সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের সকলকে যে-বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে

আমাদের সকলকে যে-বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে

অধ্যায় ছয়

আমাদের সকলকে যে-বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে

১, ২. (ক) শয়তান এদনে কোন বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল? (খ) সে যা বলেছিল তা কীভাবে সেই বিচার্য বিষয়টার ইঙ্গিত দিয়েছিল?

 মানবজাতি আজ পর্যন্ত যে-সমস্ত বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে আপনি জড়িত। এই ক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কোথায় সেটাই আপনার অনন্ত ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এদনে যখন বিদ্রোহ ঘটেছিল, তখন এই বিচার্য বিষয়টা উত্থাপিত হয়েছিল। সেই সময় শয়তান হবাকে জিজ্ঞেস করেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” উত্তরে সে বলেছিল যে, একটা গাছের ফল সম্বন্ধে ঈশ্বর বলেছিলেন: “তোমরা তাহা ভোজন করিও না . . . করিলে মরিবে।” এরপর শয়তান মিথ্যা বলে যিহোবাকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছিল যে, হবা বা আদমের কারও জীবনই ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতার ওপর নির্ভর করে না। শয়তান দাবি করেছিল যে, ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের ভাল কিছু থেকে বঞ্চিত করছেন অর্থাৎ তাদের জীবনে নিজেদের মান নির্ণয় করার ক্ষমতা দিতে চান না। শয়তান দাবি করেছিল: “ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।”—আদিপুস্তক ৩:১-৫.

শয়তান আসলে বলছিল যে, ঈশ্বরের আইনগুলো মেনে না চলেই মানুষরা তাদের সিদ্ধান্তগুলো আরও ভাল করে নিতে পারবে। এভাবে সে ঈশ্বরের শাসনপদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এটাই ঈশ্বরের সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তাঁর শাসন করার অধিকার সম্বন্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়টা উত্থাপন করেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল: মানুষের জন্য কোনটা ভাল, যিহোবার শাসনপদ্ধতি নাকি তাঁর থেকে স্বাধীন এক শাসনব্যবস্থা? যিহোবা তখনই সঙ্গে সঙ্গে আদম ও হবাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারতেন কিন্তু তাতে সার্বভৌমত্ব সম্পর্কীয় বিচার্য বিষয়টাকে সন্তোষজনকভাবে মীমাংসা করা যেত না। মানব সমাজ গড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়ে ঈশ্বর দেখাতে পারবেন যে, তাঁর কাছ থেকে ও তাঁর আইনগুলো থেকে স্বাধীন হওয়ার ফল কী হবে।

৩. শয়তান দ্বিতীয় কোন বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল?

যিহোবার শাসন করার অধিকারের ওপর শয়তানের আক্রমণ, এদনে যা ঘটেছিল তার মাধ্যমেই শেষ হয়ে যায়নি। যিহোবার প্রতি অন্যদের আনুগত্য নিয়েও সে প্রশ্ন তুলেছিল। এটা প্রথমটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দ্বিতীয় বিচার্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। তার এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আদম ও হবার বংশধর এবং ঈশ্বরের সমস্ত আত্মিক পুত্র, এমনকি যিহোবার প্রথমজাত প্রিয় পুত্রকেও জড়িত করেছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইয়োবের দিনে শয়তান দাবি করেছিল যে, যারা যিহোবাকে সেবা করে তারা ঈশ্বর ও তাঁর শাসনপদ্ধতির প্রতি প্রেমের জন্য নয় বরং স্বার্থপর কারণগুলোর জন্য তা করে। সে তর্ক করেছিল যে, কষ্টে পড়লেই তারা সবাই স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোর কাছে নতি স্বীকার করবে।—ইয়োব ২:১-৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:১০.

ইতিহাস যা প্রমাণ করেছে

৪, ৫. মানুষের নিজের পাদবিক্ষেপ স্থির করার বিষয়ে ইতিহাস কী প্রমাণ দিয়েছে?

সার্বভৌমত্ব সম্পর্কীয় এই বিচার্য বিষয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল: ঈশ্বর মানুষকে তাঁর শাসনব্যবস্থা থেকে স্বাধীন হয়ে বেঁচে থাকার ও সফল হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি। তাদের উপকারের জন্য তিনি তাঁর ধার্মিক আইনগুলোর ওপর নির্ভর করতে তাদের তৈরি করেছিলেন। ভাববাদী যিরমিয় স্বীকার করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না। হে সদাপ্রভু, আমাকে শাসন কর।” (যিরমিয় ১০:২৩, ২৪) তাই, ঈশ্বরের বাক্য উৎসাহ দেয়: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।” (হিতোপদেশ ৩:৫) মানবজাতির বেঁচে থাকার জন্য ঈশ্বর যেমন তাঁর প্রাকৃতিক নিয়মগুলোর প্রতি বশীভূত থাকতে তাদের সৃষ্টি করেছিলেন, তেমনই তিনি নৈতিক আইনগুলোও তৈরি করেছিলেন, যেগুলো পালন করলে এক ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে উঠবে।

স্পষ্টতই, ঈশ্বর জানতেন যে তাঁর শাসনব্যবস্থা ছাড়া মানব পরিবার কখনোই সফলভাবে নিজেদের পরিচালিত করতে পারবে না। ঈশ্বরের শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায়, মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এইরকম বৈসাদৃশ্যের কারণে লোকেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে, যার ফল হল হিংস্রতা, যুদ্ধ এবং মৃত্যু। “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।” (উপদেশক ৮:৯) মানব ইতিহাসে সবসময় এটাই হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে সেই অনুযায়ী, দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা “উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর” হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১৩) আর বিংশ শতাব্দীতে মানবজাতি বিজ্ঞান ও শিল্পের দিক দিয়ে উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে ঠিকই কিন্তু সেইসঙ্গে চরম দুর্দশাও ভোগ করেছে। যিরমিয় ১০:২৩ পদের কথাগুলো জোরালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে—মানুষকে তাদের নিজেদের পাদবিক্ষেপ স্থির করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি।

৬. ঈশ্বরের কাছ থেকে মানুষের স্বাধীন হওয়ার বিষয়টা কীভাবে তিনি শীঘ্রই সমাধান করবেন?

ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার দুঃখজনক, দীর্ঘস্থায়ী পরিণতিগুলো সম্পূর্ণভাবে ও চিরকালের জন্য প্রমাণ দিয়েছে যে, মানুষ কখনোই সফলভাবে শাসন করতে পারবে না। ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থাই সুখ, একতা, সুস্বাস্থ্য ও জীবনের একমাত্র উপায়। আর ঈশ্বরের বাক্য দেখায়, যিহোবা যে এতদিন মানুষের স্বাধীন শাসনব্যবস্থাকে সহ্য করেছেন, তা খুব শীঘ্রই শেষ হতে চলেছে। (মথি ২৪:৩-১৪; ২ তীমথিয় ৩:১-৫) খুব শীঘ্রই, তিনি সারা পৃথিবীতে তাঁর শাসনব্যবস্থার অধিকার প্রমাণ করার জন্য মানুষের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বলে: “সেই রাজগণের [মানুষের বর্তমান শাসনব্যবস্থা] সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর [স্বর্গে] এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না [পৃথিবীতে আর কখনও মানুষ শাসন করবে না]; তাহা ঐ সকল [বর্তমান দিনের] রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪.

ঈশ্বরের নতুন জগতে বেঁচে থাকা

৭. ঈশ্বরের শাসন যখন মানুষের শাসনব্যবস্থাকে শেষ করবে, তখন কারা বেঁচে থাকবে?

ঈশ্বরের শাসন যখন মানুষের শাসনব্যবস্থাকে শেষ করবে, তখন কারা বেঁচে থাকবে? বাইবেল উত্তর দেয়: “সরলগণ দেশে [“পৃথিবীতে,” NW] বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে। কিন্তু দুষ্টগণ [যারা ঈশ্বরের শাসন করার অধিকারকে সমর্থন করে না] দেশ [“পৃথিবী,” NW] হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) একইভাবে, গীতরচক বলেছিলেন: “ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই . . . ধার্ম্মিকেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ২৯.

৮. ঈশ্বর কীভাবে তাঁর সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিপাদন করবেন?

শয়তানের বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর, ঈশ্বর তাঁর নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন, যেটা ধ্বংসাত্মক হিংস্রতা, যুদ্ধ, দরিদ্রতা, কষ্ট, অসুস্থতা ও মৃত্যু চিরতরে দূর করে দেবে, যেগুলো মানবজাতিকে হাজার হাজার বছর ধরে দাস করে রেখেছে। বাধ্য মানবজাতির জন্য যে-আশীর্বাদগুলো অপেক্ষা করছে সেগুলোর বিষয়ে বাইবেল খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করে: “তিনি [ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) খ্রীষ্টের শাসনাধীনে তাঁর স্বর্গীয় রাজ্য সরকারের মাধ্যমে, ঈশ্বর আমাদের সার্বভৌম অর্থাৎ আমাদের শাসক হওয়ার বিষয়ে তাঁর অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিপাদন (প্রমাণ) করবেন।—রোমীয় ১৬:২০; ২ পিতর ৩:১০-১৩; প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৬;

যেভাবে তারা বিচার্য বিষয়ের প্রতি সাড়া দিয়েছিল

৯. (ক) যারা যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিল, তারা তাঁর বাক্যকে কীভাবে দেখেছিল? (খ) নোহ কীভাবে তার আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছিলেন এবং তার উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

সারা ইতিহাস জুড়ে, বিশ্বস্ত নারী-পুরুষরা ছিল, যারা যিহোবাকে সার্বভৌম হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর প্রতি তাদের আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছিল। তারা জানত যে, তাঁর কথা শোনা ও তাঁর বাধ্য থাকার ওপর তাদের জীবন নির্ভর করত। নোহ এইরকম একজন ব্যক্তি ছিলেন। তাই, ঈশ্বর নোহকে বলেছিলেন: “আমার গোচরে সকল প্রাণীর অন্তিমকাল উপস্থিত . . . তুমি . . . এক জাহাজ নির্ম্মাণ কর।” আর নোহ যিহোবার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। সাবধান করা সত্ত্বেও, সেই সময়ের লোকেরা এমনভাবে জীবনযাপন করছিল যেন অস্বাভাবিক কিছু ঘটবে না। কিন্তু, নোহ এক বিরাট জাহাজ বানিয়েছিলেন এবং অন্যদের কাছে যিহোবার ধার্মিক পথ সম্বন্ধে প্রচার করে চলেছিলেন। বিবরণ বলে চলে: “নোহ সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।”—আদিপুস্তক ৬:১৩-২২; ইব্রীয় ১১:৭; ২ পিতর ২:৫.

১০. (ক) কীভাবে অব্রাহাম ও সারা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেছিলেন? (খ) অব্রাহাম ও সারার উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

১০ এ ছাড়াও, যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করা ও তিনি যে-আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা পালন করার ক্ষেত্রে অব্রাহাম ও সারা ভাল উদাহরণ রেখেছিলেন। তারা কল্‌দীয় দেশের এক সমৃদ্ধশালী শহর ঊরে থাকত। কিন্তু যিহোবা যখন অব্রাহামকে অন্য দেশে যেতে বলেছিলেন, যে-দেশ সম্বন্ধে তিনি কিছুই জানতেন না, তখন অব্রাহাম “সদাপ্রভুর সেই বাক্যানুসারে যাত্রা করিলেন।” কোনো সন্দেহ নেই যে, বাড়িতে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সারার এক আরামদায়ক জীবন ছিল। কিন্তু, তিনি যিহোবা ও তার স্বামীর বশীভূতা হয়েছিলেন আর কনান দেশে গিয়েছিলেন, যদিও তিনি জানতেন না যে, সেখানে তার জন্য কী অপেক্ষা করছিল।—আদিপুস্তক ১১:৩১–১২:৪; প্রেরিত ৭:২-৪.

১১. (ক) কোন পরিস্থিতিতে মোশি যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেছিলেন? (খ) মোশির উদাহরণ কীভাবে আমাদের উপকার করতে পারে?

১১ মোশি ছিলেন আরেকজন ব্যক্তি, যিনি যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেছিলেন। আর তিনি তা খুবই কঠিন পরিস্থিতি অর্থাৎ মিশর দেশের ফরৌণের মুখোমুখি হয়ে করেছিলেন। মোশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে যে তা করেছিলেন, তা কিন্তু নয়। বিপরীতে, তিনি তার নিজের কথা বলার ক্ষমতা সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি যিহোবার বাধ্য ছিলেন। যিহোবার সমর্থন ও তার ভাই হারোণের সাহায্যে মোশি বার বার একগুঁয়ে ফরৌণের কাছে যিহোবার বাক্য বলেছিলেন। এমনকি কিছু ইস্রায়েল সন্তানও রূঢ়ভাবে মোশির সমালোচনা করেছিল। তবুও, যিহোবা মোশিকে যা যা আদেশ দিয়েছিলেন, তিনি সমস্তই অনুগতভাবে পালন করেছিলেন আর তার মাধ্যমেই ইস্রায়েল জাতি মিশর থেকে মুক্ত হয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ৭:৬; ১২:৫০, ৫১; ইব্রীয় ১১:২৪-২৭.

১২. (ক) কী দেখায় যে, যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার সঙ্গে ঈশ্বর নির্দিষ্ট করে যা লিখে দিয়েছেন শুধু তা পালন করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত? (খ) এইধরনের আনুগত্যের প্রতি উপলব্ধিবোধ কীভাবে আমাদের ১ যোহন ২:১৫ পদ কাজে লাগাতে সাহায্য করতে পারে?

১২ যারা যিহোবার প্রতি অনুগত ছিল তারা যুক্তি দেখায়নি যে, ঈশ্বর যে-সমস্ত বিষয় লিখে দিয়েছিলেন শুধু সেগুলো পালন করলেই চলবে। পোটীফরের স্ত্রী যখন যোষেফকে তার সঙ্গে ব্যভিচার করার জন্য প্রলোভিত করেছিল, তখন ঈশ্বরের এমন কোনো লিখিত আইন ছিল না, যা ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু, যোষেফ বিবাহ ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানতেন, যা যিহোবা এদনে প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি জানতেন যে, অন্য পুরুষের স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করবে। যোষেফ সীমা পরীক্ষা করে দেখতে চাননি যে, ঈশ্বর তাকে কতদূর পর্যন্ত মিশরীয়দের মতো হতে দেবেন। ঈশ্বর মানবজাতির সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করেছিলেন, তা ধ্যান করে এবং তিনি যেটাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে উপলব্ধি করতেন, তা বিবেকবুদ্ধির সঙ্গে কাজে লাগিয়ে যিহোবার পথকে সমর্থন করেছিলেন।—আদিপুস্তক ৩৯:৭-১২; গীতসংহিতা ৭৭:১১, ১২.

১৩. দিয়াবল কীভাবে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়েছিল (ক) ইয়োবের বেলায়? (খ) তিনজন ইব্রীয় ব্যক্তির বেলায়?

১৩ যারা যিহোবাকে সত্যিই জানে, তাদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলা হলেও তারা তাঁর কাছ থেকে সরে যায় না। শয়তান দাবি করেছিল যে, যিহোবা যার প্রতি অনুমোদন প্রকাশ করেছিলেন, সেই ইয়োব যদি তার ধনসম্পদ অথবা স্বাস্থ্য হারান, তা হলে তিনিও ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করবেন। কিন্তু ইয়োব দিয়াবলকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছিলেন, এমনকি যদিও ইয়োব জানতেন না যে, কেন দুর্দশাগুলো তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরছে। (ইয়োব ২:৯, ১০) কয়েকশ বছর পরও, শয়তান তার দাবি প্রমাণ করার চেষ্টায় বাবিলের ক্রুদ্ধ রাজাকে দিয়ে তিনজন ইব্রীয় যুবককে এই ভয় দেখাতে প্ররোচিত করেছিল যে, তারা যদি রাজার স্থাপিত মূর্তির কাছে প্রণিপাত না করে, তা হলে তাদের অগ্নিকুণ্ডে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। রাজার আজ্ঞা পালন করবে, নাকি প্রতিমাপূজা সম্বন্ধে যিহোবার আইন পালন করবে এই দুটোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়ে, তারা দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা যিহোবার সেবা করে এবং তিনিই তাদের সার্বিক সার্বভৌম। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা তাদের কাছে বর্তমান জীবনের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান ছিল।—দানিয়েল ৩:১৪-১৮.

১৪. যিহোবার প্রতি যে আমরা সত্যিই অনুগত, অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে সেটা আমাদের পক্ষে কীভাবে প্রমাণ করা সম্ভব?

১৪ এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা কি এই সিদ্ধান্তে আসব যে, যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য একজন ব্যক্তিকে সিদ্ধ হতে হবে অথবা একটা ভুল করলেই কেউ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যায়? কখনোই না! বাইবেল আমাদের জানায় যে, মাঝে মাঝে মোশিও ভুল করেছিলেন। যদিও যিহোবা অখুশি হয়েছিলেন কিন্তু তাই বলে তিনি মোশিকে প্রত্যাখ্যান করেননি। যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিতদেরও বিভিন্ন দুর্বলতা ছিল। আমাদের উত্তরাধিকারসূত্রে অসিদ্ধতা পাওয়ার বিষয়টা বিবেচনা করে, যিহোবা খুশি হন যদি আমরা জেনেশুনে তাঁর ইচ্ছা কোনোভাবে উপেক্ষা না করি। আমরা যদি দুর্বলতার জন্য ভুল করে ফেলি, তা হলে মন থেকে অনুতপ্ত হওয়া এবং ওই ভুল বার বার না করা জরুরি। এভাবে আমরা দেখাই যে, যিহোবা যেটাকে ভাল বলেন সেটাকে আমরা সত্যি সত্যি ভালবাসি আর যেটাকে তিনি খারাপ বলেন সেটাকে ঘৃণা করি। যীশুর পাপের প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানে আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে, আমরা ঈশ্বরের সামনে এক শুদ্ধ অবস্থান উপভোগ করতে পারি।—আমোষ ৫:১৫; প্রেরিত ৩:১৯; ইব্রীয় ৯:১৪.

১৫. (ক) সমস্ত মানুষের মধ্যে কে ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন আর এটা কী প্রমাণ করেছিল? (খ) যীশু যা করেছিলেন তার থেকে আমরা কীভাবে সাহায্য পেতে পারি?

১৫ কিন্তু, যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্য থাকা কি মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব? এর উত্তর প্রায় ৪,০০০ বছর ধরে এক “নিগূঢ়তত্ত্ব” ছিল। (১ তীমথিয় ৩:১৬) আদমকে যদিও সিদ্ধ করে সৃষ্টি করা হয়েছিল কিন্তু সে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখানোর ক্ষেত্রে নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করতে পারেনি। তা হলে কে পেরেছিলেন? অবশ্যই তার পাপী বংশধরদের মধ্যে কেউই তা পারেনি। যীশু খ্রীষ্টই ছিলেন একমাত্র মানুষ, যিনি তা পেরেছিলেন। (ইব্রীয় ৪:১৫) যীশু যা করেছিলেন তা প্রমাণ করেছিল যে আদম, যে কিনা আরও সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে ছিল, সে চাইলে সম্পূর্ণ নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারত। ঈশ্বরের সৃষ্টির মধ্যে কোনো খুঁত ছিল না। অতএব, যীশু খ্রীষ্টই হলেন উদাহরণ, যাঁকে আমরা শুধু ঈশ্বরের আইন মেনে চলার ক্ষেত্রেই নয়, সেইসঙ্গে সার্বিক সার্বভৌম যিহোবার প্রতি ব্যক্তিগত ভক্তি দেখানোর ক্ষেত্রেও অনুকরণ করার চেষ্টা করি।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫.

আমাদের ব্যক্তিগত উত্তর কী?

১৬. যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের মনোভাব সম্বন্ধে কেন আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে?

১৬ আজকে আমাদের প্রত্যেককে সার্বিক সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়। আমরা যদি প্রকাশ্যে বলি যে আমরা যিহোবার পক্ষে, তা হলে শয়তান আমাদের তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। সে সমস্ত দিক থেকে চাপ নিয়ে আসে এবং তার দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে তা করে চলবে। তাই, আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। (১ পিতর ৫:৮) আমাদের আচরণ দেখায় যে, যিহোবার সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত সর্বোচ্চ বিচার্য বিষয় এবং পরীক্ষার মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠ থাকার দ্বিতীয় বিচার্য বিষয়ে আমাদের অবস্থান কোথায় রয়েছে। আনুগত্য বজায় না রাখা জগতে খুবই সাধারণ একটা বিষয় বলে যদি আমরা এটাকে গুরুত্বহীন বলে মনে করি, তা হলে এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হবে। নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য আমাদের জীবনের প্রতিটা বিষয়ে যিহোবার ধার্মিক মানগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।

১৭. মিথ্যা বলা ও চুরি করার উৎপত্তি সম্বন্ধে কী বলা যায়, যা আমাদের সেগুলোকে এড়িয়ে চলতে পরিচালিত করবে?

১৭ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা শয়তানকে অনুকরণ করতে পারি না, যে “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা।” (যোহন ৮:৪৪) আমাদের সমস্ত ব্যাপারে সত্যনিষ্ঠ হতে হবে। শয়তানের বিধিব্যবস্থায়, অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা প্রায়ই তাদের বাবামাদের কাছে সত্যনিষ্ঠ নয়। কিন্তু অল্পবয়স্ক খ্রীষ্টান ছেলেমেয়েরা এইরকম করা এড়িয়ে চলে আর এভাবে তারা শয়তানের এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে যে, ঈশ্বরের লোকেরা পরীক্ষার মধ্যে পড়লে তাদের নীতিনিষ্ঠা ত্যাগ করবে। (ইয়োব ১:৯-১১; হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) এরপর রয়েছে ব্যবসায়িক বিষয়গুলো, যা একজন ব্যক্তিকে সত্যের ঈশ্বরের পরিবর্তে ‘মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতার’ সঙ্গে শনাক্ত করতে পারে। এগুলো আমরা এড়িয়ে চলি। (মীখা ৬:১১, ১২) এ ছাড়াও, চুরি করাকে কখনোই ন্যায্য বলে প্রমাণ করা যায় না, এমনকি একজন ব্যক্তির যদি অভাবও থাকে বা যার কাছ থেকে জিনিস চুরি করা হয়েছে সে যদি অনেক ধনীও হয়। (হিতোপদেশ ৬:৩০, ৩১; ১ পিতর ৪:১৫) এমনকি আমরা যেখানে থাকি, সেখানে এটা যদি সাধারণ বিষয়ও হয়ে থাকে অথবা যা চুরি করা হয়েছে তা সামান্যও হয়, তবুও তা ঈশ্বরের আইনগুলোর বিরুদ্ধে।—লূক ১৬:১০; রোমীয় ১২:২; ইফিষীয় ৪:২৮.

১৮. (ক) খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষে, সমস্ত মানবজাতির ওপর কোন পরীক্ষা আসবে? (খ) এখন আমাদের কোন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে?

১৮ খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে, শয়তান ও তার মন্দ দূতদের অগাধলোকে বন্দি করা হবে, তারা আর মানবজাতিকে প্রভাবিত করতে পারবে না। এটা কতই না স্বস্তি এনে দেবে! কিন্তু হাজার বছর পর, তাদের কিছু সময়ের জন্য মুক্ত করা হবে। শয়তান ও তার অনুসারীরা সেই পুনর্স্থাপিত মানবজাতির মধ্যে যারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখবে, তাদের ওপর চাপ নিয়ে আসবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-১০) সেই সময় যদি আমরা বেঁচে থাকার সুযোগ পাই, তা হলে সার্বিক সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত বিচার্য বিষয় সম্বন্ধে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব? যেহেতু সেই সময় সমস্ত মানুষ সিদ্ধ থাকবে, তাই আনুগত্যহীন যেকোনো কাজই জেনেশুনে করা হবে আর এর ফল হবে অনন্ত ধ্বংস। তাই, যিহোবা তাঁর বাক্য বা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের যে-নির্দেশনাই দিন না কেন, সেগুলোর প্রতি বাধ্যতার সঙ্গে সাড়া দেওয়ার অভ্যাস এখনই গড়ে তোলা কতই না জরুরি! তা করে, আমরা সার্বিক সার্বভৌম হিসেবে তাঁর প্রতি আমাদের প্রকৃত ভক্তি দেখাই।

পুনরালোচনা

• আমাদের সকলকে কোন মহান বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে? আমরা এতে কীভাবে জড়িত হয়েছিলাম?

• কোন উল্লেখযোগ্য উপায়গুলোর মাধ্যমে প্রাচীনকালের নারী-পুরুষরা যিহোবার প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছিলেন?

• কেন প্রতিদিন আমাদের আচরণের মাধ্যমে দেখানো জরুরি যে, আমরা যিহোবাকে সম্মান করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]