মথি লিখিত সুসমাচার ৫:১-৪৮
-
পর্বতের উপরে দেওয়া উপদেশ (১-৪৮)
৫ তিনি যখন লোকদের ভিড় দেখতে পেলেন, তখন তিনি পর্বতে উঠলেন; সেখানে বসার পর তাঁর শিষ্যেরা তাঁর কাছে এলেন।
২ তিনি এই বলে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন:
৩ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী,* কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
৪ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা শোক করে, কারণ তারা সান্ত্বনা লাভ করবে।
৫ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা মৃদুশীল, কারণ পৃথিবী তাদেরই হবে।*
৬ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা ন্যায়বিচারের* জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত, কারণ তারা পরিতৃপ্ত হবে।
৭ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা করুণাময়, কারণ তাদের প্রতি করুণা দেখানো হবে।
৮ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যাদের হৃদয় বিশুদ্ধ, কারণ তারা ঈশ্বরকে দেখতে পাবে।
৯ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা শান্তি স্থাপন করে,* কারণ তাদের ঈশ্বরের সন্তান* বলা হবে।
১০ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা সঠিক কাজ করার জন্য তাড়িত হয়, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
১১ “সুখী তোমরা, যখন লোকেরা আমার জন্য তোমাদের অপমান করে, তাড়না করে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাবে সমস্ত ধরনের মন্দ কথা বলে।
১২ আনন্দ কোরো এবং উল্লসিত হোয়ো, কারণ স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর। তোমাদের আগে যে-ভাববাদীরা ছিলেন, তাদেরও তারা একইভাবে তাড়না করেছিল।
১৩ “তোমরা পৃথিবীর লবণ, কিন্তু লবণ যদি এর স্বাদ হারিয়ে ফেলে, তা হলে কীভাবেই-বা লবণের স্বাদ ফিরিয়ে আনা যাবে? সেই লবণ আর কোনো কাজেই লাগে না। তা কেবল বাইরে ফেলে দেওয়া হয় এবং লোকেরা তা পা দিয়ে মাড়ায়।
১৪ “তোমরা জগতের আলো। পর্বতের উপরে অবস্থিত নগর গুপ্ত থাকতে পারে না।
১৫ লোকেরা প্রদীপ জ্বেলে পাত্র* দিয়ে ঢেকে রাখে না, বরং প্রদীপদানির উপরেই রাখে আর তা ঘরের সকলকে আলো দেয়।
১৬ একইভাবে, তোমাদের আলো লোকদের সামনে উজ্জ্বল হোক, যাতে তারা তোমাদের উত্তম কাজ দেখতে পায় এবং তোমাদের পিতার গৌরব করে, যিনি স্বর্গে থাকেন।
১৭ “তোমরা মনে কোরো না, আমি ব্যবস্থা* কিংবা ভাববাদীদের গ্রন্থ বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে নয়, বরং পরিপূর্ণ করতে এসেছি।
১৮ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এমনকী আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী যদি লুপ্ত হয়েও যায়, তবুও ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম অক্ষর কিংবা একটা বিন্দুও কোনোভাবে লুপ্ত হবে না, সমস্তই পরিপূর্ণ হবে।
১৯ তাই, যে-কেউ এই ক্ষুদ্রতম আজ্ঞাগুলোর মধ্যে একটা আজ্ঞা লঙ্ঘন করে এবং অন্যদেরও তা করতে শিক্ষা দেয়, সে স্বর্গরাজ্যের ব্যাপারে ক্ষুদ্রতম বলে বিবেচিত হবে।* কিন্তু, যে-কেউ সেগুলো পালন করে এবং অন্যদেরও তা করতে শিক্ষা দেয়, সে স্বর্গরাজ্যের ব্যাপারে মহান বলে বিবেচিত হবে।*
২০ কারণ আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের ধার্মিকতা* যদি অধ্যাপকদের ও ফরীশীদের চেয়ে বেশি না হয়, তা হলে তোমরা কোনোমতেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
২১ “তোমরা শুনেছ, প্রাচীন কালের লোকদের এই কথা বলা হয়েছিল: ‘খুন করবে না। কেউ যদি খুন করে, তা হলে আদালতে তার বিচার করা হবে।’
২২ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রতি রাগ পুষে রাখে, তা হলে আদালতে তার বিচার করা হবে; আর যে-কেউ তার ভাইকে অবজ্ঞা করে অপমানজনক কথা বলে, সর্বোচ্চ আদালতে তার বিচার করা হবে; আর কেউ যদি তার ভাইকে বলে, ‘ওরে চরিত্রহীন মূর্খ!’ তা হলে সে গিহেন্নায়* যাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
২৩ “তাই, বেদির সামনে উপহার নিয়ে আসার পর, তোমার যদি মনে পড়ে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কোনো কথা আছে,
২৪ তা হলে বেদির সামনে তোমার উপহার রেখে চলে যাও। প্রথমে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করো আর তারপর ফিরে এসে তোমার উপহার উৎসর্গ করো।
২৫ “কেউ যখন তোমার বিরুদ্ধে মামলা করতে যায়, তখন আদালতে যাওয়ার পথেই তার সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিটমাট করে ফেলো। তা না হলে সে তোমাকে বিচারকের হাতে তুলে দেবে আর বিচারক তোমাকে আদালতের রক্ষীর হাতে তুলে দেবে এবং তোমাকে কারাগারে বন্দি করা হবে।
২৬ আমি তোমাকে সত্য বলছি, যতক্ষণ না তুমি তোমার সমস্ত টাকা* পরিশোধ কর, ততক্ষণ তুমি কোনোমতে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।
২৭ “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছিল, ‘ব্যভিচার* করবে না।’
২৮ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, কেউ যদি কোনো নারীকে এমনভাবে দেখতে থাকে, যার ফলে তার মধ্যে সেই নারীর প্রতি কামনা জেগে ওঠে, তা হলে সে ইতিমধ্যেই মনে মনে সেই নারীর সঙ্গে ব্যভিচার* করেছে।
২৯ আর তোমার ডান চোখ যদি তোমাকে পাপ করতে পরিচালিত করে,* তা হলে সেটা উপড়ে দূরে ফেলে দাও। কারণ তোমার সমস্ত শরীর নিয়ে গিহেন্নায়* নিক্ষিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে, এক অঙ্গ হারানো তোমার পক্ষে আরও উত্তম।
৩০ আর তোমার ডান হাত যদি তোমাকে পাপ করতে পরিচালিত করে,* তা হলে সেটা কেটে দূরে ফেলে দাও। কারণ তোমার সমস্ত শরীর নিয়ে গিহেন্নায়* যাওয়ার পরিবর্তে, এক অঙ্গ হারানো তোমার পক্ষে আরও উত্তম।
৩১ “আর এই কথাও বলা হয়েছিল: ‘যে-কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে, সে স্ত্রীকে বিবাহবিচ্ছেদপত্র দিক।’
৩২ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, কেউ যদি যৌন অনৈতিকতা* ছাড়া অন্য কোনো কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে, তা হলে সে তার স্ত্রীকে ব্যভিচার* করার ঝুঁকির মুখে ফেলে আর যে-কেউ বিবাহবিচ্ছেদপ্রাপ্ত সেই স্ত্রীকে বিয়ে করে, সে ব্যভিচার* করে।
৩৩ “আর তোমরা এই কথাও শুনেছ, প্রাচীন কালের লোকদের বলা হয়েছিল: ‘তোমরা শপথ করে তা ভঙ্গ করবে না, বরং যিহোবার* কাছে করা অঙ্গীকার রক্ষা করবে।’
৩৪ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি: তোমরা কোনো দিব্যই কোরো না। স্বর্গের দিব্য কোরো না, কারণ তা ঈশ্বরের সিংহাসন;
৩৫ পৃথিবীর দিব্য কোরো না, কারণ তা ঈশ্বরের পাদপীঠ;* জেরুসালেমের দিব্য কোরো না, কারণ তা মহান রাজার নগর।
৩৬ তোমার মাথার দিব্য কোরো না, কারণ একটা চুলও সাদা কিংবা কালো করার ক্ষমতা তোমার নেই।
৩৭ কেবল তোমার ‘হ্যাঁ’ যেন হ্যাঁ হয় এবং ‘না’ যেন না হয়, কারণ এর অতিরিক্ত যা-কিছু বলা হয়, তা শয়তানের* কাছ থেকে আসে।
৩৮ “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছিল: ‘চোখের পরিবর্তে চোখ এবং দাঁতের পরিবর্তে দাঁত।’
৩৯ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি: তোমরা দুষ্ট লোককে পালটা আক্রমণ কোরো না, কিন্তু যে তোমার ডান গালে চড় মারে, তার দিকে অন্য গাল ফিরিয়ে দিয়ো।
৪০ আর কোনো ব্যক্তি যদি তোমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে তোমার পোশাক নিতে চায়, তা হলে তাকে তোমার চাদরও দিয়ে দিয়ো;
৪১ আর কর্তৃত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি যদি তোমাকে বোঝা নিয়ে এক মাইল* যেতে বাধ্য করে, তা হলে সেই বোঝা নিয়ে দুই মাইল যেয়ো।
৪২ কেউ যদি তোমার কাছে কিছু চায়, তা হলে তাকে সেটা দিয়ো এবং কেউ যদি তোমার কাছে ধার* চায়, তা হলে তাকে তা দিতে অস্বীকার কোরো না।
৪৩ “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছিল: ‘তুমি তোমার প্রতিবেশীকে ভালোবাসবে এবং তোমার শত্রুকে ঘৃণা করবে।’
৪৪ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি: সবসময় তোমার শত্রুদের ভালোবেসো এবং যারা তোমাদের তাড়না করে, তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো,
৪৫ যাতে তোমরা দেখাতে পার, তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান,* কারণ তিনি মন্দ ও ভালো উভয়ের উপর সূর্য উদিত করেন এবং ধার্মিক ও অধার্মিক উভয়ের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন।
৪৬ কারণ তুমি যদি শুধু সেই ব্যক্তিদের ভালোবাস, যারা তোমাকে ভালোবাসে, তা হলে তুমি কী পুরস্কারই-বা লাভ করবে? কর আদায়কারীরাও কি একই কাজ করে না?
৪৭ আর তুমি যদি কেবল তোমার ভাইদের সম্ভাষণ জানাও, তা হলে তুমি বিশেষ কীই-বা করছ? ন-যিহুদি ব্যক্তিরাও কি একই কাজ করে না?
৪৮ অতএব, তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ, তেমনই তোমরাও সিদ্ধ হও।*
পাদটীকাগুলো
^ বা “যারা পবিত্র শক্তি ভিক্ষা চায়।”
^ আক্ষ., “কারণ তারাই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে।”
^ বা “যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো মেনে চলার।”
^ বা “যারা শান্তিপ্রবণ।”
^ আক্ষ., “পুত্র।”
^ বড়ো ধরনের এক পাত্র, যা শস্য মাপার জন্য ব্যবহার করা হতো।
^ সীনয় প্রান্তরে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মোশির মাধ্যমে ঈশ্বর ইজরায়েলীয়দের যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন।
^ স্পষ্টতই বোঝায়, “সে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।”
^ স্পষ্টতই বোঝায়, “সে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে।”
^ বা “বাধ্যতা।”
^ জেরুসালেমের বাইরে আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলার স্থান। শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “তোমার শেষ ক্ষুদ্র মুদ্রা।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “যদি তোমার বিশ্বাসের পক্ষে বাধা হয়ে ওঠে।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “যদি তোমার বিশ্বাসের পক্ষে বাধা হয়ে ওঠে।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ গ্রিক, পরনিয়া। শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ অর্থাৎ পা রাখার টুল।
^ আক্ষ., “সেই দুষ্ট ব্যক্তির।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ অর্থাৎ সুদ ছাড়া ধার।
^ আক্ষ., “পুত্র।”
^ বা “অতএব, তোমরা তোমাদের স্বর্গীয় পিতার নিখুঁত উদাহরণ অনুসরণ করো।”