ইয়োব ৩:১-২৬

৩  তারপর, ইয়োব কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি সেই দিনটাকে অভিশাপ দিতে লাগলেন, যে-দিন তার জন্ম হয়েছিল। ২  ইয়োব বললেন:  ৩  “হায়! যে-দিন আমার জন্ম হয়েছিল, সেই দিনটা যদি না আসত,সেই রাত যদি না আসত, যে-রাতে বলা হয়েছিল: ‘দেখো! ছেলে হয়েছে!’  ৪  হায়! সেই দিন যেন অন্ধকার হয়ে যায়,ঈশ্বর যেন উপর থেকে সেটার প্রতি কোনো মনোযোগ না দেন,সেই দিনের উপর যেন কোনো আলো না পড়ে।  ৫  হায়! ঘুটঘুটে অন্ধকার* যেন সেটাকে গিলে ফেলে,কালো মেঘ যেন সেটাকে ঢেকে ফেলে,আকাশের ভয়ংকর রূপ দেখে সেই দিন যেন আতঙ্কিত হয়ে যায়।  ৬  হায়! সেই রাত যেন ঘন অন্ধকারে হারিয়ে যায়। বছরের দিনগুলোর মধ্যে যেন সেই দিনটাকে স্মরণ করা না হয়,মাসগুলোর মধ্যে সেই দিনটাকে যেন গোনা না হয়।  ৭  হায়! সেই রাত যেন বন্ধ্যা হয়ে যায়,আনন্দের গান যেন শোনা না যায়।  ৮  যারা দিনকে অভিশাপ দেয়, যারা লিবিয়াথনকে* জাগিয়ে তোলে,তারা যেন সেই দিনটাকে অভিশাপ দেয়, যে-দিন আমার জন্ম হয়েছিল।  ৯  হায়! সেই দিনের ভোরের তারাগুলো যেন নিভে যায়,সেই দিনটা যেন সূর্যের আলো দেখতে না পায়আর ভোরের আলো দেখার অপেক্ষায় সেই দিনটা যেন ক্লান্ত হয়ে যায়। ১০  কেন সেই দিনটা আমার মায়ের গর্ভকে বন্ধ করে দেয়নি? কেন সেই দিনটা আমাকে এই দুঃখজনক দিন দেখিয়েছে? ১১  হায়! গর্ভে থাকতেই আমি মারা যাইনি কেন? মায়ের গর্ভ থেকে বের হওয়ার পরেই বিনষ্ট হয়ে যাইনি কেন? ১২  কেন আমাকে কোলে নেওয়া হয়েছিল? কেন আমাকে দুধ খাওয়ানো হয়েছিল? ১৩  সেই সময়ে মরে গেলে আজ আমি নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকতাম,গভীর ঘুমে শুয়ে থাকতাম, শান্তিতে বিশ্রাম নিতাম, ১৪  সেই রাজাদের এবং তাদের পরামর্শদাতাদের সঙ্গে,যাদের বানানো ঘরবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে* ১৫  কিংবা সেই রাজকুমারদের* সঙ্গে, যাদের কাছে সোনা ছিলআর যাদের ঘর রুপোয় ভরতি ছিল। ১৬  হায়! আমি যদি মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠার আগেই মারা যেতাম,সেই শিশুর মতো, যে কখনো আলো দেখেনি। ১৭  কবরে মন্দ লোকদেরও কষ্ট দূর হয়ে যায়,ক্লান্ত লোকেরাও স্বস্তি পায়। ১৮  কবরে বন্দিরাও শান্তি পায়,যারা জোর করে তাদের দিয়ে কাজ করায়, তাদের আওয়াজ তারা আর শুনতে পায় না। ১৯  সেখানে ছোটো-বড়ো সবাই সমান,দাসও তার প্রভুর কাছ থেকে মুক্ত। ২০  কেন ঈশ্বর দুঃখীদের আলো দেন?* কেন দুঃখে কাতর লোকদের বেঁচে থাকতে দেন? ২১  যারা মৃত্যু চায়, কেন তারা তা পায় না? তারা গুপ্তধনের চেয়েও বেশি করে সেটার খোঁজ করে। ২২  সেটা খুঁজে পেয়ে তারা আনন্দিত হয়,কবর দেখে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। ২৩  কেন ঈশ্বর সেই ব্যক্তিকে আলো দেখান,যে পথ হারিয়ে ফেলেছে আর যার পথ ঈশ্বর নিজে আটকেছেন? ২৪  আমি না খেয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলি,বয়ে যাওয়া ঝরনার মতো আর্তনাদ করি। ২৫  আমি যেটার আতঙ্কে ছিলাম, সেটাই আমার প্রতি হল,আমি যেটার ভয় পাচ্ছিলাম, সেটাই আমার প্রতি ঘটল। ২৬  আমি সুখশান্তি হারিয়ে ফেলেছি, একটুও বিশ্রাম নেইআর সমস্যা তো আমার পিছুই ছাড়ছে না।”

পাদটীকাগুলো

বা “অন্ধকার এবং মৃত্যুর ছায়া।”
মনে করা হয়, এটা কুমির অথবা কোনো বড়ো ও শক্তিশালী সামুদ্রিক প্রাণী।
বা সম্ভবত, “যারা নিজেদের জন্য ফাঁকা জায়গা বানিয়েছিলেন।”
বা “উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের।”
বা “দুঃখীদের বেঁচে থাকতে দেন?”