সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার উপাসকরা যে-স্বাধীনতা উপভোগ করে

যিহোবার উপাসকরা যে-স্বাধীনতা উপভোগ করে

অধ্যায় পাঁচ

যিহোবার উপাসকরা যে-স্বাধীনতা উপভোগ করে

১, ২. (ক) ঈশ্বর প্রথম মানব দম্পতিকে কীরকম স্বাধীনতা দিয়েছিলেন? (খ) কিছু আইনের বিষয়ে উল্লেখ করুন, যা আদম ও হবার স্বাভাবিক কাজে পরিচালনা দিয়েছিল।

 যিহোবা যখন প্রথম পুরুষ ও নারীকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তারা আজকে মানুষের যে-স্বাধীনতা রয়েছে, এর চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করেছিল। তাদের বাড়ি ছিল পরমদেশ, সুন্দর এদন উদ্যান। কোনো অসুস্থতা তাদের জীবনের আনন্দকে নষ্ট করে দেয়নি কারণ তাদের সিদ্ধ মন ও দেহ ছিল। তাদের মৃত্যুর কোনো ভয় ছিল না, যা কিনা সেই সময় থেকে প্রত্যেকের রয়েছে। এ ছাড়া, তারা রোবট ছিল না বরং তাদের স্বাধীন ইচ্ছার এক চমৎকার উপহার ছিল, যা হল তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষমতা। কিন্তু, এই অপূর্ব স্বাধীনতা উপভোগ করে চলার জন্য ঈশ্বরের আইনগুলোকে তাদের সম্মান করতে হতো।

উদাহরণ হিসেবে, ঈশ্বর যে-প্রাকৃতিক নিয়মগুলো স্থাপন করেছেন সেগুলো বিবেচনা করুন। যদিও এই আইনগুলো লিখিত ছিল না কিন্তু আদম ও হবাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে, এগুলো মেনে চলাই ছিল স্বাভাবিক। তাদের ক্ষুধা খাবার খাওয়ার, তৃষ্ণা পান করার এবং সূর্যাস্ত ঘুমানোর প্রয়োজনীয়তার প্রতি ইঙ্গিত দিত। এ ছাড়া, যিহোবা তাদের একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই দায়িত্ব আসলে একটা আইনের মতোই ছিল কারণ এটা তাদের কাজের ধারাকে পরিচালনা দিত। তাদের সন্তান জন্ম দিতে, পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের জীবের ওপর কর্তৃত্ব করতে এবং পরমদেশের সীমানাকে বাড়াতে হতো, যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরো পৃথিবী পরমদেশ হয়। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:১৫) কত সুন্দর ও উপকারী আইনই না সেটা ছিল! এটা তাদের পুরোপুরি তৃপ্তিদায়ক কাজ দিয়েছিল ও তারা তাদের কর্মশক্তিকে উপকারজনক উপায়গুলোতে যথাসাধ্য ব্যবহার করতে পারত। এ ছাড়াও, তারা কীভাবে কাজ করবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার যথেষ্ট স্বাধীনতা তাদের ছিল। একজন ব্যক্তি এর চেয়ে বেশি আর কী-ই-বা চাইতে পারে?

৩. বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আদম ও হবা কীভাবে তাদের স্বাধীনতাকে প্রজ্ঞার সঙ্গে ব্যবহার করতে শিখতে পারত?

অবশ্য, আদম ও হবাকে যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন তার মানে এই ছিল না যে, তারা যে-সিদ্ধান্তই নেবে তা ভাল ফল নিয়ে আসবে। তাদের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার স্বাধীনতাকে ঈশ্বরের আইন ও নীতিগুলোর মধ্যে থেকে কাজে লাগাতে হতো। কীভাবে তারা এগুলো জানতে পারত? তাদের নির্মাণকর্তার কথা শুনে এবং তাঁর কাজগুলো মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করে। আদম ও হবা যা জেনেছিল, তা কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় বুদ্ধি ঈশ্বর তাদের দিয়েছিলেন। যেহেতু তাদের সিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই ঈশ্বরের গুণগুলো প্রতিফলিত হওয়ার কথা ছিল। আর ঈশ্বর তাদের জন্য যা কিছু করেছিলেন সেগুলোর জন্য তারা যদি মন থেকে কৃতজ্ঞ হতো, তা হলে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় তাদের সতর্ক হতে হতো এবং তারা তাঁকে খুশি করতে চাইত।—আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭; যোহন ৮:২৯.

৪. (ক) আদম ও হবাকে একটা গাছের ফল খেতে নিষেধ করার যে-আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তা কি তাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছিল? (খ) কেন এটা একটা যথার্থ দাবি ছিল?

অতএব, জীবনদাতা হিসেবে ঈশ্বর ন্যায্যভাবেই তাঁর প্রতি তাদের ভক্তি আছে কি না এবং তিনি তাদের যে-সীমা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে তাদের থাকার ইচ্ছা আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখবেন বলে ঠিক করেছিলেন। যিহোবা আদমকে এই আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) হবাকে সৃষ্টি করার পর, তাকেও এই আইন সম্বন্ধে জানানো হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:২, ৩) এই বিধিনিষেধ কি তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল? অবশ্যই না। ওই একটা গাছের ফল না খেতে পারলেও, তাদের খাওয়ার জন্য অন্যান্য সব রকমের প্রচুর সুস্বাদু খাবার ছিল। (আদিপুস্তক ২:৮, ৯) তাদের এটা বোঝা উচিত ছিল যে, এই পৃথিবী ঈশ্বরের কারণ তিনি এটা সৃষ্টি করেছেন। তাই, তাঁর উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত এবং মানবজাতির জন্য উপকারী আইনগুলো তৈরি করার অধিকার তাঁর রয়েছে।—গীতসংহিতা ২৪:১, ১০.

৫. (ক) আদম ও হবা কীভাবে তাদের চমৎকার স্বাধীনতা হারিয়েছিল? (খ) আদম ও হবা যে-স্বাধীনতা উপভোগ করেছিল, তার জায়গায় কী এসেছিল আর এর ফলে আমরা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছি?

কিন্তু কী হয়েছিল? স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষার দ্বারা পরিচালিত হয়ে, একজন দূত তার স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করেছিল এবং শয়তান হয়েছিল, যার মানে হল “বিপক্ষ।” ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো একটা বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে সে হবার সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:৪, ৫) আদমও হবার সঙ্গে যোগ দিয়ে ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করেছিল। যা তাদের নয়, তা পেতে গিয়ে তারা তাদের চমৎকার স্বাধীনতা হারিয়েছিল। পাপ তাদের প্রভু হয়েছিল এবং পরে মৃত্যু এসেছিল, যেমন ঈশ্বর সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তারা উত্তরাধিকারসূত্রে তাদের বংশধরদের যা দিয়েছিল, সেটা হল পাপ—যা অন্যায়ের প্রতি সহজাত প্রবণতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ ছাড়া, পাপ দুর্বলতাও নিয়ে এসেছিল যার ফল হল রোগ, বার্ধক্য এবং মৃত্যু। অন্যায়ের প্রতি প্রবণতা, শয়তানের প্রভাবের দ্বারা বৃদ্ধি পেয়ে এমন এক মানব সমাজের জন্ম দিয়েছে, যার ইতিহাস ঘৃণা, অপরাধ, উৎপীড়ন এবং লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন কেড়ে নিয়েছে এমন যুদ্ধগুলো দিয়ে পরিপূর্ণ। শুরুতে ঈশ্বর মানুষকে যে-স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, তার থেকে এটা কতই না আলাদা!—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫; ইয়োব ১৪:১, ২; রোমীয় ৫:১২; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.

যেখানে স্বাধীনতা পাওয়া যেতে পারে

৬. (ক) কোথায় প্রকৃত স্বাধীনতা পাওয়া যেতে পারে? (খ) যীশু কীধরনের স্বাধীনতা সম্বন্ধে বলেছিলেন?

আজকে সব জায়গায় যে-খারাপ অবস্থা রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে, অবাক হওয়ার কিছু নেই যে লোকেরা আরও মহান স্বাধীনতার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে আছে। কিন্তু, কোথায় প্রকৃত স্বাধীনতা পাওয়া যেতে পারে? যীশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য; আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” (যোহন ৮:৩১, ৩২) এটা সেইরকম স্বাধীনতা নয়, যা লোকেরা কোনো একজন শাসক বা সরকারকে সমর্থন করার জন্য অন্যটাকে প্রত্যাখ্যান করার পর আশা করে থাকে। বরং, এই স্বাধীনতা সরাসরি মানুষের মূল সমস্যাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যীশু যে-স্বাধীনতার কথা বলছিলেন, তা ছিল পাপের দাসত্ব থেকে স্বাধীন হওয়া। (যোহন ৮:২৪, ৩৪-৩৬) অতএব, একজন ব্যক্তি যদি যীশু খ্রীষ্টের প্রকৃত শিষ্য হন, তা হলে তিনি তার জীবনে এক লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখতে পান, স্বাধীনতা উপভোগ করেন!

৭. (ক) এখন কোন অর্থে আমরা পাপ থেকে স্বাধীন হতে পারি? (খ) সেই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

এর মানে এই নয় যে, বর্তমানে সত্য খ্রীষ্টানরা পাপপূর্ণ আচরণের প্রতি সহজাত প্রবণতার প্রভাব আর অনুভব করবে না। যেহেতু তারা উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ পেয়েছে, তাই এর জন্য এখনও তাদের লড়াই করতে হয়। (রোমীয় ৭:২১-২৫) কিন্তু, একজন ব্যক্তি যদি সত্যি সত্যি যীশুর শিক্ষাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেন, তা হলে তিনি আর পাপের দাস থাকবেন না। তার কাছে পাপ আর স্বৈরাচারী শাসকের মতো থাকবে না, যে কিনা তাকে বিভিন্ন আদেশ দেবে আর সেই আদেশগুলো তাকে অন্ধের মতো পালন করতে হবে। তিনি এমন এক জীবনের ফাঁদে আটকা পড়বেন না, যেখানে কোনো উদ্দেশ্যই নেই আর যেটা তাকে দোষী এক বিবেক দেবে। তিনি ঈশ্বরের সামনে এক শুদ্ধ বিবেক উপভোগ করবেন কারণ তার আগের পাপগুলো খ্রীষ্টের বলিদানের ওপর তার বিশ্বাসের ভিত্তিতে ক্ষমা করা হয়েছে। তার মধ্যে পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে কিন্তু তিনি যখন খ্রীষ্টের শুদ্ধ শিক্ষাগুলো মনে করে সেই প্রবণতা অনুযায়ী কাজ করাকে প্রত্যাখ্যান করবেন, তখন তিনি দেখবেন যে পাপ আর তার প্রভু নয়।—রোমীয় ৬:১২-১৭.

৮. (ক) প্রকৃত খ্রীষ্টধর্ম আমাদের কোন কোন স্বাধীনতা দেয়? (খ) জাগতিক শাসকদের প্রতি আমাদের মনোভাব কীরকম হওয়া উচিত?

খ্রীষ্টান হিসেবে আমরা যে-স্বাধীনতাগুলো উপভোগ করি, তা ভেবে দেখুন। আমরা মিথ্যা শিক্ষাগুলোর প্রভাব, কুসংস্কারের দাসত্ব এবং পাপের বশ্যতা থেকে স্বাধীন হয়েছি। মৃতদের অবস্থা এবং পুনরুত্থান সম্বন্ধে চমৎকার সত্যগুলো আমাদের অযৌক্তিক মৃত্যুভয় থেকে স্বাধীন করেছে। অসিদ্ধ মানব সরকারগুলোর জায়গায় শীঘ্রই ঈশ্বরের ধার্মিক রাজ্য আসবে, এই জ্ঞান আমাদের হতাশা থেকে স্বাধীন করে। (দানিয়েল ২:৪৪; মথি ৬:১০) কিন্তু, এইরকম স্বাধীনতা সরকারি কর্তৃপক্ষ ও তাদের আইনগুলোর প্রতি অসম্মান দেখানোকে সমর্থন করে না।—তীত ৩:১, ২; ১ পিতর ২:১৬, ১৭.

৯. (ক) এখন মানুষের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য যিহোবা কীভাবে প্রেমের সঙ্গে আমাদের সাহায্য করেন? (খ) কীভাবে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারি?

বেঁচে থাকার সবচেয়ে উত্তম উপায়টা কী, তা খুঁজে বের করার জন্য আমরা একটার পর একটা ভুল করে যাই, তা যিহোবা চান না। তিনি জানেন আমরা কীভাবে তৈরি হয়েছি, কী আমাদের প্রকৃত তৃপ্তি এনে দেয় এবং আমাদের জন্য কোনটা অনন্তকালীন উপকার। তিনি সেই সমস্ত চিন্তা এবং আচরণ সম্বন্ধে জানেন, যেগুলো তাঁর সঙ্গে ও অন্যান্য লোকেদের সঙ্গে একজন ব্যক্তির সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে, এমনকি তার পক্ষে নতুন জগতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারে। যিহোবা প্রেমের সঙ্গে বাইবেল ও তাঁর দৃশ্যত সংগঠনের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো আমাদের জানান। (মার্ক ১৩:১০; গালাতীয় ৫:১৯-২৩; ১ তীমথিয় ১:১২, ১৩) এরপর আমরা কীভাবে এর প্রতি সাড়া দেব, তা স্থির করার জন্য ঈশ্বরের দেওয়া স্বাধীনতাকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। আদমের মতো না হয়ে আমরা যদি বাইবেল আমাদের যা বলে তা শুনি, তা হলে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারব। আমরা দেখাব যে, যিহোবার সঙ্গে ভাল সম্পর্কই হল আমাদের জীবনের প্রধান আগ্রহের বিষয়।

অন্য ধরনের স্বাধীনতা চাওয়া

১০. কিছু যিহোবার সাক্ষি কীধরনের স্বাধীনতা পেতে চেয়েছে?

১০ কখনও কখনও কিছু অল্পবয়স্ক যিহোবার সাক্ষি ও সেইসঙ্গে অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা হয়তো মনে করতে পারে যে, তারা অন্য ধরনের স্বাধীনতা চায়। তাদের কাছে হয়তো জগৎকে আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে আর এই সম্বন্ধে তারা যত বেশি চিন্তা করে, জগতে জনপ্রিয় অখ্রীষ্টীয় কাজগুলো করার জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষা তত বেশি বাড়ে। তারা হয়তো নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, অতিরিক্ত মদ খাওয়া বা ব্যভিচার করার কথা মাথায় আনে না। কিন্তু সত্য খ্রীষ্টান নয় এমন কিছুজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করে তারা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে চায়। তারা এমনকি তাদের কথাবার্তা ও আচরণ অনুকরণ করতে শুরু করে।—৩ যোহন ১১.

১১. কখনও কখনও কোথা থেকে ভুল করার প্রলোভন আসে?

১১ কখনও কখনও এমন কারও কাছ থেকে অখ্রীষ্টীয় আচরণ করার প্রলোভন আসে, যারা যিহোবাকে সেবা করে বলে দাবি করে। প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের বেলায় তা হয়েছিল আর আমাদের দিনেও একই বিষয় হতে পারে। এইরকম লোকেরা প্রায়ই এমন কিছু করতে চায়, যা তাদের আনন্দ দেবে বলে তারা মনে করে কিন্তু আসলে এগুলো ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে। তারা অন্যদেরও “মজা” করার জন্য উৎসাহ দেয়। তারা “স্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু আপনারা ক্ষয়ের দাস।”—২ পিতর ২:১৯.

১২. ঈশ্বরের আইন ও নীতিগুলোর বিরুদ্ধে আচরণ করার দুঃখজনক ফলগুলো কী?

১২ এইরকম তথাকথিত স্বাধীনতার ফল সবসময় খারাপ কারণ এর মানে ঈশ্বরের আইনগুলোকে অমান্য করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের ফলে মানসিক অশান্তি, রোগ, মৃত্যু, অবাঞ্ছিত গর্ভ হতে পারে এবং হয়তো একটা বিয়ে ভেঙেও যেতে পারে। (১ করিন্থীয় ৬:১৮; ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৮) নেশাকর ওষুধের অপব্যবহারের ফলে খিটখিটে মেজাজ, কথায় জড়তা, ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিভ্রম এবং মৃত্যু হতে পারে। এর ফলে নেশাকর ওষুধের প্রতি আসক্তি জন্মাতে পারে, যা মেটানোর জন্য অপরাধ করতে হতে পারে। মদের অপব্যবহারের ফলেও একই পরিণতিগুলো হতে পারে। (হিতোপদেশ ২৩:২৯-৩৫) যারা এইরকম আচরণ করে থাকে, তারা হয়তো ভাবতে পারে যে তারা স্বাধীন কিন্তু পরে অনেক দেরিতে বুঝতে পারে যে, তারা পাপের দাস হয়ে গিয়েছে। আর পাপ কত নিষ্ঠুর এক প্রভু! এখন এই বিষয়ের ওপর যুক্তি করা আমাদের এইরকম অভিজ্ঞতা থেকে রক্ষা করার জন্য সাহায্য করতে পারে।—গালাতীয় ৬:৭, ৮.

যেখান থেকে সমস্যাগুলোর শুরু

১৩. (ক) যে-কামনাগুলো সমস্যার দিকে নিয়ে যায়, সেগুলো সাধারণত কীভাবে জেগে ওঠে? (খ) “কুসংসর্গ” কী, তা বোঝার জন্য আমাদের কার দৃষ্টিভঙ্গি দরকার? (গ) অনুচ্ছেদ ১৩ এর প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সময়, যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দিন।

১৩ যেখান থেকে প্রায়ই সমস্যাগুলো শুরু হয় তার কথা চিন্তা করুন। বাইবেল বলে: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে, এবং পাপ পরিপক্ব হইয়া মৃত্যুকে জন্ম দেয়।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) কীভাবে কামনা জেগে ওঠে? মনের মধ্যে যা ঢোকে তার দ্বারা। এটা প্রায়ই সেই লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে হয়ে থাকে, যারা বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগায় না। যদিও আমরা সবাই জানি যে, আমাদের “কুসংসর্গ” এড়িয়ে চলা উচিত। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) কিন্তু কোনগুলো কুসংসর্গ? এই বিষয়টাকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন? নিচের প্রশ্নগুলোর ওপর যুক্তি করা এবং উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো দেখা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তগুলোতে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

কিছু লোকেদের সম্মানীয় বলে মনে হলেই কি তার মানে তারা ভাল সঙ্গী? (আদিপুস্তক ৩৪:১, ২, ১৮, ১৯)

তাদের কথাবার্তা, হতে পারে তাদের ঠাট্টা-তামাশা, সেগুলো কি দেখায় যে, তাদের সঙ্গে আমাদের অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা করা উচিত? (ইফিষীয় ৫:৩, ৪)

যে-লোকেরা যিহোবাকে ভালবাসে না তাদের সঙ্গে যদি আমরা ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করি, তা হলে তাঁর কেমন লাগে? (২ বংশাবলি ১৯:১, ২)

আমরা হয়তো এমন লোকেদের সঙ্গে কাজ করতে পারি বা এমন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে স্কুলে যেতে পারি, যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, কিন্তু আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার কেন? (১ পিতর ৪:৩, ৪)

টেলিভিশন ও সিনেমা দেখা, ইন্টারনেট ব্যবহার করা এবং বই, পত্রিকা ও খবরের কাগজ পড়া অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করার বিভিন্ন উপায়। এগুলোর মধ্যে কোন কোন বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে আমাদের সাবধান থাকা দরকার? (হিতোপদেশ ৩:৩১; যিশাইয় ৮:১৯; ইফিষীয় ৪:১৭-১৯)

আমরা যাদের সঙ্গে মেলামেশা করা বেছে নিই, তা যিহোবার কাছে আমাদের কীধরনের লোক হিসেবে তুলে ধরে? (গীতসংহিতা ২৬:১, ৪, ৫; ৯৭:১০)

১৪. যারা এখন বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শ কাজে লাগায়, তাদের জন্য সামনে কোন চমৎকার স্বাধীনতা রয়েছে?

১৪ ঈশ্বরের নতুন জগৎ আমাদের একেবারে কাছে। ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য সরকারের মাধ্যমে, মানবজাতি শয়তান ও তার সম্পূর্ণ দুষ্ট বিধিব্যবস্থার প্রভাব থেকে স্বাধীন হবে। ধীরে ধীরে, বাধ্য মানবজাতির ওপর থেকে পাপের সমস্ত প্রভাব সরে যাবে আর এর ফলে মন ও দেহ সিদ্ধ হবে, যাতে করে আমরা পরমদেশে অনন্ত জীবন উপভোগ করতে পারি। পরিশেষে সমস্ত সৃষ্টি ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] আত্মার’ সঙ্গে সংগতিপূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করবে। (২ করিন্থীয় ৩:১৭) এখন, ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে ওই সমস্ত কিছু হারানো কি যুক্তিযুক্ত হবে? আজকে, আমাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতাকে প্রজ্ঞার সঙ্গে ব্যবহার করে, আমরা সকলে যেন স্পষ্টভাবে দেখাই যে আমরা আসলেই যা চাই তা হল, “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা।”—রোমীয় ৮:২১.

পুনরালোচনা

• প্রথম মানব দম্পতি কীধরনের স্বাধীনতা উপভোগ করেছিল? আজকে মানবজাতি যা ভোগ করছে তার সঙ্গে এটা কীভাবে তুলনীয়?

• সত্য খ্রীষ্টানদের কীধরনের স্বাধীনতা রয়েছে? জগৎ যেটাকে স্বাধীনতা বলে মনে করে, এটা কীভাবে তার বিপরীত?

• কেন কুসংসর্গ এড়িয়ে চলা এত গুরুত্বপূর্ণ? আদমের বিপরীতে, মন্দ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমরা কার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৪৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বরের বাক্য সতর্ক করে: “ভ্রান্ত হইও না, কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে”