একমাত্র সত্য ঈশ্বর হিসেবে যিহোবাকে মহিমান্বিত করুন
অধ্যায় দুই
একমাত্র সত্য ঈশ্বর হিসেবে যিহোবাকে মহিমান্বিত করুন
১. একমাত্র সত্য ঈশ্বর কে?
বাইবেল বলে যে, ঈশ্বর বলে মনে করা হয় এমন অনেকে থাকলেও “আমাদের জ্ঞানে একমাত্র ঈশ্বর সেই পিতা।” (১ করিন্থীয় ৮:৫, ৬) সেই একমাত্র ঈশ্বর হলেন, সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা যিহোবা। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) যীশু তাঁকে “আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (যোহন ২০:১৭) তিনি মোশির সঙ্গে একমত ছিলেন, যিনি আগে বলেছিলেন: “সদাপ্রভুই [“যিহোবাই সত্য,” NW] ঈশ্বর, তিনি ব্যতীত আর কেহ নাই।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩৫) উপাসনার যেকোনো বস্তু যেমন মূর্তি, যে-মানুষদের দেবতা হিসেবে উপাসনা করা হয় তারা অথবা তাঁর শত্রু, “এই যুগের দেব” শয়তান দিয়াবল থেকে যিহোবা হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। (২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪) এই সমস্ত কিছুর বিপরীতে, যিহোবা হলেন ‘একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর’ যেমন যীশু তাঁকে বলেছিলেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—যোহন ১৭:৩.
২. ঈশ্বর সম্বন্ধে জানা আমাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
২ কৃতজ্ঞ লোকেরা, যারা ঈশ্বরের হৃদয়গ্রাহী গুণগুলো ও সেইসঙ্গে তিনি আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন ও ভবিষ্যতে যা করবেন সেই সম্বন্ধে শেখে, তারা তাঁর কাছে আসে। যিহোবার প্রতি তাদের ভালবাসা যত বাড়ে, তাঁর মহিমা করার জন্য তারা তত বেশি প্রেরণা পায়। কীভাবে? একটা উপায় হল, অন্যদের তাঁর সম্বন্ধে বলে। রোমীয় ১০:১০ পদ বলে, “লোকে . . . মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য।” আরেকটা উপায় হল, কথায় ও কাজে তাঁকে অনুকরণ করে। ইফিষীয় ৫:১ পদ বলে, “প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।” তা আরও ভালভাবে করার জন্য যিহোবার আসল ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আমাদের জানা দরকার।
৩. ঈশ্বরের প্রধান গুণগুলো কী কী?
৩ পুরো বাইবেলে এমন অনেক বিবরণ রয়েছে, যা ঈশ্বরের উল্লেখযোগ্য গুণগুলোকে শনাক্ত করে। তাঁর চারটে প্রধান গুণ হল প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, শক্তি ও প্রেম। “তাঁহার নিকটে প্রজ্ঞা আছে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইয়োব ১২:১৩) “তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) তাঁর ‘শক্তি প্রবল।’ (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যিশাইয় ৪০:২৬) “ঈশ্বর প্রেম।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ যোহন ৪:৮) কিন্তু, ঈশ্বরের চারটে প্রধান গুণের মধ্যে কোনটা সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য, যে-গুণটা অন্যগুলোর চেয়ে আরও বেশি দেখায় যে, ঈশ্বর কীরকম ব্যক্তি?
“ঈশ্বর প্রেম”
৪. ঈশ্বরের গুণগুলোর মধ্যে কোনটা প্রধান, যা তাঁকে নিখিলবিশ্ব ও সমস্ত জীবিত বস্তু সৃষ্টি করতে প্রেরণা দিয়েছিল?
৪ ভেবে দেখুন যে, কোন বিষয়টা যিহোবাকে নিখিলবিশ্ব, বুদ্ধিমান আত্মিক প্রাণী এবং মানুষ সৃষ্টি করতে প্রেরণা দিয়েছিল? তাঁর প্রজ্ঞা নাকি শক্তি? ঈশ্বর যদিও এগুলো ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু এই শক্তিগুলো তাঁকে প্রেরণা দেয়নি। আর দান হিসেবে জীবন দেওয়ার জন্যও তাঁর ন্যায়বিচারের দরকার ছিল না। বরং, ঈশ্বরের মহৎ প্রেম তাঁকে বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে অস্তিত্বে থাকার আনন্দ অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রেরণা দিয়েছিল। প্রেমই তাঁকে এই উদ্দেশ্য স্থির করতে পরিচালিত করেছিল যে, বাধ্য মানবজাতি পরমদেশে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:১৫) আদমের পাপ, মানবজাতির ওপর যে-নিন্দা নিয়ে এসেছিল তা দূর করার জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রেমই তাঁকে পরিচালিত করেছিল।
৫. বাইবেল অনুযায়ী, যিহোবা কোন গুণের মূর্ত প্রতীক এবং কেন?
৫ সুতরাং, ঈশ্বরের সমস্ত গুণের মধ্যে তাঁর প্রেমই হল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এটাই হল তাঁর মুখ্য বৈশিষ্ট্য। তাঁর প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার ও শক্তি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বাইবেল কখনোই বলে না যে, যিহোবা হলেন সেই গুণগুলোর একটা। কিন্তু, এটি বলে যে তিনি হলেন প্রেম। হ্যাঁ, যিহোবা হলেন প্রেমের মূর্ত প্রতীক। এই প্রেম আবেগ নয় কিন্তু নীতির দ্বারা পরিচালিত। ঈশ্বরের প্রেম সত্য ও ধার্মিকতার নীতিগুলো দ্বারা পরিচালিত। এটা হল সর্বোচ্চ প্রেম, যা যিহোবা ঈশ্বরের উদাহরণ থেকেই দেখা যায়। এইরকম প্রেম সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থপরতার প্রকাশ এবং সবসময় স্পষ্ট প্রমাণের কাজগুলোর মাধ্যমে দেখা যায়।
৬. যদিও ঈশ্বর আমাদের চেয়ে হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ, তবুও কোন বিষয়টা তাঁকে অনুকরণ করতে আমাদের সাহায্য করে?
৬ এই চমৎকার গুণ প্রেমই আমাদের এইরকম একজন ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে সাহায্য করে। হীন, অসিদ্ধ, ভুল প্রবণ মানুষ হিসেবে আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে, আমরা কখনোই তা সফলভাবে করতে পারব না। কিন্তু এখানে যিহোবার মহৎ প্রেমের আরেকটা উদাহরণ রয়েছে: তিনি আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন আর তাই আমাদের কাছে সবকিছু নিখুঁত আশা করেন না। তিনি জানেন যে, এখন আমরা সিদ্ধ নই। (গীতসংহিতা ৫১:৫) এই জন্য গীতসংহিতা ১৩০:৩, ৪ পদ বলে: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে? কিন্তু তোমার কাছে ক্ষমা আছে।” হ্যাঁ, যিহোবা হলেন ‘করুণাময় ও সদয় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং প্রেমপূর্ণ-দয়াতে মহান।’ (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, NW) “হে প্রভু, তুমি মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্।” (গীতসংহিতা ৮৬:৫) কতই না সান্ত্বনাদায়ক! এইরকম বিস্ময়কর ঈশ্বরকে সেবা করা ও তাঁর প্রেমপূর্ণ, করুণাময় যত্ন লাভ করা কতই না সতেজতাদায়ক!
৭. যিহোবার প্রেম কীভাবে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দেখা যেতে পারে?
৭ যিহোবার প্রেম তাঁর সৃষ্টির মধ্যেও দেখা যেতে পারে। আমাদের আনন্দের জন্য যিহোবা যে-ভাল ভাল জিনিসগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর কথা চিন্তা করুন যেমন, সুন্দর সুন্দর পাহাড়, অরণ্য, হ্রদ এবং সমুদ্র। স্বাদ উপভোগ করার এবং বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি আমাদের বিভিন্ন রকমের খাবার দিয়েছেন। এ ছাড়াও, যিহোবা নানারকমের সুবাসযুক্ত সুন্দর সুন্দর ফুল ও সেইসঙ্গে মনোরম পশুপাখি দিয়েছেন। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেছেন, যদিও এগুলো তৈরি করার জন্য তিনি বাধ্য ছিলেন না। এটা ঠিক যে, আমাদের বর্তমান অসিদ্ধ অবস্থায় এই দুষ্ট জগতে বসবাস করে আমরা তাঁর সৃষ্টিকে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি না। (রোমীয় ৮:২২) কিন্তু, যিহোবা পরমদেশে আমাদের জন্য কী করবেন, তা একবার কল্পনা করুন! গীতরচক আমাদের আশ্বাস দেন: “তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর [সঠিক] বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬.
৮. আমাদের জন্য যিহোবার প্রেমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ কী?
৮ মানবজাতির জন্য যিহোবার প্রেমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ কী? বাইবেল বলে: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) মানুষ ভাল ছিল বলে কি যিহোবা এটা করেছিলেন? রোমীয় ৫:৮ পদ উত্তর দেয়: “ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” হ্যাঁ, আমাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করার জন্য ঈশ্বর তাঁর সিদ্ধ পুত্রের জীবন মুক্তির মূল্যরূপে দান করতে তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। (মথি ২০:২৮) যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে সেই লোকেদের জন্য এটা অনন্ত জীবন পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল। আনন্দের বিষয় হল যে, ঈশ্বরের প্রেম তাদের সকলের জন্য, যারা তাঁর ইচ্ছা পালন করতে চায় কারণ বাইবেল আমাদের বলে: “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.
৯. যিহোবা তাঁর পুত্রকে আমাদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়েছেন, এই বিষয়টা আমাদের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে?
৯ যিহোবা তাঁর পুত্রকে আমাদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়ে অনন্ত জীবনের যে-পথ খুলে দিয়েছেন, সেই বিষয়টা আমরা এখন যেভাবে আমাদের জীবন ব্যবহার করছি তাতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে? এই বিষয়টা সত্য ঈশ্বর যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেমকে গভীর করবে। সেইসঙ্গে যীশুর কথা শোনার জন্য আমাদের প্রভাবিত করবে, যিনি ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করেন। “[যীশু] সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে, যিনি তাহাদের জন্য মরিয়াছিলেন।” (২ করিন্থীয় ৫:১৫) যীশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করা কতই না আনন্দের, কারণ যিহোবার প্রেম এবং করুণা অনুকরণ করার ক্ষেত্রে তিনি আদর্শ ছিলেন! যীশু নম্র লোকেদের যা বলেছিলেন তার মধ্যে দিয়ে এটা প্রকাশ পেয়েছে: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব [“সতেজ করব,” NW]। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে [“সতেজতা লাভ করবে,” NW]। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।”—মথি ১১:২৮-৩০.
অন্যদের প্রতি প্রেম দেখানো
১০. কিছু উপায় কী, যার মাধ্যমে আমরা সহ খ্রীষ্টানদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি?
১০ আমাদের প্রতি যিহোবা ও যীশুর যে-প্রেম আছে সেই একইরকম প্রেম যে আমাদের সহ খ্রীষ্টানদের প্রতিও রয়েছে, তা আমরা কীভাবে দেখাতে পারি? আমরা যে-অনেক উপায়ে তা দেখাতে পারি, সেটা লক্ষ করুন: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮; ১ যোহন ৩:১৪-১৮; ৪:৭-১২.
১১. আর কাদের প্রতি আমাদের প্রেম দেখানো উচিত এবং কীভাবে?
১১ আর কাদের প্রতি আমাদের প্রেম দেখানো উচিত এবং কীভাবে? যীশু বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০) এর মধ্যে রয়েছে যারা এখনও আমাদের সহ খ্রীষ্টান নয়, তাদের কাছে ঈশ্বরের আসন্ন পরমদেশতুল্য নতুন জগতের সুসমাচার প্রচার করা। যীশু স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিলেন যে, যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী শুধু তাদের মধ্যেই আমাদের প্রেম সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় কারণ তিনি বলেছিলেন: “যাহারা তোমাদিগকে প্রেম করে, [শুধু] তাহাদিগকেই প্রেম করিলে তোমাদের কি পুরস্কার হইবে? করগ্রাহীরাও কি সেই মত করে না? আর তোমরা যদি কেবল আপন আপন ভ্রাতৃগণকে মঙ্গলবাদ কর, তবে অধিক কি কর্ম্ম কর? পরজাতীয়েরাও কি সেইরূপ করে না?”—মথি ৫:৪৬, ৪৭; ২৪:১৪; গালাতীয় ৬:১০.
‘যিহোবার নামে চলুন’
১২. কেন ঈশ্বরের নাম শুধু তাঁর প্রতিই প্রযোজ্য?
১২ সত্য ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল তাঁর অদ্বিতীয় নাম যিহোবা সম্বন্ধে জানা, ব্যবহার করা এবং অন্যদের তা শেখানো। গীতরচক তার মনের এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন: “আর জানুক যে তুমি, যাঁহার নাম সদাপ্রভু, [“যিহোবা,” NW] একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) যিহোবা নামের অর্থ হল, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” তিনি মহান উদ্দেশ্যকারী, সবসময় তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সফলভাবে পরিপূর্ণ করেন। আর একমাত্র সত্য ঈশ্বরই সেই নাম বহন করতে পারেন কারণ মানুষ কখনোই নিশ্চিতভাবে জানে না যে, তাদের প্রচেষ্টাগুলো সফল হবে কি না। (যাকোব ৪:১৩, ১৪) একমাত্র যিহোবাই বলতে পারেন যে, তিনি যে-উদ্দেশ্যে তাঁর বাক্য পাঠান “সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।” (যিশাইয় ৫৫:১১) অনেকে যখন তাদের বাইবেলে ঈশ্বরের নাম প্রথম দেখে এবং এর মানে কী তা শেখে, তখন রোমাঞ্চিত হয়। (যাত্রাপুস্তক ) কিন্তু, তারা এই জ্ঞান থেকে একমাত্র তখনই উপকার পাবে, যদি তারা ‘চিরকাল সদাপ্রভুর [যিহোবার, NW] নামে চলে।’— ৬:৩মীখা ৪:৫.
১৩. যিহোবার নাম জানা এবং তাঁর নামে চলার সঙ্গে কী জড়িত?
১৩ ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে গীতসংহিতা ৯:১০ পদ বলে: “যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে বিশ্বাস রাখিবে।” এর সঙ্গে শুধু যিহোবার নাম জানার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত, যার মানে এই নয় যে, তাঁর ওপর আস্থা এমনি এমনি চলে আসবে। ঈশ্বরের নাম জানা মানে যিহোবা কীধরনের ঈশ্বর তা বোঝা ও এর জন্য কৃতজ্ঞ থাকা, তাঁর কর্তৃত্বকে সম্মান করা, তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করা, সমস্ত বিষয়ে তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখা। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) একইভাবে, যিহোবার নামে চলা মানে তাঁর প্রতি উৎসর্গীকৃত হওয়া এবং তাঁর একজন উপাসক হিসেবে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করা, ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে আমাদের জীবন ব্যবহার করাকেও বোঝায়। (লূক ১০:২৭) আপনি কি তা করছেন?
১৪. আমরা যদি চিরকাল যিহোবাকে সেবা করতে চাই, তা হলে কর্তব্যবোধের পাশাপাশি আর কী দরকার?
১৪ আমরা যদি চিরকাল যিহোবাকে সেবা করতে চাই, তা হলে কর্তব্যবোধের চেয়ে আরও বেশি কিছু আমাদের প্রেরণা দেবে। তীমথিয়, যিনি অনেক বছর ধরে যিহোবার সেবা করে চলেছিলেন তাকে প্রেরিত পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ভক্তিতে [“ঈশ্বরীয় ভক্তিতে,” NW] দক্ষ হইতে অভ্যাস কর।” (১ তীমথিয় ৪:৮) যাকে ভক্তি দেখানো হয়, সেই ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরা হৃদয় থেকে ভক্তি আসে। ‘ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি’ ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। এটা তাঁর ও তাঁর মানগুলোর প্রতি অসীম শ্রদ্ধার জন্য তাঁর প্রতি প্রেমপূর্ণ আসক্তিকে প্রকাশ করে। ভক্তি থাকায় আমরা চাই যেন প্রত্যেকে তাঁর নামকে গভীর শ্রদ্ধা করে। আমরা যদি চিরকাল একমাত্র সত্য ঈশ্বর যিহোবার নামে চলতে চাই, তা হলে আমাদের জীবনে ঈশ্বরীয় ভক্তি গড়ে তুলতে হবে।—গীতসংহিতা ৩৭:৪; ২ পিতর ৩:১১.
১৫. কীভাবে আমরা ঈশ্বরকে আমাদের একাগ্র ভক্তি দেখাতে পারি?
১৫ গ্রহণযোগ্যরূপে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য, আমাদের তাঁকে পূর্ণ উপাসনা দিতে হবে কারণ তিনি “স্বগৌরব [“একাগ্র ভক্তি,” NW] রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর।” (যাত্রাপুস্তক ২০:৫) আমরা একই সঙ্গে ঈশ্বর এবং দুষ্ট জগৎ, যার দেব হল শয়তান, তাকে প্রেম করতে পারি না। (যাকোব ৪:৪; ১ যোহন ২:১৫-১৭) যিহোবা জানেন যে, আমরা প্রত্যেকে কীধরনের ব্যক্তি হওয়ার চেষ্টা করছি। (যিরমিয় ১৭:১০) আমরা যদি সত্যিই ধার্মিকতাকে প্রেম করি, তা হলে তিনি তা দেখেন এবং আমাদের প্রতিদিনের পরীক্ষাগুলো সহ্য করার জন্য সাহায্য করবেন। তাঁর শক্তিশালী পবিত্র আত্মা দিয়ে আমাদের সমর্থন জুগিয়ে, তিনি এই জগতের চারিদিকে বেড়ে চলা দুষ্টতার ওপর জয়ী হতে আমাদের সাহায্য করবেন। (২ করিন্থীয় ৪:৭) এ ছাড়াও, তিনি আমাদের পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের দৃঢ় আশা রাখতে সাহায্য করবেন। এটা কতই না চমৎকার আশা! এর জন্য আমাদের গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এবং স্বেচ্ছায় সত্য ঈশ্বর যিহোবা, যিনি এটা সম্ভব করেছেন তাঁর সেবা করা উচিত।
১৬. লক্ষ লক্ষ লোকের সঙ্গে আপনি কী করতে চাইবেন?
১৬ সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোক আনন্দের সঙ্গে গীতরচকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে, যিনি লিখেছিলেন: “আমার সহিত সদাপ্রভুর মহিমা কীর্ত্তন কর; আইস, আমরা একসঙ্গে তাঁহার নামের প্রতিষ্ঠা করি।” (গীতসংহিতা ৩৪:৩) সমস্ত জাতির মধ্যে থেকে যারা এটা করছে, সেই বেড়ে চলা লক্ষ লক্ষ লোকের মধ্যে থাকার জন্য যিহোবা আপনাকে আমন্ত্রণ জানান।
পুনরালোচনা
• যিহোবা কীধরনের ব্যক্তি? তাঁর গুণগুলো সম্বন্ধে ভাল করে জেনে আমরা কীভাবে উপকার পাই?
• আমরা কীভাবে অন্য লোকেদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শেখাতে সাহায্য করতে পারি?
• যিহোবার নাম জানা ও তাঁর নামে চলার সঙ্গে কী জড়িত?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবা তাঁর মহৎ প্রেমের জন্য ‘আপন হস্ত মুক্ত করিবেন ও সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিবেন’