বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১:১-৩৬

 যিহোশূয়ের মৃত্যুর পর ইজরায়েলীয়েরা যিহোবাকে জিজ্ঞেস করল: “আমাদের মধ্যে কে প্রথমে কনানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাবে?” ২  যিহোবা বললেন: “যিহূদা যাবে। দেখো! আমি এই দেশ তার হাতে সমর্পণ করে দেব।”* ৩  তখন যিহূদা বংশের লোকেরা তাদের ভাইদের অর্থাৎ শিমিয়োন বংশের লোকদের বলল: “আমাদের সঙ্গে চলো আর আমাদের যে-এলাকা* দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে কনানীয়দের তাড়িয়ে দিতে আমাদের সাহায্য করো। তারপর, আমরা তোমাদের এলাকায় যাব এবং তোমাদের সাহায্য করব।” তখন শিমিয়োন বংশের লোকেরা তাদের সঙ্গে গেল। ৪  যিহূদার লোকেরা যখন যুদ্ধ করল, তখন যিহোবা কনানীয় ও পরিষীয়দের তাদের হাতে সমর্পণ করলেন আর তারা বেষকে ১০,০০০ জন পুরুষকে পরাজিত করল। ৫  কনানীয় ও পরিষীয়দের পরাজিত করার সময় বেষকে তারা অদোনী-বেষকের মুখোমুখি হল আর তারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ৬  অদোনী-বেষক যখন পালাতে লাগলেন, তখন যিহূদার লোকেরা তার পিছু ধাওয়া করে তাকে ধরে ফেলল। তারা তার হাত ও পায়ের বুড়ো আঙুল কেটে দিল। ৭  তখন অদোনী-বেষক বললেন: “আমি ৭০ জন রাজার হাত ও পায়ের বুড়ো আঙুল কেটে দিয়েছিলাম আর তারা এখন আমার টেবিল থেকে পড়া খাবার খায়। আমি অন্যদের প্রতি যেমনটা করেছিলাম, ঈশ্বরও আমার প্রতি তেমনটাই করেছেন।” এরপর, তারা তাকে জেরুসালেমে নিয়ে এল আর সেখানে তিনি মারা গেলেন। ৮  তারপর, যিহূদার লোকেরা জেরুসালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সেটা দখল করে নিল। তারা সেখানকার লোকদের তলোয়ার দিয়ে মেরে ফেলল আর নগরটা আগুনে পুড়িয়ে দিল। ৯  এরপর, তারা পার্বত্য এলাকা, নেগেব* ও শফেলায়* বসবাসরত কনানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ১০  তারপর, যিহূদা বংশ সেই কনানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল, যারা হিব্রোণে বাস করত (হিব্রোণের নাম আগে কিরিয়ৎ-অর্ব ছিল)। সেখানে তারা শেশয়, অহীমান ও তল্‌ময়কে মেরে ফেলল। ১১  এরপর, তারা দবীরের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল। (দবীরের নাম আগে কিরিয়ৎ-সেফর ছিল।) ১২  তখন কালেব বললেন: “যে-ব্যক্তি কিরিয়ৎ-সেফরের উপর আক্রমণ করে সেটা জয় করে নেবে, তার সঙ্গে আমি আমার মেয়ে অক্‌ষার বিয়ে দেব।” ১৩  অৎনীয়েল কিরিয়ৎ-সেফর জয় করে নিলেন। তিনি কালেবের ভাই কনসের ছেলে। কালেব নিজের মেয়ে অক্‌ষার সঙ্গে তার বিয়ে দিলেন। ১৪  অক্‌ষা যখন বাড়ি যাচ্ছিল, তখন সে বার বার তার স্বামীকে বলল, যেন তার স্বামী তার বাবার* কাছে একটা জমি চায়। তারপর, অক্‌ষা তার গাধা থেকে নীচে নামল* আর কালেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন: “তুমি কী চাও?” ১৫  অক্‌ষা বলল: “তোমার এই মেয়েকে আশীর্বাদ করো। আমাকে গুল্লোৎ-ময়িমের* এলাকা দাও কারণ দক্ষিণ দিকে* আমাকে যে-জমি দেওয়া হয়েছে, সেটা খুবই শুকনো।” তাই, কালেব তাকে উপরের গুল্লোৎ এবং নীচের গুল্লোৎ দিয়ে দিলেন। ১৬  মোশির শ্বশুর একজন কেনীয় ছিলেন, যার বংশধরেরা যিহূদা বংশের সঙ্গে খেজুর গাছের নগর থেকে এসেছিল। তারা অরাদের দক্ষিণ দিকে যিহূদার প্রান্তরে গেল আর সেখানকার লোকদের মাঝে বাস করতে শুরু করল। ১৭  যিহূদা বংশ তাদের ভাইদের সঙ্গে অর্থাৎ শিমিয়োন বংশের সঙ্গে সফাৎ নগরের কনানীয়দের উপর আক্রমণ করল আর তাদের পুরোপুরিভাবে বিনষ্ট করে দিল। তাই, তারা সেই নগরের নাম রাখল হর্মা।* ১৮  তারপর, যিহূদা গাজা এবং সেটার এলাকা, অস্কিলোন এবং সেটার এলাকা আর ইক্রোণ এবং সেটার এলাকা দখল করে নিল। ১৯  যিহোবা যিহূদার লোকদের সঙ্গে ছিলেন আর তারা পার্বত্য এলাকা দখল করে নিয়ে সেখানে বাস করতে শুরু করল। কিন্তু, তারা সমভূমিতে* বসবাসরত কনানীয়দের তাড়াতে পারল না কারণ তাদের কাছে এমন যুদ্ধরথ ছিল, যেগুলোর চাকায় তলোয়ার লাগানো ছিল।* ২০  মোশির প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী যিহূদার লোকেরা কালেবকে হিব্রোণ দিল। কালেব সেখান থেকে অনাকের তিন জন ছেলেকে তাড়িয়ে দিলেন। ২১  কিন্তু, বিন্যামীন বংশ জেরুসালেম থেকে যিবূষীয়দের তাড়াল না। এইজন্য আজ পর্যন্ত যিবূষীয়েরা জেরুসালেমে বিন্যামীনের লোকদের মাঝে বাস করে। ২২  এই সময়ের মধ্যে যোষেফের পরিবার বৈথেল নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল আর যিহোবা তাদের সঙ্গে ছিলেন। ২৩  যোষেফের পরিবার তাদের আগে আগে কয়েক জন গুপ্তচরকে বৈথেলে (এই নগরের নাম আগে লূস ছিল) পাঠাল। ২৪  সেই গুপ্তচরেরা একজন ব্যক্তিকে সেই নগর থেকে বাইরে আসতে দেখে তাকে বলল: “দয়া করে আমাদের নগরে ঢোকার রাস্তা দেখাও। বিনিময়ে আমরা তোমার প্রতি দয়া* দেখাব।” ২৫  তখন সেই ব্যক্তি তাদের নগরে ঢোকার রাস্তা দেখাল আর তারা নগরের সমস্ত বাসিন্দাকে তলোয়ার দিয়ে মেরে ফেলল। কিন্তু, তারা সেই ব্যক্তি এবং তার পরিবারকে ছেড়ে দিল। ২৬  সেই ব্যক্তি সেখান থেকে হিত্তীয়দের দেশে গেল আর সেখানে নিজের জন্য একটা নগর তৈরি করল। সে সেই নগরের নাম রাখল লূস আর আজ পর্যন্ত সেই নগরের এই নামই রয়েছে। ২৭  মনঃশি বংশ এইসমস্ত নগর এবং এর আশেপাশের নগরগুলো দখল করল না: বৈৎ-শান, তানক, দোর, যিব্‌লিয়ম ও মগিদ্দো। কনানীয়েরা এই এলাকাগুলোতে বাস করতে থাকল। ২৮  ইজরায়েলীয়েরা যখন শক্তিশালী হয়ে উঠল, তখন তারা কনানীয়দের দিয়ে জোর করে দাসের কাজ করাতে লাগল। কিন্তু, তারা কনানীয়দের পুরোপুরিভাবে তাড়িয়ে দিল না। ২৯  ইফ্রয়িমীয়েরাও সেই কনানীয়দের তাড়িয়ে দিল না, যারা গেষরে বাস করত আর কনানীয়েরা ইফ্রয়িমীয়দের মাঝে গেষরেই বাস করল। ৩০  সবূলূন বংশ কিট্রোণ ও নহলোলে বসবাসকারী কনানীয়দের তাড়াল না আর সেই কনানীয়েরা তাদের মাঝেই বাস করল। সবূলুন তাদের দিয়ে জোর করে দাসের কাজ করাল। ৩১  আশের বংশ অক্কো, সীদোন, অহলব, অক্‌ষীব, হেল্‌বা, অফীক ও রহোবের বাসিন্দাদের তাড়াল না। ৩২  আশেরীয়েরা কনানীয়দের মাঝেই বাস করতে থাকল কারণ তারা কনানীয়দের সেখান থেকে তাড়াল না। ৩৩  নপ্তালি বংশ বৈৎ-শেমশ ও বৈৎ-অনাতে বসবাসরত কনানীয়দের তাড়াল না, তারা তাদের মাঝেই বাস করল। তারা বৈৎ-শেমশ ও বৈৎ-অনাতের লোকদের দিয়ে জোর করে দাসের কাজ করাল। ৩৪  ইমোরীয়েরা দান বংশের লোকদের সমভূমিতে* আসতে দিল না, তাই তাদের পার্বত্য এলাকাতেই থাকতে হল। ৩৫  ইমোরীয়েরা হেরস পর্বত, অয়ালোন ও শাল্‌বীমের এলাকা ছেড়ে যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়, যোষেফের পরিবার যখন শক্তিশালী হয়ে উঠল, তখন তারা ইমোরীয়দের পরাজিত করল এবং তাদের দিয়ে জোর করে কঠোর পরিশ্রম করাল। ৩৬  ইমোরীয়দের এলাকার সীমানা অক্রব্বীমে উঠে যাওয়ার পথ থেকে এবং সেলা থেকে উপরের দিকে গিয়েছিল।

পাদটীকাগুলো

বা “দিয়েছি।”
আক্ষ., “যে-অংশ।”
বা “দক্ষিণ,” অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাত দেশের দক্ষিণ অংশ।
বা “নিম্নভূমিতে,” যা নিম্নতর পর্বতগুলোকে বোঝায়।
অর্থাৎ কালেব।
বা সম্ভবত, “সে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য তার গাধায় বসে হাততালি দিল।”
অর্থ, “জলাশয়।”
বা “নেগেবে।”
অর্থ, “ধ্বংসের যোগ্য বলে নির্ধারিত জায়গা।”
বা “নীচু সমভূমিতে।”
আক্ষ., “কাছে লোহার রথ ছিল।”
আক্ষ., “অটল প্রেম।”
বা “নীচু সমভূমিতে।”