বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১৬:১-৩১
১৬ একবার শিম্শোন গাজায় গেলেন। সেখানে তিনি একজন বেশ্যাকে দেখতে পেলেন আর তার কাছে গেলেন।
২ তখন গাজার লোকেরা জানতে পারল, শিম্শোন সেখানে গিয়েছেন। তারা সেই জায়গাটা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল আর শিম্শোনকে ধরার জন্য নগরের দরজার কাছে ওত পেতে বসে রইল। তারা সারারাত এই ভেবে সেখানে চুপচাপ বসে রইল যে, সকাল হলেই তারা তাকে মেরে ফেলবে।
৩ শিম্শোন মাঝরাত পর্যন্ত শুয়ে রইলেন, তারপর উঠে নগরের দরজার কাছে গেলেন। তিনি হুড়কোসুদ্ধ নগরের দরজার দুই পাল্লা এবং দরজার দু-পাশের কাঠ উপড়ে ফেললেন আর সেগুলো কাঁধে তুলে হিব্রোণের সামনের পর্বতের চূড়ায় উঠলেন।
৪ এরপর, শিম্শোন দলীলা নামে একজন মহিলার প্রেমে পড়লেন, যে সোরেক উপত্যকায় বাস করত।
৫ তখন পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা দলীলার কাছে এলেন। তারা তাকে বললেন: “শিম্শোনকে ফুসলিয়ে জেনে নাও, তার শক্তির উৎস কী আর কী দিয়ে বেঁধে তাকে কাবু করা যায়। তুমি যদি আমাদের এই কাজটা করে দাও, তা হলে আমরা প্রত্যেকে তোমাকে ১,১০০ শেকল* করে রুপো দেব।”
৬ দলীলা শিম্শোনকে বলল: “তোমার তো প্রচুর শক্তি। বলো-না, তোমার এই শক্তির উৎস কী? কী দিয়ে বেঁধে তোমাকে কাবু করা যায়?”
৭ শিম্শোন তাকে বললেন: “আমাকে যদি ধনুকের সাতটা নতুন দড়ি* দিয়ে বাঁধা হয়, যেগুলো শোকানো হয়নি, তা হলে আমার শক্তি ফুরিয়ে যাবে আর আমি সাধারণ মানুষের মতোই দুর্বল হয়ে পড়ব।”
৮ পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা দলীলাকে ধনুকের সাতটা নতুন দড়ি এনে দিলেন, যেগুলো শোকানো হয়নি আর দলীলা সেগুলো দিয়ে শিম্শোনকে বাঁধল।
৯ পলেষ্টীয়েরা দলীলার ভিতরের ঘরে ওত পেতে বসল। দলীলা শিম্শোনকে বলল: “শিম্শোন! পলেষ্টীয়েরা এসে পড়েছে!” তা শোনামাত্র শিম্শোন এমনভাবে দড়িগুলো ছিঁড়ে ফেললেন, যেভাবে তিসি গাছ থেকে তৈরি সুতোয় আগুন লাগার সঙ্গেসঙ্গে সেটা ছিঁড়ে যায়। শিম্শোনের শক্তির উৎস কী, সেটা রহস্যই রয়ে গেল।
১০ দলীলা শিম্শোনকে বলল: “তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছ, আমাকে বোকা বানিয়েছ।* সত্যি করে বলো, কী দিয়ে তোমাকে বাঁধা যাবে?”
১১ শিম্শোন বললেন: “আমাকে যদি এমন নতুন দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়, যেগুলো কখনো ব্যবহার করা হয়নি, তা হলে আমার শক্তি ফুরিয়ে যাবে আর আমি সাধারণ মানুষের মতোই দুর্বল হয়ে পড়ব।”
১২ তখন দলীলা নতুন দড়ি দিয়ে শিম্শোনকে বাঁধল। তারপর সে বলল: “শিম্শোন! পলেষ্টীয়েরা এসে পড়েছে!” (পলেষ্টীয়েরা ভিতরের ঘরে ওত পেতে বসে ছিল।) এটা শোনামাত্র শিম্শোন সেই দড়িগুলো সুতোর মতোই ছিঁড়ে ফেললেন।
১৩ দলীলা শিম্শোনকে বলল: “তুমি কত দিন আমাকে মিথ্যা কথা বলবে আর বোকা বানাবে? সত্যি করে বলো, কী দিয়ে তোমাকে বাঁধা যাবে?” শিম্শোন তাকে বললেন: “তুমি যদি আমার সাতটা বিনুনি তাঁতের সুতো দিয়ে বোন, তা হলে আমার শক্তি ফুরিয়ে যাবে।”
১৪ তখন দলীলা তার বিনুনিগুলো বুনে গোঁজের সঙ্গে আটকে দিল। তারপর সে বলল: “শিম্শোন! পলেষ্টীয়েরা এসে পড়েছে!” তখন শিম্শোন ঘুম থেকে জেগে উঠলেন আর এক ঝটকায় তাঁতের সুতো ও গোঁজ উপড়ে ফেললেন।
১৫ দলীলা তাকে বলল: “তুমি শুধু মুখেই বল, তুমি আমাকে ভালোবাস! আমার উপর তোমার একটুও বিশ্বাস নেই! তিন-তিন বার তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ আর তোমার শক্তির উৎস কী, সেটা আমাকে বলনি।”
১৬ দলীলা প্রতিদিন শিম্শোনের সামনে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকল আর জেদ করতে থাকল, যেন তিনি তার শক্তির উৎস সম্বন্ধে তাকে বলে দেন। সে শিম্শোনকে জ্বালিয়ে মারল।
১৭ এতে শিম্শোন অতিষ্ঠ হয়ে তাকে সব কিছু বলে দিলেন। তিনি বললেন: “আজ পর্যন্ত আমার মাথায় ক্ষুর চালানো হয়নি কারণ জন্ম* থেকেই আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয়। যদি আমার চুল কেটে ফেলা হয়, তা হলে আমার শক্তি ফুরিয়ে যাবে আর আমি সাধারণ মানুষের মতোই দুর্বল হয়ে পড়ব।”
১৮ দলীলা যখন দেখল, শিম্শোন তাকে সব কিছু বলে দিয়েছেন, তখন সে সঙ্গেসঙ্গে পলেষ্টীয় শাসনকর্তাদের এই কথা বলে পাঠাল: “এ-বার সে সত্যিই সব কিছু বলে দিয়েছে, তাই আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন।” তখন পলেষ্টীয় শাসনকর্তারা টাকা নিয়ে তার কাছে এলেন।
১৯ দলীলা শিম্শোনকে তার কোলে ঘুম পাড়িয়ে দিল। যেই-না তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, অমনি দলীলা একজন লোককে ডেকে তার সাতটা বিনুনি কেটে ফেলল। শিম্শোনের শক্তি ফুরিয়ে গেল আর দলীলা তাকে পুরোপুরিভাবে কাবু করে ফেলল।
২০ তখন দলীলা বলল: “শিম্শোন! পলেষ্টীয়েরা এসে পড়েছে!” এই কথা শুনে শিম্শোন জেগে উঠলেন আর বললেন: “এই বারও আমি নিজেকে বাঁচিয়ে নেব।” কিন্তু তিনি জানতেন না, যিহোবা তাকে ছেড়ে দিয়েছেন।
২১ তখন পলেষ্টীয়েরা তাকে ধরে তার চোখ দুটো উপড়ে ফেলল আর তাকে গাজায় নিয়ে গেল। তারা তাকে তামার দুটো শিকল দিয়ে বেঁধে কারাগারে নিয়ে গেল আর সেখানে তাকে দিয়ে শস্য পেষাই করার কাজ করাল।
২২ শিম্শোনের চুল কেটে দেওয়ার পর আবারও সেটা বাড়তে শুরু করল।
২৩ পরে, পলেষ্টীয় শাসনকর্তারা উৎসব করার জন্য এবং তাদের দেবতা দাগোনের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করার জন্য একত্রিত হলেন। কারণ তারা বললেন: “আমাদের দেবতাই আমাদের শত্রু শিম্শোনকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন!”
২৪ লোকেরা যখন শিম্শোনকে দেখল, তখন তারা তাদের দেবতাদের প্রশংসা করতে লাগল। তারা বলতে লাগল: “দেখো! যে-শত্রু আমাদের দেশ তছনছ করে দিয়েছে এবং আমাদের অনেক লোককে মেরে ফেলেছে, আমাদের দেবতা তাকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।”
২৫ সমস্ত পলেষ্টীয় আনন্দে মেতে উঠে বলল: “শিম্শোনকে ডাকো, আমরা ওকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করব।” তারা শিম্শোনকে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে এল, যাতে তারা তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে পারে। তাকে স্তম্ভগুলোর মাঝে দাঁড় করানো হল।
২৬ যে-ছেলেটি শিম্শোনের হাত ধরে ছিল, তাকে শিম্শোন বললেন: “আমাকে একটু সেই স্তম্ভগুলো ছুঁতে দাও, যেগুলোর উপর এই বাড়িটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি ওগুলোতে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে চাই।”
২৭ (সেইসময় সেখানে ঘর-ভরতি পুরুষ ও মহিলা ছিল। সমস্ত পলেষ্টীয় শাসনকর্তা সেখানে ছিলেন। ছাদে প্রায় ৩,০০০ জন পুরুষ ও মহিলা ছিল আর তারা শিম্শোনকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছিল।)
২৮ তখন শিম্শোন যিহোবাকে ডেকে বললেন: “হে নিখিলবিশ্বের প্রভু যিহোবা, দয়া করে আমাকে স্মরণ করো। এই শেষ বার আমাকে শক্তি দাও, যাতে আমি পলেষ্টীয়দের উপর প্রতিশোধ নিতে পারি, অন্ততপক্ষে আমার একটা চোখের প্রতিশোধ নিতে পারি।”
২৯ তখন শিম্শোন মাঝখানের সেই দুটো স্তম্ভে হাত রাখলেন, যেগুলোর উপর পুরো বাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি একটা স্তম্ভে ডান হাত এবং আরেকটা স্তম্ভে বাঁ-হাত রাখলেন।
৩০ তারপর, তিনি জোরে বলে উঠলেন: “আমার সঙ্গে যেন এই পলেষ্টীয়েরাও শেষ হয়ে যায়!” তখন শিম্শোন সমস্ত শক্তি দিয়ে স্তম্ভগুলোতে ধাক্কা মারলেন আর সমস্ত পলেষ্টীয় শাসনকর্তা এবং সমস্ত লোকের উপর সেই বাড়িটা ভেঙে পড়ল। শিম্শোন জীবিত অবস্থায় যত লোককে মেরেছিলেন, তার মৃত্যুর সময় তার চেয়েও বেশি লোককে মারলেন।
৩১ শিম্শোনের ভাইয়েরা এবং তার বাবার পুরো পরিবার এসে তার মৃতদেহ নিয়ে গেল। তারা তাকে তার বাবা মানোহের কবরে কবর দিল, যেটা সরা ও ইষ্টায়োলের মাঝে অবস্থিত ছিল। শিম্শোন ২০ বছর ধরে ইজরায়েলের বিচার করেছিলেন।
পাদটীকাগুলো
^ এক শেকল সমান ১১.৪ গ্রাম। পরিশিষ্টের খ১৪ দেখুন।
^ বা “পেশিতন্তু।”
^ বা “আমার সঙ্গে ছেলেখেলা করেছ।”
^ আক্ষ., “মায়ের গর্ভ।”