ঈশ্বরের বাক্য দৃঢ়রূপে ধরে রাখুন
অধ্যায় তিন
ঈশ্বরের বাক্য দৃঢ়রূপে ধরে রাখুন
১. (ক) প্রাচীন ইস্রায়েল কীভাবে দেখেছিল যে, ঈশ্বরের বাক্য নির্ভরযোগ্য? (খ) কেন তা আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয়?
“তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪-১৬) প্রতিজ্ঞাত দেশে বসবাস করতে শুরু করার পর, ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গকে যিহোশূয় এই কথাগুলো বলেছিলেন। হ্যাঁ, যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয়েছিল। এই বিবরণ ও সেইসঙ্গে বাইবেলের বাকি সমস্ত বিবরণ আমাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে, যাতে “আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।”—রোমীয় ১৫:৪.
২. (ক) কোন অর্থে বাইবেল “ঈশ্বর-নিশ্বসিত”? (খ) বাইবেল যে ঈশ্বর-নিশ্বসিত, তা জানায় আমাদের কোন দায়িত্ব রয়েছে?
২ যদিও বাইবেল লিখতে ৪০ জন মনুষ্য লেখককে ব্যবহার করা হয়েছিল কিন্তু যিহোবা নিজেই হলেন এর মূল গ্রন্থকার। এর মানে কি এই যে, এটির সমস্ত লেখায় তিনি সক্রিয়ভাবে পরিচালনা দিয়েছিলেন? হ্যাঁ। তিনি তাঁর সক্রিয় শক্তি, শক্তিশালী পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তা করেছিলেন। প্রেরিত পৌল সত্যি কথাই বলেছিলেন: ‘প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি ঈশ্বর-নিশ্বসিত যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।’ সমস্ত জায়গায় যেসব লোকেরা এটা বিশ্বাস করেছে, তারা বাইবেলের কথায় মনোযোগ দেয় এবং এতে যা রয়েছে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করে।—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭; ১ থিষলনীকীয় ২:১৩.
এর প্রতি উপলব্ধি দেখাতে অন্যদের সাহায্য করুন
৩. যারা বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য বলে বিশ্বাস করে না, তাদের সাহায্য করার সবচেয়ে ভাল উপায় কী?
৩ আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলি তাদের অনেকেই বিশ্বাস করে না যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য। আমরা কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি? সাধারণত, বাইবেল খুলে এতে যা রয়েছে তা দেখানো হচ্ছে সবচেয়ে ভাল উপায়। “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়্গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ . . . এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১২) “ঈশ্বরের বাক্য” মৃত ইতিহাস নয়; এটি জীবন্ত! বাইবেলের প্রতিজ্ঞাগুলো দুর্বার গতিতে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলেছে। একজন ব্যক্তির হৃদয় থেকে আসা সত্যিকারের প্রেরণার ওপর বাইবেলের বার্তার প্রভাব, আমরা কাউকে উৎসাহিত করার জন্য যা কিছু বলি সেটার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৪. বাইবেলের সত্যের কোন ব্যাখ্যাগুলো, বাইবেল সম্বন্ধে কিছু লোকের মনোভাব পরিবর্তন করেছে এবং কেন?
৪ ঈশ্বরের নাম দেখে অনেকেই বাইবেলের আরও গভীরে যেতে কৌতূহলী হয়েছে। জীবনের উদ্দেশ্য, কেন ঈশ্বর দুষ্টতা থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, বর্তমান ঘটনাবলির তাৎপর্য কী বা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে, সেই বিষয়ে দেখানোর পর অন্যেরা বাইবেল অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে-দেশগুলোতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করায় লোকেরা মন্দ আত্মাদের দ্বারা বার বার নাজেহাল হয়েছে, সেখানে এর কারণ কী এবং কীভাবে এর থেকে রেহাই পাওয়া যায় সেই সম্বন্ধে বাইবেলের ব্যাখ্যা তাদের মধ্যে আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। কেন এই বিষয়গুলো আন্তরিক লোকেদের মনে দাগ কাটে? কারণ এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য একমাত্র বাইবেলেই রয়েছে।—গীতসংহিতা ১১৯:১৩০.
৫. (ক) লোকেরা যখন বলে যে তারা বাইবেল বিশ্বাস করে না, তখন এর কারণগুলো কী হতে পারে? (খ) এইরকম লোকেদের আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
৫ কিন্তু, লোকেরা যদি বলে যে তারা বাইবেল বিশ্বাস করে না, তা হলে কী? সেখানেই কি আলোচনা শেষ হয়ে যাবে? না, যদি তারা যুক্তি দেখতে চায়। হতে পারে যে, তারা বাইবেলকে খ্রীষ্টীয়জগতের বই বলে মনে করে। খ্রীষ্টীয়জগতের কপটতা ও রাজনৈতিক বিষয়ে এর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের ইতিহাস ও সেইসঙ্গে সবসময় অর্থ চাওয়াই হয়তো বাইবেলের প্রতি তাদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী। তাদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণ এটাই কি না, তা জিজ্ঞেস করুন না কেন? খ্রীষ্টীয়জগতের জাগতিক পথগুলোকে যে বাইবেল নিন্দা করে এই বিষয়টা ও সেইসঙ্গে খ্রীষ্টীয়জগৎ এবং সত্য খ্রীষ্টধর্মের মধ্যে পার্থক্য হয়তো তাদের মধ্যে আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারে।—মীখা ৩:১১, ১২; মথি ১৫:৭-৯; যাকোব ৪:৪.
৬. (ক) বাইবেল যে ঈশ্বরের বাক্য, তা বিশ্বাস করতে কী আপনাকে প্রভাবিত করেছে? (খ) বাইবেল যে সত্যি সত্যি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, তা বুঝতে লোকেদের সাহায্য করার জন্য আর কোন যুক্তিগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে?
৬ বাইবেল যে ঈশ্বর-নিশ্বসিত, তার প্রমাণগুলো নিয়ে অন্যদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করলে হয়তো ভাল ফল পাওয়া যাবে। কী আপনাকে স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে, বাইবেল যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে? এর উৎস সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, সেটা? নাকি বাইবেলের এমন ভবিষ্যদ্বাণীগুলো, যা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিশদভাবে জানায় ও দেখায় যে, সেগুলো ঐশিক উৎস থেকে এসেছে? (২ পিতর ১:২০, ২১) অথবা ৪০ জন ব্যক্তি প্রায় ১,৬০০ বছর ধরে লেখা সত্ত্বেও, বাইবেলের মধ্যে যে-চমৎকার মিল রয়েছে, সেটা? নাকি সেই সময়ের অন্যান্য লেখার তুলনায় এর বৈজ্ঞানিক সঠিকতা? কিংবা এর লেখকদের অকপটতা? অথবা এটিকে নষ্ট করে দেওয়ার অসৎ চেষ্টা সত্ত্বেও, আজও এর টিকে থাকা? ব্যক্তিগতভাবে আপনার মনে যে-বিষয়টা দাগ কেটেছে, সেটা অন্য লোকেদের সাহায্য করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। a
বাইবেল পড়া
৭, ৮. (ক) বাইবেল নিয়ে আমাদের কী করা উচিত? (খ) ব্যক্তিগতভাবে বাইবেল পড়া ছাড়াও, আমাদের আর কী করা দরকার? (গ) আপনি ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার উদ্দেশ্যগুলো কীভাবে বুঝেছেন?
৭ অন্যদের বাইবেলে বিশ্বাস করতে সাহায্য করা ছাড়াও, আমাদের নিজেদেরও নিয়মিত এটি পড়ার জন্য সময় করে নেওয়া দরকার। আপনি কি তা করছেন? এ পর্যন্ত যত বই প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, আমরা যদি নিজে নিজে বাইবেল পড়ি, তা হলে আর কোনো কিছুর দরকার নেই। শাস্ত্র নিজেদের পৃথক রাখার বিষয়ে সাবধান করে। আমাদের ভাবা উচিত নয় যে আমরা নিজে নিজে গবেষণা করে সমস্ত উত্তর বের করতে পারব। আমরা যদি ভারসাম্যপূর্ণ খ্রীষ্টান হতে চাই, তা হলে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করা ও সেইসঙ্গে ঈশ্বরের লোকেদের সভাগুলোতে নিয়মিত যোগ দেওয়া দরকার।—হিতোপদেশ ১৮:১; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
৮ এই সম্বন্ধে বাইবেল একজন ইথিওপীয় সরকারি কর্মকর্তা সম্বন্ধে বলে, যিনি যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে পড়ছিলেন। একজন দূত খ্রীষ্টান সুসমাচার প্রচারক ফিলিপকে ওই ব্যক্তির কাছে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পরিচালিত করেছিলেন: “আপনি যাহা পাঠ করিতেছেন, তাহা কি বুঝিতে পারিতেছেন?” নম্রভাবে ইথিওপীয় উত্তর দিয়েছিলেন: “কেহ আমাকে বুঝাইয়া না দিলে কেমন করিয়া বুঝিতে পারিব?” শাস্ত্রের ওই অংশটুকু বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ফিলিপকে অনুরোধ করেছিলেন। ফিলিপ শুধু নিজে নিজে বাইবেল পড়তেন না আর শাস্ত্রপদগুলো সম্বন্ধে তার নিজের মতামতও তুলে ধরেননি। ঈশ্বরের দৃশ্যত সংগঠনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। আর এই কারণেই তিনি, যিহোবা ওই সংগঠনের মাধ্যমে যে-নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার থেকে উপকার পাওয়ার জন্য ইথিওপীয়কে সাহায্য করতে পেরেছিলেন। (প্রেরিত ৬:৫, ৬; ৮:৫, ২৬-৩৫) একইভাবে আজকেও, কেউ নিজে নিজে যিহোবার উদ্দেশ্যগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। যিহোবা তাঁর দৃশ্যত সংগঠনের মাধ্যমে যে-সাহায্য জোগান, আমাদের সকলের তা দরকার।
৯. বাইবেল পড়ার কোন কার্যক্রম আমাদের সকলের উপকারে আসতে পারে?
৯ বাইবেল বুঝতে আমাদের সাহায্য করার জন্য, যিহোবার সংগঠন বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে চমৎকার শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু সরবরাহ করে। এ ছাড়াও, সারা পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষিদের সমস্ত মণ্ডলীতে যে-ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় হয়ে থাকে, সেখানে আমাদের জন্য নিয়মিত বাইবেল পড়ার একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে পবিত্র শাস্ত্র পরীক্ষা করা থেকে অনেক উপকার পাওয়া যেতে পারে। (গীতসংহিতা ১:১-৩; ১৯:৭, ৮) নিয়মিত বাইবেল পড়ার জন্য বিশেষ চেষ্টা করুন। যদিও আপনি সবকিছু পুরোপুরি বুঝবেন না, তবুও শাস্ত্র সম্বন্ধে আপনি যে-সার্বিক ধারণা লাভ করবেন, তা খুবই উপকারজনক হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আপনি যদি প্রতিদিন শুধু চার-পাঁচ পৃষ্ঠা করে পড়েন, তা হলে প্রায় এক বছরে আপনি পুরো বাইবেল পড়ে শেষ করতে পারবেন।
১০. (ক) আপনি কখন বাইবেল পড়েন? (খ) বাইবেল পড়ার সময় আর কাদের সঙ্গে নেওয়া উচিত এবং কেন এটা নিয়মিত করে যাওয়া জরুরি?
১০ আপনি কখন বাইবেল পড়তে পারেন? আপনি যদি এর জন্য দিনে মাত্র ১০ কী ১৫ মিনিট সময় আলাদা করে রাখেন, তবে আপনি অনেক উপকার পাবেন। যদি না পারেন, তা হলে অন্তত প্রতি সপ্তাহে সময় করে নিন এবং সেই তালিকা মেনে চলুন। আপনি যদি বিবাহিত হন, তা হলে আপনি ও আপনার সাথি একে অপরের সামনে জোরে জোরে বাইবেল পড়তে পারেন। যদি পড়তে পারে এমন ছেলেমেয়ে থাকে, তা হলে তাদেরও জোরে জোরে পড়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। খাবার খাওয়ার মতো, বাইবেল পড়াও সারাজীবনের অভ্যাস হওয়া উচিত। আপনি জানেন যে, একজন ব্যক্তি যদি যথেষ্ট খাবার না খায়, তা হলে তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে। আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনও সেইরকম আর আমাদের অনন্ত জীবন “ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়,” তা নিয়মিত গ্রহণ করার ওপর নির্ভর করে।—মথি ৪:৪.
আমাদের উদ্দেশ্য
১১. বাইবেল পড়ার বিষয়ে আমাদের উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত?
১১ বাইবেল পড়ার বিষয়ে আমাদের উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত? শুধু কিছু পৃষ্ঠা পড়াই আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। ঈশ্বরকে আরও ভালভাবে জানা আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, যাতে করে তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম বাড়াতে পারি এবং তাঁকে গ্রহণযোগ্যরূপে উপাসনা করতে পারি। (যোহন ৫:৩৯-৪২) আমাদের মনোভাব সেই বাইবেল লেখকের মতো হওয়া উচিত, যিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও।”—গীতসংহিতা ২৫:৪.
১২. (ক) কেন ‘তত্ত্বজ্ঞান’ লাভ করা জরুরি এবং সেই জ্ঞান লাভ করতে হলে পড়ার সময় কোন চেষ্টার দরকার? (খ) কোন চারটে বিষয় ব্যবহার করে আমরা বাইবেলে যা পড়ি, তা বিশ্লেষণ করে উপকার পেতে পারি? (৩০ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।) (গ) এই অনুচ্ছেদে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করুন। উদ্ধৃত নয় কিন্তু উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো দেখুন।
১২ যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ‘তত্ত্বজ্ঞান’ লাভ করার আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত। এটা ছাড়া, আমরা কীভাবে আমাদের জীবনে সঠিকভাবে ঈশ্বরের বাক্য কাজে লাগাতে পারব বা অন্যদের তা সঠিকভাবে বোঝাতে পারব? (কলসীয় ৩:১০; ২ তীমথিয় ২:১৫) তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার জন্য আমাদের ভালভাবে পড়া দরকার আর যদি কোনো অংশ বুঝতে কঠিন হয়, তা হলে আমাদের হয়তো এর সঠিক অর্থ আয়ত্ত করার জন্য শুধু সেই অংশটুকু একবার নয়, কয়েকবার পড়া দরকার। এ ছাড়াও, আমরা যদি বিষয়বস্তুর ওপর ধ্যান করার জন্য সময় করে নিই, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তা নিয়ে চিন্তা করি, তা হলে আমরা উপকার পাব। ৩০ পৃষ্ঠায় যুক্তি করার চারটে মূল্যবান উপায় দেওয়া হয়েছে, যা আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি। এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর যেকোনো একটা বা তারও বেশি ব্যবহার করে শাস্ত্রের অনেক অংশ উপকারজনকভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। আপনি যখন পরের পৃষ্ঠাগুলোতে দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দেবেন, তখন তা দেখতে পাবেন।
(১) আপনি শাস্ত্রের যে-অংশ পড়েন, তা প্রায়ই যিহোবা কীধরনের ব্যক্তি সেই সম্বন্ধে আপনাকে কিছু না কিছু বলতে পারে। যেমন, গীতসংহিতা ১৩৯:১৩, ১৪ পদে আমরা অজাত শিশুদের প্রতি ঈশ্বরের আন্তরিক আগ্রহ সম্বন্ধে জানি: “তুমি মাতৃগর্ব্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে। আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত; তোমার কর্ম্ম সকল আশ্চর্য্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।” যিহোবার সৃজনশীল কাজগুলো কতই না বিস্ময়কর! মানুষকে যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা আমাদের প্রতি তাঁর মহৎ প্রেমের প্রমাণ দেয়।
যোহন ১৪:৯, ১০ পদে যা বলা হয়েছে, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যখন যীশু অন্যদের সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করেছিলেন তা পড়ি, তখন আমরা সত্যিই বুঝি যে, যিহোবা নিজে কীরকম ব্যবহার করবেন। তা মনে রেখে, লূক ৫:১২, ১৩ এবং লূক ৭:১১-১৫ পদে লেখা ঘটনাগুলো থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারি?
(২) চিন্তা করুন যে, একটা বিবরণ কীভাবে বাইবেলের মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত: প্রতিজ্ঞাত বংশ, যীশু খ্রীষ্টের অধীনস্থ রাজ্যের মাধ্যমে যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপাদন এবং তাঁর নামের পবিত্রীকরণ।
যিহিষ্কেল ও দানিয়েল কীভাবে বাইবেলের মূল বিষয়বস্তুর ওপর জোর দিয়েছিলেন? (যিহিষ্কেল ৩৮:২১-২৩; দানিয়েল ২:৪৪; ৪:১৭; ৭:৯-১৪)
বাইবেল কীভাবে স্পষ্ট করে যীশুকে প্রতিজ্ঞাত বংশ হিসেবে শনাক্ত করে? (গালাতীয় ৩:১৬)
প্রকাশিত বাক্য কীভাবে রাজ্যের চমৎকার চূড়ান্ত পরিণতি সম্বন্ধে বর্ণনা করে? (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫; ১২:৭-১০; ১৭:১৬-১৮; ১৯:১১-১৬; ২০:১-৩; ২১:১-৫)
(৩) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে, আপনি যা পড়ছেন, তা কী করে ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগাতে পারেন? যেমন, আমরা যাত্রাপুস্তক থেকে দ্বিতীয় বিবরণ পর্যন্ত ইস্রায়েলের অনৈতিকতা ও বিদ্রোহ সম্বন্ধে পড়ি। আমরা জানতে পারি যে, এইরকম মনোভাব ও কাজ খারাপ পরিণতি নিয়ে ১ করিন্থীয় ১০:১১.
এসেছিল। তাই, ইস্রায়েলের খারাপ উদাহরণ অনুকরণ না করে আমাদের যিহোবাকে খুশি করতে চাওয়া উচিত। “এই সকল তাহাদের প্রতি দৃষ্টান্তস্বরূপে ঘটিয়াছিল, এবং আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে।”—কয়িন যে হেবলকে হত্যা করেছিল, সেই বিবরণে আমাদের জন্য কোন শিক্ষা রয়েছে? (আদিপুস্তক ৪:৩-১২; ইব্রীয় ১১:৪; ১ যোহন ৩:১০-১৫; ৪:২০, ২১)
যে-খ্রীষ্টানদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে তাদের জন্য বাইবেল যে-পরামর্শ দেয়, তা কি যাদের পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের আশা রয়েছে তাদের বেলায়ও খাটে? (গণনাপুস্তক ১৫:১৬; যোহন ১০:১৬)
যদিও খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে আমাদের ভাল অবস্থান রয়েছে, তবুও বাইবেলের যে-পরামর্শগুলো আমরা ইতিমধ্যেই জানি সেগুলো আরও পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর কথা আমাদের কেন বিবেচনা করা দরকার? (২ করিন্থীয় ১৩:৫; ১ থিষলনীকীয় ৪:১)
(৪) অন্যদের সাহায্য করার জন্য আপনি যা পড়ছেন, তা কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন সেই বিষয়ে ভেবে দেখুন। সমস্ত লোকই স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত, তাই যীশু রাজ্যের ক্ষমতায় এসে আরও বড় আকারে কী করবেন, সেটা দেখানোর জন্য তিনি যা করেছিলেন, তা আমরা তাদের সামনে পড়তে পারি: ‘বিস্তর লোক তাঁহার কাছে আসিতে লাগিল, তাহারা আপনাদের সঙ্গে খঞ্জ, অন্ধ, বোবা, নুলা এবং আরও অনেক লোককে লইয়া আসিল; আর তিনি তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন।’—যায়ীরের কন্যার পুনরুত্থানের বিবরণ থেকে কাদের সাহায্য করা যেতে পারে? (লূক ৮:৪১, ৪২, ৪৯-৫৬)
১৩. বাইবেল পড়ার নিয়মিত কার্যক্রম থেকে এবং যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে অধ্যয়ন করে আমরা কী ফল আশা করতে পারি?
১৩ ওপরে উল্লেখিত চারটে বিষয় যখন আমরা বিবেচনা করি, তখন বাইবেল পড়া কতই না পুরস্কারজনক হয়! এটা নিশ্চিত যে, বাইবেল পড়া একটা চ্যালেঞ্জ। তবে তা আমাদের সারাজীবনের জন্য উপকার আনতে পারে কারণ শাস্ত্র পড়ে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হব। নিয়মিত বাইবেল পড়া আমাদের প্রেমময় পিতা যিহোবার ও আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের আরও কাছে নিয়ে আসবে। এটি আমাদের দৃঢ়রূপে ‘জীবনের বাক্য ধরিয়া রাখিবার’ পরামর্শে মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।—ফিলিপীয় ২:১৬.
[পাদটীকা]
a কেন বাইবেল বিবেচনার যোগ্য, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত সমস্ত লোকের জন্য একটি পুস্তক (ইংরেজি) ব্রোশারটা দেখুন।
পুনরালোচনা
• কেন বাইবেল লেখা হয়েছিল আর আমাদের দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়েছে?
• কীভাবে আমরা বাইবেল বুঝতে ও এটিকে মহামূল্যবান মনে করতে অন্যদের সাহায্য করতে পারি?
• কেন ব্যক্তিগতভাবে নিয়মিত বাইবেল পড়া উপকারজনক? আমরা যা পড়ি, তা বিশ্লেষণ করে উপকার পাওয়ার জন্য কোন চারটে দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করা যেতে পারে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৩০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
আপনি যখন বাইবেলের একটা অংশ পড়েন, তখন চিন্তা করুন
একজন ব্যক্তি হিসেবে, যিহোবা সম্বন্ধে এটি কী বলে
বাইবেলের সার্বিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে এটি কীভাবে সম্পর্কযুক্ত
আপনার নিজের জীবনকে এটি কীভাবে প্রভাবিত করবে
অন্যদের সাহায্য করার জন্য আপনি কীভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন