বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ২০:১-৪৮

২০  পরে, দান থেকে শুরু করে বের্‌-শেবা পর্যন্ত এবং গিলিয়দে যে-সমস্ত ইজরায়েলীয় বাস করত, তারা সবাই এল আর পুরো মণ্ডলী একতাবদ্ধ হয়ে মিস্‌পায় যিহোবার সামনে একত্রিত হল। ২  ইজরায়েলের সমস্ত লোকের ও বংশের অধ্যক্ষেরা ঈশ্বরের মণ্ডলীর সামনে নিজের নিজের জায়গায় দাঁড়াল। তলোয়ারধারী পদাতিক সৈন্যের সংখ্যা ছিল ৪,০০,০০০ জন। ৩  বিন্যামীনের লোকেরা জানতে পারল যে, ইজরায়েলের পুরুষেরা মিস্‌পায় একত্রিত হয়েছে। ইজরায়েলের পুরুষেরা বলল: “আমাদের বলো, এই জঘন্য ঘটনা কীভাবে ঘটল?” ৪  তখন সেই লেবীয়, যার উপপত্নীকে খুন করা হয়েছিল, বলল: “আমি আমার উপপত্নীর সঙ্গে বিন্যামীনের গিবিয়ায় রাত কাটাতে গিয়েছিলাম। ৫  রাতের বেলায় গিবিয়ার বাসিন্দারা* বাড়িটা ঘিরে ফেলে। তারা আমার সঙ্গে জঘন্য কাজ করতে চায়, আমাকে মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু, আমার পরিবর্তে তারা আমার উপপত্নীকে ধর্ষণ করে আর সে মারা যায়। ৬  তারা খুবই লজ্জাজনক ও জঘন্য কাজ করেছে। তাই, আমি আমার উপপত্নীর মৃতদেহটা টুকরো টুকরো করে ইজরায়েলের প্রতিটা বংশের এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। ৭  হে ইজরায়েলের লোকেরা, এখন তোমরাই বলো, কী করা যায়।” ৮  তখন সমস্ত লোক একতাবদ্ধ হয়ে বলল: “আমরা কেউই আমাদের তাঁবুতে কিংবা বাড়িতে ফিরে যাব না। ৯  এসো, আমরা ঘুঁটি* চেলে ঠিক করি, কারা কারা গিবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে যাবে। ১০  আমাদের সৈন্যদের সঙ্গে ইজরায়েলের প্রতিটা বংশ থেকে আরও লোক যাবে, যারা তাদের খাওয়া-দাওয়ার খেয়াল রাখবে, ১০০ জন পুরুষের মধ্য থেকে ১০ জন পুরুষ, ১,০০০ জন পুরুষের মধ্য থেকে ১০০ জন পুরুষ এবং ১০,০০০ জন পুরুষের মধ্য থেকে ১,০০০ জন পুরুষ। বিন্যামীন বংশ ইজরায়েলে যে-জঘন্য কাজ করেছে, সেটার শাস্তি আমরা তাদের অবশ্যই দেব।” ১১  এভাবে ইজরায়েলের সমস্ত পুরুষ একজোট হয়ে সেই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হল। ১২  তখন ইজরায়েলের বংশগুলো বিন্যামীনের লোকদের কাছে লোক পাঠিয়ে বলল: “তোমাদের মধ্যে এ কী জঘন্য কাজ হয়েছে? ১৩  গিবিয়ার সেই মন্দ লোকদের আমাদের হাতে তুলে দাও। আমরা তাদের মেরে ফেলব আর ইজরায়েল থেকে এই মন্দতা দূর করে দেব।” কিন্তু, বিন্যামীনের লোকেরা তাদের ইজরায়েলীয় ভাইদের কোনো কথাই শুনতে চাইল না। ১৪  তখন বিন্যামীনের লোকেরা ইজরায়েলের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নিজেদের নগর থেকে বেরিয়ে গিবিয়ায় এল। ১৫  সেই দিন বিন্যামীনের লোকেরা নিজেদের নগরগুলো থেকে ২৬,০০০ জন তলোয়ারধারী পুরুষকে একত্রিত করল। এ ছাড়া, গিবিয়া থেকে ৭০০ জন দক্ষ যোদ্ধাকে বেছে নেওয়া হল। ১৬  এই ৭০০ জন দক্ষ যোদ্ধা বাঁ-হাতি ছিল। তারা প্রত্যেকে ফিঙা দিয়ে এত নিখুঁতভাবে পাথর ছুড়তে পারত যে, একচুলও লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না। ১৭  বিন্যামীন বংশ বাদে ইজরায়েলের সমস্ত লোক ৪,০০,০০০ জন তলোয়ারধারী সৈন্যকে একত্রিত করল। তারা প্রত্যেকে বীরযোদ্ধা ছিল। ১৮  তারা ঈশ্বরের কাছে নির্দেশনা চাওয়ার জন্য বৈথেলে গেল। তারা জিজ্ঞেস করল: “বিন্যামীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কে সবার আগে যাবে?” যিহোবা উত্তর দিলেন: “যিহূদা বংশ।” ১৯  এরপর, ইজরায়েলীয়েরা সকাল বেলা উঠে গিবিয়ার লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য শিবির স্থাপন করল। ২০  তারপর, ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা বেরিয়ে পড়ল আর গিবিয়ায় বিন্যামীনের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াল। ২১  আর বিন্যামীনের লোকেরা গিবিয়া থেকে বের হয়ে এল। সেই দিন তারা ২২,০০০ জন ইজরায়েলীয় পুরুষকে মেরে ফেলল। ২২  কিন্তু, ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা সাহস না হারিয়ে আগের দিনের মতোই একই জায়গায় আবারও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াল। ২৩  এ ছাড়া, ইজরায়েলীয়েরা বিকেল পর্যন্ত যিহোবার সামনে কাঁদতে থাকল। তারা যিহোবাকে জিজ্ঞেস করল: “আমরা কি আমাদের ভাইদের, বিন্যামীনের লোকদের বিরুদ্ধে আবারও যুদ্ধ করতে যাব?” যিহোবা বললেন: “হ্যাঁ, যাও।” ২৪  তাই, ইজরায়েলীয়েরা পরের দিন বিন্যামীনের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এল। ২৫  বিন্যামীনের লোকেরাও যুদ্ধ করার জন্য গিবিয়া থেকে বের হয়ে এল। এ-বার তারা ইজরায়েলের ১৮,০০০ জন তলোয়ারধারী সৈন্যকে মেরে ফেলল। ২৬  তখন সমস্ত ইজরায়েলীয় পুরুষ বৈথেলে গেল এবং যিহোবার সামনে বসে কাঁদতে থাকল। সেই দিন তারা বিকেল পর্যন্ত উপবাস করল এবং যিহোবার উদ্দেশে হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করল। ২৭  তারপর, তারা যিহোবার কাছে নির্দেশনা চাইল। সেই সময় সত্য ঈশ্বরের চুক্তির সিন্দুক বৈথেলে ছিল ২৮  আর হারোণের নাতি এবং ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস চুক্তির সিন্দুকের সামনে সেবা করতেন।* ইজরায়েলীয়েরা জিজ্ঞেস করল: “আমরা কি আমাদের ভাইদের, বিন্যামীনের লোকদের বিরুদ্ধে আবারও যুদ্ধ করতে যাব, না কি আর যাব না?” উত্তরে যিহোবা বললেন: “হ্যাঁ, যাও কারণ কাল আমি তোমাদের হাতে তাদের সমর্পণ করব।” ২৯  তখন ইজরায়েলীয়েরা নিজেদের লোকদের গিবিয়ার চারিদিকে ওত পেতে বসিয়ে রাখল। ৩০  ইজরায়েলীয়েরা তৃতীয় দিন বিন্যামীনের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল আর আগের বারের মতোই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গিবিয়ার সামনে দাঁড়াল। ৩১  বিন্যামীনের লোকেরা যখন ইজরায়েলীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে এল, তখন তারা ইজরায়েলীয়দের পিছু ধাওয়া করতে করতে নগর থেকে অনেক দূরে চলে গেল। তারা আগের বারের মতোই ইজরায়েলীয়দের উপর আক্রমণ করল আর বৈথেলের দিকে এবং গিবিয়ার দিকে যাওয়ার রাজপথগুলোতে খোলা মাঠে প্রায় ৩০ জন লোককে হত্যা করল। ৩২  বিন্যামীনের লোকেরা বলল: “ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা আগের বারের মতোই আমাদের কাছে পরাজিত হচ্ছে।” কিন্তু, এটা আসলে একটা ফাঁদ ছিল। ইজরায়েলীয়েরা বলল: “আমরা ওদের সামনে থেকে পালাব আর ওরা আমাদের পিছু ধাওয়া করবে। আমরা তাদের নগর থেকে বের করে রাজপথে নিয়ে আসব।” ৩৩  তখন ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা নিজের নিজের জায়গা থেকে উঠল আর বাল্‌-তামরে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াল। আর গিবিয়ার কাছে ওত পেতে বসে থাকা সৈন্যেরা তাদের জায়গা থেকে বেরিয়ে এল। ৩৪  ইজরায়েলের ১০,০০০ জন দক্ষ যোদ্ধা গিবিয়ার সামনে এল আর তুমুল যুদ্ধ হল। কিন্তু, বিন্যামীনের লোকেরা ঘুণাক্ষরেও টের পেল না যে, তাদের উপর বিপর্যয় আসতে চলেছে। ৩৫  যিহোবা ইজরায়েলের সামনে বিন্যামীনের লোকদের পরাজিত করলেন। সেই দিন বিন্যামীনের ২৫,১০০ জন পুরুষ মারা গেল। তারা সবাই তলোয়ারধারী সৈন্য ছিল। ৩৬  কিন্তু, ইজরায়েলীয়েরা যখন বিন্যামীনের লোকদের সামনে থেকে পালাচ্ছিল, তখন বিন্যামীনের লোকেরা ভাবল, ইজরায়েলীয়েরা আবারও তাদের কাছে পরাজিত হবে। আসলে, ইজরায়েলীয়েরা এইজন্য পালাল কারণ তারা জানত, সৈন্যেরা গিবিয়ার উপর আক্রমণ করার জন্য ওত পেতে বসে রয়েছে। ৩৭  ওত পেতে বসে থাকা সৈন্যেরা সঙ্গেসঙ্গে গিবিয়ার উপর আক্রমণ করল। তারা নগরে ঢুকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল আর তলোয়ার দিয়ে সমস্ত বাসিন্দাকে মেরে ফেলল। ৩৮  ইজরায়েলীয়েরা ওত পেতে বসে থাকা সৈন্যদের বলেছিল যে, তারা যেন নগরটা দখল করে নেওয়ামাত্রই ধোঁয়ার সংকেত দেয়। ৩৯  ইজরায়েলীয়েরা যখন বিন্যামীনের লোকদের সামনে থেকে পালাচ্ছিল, তখন বিন্যামীনের লোকেরা তাদের আক্রমণ করল আর প্রায় ৩০ জন লোককে মেরে ফেলল। তারা বলল: “দেখো! ইজরায়েলীয়েরা আগের বার যেভাবে পরাজিত হয়েছিল, এ-বারও সেভাবেই পরাজিত হচ্ছে।” ৪০  কিন্তু, তখনই গিবিয়া থেকে ঘন ধোঁয়া উপরের দিকে উঠতে লাগল। বিন্যামীনের লোকেরা যখন পিছনে ঘুরল, তখন তারা দেখল, পুরো নগর আগুনে জ্বলছে আর ধোঁয়া আকাশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। ৪১  তখন ইজরায়েলীয়েরা ঘুরে তাদের আক্রমণকারীদের উপর আক্রমণ করল। বিন্যামীনের লোকেরা খুব ভয় পেয়ে গেল কারণ তারা দেখল, তাদের উপর বিপর্যয় নেমে এসেছে। ৪২  তাই, তারা ইজরায়েলীয়দের সামনে থেকে ঘুরে প্রান্তরের দিকে পালাতে লাগল। কিন্তু, ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা তাদের পিছু ধাওয়া করল আর নগরের* বাকি ইজরায়েলীয় সৈন্যেরাও তাদের হত্যা করার জন্য এল। ৪৩  তারা সমস্ত দিক দিয়ে বিন্যামীনের লোকদের দিকে এগোতে লাগল আর তাদের পিছু ধাওয়া করতে লাগল। গিবিয়ার পূর্ব দিকে এসে তারা বিন্যামীনের লোকদের একেবারে ধ্বংস করে দিল। ৪৪  বিন্যামীনের ১৮,০০০ জন পুরুষ মারা গেল। তারা সবাই বীরযোদ্ধা ছিল। ৪৫  অবশিষ্ট লোকেরা প্রান্তরে রিম্মোণের শৈলের দিকে পালাতে শুরু করল। কিন্তু, ইজরায়েলীয়েরা তাদের মধ্য থেকে ৫,০০০ জন পুরুষকে রাজপথগুলোতে মেরে ফেলল আর গিদোম পর্যন্ত তাদের পিছু ধাওয়া করে আরও ২,০০০ জন পুরুষকে মেরে ফেলল। ৪৬  সেই দিন বিন্যামীনের মোট ২৫,০০০ জন তলোয়ারধারী বীরযোদ্ধা মারা গেল। ৪৭  কিন্তু, ৬০০ জন পুরুষ প্রান্তরে রিম্মোণের শৈলে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল আর চার মাস পর্যন্ত তারা সেখানেই রইল। ৪৮  ইজরায়েলের সৈন্যেরা বিন্যামীনের নগরগুলোতে ফিরে এল আর সেখানে যত মানুষ ও পশুপাল বেঁচে গিয়েছিল, তাদের সবাইকে মেরে ফেলল। শুধু তা-ই নয়, তারা তাদের সমস্ত নগরও আগুনে পুড়িয়ে দিল।

পাদটীকাগুলো

বা সম্ভবত, “জমিদারেরা।”
শব্দকোষ দেখুন।
আক্ষ., “সামনে দাঁড়িয়ে থাকত।”
আক্ষ., “নগরগুলোর।”