সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সমস্ত লোকেরা কি কখনও একে অপরকে প্রেম করবে?

সমস্ত লোকেরা কি কখনও একে অপরকে প্রেম করবে?

Kingdom News No. 35

সমস্ত লোকেরা কি কখনও একে অপরকে প্রেম করবে?

প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম শীতল হয়ে গিয়েছে

লক্ষ লক্ষ লোকেরা অসহায় ও অবহেলিত বোধ করে, যাদের সাহায্যের জন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী স্ত্রীলোক মন্তব্য করেছিলেন: ‘এক সন্ধ্যায় একজন বিধবা যিনি আমার সাথে একই তলায় থাকতেন, আমার দরজায় কড়া নেড়ে বলেছিলেন যে তিনি নিঃসঙ্গ। আমি তাকে মার্জিত কিন্তু স্পষ্টভাবে বলেছিলাম যে আমি ব্যস্ত। তিনি আমাকে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চেয়ে চলে গিয়েছিলেন।’

দুঃখের বিষয় যে, সেই রাত্রেই বিধবাটি আত্মহত্যা করেছিলেন। পরে, সেই ব্যবসায়ী স্ত্রীলোকটি বলেন যে তিনি এক “গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা” লাভ করেছিলেন।

প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের অভাব প্রায়ই দুঃখজনক হয়। যুগোশ্লাভিয়ার পূর্বতন অংশ, বসনিয়া ও হারজিগোভিনায় উপজাতিগত সংঘর্ষের সময়ে, দশ লক্ষের অধিক লোকেরা তাদের গৃহ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত এবং হাজার হাজার লোকেরা নিহত হয়েছিল। কাদের দ্বারা? “আমাদের প্রতিবেশীদের দ্বারা,” একটি মেয়ে দুঃখ করে বলেছিল, যে তার গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। “আমরা তাদের চিনতাম।”

রুয়াণ্ডায় লক্ষ লক্ষ লোকেদের বেশিরভাগই তাদের নিজেদের প্রতিবেশীদের দ্বারা হত হয়েছিল। দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌ বিবৃতি দিয়েছিল, “হুটু এবং টুটসিরা একত্রে [বসবাস করত], পরস্পরকে বিবাহ করত আর এই বিষয়ে একেবারেই উদ্বিগ্ন ছিল না, এমনকি জানতও না যে কে হুটু ও কে টুটুসি। পরে হঠাৎ এবং দ্রুত কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল,” এবং “হত্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল।”

অনুরূপভাবে, ইস্রায়েলে যিহুদী ও আরবীয়রা পাশাপাশি বসবাস করে কিন্তু অনেকেই একে অপরকে ঘৃণা করে। আয়ারল্যান্ডে অনেক ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট এবং অন্যান্য দেশের বৃদ্ধিরত সংখ্যক লোকেদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই। ইতিহাসে পূর্বে আর কখনও জগদ্ব্যাপী প্রেমের এত অভাব ঘটেনি।

কেন প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম শীতল হয়ে গিয়েছে?

আমাদের সৃষ্টিকর্তা উত্তর দেন। তাঁর বাক্য, বাইবেল এই সময়কে ‘শেষ কাল’ হিসাবে উল্লেখ করে যে সময়ে আমরা বাস করছি। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কাল যে সময় সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বলে যে, লোকেরা “স্নেহরহিত” হবে। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) এই “বিষম সময় যার মোকাবিলা করা কঠিন,” (NW) যেটিকে শাস্ত্রে ‘যুগান্ত’ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সম্বন্ধে যীশু খ্রীষ্ট ভাববাণী করেছিলেন যে “অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হইয়া যাইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—২ তীমথিয় ৩:১-৫; মথি ২৪:৩, ১২.

অতএব, আজকের দিনে প্রেমের অভাব হল প্রমাণগুলির একটি অংশ যে আমরা এই জগতের শেষ কালে বসবাস করছি। আনন্দের বিষয়, এর অর্থ এটিও বোঝাবে যে ঈশ্বরবিহীন লোকেদের এই জগতের স্থলে শীঘ্রই প্রেমের দ্বারা পরিচালিত এক ধার্মিক নতুন জগৎ স্থাপিত হবে।—মথি ২৪:৩-১৪; ২ পিতর ২:৫; ৩:৭, ১৩.

কিন্তু আমাদের কি প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বাস করার কোন কারণ রয়েছে যে এইরূপ এক পরিবর্তন সম্ভব—যে সমস্ত লোকেরা একে অপরকে প্রেম করতে এবং একে অপরের সাথে শান্তিতে একত্রে বসবাস করতে শিখতে পারে?

প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম—এক বাস্তবতা

“আমার প্রতিবাসী কে?” প্রথম-শতাব্দীর একজন আইনজীবী যীশুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কোন সন্দেহ নেই যে তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন যীশু বলবেন, ‘তোমার সহযিহূদীরা।’ কিন্তু একজন প্রতিবেশীসুলভ শমরীয় সম্পর্কিত একটি গল্পে, যীশু দেখিয়েছিলেন যে অন্যান্য জাতির লোকেরাও আমাদের প্রতিবেশী।—লূক ১০:২৯-৩৭; যোহন ৪:৭-৯.

যীশু জোর দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরকে প্রেম করার পর প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের দ্বারা আমাদের জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। (মথি ২২:৩৪-৪০) কিন্তু কোন দলের লোকেরা কি কখনও সত্যই তাদের প্রতিবেশীদের প্রেম করেছে? প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা করেছিল! অন্যদের প্রতি প্রেম রাখার কারণে তারা উল্লেখযোগ্য ছিল।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.

আজকের দিন সম্বন্ধেই বা কী? কেউ কি খ্রীষ্টতুল্য প্রেম অনুশীলন করে? এনসাইক্লোপিডিয়া কানাডিয়ানা মন্তব্য করে: “যিহোবার সাক্ষীদের কাজ প্রাথমিক খ্রীষ্টতত্ত্বের পুনর্প্রবর্তন এবং পুনর্প্রতিষ্ঠামূলক যা যীশু এবং তাঁর শিষ্যেরা অনুশীলন করেছিলেন . . .। তারা সকলে ভাই।”

এর অর্থ কী? এর অর্থ হল যে যিহোবার সাক্ষীরা তাদের প্রতিবেশীদের ঘৃণা করার কারণ হওয়ার জন্য—জাতি, জাতীয়তা অথবা উপজাতিগত পটভূমি—কোন কিছুকেই অনুমোদন করে না। তারা কাউকে হত্যাও করবে না, কারণ তারা রূপকভাবে তাদের খড়গ ভেঙ্গে লাঙ্গলের ফাল এবং বর্শা ভেঙ্গে কাস্তা গড়েছে। (যিশাইয় ২:৪) বস্তুতপক্ষে, সাক্ষীরা তাদের প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য।—গালাতীয় ৬:১০.

তাই আশ্চর্যের বিষয় নয় যে ক্যালিফোর্ণিয়ার একটি সম্পাদকীয় প্রবন্ধ সাক্রামেন্টো ইউনিয়ন উল্লেখ করেছিল: “এটি বলাই যথেষ্ট যে সমস্ত জগৎ যদি যিহোবার সাক্ষীদের ধর্মীয় বিশ্বাসের দ্বারা জীবনযাপন করত তবে রক্তপাত এবং ঘৃণার শেষ হত এবং প্রেম রাজার ন্যায় কর্তৃত্ব করত।” হাঙ্গেরির রিন পত্রিকার একজন লেখক মন্তব্য করেছিলেন: “আমি এই উপসংহারে এসেছি যে যদি পৃথিবীতে একমাত্র যিহোবার সাক্ষীরাই বসবাস করত, তবে যুদ্ধ নির্বৃত্ত হত এবং পুলিশদের একমাত্র কর্তব্য হত যানবাহনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ এবং পাসপোর্ট প্রদান করা।”

তৎসত্ত্বেও এটি স্বীকারযোগ্য যে, যদি সমস্ত লোকেরা একে অপরকে প্রেম করে, তথাপি জগদ্ব্যাপী এক ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। কিভাবে সেই পরিবর্তন আসবে? (দয়া করে পিছনের পৃষ্ঠাটি দেখুন।)

যখন সমস্ত লোকেরা একে অপরকে প্রেম করবে

যীশু খ্রীষ্ট যে প্রার্থনাটি শিখিয়েছিলেন তা দেখায় যে এক নাটকীয় পরিবর্তন নিকটেই। তাঁর বিখ্যাত পর্বতে দত্ত উপদেশে, যীশু আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আসুক। তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে, তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক।”—মথি ৬:১০, কিং জেমস্‌ ভারসন।

ঈশ্বরের রাজ্য কী? এটি একটি বাস্তব সরকার, যা স্বর্গ থেকে শাসন করে। সেই কারণে এটিকে “স্বর্গ-রাজ্য” বলা হয়। “শান্তিরাজ,” যীশু এর শাসক হিসাবে তাঁর পিতার দ্বারা নিযুক্ত হয়েছেন।—মথি ১০:৭; যিশাইয় ৯:৬, ৭; গীতসংহিতা ৭২:১-৮.

যখন ঈশ্বরের রাজ্য আসবে, তখন এই ঘৃণাপূর্ণ জগতের প্রতি কী ঘটবে? “রাজ্য,” এই জগতের সমস্ত কলুষিত সরকারগুলিকে “চূর্ণ ও বিনষ্ট” করবে। (দানিয়েল ২:৪৪) বাইবেল ব্যাখ্যা করে: “জগৎ . . . বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.

ঈশ্বরের নতুন জগৎ সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১, ২৯; হিতোপদেশ ২:২১, ২২) কী এক চমৎকার সময়ই না তা হবে! “মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) এমনকি মৃত ব্যক্তিরা আবার জীবিত হবে এবং সম্পূর্ণ পৃথিবী এক আক্ষরিক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে।—যিশাইয় ১১:৬-৯; ৩৫:১, ২; লূক ২৩:৪৩; প্রেরিত ২৪:১৫.

ঈশ্বরের নতুন জগতে বাস করতে হলে, আমাদের অবশ্যই একে অপরকে প্রেম করতে হবে, যেমন ঈশ্বর আমাদের করতে শিক্ষা দেন। (১ থিষলনীকীয় ৪:৯) প্রাচ্যের একজন বাইবেল ছাত্র বলেছিলেন: “আমি সেই সময়ের জন্য প্রতীক্ষা করে আছি যখন বাইবেলের প্রতিজ্ঞানুসারে, সমস্ত লোক একে অপরকে প্রেম করতে শিখবে।” আর আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন! কারণ তিনি বলেন, “আমি বলিয়াছি, . . . আর আমি সিদ্ধ করিব।”—যিশাইয় ৪৬:১১.

কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে আশীর্বাদগুলি উপভোগ করার জন্য, আপনাকে অবশ্যই বাইবেলের জ্ঞান নিতে হবে, যেমন জগদ্ব্যাপী লক্ষ লক্ষ সৎহৃদয়বান লোকেরা নিচ্ছে। (যোহন ১৭:৩) ঈশ্বর আপনার কাছ থেকে কী চান? নামক ৩২-পৃষ্ঠার ব্রোশারটি আপনাকে সাহায্য করবে। পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় প্রদত্ত কুপনটি পূরণ করা এবং আপনার গৃহের নিকটতম ঠিকানায় তা পাঠানোর দ্বারা একটি কপি অর্জন করুন।

[২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

বসনিয়ায় গুপ্ত হত্যাকারী এবং অন্ত্যেষ্টি: Reuters/Corbis-Bettmann