প্রেরিতদের কার্যবিবরণ ২২:১-৩০
২২ তিনি বললেন: “ভাইয়েরা এবং পিতৃতুল্য বয়স্ক ব্যক্তিরা, এখন আমি আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করছি, শুনুন।”
২ তারা যখন তাকে তাদের উদ্দেশে ইব্রীয় ভাষায় কথা বলতে শুনল, তখন তারা আরও বেশি শান্ত হল। আর পৌল তাদের বললেন:
৩ “আমি একজন যিহুদি, কিলিকিয়ার তার্ষ নগরে আমার জন্ম, কিন্তু আমি এই জেরুসালেম নগরে গমলীয়েলের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা লাভ করেছি আর আমাকে পূর্বপুরুষদের ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে শেখানো হয়েছে। আপনারা সকলে যেমন এখন উদ্যোগী আছেন, তেমনই আমিও ঈশ্বরের পক্ষে উদ্যোগী ছিলাম।
৪ আমি প্রভুর পথে চলে এমন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে বেঁধে কারাগারে ঢোকাতাম আর আমি তাদের তাড়না করতাম এবং তাদের হত্যা করাতাম।
৫ এই বিষয়ে মহাযাজক এবং যিহুদি পরিষদের সমস্ত সদস্যও সাক্ষি। দামেস্কের সমাজগৃহগুলোতে দেখানোর জন্য আমি তাদের কাছ থেকে চিঠিও নিয়েছিলাম। যারা সেখানে ছিল, তাদের গ্রেপ্তার করে জেরুসালেমে নিয়ে এসে কারাগারে ঢোকানোর জন্য আমি সেখানে যাচ্ছিলাম।
৬ “কিন্তু, রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আমি যখন দামেস্কের কাছাকাছি এলাম, তখন বেলা প্রায় দুপুর। হঠাৎ আকাশ থেকে একটা তীব্র আলো আমার চারপাশে বিচ্ছুরিত হল
৭ আর আমি মাটিতে পড়ে গেলাম এবং একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম: ‘শৌল, শৌল, তুমি কেন আমাকে তাড়না করছ?’
৮ আমি বললাম: ‘প্রভু, আপনি কে?’ আর তিনি আমাকে বললেন: ‘আমি নাসরতীয় যিশু, যাঁকে তুমি তাড়না করছ।’
৯ যারা আমার সঙ্গে ছিল, তারা সেই আলো দেখতে পেল ঠিকই, কিন্তু আমার উদ্দেশে যে-কথাগুলো বলা হয়েছিল, তা তারা বুঝতে পারল না।
১০ তখন আমি বললাম: ‘প্রভু, আমি কী করব?’ প্রভু আমাকে বললেন: ‘ওঠো, দামেস্কে যাও আর কী করতে হবে, তা সেখানে তোমাকে বলা হবে।’
১১ কিন্তু, সেই আলোর তেজে যেহেতু আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, তাই আমার সঙ্গীরা আমার হাত ধরে আমাকে দামেস্কে নিয়ে এল।
১২ “পরে অননিয় নামে একজন ব্যক্তি আমার কাছে আসেন। তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন এবং ব্যবস্থা পালন করতেন আর সেখানে বসবাসরত সমস্ত যিহুদির মধ্যে তার সুনাম ছিল।
১৩ তিনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন: ‘ভাই শৌল, তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসুক!’ আর সেই মুহূর্তেই আমি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলাম এবং তাকে দেখতে পেলাম।
১৪ তিনি বললেন: ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর তোমাকে মনোনীত করেছেন, যেন তুমি তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে জানতে পার এবং ধার্মিক ব্যক্তি যিশুকে দেখতে পাও ও সেইসঙ্গে তাঁর মুখের বাক্য শুনতে পাও,
১৫ কারণ তুমি যা-কিছু দেখেছ ও শুনেছ, সেই বিষয়ে সমস্ত মানুষের কাছে তোমাকে যিশুর সাক্ষি হতে হবে।
১৬ আর এখন তুমি কেন দেরি করছ? ওঠো, বাপ্তিস্ম নাও এবং যিশুর নামে ডাকার মাধ্যমে তোমার পাপ ধুয়ে ফেলো।’
১৭ “কিন্তু, আমি যখন জেরুসালেমে ফিরে গিয়ে মন্দিরে প্রার্থনা করছিলাম, তখন একটা দর্শন পেলাম
১৮ আর দেখলাম প্রভু যিশু আমাকে বলছেন: ‘তাড়াতাড়ি করো, উঠে শীঘ্র জেরুসালেম থেকে বের হও, কারণ তারা আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না।’
১৯ আমি বললাম, ‘প্রভু, তারা ভালো করেই জানে, যারা তোমার উপর বিশ্বাস করে, আমি সমাজগৃহে সমাজগৃহে গিয়ে তাদের কারাগারে ঢোকাতাম এবং প্রহার করতাম;
২০ আর যখন তোমার সাক্ষি স্তিফানকে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন আমি পাশে দাঁড়িয়ে তা সমর্থন করছিলাম এবং যারা তাকে হত্যা করছিল, তাদের চাদর পাহারা দিচ্ছিলাম।’
২১ তারপরও তিনি আমাকে বললেন: ‘যাও, কারণ আমি তোমাকে দূরদূরান্তে ন-যিহুদিদের কাছে পাঠাব।’”
২২ লোকেরা এই পর্যন্ত তার কথা শুনল। এরপর তারা জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল: “ওকে পৃথিবী থেকে দূর করে দাও, কারণ ও বেঁচে থাকার যোগ্য নয়!”
২৩ লোকেরা যখন চিৎকার করছিল, তাদের চাদর ছুড়ে ফেলছিল আর বাতাসে ধুলো ওড়াচ্ছিল,
২৪ তখন প্রধান সেনাপতি পৌলকে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং তাকে চাবুক মেরে জেরা করতে বললেন, যাতে তিনি ঠিক করে জানতে পারেন, কী কারণে লোকেরা পৌলের বিরুদ্ধে এভাবে চিৎকার করছে।
২৫ কিন্তু, তারা যখন পৌলকে চাবুক মারার জন্য বাঁধল, তখন পৌল সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাপতিকে বললেন: “একজন রোমীয়কে* দোষী সাব্যস্ত* না করেই চাবুক মারা কি আপনাদের পক্ষে বৈধ?”
২৬ এই কথা শুনে সেই সেনাপতি প্রধান সেনাপতির কাছে গিয়ে বললেন: “আপনি কী করতে চান? কারণ এই ব্যক্তি তো রোমীয়।”
২৭ তখন প্রধান সেনাপতি পৌলের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন: “বলো দেখি, তুমি কি একজন রোমীয়?” পৌল বললেন: “হ্যাঁ।”
২৮ এতে প্রধান সেনাপতি বললেন: “আমি এই নাগরিকত্ব প্রচুর অর্থ দিয়ে কিনেছি।” পৌল বললেন: “কিন্তু, আমি জন্মসূত্রেই রোমীয়।”
২৯ এই কথা শুনে যারা তাকে জেরা করতে যাচ্ছিল, তারা সঙ্গেসঙ্গে ভয়ে পিছিয়ে গেল; আর পৌল যে একজন রোমীয়, তা বুঝতে পেরে এবং তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন বলে প্রধান সেনাপতিও ভয় পেয়ে গেলেন।
৩০ তাই পরের দিন, যিহুদিরা কী কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তা নিশ্চিতভাবে জানার জন্য তিনি তার বাঁধন খুলে দিলেন আর প্রধান যাজকদের এবং পুরো মহাসভাকে* একত্রিত হওয়ার আদেশ দিলেন। এরপর তিনি পৌলকে এনে তাদের মাঝে দাঁড় করালেন।