার মধ্যে এখনও অনেক ছেলেমানুষি ভরা থাকে এবং এর জন্য চাই কিছু সময়।

১২ জীবনের এই পর্যায়ে যুবক-যুবতীরা তাদের পিতামাতার কাছ থেকে বিশেষকরে কিছু চায়। তারা চায় যে তাদের বোঝা হোক; এই সময়েই তারা চায় তাদের ব্যক্তি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক; তারা চায় সঙ্গতিপূর্ণ নির্দেশ ও পরিচালনা এবং যেগুলি তারা যে প্রাপ্তবয়স্ক হতে যাচ্ছে তা যেন বিবেচনা করে হয়; তাদের যে প্রয়োজন আছে এবং তাদের উপলব্ধি করা হয়, তা তারা বেশি করে অনুভব করতে চায়।

১৩ এই কৈশোরাবস্থায় বাধ্যবাধকতার প্রতি কিছু মাত্রায় বাধা দিতে দেখা দিলে পিতামাতাদের আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তা হয়ে থাকে কারণ অবশেষে সে স্বাধীন হতে যাবে এবং গতিবিধি ও মনোনয়নের ক্ষেত্রে তার ব্যাপক স্বাধীনতা পাওয়ার স্বাভাবিক ইচ্ছা থাকে। অসহায় শিশুর নিয়মিত পিতামাতার যত্নের প্রয়োজন হয়, ছোট ছেলেমেয়েদের সযত্ন সুরক্ষার দরকার পড়ে কিন্তু যখন তারা বড় হতে থাকে তাদের কার্যের ক্ষেত্র বিস্তৃত হয় এবং পারিবারিক বৃত্তের বাইরেও সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় ও দৃঢ় হয়। ছেলে বা মেয়ের স্বাধীনতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়লে তাদের সাথে ব্যবহার করা কঠিন বোধ হতে পারে। পিতামাতারা তাদের অধিকারকে কখনও অবহেলা বা উপেক্ষা করতে দিতে পারেন না—সন্তানের নিজের মঙ্গলের জন্য। কিন্তু যদি তারা স্মরণে রাখেন কী তাদের এই বিক্ষুব্ধ আচরণ করতে পরিচালিত করেছে তাহলে পিতামাতারা বিজ্ঞতার সাথে মোকাবিলা করতে এবং ভাব-বিনিময় বজায় রাখতে পারেন।

১৪ ছেলে বা মেয়ে আরও বেশি স্বাধীনতা চাইলে পিতামাতা কি করতে পারেন? সেই ইচ্ছাটি, হাতের মুঠিতে চেপে রাখা এক স্প্রিঙের মত। হঠাৎ ছেড়ে দিলে সেটি লাফিয়ে এদিক ওদিকে গিয়ে পড়বে। যদি অনেকক্ষণ চেপে ধরে থাকেন তাহলে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন ও সেটি অকেজো হয়ে যাবে। নিয়ন্ত্রন করে ধীরে ধীরে ছাড়লে সেটি নিজের স্থানে ঠিক ফিরে আসবে।

১৫ স্বাধীনতার প্রতি নিয়ন্ত্রিতরূপে সুযোগ পাওয়ার উদাহরণ আমরা যীশুর ক্ষেত্রে পাই তিনি যখন এক কিশোর বালক ছিলেন। তাঁর কৈশোরাবস্থার পূর্বেকার সময় সম্পর্কে, লূক ২:৪০ পদের ঐতিহাসিক বিবরণ বলে যে “বালকটী বাড়িয়া উঠিতে ও বলবান্‌ হইতে লাগিলেন, জ্ঞানে পূর্ণ হইতে থাকিলেন; আর ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাঁহার উপরে ছিল।” যদিও তিনি সিদ্ধ ছিলেন তবুও তাঁর প্রজ্ঞা আপনা-আপনি আসতে পারে না, তাই কোন সন্দেহই নেই যে তাঁর বৃদ্ধিতে পিতামাতারা এক মূখ্য ভূমিকা নেন। যেমন বিবরণ জানায় তাঁর প্রশিক্ষণের জন্য তারা নিয়মিত আত্মিক পরিস্থিতি প্রদান করেন। তাঁর ১২ বছর বয়সে, যখন তাঁর পরিবার যিরূশালেমে নিস্তারপর্বের উৎসব পালন করছিল, তখন যীশু মন্দিরে যান এবং সেখানকার ধর্মীয় শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রতীয়মাণ হয় যে তাঁর পিতামাতা এই ১২ বছরের ছেলেকে গতিবিধির ক্ষেত্রে এতটা স্বাধীনতা দেন। যীশুকে ফেলে আসা হয়েছে তা উপলব্ধি না করে তারা যিরূশালেম থেকে প্রস্থান করেন হয়ত মনে করে যে তিনি অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের সাথে আসছেন। তিনদিন পর তারা তাঁকে মন্দিরে খুঁজে পান, যীশু তাঁর থেকে বড়দের সেখানে শিক্ষা দিতে চেষ্টা করছিলেন না কিন্তু “তাঁহাদের কথা শুনিতেছিলেন ও তাঁহাদিগকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন।” তারা যে মানসিক উত্তেজনা ভোগ করেছিলেন তাঁর মা সেটি প্রকাশ করেন কিন্তু যীশু তাদের কোন রকম অসম্মান না করে, পরিবর্তে তাদের জানান যে, তিনি ভেবেছিলেন যে ফেরার সময় তাকে কোথায় পেতে পারে তারা নিশ্চয়ই তা জানেন। যদিও বা তিনি গতিবিধি সম্পর্কে কিছু পরিমাণে স্বাধীনতা পেয়েছিলেন, বিবরণ জানায় যে যীশু এরপর থেকে “তাঁহাদের বশীভূত” থাকিলেন, তাদের নির্দেশ ও বাধ্যবাধকতার সাথে মানিয়ে নিলেন যখন তিনি কৈশোরাবস্থায় পৌঁছালেন এবং তিনি “জ্ঞানে ও বয়সে এবং ঈশ্বরের ও মনুষ্যের নিকটে অনুগ্রহে বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন।”—লূক ২:৪১-৫২.

১৬ অনুরূপে, পিতামাতারা তাদের কৈশোরাবস্থার ছেলেমেয়েদের কিছুটা স্বাধীনতা দিতে পারেন, ধীরে ধীরে তা বাড়াতে পারেন যেমন তারা বড় হতে থাকে, তাদের পিতামাতার নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে আরও বেশি করে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে সুযোগ দিতে পারেন। সমস্যা দেখা দিলে কারণটি বুঝতে পারলে ছোট বিষয়গুলিকে বড় করে দেখা থেকে পিতামাতাকে বিরত করবে। অনেক সময় এই কিশোর-কিশোরীরা ইচ্ছা করে পিতামাতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে না, পরিবর্তে কী করে করতে হয় তা না জেনেই কিছুটা পরিমাণ স্বাধীনতা সে স্থাপন করতে চায়। তাই হয়ত ভুল বিষয়ের উপর প্রশ্ন তুলে, পিতামাতারা ভুল করতে পারেন। বিষয়টি অত গুরুত্বপূর্ণ না হলে ছেড়ে দিন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলে, দৃঢ় থাকুন। ‘মশাও ছাঁকবেন’ না আবার ‘উঁটও গিলবেন’ না।—মথি ২৩:২৪.

১৭ পিতামাতারা যে বাধ্যবাধকতা স্থাপন করেন তাতে উত্তম ভারসাম্য বজায় রাখলে তারা বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে ও মেয়েদের সাথে উত্তম সম্পর্ক রাখতে পারেন। স্মরণে রাখুন, “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি,” আরও সেটি “বিবেচক” এবং ‘দয়ায় পরিপূর্ণ,’ “নিষ্কপট।” (যাকোব ৩:১৭, NW) চুরি, অনৈতিকতা, প্রতিমাপূজা ও অনুরূপ গুরুতর পাপগুলিসহ কিছু কিছু জিনিস বাইবেল দেখায় কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) আরও অন্য বিষয়গুলিতে, ঠিক বা ভুল নির্ভর করে বিষয়টিকে কতদূর বা কী মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খাবার ভাল, কিন্তু আমরা যদি খুব বেশি খাই তাহলে আমরা পেটুকে পরিণত হব। অনুরূপে, কিছু প্রকারের আমোদ-প্রমোদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই বিষয় প্রযোজ্য, যেমন নৃত্য, ক্রীড়া, পার্টি বা সেইরূপ অন্যান্য কার্যগুলি। অনেক সময় বিষয়টি হল কী করা হয়েছে সেই বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে না কিন্তু কিভাবে করা হয়েছে ও কাদের সাথে করা হয়েছে সেই বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেমন অতিভোজন আমরা নিন্দা করি কিন্তু খাওয়াকে নিন্দা করি না, সেইরূপ যুবকদের কিছু কাজগুলি প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত বা অতিমাত্রায় আপত্তিজনক না হলে অথবা অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি অলক্ষ্যে প্রবেশ না করা অবধি পিতামাতাদের সে সম্পর্কে সর্বদা নিন্দা করা উচিৎ নয়।—তুলনা করুন কলসীয় ২:২৩.

১৮ প্রত্যেক যুব ব্যক্তিরাই বন্ধুবান্ধব পছন্দ করে। তাদের মধ্যে অল্পই “আদর্শ” বলে ধরা যেতে পারে, কিন্তু আপনার নিজের ছেলেমেয়ের কি দুর্বল দিকগুলি নেই? আপনি হয়ত কিছু বন্ধুদের সাথে তাদের মেলামেশা করতে দিতে চান না কারণ তারা ক্ষতিকর বলে মনে হয়। (হিতোপদেশ ১৩:২০; ২ থিষলনীকীয় ৩:১৩, ১৪; ২ তীমথিয় ২:২০, ২১) অন্যদের ক্ষেত্রে আপনি হয়ত তাদের কোন বিষয়গুলি পছন্দ করেন আবার কোন বিষয়গুলি করেন না। কোন কিছুর অভাবের জন্য সেই বন্ধুকে সম্পূর্ণ বাতিল করে না দিয়ে আপনার ছেলেমেয়ের কাছে তাদের ভাল গুণগুলি সম্পর্কে প্রশংসা করার সময় তাদের দুর্বল দিক সম্পর্কে সাবধান করে দিতে পারেন ও বন্ধুর স্থায়ী উপকারের জন্য সেই সকল ক্ষেত্রে আপনার ছেলে বা মেয়েকে উত্তম প্রভাব হিসাবে থাকতে উৎসাহিত করুন।

১৯ আপনার কিশোর ছেলে বা মেয়েকে একটি উপায়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত স্বাধীনতার প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আনতে সাহায্য করতে পারেন, তা হল ছেলে বা মেয়েকে বুঝতে সাহায্য করা যে বেশি স্বাধীনতার সাথে বেশি দায়িত্বও আসে। “লোকে যাহার কাছে অধিক রাখিয়াছে, তাহার নিকটে অধিক চাহিবে।” (লূক ১২:৪৮) ছেলেমেয়েরা নিজেদের যত বেশি দায়িত্বশীল প্রদর্শন করবে পিতামাতারা তত বেশি তাদের উপর আস্থা রাখতে পারবেন।—গালাতীয় ৫:১৩; ১ পিতর ২:১৬.

পরামর্শ ও সংশোধন বুঝিয়ে দেওয়া

২০ যদি কেউ আপনাকে পরামর্শ দেয় কিন্তু আপনার পরিস্থিতি সে না বুঝতে পারে তাহলে আপনি তার পরামর্শকে অবাস্তব বলে মনে করবেন। তার আদেশগুলি জোর করে আপনাকে দিয়ে পালন করাতে যদি তার শক্তি থাকে তাহলে আপনি সেটিকে অন্যায় মনে করবেন। পিতামাতাদের স্মরণে রাখা উচিৎ “বুদ্ধিমানের মন জ্ঞান অন্বেষণ করে,” এবং “বিদ্বান পরাক্রমে বৃদ্ধি পায়।” (হিতোপদেশ ১৫:১৪; ২৪:৫) আপনার সন্তানের উপর আপনার অধিকার আছে, কিন্তু যদি জ্ঞানের সাথে বুদ্ধি প্রয়োগ করা হয় তাহলে তাদের সাথে ভাব-বিনিময় করতে আপনি বেশি কার্যকারী হবেন। যুবক বয়সের ছেলেমেয়েদের সংশোধন করার সময় উপলব্ধি প্রদর্শন না করলে “বংশের ব্যবধানের” সৃষ্টি হয় এবং ভাব-বিনিময়ে ভাঙ্গন ধরে।

২১ যদি আপনার সন্তান কোন সমস্যায় পড়ে, গুরুতর ভুল বা কোন পাপ করে ফেলে যার জন্য আপনি আশ্চর্য হয়ে যান, তখন আপনি কী করবেন? আপনি কখনই সেই ভুলকে ক্ষমা করবেন না? (যিশাইয় ৫:২০; মালাখি ২:১৭) কিন্তু উপলব্ধি করুন যে এখনই আপনার ছেলে বা মেয়ের বুদ্ধিপূর্বক সাহায্যের এবং নির্দেশের প্রয়োজন। যিহোবা ঈশ্বরের মত আপনিও বলতে পারেন, ‘এস আমরা বিষয়টি তলিয়ে দেখি; বিষয়টি গুরুতর, কিন্তু সংশোধন করা যাবে না, তা নয়।’ (যিশাইয় ১:১৮) হঠাৎ রেগে গিয়ে চেঁচান বা কঠোরভাবে দোষ দেওয়া ভাব-বিনিময়কে বন্ধ করে দিতে পারে। বহু যুবক-যুবতীরা যারা ভুল করেছিল তাদের সকলেই বলে: ‘আমি বাবামায়ের সাথে কথা বলতে পারিনি—তারা আমার উপর প্রচণ্ড রেগে যেতেন।’ ইফিষীয় ৪:২৬ বলে: “ক্রুদ্ধ হইলেও, ক্রোধ তোমাকে পাপে পরিচালিত না করুক।” (নিউ ইংলিশ বাইবেল) আপনার ছেলে বা মেয়ে যা বলছে তা শোনার সময় আপনার আবেগ দমন করে রাখুন। আপনি ন্যায্যরূপে শুনলে যে শাস্তি তাদের দেবেন তা তারা সহজে গ্রহণ করবে।

২২ হয়ত এটি একটি ঘটনা মাত্র নয়, একটি সমস্যার কাল, কোন এক ধরনের অবাঞ্ছিত গুণাবলি প্রদর্শন। যদিও শাসন করা আবশ্যক, তবুও পিতামাতারা কথাবার্তা বা মনের ভাবে যেন কখনও প্রকাশ না করেন যে এই সন্তানের উপর তারা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। আপনার আত্মসংযম আপনার ভালবাসার গভীরতাকে প্রকাশ করবে। (১ করিন্থীয় ১৩:৪) মন্দের সাথে মন্দ দ্বারা সংগ্রাম করবেন না কিন্তু উত্তমের দ্বারা পরাজিত করুন। (রোমীয় ১২:২১) যদি যুব ছেলেমেয়েকে সকলের সামনে “কুঁড়ে,” “বিদ্রোহী,” “কোন কাজের নয়,” “তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না” বলে তাকে নিচু করা হয় তাহলে শুধু ক্ষতি করাই হবে। ভালবাসা আশা ছেড়ে দেয় না। (১ করিন্থীয় ১৩:৭) কোন কিশোর এতদূর পর্যন্ত যেতে পারে যে সে অপরাধীতে পরিণত হতে বা ঘর ছেড়ে চলেও যেতে পারে। কোনভাবেই অনুমোদন না করেও পিতামাতারা তার ফিরে আসার পথ খুলে রাখতে পারেন। কিভাবে? এই দেখিয়ে যে তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করেন না কিন্তু তার পথটিকে করেন। পিতামাতারা তাকে বলতে পারেন যে তাদের বিশ্বাস, তার মধ্যে ভাল গুণ আছে এবং তারা আশা করেন যে সেগুলি মন্দকে জয় করবে। আর যদি তাই হয় তাহলে সে যীশুর দৃষ্টান্তের অপব্যয়ী পুত্রের মত, ঘরে ফিরে আসতে পারে এই আশা করে যে তার এই অনুতাপপূর্ণ প্রত্যাবর্তন রূঢ় বা শীতলরূপে গ্রহণ করা হবে না।—লূক ১৫:১১-৩২.

ব্যক্তিগত-মূল্যবোধ

২৩ প্রত্যেক মানুষ কিছু স্বীকৃতি চায়, তাকে গ্রহণ করা হোক, অনুমোদন করা হোক, তাদের সত্তা যেন তারা বোধ করে। প্রয়োজনীয় সেই স্বীকৃতি ও অনুমোদন পেতে হলে সেই ব্যক্তি অবশ্যই, অতিমাত্রায় স্বাধীন হতে পারবে না। যে দলের সাথে তার সত্তা জড়িত সেই দলের অনুমোদনযোগ্য আচরণের মধ্যে তাকে আবদ্ধ থাকতে হবে। কিশোরাবস্থার ছেলেমেয়েরা, তারা যে সেই পরিবারেরই এক সত্তা বোধ করার এক প্রয়োজন অনুভব করে। তাদের বুঝতে দিন যে তারা পারিবারিক বৃত্তের মূল্যবান সদস্য। পরিবারের কল্যাণের জন্য কাজ করে এবং এমনকি কিছু পারিবারিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিতেও অংশ নেয়।

২৪ আসুন আমরা যেন “অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে প্তালাতন না করি, পরস্পর হিংসা-হিংসি না করি,” প্রেরিত বলেন। (গালাতীয় ৫:২৬) ছেলে বা মেয়ে কোন উত্তম কাজ করলে বাবামায়েরা তার প্রশংসা করলে সেই প্রকৃতির আত্মা জেগে ওঠে না; কিন্তু যাকে সবসময় বেশি ভাল বলে তুলে ধরা হয় তার সাথে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়ের অযথা তুলনা করলে হিংসা বা বিরক্তিভাবের সৃষ্টি হতে পারে। প্রেরিত বলেছিলেন যে প্রত্যেকে “নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।” (গালাতীয় ৬:৪) কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েরা চায় যে সে নিজে যে রকমের এবং তার নিজের ব্যক্তিত্বের গুণে ও সে যা করতে সক্ষম, সেইজন্য তাকে এইভাবেই গ্রহণ করা হোক এবং এরজন্যই যেন তার পিতামাতা তাকে ভালবাসুক।

২৫ পিতামাতারা ছেলে বা মেয়েদের প্রত্যেক ক্ষেত্রে জীবনের দায়িত্বভার বহন করতে শিক্ষা দিয়ে তাদের মূল্যবোধ গড়ে তুলতে পারেন। শিশুকাল থেকেই তারা ছেলেমেয়েদের সততা, সত্যতা ও অপরের সাথে সঠিক ব্যবহার করতে শিক্ষা দিচ্ছেন; মানব সমাজে কিভাবে এই গুণগুলি কাজে লাগে তা প্রদর্শন করে তারা প্রারম্ভের ভিত্তিতে তা গেঁথে দেন। এর মধ্যে জড়িত আছে কোন্‌ কাজে কিভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে ও তার সাথে নির্ভরশীল হতে হবে। যীশু যখন কিশোর হিসাবে ‘জ্ঞানে বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন’ তখন স্পষ্টতই তিনি পালক পিতা যোষেফের বৃত্তি রপ্ত করেন কারণ তাঁর যখন ৩০ বছর বয়স তখনও লোকে তাঁকে “সূত্রধর” বলে ডাকত। (মার্ক ৬:৩) কিশোরাবস্থায় বিশেষভাবে ছেলেদের শেখা উচিৎ, কাজ বলতে কী বুঝায় এবং নিয়োগকর্তা বা এক খরিদ্দারকে সন্তুষ্ট করার অর্থ কী, যদিও কাজ হয়ত খুবই সাধারণ প্রকৃতির হতে পারে যেমন টুকিটাকি কাজ করা। তাদের প্রদর্শন করা যেতে পারে যে পরিশ্রমী, গম্ভীর ও নির্ভরশীল কর্মী হয়ে তারা আত্ম-সম্মান অর্জন করে এবং অপরের কাছ থেকে সম্মান ও প্রশংসা পায়; তারা শুধুমাত্র পিতামাতা ও পরিবারের জন্য সুনাম আনে তাই নয় কিন্তু তারা “আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের শিক্ষা সর্ব্ববিষয়ে ভূষিত করে।”—তীত ২:৬-১০.

২৬ মেয়েরাও ঘর গুছাতে ও ঘর সাজাতে শিখতে পারে যার ফলে তারা পরিবারের মধ্যে থেকে ও বাইরে থেকেও উপলব্ধি ও প্রশংসা পেতে পারে। বাইবেলের কালে কন্যার বিবাহ দেওয়ার সময় পরিবারের কাছে কন্যার সম্ভাব্য মূল্যটি কন্যাপণ বা বধূপণ নেওয়ার দ্বারা প্রদর্শিত হত। নিঃসন্দেহে সেটি পরিবারের প্রতি তার পরিচর্যার ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেখা হত।—আদিপুস্তক ৩৪:১১, ১২; যাত্রাপুস্তক ২২:১৬.

২৭ যুবক-যুবতীদের বর্তমান বিধিব্যবস্থায় জীবনের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে সক্ষম হতে শিক্ষার সুযোগগুলির সদ্ব্যবহার করা উচিৎ। সেইরূপ যুব ব্যক্তিরা প্রেরিতের উৎসাহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যাতে “আমাদের লোকেরাও প্রয়োজনীয় উপকারার্থে সৎকার্য্যে [সততার কাজ, নিউ ইংলিশ বাইবেল] ব্যাপৃত হইতে অভ্যাস করুক, যেন ফলহীন হইয়া না পড়ে।”—তীত ৩:১৪.

বাইবেলের নৈতিক মান থেকে সুরক্ষা

২৮ পিতামাতারা স্বভাবতই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন যখন পরিস্থিতি হয়ত এমন, যে পরিবেশে তারা বাস করেন অথবা যে স্কুলে তাদের সন্তানেরা যায় সেখানে হয়ত এমন ছেলেমেয়েদের সাথে তাদের মেলামেশা করতে হয় যারা খুবই দুষ্ট ও নিজেদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে,” বাইবেলের এই মন্তব্য সম্পর্কে পিতামাতারা হয়ত উপলব্ধি করেন। ফলে তারা অনুরোধরত সন্তানের তর্কের কথাগুলি শুনবেন না: ‘প্রত্যেকেই করে; আমি কেন করব না?’ হয়ত প্রত্যেকেই করে না, তবুও যদি হয়, সেটি ভুল বা অন্যায় হলে আপনার সন্তানের পক্ষে তা করার কোন যুক্তি নেই। “তুমি দুর্বৃত্ত লোকদের [অথবা সন্তানদের] উপরে ঈর্ষা করিও না, তাহাদের সঙ্গে থাকিতেও বাসনা করিও না। কেননা তাহাদের চিত্ত অপহারের কল্পনা করে, তাহাদের ওষ্ঠাধর অনিষ্টের কথা কহে। প্রজ্ঞা দ্বারা গৃহ নির্ম্মিত হয়, আর বুদ্ধি দ্বারা তাহা স্থিরীকৃত হয়।”—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; হিতোপদেশ ২৪:১-৩.

২৯ আপনি স্কুলেতে বা সারা জীবন ছেলেমেয়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে পারবেন না। কিন্তু, পরিবারকে প্রজ্ঞার মাধ্যমে গড়ে তুললে নির্দেশের জন্য আপনি তাদের উত্তম নৈতিক মান ও সঠিক নীতি দিয়ে পাঠাতে পারেন। “জ্ঞানবানদের বাক্য সরল অঙ্কুশস্বরূপ।” (উপদেশক ১২:১১) প্রাচীনকালে এই অঙ্কুশগুলি ছিল ছুঁচলো মুখওয়ালা লম্বা লাঠিবিশেষ। জন্তু জানোয়ারকে খোঁচা মেরে মেরে ঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেটি ব্যবহার করা হত। ঈশ্বরের প্রজ্ঞার বাক্যগুলি আমাদের সঠিক পথে চালিত করবে আর যদি আমরা একটু দূরে সরে যাই তাহলে আমাদের পথ পরিবর্তন করার জন্য আমাদের বিবেককে সেটি দংশাবে। আপনার সন্তানের চিরকালীন মঙ্গলের জন্য সেইরূপ প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের পাঠান। বাক্য ও উদাহরণ উভয় দ্বারাই তাদের বুঝিয়ে দিন। প্রকৃত মূল্যগুলি তাদের মনে গেঁথে দিন তাহলে তারা যাদের ব্যক্তিগত বন্ধু বলে পছন্দ করবে, তাদের মধ্যেও সেগুলি আছে কি না তা খুঁজবে।—গীতসংহিতা ১১৯:৯, ৬৩.

৩০ সর্বোপরি, স্মরণে রাখবেন যে, নৈতিক মূল্যগুলি তখনই তাদের মনে গেঁথে যাবে যখন গৃহের পরিবেশের মধ্যে সেই নীতিগুলিকে সম্মান দেওয়া ও অনুসরণ করা হয়। আপনার সন্তানের কাছ থেকে যে মনোভাব আশা করেন আপনারও মনোভাব সেইরূপ থাকা দরকার। আপনার গৃহে, পরিবার বৃত্তে, আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার ছেলেমেয়েরা যেন বড়দের উপলব্ধি বোধ, ভালবাসা, ক্ষমা এবং কিছুটা পরিমাণে স্বাধীনতা ন্যায় এবং ন্যায্যতার সাথে পায়, স্বীকৃতি বোধ ও তাদের যে প্রয়োজন আছে তা যেন তারা বোধ করে। পরিবার বৃত্তের বাইরেও ঈশ্বর-দত্ত নৈতিক মান নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের এইরূপে শিক্ষা দিন। আপনি এর থেকে উত্তম উত্তরাধিকার আর কী দিতে পারেন।—হিতোপদেশ ২০:৭.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. ভাব-বিনিময় কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

৩. সন্তানের জীবনের কোন্‌ সময়ে পিতামাতারা ভাব-বিনিময়ের সমস্যা আশা করতে পারেন?

৪. কথাবার্তার মাধ্যমেই কি পরিবারের সমস্ত ভাব-বিনিময় হওয়া দরকার? ব্যাখ্যা করুন।

৫-৭. (ক) সন্তানকে কথা বলতে দিতে বন্ধ করার ক্ষেত্রে কেন পিতামাতাদের সাবধান হওয়া ভাল? (খ) পিতামাতারা ভদ্রতা ও মার্জিত ব্যবহার সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের কিভাবে শেখাতে পারেন?

৮. নির্দেশের জন্য তাদের কাছে আসার জন্য পিতামাতারা কিভাবে সন্তানদের উৎসাহ দিতে পারেন?

৯. ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে তুলনা করলে কিশোর-কিশোরীদের সমস্যা ও চাহিদা সম্পর্কে কী বলা যেতে পারে?

১০. (ক) কিশোর-কিশোরীদের কাছে যৌন বিষয় সম্পর্কে সরল ব্যাখ্যা কেন যথেষ্ট নয়? (খ) পিতামাতা ছেলেমেয়ের সাথে কিভাবে যৌন বিষয় সম্পর্কে আলোচনায় জড়িত হতে পারেন?

১১. কোন্‌ কোন্‌ ক্ষেত্রে বড়দের থেকে কিশোর-কিশোরীরা আলাদা হয়?

১২. কিশোর-কিশোরীরা পিতামাতার কাছ থেকে কিরূপ ব্যবহার আশা করে?

১৩. পিতামাতার বাধ্যবাধকতার প্রতি কিশোর বয়স্ক ছেলেমেয়েরা কিরূপে প্রতিক্রিয়া করে এবং কেন?

১৪. সন্তানের আরও বেশি স্বাধীনতা পাওয়ার ইচ্ছার সাথে পিতামাতারা কিভাবে সফলতার সাথে আচরণ করতে পারেন?

১৫. যীশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াকালীন যে পিতামাতার পরিচালনার অধীনে ছিলেন তা কী প্রদর্শন করে?

১৬. কৈশোরাবস্থার ছেলেমেয়ের জন্য পিতামাতারা সমস্যার সম্মুখীন হলে তাদের কী মনে রাখা উচিৎ?

১৭. কিশোর ছেলেমেয়েদের উপর বাধ্যবাধকতা স্থাপন করার সময় পিতামাতাদের কী বিবেচনা করা দরকার?

১৮. পিতামাতারা কিভাবে সন্তানদের সঙ্গীসাথীদের সম্বন্ধে সাবধান করে দিতে পারেন?

১৯. লূক ১২:৪৮ পদে নির্দেশিত নীতি অনুসারে, সন্তানদের প্রকৃত স্বাধীনতা সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে কিভাবে সাহায্য করা যেতে পারে?

২০. ভাব-বিনিময়ে ভাঙ্গন ধরাকে প্রতিরোধ করতে সন্তানের প্রতি শক্তি বা অধিকার ব্যতীত আর কিসের প্রয়োগ প্রয়োজন হয়?

২১. যে সন্তান গুরুতর অন্যায়ের মধ্যে জড়িত হয়ে পড়েছে তার সাথে পিতামাতাদের কিভাবে আচরণ করা দরকার?

২২. পিতামাতারা কেন সন্তানের উপর আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে কখনও ইঙ্গিত করবেন না?

২৩. কিশোর-কিশোরীরা পরিবারের যে মূল্যবান সদস্য তা বোধ করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

২৪. একটি সন্তান যাতে অন্য সন্তানের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ না হয় তাই পিতামাতাদের কী করা এড়িয়ে চলতে হবে?

২৫. সন্তানদের মধ্যে মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে পিতামাতারা কী করতে পারেন?

২৬. কোন্‌ প্রাচীন প্রথা প্রদর্শন করে যে কন্যা হল পরিবারের এক মূল্যবান সদস্যা?

২৭. শিক্ষার সুযোগকে কেন সদ্ব্যবহার করা দরকার?

২৮, ২৯. (ক) সঙ্গীসাথী সম্বন্ধে বাইবেল কী উপদেশ দেয়? (খ) সেই উপদেশ পালন করতে পিতামাতারা সন্তানদের কিভাবে সাহায্য করতে পারেন?

৩০. পিতামাতারা সন্তানদের কিভাবে ঈশ্বর-দত্ত নৈতিক মান প্রদান করতে পারেন?