মার্ক লিখিত সুসমাচার ১০:১-৫২
-
বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ (১-১২)
-
যিশু ছোটো ছেলে-মেয়েদের আশীর্বাদ করেন (১৩-১৬)
-
একজন ধনী ব্যক্তির প্রশ্ন (১৭-২৫)
-
ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ত্যাগস্বীকার (২৬-৩১)
-
যিশু তাঁর মৃত্যু সম্বন্ধে আবারও বলেন (৩২-৩৪)
-
যাকোব ও যোহনের কাছ থেকে অনুরোধ (৩৫-৪৫)
-
অনেকের জীবনের পরিবর্তে যিশুর জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দেওয়া (৪৫)
-
-
বর্তীময় নামে একজন অন্ধ ব্যক্তিকে সুস্থ করা হয় (৪৬-৫২)
১০ সেখান থেকে তিনি জর্ডনের অন্য পারে যিহূদিয়া অঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় এলেন। আবারও অনেক লোক তাঁর কাছে এসে জড়ো হল। আর তিনি তাঁর অভ্যাসমতো আবার তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।
২ আর ফরীশীরা এসে তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞেস করল: “একজন পুরুষের পক্ষে কি স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করা বৈধ?”
৩ তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন: “মোশি তোমাদের কী আজ্ঞা দিয়েছেন?”
৪ তারা বলল: “মোশি ত্যাগপত্র লিখে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করার অনুমতি দিয়েছেন।”
৫ যিশু তাদের বললেন: “তোমাদের হৃদয় কঠিন বলে মোশি তোমাদের জন্য এই আজ্ঞা লিখেছিলেন।
৬ কিন্তু, সৃষ্টির শুরুতে ‘ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও নারী করে তৈরি করেছেন।
৭ এই কারণে একজন পুরুষ তার বাবা ও মাকে ত্যাগ করবে
৮ আর তারা দু-জন একাঙ্গ হবে,’ তাই তারা আর দু-জন নয়, বরং একাঙ্গ।
৯ অতএব, ঈশ্বর যা যুক্ত* করেছেন, মানুষ তা আলাদা না করুক।”
১০ পরে তারা যখন একটা বাড়িতে ছিলেন, তখন শিষ্যেরা তাঁকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।
১১ তিনি তাদের বললেন: “যে-কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে অন্য নারীকে বিয়ে করে, সে তার প্রথম স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচার* করে।
১২ আর যদি কোনো নারী তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে, তা হলে সে-ও ব্যভিচার* করে।”
১৩ পরে লোকেরা তাঁর কাছে ছোটো ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসতে লাগল, যাতে তিনি তাদের উপর হাত রাখেন, কিন্তু শিষ্যেরা লোকদের ধমক দিতে লাগলেন।
১৪ তা দেখে যিশু অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাদের বললেন: “ছোটো ছেলে-মেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিয়ো না, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মতো লোকদেরই জন্য।
১৫ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কেউ যদি একটা ছোটো বাচ্চার মতো করে ঈশ্বরের রাজ্যকে গ্রহণ না করে, তা হলে সে কোনোভাবেই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না।”
১৬ এরপর তিনি ছোটো ছেলে-মেয়েদের কোলে নিলেন এবং তাদের উপর হাত রেখে আশীর্বাদ করতে লাগলেন।
১৭ পরে তিনি যখন পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন একজন লোক দৌড়ে এসে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে জিজ্ঞেস করল: “হে মঙ্গলময় গুরু, অনন্তজীবন পেতে* চাইলে আমাকে কী করতে হবে?”
১৮ যিশু তাকে বললেন: “আমাকে কেন মঙ্গলময় বলছ? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই মঙ্গলময় নয়।
১৯ তুমি তো আজ্ঞাগুলো জান: ‘খুন কোরো না, ব্যভিচার* কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, প্রতারণা কোরো না এবং তোমার বাবা ও মাকে সমাদর কোরো।’”
২০ তখন লোকটি তাঁকে বলল: “গুরু, আমি ছোটোবেলা থেকেই এইসমস্ত কিছু পালন করে আসছি।”
২১ যিশু তার দিকে তাকালেন এবং তার প্রতি ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে বললেন, “তোমার মধ্যে একটা বিষয়ের অভাব রয়েছে; যাও, তোমার যা-কিছু আছে, সেগুলো বিক্রি করো এবং সেই টাকা দরিদ্রদের দিয়ে দাও। তা হলে তুমি স্বর্গে ধন লাভ করবে। এরপর এসো, আমার অনুসারী হও।”
২২ কিন্তু, এই কথা শুনে সে বিষণ্ণ হল এবং অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে চলে গেল, কারণ তার অনেক ধনসম্পত্তি ছিল।
২৩ পরে যিশু চারদিকে তাকিয়ে তাঁর শিষ্যদের বললেন: “ধনীদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কতই-না কঠিন!”
২৪ কিন্তু, শিষ্যেরা তাঁর কথা শুনে অবাক হলেন। যিশু তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে বললেন: “বন্ধুরা,* ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কতই-না কঠিন!
২৫ একজন ধনী ব্যক্তির পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে বরং উটের পক্ষে সুইয়ের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা আরও সহজ।”
২৬ এতে তারা আরও আশ্চর্য হয়ে তাঁকে* বললেন: “তবে কার পক্ষেই-বা রক্ষা পাওয়া সম্ভব?”
২৭ যিশু সরাসরি তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন: “মানুষের পক্ষে তা অসম্ভব বটে, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব নয়, কারণ ঈশ্বরের পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।”
২৮ তখন পিতর তাঁকে বলতে লাগলেন: “দেখুন! আমরা সমস্ত কিছু ত্যাগ করে আপনার অনুসারী হয়েছি।”
২৯ যিশু বললেন: “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে-কেউ আমার জন্য এবং সুসমাচারের জন্য কি বাড়ি, কি ভাই, কি বোন, কি মা, কি বাবা, কি সন্তান, কি জমিজমা ত্যাগ করে,
৩০ সে এখনই এই বর্তমান যুগে এগুলোর ১০০ গুণ পাবে অর্থাৎ বাড়ি, ভাই, বোন, মা, সন্তান ও জমিজমা তাড়নার সঙ্গে পাবে আর সেইসঙ্গে আসন্ন বিধিব্যবস্থায়* অনন্তজীবন লাভ করবে।
৩১ কিন্তু, প্রথমে আছে এমন অনেক লোক শেষে পড়বে আর শেষে আছে এমন অনেক লোক প্রথম হবে।”
৩২ পরে তারা জেরুসালেমের দিকে যেতে লাগলেন। যিশু তাদের আগে আগে যাচ্ছিলেন দেখে শিষ্যেরা অবাক হয়ে গেলেন, কিন্তু যারা তাঁকে অনুসরণ করছিল, তারা ভয় পেতে লাগল। তিনি আবারও সেই ১২ জনকে* একপাশে ডেকে নিয়ে তাঁর প্রতি কী কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বলতে লাগলেন:
৩৩ “দেখো! আমরা জেরুসালেমে যাচ্ছি আর মনুষ্যপুত্রকে* প্রধান যাজকদের ও অধ্যাপকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তারা তাঁকে মৃত্যুর যোগ্য বলে গণ্য করবে এবং ন-যিহুদি লোকদের হাতে তুলে দেবে
৩৪ আর তারা তাঁকে উপহাস করবে, তাঁকে থুতু দেবে, তাঁকে চাবুক মারবে এবং হত্যা করবে কিন্তু তৃতীয় দিনে* তিনি উঠবেন।”
৩৫ পরে সিবদিয়ের দুই ছেলে, যাকোব ও যোহন তাঁর কাছে এসে তাঁকে বললেন: “গুরু, আমরা আপনার কাছে যা চাইব, তা আমাদের দিন।”
৩৬ তিনি তাদের বললেন: “তোমরা কী চাও, আমি তোমাদের জন্য কী করব?”
৩৭ তারা উত্তর দিলেন: “আপনি যখন মহিমা লাভ করবেন, তখন যেন আমাদের মধ্যে একজন আপনার ডান পাশে আর অন্য জন আপনার বাম পাশে বসতে পারি।”
৩৮ কিন্তু, যিশু তাদের বললেন: “তোমরা কী চাচ্ছ, তা তোমরা জান না। আমি যে-পেয়ালায় পান করছি, তা থেকে কি তোমরা পান করতে পার অথবা আমি যে-বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হচ্ছি, তোমরা কি সেই বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হতে পার?”
৩৯ তারা তাঁকে বললেন: “পারি।” তা শুনে যিশু তাদের বললেন: “আমি যে-পেয়ালায় পান করছি, তোমরা তাতে পান করবে এবং আমি যে-বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হচ্ছি, তোমরা সেই বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হবে।
৪০ কিন্তু, কাউকে আমার ডান পাশে অথবা আমার বাম পাশে বসতে দেওয়ার অধিকার আমার নেই, বরং ওই জায়গাগুলো তাদেরই হবে, যাদের জন্য সেগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।”
৪১ অন্য দশ জন যখন সেই কথা শুনতে পেলেন, তখন তারা যাকোব ও যোহনের উপর অসন্তুষ্ট হলেন।
৪২ কিন্তু, যিশু তাদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন: “তোমরা জান, ন-যিহুদিদের উপর যারা শাসন করছে, তারা তাদের উপর প্রভুত্ব করে এবং তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করে।
৪৩ তোমাদের মধ্যে যেন এমনটা না হয়; বরং তোমাদের মধ্যে যে-কেউ বিশিষ্ট হতে চায়, তাকে তোমাদের সেবক হতে হবে
৪৪ আর তোমাদের মধ্যে যে-কেউ প্রথম হতে চায়, তাকে সকলের দাস হতে হবে।
৪৫ কারণ এমনকী মনুষ্যপুত্রও সেবা পেতে আসেননি, বরং সেবা করতে এবং অনেকের জীবনের পরিবর্তে নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দিতে এসেছেন।”
৪৬ পরে তারা যিরীহোতে এলেন। কিন্তু, তিনি এবং তাঁর শিষ্যেরা এবং অনেক লোক যখন যিরীহো থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন বর্তীময় (তীময়ের ছেলে) নামে একজন অন্ধ ভিক্ষুক পথের পাশে বসে ছিল।
৪৭ সে যখন শুনতে পেল তিনি নাসরতীয় যিশু, তখন চিৎকার করে বলতে লাগল: “হে যিশু, দায়ূদসন্তান, আমার প্রতি করুণা করুন!”
৪৮ এতে অনেকে তাকে ধমক দিতে লাগল, তাকে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল: “হে দায়ূদসন্তান, আমার প্রতি করুণা করুন!”
৪৯ তখন যিশু থেমে তাদের বললেন: “ওকে আমার কাছে ডেকে আনো।” তাই, তারা সেই অন্ধ ব্যক্তিকে ডেকে বলল: “সাহস করো! ওঠো, উনি তোমাকে ডাকছেন।”
৫০ তখন সে তার চাদর ফেলে লাফ দিয়ে উঠে যিশুর কাছে গেল।
৫১ যিশু তাকে জিজ্ঞেস করলেন: “তুমি কী চাও, আমি তোমার জন্য কী করব?” সেই অন্ধ ব্যক্তি তাঁকে বলল: “গুরু,* আমি যেন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাই।”
৫২ যিশু তাকে বললেন: “যাও। তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করেছে।” সে সঙ্গেসঙ্গে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল এবং সেই পথ ধরে তাঁর পিছন পিছন যেতে লাগল।
পাদটীকাগুলো
^ আক্ষ., “জোয়ালে আবদ্ধ।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ আক্ষ., “অনন্তজীবনের উত্তরাধিকারী হতে।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ আক্ষ., “সন্তানেরা।” এটা স্নেহ প্রকাশের এক অভিব্যক্তি।
^ বা সম্ভবত, “পরস্পরকে।”
^ বা “যুগে।” শব্দকোষ দেখুন।
^ অর্থাৎ সেই ১২ জন প্রেরিত।
^ যিশু নিজের সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন। শব্দকোষ দেখুন।
^ আক্ষ., “কিন্তু তিন দিন পর।”
^ আক্ষ., “রব্বুনি।” যোহন ২০:১৬ পদ দেখুন।