সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের সময়ে একতাবদ্ধ উপাসনা—এর অর্থ কী?

আমাদের সময়ে একতাবদ্ধ উপাসনা—এর অর্থ কী?

অধ্যায় এক

আমাদের সময়ে একতাবদ্ধ উপাসনা—এর অর্থ কী?

১, ২. (ক) আমাদের সময়ে কোন রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে চলেছে? (খ) সৎহৃদয়ের লোকেদের কোন চমৎকার আশা রয়েছে?

 সারা পৃথিবীতে একতাবদ্ধ উপাসনায় এক রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে চলেছে। এটা সমস্ত জাতি, বংশ ও ভাষার লক্ষ লক্ষ লোকেদের একত্র করছে। প্রতি বছর আরও অনেকে একত্রিত হচ্ছে। বাইবেলে তাদের যিহোবার “সাক্ষী” এবং “বিস্তর লোক” হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা “দিবারাত্র” ঈশ্বরের “আরাধনা” করে। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৫) কেন তারা এটা করে? কারণ তারা যিহোবাকে একমাত্র সত্য ঈশ্বর হিসেবে জেনেছে। এটাই তাদের তাঁর ধার্মিক মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে প্রেরণা দেয়। এ ছাড়া, তারা এও জেনেছে যে, আমরা এই বর্তমান দুষ্ট জগতের “শেষ কালে” বাস করছি, যে-জগৎকে ঈশ্বর শীঘ্রই ধ্বংস করবেন এবং এর জায়গায় তাঁর পরমদেশতুল্য নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন।—২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩; ২ পিতর ৩:১০-১৩.

ঈশ্বরের বাক্য প্রতিজ্ঞা করে: “ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১) “ধার্ম্মিকেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৯) “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.

৩. কীভাবে প্রকৃত একতাবদ্ধ উপাসনা অর্জিত হচ্ছে?

যারা এখন সত্য উপাসনায় একতাবদ্ধ হচ্ছে, তারা এই নতুন জগতের প্রথম বাসিন্দা হবে। তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে জেনেছে এবং তা যথাসাধ্য পালন করছে। এর গুরুত্ব দেখিয়ে যীশু বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.

এর প্রকৃত অর্থ

৪. (ক) আমাদের সময়ে একতাবদ্ধ উপাসনায় এত লোকেদের একত্রিত হওয়ার প্রকৃত অর্থ কী? (খ) এই একত্রীকরণ সম্বন্ধে বাইবেল কীভাবে বর্ণনা করে?

আমাদের সময়ে একতাবদ্ধ উপাসনায় এত লোকেদের একত্রিত হওয়ার প্রকৃত অর্থ কী? এটা একেবারে স্পষ্ট যে, আমরা এই দুষ্ট জগতের ধ্বংসের খুব কাছে আছি আর ঠিক এর পরেই ঈশ্বরের নতুন জগৎ আসবে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ একত্রীকরণ সম্বন্ধে বাইবেলে যে-ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করা আছে, সেগুলো আমরা পরিপূর্ণ হতে দেখছি। এইরকম একটা ভবিষ্যদ্বাণী বলে: “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত [তাঁহার উচ্চীকৃত সত্য উপাসনা] পর্ব্বতগণের [অন্য যেকোনো ধরনের উপাসনার ওপরে] মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, . . . তাহাতে জাতিগণ তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। আর অনেক জাতি যাইতে যাইতে বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।”—মীখা ৪:১, ২; গীতসংহিতা ৩৭:৩৪.

৫, ৬. (ক) জাতিগুলো যিহোবার দিকে ফিরে আসছে, তা কীভাবে সত্য? (খ) নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

সমস্ত জাতি উপাসনার জন্য যিহোবার আত্মিক গৃহে না আসলেও, সকল জাতি থেকে লক্ষ লক্ষ লোক সেখানে আসছে। তারা যখন যিহোবা ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ উদ্দেশ্য এবং চমৎকার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে পারে, তখন তা তাদের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তারা নম্রভাবে জানার চেষ্টা করে যে, ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে কী চান। তাদের প্রার্থনা গীতরচকের প্রার্থনার মতো, যিনি বলেছিলেন: “তোমার ইষ্ট সাধন করিতে আমাকে শিক্ষা দেও; কেননা তুমিই আমার ঈশ্বর।”—গীতসংহিতা ১৪৩:১০.

আপনি কি সেই বিস্তর লোকের মধ্যে রয়েছেন, যাদের যিহোবা এখন একতাবদ্ধ উপাসনায় একত্রিত করছেন? তাঁর বাক্য থেকে আপনি যে-নির্দেশনা পেয়েছেন, সেটার প্রতি আপনার সাড়া দেওয়া কি দেখায় যে, আপনি সত্যিই উপলব্ধি করেন, যিহোবাই এর উৎস? আপনি কতটা “তাঁহার মার্গে গমন” করবেন?

এটা যেভাবে অর্জিত হয়েছে

৭. (ক) একতাবদ্ধ উপাসনা শেষ পর্যন্ত কতটা ব্যাপকভাবে অর্জিত হবে? (খ) কেন এখনই যিহোবার একজন উপাসক হওয়া জরুরি এবং আমরা কীভাবে অন্যদের তা হতে সাহায্য করতে পারি?

সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণীদের সত্য উপাসনায় একতাবদ্ধ করাই হল যিহোবার উদ্দেশ্য। আমরা সেদিনের জন্য কত আকুলভাবেই না আকাঙ্ক্ষা করে আছি, যেদিন জীবিত সকলে একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করবে! (গীতসংহিতা ১০৩:১৯-২২) কিন্তু এর আগে, যিহোবা অবশ্যই সেই সমস্ত লোকেদের দূর করবেন, যারা তাঁর ধার্মিক ইচ্ছা পালন করতে চায় না। করুণা দেখিয়ে তিনি আগে থেকেই জানিয়ে দেন যে তিনি কী করবেন, যাতে সমস্ত জায়গার লোকেরা তাদের আচরণ পরিবর্তন করার সুযোগ পায়। (যিশাইয় ৫৫:৬, ৭) তাই, আমাদের দিনে ‘প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দের’ প্রতি এই জরুরি আবেদন জানানো হচ্ছে: “ঈশ্বরকে ভয় কর ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর, কেননা তাঁহার বিচার-সময় উপস্থিত; যিনি স্বর্গ, পৃথিবী, সমুদ্র ও জলের উনুই সকল উৎপন্ন করিয়াছেন, তাঁহার ভজনা কর।” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭) আপনি কি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন? যদি করে থাকেন, তা হলে সত্য ঈশ্বরকে জানতে ও উপাসনা করতে অন্যদের আমন্ত্রণ জানানোর বিশেষ সুযোগ আপনার রয়েছে।

৮. বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো জানার পর আমাদের আর কোন কোন উন্নতি করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত?

এমন লোকেদের উপাসনা পাওয়া যিহোবার উদ্দেশ্য নয়, যারা শুধু মুখেই বলে যে, তারা তাঁকে বিশ্বাস করে কিন্তু আসলে এরপর তারা নিজেদের স্বার্থের পিছনে ছোটে। ঈশ্বর চান যেন লোকেরা ‘তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞান’ পায় এবং তাদের জীবনে তা প্রকাশ করে। (কলসীয় ১:৯, ১০) অতএব, যে-কৃতজ্ঞ লোকেরা বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো জেনেছে, তারা খ্রীষ্টীয় পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে যেতে চায়। তারা যিহোবাকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জানতে চায়, তাঁর বাক্য সম্বন্ধে তাদের বোঝার ক্ষমতাকে আরও বাড়াতে ও গভীর করতে এবং এটিকে তাদের জীবনে আরও বেশি করে কাজে লাগাতে চায়। তারা আমাদের স্বর্গীয় পিতার গুণগুলো প্রকাশ করার এবং বিভিন্ন বিষয়কে তাঁর মতো করে দেখার চেষ্টা করে। এটা আমাদের দিনে তিনি যে-জীবনরক্ষাকারী কাজ করাচ্ছেন, তাতে অংশ নেওয়ার উপায়গুলো খুঁজতে তাদের প্রেরণা দেয়। আপনিও কি তাই চান?—মার্ক ১৩:১০; ইব্রীয় ৫:১২–৬:৩.

৯. কোন কোন দিক দিয়ে এখনই প্রকৃত একতা সম্ভব?

বাইবেল দেখায় যে, যারা যিহোবাকে উপাসনা করে, তাদের একতাবদ্ধ লোক হতে হবে। (ইফিষীয় ৪:১-৩) আর এই একতা এখনই থাকতে হবে—যদিও আমরা এক বিভক্ত জগতে বাস করি এবং এখনও আমাদের নিজেদের অসিদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করে চলেছি। যীশু অন্তর থেকে প্রার্থনা করেছিলেন যে, তাঁর সমস্ত শিষ্য যেন এক হয়ে প্রকৃত একতা উপভোগ করে। এর মানে কী ছিল? প্রথমত, যিহোবা ও তাঁর পুত্রের সঙ্গে তাদের ভাল সম্পর্ক থাকতে হতো। দ্বিতীয়ত, একজন আরেকজনের সঙ্গে তাদের একতাবদ্ধ হতে হতো। (যোহন ১৭:২০, ২১) এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী সংগঠন হিসেবে কাজ করে, যেটার মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দেন।

কোন বিষয়গুলো একতায় অবদান রাখে?

১০. (ক) যে-প্রশ্নগুলো আমাদের প্রভাবিত করে, সেগুলোর উত্তরের ওপর যুক্তি করার জন্য আমরা যখন ব্যক্তিগতভাবে বাইবেল ব্যবহার করি, তখন আমাদের মধ্যে কী বাড়িয়ে তুলি? (খ) এই অনুচ্ছেদে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে সেই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করুন, যেগুলো খ্রীষ্টীয় একতায় অবদান রাখে।

১০ একতায় অবদান রাখে এমন সাতটা মুখ্য বিষয় নিচে উল্লেখ করা হল। এর সঙ্গে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় আপনি ভেবে দেখুন যে, কীভাবে প্রত্যেকটা বিষয় যিহোবা এবং সহ খ্রীষ্টানদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। এই বিষয়গুলোর ওপর যুক্তি করলে এবং উদ্ধৃত করা নেই কিন্তু উল্লেখ করা হয়েছে এমন শাস্ত্রপদগুলো দেখলে, তা আমাদের সকলের যে-গুণগুলো দরকার সেগুলো অর্থাৎ ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা, চিন্তা করার ক্ষমতা এবং বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে। (হিতোপদেশ ৫:১, ২; ফিলিপীয় ১:৯-১১) এই বিষয়গুলো একটা একটা করে বিবেচনা করুন।

(১) ভাল ও মন্দ বিষয়ে মান স্থাপন করার ক্ষেত্রে যিহোবার অধিকারকে আমরা স্বীকার করি। “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের কেন যিহোবার পরামর্শ ও নির্দেশনা খোঁজা উচিত? (গীতসংহিতা ১৪৬:৩-৫; যিশাইয় ৪৮:১৭)

(২) আমাদের পরিচালনা দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য রয়েছে। “আমাদের কাছে ঈশ্বরের বার্ত্তারূপ বাক্য প্রাপ্ত হইয়া তোমরা মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিলে; তাহা ঈশ্বরের বাক্যই বটে, এবং বিশ্বাসী যে তোমরা, তোমাদের মধ্যে নিজ কার্য্য সাধনও করিতেছে।”—১ থিষলনীকীয় ২:১৩.

আমরা যেটাকে ঠিক বলে “মনে করি,” সেটা করায় কী বিপদ রয়েছে? (হিতোপদেশ ১৪:১২; যিরমিয় ১০:২৩, ২৪; ১৭:৯)

কোনো একটা বিষয়ে বাইবেল কী পরামর্শ দেয়, সেটা যদি আমরা না জানি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? (হিতোপদেশ ২:৩-৫; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭)

(৩) আমরা সবাই একই আধ্যাত্মিক ভোজের কার্যক্রম থেকে উপকার লাভ করি। “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে।” (যিশাইয় ৫৪:১৩) “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা [ধ্বংসের] সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।”—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

যারা যিহোবার আধ্যাত্মিক খাবারের ব্যবস্থাগুলোতে পুরোপুরি অংশ নেয়, তাদের কী কী উপকার হয়? (যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪)

(৪) কোনো মানুষ নয় কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট আমাদের নেতা। “তোমরা ‘রব্বি’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের গুরু এক জন, এবং তোমরা সকলে ভ্রাতা। আর পৃথিবীতে কাহাকেও ‘পিতা’ বলিয়া সম্বোধন করিও না, কারণ তোমাদের পিতা এক জন, তিনি সেই স্বর্গীয়। তোমরা ‘আচার্য্য’ [“নেতা,” NW] বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের আচার্য্য [“নেতা,” NW] এক জন, তিনি খ্রীষ্ট।”—মথি ২৩:৮-১০.

আমাদের কারও কি মনে করা উচিত যে, আমরা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ? (রোমীয় ৩:২৩, ২৪; ১২:৩)

(৫) মানবজাতির একমাত্র আশা হিসেবে আমরা ঈশ্বরের রাজ্য সরকারের জন্য অপেক্ষা করি। “অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও; হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক; কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।”—মথি ৬:৯, ১০, ৩৩.

কীভাবে ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করা’ আমাদের একতাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে? (মীখা ৪:৩; ১ যোহন ৩:১০-১২)

(৬) পবিত্র আত্মা যিহোবার উপাসকদের মধ্যে সেই গুণগুলো উৎপন্ন করে, যেগুলো খ্রীষ্টীয় একতার জন্য খুবই জরুরি। “আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।”—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

ঈশ্বরের আত্মা যাতে আমাদের মধ্যে এর ফলগুলো উৎপন্ন করে, তার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (প্রেরিত ৫:৩২)

ঈশ্বরের আত্মা থাকলে তা কীভাবে সহ খ্রীষ্টানদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে? (যোহন ১৩:৩৫; ১ যোহন ৪:৮, ২০, ২১)

(৭) ঈশ্বরের সমস্ত সত্য উপাসক তাঁর রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে অংশ নেয়। “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.

এই প্রচার কাজে পুরোপুরি অংশ নিতে চাওয়ার জন্য কী আমাদের প্রেরণা দেবে? (মথি ২২:৩৭-৩৯; রোমীয় ১০:১০)

১১. আমরা যখন বাইবেলের সত্যগুলো আমাদের জীবনে কাজে লাগাই, তখন এর ফল কী হয়?

১১ যিহোবাকে একতাবদ্ধভাবে উপাসনা করা আমাদের তাঁর আরও কাছে নিয়ে আসে এবং সহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে সতেজতাদায়ক মেলামেশা করতে সাহায্য করে। গীতসংহিতা ১৩৩:১ পদ বলে: “দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে!” জগৎ ও এর স্বার্থপরতা, অনৈতিকতা এবং দৌরাত্ম্য থেকে বের হয়ে যারা যিহোবাকে সত্যিই ভালবাসে এবং তাঁর আইনগুলো মেনে চলে, তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়া কতই না সতেজতাদায়ক!

বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রভাবগুলো এড়িয়ে চলুন

১২. কেন আমাদের স্বাধীনচেতা মনোভাব এড়িয়ে চলা দরকার?

১২ সারা পৃথিবীতে আমাদের যে-মহামূল্যবান একতা রয়েছে তা যাতে নষ্ট না হয়, সেইজন্য আমাদের বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রভাবগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলোর একটা হল, ঈশ্বর ও তাঁর আইনগুলো থেকে স্বাধীন হওয়ার মনোভাব। এর উৎস, শয়তান দিয়াবলের মুখোশ খুলে দিয়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন, যাতে করে আমরা এটা এড়িয়ে চলতে পারি। (২ করিন্থীয় ৪:৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) শয়তানই আদম ও হবাকে ঈশ্বর যা বলেছিলেন, তা অগ্রাহ্য করতে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছিল। আর এর ফল ছিল তাদের ও আমাদের জন্য চরম দুর্দশা। (আদিপুস্তক ৩:১-৬, ১৭-১৯) এই জগৎ ঈশ্বর ও তাঁর আইনগুলো থেকে স্বাধীন হওয়ার মনোভাবে পূর্ণ। তাই, এই মনোভাবকে আমাদের দমন করা দরকার।

১৩. কী দেখাবে যে, ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে বসবাস করার জন্য আমরা আমাদের জীবনকে আসলেই তৈরি করছি কি না?

১৩ উদাহরণ হিসেবে, বর্তমান দুষ্ট জগতের বদলে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে” এমন নতুন স্বর্গ ও নতুন পৃথিবী নিয়ে আসার বিষয়ে যিহোবা যে-রোমাঞ্চকর প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। (২ পিতর ৩:১৩) এটা কি আমাদের সেই সময়ের ধার্মিকতাপূর্ণ পরিস্থিতিতে বসবাস করার জন্য তৈরি হতে প্রেরণা দেয় না? এর মানে হল বাইবেলের এই স্পষ্ট পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া: “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই।” (১ যোহন ২:১৫) তাই, আমরা এই জগতের আত্মা অর্থাৎ এর স্বাধীনচেতা মনোভাব, নিজের জন্য অতিরিক্ত চিন্তা করা, অনৈতিকতা ও দৌরাত্ম্য এড়িয়ে চলি। আমাদের অসিদ্ধ স্বভাবের বিপরীত প্রবণতাগুলো সত্ত্বেও, আমরা হৃদয় থেকে যিহোবার কথা শোনা এবং তাঁর আজ্ঞা পালন করাকে অভ্যাসে পরিণত করি। আমাদের সম্পূর্ণ জীবনধারা প্রমাণ দেয় যে, আমাদের চিন্তাভাবনা ও আমাদের উদ্দেশ্যগুলো ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।—গীতসংহিতা ৪০:৮.

১৪. (ক) কেন এখনই যিহোবার পথ সকল জানা এবং আমাদের জীবনে সেগুলো অনুসরণ করে চলার সুযোগ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) এই অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা শাস্ত্রপদগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে?

১৪ এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা এবং যারা এর রীতিনীতির সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে চায় তাদের সকলকে ধ্বংস করার জন্য যখন যিহোবার নিরূপিত সময় আসবে, তখন তিনি আর দেরি করবেন না। যারা এখনও জগতের সঙ্গে চলার চেষ্টা করছে কিন্তু আবার ঈশ্বরের ইচ্ছা জেনে অর্ধ হৃদয়ে তা পালন করছে, তাদের জন্য তিনি সেই সময় আটকে রাখবেন না বা তাঁর মানগুলোও পরিবর্তন করবেন না। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়! (লূক ১৩:২৩, ২৪; ১৭:৩২; ২১:৩৪-৩৬) তাই, বিরাট জনতাকে এই মহামূল্যবান সুযোগ গ্রহণ করতে, যিহোবা তাঁর বাক্য ও সংগঠনের মাধ্যমে যে-নির্দেশনা দিচ্ছেন, তা প্রাণপণ খোঁজার চেষ্টা করতে এবং নতুন জগতের দিকে পরিচালিত তাঁর পথে একতাবদ্ধভাবে চলতে দেখা কতই না উৎসাহজনক! আর যিহোবার সম্বন্ধে আমরা যত বেশি জানব, তত বেশি আমরা তাঁকে ভালবাসব ও তাঁর সেবা করতে চাইব।

পুনরালোচনা

• উপাসনা সম্বন্ধে যিহোবার উদ্দেশ্য কী?

• বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো জানার পর, আমাদের আর কোন কোন উন্নতি করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত?

• যিহোবার অন্য উপাসকদের সঙ্গে একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমরা কী করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

“মৃদুশীলেরা পৃথিবীর অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে”