সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

এই জগৎ কি রক্ষা পাবে?

এই জগৎ কি রক্ষা পাবে?

এই জগৎ কি রক্ষা পাবে?

এই জগতের শেষ সম্বন্ধে আর কোন বংশকে এত বেশী কথা বলতে শোনা যায়নি। অনেকে ভীত যে জগৎ পারমানবিক যুদ্ধে ধ্বংস হবে। অন্যরা মনে করে যে পরিবেশ দূষণ হয়ত জগতকে ধ্বংস করবে। আর অন্যরা উদ্বিগ্‌ন যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলবে।

এই জগৎ সত্যিই কি শেষ হতে পারে? যদি তাই হয়, এর অর্থ কি বুঝাবে? আগে কখনও কি একটি জগৎ শেষ হয়ে গিয়েছিল?

একটি জগতের শেষ—অপর একটির পুনঃস্থাপন

হ্যাঁ, একটি জগতের শেষ হয়েছিল। নোহের দিনের জগতের কথা বিবেচনা করুন যা খুবই মন্দ হয়ে গিয়েছিল। বাইবেল ব্যাখ্যা করে: “তখনকার জগৎ জলে আপ্লাবিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল।” বাইবেল আরও বলে: “[ঈশ্বর] পুরাতন জগতের প্রতি মমতা করেন নাই, কিন্তু যখন ভক্তিহীনদের জগতে জলপ্লাবন আনিলেন, তখন আর সাত জনের সহিত ধার্ম্মিকতার প্রচারক নোহকে রক্ষা করিলেন।”—২ পিতর ২:৫; ৩:৬.

লক্ষ্য করুন সেই জগতের শেষ বলতে কি বুঝিয়েছিল এবং কি বুঝায়নি? এর অর্থ বুঝায়নি মানবজাতির শেষ। জগদ্ব্যাপী জলপ্লাবনে নোহ ও তার পরিবার রক্ষা পেয়েছিল। ঠিক সেইভাবেই পৃথিবী গ্রহটি এবং সুন্দর তারকাশোভিত আকাশও রক্ষা পেয়েছিল। যা বিনষ্ট হয়েছিল তা ছিল “ভক্তিহীনদের এক জগৎ”, এক মন্দ বিধিব্যবস্থা।

ক্রমশঃ, যেমন নোহের বংশধরেরা বৃদ্ধি পেতে লাগল, অন্য আর একটি জগতও গড়ে উঠেছিল। সেই দ্বিতীয় জগৎ, অথবা বিধিব্যবস্থা, আমাদের দিন পর্যন্ত রয়ে গেছে। যুদ্ধ, অপরাধ, এবং দৌরাত্ম্যে পূর্ণ এর ইতিহাস। এই জগতের কী হবে? এ কি রক্ষা পাবে?

এই জগতের ভবিষ্যৎ

নোহের দিনের জগৎ ধ্বংসের বিষয় বলার পর বাইবেলের বিবরণ আরও বলে: “সেই বাক্যের গুণে এই বর্ত্তমান কালের আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী অগিনর নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে।” (২ পিতর ৩:৭) সত্যই, যেমন আর একজন বাইবেল লেখক বর্ণনা করেন: “জগৎ [বর্ত্তমানে যেটি রয়েছে] বহিয়া যাইতেছে।”—১ যোহন ২:১৭.

বাইবেল বলে না যে আক্ষরিক জগৎ অথবা তারকাশোভিত আকাশের বিলুপ্তি হবে, ঠিক যেমন নোহের দিনে সেগুলির বিলুপ্তি হয়নি। (গীতসংহিতা ১০৪:৫) বরং, এই জগৎ, এর “আকাশ” অথবা শয়তানের প্রভাবের অধীনে সরকারি শাসকবর্গ এবং এর “পৃথিবী”, অর্থাৎ মানবসমাজ, ঠিক যেন অগিনর দ্বারা ধ্বংস হবে। (যোহন ১৪:৩০; ২ করিন্থীয় ৪:৪) এই জগৎ অথবা বিধিব্যবস্থা, ধ্বংস হবে ঠিক যেমন নিশ্চিতরূপে প্লাবনের পূর্বের জগত হয়েছিল। এমনকি যীশু খ্রীষ্টও উদাহরণস্বরূপ “নোহের দিনের” পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন এই জগৎ শেষের পূর্বে কী ঘটবে।—মথি ২৪:৩৭-৩৯.

লক্ষণীয়রূপে, যখন যীশু নোহের দিনের কথা বলেন, এটি ছিল তাঁর উত্তর শিষ্যদের প্রশ্নের প্রতি: “আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:৩, কিং জেমস্‌ ভারশন্‌) যীশুর অনুগামীরা জানতেন যে এই জগৎ শেষ হবে। এই ভবিষ্যৎ কি তাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিল?

বিপরীতে, যখন যীশু জগৎ শেষের পূর্বের ঘটনাগুলি সম্বন্ধে বলেন, তিনি তাদের আনন্দ করতে উৎসাহ দেন ‘কেননা তাদের মুক্তি সন্নিকট।’ (লূক ২১:২৮) হ্যাঁ, শয়তান ও তার দুষ্ট বিধিব্যবস্থা থেকে এক শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে মুক্তি!—২ পিতর ৩:১৩.

কিন্তু কখন এই জগৎ শেষ হবে? যীশু তাঁর “আগমনের, এবং জগৎ শেষের” কি “চিহ্ন” দিয়েছিলেন?

“চিহ্নটি”

এখানে গ্রীক শব্দটি পা·রৌ·সিʹয়া, অনুবাদ করা হয়েছে “আগমন” এবং এটির অর্থ “উপস্থিতি,” অর্থাৎ যা প্রকৃতপক্ষে উপস্থিত রয়েছে। সুতরাং যখন “চিহ্নটি” দেখা যাচ্ছে, এর অর্থ এই নয় খ্রীষ্ট অবিলম্বে আসবেন কিন্তু তিনি ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছেন এবং উপস্থিত আছেন। এর অর্থ যে তিনি স্বর্গীয় রাজারূপে অদৃশ্যভাবে শাসন শুরু করেছেন আর তিনি শীঘ্রই তাঁর শত্রুদের শেষ আনবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১২; গীতসংহিতা ১১০:১, ২.

যীশু “চিহ্ন” হিসাবে কেবল একটি ঘটনা দেননি। তিনি অনেক জাগতিক ঘটনাবলি ও পরিস্থিতির উল্লেখ করেন। এই সমস্ত কিছুই ঘটবে সেই সময়ে বাইবেল লেখকেরা যাকে বলেছেন “শেষ কাল।” (২ তীমথিয় ৩:১-৫; ২ পিতর ৩:৩, ৪) কিছু ঘটনাবলি যা “শেষকালের” চিহ্নে যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সেগুলি বিবেচনা করুন।

“জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে।” (মথি ২৪:৭) পূর্বের তুলনায় আধুনিক দিনে যুদ্ধ আরও বেশী বেড়ে গেছে। একজন ঐতিহাসিক মন্তব্য করেন: “প্রথম বিশ্বযুদ্ধ [১৯১৪ সালে শুরু হয়েছিল] ছিল প্রথম ‘সম্পূর্ণ’ যুদ্ধ।” তবুও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরও বেশী ধ্বংসাত্মক ছিল। আর যুদ্ধ ক্রমাগত পৃথিবীকে বিধ্বস্ত করে চলেছে। হ্যাঁ, যীশুর বাক্যগুলি নাটকীয়ভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে!

“দুর্ভিক্ষ হইবে।” (মথি ২৪:৭) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরই হয়ত সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ এসেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও শোচনীয় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। অপুষ্টির অভিশাপ পৃথিবীর জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের একভাগকে আক্রান্ত করে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ শিশুকে হত্যা করে। সত্যই, জগতে “দুর্ভিক্ষ” হয়েছে!

“মহৎ মহৎ ভূমিকম্প হইবে।” (লূক ২১:১১) বিগত শতাব্দীগুলির তুলনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভূমিকম্পে প্রতি বছর গড়ে দশ গুণ বেশী লোক মারা গিয়েছে। মাত্র কয়েকটি বড় বড় ভূমিকম্পের বিষয় বিবেচনা করুন: ১৯২০ সালে চীনে, ২,০০,০০০ জনের মৃতযু হয়; ১৯২৩ সালে জাপানে, ৯৯,৩০০ জন হতাহত হয়; ১৯৩৯ তুরস্কে, মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩২,৭০০; ১৯৭০ পেরুতে ৬৬,৮০০ জন মারা যায়; এবং ১৯৭৬ সালে চীনে, প্রায় ২,৪০,০০০ (অথবা, অপর কিছু উৎস অনুসারে ৮,০০,০০০) জন হতাহত হয়। সত্যই, “মহৎ মহৎ ভূমিকম্প”!

“স্থানে স্থানে মহামারী হইবে।” (লূক ২১:১১) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই, স্প্যানিশ্‌ ফ্লুতে ২ কোটি ১০ লক্ষ লোক মারা যায়। সায়ন্স্‌ ডাইজেস্ট্‌ মন্তব্য করে: “সমগ্র ইতিহাসে এমন নির্মম দ্রুত মৃত্যুর করাল গ্রাস দেখা যায়নি।” তারপর থেকে হৃদরোগ, ক্যান্সার, এইডস্‌, এবং আরও বহু রোগ লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে।

“অধর্ম্মের বৃদ্ধি।” (মথি ২৪:১২) আমাদের জগৎ ১৯১৪ সালের পর থেকে এক অপরাধ এবং দৌরাত্ম্যের জগৎ বলে পরিচিত হয়েছে। বহু স্থানে কেউ কেউ এমনকি দিনের বেলায়ও রাস্তায় নিরাপদ মনে করে না। রাত্রি বেলায় লোকে বন্ধ দরজার পিছনে ঘরের ভিতরে থাকে, বাইরে যেতে ভয় পায়।

আরও অনেক ঘটনা শেষকালে ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, এবং এই সমস্তই পরিপূর্ণতা লাভ করছে। এর অর্থ জগতের শেষ সন্নিকট। কিন্তু আনন্দের বিষয়, এর থেকে অনেকে রক্ষা পাবে। “জগৎ বহিয়া যাইতেছে” বলার পর, বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.

সুতরাং আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছা শেখা ও তা পালন করা প্রয়োজন। তাহলে আমরা এই জগতের শেষ থেকে রক্ষা পেয়ে ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্তকালীন আশীর্বাদগুলি উপভোগ করতে পারব। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে সেই সময়ে: “ঈশ্বর . . . [লোকেদের] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

উল্লেখ না করা থাকলে ব্যবহৃত বাইবেল অনুবাদ বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে গৃহীত।

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Photo Credits: Airplane: USAF photo. Child: WHO photo by W. Cutting. Earth quake: Y. Ishiyama, Hokkaido University, Japan.