সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যে স্ত্রী অত্যন্ত ভালবাসা পান

যে স্ত্রী অত্যন্ত ভালবাসা পান

অধ্যায় ৫

যে স্ত্রী অত্যন্ত ভালবাসা পান

এক মহিলা অপর এক মহিলাকে অভিযোগ করেন, ‘আমি জানি যে আমার স্বামী আমাকে ভালবাসে, কিন্তু সে তা কখনই আমাকে ব্যক্ত করে না। আমি যদি জোর করি তাহলে কখনও কখনও তা বলে, কিন্তু যদি সে তা নিজে থেকেই বলতো তাহলে কতই না ভাল হত।’

অপর মহিলাটি উত্তরে বলেন, ‘আমি জানি। পুরুষেরা এই প্রকৃতিরই হয়। একবার আমি স্বামীকে জিজ্ঞাসা করি যে সে আমাকে ভালবাসে কি না, আর সে বলে, “আমি তোমাকে বিবাহ করেছি, তাই না? আমি তোমাকে দেখাশোনা করি, তোমার সাথে বাস করি; আমি যদি তোমাকে ভাল না বাসতাম, তাহলে আমি তা করতাম না।”’

কিছুক্ষণ থেমে, তিনি আবার বলেন: ‘যাইহোক, সেই দিন সন্ধ্যাবেলা মর্মস্পর্শী এক ঘটনা ঘটে। সেইদিন দিনেরবেলা আমি স্বামীর পড়ার টেবিল পরিষ্কার করতে করতে তার এক ড্রয়ার থেকে একটি ছবি পেলাম। যেটি আমি তাকে আমার পরিবারের এক পুরনো এলবাম থেকে দেখিয়েছিলাম। সেটি ছিল সাত বছর বয়সের বেদিং স্যুট পরা আমার এক ছবি। ছবিটি সে এলবাম থেকে বার করে এনে তার টেবিলের ড্রয়ারে রেখেছিল।’

মহিলাটি তা বলার সময় মিষ্টি হাসল আর তারপর তার বন্ধুর দিকে তাকাল। ‘সেই সন্ধ্যাবেলা সে কাজ থেকে ঘরে ফিরলে, আমি তাকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করি। ছবিটি হাতে নিয়ে হেসে, সে বলে, ‘আমি এই ছোট্ট মেয়েটিকে খুব ভালবাসি।” তারপর সে ছবিটি রেখে তার দুহাতে আমার মুখটি তোলে ও বলে, “আর সেই মেয়েটি এখন যা হয়েছে, তাকেও ভালবাসি।” সে অতি কোমলভাবে আমাকে চুম্বন করে। আর আমার চোখে জল আসে।’

যে স্ত্রী জানে যে স্বামীর কাছে সে অত্যন্ত প্রিয়, সে মনে মনে আনন্দিত ও সুরক্ষিত বোধ করে। ঈশ্বরের বাক্য স্বামীদের পরামর্শ দেয় তাদের যেন স্ত্রীদের প্রতি সেইরূপ প্রেম থাকে। “স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে . . . দুই জন একাঙ্গ হইবে।” (ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯, ৩১) আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি যে, স্বামীকে স্ত্রীর গভীর শ্রদ্ধা করা উচিৎ, কিন্তু স্বামীকেও এমন ব্যবহার করতে হবে যাতে তিনি তা অর্জন করতে পারেন। যেখানে আপনার স্বামীকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনাকে সে যেন ভালবাসে ও অত্যন্ত প্রিয় মনে করে, সেখানে এই বিষয়টিও সত্য হয়: এমনভাবে ব্যবহার করুন যাতে স্বামী তার হৃদয় থেকে সেইরূপ ব্যবহার করতে প্ররোচিত হয়।

আপনি কি সহায়তা করেন?

স্ত্রীকে গভীর ভালবাসা পেতে হলে, স্বামীর মস্তকের ব্যবহারের প্রতি অধীনতা স্বীকার করা ছাড়া আরও কিছু করার প্রয়োজন আছে। স্বামীর হয়ত উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত কোন ঘোড়া বা কুকুর থাকতে পারে এবং যারা তার বশীভূতও। এদন উদ্যানে আদমের সাথে জীব-জন্তুরা ছিল আর তারা তার বশীভূতও ছিল। কিন্তু তবুও তার অনুরূপ কেউই ছিল না। তার এক বুদ্ধিমান মানব সহকারীর প্রয়োজন ছিল যে তার জন্য সহযোগী ও তার কাজের সাহায্যকারী হতে পারত: “মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়,” যিহোবা ঈশ্বর বলেন। “আমি তাহার জন্য সহযোগীরূপে তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্ম্মাণ করি।”—আদিপুস্তক ২:১৮, NW.

স্বামী চান এমন স্ত্রী, যে শুধুমাত্র তাকে ভালবাসে বা সম্মান করে তা নয় কিন্তু সে যেন প্রকৃত সহকারিণীও হয়, যে তার নির্ণয় করা সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবে। দুজনে আলোচনা করার পর পরস্পর রাজি হয়ে সিদ্ধান্ত নিলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু যদি আপনার সাথে তা পরামর্শ না করা হয় বা আপনার যদি অমত থাকে, তাহলে সেটি অতটা সহজ হয় না। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে আপনি কি নিষ্ঠার সাথে আপনার স্বামীকে সমর্থন করতে পারেন—যদি তা অবৈধ বা অশাস্ত্রীয় কাজ না হয়, তাহলে তার নির্ণয়টি যাতে কার্যকারী হয় তার জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করেন? অথবা আপনি একগুঁয়ে ব্যবহার করেন ও চান যাতে তিনি তাতে ব্যর্থ হন ও আপনি তখন যাতে বলতে পারেন, ‘আমি তোমাকে বলে ছিলাম না’? যদি তিনি দেখেন যে আপনার অমত থাকা সত্ত্বেও কাজটি সফল হওয়ার জন্য আপনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাহলে কি আপনি মনে করেন না যে আপনার নিষ্ঠার সাথে এই সমর্থন তাকে আপনাকে আরও ভালবাসতে প্ররোচিত করবে?

তাছাড়া, তার মস্তকের ব্যবহারের দায়িত্বকে আপনি নিজের হাতে নেবেন না! আপনি যদি সফল হন তাহলে আপনি তাকে পছন্দ করবেন না; এবং তিনি নিজেকে বা আপনাকেও পছন্দ করবেন না। হয়ত তার যেভাবে নেতৃত্ব নেওয়ার দরকার, তিনি সেভাবে নেন না। নেতৃত্ব নিতে, আপনি কি তাকে উৎসাহ দেন? নেতৃত্ব নিতে তিনি কোন প্রচেষ্টা করলে, আপনি কি আপনার উপলব্ধি প্রকাশ করেন, অথবা আপনি বলেন তিনি ভুল করছেন বা তার পরিকল্পনাটি কাজে লাগবে না? যদি স্বামী নেতৃত্ব না নেন সেইজন্য অনেক সময় অবশ্যই স্ত্রীকে দোষী হতে হয়—যেমন, যদি স্ত্রী স্বামীর অভিপ্রায়গুলিকে ছোট করে দেখে বা তার প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করে অথবা কোন কাজ বিফল হলে বলে আমি-তোমাকে-বলেছিলাম-এ-কখনই-হবে-না। এটি অবশেষে এক দৃঢ়তাহীন ও দ্বিধাগ্রস্ত স্বামীতে পরিণত করে। অপরপক্ষে, আপনার নিষ্ঠা ও সমর্থন, তার প্রতি আপনার বিশ্বাস ও আস্থা, স্বামীকে শক্তিশালী করবে ও তাকে সফল হতে সাহায্য করবে।

“গুণবতী স্ত্রী”

অত্যন্ত ভালবাসার যোগ্য এমন স্ত্রী হতে হলে, আপনাকে ঘরের দায়িত্বগুলিও ভাল করে পালন করতে হবে। সেইরূপ নারী সম্পর্কে বাইবেল বলে: “মুক্তা হইতেও তাঁহার মূল্য অনেক অধিক।” (হিতোপদেশ ৩১:১০) আপনি কি সেইরূপ এক স্ত্রী? আপনি কি সেইরূপ হতে চান?

১০ “গুণবতী স্ত্রী”র কার্য সম্বন্ধে আলোচনা করার সময়, হিতোপদেশের পুস্তক বলে: “তিনি রাত্রি থাকিতে উঠেন, আর নিজ পরিজনদিগকে খাদ্য দেন।” (হিতোপদেশ ৩১:১৫) বহু যুবতীরা তাদের সংসার আরম্ভ করে অসুবিধার সাথে, কারণ কিভাবে রান্না করতে হবে মায়েরা তাদের শেখায়নি; কিন্তু তারা শিখতে পারে। কিভাবে ভাল করে রান্না করতে হয় তা এক বিজ্ঞ নারী শিখে নেয়! রান্না করা হল এক কলাবিদ্যা। যদি খাবার ভাল করে রান্না করা হয় তা শুধুমাত্র পেটই ভরায় তা নয় হৃদয় থেকেও তার প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক হয়।

১১ রান্না করা সম্বন্ধে অনেক কিছু শেখা যেতে পারে। পুত্ত্রষ্ট সম্বন্ধে মূল বিষয়গুলি আপনার জেনে রাখা ভাল ফলে আপনি আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারেন। আপনার স্বামীর সামনে শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাদ্য রাখলেই যে আপনি তার প্রশংসা পাবেন তা নয়। বাইবেল আমাদের বলে, ইস্‌হাকের স্ত্রী রিবিকা জানতেন কিভাবে “সুস্বাদু খাদ্য” তৈরি করতে হয়, এমনভাবে তৈরি করতেন যেটি তার স্বামী খেতে ভালবাসতেন। (আদিপুস্তক ২৭:১৪) বহু স্ত্রী, তার উদাহরণ থেকে উপকার পেতে পারেন।

১২ জগতের কিছু অংশের মহিলারা দিনের প্রয়োজনীয় বস্তুসকল আনতে প্রতিদিন সকালে বাজারে যান। অন্যান্য জায়গায় হয়ত তারা সপ্তাহে একবার বাজারে যান ও যেগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেগুলি ফ্রিজে রেখে দেন। যে কোন পরিস্থিতি হোক না কেন, যে স্ত্রী পরিবারের অর্থ উত্তমরূপে ব্যবহার করে এবং পরিবারের আয়ব্যয়কে বুঝে চলে, স্বামীকে তাকে উপলব্ধি করতেই হয়। যদি স্ত্রী, উত্তম প্রকৃতির খাদ্য ও বস্ত্র চিনতে শেখে ও তার মূল্য বোঝে তাহলে সে দেখলেই কিনতে চায় তা নয়। বরং, যেমন হিতোপদেশ ৩১:১৪ বলে: “তিনি বাণিজ্য-জাহাজসমূহের ন্যায়, তিনি দূর হইতে আপন খাদ্যসামগ্রী আনয়ন করেন।”

১৩ তার কাজ সম্বন্ধে সেই বিবেকপূর্ণ চিন্তা তার ঘরের অবস্থার প্রতিও প্রতিফলিত হবে। কিভাবে এক স্ত্রীকে গুণবতী বলা যায় সেই সম্বন্ধে আরও মন্তব্য করতে গিয়ে, হিতোপদেশ ৩১:২৭ বলে: “তিনি আপন পরিবারের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখেন, তিনি আলস্যের খাদ্য খান না।” রাত্রে দেরী করে শোয়ার অভ্যাস, প্রতিবাসীর সাথে অলস গল্প করে সময় নষ্ট করা—এইগুলি সেই স্ত্রীয়ের জন্য নয়। যদিও বা অনেক সময় অসুস্থতা বা হঠাৎ কোন পরিস্থিতি এসে যাওয়াতে সে হয়ত ঘরের কাজেতে পিছিয়ে পড়তে পারে, কিন্তু তার ঘর সাধারণত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। বন্ধুরা বেড়াতে এলে তাদের ঘরের অবস্থার জন্য স্বামী যে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়বেন না সে সম্পর্কে স্বামী দৃঢ়নিশ্চিত থাকতে পারেন।

১৪ ব্যক্তিগত চেহারার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বহু মহিলাদের বলতেই হয় না, কিন্তু কয়েক জনকে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। যে স্ত্রীর চেহারা প্রদর্শন করে যে ব্যক্তিগত চেহারা সম্বন্ধে সে বেশি আগ্রহী নয় তার প্রতি প্রীতিপূর্ণ হওয়া সহজ হয়ে ওঠে না। বাইবেল সুপারিশ করে যে নারীরা “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক।” কিন্তু, কেশবিন্যাস করতে, অলংকার ও দামি কাপড় পরার প্রতি অতিরিক্ত জোর দেওয়ার বিরুদ্ধেও তা পরামর্শ দেয় যা তার প্রতি অহেতুক দৃষ্টি আকর্ষণ করায়।—১ তীমথিয় ২:৯.

১৫ সেইরূপ সাজসজ্জা থেকে আরও বেশি মূল্যবান হল তার স্বভাব। প্রেরিত পিতর খ্রীষ্টীয় স্ত্রীদের বলেন যে এক “মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা . . . ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।” (১ পিতর ৩:৩, ৪) আর হিতোপদেশ গুণবতী স্ত্রীর গুণগুলি পর পর উল্লেখ করার সময় আরও বলে যে, তিনি “দীনহীনের প্রতি হস্ত প্রসারণ করেন” এবং “তাঁহার জিহ্বাগ্রে দয়ার ব্যবস্থা থাকে।” তিনি স্বার্থপর বা “হিংসক” নন পরিবর্তে উদার ও দয়ালু। (হিতোপদেশ ৩১:২০, ২৬) “লাবণ্য মিথ্যা,” বর্ণনা বলে চলে, “সৌন্দর্য্য অসার, কিন্তু যে স্ত্রী সদাপ্রভুকে ভয় করেন, তিনিই প্রশংসনীয়া।”—হিতোপদেশ ৩১:৩০.

১৬ হ্যাঁ, যে স্ত্রী ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলে তাকে যে কোন স্বামীই অত্যন্ত ভালবাসবেন। তিনি তার স্ত্রী সম্পর্কে এইরূপ মনে করবেন যেমন হিতোপদেশের লেখক প্রকাশ করেন: “অনেক মেয়ে গুণবত্তা প্রদর্শন করিয়াছে, কিন্তু তাহাদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা তুমি শ্রেষ্ঠা।” (হিতোপদেশ ৩১:২৮, ২৯) তিনি অতিরিক্ত প্ররোচনা ছাড়াই স্ত্রী সম্পর্কে সেইরূপ বোধ করেন বলে তাকে ব্যক্ত করতে প্রবৃত্ত হবেন।

সহবাস সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিকোণ পার্থক্য আনতে পারে

১৭ অনেক বিবাহ সমস্যার মূল কারণ হল অতৃপ্তিকর সহবাস। কিছু ক্ষেত্রে, স্ত্রীর দৈহিক ও মানসিক চাহিদা সম্পর্কে স্বামীর বিবেচনার অভাব ও বোঝার অক্ষমতার জন্য হতে পারে এবং অপরক্ষেত্রে স্ত্রী এই অভিজ্ঞতায় স্বামীর সাথে দৈহিক ও মানসিকরূপে ভাগ করে নিতে ব্যর্থতার জন্যও হতে পারে। সহবাসে স্বামীস্ত্রীর উভয়েরই স্বেচ্ছায় ও আনন্দের সাথে অংশ গ্রহণ করা হবে পরস্পরের প্রতি প্রেমের এক ঘনিষ্ঠ অভিব্যক্তি।

১৮ স্বামীর সমবেদনার অভাবে স্ত্রীর মধ্যে নিরুৎসাহিতা দেখা যায় কিন্তু স্ত্রীর উদাসীনতা স্বামীকে আঘাত করে এবং তার অনিচ্ছা স্বামীর পুরুষত্বকে নষ্ট করে দিতে পারে অথবা এমনকি স্বামীকে অন্যের প্রতি আকর্ষিতও করতে পারে। আর অনিচ্ছাসহকারে যদি স্ত্রী সম্মতি দেয় তাহলে স্বামী হয়ত মনে করতে পারেন যে স্ত্রীয়ের তার প্রতি কোন আগ্রহই নেই। যৌন সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়াকে আবেগ পরিচালনা করে, আর যদি স্ত্রী সাড়া না দেয় তাহলে, সহবাস সম্পর্কে তার মনোভাবকে তাকে আবার ভেবে দেখতে হবে।

১৯ স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই বাইবেল পরামর্শ দেয়, তারা যেন “একে অপরকে বঞ্চিত না করে।” সঙ্গীকে শাস্তি দিতে বা ক্রোধ প্রকাশ করতে যৌন সম্ভোগকে ব্যবহার করা বাইবেল কখনই অনুমোদন করে না, যেমন স্ত্রী এর থেকে স্বামীকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং মাসের পর মাস বঞ্চিত করে রাখতে পারে না। যেমন স্বামীকে তার “স্ত্রীকে তাহার প্রাপ্য” দিতে হবে, ঠিক “তদ্রূপ স্ত্রীও স্বামীকে” দেবে। (১ করিন্থীয় ৭:৩-৫) এর অর্থ এই নয় যে স্ত্রীকে কিছু অস্বাভাবিক ক্রিয়াগুলির প্রতি বশীভূত হতে হবে যেটি সে নৈতিকরূপে বিরুদ্ধাচরণ বলে মনে করে এবং যে স্বামী তার স্ত্রীকে ভালবাসেন ও সম্মান করেন, তিনি কখনই তার স্ত্রীর কাছ থেকে তা আশা করবেন না। “প্রেম . . . অশিষ্টাচরণ করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) দম্পতির উচিৎ ও অনুচিৎ আচরণ সম্বন্ধে বিবাহ বন্ধনের বাইরে কাউকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হবে না। বাইবেল, ১ করিন্থীয় ৬:৯-১১ পদে, যিহোবা ঈশ্বরের উপাসকদের জন্য নিষিদ্ধ আচরণগুলি স্পষ্টরূপে পর পর উল্লেখ করে: ব্যভিচার, পারদারিকতা, সমকামিতা। (লেবীয় পুস্তক ১৮:১-২৩ পদও তুলনা করুন।) কিছু আধুনিক উদারপন্থীরা “নতুন নৈতিকতা” অনুসরণ করে চলে—আসলে যা হল অনৈতিকতা—তারা এই অবৈধ যৌনক্রিয়াগুলি গ্রহণ করার জন্য বিক্ষোভ করে, যেখানে অপরেরা যারা খুবই রক্ষণশীল তারা এই নিষেধগুলির মধ্যে আরও কিছু যোগ করে। কিন্তু বাইবেল ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। সাধারণভাবে বললে, বিবাহে অন্যান্য সম্পর্ক যদি ভাল থাকে, যদি ভালবাসা, সম্মান, উত্তম ভাব-বিনিময় ও বোঝাপড়া থাকে তাহলে সহবাস খুব কমই সমস্যার সৃষ্টি করবে।

২০ যে স্ত্রী অত্যন্ত ভালবাসার পাত্রী, সে তার ইচ্ছাসাধন করতে সহবাসকে ব্যবহার করে না। এটি নিশ্চয় যে, সকল স্ত্রীই সহবাসকে বিনিময় হিসাবে ব্যবহার করে না, কিন্তু কিছু স্ত্রীরা করে থাকে। চতুর উপায়ে তারা স্বামীদের কাছ থেকে সুবিধা পেতে যৌন ক্রিয়াকে ব্যবহার করে থাকে। তার ফলাফল কী হয়? আপনাকে যে ব্যক্তি পোশাক বিক্রি করে তার প্রতি আপনার স্নেহ প্রীতি জাগে না, তাই নয় কি? ঠিক সেইভাবেই নিজের উদ্দেশ্যসাধন করতে যদি কোন স্ত্রী স্বামীর কাছে যৌন ক্রিয়াকে বিক্রয় করে, তার প্রতি স্বামীর প্রীতিপূর্ণ কোমল মনোভাব থাকে না। যে নারী তা করে, সে হয়ত বস্তুর দিক দিয়ে লাভবান হতে পারে কিন্তু মানসিক ও আত্মিকভাবে সে অনেক কিছুই হারায়।

ক্রন্দনকারিণীরা, বিরক্তকারিণীরা

২১ শিম্‌শোন এক শক্তিশালী পুরুষ ছিলেন, কিন্তু যে সকল স্ত্রীয়েরা নিজেদের ইচ্ছাসাধন করতে কাঁদত ও বিরক্ত করত তাদের চাপ তিনি সহ্য করতে পারেননি। কোন এক উপলক্ষে তিনি তার ভাবী স্ত্রীর কান্নার সম্মুখীন হন। যেমন বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৪:১৬, ১৭ পদ বলে, সে “স্বামীর কাছে রোদন করিয়া কহিল, তুমি আমাকে কেবল ঘৃণা করিতেছ, ভালবাস না; আমার স্বজাতীয়দিগকে একটী প্রহেলিকা বলিলে, কিন্তু আমাকে তাহা বুঝাইয়া দিলে না। তিনি তাহাকে কহিলেন দেখ, আমার পিতামাতাকেও তাহা বুঝাইয়া দিই নাই, তবে তোমাকে কি বুঝাইব?” শিম্‌শোনের এই যুক্তি কোন কাজ করল না। বেশি আবেগপ্রবণ হলে যুক্তি খুব কমই কাজ করে। “তাঁহার স্ত্রী উৎসব-সপ্তাহের শেষ পর্য্যন্ত তাঁহার কাছে রোদন করিল; পরে তিনি সপ্তম দিবসে তাহাকে বলিয়া দিলেন; কেননা সে তাঁহাকে পীড়াপীড়ি করিয়াছিল। পরে ঐ স্ত্রী স্বজাতীয়দিগকে প্রহেলিকার অর্থ বলিয়া দিল।”

২২ আপনার স্বামী, সর্বদা আপনার ইচ্ছামত চলতে স্বাধীনতা না দিলে মনে করবেন না যে তিনি আপনাকে ভালবাসেন না। শিম্‌শোনের ভাবী স্ত্রী অভিযোগ করেছিল যে তিনি তাকে ভালবাসেন না, কিন্তু আসলে সে শিম্‌শোনকে ভালবাসত না। স্ত্রী তার উপর এমন চাপ আনে যা শেষ পর্যন্ত শিম্‌শোন আর সহ্য করতে পারেন না। যখন তিনি প্রহেলিকাটি স্ত্রীকে বলে দেন, সে তৎক্ষণাৎ শিম্‌শোনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার শত্রুদের কাছে গিয়ে গুপ্ত বিষয়টি বলে দেয়। অবশেষে সে অন্য এক পুরুষের স্ত্রী হয়।

২৩ পরে শিম্‌শোন অপর একটি নারীর প্রতি আকৃষ্ট হন, তার নাম ছিল দলীলা। সে হয়ত দৈহিকরূপে আকর্ষণীয়া ছিল, কিন্তু সে কি নিজেকে এমন এক নারীরূপে প্রমাণ করে যাকে শিম্‌শোন অত্যন্ত ভালবাসতে পারতেন? নিজের স্বার্থসাধন করতে শিম্‌শোনকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে তথ্যটি বার করে আনতে, দলীলা বিরক্ত করাকে তার অস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছিল। বিবরণ জানায়: “এইরূপে সে প্রতিদিন বাক্য দ্বারা তাঁহাকে পীড়াপীড়ি করিয়া এমন ব্যস্ত করিয়া তুলিল যে, প্রাণধারণে তাঁহার বিরক্তি বোধ হইল।” সর্বশেষ ফলাফল অত্যন্ত দুঃখদায়ক হয়।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:১৬.

২৪ কাঁদা বা ক্রমাগত বিরক্ত করা বিজ্ঞতার কাজ নয়। তা বিবাহের পক্ষে ক্ষতিকারক। সেটি স্বামীকে দূরে সরিয়ে দেয়। সেইরূপ আচরণের প্রতি বাইবেল সাবধান করে দেয়, যেমন পরবর্তী শাস্ত্রগুলি নিউ ইংলিশ বাইবেল থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে: “যে পুনঃ পুনঃ এক কথা বলে, সে মিত্রতা ভঙ্গ করে।” “বিরক্তিকর স্ত্রী অবিরত বিন্দুপাতের তুল্য।” “মরুভূমিতে বাস করা বরং ভাল, তবু বিরক্তিকর ও কোপনা স্ত্রীর সঙ্গে বাস করা ভাল নয়।” “ভারী বৃষ্টিপাতের দিনে যেমন অবিরত বিন্দুপাত—বিরক্তিকর স্ত্রী সেরূপ। বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করার মতই তাকে নিয়ন্ত্রণ করা! যেমন এক আঙ্গুলে তৈল ধরার তুল্য!”—হিতোপদেশ ১৭:৯; ১৯:১৩; ২১:১৯; ২৭:১৫, ১৬.

২৫ এই পরামর্শ প্রদান করতে কেন শাস্ত্র স্ত্রীদেরই বেছে নিয়েছে? কারণ, সম্ভবত নারীরা সাধারণত অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ও অনুভূতি প্রকাশ করতে বেশি প্ররোচিত হয়, বিশেষকরে যখন তারা কোন কিছুর সম্পর্কে বিচলিত থাকে। তাছাড়া, তারা মনে করতে পারে যে তাদের একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে এটিই। পরিবারের মস্তক হিসাবে স্বামী হয়ত সাধারণভাবেই তার ইচ্ছানুযায়ী চলে, তাতে হয়ত স্ত্রী মনে করতে পারে যে তাকে মানসিক চাপের আশ্রয় নিতে হবে। আপনি যিনি স্ত্রী, আপনি সেইরূপ কৌশলপ্রবণ হবেন না ও আপনার স্বামীও যেন আপনাকে সেইরূপ করতে প্ররোচিত না করে।

২৬ এটি সত্যি যে, কোন কোন সময় আসে যখন আপনি ভাল বোধ করেন না, হয়ত আপনি না চাইলেও কাঁদতে আরম্ভ করেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির থেকে সেই পরিস্থিতিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেখানে শুধুমাত্র অভীষ্ট সাধন করতে প্রচণ্ড আবেগের বশবর্তী হয়ে সেটিকে নাটকীয় দৃশ্যে পরিণত করা হয়।

২৭ যেখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা জড়িত রয়েছে সেখানেও বেশির ভাগ স্বামীরা, যদি স্ত্রীদের প্রকৃতই ভালবাসেন তাহলে তাদের নিজেদের ইচ্ছা থেকে স্ত্রীর ইচ্ছাকেই বেশি পছন্দ করবেন। আপনার স্বামীকে সন্তুষ্ট করুন, তিনিও আপনাকে সন্তুষ্ট করার সুযোগ খুঁজে নেবে।

“নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল”

২৮ অনেক স্ত্রীরা অভিযোগ করে, ‘আমার স্বামী আমার সাথে কথা বলে না।’ ভুল হয়ত স্বামীর। যাইহোক, আবার অনেক সময় স্বামী, স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চান কিন্তু স্ত্রীর জন্যই তার অসুবিধা হয়। কিভাবে? সকল নারী এক প্রকৃতির হয় না। কিন্তু নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে আপনি এই সকল বর্ণনার একটিতেও মিলছেন কি না:

২৯ প্রথম হল, এক প্রকৃতির মহিলা যার প্রতিবাসী মহিলাদের সাথে কথা বলতে কোন অসুবিধাই হয় না। কিন্তু তার কথা বলার রীতি কিরূপ? অপর মহিলাটি শ্বাস নেওয়ার জন্য থামলে, সে কথা বলে ওঠে। সে হয়ত কতকগুলি প্রশ্ন করে বা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে আরম্ভ করে। যাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল সে আবার এক সময়ে কথা বলতে আরম্ভ করে ও এইভাবে চলে। সকলের-জন্য-খোলা সেই আলোচনায় দুজনের মধ্যে কেউ কিছু মনেই করে না।

৩০ তার স্বামী ঘরে এলে, স্ত্রীকে তার কিছু জানানোর থাকে। স্বামী ঘরে ঢুকেই বলতে আরম্ভ করে, ‘জান আজ কাজেতে কী হয়েছিল . . . ’ আর তারপর আর কিছু তিনি বলতেই পারেন না। স্ত্রী কথা বলে ওঠে, ‘তোমার কোটেতে ওই দাগটা কোথা থেকে এল? সাবধানে হেঁটো। আমি এই সবে ঘর মুছেছি।’ স্বামী, বিষয়টি আবার বলার জন্য হয়ত ইতস্ততঃ করবেন।

৩১ অথবা, তারা হয়ত তাদের বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন আর স্বামী তাদের একটা অভিজ্ঞতা শুনাচ্ছিলেন, কিন্তু বলার সময় তিনি হয়ত বিষয়টির বিশদ বিবরণ দিতে ভুলে যান বা সব কিছু সঠিক বলতে পারেন না। তার স্ত্রী, প্রথমে ভুলগুলিকে ঠিক করার জন্য ও পরে বিষয়টি সম্পূর্ণ বলার জন্য মাঝে মঝে বলতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে স্বামী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘তুমিই বল না কেন?’

৩২ আর এক প্রকৃতির মহিলা হল, যে তার স্বামীকে কথা বলতে উৎসাহ দেয়। নিজেকে সাধারণ দেখাতে চেষ্টা করে, কিন্তু খুবই কৌতূহলী, সে জিজ্ঞাসা করে: ‘তুমি কোথায় গিয়েছিলে?’ ‘সেখানে কে কে ছিল?’ ‘কী হয়েছিল?’ জীবনের দৈনন্দিন বিষয়গুলির প্রতি নয়, কিন্তু যেগুলি গোপন রাখতে হয় সেগুলি তাকে বেশি কৌতূহলী করে তোলে। টুকরো টুকরো বিষয়গুলি যতটা পারে সে একত্রে সংগ্রহ করে, বাকি অংশে সে নিজের কিছু কল্পনাকে যোগ দিয়ে নেয়। হয়ত এর মধ্যে কিছু বিষয় ছিল যেগুলি তার স্বামীর ফাঁস করা উচিৎ ছিল না। অন্যান্য বিষয়গুলি হয়ত তার স্ত্রীয়ের সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু সেগুলি স্ত্রীকে ভরসা করে বলা হয়েছিল। যদি সেই বিষয়গুলি সে অপরকে ব্যক্ত করে তাহলে সেই বিশ্বাসটি ভঙ্গ হয়ে যায়। “পরের গুপ্ত কথা প্রকাশ করিও না,” হিতোপদেশ ২৫:৯ পদ সাবধান করে। কিন্তু যদি সে প্রকাশ করে দেয় তাহলে তা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ভবিষ্যতে স্ত্রীয়ের কাছে কোন কিছু ব্যক্ত করতে স্বামী কতটা আস্থা পাবেন?

৩৩ তৃতীয় প্রকৃতির মহিলা নিজে অত কথা বলে না। সে ঘরের প্রয়োজনীয় কাজগুলি ভালভাবেই করে, কিন্তু খুব কমই কথা বলে। যে তার সাথে কথা বলতে চায় তাকেই বেশি কথা বলতে হয়। হয়ত সে ভীরু প্রকৃতির অথবা ছোটবেলায় বেশি লেখাপড়া করার সুযোগ সে পায়নি। যে কোন কারণই থাক না কেন, তার সাথে কথা বলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

৩৪ কিন্তু পরিবর্তন করা যেতে পারে। কথোপকথনের কলাকৌশল শেখা যেতে পারে। এক স্ত্রী শুধুমাত্র ঘরের কাজই নয় কিন্তু সে যদি প্রয়োজনীয় কোন কিছু পড়ে এবং অপরকে সাহায্য করে, তাহলে স্বামীকে তার গঠনমূলক কিছু বলার থাকে। কথোপকথনে সফলতা পেতে হলে অংশ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। সম্মানেরও প্রয়োজন হয়—স্বামী যা বলছে তা শেষ করতে দিতে, তাকে নিজের মত করে বলতে সুযোগ দিয়ে এবং কখন বিষয়গুলি গুপ্ত রাখতে হবে তা জেনে। যেমন উপদেশক ৩:৭ পদ বলে, “নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল” আছে।

৩৫ তাই, আমার সাথে স্বামী খুব কমই কথা বলে, এই অভিযোগ না করে পরিবর্তে কথোপকথন করে তাকে খুশি হতে সুযোগ দিন না কেন? তিনি যা করেন তার প্রতি আগ্রহী থাকুন। তিনি যখন কথা বলেন মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার প্রতি যে আপনার আন্তরিক প্রেম ও গভীর শ্রদ্ধা আছে তা যেন আপনার প্রতিক্রিয়ায় প্রদর্শিত হয়। আপনি যে বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেন তা যেন আশাপূর্ণ ও গঠনমূলক প্রকৃতির হয় সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন। আর তখনই আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনারা দুজনেই এই কথোপকথন উপভোগ করছেন।

‘বাক্য বিহীনে লাভ করা হয়’

৩৬ অনেক সময়, কথার চেয়ে কাজ বড় হয়, বিশেষভাবে যখন স্বামী ঈশ্বরের বাক্যে সহবিশ্বাসী হন না। তাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর বলেন: “যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।” (১ পিতর ৩:১, ২) বহু অবিশ্বাসী স্বামীই অভিযোগ করেন যে তার স্ত্রী তার কাছে সবসময় “প্রচার” করে এবং তাতে তিনি ক্রুদ্ধ হন। পরিবর্তে অপরেরা আবার, ঈশ্বরের বাক্যের সত্য, স্ত্রীর জীবনে যে পরিবর্তন এনেছে তা দেখে নিজেরাও বিশ্বাসী হন। বেশির ভাগ সময়ে লোকেরা উপদেশ শোনার চাইতে তা দেখে প্রভাবিত হয়।

৩৭ অবিশ্বাসী সাথীর সাথে কথা বলার সময়ে আপনার “বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক,” উত্তম প্রকৃতির, অথবা “লবণে আস্বাদযুক্ত হউক,” যেমন শাস্ত্র বলে। কথা বলারও সময় আছে। “উপযুক্ত সময়ে কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের তুল্য,” বাইবেল বলে। তিনি কি কোন বিষয়ে নিরুৎসাহ হয়েছেন? হয়ত তার কাজে কোন কিছু ঘটেছে। তখনই কয়েকটি সহানুভূতিপূর্ণ কথা তার কাছে সম্পদস্বরূপ হতে পারে। “মনোহর বাক্য . . . প্রাণের পক্ষে মধুর, অস্থির পক্ষে স্বাস্থ্যকর।” (কলসীয় ৪:৬; হিতোপদেশ ২৫:১১; ১৬:২৪) অথবা, পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, শুধুমাত্র আপনার হাতটি তার হাতের উপর রাখলে তাকে এই ইঙ্গিত দেবে: আমি বুঝতে পারছি, আমি তোমার সাথে আছি, আমি যতটা সম্ভব তোমাকে সাহায্য করব।

৩৮ যদিও বা তিনি আপনার সাথে বিশ্বাসে একতাবদ্ধ নন কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য প্রদর্শন করে যে আপনি তবুও তার বশীভূতা। আপনার উত্তম আচরণ হয়ত একসময় তাকে লাভ করতে সাহায্য করবে, আর তিনি আপনার বিশ্বাসে সহভাগী হবেন। সেই দিনটি কতই না আনন্দের হবে! আর সেই সময় এলে, তিনি বুঝতে পারবেন যে আপনাকে ভালবাসার জন্য তার আরও কতই না কারণ আছে যা তিনি আগে জানতেন না। কারণ আপনার ভক্তি, তার সাথে যেটি সঠিক তা করার আপনার দৃঢ়তা, তাকে ‘প্রকৃতরূপ জীবনকে’ ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।—১ করিন্থীয় ৭:১৩-১৬; ১ তীমথিয় ৬:১৯.

৩৯ খ্রীষ্টীয় স্ত্রীদের, স্বামী বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী যাই হোক, শাস্ত্র তাদের উৎসাহ দেয় তারা যেন “পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা, সুশীলা, ও আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হয়, এইরূপে যেন ঈশ্বরের বাক্য নিন্দিত না হয়।”—তীত ২:৪, ৫.

৪০ আপনি যিনি স্ত্রী, আপনি তা করতে যদি যতটা সম্ভব চেষ্টা করেন, তাহলে শুধুমাত্র স্বামীই আপনাকে অত্যন্ত ভালবাসবে তাই নয়, যিহোবা ঈশ্বরও ভালবাসবেন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১-৪. স্বামীর ভালবাসা প্রদর্শন করা সম্বন্ধে অনেক সময় স্ত্রীয়েরা কী অভিযোগ করে থাকে?

৫. স্বামীর গভীর ভালবাসা পেতে হলে স্ত্রীকে কিরূপ আচরণ করতে হবে?

৬, ৭. (ক) যিহোবা ঈশ্বর কোন্‌ ভূমিকা পালন করতে নারীকে সৃষ্টি করেছেন বলে আদিপুস্তক ২:১৮ পদ বলে? (খ) স্ত্রীকে স্বামীর প্রকৃত সহকারিণী হতে হলে তার কী করা দরকার?

৮. স্বামীকে উপযুক্তরূপে মস্তকের ব্যবহার করতে স্ত্রী কিভাবে উৎসাহ দিতে পারে?

৯. গুণবতী স্ত্রী সম্বন্ধে হিতোপদেশ ৩১:১০ পদ কী বলে?

১০, ১১. এক স্ত্রী কিভাবে দেখাতে পারে যে সে হিতোপদেশ ৩১:১৫ পদের বর্ণনার উপযুক্ত?

১২. হিতোপদেশ ৩১:১৪ পদ অনুসারে স্ত্রীয়ের আচরণের মধ্যে আর কী যোগ করা যেতে পারে?

১৩. হিতোপদেশ ৩১:২৭ পদ অনুযায়ী, গৃহের যত্ন নেওয়ার সম্পর্কে গুণবতী স্ত্রীর কাছ থেকে কী আশা করা যেতে পারে?

১৪, ১৫. সাজসজ্জা ও অলংকার সম্বন্ধে স্ত্রীদের প্রতি বাইবেলের পরামর্শ কী?

১৬. উপলব্ধিপূর্ণ স্বামী সেই প্রকৃতির স্ত্রীর প্রতি কিরূপ বোধ করেন?

১৭, ১৮. কিভাবে স্ত্রীয়ের সহবাসের প্রতি দৃষ্টিকোণ স্বামীর তার প্রতি অনুভূতিকে প্রভাবিত করে?

১৯. (ক) কিভাবে বাইবেল দেখায় যে নিজের সঙ্গীর সাথে বহু দিন ব্যাপী সহবাস করা থেকে বিরত থাকা ভুল হবে? (খ) যৌন বিষয় সম্পর্কে দম্পতির উচিৎ ও অনুচিৎ আচরণ সম্বন্ধে বিবাহ বন্ধনের বাইরে কোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ হবে না কেন?

২০. যদি স্ত্রী নিজ উদ্দেশ্যসাধন করতে সহবাসকে ব্যবহার করে, তাহলে ফলাফল কী হয়?

২১-২৩. শিম্‌শোনের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল, এক স্ত্রীর ক্রন্দন ও বিরক্তিকরণ কিভাবে আনন্দকে নষ্ট করে দেয়?

২৪-২৭. (ক) স্ত্রীর বিরক্ত করার প্রতিফল সম্বন্ধে হিতোপদেশের পুস্তক কী বলে? (খ) এই পরামর্শ স্ত্রীকেই লক্ষ্য করে কেন দেওয়া হয়েছে? (গ) স্বামীকে তার স্ত্রীর জন্য উত্তম কিছু করতে সবচেয়ে বেশি কী প্ররোচিত করে?

২৮-৩৫. (ক) স্ত্রীর সাথে স্বামীর কথোপকথন করতে হয়ত অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে এমন কতগুলি অভ্যাস সম্বন্ধে বর্ণনা করুন। (খ) স্বামীস্ত্রীর মধ্যে কথোপকথনের উন্নতি কী করে করা যেতে পারে?

৩৬-৩৮. যে সঙ্গী সহবিশ্বাসী নয় তার হৃদয়কে কী কী উপায়ে স্পর্শ করা যায়?

৩৯, ৪০. তীত ২:৪, ৫ পদে বর্ণিত কোন্‌ গুণগুলি এক স্ত্রীকে শুধুমাত্র তার স্বামীর কাছে নয় কিন্তু যিহোবার কাছেও বহুমূল্য করে তোলে?

[৫৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

“গুণবতী স্ত্রী . . . মুক্তা হইতেও তাঁহার মূল্য অনেক অধিক।”—হিতোপদেশ ৩১:১০.

[৬৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

শিম্‌শোনের জীবনের নারীরা