সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যে স্বামী গভীর সম্মান অর্জন করেন

যে স্বামী গভীর সম্মান অর্জন করেন

অধ্যায় ৪

যে স্বামী গভীর সম্মান অর্জন করেন

নিজেকে সম্মান করতে কাউকে হুকুম করে সম্মান পাওয়া যায় না। আপনার কথাবার্তা ও আচরণের এবং আপনার ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে আপনার সম্মান অর্জন করা উচিৎ।

এটি খ্রীষ্ট যীশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাঁর শিক্ষাদানের রীতির মাধ্যমে তিনি শিক্ষক রূপে সম্মান অর্জন করেন। তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশের পর “লোকসমূহ তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান করিল।” কিসের জন্য তিনি এই সম্মান অর্জন করেন? অন্যান্য ব্যক্তিদের মতামতের উপর নির্ভর না করে পরিবর্তে তিনি ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের উপর নির্ভর করেন। তার একমাত্র কর্তৃত্ব ছিল যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর সত্যের বাক্য। যীশু শত্রু ও মিত্র উভয়ের কাছ থেকে সম্মান পান, তা অর্জন করার মাধ্যমে।—মথি ৭:২৮, ২৯; ১৫:১-৯; যোহন ৭:৩২, ৪৫-৪৬.

“স্ত্রীর উচিৎ যেন সে স্বামীকে গভীর শ্রদ্ধা করে,” এই নির্দেশটি ইফিষীয় ৫:৩৩, (NW) পদে দেওয়া আছে। কিন্তু এই সম্মান অর্জন করতে স্বামীর অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন; তা না হলে তার স্ত্রীয়ের এই নির্দেশ পালন করা খুবই অসুবিধাজনক হতে পারে। এক স্বামীর সেইরূপ শ্রদ্ধা পেতে হলে বাইবেলে নির্দেশিত ভূমিকা তিনি কিরূপে পালন করতে পারেন?

উপযুক্তরূপে মস্তক-ব্যবস্থা ব্যবহার করে

বিবাহের ব্যবস্থায় বাইবেল স্বামীকে মস্তকের স্থানে রাখে, এই বলে: “নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্ত্তা; কিন্তু মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূত, তেমনি নারীগণ সর্ব্ববিষয়ে আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হউক।” (ইফিষীয় ৫:২২-২৪) এই ব্যবস্থা কি পরিবারে প্রকৃতই সুখ আনে? কিছু নারী, যেটিকে পুরুষ-শ্রেষ্ঠত্ব বলে থাকে তার বিরুদ্ধে বলে ওঠে, যেটি হল কিছু পুরুষের নারীর প্রতি তাদের স্থান সম্পর্কে এক অসার আত্মগর্ব বা অতিরঞ্জিত দৃষ্টিকোণ। কিন্তু প্রথমেই বলা দরকার যে বাইবেলের শিক্ষা সেই প্রকার পুরুষ-শ্রেষ্ঠত্ব অনুমোদন করে না।

শুধুমাত্র নারী নয় পুরুষও যে মস্তকের অধীনে তা বাইবেল জোর দিয়ে থাকে। বাইবেলের পুস্তক ১ করিন্থীয়, ১১ অধ্যায়, ৩ পদে গেলে, করিন্থীয় মণ্ডলীর প্রতি প্রেরিত পৌলের লিখিত এই কথাগুলি আমরা পাই: “আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” পুরুষের মস্তক হল খ্রীষ্ট আর উদাহরণ ও শিক্ষক হিসাবে ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের কাছ থেকে কিভাবে মস্তকের ব্যবহার করতে হয় আপনারা যারা স্বামী, তা শিখতে পারেন।

খ্রীষ্টের উপর যিহোবার মস্তকের ব্যবহার প্রেমপূর্ণ দয়ার সাথে করা হয়েছিল ও খ্রীষ্ট এইভাবে সাড়া দেন, “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত।” (গীতসংহিতা ৪০:৮; ইব্রীয় ১০:৭) যীশু খ্রীষ্টের মস্তকের ব্যবহারও প্রেমপূর্ণ। যারা তাঁর শিষ্য হতে চলেছিলেন তাদের তিনি বলেন: “আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।” (মথি ১১:২৯) যারা তাঁর মণ্ডলীর সদস্য, যাদের শাস্ত্র বধূর সাথে তুলনা করে, তারা যীশুর মস্তকের অধীনে সেই বিশ্রাম নিশ্চয় পেয়েছেন। তিনি তাদের মাধ্যমে স্বার্থসাধন করেননি কিন্তু প্রেম প্রদর্শনে তিনি আত্ম-ত্যাগী ছিলেন। আর এই প্রকৃতির মস্তকের ব্যবহারও স্বামীর তার স্ত্রীয়ের উপর করা উচিৎ: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন; . . . এইরূপে স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন। . . . তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিৎ যেন স্বামীকে গভীর শ্রদ্ধা করে।” (ইফিষীয় ৫:২৫-২৯, ৩৩, NW) খ্রীষ্টের মস্তকের অধীনে বশীভূত হওয়ার উদাহরণ যদি আপনি স্থাপন করেন, আপনার স্ত্রীয়ের পক্ষে তাহলে কোন কষ্টই হবে না—বরং তা আনন্দময় হবে—স্বামী হিসাবে আপনার মস্তকের ব্যবহারের প্রতি গভীর সম্মান দেখাতে।

মহা সমস্যা হল এই যে অসিদ্ধতা ও জন্মগত স্বার্থপরতার দরুন অনেক সময় স্বামী, পরিবারের মস্তক হিসাবে সম্মান চাওয়ার সময়ে স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় প্রেম ও সমবেদনা দেখাতে অসমর্থ হয়। অনেকসময় স্ত্রী বলতে পারে যে স্বামী তাকে ভালবাসেন বলে সে মনে করে না, আর নিজের খুশি ও তৃপ্তির প্রতিই তার একমাত্র চিন্তা রয়েছে। আবার অনেক স্ত্রীয়েরা অভিযোগ করে যে তাদের স্বামীরা উদ্ধত ব্যবহার করেন। হয়ত তা স্বামীর মস্তকের ব্যবহারের মধ্যে স্ত্রীর অনধিকার প্রবেশের ফলে হয়েছে, যেখানে স্বামী সেই অনধিকার প্রবেশকে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেছেন। অথবা পুরুষটি এমন এক পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছে যেখানে বহু স্বামীরাই একগুঁয়ে ও উদ্ধত। তবে যে কোন কারণই থাকুক না কেন, মস্তকের সেই অপব্যবহার কারুরই সম্মান অর্জন করতে পারে না। 

অপরপক্ষে, মস্তকের অধিকারকে অপব্যবহার না করে, কিছু স্বামীরা তা পরিত্যাগ করে। সমস্ত সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া তারা তাদের স্ত্রীয়ের উপরে ছেড়ে দেয়। অথবা, তারা স্ত্রীকে বলেন ‘তাড়াহুড়ো না করতে,’ সিদ্ধান্তগুলি নিতে এমন গড়িমসি করেন যে পরিবার কষ্ট পায়। তারা হয়ত অলস বা কুঁড়ে নন, কিন্তু যদি তারা মানসিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে গড়িমসি করেন, ফল হিতোপদেশ ২৪:৩৩, ৩৪ পদে বর্ণিত অবস্থার মত হতে পারে: “‘একটু নিদ্রা, আর একটু তন্দ্রা, আর একটু শুইয়া হস্ত জড়সড় করা,’ তাই তোমার দরিদ্রতা দস্যুর ন্যায় আসিবে, তোমার দৈন্যদশা অস্ত্রধারী ব্যক্তির ন্যায় আসিবে।”—রিভাইসড্‌ স্টাণ্ডারড ভারশান।

যদি আপনি নিজেকে অবিচলিত, দৃঢ় ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হিসাবে প্রদর্শন করেন তাহলে আপনি স্ত্রীয়ের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করতে পারেন। এর অর্থ এই নয় যে পরিবারের কারুর সাথেই আপনার আলোচনা করার কোন দরকার নেই বা আপনার মতামতের সাথে স্ত্রীয়ের মতামত মিলছে না বলে তার মতামতকে বিবেচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। অব্রাহাম ও সারার পরিবারে, তাদের পুত্র ইস্‌হাক ও দাসী হাগারের পুত্রকে নিয়ে এক গুরুতর সমস্যার বিষয়ে আমরা বাইবেলের আদি বিবরণে পড়ি। এই সম্পর্কে সারা কিছু সমাধানের প্রস্তাব করেন যা অব্রাহামের ইচ্ছার সাথে মেলে না। কিন্তু ঈশ্বর অব্রাহামকে বলেন: “তাহার সেই কথা শুন।”—আদিপুস্তক ২১:৯-১২.

১০ এই বিষয়টি থেকে আমরা এই পরিসমাপ্তিতে আসব না যে স্বামী সবসময় স্ত্রীয়ের ইচ্ছাগুলি মেনে নেবেন। কিন্তু যে সিদ্ধান্তগুলি পরিবারকে প্রভাবিত করে সেইগুলি সম্বন্ধে স্ত্রীয়ের মনোভাব ও চিন্তাধারা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করতে তাকে উৎসাহ দিয়ে তার সাথে আলোচনা করলে উপকার হতে পারে। ভাব-বিনিময়ের পথ খুলে রাখুন, সর্বদা সহজ হোন ও আপনার সঙ্কল্পগুলিতে স্ত্রীয়ের পছন্দটি সম্পর্কে ভাল করে চিন্তা করে দেখুন। মস্তকের ব্যবহারের সময় কখনই কর্তৃত্বপ্রিয় বা অত্যাচারী হবেন না, পরিবর্তে নম্রতা প্রদর্শন করুন। আপনি সিদ্ধ নন, আপনি ভুল করবেনই, আর আপনি যখন ভুল করবেন আপনি চান স্ত্রী যেন আপনার পরিস্থিতি বুঝতে পারে। যখন সেই সব পরিস্থিতি আসে তখন যার সাথী অহঙ্কারী তার তুলনায় যে স্ত্রীয়ের স্বামী নম্র, সেই স্ত্রীয়ের পক্ষে মস্তকের ব্যবহারকে সম্মান করা সহজ হবে।

উত্তম সংস্থানকারী হয়ে

১১ পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটাবার দায়িত্ব হল স্বামীর। প্রথম তীমথিয় ৫:৮ পদ তা দেখায়: “কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” বর্তমানে বহু দেশে জীবনযাপন করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, আর কিভাবে সেই চাহিদা মেটানো যায় তার নির্ধারণ, স্বামী যে আপনি, আপনাকেই করতে হবে। আপনি যে অর্থ উপার্জন করেন তা ঘরে নিয়ে আসা ছাড়াও, আপনাকে হয়ত স্ত্রীয়ের সাথে দুজনের মতামত অনুযায়ী আয়ব্যয়ের হিসাব করতে হবে। এর অর্থ হল ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখার এক ব্যবস্থা করা। এটি নিজেদের আয়ের ক্ষমতার মধ্যে থাকতে সাহায্য করবে ও এমন কিছু তর্কবিতর্ক এড়াতে সাহায্য করবে যা অনেক সময় মাইনে পাওয়ার আগেই টাকা ফুরিয়ে গেলে হয়ে থাকে।

১২ পরিবারকে ভরণপোষণ করতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামীই উপার্জন করেন, তবু এটি ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে সেটি যুগ্ম প্রচেষ্টায় অর্জন করা হয়। স্বামী, আপনি যদি মনে করেন যে আপনি একাই সবকিছু করছেন তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন, বাজার করতে, রান্না করতে, বাসন মাজতে, ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে, বাচ্চা দেখতে ইত্যাদির জন্য আপনাকে যদি লোক রাখতে হত তাহলে কত টাকা খরচা হত। সাধারণত, আপনার স্ত্রী সেই কাজগুলি করে খরচা বাঁচায়, যেগুলি অবশ্যই বিবাহ-সঙ্গীর একজন রূপে তার করনীয় অংশ। আর যদি সে ঘরের খরচার হিসাবপত্র রাখে তাহলে আপনি উপরের তালিকাতে “হিসাবরক্ষক” শব্দটিও যোগ করতে পারেন। হিতোপদেশ ১৮:২২, (NW) পদের কথাগুলি খুবই সত্য: “যে উত্তম ভার্য্যা পায়, সে উৎকৃষ্ট বস্তু পায়।”

১৩ পরিবারে বস্তু সংস্থান করার সময়ে, সর্বদা এক বিপদ উপস্থিত রয়েছে—আপনার ও আপনার স্ত্রীয়ের জন্য—জীবনের প্রতি এক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও বস্তুবাদী পথে স্থলিত হয়ে পড়ার। এ যতটা পারে, এর মত খুব অল্প বিষয়ই পরিবারের সুখের ভিত্তিকে ‘খেয়ে ফেলতে’ পারে। “আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে আনি নাই, কিছুই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেও পারি না,” বলেন বাইবেল লেখক পৌল। “কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব। কিন্তু যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে। কেননা ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।” বস্তুবাদের জীবনধারা বহু ধনসম্পদ আনলেও তা পারিবারিক সম্পর্কে চিড় ও ভাঙ্গনের বেদনার ক্ষতিপূরণ করতে পারে না। আত্মিক ও মানসিক ক্ষতির কাছে পার্থিব সম্পদ কিছুই নয়।—১ তীমথিয় ৬:৭-১০.

১৪ বস্তুবাদ হচ্ছে শুধুমাত্র বস্তু থাকাই নয়, বস্তুর প্রতি প্রেম থাকা। এক ব্যক্তি দরিদ্র হয়েও বস্তুবাদী হতে পারে অথবা কোন ব্যক্তি ধনী হয়েও আত্মিকমনা হতে পারে। তার হৃদয় যেখানে থাকে তার উপর এটি নির্ভর করে। যীশু বলেন: “তোমরা পৃথিবীতে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় করিও না; এখানে ত কীটে ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে, এবং এখানে চোরে সিঁধ কাটিয়া চুরি করে। কিন্তু স্বর্গে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় কর; সেখানে কীটে ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে না, সেখানে চোরেও সিঁধ কাটিয়া চুরি করে না। কারণ যেখানে তোমার ধন, সেইখানে তোমার মনও থাকিবে।”—মথি ৬:১৯-২১.

১৫ যে স্বামী পার্থিব চাহিদার উত্তম সংস্থানকারী তিনি এইরূপ শাস্ত্রীয় পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দেবেন এবং পার্থিব চাহিদাগুলি পূরণ করা ছাড়াও পরিবারের আত্মিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে সময় ব্যয় করবেন। জীবনের পার্থিব বস্তুগুলি অর্জন করতে কর্মবৃত্তিতে প্রচুর সময় ব্যয় করে লাভ কী, যখন পরিবারকে আত্মিকরূপে গড়ে তুলতে আপনার যথেষ্ট সময় ও শক্তি অবশিষ্ট থাকে না? জীবনের সমস্যাগুলিকে সফলতার সাথে মোকাবিলা করতে বিজ্ঞতার জন্য, পরিবারে সঠিক নীতির প্রতি গভীর ভক্তি গড়ে তুলতে সময় ব্যয় করতে হবে। একত্রে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও আলোচনা ও এর সাথে একত্রে প্রার্থনা করতে জীবনে সময় করে নিলে, তা হতে পারে। পরিবারের মস্তকস্বরূপ, স্বামী যে আপনি, এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নেওয়া আপনার উপরেই নির্ভর করছে। এর উপকারগুলি সময় ও শক্তির মূল্যকে ছাপিয়ে যাবে। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা বিফল হবে না: “তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৬.

১৬ যে স্বামী, তার পদক্ষেপ ফেলতে স্রষ্টার পরিচালনার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন তিনি উপদেশক ৭:১২ পদের পরামর্শের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিকোণটি উপলব্ধি করেন: “প্রজ্ঞা আশ্রয়, ধনও আশ্রয় বটে, কিন্তু জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা এই যে, প্রজ্ঞা আপন অধিকারীর জীবন রক্ষা করে।” তাই, এক উত্তম অন্নসংস্থানকারীরূপে তিনি পরিবারের দৈহিক চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। তবুও, তিনি “ধনের অস্থিরতার উপরে নয়” কিন্তু ‘ঈশ্বরের উপরে প্রত্যাশা রাখেন।’ আত্মিক বিষয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়ে তিনি উদাহরণ স্থাপন করেন, ফলে তিনি ও তার স্ত্রী উভয়ে ‘যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারেন।’ (১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯) দৈহিক ও আত্মিকরূপে প্রদান করতে স্বামীর এইরূপ প্রচেষ্টা, ঈশ্বর-ভীরু স্ত্রীর সম্মান লাভ করবে।

স্ত্রীকে সম্মান দেখিয়ে

১৭ প্রেরিত পিতর স্বামীদের সাথে স্ত্রীদের সম্পর্কে কথা বলেন এবং বলেন যে “স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের সমাদর কর।” (১ পিতর ৩:৭) সেই একই পদে পিতর, আপনি যিনি স্বামী, আপনার স্ত্রীর সাথে “জ্ঞানপূর্বক” ব্যবহার করাও উচিৎ বলে বলেন।

১৮ এটি প্রকৃতপক্ষে সহবাসের প্রতি প্রযোজ্য। নারীর দৈহিক ও মানসিক কাঠামো সম্বন্ধে যে সব স্বামীরা অজ্ঞ সেই কারণে স্ত্রীয়ের মধ্যে সহবাসের প্রতি অনেকটা নিরুৎসাহিতা দেখা যায়। “স্বামী স্ত্রীকে তাহার প্রাপ্য দিউক,” কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলে তা যেন ‘দুর্বল পাত্র বলে তাকে সম্মান দেখিয়ে জ্ঞানপূর্বক করা হয়।’ (১ করিন্থীয় ৭:৩) আপনি যদি প্রকৃতই তাকে ‘সম্মান করেন,’ তাহলে আপনি কখনই নিষ্ঠুর হবেন বা দাবি করবেন না, এমনকি সে যখন হয়ত অতি ক্লান্ত থাকবে বা মাসের কষ্টকর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবে তখন নিজের কামনাকে তৃপ্ত করার জন্য জোর করবেন না। (তুলনা করুন লেবীয় পুস্তক ২০:১৮.) আর সহবাসের সময়ে, আপনি নিজের আনন্দের জন্য এমন আগ্রহী থাকবেন না যে তার চাহিদাগুলি আপনি ভুলে যাবেন। জীবনের এই ক্ষেত্রে নারী সাধারণত পুরুষের থেকে ধীর গতিতে প্রতিক্রিয়া করে। কোমলতা ও প্রীতির প্রতি তার এক বিশেষ চাহিদা আছে। স্বামীকে ‘স্ত্রীর প্রাপ্য,’ দিতে বলার সময়, বাইবেল দেওয়ার উপরে জোর দেয়, নেওয়ার উপরে নয়।

১৯ সেই ধরনের দেওয়া, অবশ্যই নিজের বিবাহ-সাথীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এটি সত্য যে আজ বহু পুরুষ অন্য নারীর সাথে তাদের “প্রেমের সম্পর্ক” রাখে। কিন্তু অবশেষে তারা কী লাভ করে? তাদের নিজের পরিবারের সুখকে শুধুমাত্র নষ্ট করে। তারা তাদের স্ত্রীদের “সম্মান” দিতে অসমর্থ হয়, ফলে স্ত্রীদের পক্ষেও তাদের সম্মান করার কোন কারণই থাকে না। তাছাড়া, বিবাহকে তারা অসম্মান করে, যে ব্যবস্থার উদ্ভাবক ঈশ্বর। যেহেতু তা এত দুঃখ বেদনা আনে তাই বোধগম্য যে কেন ইব্রীয় ১৩:৪ পদ আমাদের উপদেশ দেয়: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।”

২০ স্ত্রীকে সম্মান দেখানোর বিষয়টি সহবাসেই শেষ হয়ে যায় না। যে স্বামী প্রকৃতই সম্মানীয়, তিনি অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রদর্শন করেন যে স্ত্রীর প্রতি তার গভীর সম্মান আছে। এর অর্থ এই নয় যে স্ত্রীকে বেদীর উপর রেখে তার দাস হয়ে যাওয়া। পরিবর্তে তা হল যা আমরা পূর্বে ইফিষীয় ৫:২৮ পদে পড়েছি তা: “এইরূপে স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে।” যে পুরুষ তা করেন তিনি নিশ্চয় তার স্ত্রীকে এক হীন ব্যক্তি ভেবে ব্যবহার করবেন না। খাবার সময়ে তিনি নিশ্চয় মনে করবেন না যে তার দেহের জন্য ভাল ভাল খাদ্যগুলি দরকার, পড়ে থাকা খাবার স্ত্রী খেতে পারে—যদি তিনি তাকে ‘নিজের মত ভালবাসে’ তাহলে কখনই তা হবে না। তার নিজের চেহারার প্রতি আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে বরং স্ত্রীর চেহারা সম্বন্ধে, তিনি নিজের প্রতি যেমন বা তার থেকেও বেশি চিন্তিত থাকবেন, স্ত্রীর বেশবাস সম্পর্কে, তাকে পরিতৃপ্ত করতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন। এক পুরুষ তার আশানুসারে যতটা সম্ভব করতে অসমর্থ হলে নিজেকে প্রহার করেন না। এক খ্রীষ্টীয় স্বামীও সেইরূপ করবেন না যেহেতু তার স্ত্রী অনেক সময় তার আশা পূর্ণ করতে অসমর্থ হয়। এর সম্পূর্ণ বিপরীত হল, কেউ যদি তার স্ত্রীয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাহলে তার কর্তব্য অনুযায়ী তিনি তাকে সাহায্য করবেন। কারণ তিনি তাকে তার নিজের দেহের মত ভালবাসে।

২১ আপনাদের দুজনের যে সমস্ত ক্ষেত্রে চাহিদাগুলি একই তা উপলব্ধি করার সাথে সাথে, আপনার স্ত্রীকে যদি ‘সম্মান করতে’ হয় তাহলে আপনাদের দুজনের মধ্যে যে মানসিক পার্থক্য আছে তাও আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে। মূখ্যত নারী, কর্তৃত্বের অধীনে কাজ করতে পছন্দ করে, যদি তা উপযুক্তরূপে ব্যবহার করা হয়। এইরূপেই যিহোবা ঈশ্বর তাদের সৃষ্টি করেছিলেন। নারীকে ‘পুরুষের সহকারিনী হিসাবে, তার পরিপূরকরূপ’ দেওয়া হয়। (আদিপুস্তক ২:১৮) কিন্তু যদি ঘন ঘন পরিচালনা দেওয়া হয় ও স্ত্রীকে যদি আগ্রহ দেখাতে এবং তার দক্ষতাগুলি ব্যবহার করতে সুযোগ দেওয়া না হয়, তাহলে সে হয়ত মনে করতে পারে যে তার জীবন থেকে আনন্দ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আর এতে বিরক্তিভাবের সৃষ্টি হতে পারে।

২২ আর একটি প্রধান বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন যে নারীর স্বাভাবিক ইচ্ছা হল, লোকে তার প্রয়োজন বোধ করুক। বেশির ভাগ স্ত্রী সাহায্যকারী স্বামীকে পছন্দ করে, কিন্তু যে স্বামী তার স্ত্রীকে সরিয়ে নিজেই সব কিছু গ্রহণ করেন তিনি ভালোর থেকে বরং আরও মন্দই করেন। আপনি যদি দয়ালু ও উপলব্ধিপূর্ণ হন এবং আপনার কাছে তার প্রয়োজন আছে বলে তাকে বুঝতে দেন, তাকে সম্মান করেন ও আপনারা যদি একত্রে কাজ করেন, যা হল “আমরা” এবং “আমাদের” কিন্তু “আমি” ও “তুমি” নয় অথবা “আমার” ও “তোমার” নয়, তা উপলব্ধি করতে দেন তাহলে আপনি স্ত্রীর সম্মান পেতে পারেন। আপনি কী প্রকৃতই স্ত্রীকে বুঝতে দেন যে আপনি তাকে কত উপলব্ধি করেন ও আপনার তাকে কত প্রয়োজন? তাকে মাহিনা দিয়ে আপনি তা করেন না; আপনার তা অন্য উপায়ে দেখাবার দরকার।

তার নারীসুলভ গুণগুলি উপলব্ধি করুন

২৩ এক নারী মনোবিজ্ঞানী লেখেন: “প্রধানত, পুরুষ চিন্তা করলে নারী তা অনুভব করে।” এখানে একটি গুণ অপর একটি গুণের থেকে শ্রেষ্ঠ নয়; আসলে সেগুলি ভিন্ন প্রকারের। যারা অনুভব করতে পারে না তাদের প্রতি আমরা বিবেচনা দেখাই না; আবার আমরা চিন্তাহীন ব্যক্তিকেও পছন্দ করি না। অবশ্যই নারীর, অনুভব ও চিন্তা করার উভয় ক্ষমতাই আছে, আর পুরুষেরও আছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে নারীর অনুভূতি সহজেই প্রকাশ পায়, কিন্তু পুরুষ জীবনের প্রতি যুক্তিসম্পন্ন দৃষ্টিকোণ হিসাবে অনুভূতিকে সাধারণত চেপে রাখতে চেষ্টা করে। এর ব্যতিক্রম যদিও দেখা যায়, এটি হল অপর একটি পার্থক্য যা স্বামীস্ত্রীকে পরস্পরের সহযোগী করে তোলে। আরও, স্ত্রীর মানসিক গঠন সাধারণত বেশি অনুভূতিসম্পন্ন হওয়া ছাড়াও লোকেদের প্রতি তার গভীর আগ্রহের জন্য সে অনেক সময় পুরুষের থেকে বেশি কথা বলে থাকে। সে চায় তার সাথে অপরেও কথোপকথন করুক। এই ক্ষেত্রে অনেক স্বামীরা ব্যর্থ হন।

২৪ আপনি কি আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলেন? শুধুমাত্র আপনার কাজ সম্বন্ধে নয়, তার কাজ সম্বন্ধেও? আপনি কি সে সম্পর্কে আগ্রহী এবং আপনি কি স্ত্রীকে তা প্রদর্শন করেন? তার দিনটি কেমন কেটেছে? ছেলেমেয়েরা কী করেছে? বাড়িতে এসে, ‘খেতে দাও’ বলে খাবার খেয়ে খবরের কাগজে মুখ গুঁজে বসে থাকবেন না এবং স্ত্রী কথা বলতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। আপনার স্ত্রীয়ের প্রতি, তার চিন্তাধারা, কাজ, অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে তার অনুভূতির প্রতি আগ্রহী হন। সে কোন কাজ হাতে নিলে তাকে উৎসাহ দিন ও সে সেটি সম্পাদন করলে তাকে প্রশংসা করুন। তার কৃত কাজেতে প্রশংসা করলে, অন্য যে কাজগুলি সে অবহেলা করত সেগুলিও হয়ত শুরু করতে পারে। সমালোচনা অজান্তে বিষস্বরূপ হতে ও মন নিরাশ করে দিতে পারে কিন্তু প্রয়োজনে আন্তরিক প্রশংসা উত্তম কাজ করে ও উৎসাহ দিয়ে উৎফুল্ল করে!—হিতোপদেশ ১২:১৮; ১৬:২৪.

২৫ আপনি কি কখনও কখনও স্ত্রীর জন্য উপহার আনেন? খুব দামি হতে হবে তা নয়—হয়ত কোন একটি ছোট বস্তু হতে পারে যা বলে ‘আমি তোমার বিষয়ে চিন্তা করছিলাম।’ আপনি কি কোন এক বিশেষ উপলক্ষের জন্য অপেক্ষা না করে স্বাভাবিকভাবেই সেটি দিয়ে থাকেন যেহেতু আপনি তা দিতে চেয়েছিলেন? আনন্দদায়ক অপ্রত্যাশিত বিষয়-গুলি সবসময় আনন্দ দেয়। আপনি যে খাবার খেতে পছন্দ করেন সেটি স্ত্রী হঠাৎ রেঁধে আপনাকে খাওয়ালে আপনি কি আনন্দিত হন না? আপনার জন্য অপ্রত্যাশিত কিছু করলে আপনিও তার জন্য অপ্রত্যাশিত কিছু করুন ও তাকে সন্তুষ্ট করুন। ভালবেসে দেওয়া ছোট ছোট স্মারকগুলি, কর্তব্য হিসাবে—হয়ত এমনকি বিরক্তিসহকারে—নিয়মিত দিয়ে থাকা দামি উপহারের থেকেও অনেক বেশি মূল্য রাখে। “ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।” (২ করিন্থীয় ৯:৭) স্ত্রীর ক্ষেত্রেও তাই। খাদ্য বিশেষ রকমের না হলেও মনে রাখবেন, “প্রণয়ভাবের সহিত শাক ভক্ষণ ভাল, তবু দ্বেষভাবের সহিত পুষ্ট গোরু ভাল নয়।”—হিতোপদেশ ১৫:১৭.

২৬ সবচেয়ে উত্তম দান হল নিজেকে দেওয়া—আপনার সময়, শক্তি, আপনার মনোযোগ ও চিন্তাগুলি, বিশেষভাবে যেগুলি আপনার হৃদয়ের অন্তরতম। বহু পুরুষ তা করা কঠিন মনে করেন। প্রেমের অভিব্যক্তিগুলি ব্যক্ত করা তাদের কাছে মূর্খ ভাবপ্রবণতা ও যেভাবেই হোক অপুরুষত্ব বলে মনে হয়। কিন্তু আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে প্রেম করেন তাহলে আপনার স্মরণে রাখা দরকার যে নারীর কাছে, একটি চাহনি, স্পর্শ ও কথা কতই না অর্থ রাখে। এই সকলের অভাব তাকে ক্রুদ্ধ, বিরক্ত ও অসুখী করতে পারে। তাই, বাইবেলে বর্ণিত পরমগীতের উদাহরণ আপনারা অনুসরণ করুন। অপরের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি প্রকাশ করলে, যে প্রকাশ করছে তার জন্য তা ভাল করে। আন্তরিক ব্যক্তিদের প্রতি লোকেরা বিনা দ্বিধায় আকর্ষিত হয়। আন্তরিক ব্যক্তির অর্থ কী? যে ব্যক্তি যাদের সে ভালবাসে তাদের প্রতি তার অনুভূতি ও উৎসাহ প্রকাশ করে। এই প্রকারের আন্তরিকতা সংক্রামক; দাতাকে তা ফেরত দেওয়া হবে।—পরমগীত ১:২, ১৫; লূক ৬:৩৮.

২৭ স্বামী আপনি নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: আমার মস্তকের ব্যবহার কি আমার স্ত্রীকে এর প্রতি সম্মান দেখানো সহজ করে দেয়? আমি কি তাকে নিজের মত ভালবাসি? অথবা, আমি প্রধানত আমার নিজের তৃপ্তি ও চাহিদাগুলির প্রতি একমাত্র আগ্রহী? তার চাহিদাগুলিকে আমি কতটা বিবেচনা করি? পরিবাররূপে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আমি কি তার মনোভাব শুনি ও ইচ্ছাটি বিবেচনা করি? আমার সিদ্ধান্তগুলি কি তার মঙ্গলের প্রতি দৃষ্টি রেখে নেওয়া হয়? নারীজাতি যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল পাত্র সেইভাবে আমি কি তাকে সম্মান দিই? আমি কি তার সাথে ভাব-বিনিময় করি, হৃদয় ব্যক্ত করে কথা বলি?

২৮ আপনি হয়ত নিখুঁতভাবে সব অনুসরণ করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি যদি ক্রমাগত ও নম্রতা সহকারে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যান তাহলে আপনি দৃঢ় নিশ্চিত হতে পারেন যে এই প্রচেষ্টা আপনাকে এমন এক স্বামীতে পরিণত করবে যিনি স্ত্রীর কাছ থেকে গভীর সম্মান পান এবং ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করেন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. কিভাবে সম্মান অর্জন করা যায়, এবং যীশু খ্রীষ্টের ক্ষেত্রে তা কিভাবে উত্তমরূপে বর্ণনা করা হয়?

৩. ইফিষীয় ৫:৩৩ স্ত্রীর উপর কী বাধ্যবাধকতা স্থাপন করে এবং তা স্বামীর কাছ থেকে কী আশা করে?

৪. বাইবেল স্বামীকে কোন্‌ স্থানটি প্রদান করে?

৫. মস্তকের ব্যবহার সম্পর্কে স্বামীর কী উপলব্ধি করা উচিৎ, কাদের উদাহরণ তার অনুসরণ করা উচিৎ?

৬. যিহোবা ঈশ্বর ও যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে মস্তকের ব্যবহার সম্পর্কে স্বামী কী শিখতে পারেন?

৭, ৮. কোন্‌ কোন্‌ ক্ষেত্রে স্বামীরা তাদের মস্তকের উপযুক্ত ব্যবহার করতে অসমর্থ হন তার কিছু উল্লেখ করুন?

৯, ১০. পরিবার সম্পর্কে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার সময়ে, স্বামীর পক্ষে কার মনোভাবও বিবেচনা করা দরকার?

১১, ১২. (ক) জীবনের পার্থিব চাহিদাগুলি পূরণ করার ক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্ব কী? (খ) সেই সংস্থানগুলি কিভাবে প্রকৃতই যুগ্ম প্রচেষ্টায় করা হয়?

১৩. বস্তু সম্বন্ধে কোন্‌ দৃষ্টিভঙ্গি এক বিবাহিত দম্পতির এড়িয়ে যাওয়া দরকার এবং সেটি তাদের কিভাবে উপকার করতে পারে?

১৪. এক ব্যক্তির জীবনে বস্তুর চাহিদা অতি প্রয়োজনীয় কি না, তা কী নির্ধারণ করে?

১৫, ১৬. বাস্তুব চাহিদাগুলি উত্তমরূপে প্রদান করা ছাড়াও পরিবারকে সুখী রাখতে এক স্বামীর আর কী করা দরকার?

১৭-১৯. সহবাসের ক্ষেত্রে বাইবেলের পরামর্শ স্ত্রীকে “সমাদর” কর কিভাবে প্রযোজ্য হতে পারে?

২০. ইফিষীয় ৫:২৮ পদ অনুসারে, অন্যান্য কোন্‌ উপায়ে স্ত্রীকে সম্মান দেখানো যেতে পারে?

২১, ২২. স্ত্রীকে তার ভূমিকা পালন করে আনন্দ পেতে স্বামী কিভাবে সাহায্য করতে পারেন?

২৩. সাধারণভাবে বলতে গেলে, মানসিক দিক থেকে নারী ও পুরুষ কিভাবে আলাদা?

২৪. স্ত্রীয়ের কথা শোনা ও তার সাথে কথা বলা স্বামীর পক্ষে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

২৫, ২৬. (ক) একটি উপহার স্ত্রীকে কী বার্তা ব্যক্ত করে? (খ) স্ত্রীর কাছে কী প্রকারের উপহার সব থেকে মূল্যবান?

২৭, ২৮. (ক) স্বামী তার মস্তকের ব্যবহার উপযুক্তরূপে করছে কি না তা নির্ধারণ করতে তিনি নিজেকে কী জিজ্ঞাসা করতে পারেন? (খ) এই সম্পর্কে চিন্তিত হওয়া ভাল কেন?

[৪৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ছোট ছোট বস্তুও অনেক অর্থ রাখে