সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যাঁর সম্বন্ধে সমস্ত ভাববাদী সাক্ষ্য দিয়েছিল

যাঁর সম্বন্ধে সমস্ত ভাববাদী সাক্ষ্য দিয়েছিল

অধ্যায় চার

যাঁর সম্বন্ধে সমস্ত ভাববাদী সাক্ষ্য দিয়েছিল

১. যীশুর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্ব সম্বন্ধীয় বিষয়গুলো যিহোবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সম্বন্ধে কী দেখায়?

 “পিতা পুত্রকে ভালবাসেন, এবং আপনি যাহা যাহা করেন, সকলই তাঁহাকে দেখান।” (যোহন ৫:২০) পুত্র তাঁর পিতা যিহোবার সঙ্গে কত উষ্ণ সম্পর্কই না উপভোগ করেছিলেন! এই কাছের সম্পর্ক মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার অগণিত বছর আগে, তাঁর সৃষ্টির সময় থেকে শুরু হয়েছিল। তিনি ঈশ্বরের একজাত পুত্র ছিলেন, যাঁকে যিহোবা নিজে সরাসরি সৃষ্টি করেছিলেন। স্বর্গ ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু সেই প্রিয় প্রথমজাত পুত্রের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। (কলসীয় ১:১৫, ১৬) এ ছাড়াও, তিনি ঈশ্বরের বাক্য বা মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছিলেন, যাঁর মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছা অন্যদের জানানো হয়েছিল। এই পুত্র, যিনি ঈশ্বরের বিশেষ প্রীতির পাত্র ছিলেন, তিনিই মানুষ যীশু খ্রীষ্ট হয়েছিলেন।—হিতোপদেশ ৮:২২-৩০; যোহন ১:১৪, ১৮; ১২:৪৯, ৫০.

২. যীশু সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কতটা ব্যাপকভাবে উল্লেখ করেছিল?

ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র, মানুষ হিসেবে গর্ভে জন্মানোর আগে, তাঁর সম্বন্ধে অনেক অনেক অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণী লেখা হয়েছিল। কর্ণীলিয়ের কাছে প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: ‘তাঁহার পক্ষে ভাববাদীরা সকলে সাক্ষ্য দিয়াছিলেন।’ (প্রেরিত ১০:৪৩) যীশুর ভূমিকা সম্বন্ধে বাইবেলে এতটা ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছিল যে একজন দূত, প্রেরিত যোহনকে বলেছিলেন: “যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা।” (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০) ওই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো স্পষ্টভাবে তাঁকে মশীহ হিসেবে শনাক্ত করেছিল। এগুলো ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণতায় তিনি যে-বিভিন্ন ভূমিকা পালন করবেন, সেই বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এই সমস্ত কিছু আজকে আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত।

ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যা প্রকাশ করেছিল

৩. (ক) আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের ভবিষ্যদ্বাণীতে সর্প, ‘নারী’ ও ‘সর্পের বংশ’ কাদের চিত্রিত করে? (খ) ‘সর্পের মস্তক চূর্ণ করা’ যিহোবার দাসদের জন্য কেন অতি আগ্রহের বিষয় হবে?

এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রথমটা এদনে বিদ্রোহ ঘটার পর বলা হয়েছিল। যিহোবা সর্পকে বলেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) ওই ভবিষ্যদ্বাণী আসলে সর্প দ্বারা চিত্রিত শয়তানের উদ্দেশে বলা হয়েছিল। ‘নারী’ হল যিহোবার নিজের অনুগত স্বর্গীয় সংগঠন, যেটি তাঁর বিশ্বস্ত স্ত্রীর মতো। ‘সর্পের বংশের’ অন্তর্ভুক্ত হল সেই সমস্ত দূত ও মানুষেরা, যারা শয়তানের আত্মাকে প্রকাশ করে এবং যিহোবা ও তাঁর লোকেদের বিরোধিতা করে। ‘সর্পের মস্তক চূর্ণ করা’ মানে বিদ্রোহী শয়তান, যে যিহোবাকে অপবাদ দিয়েছিল ও মানবজাতির জন্য দুঃখ নিয়ে এসেছিল, তার চরম ধ্বংস। কিন্তু ‘বংশের’ প্রধান অংশ, যিনি চূর্ণ করবেন তাঁর পরিচয় কী? শত শত বছর ধরে তা এক ‘নিগূঢ়তত্ত্ব’ ছিল।—রোমীয় ১৬:২০, ২৫, ২৬.

৪. কীভাবে যীশুর বংশ তাঁকে প্রতিজ্ঞাত বংশ হিসেবে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল?

মানব ইতিহাসের প্রায় ২,০০০ বছর পরে, যিহোবা আরও বিস্তারিত কিছু জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, ওই বংশ অব্রাহামের কুল থেকে আসবে। (আদিপুস্তক ২২:১৫-১৮) তবে, ওই বংশ যে-কুল থেকে আসবে, তা স্বাভাবিক বংশধরের ওপর নয় কিন্তু ঈশ্বর যাকে মনোনীত করবেন তার ওপর নির্ভর করবে। হাগারের গর্ভজাত অব্রাহামের পুত্র ইশ্মায়েলের জন্য অব্রাহামের ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও, যিহোবা বলেছিলেন: “সারা তোমার নিমিত্তে যাহাকে প্রসব করিবে, সেই ইস্‌হাকের সহিত আমি আপন নিয়ম স্থাপন করিব।” (আদিপুস্তক ১৭:১৮-২১) পরে, ইস্‌হাকের বড় ছেলে এষৌর কাছে নয় কিন্তু যার কাছ থেকে ইস্রায়েলের ১২ বংশ এসেছিল, সেই যাকোবের কাছে ওই চুক্তির বিষয়টা নিশ্চিত করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২৮:১০-১৪) পরে, বলা হয়েছিল যে ওই বংশ যিহূদার গোষ্ঠীতে, দায়ূদের কুল থেকে আসবে।—আদিপুস্তক ৪৯:১০; ১ বংশাবলি ১৭:৩, ৪, ১১-১৪.

৫. যীশু যখন পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যা শুরু করেছিলেন, তখন কী প্রমাণ দিয়েছিল যে তিনিই মশীহ?

বংশের পরিচয় সম্বন্ধে আর কোন কোন সূত্র দেওয়া হয়েছিল? ৭০০ বছরেরও বেশি আগে, বাইবেল বৈৎলেহমকে প্রতিজ্ঞাত বংশের জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছিল। এতে এও বলা হয়েছিল যে, ওই বংশ ইতিমধ্যেই “অনাদিকাল হইতে,” স্বর্গে তাঁর সৃষ্টি হওয়ার সময় থেকে অস্তিত্বে ছিলেন। (মীখা ৫:২) এ ছাড়া, মশীহ হিসেবে তাঁর পৃথিবীতে প্রকাশ পাওয়ার সঠিক সময় সম্বন্ধেও ভাববাদী দানিয়েলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। (দানিয়েল ৯:২৪-২৬) আর যীশু যখন পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন অর্থাৎ যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি হয়েছিলেন, তখন স্বর্গ থেকে ঈশ্বরের নিজের স্বর যীশুকে তাঁর পুত্র হিসেবে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করেছিল। (মথি ৩:১৬, ১৭) বংশ কে, তা প্রকাশ পেয়েছিল! তাই, ফিলিপ জোরের সঙ্গে বলতে পেরেছিলেন: “মোশি ব্যবস্থায় ও ভাববাদিগণ যাঁহার কথা লিখিয়াছেন, আমরা তাঁহার দেখা পাইয়াছি; তিনি . . . যীশু।”—যোহন ১:৪৫.

৬. (ক) লূক ২৪:২৭ পদ অনুসারে, যীশুর অনুসারীরা কোন বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল? (খ) ‘নারীর বংশের’ প্রধান অংশ কে এবং তাঁর দ্বারা সর্পের মস্তক চূর্ণ হওয়ার মানে কী?

এরপরে, যীশুর অনুসারীরা বুঝতে পেরেছিল যে, তাঁর সম্বন্ধে যে-ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করা ছিল, তা অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের অংশ হয়েছে। (লূক ২৪:২৭) এটা আরও স্পষ্ট হয়েছিল যে, যীশু ‘নারীর বংশের’ প্রধান অংশ ছিলেন, যিনি সর্পের মস্তক চূর্ণ করবেন অর্থাৎ শয়তানের অস্তিত্বকে ধ্বংস করবেন। যীশুর মাধ্যমে মানবজাতির কাছে করা ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা, যে-সমস্ত বিষয়গুলোর জন্য আমরা মনেপ্রাণে অপেক্ষা করে আছি, সেগুলো পরিপূর্ণ হবে।—২ করিন্থীয় ১:২০.

৭. ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে উল্লেখ করা ব্যক্তির পরিচয় ছাড়াও, আরও কী বোঝা উপকারী?

এটা জানা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করবে? বাইবেল ইথিওপীয় নপুংসকের কথা বলে, যিনি ভাবী মুক্তিদাতা ও মশীহ সম্বন্ধে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর কয়েকটা পড়েছিলেন। কোনো কিছু বুঝতে না পেরে, তিনি সুসমাচার প্রচারক ফিলিপকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ভাববাদী কাহার বিষয়ে এই কথা কহেন?” কিন্তু নপুংসক যখন প্রশ্নের উত্তর পেয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানেই বিষয়টার শেষ বলে মনে করেননি। ফিলিপের ব্যাখ্যা মনোযোগ দিয়ে শোনার পরে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি উপলব্ধি দেখানোর জন্য তাকে কাজ করতে হবে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার বাপ্তিস্ম নেওয়া দরকার। (প্রেরিত ৮:৩২-৩৮; যিশাইয় ৫৩:৩-৯) আমরাও কি একইভাবে সাড়া দিই?

৮. (ক) ইস্‌হাককে উৎসর্গ করার জন্য অব্রাহামের পদক্ষেপ কীসের পূর্বাভাস দিয়েছিল? (খ) কেন যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন যে, বংশের মাধ্যমে সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে আর এটা কীভাবে আজকে আমাদের প্রতি প্রযোজ্য?

এ ছাড়া, সারার গর্ভজাত অব্রাহামের একমাত্র পুত্র ইস্‌হাককে উৎসর্গ করার জন্য তার পদক্ষেপ নেওয়ার মর্মস্পর্শী ঘটনাটাও বিবেচনা করুন। (আদিপুস্তক ২২:১-১৮) এটা যিহোবা কী করবেন তার পূর্বাভাস দিয়েছিল অর্থাৎ তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে উৎসর্গ করবেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) এটা আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, যিহোবা যেমন তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তাঁর একজাত পুত্রকে দান করেছিলেন, তেমনই তিনি “সমস্তই আমাদিগকে অনুগ্রহ-পূর্ব্বক দান করিবেন।” (রোমীয় ৮:৩২) আমাদের কী করা দরকার? আদিপুস্তক ২২:১৮ পদে যেমন লেখা আছে, যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন যে, তিনি বংশের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আশীর্বাদ করবেন “কারণ [অব্রাহাম ঈশ্বরের] বাক্যে অবধান” করেছিলেন। আমাদেরও যিহোবা ও তাঁর পুত্রের কথা শোনা দরকার: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।”—যোহন ৩:৩৬.

৯. যীশুর বলিদানের মাধ্যমে অনন্ত জীবনের আশা পাওয়ায় আমরা যদি কৃতজ্ঞ হই, তা হলে আমরা কী করব?

যীশুর বলিদানের মাধ্যমে অনন্ত জীবনের আশা পাওয়ায় আমরা যদি কৃতজ্ঞ হই, তা হলে যীশুর মাধ্যমে যিহোবা আমাদের কাছে যা কিছু বলেছেন, আমরা সেগুলো পালন করতে চাইব। এই আজ্ঞাগুলো ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের প্রতি আমাদের প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। (মথি ২২:৩৭-৩৯) যীশু দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম ‘[যীশু আমাদিগকে] যাহা যাহা আজ্ঞা করেছিলেন সে সমস্ত পালন করিবার জন্য’ অন্যদের শিক্ষা দিতে প্রেরণা দেবে। (মথি ২৮:১৯, ২০) আর আমরা সেই প্রেম যিহোবার সহ দাসদের সঙ্গে নিয়মিত “সমাজে সভাস্থ” হয়ে ভাগ করে নিতে চাই। (ইব্রীয় ১০:২৫; গালাতীয় ৬:১০) এ ছাড়া, ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের কথা শোনার সময় আমাদের মনে করা উচিত নয় যে, তাঁরা আমাদের কাছ থেকে সবকিছু নিখুঁত দাবি করেন। ইব্রীয় ৪:১৫ পদ বলে যে, আমাদের মহাযাজক হিসেবে যীশু “আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে” পারেন। এটা কতই না সান্ত্বনা দেয়, বিশেষ করে আমাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য চেয়ে খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি!—মথি ৬:১২.

খ্রীষ্টে বিশ্বাস দেখান

১০. যীশু খ্রীষ্ট ছাড়া কেন পরিত্রাণ নেই?

১০ বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী যে যীশুতে পরিপূর্ণ হয়েছে, তা যিরূশালেমের যিহুদি মহাসভায় বলার পর, পিতর জোরালোভাবে এই কথা বলে শেষ করেছিলেন: “অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।” (প্রেরিত ৪:১২) যেহেতু আদমের সমস্ত সন্তান পাপী, তাই তাদের মৃত্যুর এমন কোনো মূল্য নেই, যা কারও জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু, যীশু সিদ্ধ ছিলেন আর তাই তাঁর জীবনের বলিদানমূলক মূল্য ছিল। (গীতসংহিতা ৪৯:৬-৯; ইব্রীয় ২:৯) তিনি ঈশ্বরের কাছে মুক্তির মূল্য দিয়েছিলেন, যা আদম যে-সিদ্ধ জীবন হারিয়েছিল তার সমান ছিল। (১ তীমথিয় ২:৫, ৬, NW) এটা আমাদের জন্য ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্ত জীবন পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে।

১১. ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে যীশুর বলিদান আমাদের অনেক উপকার করতে পারে।

১১ মুক্তির মূল্য আমাদের জন্য আরও অন্যান্য উপকার পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল, এমনকি এখনও দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদিও আমরা পাপী, তবুও যীশুর বলিদানের মাধ্যমে পাপের ক্ষমা হওয়ায় আমরা এক শুদ্ধ বিবেক রাখতে পারছি। এটা মোশির ব্যবস্থার চাহিদা অনুযায়ী পশু বলিদানের মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়রা যা পেত, তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি। (প্রেরিত ১৩:৩৮, ৩৯; ইব্রীয় ৯:১৩, ১৪; ১০:২২) কিন্তু, এই ক্ষমা পাওয়ার জন্য আমাদের মন থেকে স্বীকার করতে হবে যে, খ্রীষ্টের বলিদান আমাদের কতটা দরকার: “আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই। যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্ম্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্ম্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।”—১ যোহন ১:৮, ৯.

১২. ঈশ্বরের সামনে এক সৎসংবেদ লাভ করার জন্য কেন জলে নিমজ্জিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ?

১২ কীভাবে পাপী লোকেরা খ্রীষ্টে ও তাঁর বলিদানে বিশ্বাস দেখাতে পারে? প্রথম শতাব্দীতে লোকেরা যখন বিশ্বাসী হয়েছিল, তখন তারা তা লোকেদের সামনে দেখিয়েছিল। কীভাবে? তারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। কেন? কারণ যীশু আজ্ঞা দিয়েছিলেন যে, তাঁর সমস্ত শিষ্যকে বাপ্তিস্ম নিতে হবে। (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ৮:১২; ১৮:৮) যীশুর মাধ্যমে যিহোবা যে-প্রেমময় ব্যবস্থা জুগিয়েছেন, তা যখন একজন ব্যক্তির হৃদয়ে সত্যিই নাড়া দেয়, তখন তিনি আর থেমে থাকবেন না। তিনি তার জীবনে প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিবর্তন করবেন, প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করবেন এবং জলে নিমজ্জিত হয়ে তার উৎসর্গীকরণকে চিত্রিত করবেন। আর এভাবে বিশ্বাস দেখিয়ে তিনি ‘ঈশ্বরের নিকটে সৎসংবেদের নিবেদন’ করেন।—১ পিতর ৩:২১.

১৩. আমরা যদি বুঝি যে আমরা পাপ করেছি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত এবং কেন?

১৩ অবশ্য, এর পরেও তাদের মধ্যে পাপপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যাবে। তা হলে কী? প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “তোমাদিগকে এই সকল লিখিতেছি, যেন তোমরা পাপ না কর। আর যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট। আর তিনিই আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত।” (১ যোহন ২:১, ২) এর মানে কি এই যে, আমরা যা কিছুই করি না কেন, আমরা যদি ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাই, তা হলে ক্ষমা পেয়ে যাব? না। ক্ষমা পাওয়ার মূল চাবিকাঠি হল মন থেকে অনুতপ্ত হওয়া। এ ছাড়া, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর বয়স্ক ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার দরকার হতে পারে। আমরা যা করেছি তাতে ভুল কী ছিল, তা আমাদের স্বীকার করতে হবে এবং এর জন্য মন থেকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে, যাতে আমরা এটা আবারও করা এড়িয়ে চলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে পারি। (প্রেরিত ৩:১৯; যাকোব ৫:১৩-১৬) আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা যীশুর সাহায্য এবং যিহোবার অনুগ্রহ ফিরে পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি।

১৪. (ক) একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় সম্বন্ধে বলুন, যেখানে যীশুর বলিদান আমাদের উপকার করেছে। (খ) আমাদের যদি সত্যিই বিশ্বাস থাকে, তা হলে আমরা কী করব?

১৪ যীশুর বলিদান আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে বলা বংশের গৌণ অংশ, ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ জন্য স্বর্গে অনন্ত জীবনের পথ খুলে দিয়েছে। (লূক ১২:৩২; গালাতীয় ৩:২৬-২৯) এটা মানবজাতির অন্য কোটি কোটি লোকেদের জন্যও পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের পথ খুলে দিয়েছে। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; প্রকাশিত বাক্য ২০:১১, ১২; ২১:৩, ৪) অনন্ত জীবন হল, ‘আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান।’ (রোমীয় ৬:২৩; ইফিষীয় ২:৮-১০) আমাদের যদি ওই অনুগ্রহ-দানের ওপর বিশ্বাস থাকে এবং এটা যেভাবে সম্ভব হয়েছে তার জন্য আমরা যদি কৃতজ্ঞ হই, তা হলে আমরা তা প্রকাশ করব। যিহোবা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদনের জন্য কত চমৎকারভাবে যীশুকে ব্যবহার করেছেন এবং যীশুর পদচিহ্ন আমাদের সকলের অনুসরণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝলে, আমরা খ্রীষ্টীয় পরিচর্যাকে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটা করব। ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই চমৎকার অনুগ্রহ-দান সম্বন্ধে আমরা যখন অন্যদের কাছে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলি, তখন তাতে আমাদের বিশ্বাস প্রমাণিত হয়।—প্রেরিত ২০:২৪.

১৫. কীভাবে যীশু খ্রীষ্টের ওপর বিশ্বাসের ঐক্যসাধনের প্রভাব রয়েছে?

১৫ এইরকম বিশ্বাসের কী এক উত্তম ও ঐক্যসাধনের প্রভাব রয়েছে! এর মাধ্যমে আমরা যিহোবার, তাঁর পুত্রের এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে একজন আরেকজনের আরও কাছে আসি। (১ যোহন ৩:২৩, ২৪) এটা আমাদের আনন্দিত করে যে, যিহোবা দয়া দেখিয়ে তাঁর পুত্রকে “সেই নাম দান করিলেন, যাহা [কেবল ঈশ্বরের নাম ছাড়া] সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালনিবাসীদের ‘সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে’ যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু। এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।”—ফিলিপীয় ২:৯-১১.

পুনরালোচনা

• মশীহ যখন প্রকাশিত হয়েছিলেন, তখন যারা সত্যি সত্যি ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করত তাদের কাছে তাঁর পরিচয় কেন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল?

• কিছু বিষয় কী, যা যীশুর বলিদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর জন্য আমাদের করা উচিত?

• কোন কোন উপায়ে যীশুর বলিদান ইতিমধ্যেই আমাদের উপকার করেছে? আমরা যখন পাপের ক্ষমার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন এটা কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৩৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো পালন করার জন্য তাদের অন্যদের শিক্ষা দিতে হবে