সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সন্তান থাকা –এক দায়িত্ব এবং এক পুরস্কার

সন্তান থাকা –এক দায়িত্ব এবং এক পুরস্কার

অধ্যায় ৭

সন্তান থাকা –এক দায়িত্ব এবং এক পুরস্কার

সন্তানদের জন্ম দেওয়া হল এক আশা যা রোমাঞ্চকর আবার গুরুত্বপূর্ণও। মানুষের জীবনে এটি এক দৈনন্দিনের ঘটনা, তা সত্য। তবুও, প্রতিটি জন্ম আশ্চর্যজনক জটিল প্রক্রিয়ার ফল। যখন আমরা এ সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারি তখন আমরা আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারি যে কেন অনুপ্রাণিত গীতরচক বলতে প্ররোচিত হন: “দেখ, সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার, গর্ব্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার।” (গীতসংহিতা ১২৭:৩) কী ঘটে তা বিবেচনা করুন।

পুরুষের শুক্রাণুর সাথে স্ত্রীর ডিম্বাণুর মিলন হয়। দুটি কোষ মিলে একটি কোষে পরিণত হয় এবং এর বিভাজন হতে শুরু করে। কোষটি, দুটিতে পরিণত হয়, দুটি কোষ চারটি কোষে, চারটি আবার আটটি কোষে পরিণত হয়, হিসাব করে দেখা গেছে যে অবশেষে এই একটি কোষই এক পরিণত ব্যক্তির দেহে ৬০,০০০,০০০,০০০,০০০টি কোষে পরিণত হয়! প্রথমে নতুন কোষগুলি একই রকমের থাকে, তারপর তারা বিভিন্ন প্রকৃতিতে পরিণত হয়—অস্থি কোষ, পেশী কোষ, স্নায়ু কোষ, যকৃৎ কোষ, চক্ষু কোষ, চর্ম কোষ ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রজননের রহস্য এবং পৃথকীকরণ সম্পর্কে কিছু জানা গেলেও বেশির ভাগ এখনও অজানা রয়ে গেছে। মূল কোষকে বিভাজন করতে কী প্ররোচিত করে? বিভাজন চলাকালীন, কোষগুলিকে বিভিন্ন প্রকারের হতে কী চালিত করে? বিশেষ আকার, গঠন, কাজের জন্য বিভিন্ন প্রকারের এই কোষগুলিকে একত্রিত হয়ে যকৃৎ, নাক, পায়ের কড়ে আঙ্গুল তৈরি করতে কী পরিচালিত করে? এই পরিবর্তনগুলি পূর্বনির্ধারিত সময়েই ঘটে থাকে। সময়সূচীকে কী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে? তাছাড়া, মায়ের জঠরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই ভ্রূণের জিনের গঠন মায়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সাধারণত তার দেহ বহিরাগত কোষকে গ্রহণ করে না, যেমন অন্যের দেহ থেকে নেওয়া চর্ম জোড়া দিলে বা অঙ্গ সংযোজন করলে হয়। কিন্তু জিনের দিক দিয়ে নিজস্ব নয় এমন ভ্রূণকে দেহ কেন বর্জন করে না, পরিবর্তে প্রায় ২৮০ দিন তাকে পুত্ত্রষ্ট দান করে?

এই সকল বিস্ময়কর কাজগুলি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী হয়, কারণ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর দ্বারা সৃষ্ট একটি কোষের মধ্যে যিহোবা ঈশ্বরই কার্যক্রম প্রস্তুত করেন। স্রষ্টাকে বলার সময় গীতরচক এই সম্বন্ধে ইঙ্গিত করেন: “তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল যখন সে সকলের একটীও ছিল না।”—গীতসংহিতা ১৩৯:১৬.

বৃদ্ধি এবং জন্ম

ভ্রূণ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চার সপ্তাহের মধ্যে এর মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্তসংবাহন ব্যবস্থা যাতে ইতিমধ্যেই গঠিত শিরাতে হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করে চলে তা তৈরি হয়ে যায়। ছয় সপ্তাহের জন্য এক ঝিল্লীময় থলির (yolk sac) দ্বারা রক্ত তৈরি হয়; তারপর এই কাজটি যকৃৎ করে, যে কাজটি অবশেষে অস্থিমজ্জা করে থাকে। পঞ্চম সপ্তাহে হাত ও পা গঠন হতে আরম্ভ করে; এরপর আরও তিন সপ্তাহের মধ্যে আঙ্গুল ও পায়ের আঙ্গুলগুলি দেখা যায়। সপ্তম সপ্তাহের মধ্যে মূল পেশীগুলিসহ, চোখ, কান, নাক, মুখের গঠন হয়ে যায়।

গীতরচক যিহোবাকে বলেন: “আমার অস্থি তোমা হইতে লুক্কায়িত ছিল না, যখন আমি গোপনে নির্ম্মিত হইতেছিলাম।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৫, NW) নবম সপ্তাহে অস্থিপঞ্জর গঠন হওয়ার সাথে সাথে তরুণাস্থিগুলি অস্থিতে পরিণত হয় এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই শিশুকে এখন ভ্রূণের পরিবর্তে প্রাথমিক আকারপ্রাপ্ত ভ্রূণ (fetus) বলা হয়। “বস্তুতঃ তুমিই আমার মর্ম্ম রচনা করিয়াছ।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৩) ঐশিক প্রক্রিয়া যেটি তা ঘটায় সেটি চতুর্থ মাসে হয় এবং এখন বৃক্কগুলি রক্ত শোধনের কাজ করে।

ইতিমধ্যে বাড়ন্ত শিশুটি নড়াচড়া করতে ও পাক খেতে আরম্ভ করে, যখন তার হাতের তালুতে বা পায়ের তলায় সুড়সুড়ি লাগে তখন তা হাত মুঠো করে ও পায়ের আঙ্গুল মোড়ে। আঙ্গুল ও বুড়ো আঙ্গুলের সাহায্যে কোন কিছু ধরে, বুড়ো আঙ্গুল চোষে এবং এইভাবে সে পরে মায়ের দুধ খাওয়ার জন্য যে পেশীগুলি ব্যবহার করা হবে তার ব্যায়াম করে। সে হেঁচকি তুললে মা সেই লাফান অনুভব করে। ছয় মাসের মধ্যে বহু অঙ্গগুলি ফলতঃ সম্পূর্ণ গঠিত হয়ে যায়। নাসারন্ধ্র খুলে যায়, ভ্রূ দেখা দেয় আর খুব শীঘ্রই চোখও খুলে যাবে এবং কান কাজ করবে ফলে গর্ভে থাকাকালীনও শিশু জোর শব্দে চমকে উঠতে পারবে।

চল্লিশ সপ্তাহে প্রসববেদনা আরম্ভ হয়। মায়ের গর্ভাশয়ের মধ্যস্থ পেশীগুলি সঙ্কুচিত হয় আর শিশু জগতে আসার পথে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়ার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার মস্তকে চাপ পড়াতে তা বিকৃত হয়ে যায়, কিন্তু যেহেতু তখনও এর মাথার খুলির হাড় একত্রীভূত থাকে না তাই প্রসবের পর মাথাটি নিজ আকারে ফিরে আসে। এতক্ষণ পর্যন্ত মা তার শিশুর জন্য সবকিছুই করছিল: অক্সিজেন, খাদ্য, সুরক্ষা, উষ্ণতা দিচ্ছিল এবং তার বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করছিল। কিন্তু এখন শিশুকে নিজের জন্য নিজেকেই কাজ করতে হবে, খুব শীঘ্রই, তা না হলে সে মারা যাবে।

তার শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া শুরু করতে হবে যাতে ফুসফুস রক্তে অক্সিজেন দিতে পারে। কিন্তু এর জন্য ক্ষণিকের মধ্যে আর একটি বিরাট পরিবর্তন হওয়া দরকার: রক্ত সংবাহনের পথের পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন! ভ্রূণ গর্ভাশয়ে থাকার সময়, হৃৎপিণ্ডের পর্দায় একটি ছিদ্র থাকে। সেই পর্দাটি দক্ষিণ প্রকোষ্ঠকে বাম প্রকোষ্ঠ থেকে পৃথক রাখে এবং বেশির ভাগ রক্তকে শিশুর ফুসফুসে যেতে বাধা দেয়। আর প্রবাহিত রক্তের বেশির ভাগ অংশকে একটি বড় ধমনী ফুসফুসের পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যায়। গর্ভাশয়ে থাকাকালীন মাত্র ১০ শতাংশ রক্ত ফুসফুসে যায়; কিন্তু জন্মের পর সমস্ত রক্তেরই ফুসেফুসে যাওয়া দরকার এবং খুব শীঘ্রই! তা সম্পাদন করতে, যে ধমনীটি ফুসফুসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সেটি জন্মাবার পর নিমেষের মধ্যে সঙ্কুচিত হয়ে যায় ও তার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত রক্ত এখন ফুসফুসে যেতে আরম্ভ করে। ইতিমধ্যে হৃৎপিণ্ডের ছিদ্রটিও বন্ধ হয়ে যায় এবং ডানদিকের পাম্প করা সমস্ত রক্ত অক্সিজেন প্রাপ্ত হতে ফুসফুসে যায়। শিশু শ্বাস নিলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয়, এই চমকপ্রদ পরিবর্তনগুলি ঘটে এবং শিশু বেঁচে থাকে! অনুপ্রাণিত গীতরচক যেমন এর অপূর্ব পরিসমাপ্তি করেন: “তুমি মাতৃগর্ব্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে। আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত।”—গীতসংহিতা ১৩৯:১৩, ১৪.

১০ যিহোবার এই পুরস্কারকে বিবাহিত দম্পতিদের কত কৃতজ্ঞতা নিয়ে দেখা দরকার! মানুষকে জন্মদান করার শক্তি, যে মানবশিশু দুজনেরই অংশ কিন্তু দুজনের থেকে পৃথক! প্রকৃতই ‘যিহোবাদত্ত অধিকার’!

‘অধিকারের’ যত্ন নেওয়া

১১ নীতির থেকেও আরও বেশি কিছু কারণ যিহোবা ঈশ্বরকে বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌনসংসর্গ সীমিত থাকার নিয়মটি স্থাপন করতে পরিচালিত করে। তাঁর মনে শিশুদের আগমনের বিষয়টিও ছিল। শিশুর চাই বাবা ও মা, যারা পরস্পরকে ভালবাসে এবং সন্তানকেও ভালবাসবে ও যত্ন করবে। নবজাত শিশুর দরকার আন্তরিকতা ও ঘরের সুরক্ষা, যে ঘরে তার বাবামা তাকে চায় এবং তার বৃদ্ধি ও ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি প্রদান করে। স্বামী ও স্ত্রী যারা সন্তান লাভের জন্য বিবেচনা করছেন তাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা দরকার: আমরা কি সন্তান চাই? আমরা কি তার চাহিদাগুলি পূরণ করতে পারব—শুধুমাত্র দৈহিকরূপে নয়, মানসিক ও আত্মিকভাবেও? আমরা কি তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারব, অনুসরণ করার জন্য উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে পারব? বাবামা হতে হলে যে দায়িত্ব আসে, যে ত্যাগস্বীকার করতে হয়, তা গ্রহণ করতে কি আমরা ইচ্ছুক? শিশু হিসাবে আমাদের হয়ত মনে হয়েছে যে বাবামা আমাদের বেঁধে রেখেছে, কিন্তু আমরা যখন বাবামা হই তখন উপলব্ধি করি যে ছেলেমেয়ে মানুষ করে তোলা সত্যি কত সময়-সাপেক্ষ ব্যাপার। তবুও বাবামা হওয়ার দায়িত্ব থেকে মহা আনন্দ আসতে পারে।

১২ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে—বাবামার দ্বারা বা জীববিজ্ঞানের পরিস্থিতির দ্বারাই হোক। আপনি যিনি স্ত্রী, এখন অন্তঃস্বত্ত্বা। ‘যিহোবাদত্ত অধিকারকে’ আপনার যত্ন নেওয়া শুরু হল। কিছু জিনিস আপনাকে খেতেই হবে, অন্য কিছু জিনিস আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে বা কম পরিমাণে খেতে হবে। যে খাদ্যগুলি আয়রন সমৃদ্ধ a সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গর্ভাশয়ে থাকাকালীন শিশু যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন সংগ্রহ করে যাতে জন্মাবার পর ছয় মাস অবধি থাকতে পারে। আপনার শিশুর অস্থি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম প্রদান করতে আপনার দুধ (পনিরও ভাল) বেশি খাওয়া দরকার। ভারসাম্য রেখে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে b তা অতিরিক্ত ওজন বাড়তে দেবে না। সত্যি, আপনি হয়ত আপনাদের দুজনের জন্য খাচ্ছেন, আপনাদের দুজনের মধ্যে একজন কিন্তু খুবই ছোট্ট!

১৩ অন্যান্য বিষয়গুলি বিবেচনা করা যেতেও পারে বা না পারে, সেটি নির্ভর করে আপনি যেভাবে বাস করেন তার উপর। মদ্য জাতীয় পানীয় ফিটাসে অ্যালকোহল পাঠায়, সেইজন্য সাবধানতা গ্রহণ করতে হবে কারণ এর মাত্রা অতিরিক্ত হলে মানসিক ও দৈহিকরূপে শিশুর বৃদ্ধি হ্রাস হতে পারে। কিছু শিশুরা মত্তাবস্থায় জন্মায় কারণ তাদের মায়েরা প্রচুর পরিমাণে মদ্য পান করত। ধূমপান করলে ফিটাসের রক্তে নিকোটিন জমে এবং রক্তে অক্সিজেনের বদলে কার্বনমনোক্সাইড আসে। ফলে এমন কি জন্মাবার আগেই শিশুর স্বাস্থ্য চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। যেসব স্ত্রীলোকেরা ধূমপান করে তাদের মধ্যে আপনা থেকে গর্ভপাত ও মৃতাবস্থায় শিশু জন্মদান সচরাচর দেখা যায়। মায়ের নেশাকর ওষুধ নেওয়ার জন্য শিশুও আসক্তি নিয়ে জন্মায় এবং নেশাকর নয় এমন কিছু ওষুধ চিকিৎসার জন্য নিলেও তা বিপজ্জনক হতে পারে, হয়ত তা শিশুকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে। এমন কি অতিমাত্রায় কফি পান করার দরুনও ক্ষতি হয় বলে সন্দেহ করা হয়।

১৪ তাছাড়া, মায়ের মানসিক চাপ তার হরমোন ক্ষরণের পরিবর্তন করতে পারে এবং ফিটাসকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে, ফলে নবজাত শিশুকে চঞ্চল ও বিরক্তিকর মনোভাবাপন্ন শিশুতে পরিণত করে। বাড়ন্ত শিশুকে ‘মাতৃগর্ভে আড়াল করে রাখা’ হলেও এটি ভাবা ভুল হবে যে তার চার পাশের জগতের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। মায়ের দ্বারা সে প্রভাবিত হতে পারে; বাইরের জগতের সাথে মাই হচ্ছে একমাত্র তার সংযোগের মাধ্যম এবং সেটিই ভাল বা মন্দ প্রভাবের ক্ষেত্রে মাকে মুখ্যত “চালকের আসনে” বসায়। মা কিভাবে নিজের যত্ন নেয় এবং পরিস্থিতির প্রতি কিরূপ প্রতিক্রিয়া করে তা পার্থক্য আনতে পারে। তার চারিপাশের লোকেদের কাছ থেকে সহযোগিতা এবং বিশেষভাবে তার স্বামীর ভালবাসা ও যত্নের যে তার প্রয়োজন সে সম্বন্ধে বলা নিষ্প্রোয়জন।—তুলনা করুন ১ শমূয়েল ৪:১৯.

যে সিদ্ধান্তগুলি আপনাকে করতেই হবে

১৫ আপনি কি চান, আপনার শিশু হাসপাতালে না গৃহেতে হোক? কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেছে নেওয়ার খুব কমই সুযোগ থাকে। বহু জায়গায় হয়ত হাসপাতালই নেই। আবার অন্যান্য জায়গায় ঘরেতে বাচ্চা হওয়া খুবই বিরল ও ধাত্রীদের মত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহায্যের অভাবের জন্য বিপদের ঝুঁকিও থাকতে পারে। যেখানে সম্ভব, গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে নেওয়া ভাল, এই জানার জন্য যে আপনার সাধারণ ডেলিভারি হবে বা ডেলিভারির সময় জটিল সমস্যা থাকবে।

১৬ আপনি কি চান অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে শিশু হোক অথবা স্বাভাবিকরূপে শিশুর জন্ম হোক? এই সম্পর্কে সুবিধা ও অসুবিধাগুলি বিবেচনা করার পর আপনি ও আপনার স্বামীর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। স্বাভাবিকরূপে শিশুর জন্ম স্বামীকে হয়ত এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জড়িত করতে পারে। শিশুকে সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কাছে রাখা হয়। যদি পরীক্ষা জানায় যে প্রসব কোন জটিল সমস্যা ছাড়াই হবে তাহলে অনেকে মনে করেন এই সুবিধাগুলিকে গভীররূপে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিছু গবেষক বলেন, যে শিশুরা স্বাভাবিক প্রসবের সময় শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে জন্মায়, তাদের কমই আবেগজনিত ও মানসিক বিকারগত শারীরিক ব্যাধি হয়।

১৭সাইকোলজি টুডে, পত্রিকার ডিসেম্বর ১৯৭৭ সালের সংখ্যা বলে:

“বহু বছর ধরে মনস্তত্ত্ববিদেরা জানেন যে শিশুর জীবনের প্রথম বছর পরবর্তীকালে তার মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধিতে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। এখন বোঝা যায় যে শিশুর জীবনের প্রথম দিন—হয়ত এমন কি প্রথম ৬০ মিনিট—এক চূড়ান্ত মুহূর্তের মত। শিশুর প্রতি মা যে মানসিক বন্ধন গড়ে তোলে ও যে যত্ন নিতে আরম্ভ করে তা বিশেষভাবে ডেলিভারির পর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক গবেষণা এও দেখায় যে শিশুর প্রতি মায়ের মনোভাব, তার প্রতি মায়ের দায়িত্ব, মাতৃত্বের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে প্রথম কয়েক ঘন্টার অনেক অবদান থাকে।”

১৮ যদি মা প্রসবের সময় স্বাভাবিক অ্যানেস্থেসিয়া না নিয়ে থাকে তাহলে শিশু সজাগ থাকবে, চোখ খোলা থাকবে, এদিক ওদিক তাকাবে, নড়াচড়া করলে দেখবে, মানুষের স্বর শুনলে সেদিকে ফিরে তাকাবে আর বিশেষকরে উঁচু গলার স্ত্রীলোকের স্বরের প্রতি বেশি সাড়া দেবে। মায়ের চাহনি শিশু খুব তাড়াতাড়ি চিনে ফেলে। সেটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়, কারণ কিছু সমীক্ষায় মায়েরা বলেন যে, বাচ্চারা তাদের দিকে একবার দেখলেই তারা তাদের প্রতি আরও ঘনিষ্ঠ বোধ করেন। দেহের স্পর্শ, জন্মাবার ঠিক পরেই মা ও শিশুর মধ্যে পরস্পরের ছোঁয়া উভয়ের জন্যেই খুব উপকার আনে বলে বিবেচনা করা হয়।

১৯ গবেষকেরা দাবি করেন যে চিকিৎসা কেন্দ্রে শিশুদের সমস্যাগুলির চিকিৎসা করার সময় দেখা গেছে যে, সেই সমস্যাগুলি শিশুর জীবনের প্রথম কয়েক ঘন্টার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। যে সব শিশুদের জন্মাবার সময় হাসপাতালের নির্দিষ্ট চিকিৎসা করা হয়েছে এবং যাদের তৎক্ষণাৎ মায়ের কাছে দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে যেসব শিশুরা স্বাভাবিকভাবে জন্মেছে তারা এক মাস পরে বেশি উন্নতি করেছে। সাইকোলজি টুডে পত্রিকাটি বলে, “আরও চমকপ্রদ যে দীর্ঘ-সম্পর্কযুক্ত মায়েদের শিশুদের, পাঁচ বছর বয়সে বৈশিষ্ট্যসূচক অধিক আইকিউ [বুদ্ধির প্রমাণ] দেখা যায় এবং ভাষার পরীক্ষাতেও বেশি ভাল করে সেই সব শিশুদের থেকে যাদের হাসপাতালে নির্দিষ্ট চিকিৎসা করা হয়।”

২০ যাইহোক, এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই পরিস্থিতিকে ভালভাবে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের এই বিষয়টি ভুলে যাওয়া চলবে না যে আমাদের প্রথম পিতামাতা উত্তরাধিকারসূত্রে অসিদ্ধতা দিয়ে গেছে। সেইজন্য অবশ্যই বর্তমানে “স্বাভাবিক জন্মদান” তার স্বাভাবিকতা কিছুটা হারিয়ে ফেলে এবং উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া খুঁতগুলি সমস্যাও আনতে পারে। (আদিপুস্তক ৩:১৬; ৩৫:১৬-১৯; ৩৮:২৭-২৯) আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি ও আপনার পক্ষে আপনি যেটি ভাল মনে করেন তার উপরেই আপনার সিদ্ধান্ত নির্ভর করুক, সেটি অপরের কথিত “আদর্শ” জন্মদান হোক বা না হোক।

২১ আপনি কি শিশুকে স্তন্যদুগ্ধ পান করাবেন? আপনার ও শিশুর পক্ষে এতে অনেক উপকার হবে। মায়ের দুধ হল শিশুর জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী খাদ্য। দুধ সহজে হজম হয়, সংক্রমণ, পেটের গোলমাল থেকে রক্ষা করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট রোধ করে। প্রথম কয়েক দিন স্তন কোলোস্ট্রাম নিঃসৃত করে, হলদে রঙের এক তরল পদার্থ যা বিশেষকরে শিশুর জন্য ভাল (১) এতে চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় পদার্থ কম থাকে ফলে সহজে হজম করা যায়, (২) কিছুদিন পরে আসা মায়ের দুধের থেকে এটি প্রতিরোধের ক্ষমতার দিক দিয়ে খুবই শক্তিশালী এবং (৩) তা পেট পরিষ্কারক হিসাবেও অল্প কাজ করে যা জন্মের আগে শিশুর পেটে জমা হওয়া কোষ, শ্লেষ্মা এবং পিত্তকে পরিষ্কার করে দেয়।

২ স্তন্যদুগ্ধ পান করালে মায়ের উপকার হয়। শিশুর স্তন্যপান গর্ভাশয়কে সঙ্কুচিত করায়, ফলে মায়ের রক্তপাত হওয়া কমে যায়। স্তন্যপান স্তনকে আরও দুধ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে এবং যে মায়েরা মনে করতেন যে তাদের যথেষ্ট দুধ নেই তারা দেখেন যে, দুধের এখন অভাব নেই। নিয়ত স্তন্যদুগ্ধ পান করালে কোন কোন ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্ব নিঃসৃত হতে ও রজঃস্রাব হতে প্রতিরোধ করে, যাকে স্বাভাবিক জন্মনিয়ন্ত্রক হিসাবে বলা যেতে পারে। অ্যামেরিক্যান ক্যাণ্সার সোসাইটি বলে “যে মায়েরা স্তন্যদুগ্ধ পান করায় তাদের ক্ষেত্রে কমই স্তনের ক্যাণ্সার দেখা যায়।” স্তন্যদুগ্ধ পান করালে পরিবারের আয়ব্যয়ের ক্ষেত্রেও উপকার হয়।

সন্তানের বৃদ্ধি—আপনি কিভাবে বাণের লক্ষ্য স্থির করবেন?

২৩ “বীরের হস্তে যেমন বাণ সকল, তেমনি একজনের যৌবনের সন্তানগণ। আনন্দিত সেই পুরুষ, যাহার তূণ তাদৃশ বাণে পরিপূর্ণ!” (গীতসংহিতা ১২৭:৪, ৫, অ্যান অ্যামেরিকান ট্রান্সলেশন) বাণ ধনুক ছাড়ার সময়ে কত নিপুণভাবে সেটিকে লক্ষ্যে স্থির করা হয়েছে তার উপরেই বাণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যত্ন ও দক্ষতার সাথে বাণকে লক্ষ্যে স্থির করা দরকার যাতে সেটি লক্ষ্যভেদ করতে পারে। সেইরূপে, পিতামাতা হিসাবে আপনার সন্তানের জীবনের আরম্ভ, আপনি কিভাবে শুরু করবেন সেই সম্বন্ধে বিজ্ঞতার সাথে ও প্রার্থনাসহকারে চিন্তা করা আপনাদের পক্ষে জরুরী। ছেলে বা মেয়ে আপনাদের তত্ত্বাবধানের বাইরে গেলেও কি তারা এক ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত হবে, যাদের অপরেরা সম্মান করবে এবং যা যিহোবার সম্মান আনবে?

২৪ শিশুর যত্ন ও শিক্ষা সম্পর্কে শিশুর আগমনের পূর্বেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন। পিতামাতারা সাধারণত প্রথমজাত সন্তানের সমস্ত জগৎ হয়ে থাকেন। সেই জগৎ কিরূপ হবে? তা কি দেখাবে যে পিতামাতারা ঈশ্বরের বাক্যের এই পরামর্শটি হৃদয়ঙ্গম করেছেন: “সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক। তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।” (ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২) ঘরের জীবন যে কোন প্রকারেরই হোক, তা শিশুর জীবনে প্রতিফলিত হবে। আপনার সন্তানের জগতকে শান্তিময়, সুরক্ষিত, স্নেহ ও ভালবাসায়পূর্ণ এক জগৎ করতে প্রচেষ্টা করুন। যে সন্তানকে ভালবাসা দিয়ে বড় করা হয় সে এই গুণাবলিগুলি গ্রহণ করবে আর সেইগুলি তার আবেগকে সেইরূপে গঠন করবে। আপনার অনুভূতিকে অনুভব করা হবে ও আপনার উদাহরণকে অনুসরণ করা হবে। আমাদের স্রষ্টার জিন সম্পর্কীয় নিয়ম গর্ভাশয়ে শিশুর বৃদ্ধির জন্য অপূর্ব ব্যবস্থা করেছে; গর্ভাশয়ের বাইরে আপনি কিভাবে তার গঠন করবেন? আপনি ঘরেতে যেরূপ পরিস্থিতি প্রদান করবেন তার উপর অনেকটা নির্ভর করবে। পরিস্থিতি ও তার সাথে জিন নির্ধারণ করে যে শিশু পরে কী প্রকৃতির ব্যক্তি হয়ে উঠবে। “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।”—হিতোপদেশ ২২:৬.

২৫ স্ত্রীলোক বা পুরুষ দুজনের মধ্যে কেউই একটি ঘাস সৃষ্টি করতে পারে না কিন্তু দুজনে মিলে আর একটি মানুষ তৈরি করতে পারে, যে কিনা অসীম জটিল এবং পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা! এক বিস্ময়কর সম্পাদন, এতই বিস্ময়কর যে এর সাথে আসা দায়িত্বের পবিত্রতাকে উপলব্ধি করতে যে আজ অনেকেই ব্যর্থ হয়, তা বিশ্বাস করা কঠিন! লোকে ফুলগাছ লাগায়, তাতে জল দেয়, সার দেয়, পোকামাকড় থেকে গাছকে বাঁচায়—এই সব কিছুই করে সুন্দর একটি বাগানের জন্য। তাই আমরা কি সন্তানদের আরও সুন্দর করতে আরও বেশি সময় ও আরও বেশি প্রচেষ্টা ব্যয় করব না?

২৬ বিবাহিত দম্পতিদের সন্তান থাকার অধিকার আছে। সেই অনুসারে তাদের সন্তানদেরও পিতামাতা থাকার অধিকার আছে, শুধু নামে মাত্র নয় কিন্তু বাস্তবে। ঈশ্বরের নিকট উৎসর্গীকৃত এক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি একজন শিষ্যকরণের আশায় প্রচুর সময় ও শক্তি ব্যয় করে থাকেন, কিন্তু তবুও সবসময় সফল হন না। খ্রীষ্টীয় পিতামাতারা কি ‘সন্তানদের প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাদের মানুষ করে তুলতে’ আরও বেশি সময় ব্যয় করবেন না? (ইফিষীয় ৬:৪) যদি তারা একটি সন্তানকে জীবনদাতা, যিহোবা ঈশ্বরের উত্তম সেবক হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে কি তা আনন্দের কারণ হবে না? তখনই, সেই ছেলে বা মেয়েকে তাদের জন্ম দেওয়া হবে নিশ্চয় প্রচুর পুরস্কার স্বরূপ।—হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫.

২৭গীতসংহিতা ১২৮:৩ পদ সন্তানদের জিত বৃক্ষের সাথে তুলনা করেছে: “তোমার গৃহের অন্তঃপুরে তোমার স্ত্রী ফলবতী দ্রাক্ষালতার ন্যায় হইবে, তোমার মেজের চারিদিকে তোমার সন্তানগণ জিত বৃক্ষের চারার ন্যায় হইবে।” গাছকে চালনা করে বিভিন্ন আকার দেওয়া যেতে পারে। কোন কোন গাছকে দেওয়ালের গায়ে বাড়তে দেওয়া হয়। আবার কোন কোনটি জমির উপর ছড়িয়ে বাড়তে দেওয়া হয়। কিছু গাছ আবার ছোট হয় ও তাদের মূলকে কেটেছেঁটে, সঙ্কুচিত করে আর বাড়তে দেওয়া হয় না, যেমন বনসাই-এর ক্ষেত্রে করা হয়। শিশুবস্থায় শিক্ষাদান কিভাবে শিশুকে গঠন করে তোলে সেই সম্পর্কে প্রাচীন এক প্রবাদ বাক্য জোর দিয়ে বলে: “যেভাবে ডাল নোয়ানো হয় সেইভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে।” এখানে ভারসাম্য রাখার প্রয়োজন। এক দিকে, ধার্মিক মান অনুসারে চলার জন্য সন্তানের নির্দেশের প্রয়োজন। কিন্তু সেই সঙ্গে, পিতামাতার পূর্বে ধারণা করা এক আদর্শ অনুযায়ী সন্তান যে ব্যক্তিত্ব প্রদর্শন করবেই তাও আশা করা উচিৎ নয়। আপনি জিত বৃক্ষকে ডুমুর ফল দেওয়াতে পারেন না। আপনার সন্তানকে সঠিকরূপে শিক্ষা দিন কিন্তু তাকে আপনার পূর্বনির্ধারিত ছাঁচে ফেলবার চেষ্টা করবেন না যা তার স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বকে ও উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পুরস্কারগুলিকে স্বাভাবিকরূপে প্রকাশ হতে দেবে না। আপনি যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাকে জানবার জন্য সময় ব্যয় করুন। যেমন চারা গাছকে করা হয়, তেমনই আপনার সন্তানকে রক্ষা করতে এবং সঠিক পথে চালনা করতে যথেষ্ট দৃঢ় নির্দেশ দিন, কিন্তু ভালোর জন্য সন্তানের সম্পূর্ণ বৃদ্ধিকে হ্রাস না করে দিয়ে যথেষ্ট নমনীয় হোন।

যিহোবার কাছ থেকে এক পুরস্কার

২৮ প্রাচীনকালের যাকোব তার ছেলেমেয়েদের যত্ন নেওয়া সম্পর্কে চিন্তা প্রদর্শন করেন। যখন যাত্রা করতে বলা হয় সেই যাত্রার গতি হয়ত ছেলেমেয়েদের জন্য বেশি হওয়াতে, যিনি তাকে যাত্রা করতে বলেছিলেন তাকে তিনি বলেন: “আমার প্রভু জানেন, এই বালকগণ কোমল, এবং দুগ্ধবতী মেষী ও গাভী সকল আমার সঙ্গে আছে; এক দিন মাত্র বেগে চালাইলে সকল পালই মরিবে। নিবেদন করি, হে আমার প্রভু, আপনি আপন দাসের অগ্রে গমন করুন; আর আমি যাবৎ সেয়ীরে আমার প্রভুর নিকটে উপস্থিত না হই, তাবৎ আমার অগ্রবর্ত্তী পশুগণের চলিবার শক্তি অনুসারে এবং এই বালকগণের শক্তি অনুসারে ধীরে ধীরে চালাই।” এষৌ, তার ভাইয়ের সাথে এর আগে দেখা করার সময়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “ইহারা তোমার কে?” যাকোবের উত্তর ছিল, “ঈশ্বর অনুগ্রহ করিয়া আপনার দাসকে এই সকল সন্তান দিয়াছেন।” (আদিপুস্তক ৩৩:৫, ১৩, ১৪) বর্তমানে পিতামাতারা ছেলেমেয়েদের প্রতি শুধুমাত্র দয়াপূর্ণ বিবেচনা দেখাবেন তা নয় কিন্তু যাকোব তাদের যেভাবে দেখেছিলেন সেইভাবে দেখবেন—যিহোবার কাছ থেকে অনুগ্রহ হিসাবে। এক পুরুষ বিবাহ করার পূর্বে নিশ্চয় গভীরভাবে ভেবে দেখবেন যে তিনি স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ করতে পারবেন কি না। বাইবেল পরামর্শ দেয়: “বাহিরে প্রথমে তোমার কার্য্যের আয়োজন কর এবং ক্ষেত্রে সমস্ত কিছুর প্রস্তুত কর; তারপর তোমার ঘর বাঁধ।” (হিতোপদেশ ২৪:২৭, নিউ ইংলিশ বাইবেল) এই ব্যবহারিক পরামর্শ অনুসারে এক পুরুষের বিবাহ ও বৈবাহিক জীবনের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত হওয়া দরকার। তখন, যদি অপরিকল্পিত গর্ভসঞ্চারও হয় তখন সেটিকে আনন্দ হিসাবে গ্রহণ করা হবে, আর্থিক ভার হিসাবে মনে করা হবে না।

২৯ আমাদের সন্তান থাকার যোগ্যতা আছে কি না তা ভালভাবে বিবেচনা করা দরকার, শুধুমাত্র প্রথমজাত সন্তানের ক্ষেত্রে নয়, পরে যারা আসে তাদের ক্ষেত্রেও। পিতামাতাদের ইতিমধ্যেই যে সন্তানেরা আছে তাদের খাওয়াতে, যত্ন নিতে, শিক্ষা দিতে কি তারা কষ্টবোধ করছেন? তাহলে পরিবার যাতে আর বৃদ্ধি না পায় সেইজন্য কোন্‌ প্রকারের আত্ম-সংযম তারা গ্রহণ করতে পারেন সে সম্বন্ধে তলিয়ে দেখার জন্য স্রষ্টার প্রতি সম্মান ও তার সাথে প্রেমের গুণ নিশ্চয় তাদের প্ররোচিত করবে।

৩০ বাস্তবে শিশুটি কার? এক অর্থে সে আপনার। কিন্তু আর এক অর্থে শিশুটি স্রষ্টার। আপনার পিতামাতাকে যেমন আপনার প্রতি যত্ন নেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছিল ঠিক সেইরকমই শিশুর যত্ন নিতে আপনাকে ভার দেওয়া হয়েছে। আপনি আপনার পিতামাতার সম্পত্তি নন যে তারা আপনাকে যেভাবে খুশি ব্যবহার করবেন; সেই অর্থে আপনার সন্তানও আপনার সম্পত্তি নয়। গর্ভসঞ্চারের মুহূর্ত, না গর্ভাশয়ে সন্তানের বৃদ্ধি কিছুই পিতামাতারা নির্দেশ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। যে অপূর্ব প্রক্রিয়া এতে সম্বন্ধযুক্ত, তা তারা না দেখতে পারেন বা সম্পূর্ণ বুঝতে পারেন। (গীতসংহিতা ১৩৯:১৩, ১৫; উপদেশক ১১:৫) যদি কোন দৈহিক অসম্পূর্ণতার কারণে গর্ভস্রাব বা মৃতাবস্থায় শিশু জন্মায়, তারা সেই মৃত শিশুকে জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। সুতরাং আমাদের নম্রতার সাথে স্বীকার করতে হবে যে ঈশ্বর আমাদের সকলের জীবনদাতা আর আমরা তারই: “পৃথিবী ও তাহার সমস্ত বস্তু সদাপ্রভুরই; জগৎ ও তন্নিবাসিগণ তাঁহার।”—গীতসংহিতা ২৪:১.

৩১ যে সন্তানদের আপনি জগতে আনেন তাদের জন্য আপনি দায়ী এবং যেভাবে আপনি তাদের মানুষ করে তুলবেন সেই সম্পর্কে স্রষ্টার কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি পৃথিবীকে সৃষ্টি করেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে লোকে বসবাস করুক তাই তিনি আমাদের প্রথম মানব পিতামাতাকে প্রজনন ক্ষমতা দেন যাতে তাঁর উদ্দেশ্য সাধন হয়। ঈশ্বরের কাছ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের চলে আসা তাদের সেই শত্রুর পক্ষে স্থাপন করে, যে শত্রু স্বর্গে ও পৃথিবীতে পরিবারগুলির প্রতি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের অধিকারের উপর প্রশ্ন তুলেছিল। স্রষ্টার প্রতি অনুগত ব্যক্তি হতে আপনার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিয়ে আপনি ও আপনার পরিবার যিহোবা ঈশ্বরকে সত্য এবং শত্রুকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে পারেন। যেমন হিতোপদেশ ২৭:১১ পদ বলে: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।”

৩২ ছেলেমেয়েদের প্রতি আপনার দায়িত্ব ও তার সাথে ঈশ্বরের কাছে আপনার দায়িত্ব পালন, আপনার জীবনে এক প্রকৃত সফলতার উপলব্ধি আনতে পারে। গীতসংহিতা ১২৭:৩ পদের কথাগুলি আপনিও সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে বলতে পারেন: “গর্ব্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার।”

a যেমন মাংস, সবুজ ও হলুদ রঙের শাক-সবজি।

b এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে স্টার্চ জাতীয় খাদ্য এবং যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা আছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১-৪. (ক) গর্ভাশয়ে শিশুর বৃদ্ধি সম্পর্কে কিছু আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? (খ) এই সম্পর্কে জ্ঞান কিভাবে আপনাকে গীতসংহিতা ১২৭:৩ পদকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে?

৫-৮. গর্ভাবস্থার চতুর্থ সপ্তাহ থেকে শিশুর জন্ম অবধি গর্ভাশয়ে কী কী ঘটে?

৯. গর্ভাশয়ের বাইরে শিশুর বাঁচতে হলে, শীঘ্রই কী কী পরিবর্তন হওয়া দরকার?

১০. গর্ভাশয়ে শিশুর বিস্ময়কর বৃদ্ধির বিষয়ে বিবেচনা করে, ছেলেমেয়ে সম্পর্কে পিতামাতাদের কিরূপ মনে করা উচিৎ?

১১. যারা বৈবাহিক জীবন শুরু করবেন বলে বিবেচনা করছেন তাদের কোন্‌ প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা দরকার এবং কেন?

১২-১৪. স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে শিশুর বৃদ্ধির সে কিভাবে সহায়তা করতে পারে (ক) খাদ্যের মাধ্যমে? (খ) মদ্য জাতীয় পানীয়, তামাক ও নেশাকর ওষুধের ক্ষেত্রে সে কী করে তার দ্বারা? (গ) তার আবেগ সংযমের দ্বারা?

১৫, ১৬. স্থান এবং শিশু জন্মদানের রীতি সম্পর্কে কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হতে পারে?

১৭-১৯. জন্মের পরে যত শীঘ্র সম্ভব শিশু মায়ের কাছে থাকলে যে উপকার হয়, সেই সম্পর্কে গবেষণা কী প্রকাশ করে?

২০. এই বিষয়গুলিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে, আরও কোন্‌ বিষয়টি মনে রাখতে হবে?

২১, ২২. স্তন্যদুগ্ধ পান করার সুবিধাগুলি কী কী?

২৩. গীতসংহিতা ১২৭:৪, ৫ পদে শিশু শিক্ষা সম্পর্কে কোন্‌ নীতিটি ইঙ্গিত করা আছে?

২৪. (ক) সন্তানদের জন্য ঘরের পরিস্থিতি কিরূপ করতে পিতামাতারা চেষ্টা করবেন? (খ) এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

২৫, ২৬. পিতামাতার পক্ষে সন্তানদের জন্য যথেষ্ট সময় ও শক্তি ব্যয় করা কেন যুক্তিযুক্ত?

২৭. সন্তানকে মানুষ করে তোলার সময় সন্তানের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কেন বিবেচনা করা প্রয়োজন?

২৮. আদিপুস্তক ৩৩:৫, ১৩, ১৪ পদে সন্তানদের প্রতি যাকোবের চিন্তা থেকে আমরা কিভাবে উপকৃত হতে পারি?

২৯. সন্তান লাভ করার সম্পর্কে আগে থেকে কেন গভীরভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন?

৩০. (ক) আমরা কেন বলতে পারি যে শিশু বাস্তবে ঈশ্বরেরই? (খ) এটি পিতামাতার দৃষ্টিভঙ্গিকে কিভাবে প্রভাবিত করা উচিৎ?

৩১, ৩২. (ক) ঈশ্বরের সামনে পিতামাতার কী দায়িত্ব আছে? (খ) সেই দায়িত্বকে উপযুক্তরূপে পালন করলে কী ফল হয়?

[৯৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

এখন ঘনিষ্ঠতা পরবর্তীকালে বংশের ব্যবধানকে দূর করে