রোমীয় ১১:১-৩৬

  • ইজরায়েল জাতিকে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়নি (১-১৬)

  • জলপাই গাছের দৃষ্টান্ত (১৭-৩২)

  • ঈশ্বরের প্রজ্ঞা গভীর (৩৩-৩৬)

১১  তা হলে এর অর্থ কি এই, ঈশ্বর তাঁর লোকদের প্রত্যাখ্যান করেছেন? কখনোই না! কারণ আমিও একজন ইজরায়েলীয়, অব্রাহামের বংশধর,* বিন্যামীন বংশজাত। ২  ঈশ্বর তাঁর লোকদের প্রত্যাখ্যান করেননি, যাদের প্রতি তিনি প্রথমে মনোযোগ দিয়েছিলেন। তোমরা কি জান না, শাস্ত্র এলিয়ের বিষয়ে কী বলে? তিনি ঈশ্বরের কাছে ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছিলেন: ৩  “যিহোবা,* তারা তোমার ভাববাদীদের হত্যা করেছে, তোমার বেদিগুলো ভেঙে ফেলেছে আর কেবল আমি বাকি আছি, তারা এখন আমাকে হত্যা কেরার চেষ্টা করছে।” ৪  কিন্তু, ঈশ্বর তাকে কী বলেছিলেন? “এখনও আমার এমন ৭,০০০ জন লোক রয়েছে, যারা বালের* কাছে হাঁটু পাতেনি।” ৫  একইভাবে, বর্তমান সময়েও ইজরায়েলীয়দের এক অবশিষ্টাংশ রয়েছে, যাদের তিনি তাঁর মহাদয়ার কারণে মনোনীত করেছেন। ৬  এটা যদি মহাদয়ার কারণে হয়ে থাকে, তা হলে এটা কাজের মাধ্যমে হয়নি; নতুবা মহাদয়া আর মহাদয়া হতো না। ৭  তাহলে আমরা কী বলব? ইজরায়েলীয়েরা আন্তরিকভাবে যেটার অন্বেষণ করেছিল, তা তারা সকলে পায়নি, কেবল ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত লোকেরাই পেয়েছে। অন্যেরা তাদের হৃদয় কঠিন করে রেখেছিল, ৮  ঠিক যেমনটা লেখা আছে: “ঈশ্বর তাদের গভীর আধ্যাত্মিক ঘুমে মগ্ন করেছেন। তিনি তাদের এমন চোখ দিয়েছেন, যা দেখতে পায় না এবং এমন কান দিয়েছেন, যা শুনতে পায় না। এখনও পর্যন্ত তারা এই অবস্থার মধ্যে রয়েছে।” ৯  আর দায়ূদ বলেন: “তাদের ভোজ* তাদের জন্য ফাঁদ ও জাল ও বাধাস্বরূপ* এবং শাস্তিস্বরূপ হোক। ১০  তাদের চোখ অন্ধ হয়ে যাক, যাতে তারা দেখতে না পায় এবং তাদের পিঠ ভারে নুয়ে পড়ুক।” ১১  তা হলে এর অর্থ কি এই, ইজ­রায়েলীয়েরা এমনভাবে হোঁচট খেয়েছে যে, আর উঠতে পারবে না? কখনোই না! কিন্তু, তাদের ভুল পদক্ষেপের ফলে ন-যিহুদি লোকদের জন্য পরিত্রাণ পাওয়ার পথ খুলে গিয়েছে, যাতে ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে ঈর্ষা জেগে ওঠে। ১২  যদি তাদের ভুল পদক্ষেপের ফলে জগৎ আশীর্বাদ লাভ করে এবং তাদের হ্রাস পাওয়ার ফলে ন-যিহুদি লোকেরা আশীর্বাদ লাভ করে, তা হলে তাদের সংখ্যা যখন পূর্ণ হবে, তখন আরও কত বেশি আশীর্বাদই-না লাভ করা যাবে! ১৩  এখন হে ন-যিহুদি লোকেরা, আমি তোমাদের বলছি। একজন প্রেরিত হিসেবে আমাকে ন-যিহুদিদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে আমার সেবাকে অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করি, ১৪  এই আশায়, যেন আমি কোনোভাবে আমার স্বজাতীয় লোকদের মধ্যে ঈর্ষা জাগিয়ে তুলে তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে রক্ষা করতে পারি। ১৫  কারণ তাদের প্রত্যাখ্যান করার ফল যদি জগতের জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে পুনরায় সম্মিলন হয়, তা হলে তাদের গ্রহণ করার ফল মৃতদের মধ্য থেকে বেঁচে ওঠা ছাড়া আর কীই-বা হতে পারে? ১৬  আর প্রথম ফল হিসেবে উৎসর্গী­কৃত ময়দার তালের কোনো অংশ যদি পবিত্র হয়, তা হলে পুরো তালটাই পবিত্র; আর মূল যদি পবিত্র হয়, তা হলে শাখা­গুলোও পবিত্র। ১৭  তবে, জলপাই গাছের কয়েকটা শাখা কেটে ফেলা হল আর কিছু শাখা রাখা হল, কিন্তু তুমি বুনো জলপাই গাছের শাখা হওয়া সত্ত্বেও তোমাকে সেই জলপাই গাছে কলম হিসেবে লাগান হল, যাতে বাকি শাখাগুলোর অংশ হতে পার। আর এতে তুমি সেই জলপাই গাছের মূলের রস থেকে উপকৃত হচ্ছ। ১৮  তাই, সেই কাটা শাখাগুলোর প্রতি উদ্ধত মনোভাব দেখিয়ো না। কিন্তু, যদি তুমি সেগুলোর প্রতি উদ্ধত মনোভাব দেখাও, তা হলে মনে রেখো, তুমি মূলকে ধরে রাখছ না, বরং মূলই তোমাকে ধরে রাখছে। ১৯  এতে তুমি বলবে: “আমাকে কলম হিসেবে লাগানোর জন্যই শাখাগুলো কেটে ফেলা হল।” ২০  হ্যাঁ, এটা সত্য! তাদের বিশ্বাসের অভাবের জন্যই তাদের কেটে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তুমি বিশ্বাসের মাধ্যমেই দাঁড়িয়ে আছ। উদ্ধত হোয়ো না, বরং সাবধান থেকো। ২১  কারণ ঈশ্বর যদি আসল জলপাই গাছের শাখাগুলোকে থাকতে না দেন, তা হলে তিনি তোমাকেও থাকতে দেবেন না। ২২  অতএব, ঈশ্বরের সদয়ভাব ও কঠোরভাব বিবেচনা করো। যারা পড়ে গিয়েছে, তাদের প্রতি ঈশ্বর কঠোর, কিন্তু তোমার প্রতি তিনি সদয়, যদি তুমি তাঁর দয়াতে থাক; নতুবা তোমাকেও কেটে ফেলা হবে। ২৩  আবার তারা যদি বিশ্বাস করতে শুরু করে, তা হলে তাদের কলম হিসেবে লাগানো হবে, কারণ ঈশ্বর তাদের আবারও কলম হিসেবে লাগাতে সমর্থ। ২৪  কারণ তোমাকে যদি বুনো জলপাই গাছ থেকে কেটে বাগানের জলপাই গাছে কলম হিসেবে লাগানো যেতে পারে, যা সাধারণত করা হয় না, তা হলে আসল জলপাই গাছের শাখাগুলোকে কি আবারও সেই গাছে কলম হিসেবে লাগানো যেতে পারে না? ২৫  হে ভাইয়েরা, আমি চাই না, এই পবিত্র রহস্য তোমাদের অজানা থাকুক, যেন তোমরা নিজেদের দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান* না হও। এই পবিত্র রহস্য হল: ইজ­রায়েলীয়দের মধ্যে কারো কারো হৃদয় কঠিন হয়ে থাকবে, যতক্ষণ না ন-যিহুদিদের সংখ্যা পূর্ণ হয়। ২৬  এভাবে সমস্ত ইজরায়েল রক্ষা পাবে। ঠিক যেমনটা লেখা আছে: “সিয়োন থেকে উদ্ধারকর্তা* আসবেন এবং যাকোবের মধ্য থেকে মন্দ কাজগুলো দূর করবেন। ২৭  আর আমি যখন তাদের পাপ দূর করব, তখন আমি তাদের সঙ্গে এক চুক্তি করব।” ২৮  এটা ঠিক, সুসমাচার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে তারা ঈশ্বরের শত্রু আর তা তোমাদের উপকৃত করছে; কিন্তু পূর্বপুরুষদের কাছে করা প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী ঈশ্বর তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে মনোনীত করেছেন বলে তারা ঈশ্বরের বন্ধু। ২৯  কারণ ঈশ্বরের দান এবং আহ্বান এমন বিষয় নয়, যেগুলোর জন্য তিনি অনুশোচনা করবেন। ৩০  আগে তোমরা ঈশ্বরের বাধ্য ছিলে না, কিন্তু যিহুদিদের অবাধ্যতার কারণে তিনি এখন তোমাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছেন। ৩১  তিনি যেহেতু যিহুদিদের অবাধ্যতার কারণে তোমাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছেন, তাই একই কারণে তিনি যিহুদিদের প্রতিও করুণা দেখাতে পারেন। ৩২  কারণ ঈশ্বর সকল লোককে অবাধ্যতার দাস হতে দিয়েছেন, যেন তিনি সকল লোকের প্রতি করুণা দেখাতে পারেন। ৩৩  আহা! ঈশ্বরের ঐশ্বর্য ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কত গভীর! তাঁর বিচার পুরোপুরি বোঝা যায় না এবং তাঁর পথ পুরোপুরি অনুসন্ধান করা যায় না! ৩৪  কারণ “কেই-বা যিহোবার* মন জানতে পেরেছে অথবা কেই-বা তাঁর পরামর্শদাতা হয়েছে?” ৩৫  কিংবা “কেই-বা প্রথমে ঈশ্বরকে কিছু দিয়েছে যে, ঈশ্বর তাকে প্রতিদান দেবেন?” ৩৬  কারণ সমস্ত কিছু তাঁর কাছ থেকে, তাঁর মাধ্যমে এবং তাঁরই জন্য অস্তিত্বে এসেছে। চিরকাল তাঁরই গৌরব হোক। আমেন।

পাদটীকাগুলো

আক্ষ., “বীজ।”
শব্দকোষ দেখুন।
শব্দকোষ দেখুন।
আক্ষ., “টেবিল।”
বা “হোঁচট লাগার মতো বস্তু।”
বা “বিচক্ষণ।”
বা “ত্রাণকর্তা।”
শব্দকোষ দেখুন।