দ্বিতীয় বিবরণ ১২:১-৩২

১২  “তোমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাকে যে-দেশ দখল করার জন্য দিতে চলেছেন, সেখানে তোমরা সারাজীবন ধরে খুব ভালোভাবে এই আইনকানুন এবং বিচার সংক্রান্ত রায়গুলো পালন করবে। ২  তোমরা সেই দেশ থেকে যে-সমস্ত জাতিকে দূর করে দিতে চলেছ, তারা যে যে জায়গায় তাদের দেবতাদের সেবা করে, তোমরা সেই সমস্ত জায়গা পুরোপুরিভাবে বিনষ্ট করে দেবে, তা সেটা উঁচু উঁচু পর্বতের উপরে, পাহাড়ের উপরে কিংবা বড়ো বড়ো গাছের নীচে, যেখানেই থাকুক না কেন। ৩  তোমরা তাদের বেদিগুলো ভেঙে দেবে, তাদের উপাসনার স্তম্ভগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে, তাদের উপাসনার খুঁটিগুলো* আগুনে পুড়িয়ে দেবে এবং তাদের দেবতাদের খোদিত মূর্তিগুলো ভেঙে দেবে। এভাবে পুরো দেশ থেকে তোমরা সেই সমস্ত দেবতার নাম পর্যন্ত মুছে ফেলবে। ৪  “অন্য জাতির লোকেরা তাদের দেবতাদের যেভাবে উপাসনা করে, তোমরা সেভাবে তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার উপাসনা করবে না। ৫  এর পরিবর্তে, তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের সমস্ত বংশকে দেওয়া এলাকার মধ্য থেকে যে-জায়গাকে নিজের নামের গৌরব করার জন্য বেছে নেবেন এবং নিজের বাসস্থান হিসেবে নির্ধারণ করবেন, তোমরা সেখানেই যাবে। ৬  আর তোমরা তোমাদের হোমবলি, অন্যান্য বলি, তোমাদের সম্পত্তির দশমাংশ, তোমাদের দান, তোমাদের অঙ্গীকারের জন্য বলি, তোমাদের স্বেচ্ছায় দেওয়া বলি এবং গরু, মেষ ও ছাগলের প্রথম বাচ্চা, সবই সেখানে উৎসর্গ করবে। ৭  সেখানেই তোমরা তোমাদের পরিবারের সঙ্গে তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার সামনে খাওয়া-দাওয়া করবে আর তোমরা তোমাদের সমস্ত কাজের জন্য আনন্দ করবে কারণ তোমার ঈশ্বর যিহোবা তোমাকে আশীর্বাদ করেছেন। ৮  “তোমরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো কাজ করবে না, যেমনটা তোমরা এখানে করে থাক। এখানে তোমরা সবাই সেটাই করে থাক, যেটা তোমাদের দৃষ্টিতে সঠিক* ৯  কারণ তোমরা এখনও বিশ্রামের সেই স্থানে এবং উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া সেই জমিতে পৌঁছাওনি, যেটা তোমার ঈশ্বর যিহোবা তোমাকে দিতে চলেছেন। ১০  তোমরা যখন জর্ডন পার হয়ে সেই দেশে গিয়ে বাস করবে, যেটা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের দখল করার জন্য দিতে চলেছেন, তখন তিনি অবশ্যই আশেপাশের সমস্ত শত্রুর হাত থেকে তোমাদের রেহাই দেবেন আর তোমরা সেখানে নিরাপদে বাস করবে। ১১  সেই দেশে তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা যে-জায়গাকে নিজের নামের গৌরব করার জন্য বেছে নেবেন, সেখানেই তোমরা তোমাদের হোমবলি, অন্যান্য বলি, তোমাদের সম্পত্তির দশমাংশ, তোমাদের দান এবং যিহোবার কাছে করা সমস্ত অঙ্গীকারের জন্য বলি উৎসর্গ করবে, যেগুলোর বিষয়ে আমি তোমাদের আজ্ঞা দিয়েছি। ১২  তোমরা তোমাদের ছেলে-মেয়েদের এবং দাস-দাসীদের সঙ্গে এবং তোমাদের নগরে* বসবাসরত লেবীয়দের সঙ্গে, যাদের আলাদা করে জমির কোনো অংশ কিংবা উত্তরাধিকার দেওয়া হয়নি, তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার সামনে আনন্দ করবে। ১৩  তোমরা সাবধান থেকো যেন তোমরা যেখানে ইচ্ছা, সেখানে তোমাদের হোমবলি উৎসর্গ না কর। ১৪  যিহোবা তোমার বংশগুলোর এলাকার মধ্য থেকে যে-জায়গা বেছে নেবেন, তুমি শুধু সেখানেই তোমার হোমবলি উৎসর্গ করবে আর সেখানে তুমি সেই সমস্ত কিছু করবে, যেগুলো করার বিষয়ে আমি তোমাকে আজ্ঞা দিচ্ছি। ১৫  “কিন্তু, যখনই তোমার মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হবে, তখনই তুমি তোমার নগরে* পশু মেরে খেতে পারো। তোমার ঈশ্বর যিহোবার আশীর্বাদে তোমার কাছে যে-সমস্ত পশু রয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে তুমি যত খুশি, তত খেতে পারো। সমস্ত লোক এই মাংস খেতে পারে, তা তারা শুচি অথবা অশুচি, যা-ই হোক না কেন, ঠিক যেমনটা তোমরা চিংকারা বা হরিণের মাংস খেয়ে থাক। ১৬  কিন্তু, তোমরা কোনোভাবেই রক্ত খাবে না। এর পরিবর্তে, তুমি সেটা মাটিতে জলের মতো ঢেলে দেবে। ১৭  আর এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো তোমার নগরের* ভিতরে খাওয়ার অনুমতি নেই। এগুলো হল: ফসল, নতুন দ্রাক্ষারস* ও তেলের দশমাংশ, গরু, মেষ ও ছাগলের প্রথম বাচ্চা, অঙ্গীকারের জন্য দেওয়া কোনো বলি, স্বেচ্ছায় দেওয়া বলি এবং দান করা কোনো বিষয়। ১৮  এগুলো তুমি তোমার ঈশ্বর যিহোবার সামনেই খাবে। এগুলো তুমি তোমার ছেলে-মেয়ে, দাস-দাসী এবং তোমার নগরে* বসবাসরত লেবীয়দের সঙ্গে সেই জায়গায় খাবে, যেটা তোমার ঈশ্বর যিহোবা বেছে নেবেন। তুমি তোমার ঈশ্বর যিহোবার সামনে তোমার সমস্ত কাজের জন্য আনন্দ করবে। ১৯  আর সাবধান থেকো, তুমি যতদিন তোমার দেশে বেঁচে থাকবে, ততদিন তুমি যেন লেবীয়দের অবহেলা না কর। ২০  “তোমার ঈশ্বর যিহোবা নিজের প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী তোমার দেশের সীমানা বৃদ্ধি করার পর তোমার যদি কখনো মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হয় আর তুমি বল, ‘আজ আমি মাংস খেতে চাই,’ তা হলে তুমি তা খেতে পারো। ২১  তোমার ঈশ্বর যিহোবা নিজের নামের গৌরব করার জন্য যে-জায়গা বেছে নেবেন, সেটা যদি তোমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে হয়, তা হলে তুমি আমার আজ্ঞা অনুযায়ী যিহোবার দেওয়া গরু, ষাঁড়, মেষ কিংবা ছাগল মারবে এবং যখনই তোমার মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হবে, তখনই তুমি তোমার নগরে* তা খাবে। ২২  সমস্ত লোক এই মাংস খেতে পারে, তা তারা শুচি অথবা অশুচি, যা-ই হোক না কেন, ঠিক যেমনটা তোমরা চিংকারা বা হরিণের মাংস খেয়ে থাক। ২৩  কিন্তু, তুমি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোয়ো যেন তুমি কোনোভাবেই রক্ত না খাও কারণ রক্তই প্রাণ। তুমি মাংসের সঙ্গে প্রাণ খাবে না। ২৪  তুমি কোনোভাবেই রক্ত খাবে না। তুমি সেটাকে জলের মতো মাটিতে ঢেলে দেবে। ২৫  তুমি কোনোভাবেই সেটা খাবে না। এভাবে তোমার এবং তোমার পরে তোমার সন্তানদের মঙ্গল হবে কারণ তুমি যিহোবার দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা-ই করছ। ২৬  তুমি যখন যিহোবার বেছে নেওয়া জায়গায় যাবে, তখন তুমি নিজের সঙ্গে কেবল তোমার পবিত্র উপহার এবং তোমার অঙ্গীকারের জন্য বলি নিয়ে যাবে। ২৭  সেখানে তুমি তোমার হোমবলি হিসেবে দেওয়া পশুর মাংস ও রক্ত তোমার ঈশ্বর যিহোবার বেদির উপর উৎসর্গ করবে। বলিদান হিসেবে দেওয়া পশুর রক্ত তুমি তোমার ঈশ্বর যিহোবার বেদির উপর ঢেলে দেবে, তবে তুমি সেটার মাংস খেতে পারো। ২৮  “আমি তোমাকে যে-আজ্ঞাগুলো দিচ্ছি, সেগুলোর সবই তুমি ভালোভাবে পালন করবে। তুমি যদি এমনটা কর, তা হলে তোমার এবং তোমার পরে তোমার সন্তানদের সবসময় মঙ্গল হবে কারণ তুমি ঠিক সেটাই করছ, যেটা তোমার ঈশ্বর যিহোবার দৃষ্টিতে উত্তম ও সঠিক। ২৯  “তুমি যে-জাতিগুলোকে তাড়িয়ে দেবে, তোমার ঈশ্বর যিহোবা যখন তাদের বিনষ্ট করে দেবেন এবং তুমি তাদের দেশে বাস করবে, ৩০  তখন সাবধান থেকো, তাদের বিনষ্ট হওয়ার পর তুমি যেন সেখানে কোনো ফাঁদে পড়ে না যাও। তুমি তাদের দেবতাদের সম্বন্ধে জানার জন্য এমনটা বলবে না, ‘এই জাতির লোকেরা কীভাবে নিজেদের দেবতাদের সেবা করত? আমিও তাদের মতো করব।’ ৩১  তুমি তোমার ঈশ্বর যিহোবার উপাসনা তাদের মতো করে করবে না কারণ তারা তাদের দেবতাদের জন্য সেইসমস্ত জঘন্য কাজ করে, যেগুলোকে যিহোবা ঘৃণা করেন। তারা এমনকী তাদের ছেলে-মেয়েদের তাদের দেবতাদের কাছে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করে। ৩২  আমি তোমাদের যে-সমস্ত আজ্ঞা দিচ্ছি, তোমরা খেয়াল রেখো যেন তোমরা সেগুলোর সবই ভালোভাবে পালন কর। তোমরা এই আজ্ঞাগুলোর সঙ্গে কিছু যোগ করবে না অথবা এগুলো থেকে কিছু বাদ দেবে না।

পাদটীকাগুলো

শব্দকোষ দেখুন।
বা “যেটাকে তোমরা সঠিক বলে মনে করে থাক।”
আক্ষ., “নগরের দরজার ভিতরে।”
আক্ষ., “নগরের দরজার ভিতরে।”
আক্ষ., “নগরের দরজার।”
বা “ওয়াইন।”
আক্ষ., “নগরের দরজার ভিতরে।”
আক্ষ., “নগরের দরজার ভিতরে।”