ইব্রীয়দের প্রতি চিঠি ১০:১-৩৯
১০ ব্যবস্থা আসন্ন ভালো বিষয়গুলোর ছায়া মাত্র, সেগুলোর প্রকৃত রূপ নয়। তাই, যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে, প্রতি বছর ক্রমাগত একই বলি উৎসর্গের দ্বারা ব্যবস্থা* কখনো তাদের নিখুঁত করতে পারেনি।
২ যদি পারত, তা হলে বলি উৎসর্গ করা কি বন্ধ হয়ে যেত না? কারণ যারা পবিত্র সেবা প্রদান করে, তারা যদি একবার শুচি হয়েই যায়, তা হলে তো তাদের আর নিজেদের পাপের জন্য দোষী মনে করার কথা নয়।
৩ কিন্তু, এই বলিদানগুলো প্রতি বছর লোকদের মনে করিয়ে দেয় যে, তারা পাপী।
৪ কারণ ষাঁড় ও ছাগের রক্ত কখনোই পাপ দূর করতে পারে না।
৫ তাই, খ্রিস্ট যখন জগতে আসেন, তখন তিনি ঈশ্বরকে বলেন: “‘তুমি পশুবলি এবং অন্যান্য বলি চাওনি, কিন্তু তুমি আমার জন্য এক দেহ প্রস্তুত করেছ।
৬ তুমি হোমবলিতে এবং পাপের জন্য দেওয়া বলিতে সন্তুষ্ট হওনি।’
৭ এরপর আমি বললাম: ‘দেখো! আমি এসেছি। গোটানো পুস্তকে আমার সম্বন্ধে লেখা আছে। হে ঈশ্বর, আমি তোমার ইচ্ছা পালন করার জন্য এসেছি।’”
৮ প্রথমে তিনি বলেন: “তুমি পশুবলি, অন্যান্য বলি, হোমবলি এবং পাপের জন্য দেওয়া বলি চাওনি কিংবা সেগুলোতে সন্তুষ্টও হওনি।” এইসমস্ত বলি ব্যবস্থা অনুযায়ী উৎসর্গ করা হয়।
৯ এরপর তিনি বলেন: “দেখো! আমি তোমার ইচ্ছা পালন করার জন্য এসেছি।” এভাবে তিনি প্রথম বিষয় বাতিল করে দেন, যেন দ্বিতীয় বিষয় প্রতিষ্ঠা করেন।
১০ এই “ইচ্ছা” অনুসারে, যিশু খ্রিস্টের দেহ এক বার, চিরকালের জন্য উৎসর্গ করার মাধ্যমে আমরা পবিত্র হয়েছি।
১১ আর প্রত্যেক যাজক প্রতিদিন নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে পবিত্র সেবা* প্রদান করে এবং বার বার একই বলি উৎসর্গ করে, যদিও এই ধরনের বলি কখনো পুরোপুরিভাবে পাপ দূর করতে পারে না।
১২ কিন্তু, খ্রিস্ট পাপের জন্য চিরকালের মতো কেবল একটা বলি উৎসর্গ করেছেন এবং ঈশ্বরের ডান দিকে বসেছেন।
১৩ আর তিনি সেই সময় থেকে অপেক্ষা করছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর শত্রুদের তাঁর পায়ের নীচে পাদপীঠের* মতো রাখা হয়।
১৪ কারণ তিনি কেবল একটা বলি উৎসর্গ করার মাধ্যমে সেই ব্যক্তিদের চিরকালের জন্য নিখুঁত করেছেন, যাদের পবিত্র করা হয়েছে।
১৫ আর পবিত্র শক্তিও এই বিষয়ে প্রথমে এই বলে আমাদের কাছে সাক্ষ্য দেয়:
১৬ “যিহোবা* বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি তাদের সঙ্গে এই চুক্তি করব, আমি তাদের হৃদয়ের মধ্যে আমার আইনকানুন রাখব এবং আমি তাদের মনের মধ্যে সেগুলো লিখব।’”
১৭ এরপর পবিত্র শক্তি বলে: “আর তাদের পাপ ও সেইসঙ্গে তাদের মন্দ কাজ কখনো স্মরণ করব না।”
১৮ তাই, ঈশ্বর যদি এই সমস্ত পাপের ক্ষমা করেই থাকেন, তা হলে তো পাপের জন্য আর বলি উৎসর্গ করার প্রয়োজন নেই।
১৯ অতএব, হে ভাইয়েরা, আমরা যেহেতু যিশুর রক্তের মাধ্যমে মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করার সেই পথে চলার জন্য সাহস* লাভ করেছি,
২০ যে-পথ তিনি পর্দার অর্থাৎ তাঁর দেহের মধ্য দিয়ে আমাদের জন্য এক নতুন ও জীবন্ত পথ হিসেবে খুলে দিয়েছেন
২১ আর যেহেতু ঈশ্বরের গৃহ দেখাশোনা করার জন্য আমাদের একজন মহান যাজক রয়েছেন,
২২ তাই এসো, আমরা আন্তরিক হৃদয়ে এবং পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হই, কারণ আমাদের হৃদয়কে রক্ত ছিটানোর মাধ্যমে মন্দ বিবেকের হাত থেকে শুচি করা হয়েছে এবং আমাদের দেহকে বিশুদ্ধ জল দিয়ে ধোয়া হয়েছে।
২৩ এসো, আমরা অটল থেকে আমাদের প্রত্যাশা সম্বন্ধে জনসমক্ষে ঘোষণা করে চলি, কারণ যিনি সেই প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি বিশ্বস্ত।
২৪ আর এসো, আমরা একে অন্যের প্রতি মনোযোগ দিই,* যাতে প্রেম দেখানোর এবং উত্তম কাজ করার ব্যাপারে পরস্পরকে উদ্দীপিত* করতে পারি
২৫ আর সেইসঙ্গে সভায় একত্রে মিলিত হওয়া বাদ না দিই, যেমনটা কারো কারো অভ্যাস, বরং একে অন্যকে উৎসাহিত করি; আর ঈশ্বরের দিন যেহেতু এগিয়ে আসছে, তাই এসো, আমরা এই বিষয়গুলো আরও বেশি করে চলি।
২৬ কারণ সত্যের সঠিক জ্ঞান লাভ করার পর, আমরা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে চলি, তা হলে পাপের জন্য উৎসর্গ করার মতো আর কোনো বলি বাকি থাকে না,
২৭ শুধু থাকে বিচারের ভয়ংকর প্রতীক্ষা এবং বিরোধীদের গ্রাস করার জন্য প্রচণ্ড ক্রোধের আগুন।
২৮ কেউ যদি মোশির ব্যবস্থা অমান্য করে, তা হলে দু-জন কিংবা তিন জন ব্যক্তির সাক্ষ্যের ফলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তার প্রতি কোনো সমবেদনা দেখানো হয় না।
২৯ তা হলে, চিন্তা করে দেখ, যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের পুত্রকে পদদলিত করেছে, চুক্তির যে-রক্তের মাধ্যমে তাকে পবিত্র করা হয়েছে, সেই রক্তকে সামান্য বিষয় বলে গণ্য করেছে এবং যে-শক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের মহাদয়া প্রকাশ করা হয়েছে, ঈশ্বরের সেই শক্তির অপমান করেছে, সেই ব্যক্তি আরও কত বেশি শাস্তির যোগ্য!
৩০ কারণ আমরা সেই ব্যক্তিকে জানি, যিনি এই কথা বলেছেন: “প্রতিশোধ নেওয়া আমারই কাজ; আমিই প্রতিফল দেব।” এ ছাড়া, তাঁর লিখিত বাক্য জানায়: “যিহোবা* তাঁর লোকদের বিচার করবেন।”
৩১ জীবন্ত ঈশ্বরের দ্বারা শাস্তি লাভ করা কী ভয়ানক বিষয়!
৩২ কিন্তু, তোমরা আগের সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করো, যখন আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তোমরা প্রাণপণ লড়াই করার পাশাপাশি অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলে।
৩৩ কখনো কখনো তোমরা সকলের সামনে, এমন যেন রঙ্গভূমিতে অপমানিত হয়েছিলে এবং ক্লেশ ভোগ করেছিলে, আবার কখনো কখনো তোমরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে কষ্ট সহ্য করেছিলে,* যারা এই ধরনের পরীক্ষা ভোগ করেছিল।
৩৪ আর তোমরা কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিলে এবং তোমাদের বিষয়সম্পত্তি লুট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তোমরা তা আনন্দের সঙ্গে মেনে নিয়েছিলে, কারণ তোমরা জানতে যে, তোমাদের জন্য আরও উত্তম ও স্থায়ী সম্পদ রয়েছে।
৩৫ অতএব, তোমরা তোমাদের সাহস পরিত্যাগ* কোরো না, কারণ এরজন্য তোমরা প্রচুররূপে পুরস্কৃত হবে।
৩৬ তোমাদের ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার পরে তোমরা সেই বিষয় লাভ করতে পার, যা তিনি দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।
৩৭ কারণ আর “অল্পসময় মাত্র” এবং “যিনি আসছেন, তিনি উপস্থিত হবেন, দেরি করবেন না।”
৩৮ “কিন্তু, আমার ধার্মিক দাস বিশ্বাসের কারণে বেঁচে থাকবে” আর “সে যদি সরে পড়ে, তা হলে আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট হব না।”
৩৯ আমরা সরে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো লোক নই, বরং আমরা সেই লোক, যাদের বিশ্বাস রয়েছে, যেন আমাদের জীবন রক্ষা পায়।
পাদটীকাগুলো
^ বা সম্ভবত, “লোকেরা।”
^ বা “দাঁড়িয়ে জনসেবা।”
^ অর্থাৎ পা রাখার টুল।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “আস্থা।”
^ বা “অন্যের জন্য চিন্তা করি।”
^ বা “অনুপ্রাণিত।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলে।”
^ আক্ষ., “তোমরা নির্দ্বিধায় কথা বলা বন্ধ।”