মথি লিখিত সুসমাচার ২৫:১-৪৬

  • খ্রিস্টের উপস্থিতির চিহ্ন (১-৪৬)

    • দশ জন কুমারীর দৃষ্টান্ত (১-১৩)

    • তালন্তের দৃষ্টান্ত (১৪-৩০)

    • মেষ ও ছাগ (৩১-৪৬)

২৫  “স্বর্গরাজ্য হল এইরকম: দশ জন কুমারী তাদের প্রদীপ নিয়ে বরের সঙ্গে দেখা করতে গেল। ২  তাদের মধ্যে পাঁচ জন নির্বোধ আর পাঁচ জন বুদ্ধিমান।* ৩  কারণ নির্বোধ কুমারীরা তাদের প্রদীপ নিল ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে করে অতিরিক্ত তেল নিল না। ৪  অন্যদিকে, বুদ্ধিমান কুমারীরা তাদের প্রদীপের সঙ্গে পাত্রে করে অতিরিক্ত তেলও নিল। ৫  যেহেতু বরের আসতে দেরি হচ্ছিল, তাই তারা সবাই ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে পড়ল। ৬  পরে মাঝরাতে এই চিৎকার শোনা গেল: ‘দেখো, বর এসেছেন! তার সঙ্গে দেখা করতে চলো!’ ৭  তখন সেই কুমারীরা উঠে তাদের প্রদীপ সাজাল। ৮  নির্বোধ কুমারীরা বুদ্ধিমান কুমারীদের বলল, ‘তোমাদের কাছ থেকে আমাদের একটু তেল দাও, কারণ আমাদের প্রদীপ নিভে যাচ্ছে।’ ৯  তখন বুদ্ধিমান কুমারীরা বলল: ‘যতটা তেল আছে, তাতে হয়তো তোমাদের ও আমাদের কুলোবে না। তোমরা বরং বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে নিজেদের জন্য তেল কিনে নিয়ে এসো।’ ১০  তারা তেল কিনতে গিয়েছে, ঠিক এমন সময় বর এসে উপস্থিত হল। যে-কুমারীরা প্রস্তুত ছিল, তারা বরের সঙ্গে বিয়েবাড়িতে প্রবেশ করল আর এরপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। ১১  পরে অন্য পাঁচ কুমারী এসে বলতে লাগল, ‘প্রভু, প্রভু, আমাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দিন!’ ১২  তখন বর তাদের বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্য বলছি, আমি তোমাদের চিনি না।’ ১৩  “তাই, জেগে থেকো, কারণ তোমরা সেই দিন এবং সেই সময় জান না। ১৪  “আবার স্বর্গরাজ্য হল এইরকম: একজন ব্যক্তি বিদেশে যাওয়ার আগে তার দাসদের ডেকে তাদের হাতে তার বিষয়সম্পত্তির ভার দিলেন। ১৫  তিনি ­একজনকে পাঁচ তালন্ত,* আরেকজনকে দুই তালন্ত, আবার অন্য জনকে এক তালন্ত দিলেন, যার যেমন ক্ষমতা সেই অনুযায়ী দিলেন আর এরপর তিনি বিদেশে চলে গেলেন। ১৬  যে পাঁচ তালন্ত পেয়েছিল, সে সঙ্গেসঙ্গে গিয়ে সেগুলো ব্যাবসায় খাটাল এবং আরও পাঁচ তালন্ত লাভ করল। ১৭  একইভাবে, যে দুই তালন্ত পেয়েছিল, সে আরও দুই তালন্ত লাভ করল। ১৮  কিন্তু, যে কেবল এক তালন্ত পেয়েছিল, সে গিয়ে মাটি খুঁড়ে তার প্রভুর টাকা* লুকিয়ে রাখল। ১৯  “দীর্ঘদিন পর, সেই দাসদের প্রভু ফিরে এলেন এবং তাদের কাছ থেকে হিসাব নিলেন। ২০  তখন যে পাঁচ তালন্ত পেয়েছিল, সে আরও পাঁচ তালন্ত নিয়ে এসে বলল, ‘প্রভু, আপনি আমাকে পাঁচ তালন্ত দিয়েছিলেন; দেখুন, আমি আরও পাঁচ তালন্ত লাভ করেছি।’ ২১  তার প্রভু তাকে বললেন: ‘বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস! তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ততা দেখিয়েছ। আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের উপর নিযুক্ত করব। তুমি তোমার প্রভুর সঙ্গে আনন্দ করো।’ ২২  এরপর, যে দুই তালন্ত পেয়েছিল, সে এসে বলল, ‘প্রভু, আপনি আমাকে দুই তালন্ত দিয়েছিলেন; দেখুন, আমি আরও দুই তালন্ত লাভ করেছি।’ ২৩  তার প্রভু তাকে বললেন: ‘বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস! তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ততা দেখিয়েছ। আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের উপর নিযুক্ত করব। তুমি তোমার প্রভুর সঙ্গে আনন্দ করো।’ ২৪  “এরপর, যে এক তালন্ত পেয়েছিল, সে এসে বলল: ‘প্রভু, আমি জানি আপনি খুব কঠোর লোক, যেখানে বোনেননি, সেখানে কাটেন এবং যেখানে ছড়াননি, সেখানে কুড়িয়ে থাকেন। ২৫  তাই, আমি ভয় পেয়ে আপনার তালন্ত মাটির নীচে লুকিয়ে রেখেছিলাম। এই নিন, আপনার জিনিস আপনাকে ফিরিয়ে দিলাম।’ ২৬  তখন তার প্রভু তাকে বললেন: ‘দুষ্ট ও অলস দাস! তুমি না জানতে আমি যেখানে বুনিনি, সেখানে কাটি আর যেখানে ছড়াইনি, সেখানে কুড়িয়ে থাকি? ২৭  তবে, কেন তুমি আমার টাকা মহাজনদের কাছে রেখে দাওনি? তা হলে, আমি ফিরে এসে সুদ-সহ আমার টাকা পেতাম। ২৮  “এরপর তিনি তার দাসদের বললেন, ‘তোমরা তার কাছ থেকে সেই তালন্ত নিয়ে যার দশ তালন্ত রয়েছে, তাকে দাও। ২৯  কারণ যার আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে আর এতে তার প্রচুর হবে। কিন্তু যার নেই, তার কাছে যা রয়েছে, তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। ৩০  আর তোমরা ওই অনুপযোগী দাসকে বাইরে অন্ধকারে ফেলে দাও। সেখানে সে কাঁদবে এবং দাঁত কিড়মিড় করবে।’ ৩১  “মনুষ্যপুত্র* যখন সমস্ত স্বর্গদূত-সহ তাঁর মহিমা সহকারে আসবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসবেন। ৩২  সেই সময় সমস্ত জাতিকে তাঁর সামনে একত্রিত করা হবে আর মেষপালক যেমন ছাগ থেকে মেষ পৃথক করে, তেমনই তিনি লোকদের দু-দলে ভাগ করবেন। ৩৩  আর তিনি মেষদের তাঁর ডান দিকে এবং ছাগদের তাঁর বাম দিকে রাখবেন। ৩৪  “তখন রাজা তাঁর ডান দিকে অবস্থিত ব্যক্তিদের বলবেন: ‘এসো, আমার পিতার আশীর্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, মানবজাতির শুরু* থেকে তোমাদের জন্য যে-রাজ্য প্রস্তুত করা হয়েছে, সেই রাজ্যের আশীর্বাদ লাভ করো। ৩৫  কারণ আমি ক্ষুধার্ত হয়েছিলাম আর তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; আমি তৃষ্ণার্ত হয়েছিলাম আর তোমরা আমাকে পান করতে দিয়েছিলে। আমি তোমাদের কাছে অপরিচিত ছিলাম আর তোমরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলে; ৩৬  আমি উলঙ্গ ছিলাম* আর তোমরা আমাকে কাপড় দিয়েছিলে। আমি অসুস্থ হয়েছিলাম আর তোমরা আমার যত্ন নিয়েছিলে। আমি কারাগারে ছিলাম আর তোমরা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।’ ৩৭  তখন ধার্মিক ব্যক্তিরা তাঁকে এই কথা বলবে: ‘হে প্রভু, কখন আপনাকে ক্ষুধার্ত দেখে খেতে দিয়েছিলাম অথবা তৃষ্ণার্ত দেখে পান করতে দিয়েছিলাম? ৩৮  কখন আপনাকে অপরিচিত দেখে আশ্রয় দিয়েছিলাম অথবা উলঙ্গ দেখে কাপড় দিয়েছিলাম? ৩৯  কখন আপনি অসুস্থ ছিলেন বা কারাগারে ছিলেন বলে আপনাকে দেখতে গিয়েছিলাম?’ ৪০  তখন রাজা তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমার এই ক্ষুদ্রতম ভাইদের মধ্যে একজনের প্রতি তোমরা যখন তা করেছিলে, তখন আমারই প্রতি তা করেছিলে।’ ৪১  “পরে তিনি তাঁর বাম দিকে অবস্থিত ব্যক্তিদের বলবেন: ‘অভিশাপের পাত্রেরা, আমার কাছ থেকে দূর হও এবং সেই অনন্ত আগুনে* যাও, যা দিয়াবল এবং মন্দ স্বর্গদূতদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ৪২  কারণ আমি ক্ষুধার্ত হয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে খেতে দাওনি; আমি তৃষ্ণার্ত হয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে পান করতে দাওনি। ৪৩  আমি তোমাদের কাছে অপরিচিত ছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে আশ্রয় দাওনি; আমি উলঙ্গ ছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে কাপড় দাওনি। আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কারাগারে ছিলাম কিন্তু তোমরা আমার যত্ন নাওনি।’ ৪৪  তখন তারাও এই কথা বলবে: ‘হে প্রভু, কখন আপনাকে ক্ষুধার্ত, কি তৃষ্ণার্ত, কি অপরিচিত, কি উলঙ্গ, কি অসুস্থ, কি কারাগারস্থ দেখেছিলাম আর আপনার সেবা করিনি?’ ৪৫  তখন রাজা তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমার এই ক্ষুদ্রতম ভাইদের মধ্যে একজনের প্রতি তোমরা যখন তা করনি, তখন আমারই প্রতি তা করনি।’ ৪৬  এরা অনন্তমৃত্যু ভোগ করবে* আর যারা ধার্মিক, তারা অনন্তজীবন লাভ করবে।”

পাদটীকাগুলো

বা “বিচক্ষণ।”
শব্দকোষ দেখুন।
আক্ষ., “রুপো।”
যিশু নিজের সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন। শব্দকোষ দেখুন।
এটা আদম ও হবার সন্তানদের নির্দেশ করে।
বা “আমি যথেষ্ট কাপড় পরা অবস্থায় ছিলাম না।”
এটা অনন্তধ্বংসকে নির্দেশ করে। শব্দকোষ দেখুন, “গিহেন্না।”
আক্ষ., “এদের চিরকালের জন্য কেটে ফেলা হবে,” যেমন কোনো গাছ থেকে শাখা কেটে ফেলা হয়।