গীতসংহিতা ১০৬:১-৪৮

১০৬  যাঃয়ের প্রশংসা করো!* যিহোবাকে ধন্যবাদ দাও কারণ তিনি ভালো,তাঁর অটল প্রেম চিরস্থায়ী।  ২  কে যিহোবার মহৎ কাজগুলো সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে ঘোষণা করতে পারে?অথবা কে তাঁর সমস্ত প্রশংসাযোগ্য কাজের বিষয়ে ঘোষণা করতে পারে?  ৩  সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা ন্যায্য কাজ করে,যা সঠিক, সবসময় তা-ই করে।  ৪  হে যিহোবা, যখন তুমি তোমার লোকদের প্রতি অনুগ্রহ* দেখাবে, তখন আমাকে স্মরণ কোরো। আমার যত্ন নিয়ো আর আমার পরিত্রাণ কোরো,  ৫  যাতে তুমি তোমার মনোনীত লোকদের প্রতি যে-ভালো কাজগুলো কর, আমি সেগুলো উপভোগ করতে পারি,তোমার জাতির সঙ্গে আনন্দ করতে পারি,তোমার উত্তরাধিকারের সঙ্গে মিলে গর্বের সঙ্গে তোমার প্রশংসা* করতে পারি।  ৬  আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মতোই পাপ করেছি,আমরা ভুল করেছি, মন্দ কাজ করেছি।  ৭  মিশরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তোমার আশ্চর্যজনক কাজগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায়নি।* তুমি তাদের প্রতি যে প্রচুর পরিমাণে অটল প্রেম দেখিয়েছিলে, তারা তা মনে রাখেনি,এর পরিবর্তে তারা লোহিত সাগরের* কাছে বিদ্রোহ করল।  ৮  কিন্তু, তিনি তাঁর নামের জন্য তাদের রক্ষা করলেন,যাতে তিনি তাঁর শক্তির বিষয়ে প্রকাশ করতে পারেন।  ৯  তিনি লোহিত সাগরকে ধমক দিলেন আর সেটা শুকিয়ে গেল,তিনি তাদের সেটার গভীর জায়গাগুলো দিয়ে এমনভাবে নিয়ে গেলেন, যেন সেটা মরুভূমি,* ১০  তিনি তাদের বিরোধীদের হাত থেকে রক্ষা করলেন,শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করলেন। ১১  সমুদ্র তাদের বিরোধীদের ডুবিয়ে দিল,তাদের মধ্যে এক জনও বাঁচল না। ১২  তখন তারা তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করল,তাঁর প্রশংসায় গান গাইতে লাগল। ১৩  কিন্তু, তারা দ্রুত তাঁর কাজগুলো ভুলে গেল,তারা তাঁর পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করল না। ১৪  প্রান্তরে তারা তাদের স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করল,মরুভূমিতে তারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করল। ১৫  তারা যা চাইল, তিনি তাদের তা দিলেন,কিন্তু তারপর তিনি এমন রোগ দিয়ে তাদের আঘাত করলেন যে, তারা বিনষ্ট হয়ে গেল। ১৬  শিবিরে তারা মোশির প্রতিএবং যিহোবার পবিত্র ব্যক্তি হারোণের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠল। ১৭  তারপর, পৃথিবী মুখ খুলল এবং দাথনকে গিলে নিলআর অবীরামের সঙ্গে যারা একত্রিত হয়েছিল, তাদের ঢেকে ফেলল। ১৮  তাদের দলের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল,একটা শিখা মন্দ ব্যক্তিদের খেয়ে ফেলল। ১৯  তারা হোরেবে একটা বাছুর তৈরি করলআর ধাতব* মূর্তির সামনে মাথা নত করল। ২০  তারা আমার গৌরব করার পরিবর্তেএকটা ষাঁড়ের মূর্তির গৌরব করল, যেটা ঘাস খায়। ২১  তারা তাদের ঈশ্বরকে ভুলে গেল, যিনি তাদের পরিত্রাণ করেছিলেন,যিনি মিশরে মহৎ মহৎ কাজ করেছিলেন, ২২  হামের দেশে আশ্চর্যজনক কাজ করেছিলেন,লোহিত সাগরে বিস্ময়কর কাজ করেছিলেন। ২৩  তিনি তাদের ধ্বংস করার আজ্ঞা দিতে যাচ্ছিলেন,এমন সময় তাঁর মনোনীত ব্যক্তি মোশি তাঁর কাছে বিনতি করলেন,যেন তিনি তাঁর প্রচণ্ড রাগ শান্ত করেন, যেটা তাদের বিনষ্ট করে দিতে পারত। ২৪  তারপর, তারা সেই সুন্দর দেশকে তুচ্ছ বলে মনে করল,তারা তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর একটুও বিশ্বাস করল না। ২৫  তারা নিজেদের তাঁবুতে বচসা করতে থাকল,তারা যিহোবার কথা শুনল না। ২৬  তাই, তিনি নিজের হাত তুলে তাদের বিষয়ে এই শপথ করলেন যে,তিনি তাদের প্রান্তরে ফেলে দেবেন, ২৭  তিনি তাদের বংশধরদের অন্যান্য জাতির হাতে পড়তে দেবেনআর বিভিন্ন দেশের মাঝে তাদের ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। ২৮  তারপর, তারা পিয়োরের বাল দেবতার উপাসনায় যোগ দিল*আর মৃতদের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত বলিদান* খেল। ২৯  তারা তাদের কাজের মাধ্যমে তাঁকে রাগিয়ে তুললআর তাদের মধ্যে এক মহামারি ছড়িয়ে পড়ল। ৩০  কিন্তু, পীনহস যখন উঠে দাঁড়িয়ে হস্তক্ষেপ করলেন,তখন মহামারি থেমে গেল। ৩১  এই কারণে তাকে ধার্মিক বলে গণ্য করা হল,প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাকে ধার্মিক বলে গণ্য করা হল। ৩২  তারা মরীবার* ঝরনার কাছে ঈশ্বরকে রাগিয়ে তুললআর তাদের কারণে মোশিকে বিপদে পড়তে হল। ৩৩  তারা মোশিকে রাগিয়ে তুললআর তিনি চিন্তা না করেই কথা বলে ফেললেন। ৩৪  তারা অন্যান্য জাতিকে বিনষ্ট করল না,যদিও যিহোবা তাদের তা করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন। ৩৫  এর পরিবর্তে, তারা সেই জাতিগুলোর সঙ্গে মিশে গেলআর তাদের আচার-আচরণ গ্রহণ করে* নিল। ৩৬  তারা তাদের মূর্তিগুলোর সেবা করতে থাকলআর সেগুলো তাদের জন্য ফাঁদ হয়ে উঠল। ৩৭  তারা মন্দ স্বর্গদূতদের উদ্দেশেনিজেদের ছেলে-মেয়েদের বলি হিসেবে উৎসর্গ করল। ৩৮  তারা নির্দোষ ব্যক্তিদের রক্তপাত করতে থাকল,নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরই রক্তপাত করতে থাকল,যাদের তারা কনানের মূর্তিগুলোর উদ্দেশে বলি হিসেবে উৎসর্গ করতআর পুরো দেশ তাদের রক্তপাতের দ্বারা কলুষিত হয়ে গেল। ৩৯  তারা তাদের কাজের দ্বারা অশুচি হয়ে পড়ল,এইরকম কাজ করে তারা ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা* করল। ৪০  তাই, তাঁর লোকদের বিরুদ্ধে যিহোবার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠলআর তিনি নিজের উত্তরাধিকারকে ঘৃণা করতে লাগলেন। ৪১  তিনি বার বার তাদের অন্যান্য জাতির হাতে তুলে দিলেন,যাতে যারা তাদের ঘৃণা করে, তারা তাদের উপর রাজত্ব করে। ৪২  তাদের শত্রুরা তাদের উপর অত্যাচার করলআর তাদের শক্তির সামনে* তাদের নত হতে হল। ৪৩  অনেক বার তিনি তাদের উদ্ধার করেছিলেন,কিন্তু তারা বিদ্রোহ করত এবং অবাধ্য হতআর তাদের ভুলের কারণে তাদের অপমান করা হত। ৪৪  কিন্তু, তিনি তাদের কষ্ট দেখতেনএবং সাহায্য চেয়ে করা তাদের আর্তনাদ শুনতেন। ৪৫  তাদের জন্য তিনি নিজের চুক্তি স্মরণ করতেন,তিনি নিজের মহৎ অটল প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হতেন আর তাদের প্রতি তাঁর মায়া হত।* ৪৬  যারা তাদের বন্দি করত,তিনি তাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করতেন, যেন তারা তাদের প্রতি দয়া দেখায়। ৪৭  হে যিহোবা, আমাদের ঈশ্বর, আমাদের রক্ষা করো,আমাদের অন্যান্য জাতি থেকে একত্রিত করো,যাতে আমরা তোমার পবিত্র নামের প্রশংসা করিএবং তোমার প্রশংসা করে অনেক আনন্দ পাই। ৪৮  যুগ যুগ ধরে* ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা হোক। আর সমস্ত লোক বলুক, “আমেন!”* যাঃয়ের প্রশংসা করো!*

পাদটীকাগুলো

বা “হাল্লিলূয়া!” “যাঃ” হল যিহোবা নামের সংক্ষিপ্ত রূপ।
বা “অনুমোদন।”
বা “মিলে তোমার বিষয়ে গর্ব।”
বা “কাজগুলোর অর্থ বোঝেনি।”
বা “তারা সূফসাগরের।”
বা “প্রান্তর।”
বা “ছাঁচে ঢালা।”
অর্থাৎ মৃতদের কাছে অথবা নিষ্প্রাণ মূর্তিদের কাছে উৎসর্গীকৃত বলিদান।
বা “দেবতার সঙ্গে নিজেদের জুড়ল।”
অর্থ, “ঝগড়া করা।”
বা “আচার-আচরণ শিখে।”
বা “বেশ্যাদের মতো খারাপ কাজ।”
আক্ষ., “তাদের হাতের নীচে।”
বা “আর তিনি অনুশোচনা বোধ করতেন।”
বা “অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল।”
বা “তা-ই হোক!”
বা “হাল্লিলূয়া!” “যাঃ” হল যিহোবা নামের সংক্ষিপ্ত রূপ।