যিহোশূয়ের পুস্তক ৮:১-৩৫

 এরপর, যিহোবা যিহোশূয়কে বললেন: “তুমি ভয় পেয়ো না কিংবা আতঙ্কিতও হোয়ো না। তুমি তোমার সমস্ত সৈন্য নিয়ে যাও আর অয় নগরের উপর আক্রমণ করো। দেখো, আমি অয়ের রাজা, তার লোক, তার নগর এবং তার সমস্ত এলাকা তোমার হাতে সমর্পণ করেছি। ২  তুমি অয় এবং সেটার রাজাকে ধ্বংস করে দেবে, ঠিক যেভাবে তুমি যিরীহো এবং সেটার রাজাকে ধ্বংস করে দিয়েছিলে। কিন্তু, তোমরা সেখান থেকে লুট করা জিনিস ও সেইসঙ্গে পশুপাল নিজেদের জন্য নিয়ে নেবে। অয়ের উপর আক্রমণ করার জন্য তোমার সৈন্যেরা যেন নগরের পিছন দিকে ওত পেতে থাকে।” ৩  তখন যিহোশূয় এবং তার সমস্ত সৈন্য অয়ের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিল। যিহোশূয় ৩০,০০০ জন বীরযোদ্ধাকে বেছে নিলেন এবং রাতের বেলায় তাদের পাঠিয়ে দিলেন। ৪  তিনি তাদের আজ্ঞা দিলেন: “তোমরা নগরের পিছন দিকে ওত পেতে বসে থাকবে। তোমরা নগর থেকে বেশি দূরে যাবে না আর প্রত্যেকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। ৫  আমি আমার সঙ্গে থাকা লোকদের নিয়ে সামনের দিক থেকে নগরের দিকে এগোব। নগরের লোকেরা যখন আগের বারের মতোই আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসবে, তখন আমরা পিছনের দিকে ঘুরে পালাতে শুরু করব। ৬  তারা এই ভেবে আমাদের পিছু ধাওয়া করবে যে, আমরা আগের বারের মতোই তাদের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত দৌড়াতে থাকব, যতক্ষণ না আমরা তাদের নগর থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে যাই। ৭  তখন তোমরা যারা ওত পেতে বসে থাকবে, তোমরা উঠে নগর দখল করে নেবে। তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের হাতে তাদের সমর্পণ করবেন। ৮  নগর দখল করামাত্রই তোমরা নগরে আগুন লাগিয়ে দেবে। যিহোবা যেমনটা বলেছেন, তোমরা ঠিক তেমনটাই করবে। এটাই আমার আদেশ।” ৯  তারপর, যিহোশূয় তাদের সেই জায়গায় পাঠালেন, যেখানে তাদের ওত পেতে বসে থাকতে হবে। তারা অয় নগরের পশ্চিম দিকে অর্থাৎ অয় ও বৈথেলের মাঝখানে ওত পেতে বসল আর এদিকে যিহোশূয় সারারাত সৈন্যদের সঙ্গে থাকলেন। ১০  যিহোশূয় সকাল সকাল উঠলেন আর তিনি তার সৈন্যদের একত্রিত করলেন। তারপর, যিহোশূয় এবং ইজরায়েলেয়ের প্রাচীনেরা তাদের নেতৃত্ব দিয়ে অয় পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। ১১  যিহোশূয়ের সঙ্গে যত সৈন্য ছিল, তাদের পুরো দল নগরের দিকে গেল আর তারা নগরের উত্তর দিকে শিবির স্থাপন করল। তাদের এবং অয় নগরের মাঝে কেবল একটা উপত্যকা ছিল। ১২  ইতিমধ্যেই যিহোশূয় ৫,০০০ জন পুরুষকে ওত পেতে বসে থাকার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তারা অয় নগরের পশ্চিম দিকে অর্থাৎ অয় ও বৈথেলের মাঝখানে ওত পেতে বসে ছিল। ১৩  এভাবে সৈন্যদের এক বড়ো দলকে নগরের উত্তর দিকে মোতায়েন করা হল আর ওত পেতে থাকা সৈন্যেরা নগরের পিছনের দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে রইল। আর যিহোশূয় সেই রাতে উপত্যকার* মাঝখানে গেলেন। ১৪  যখন অয়ের রাজা ইজরায়েলীয় সৈন্যদের দেখলেন, তখন তিনি সকাল সকাল তার লোকদের নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেরিয়ে পড়লেন আর তারা সেই জায়গায় এল, যেটার সামনের দিকে প্রান্তর রয়েছে। কিন্তু, অয়ের রাজা জানতেন না যে, ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা নগরের পিছন দিকে ওত পেতে বসে রয়েছে। ১৫  যখন অয়ের লোকেরা আক্রমণ করল, তখন যিহোশূয় এবং তার সৈন্যেরা এমনভাবে পালাতে শুরু করল, যেন তারা হেরে গিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রান্তরে যাওয়ার পথ ধরে পালাতে লাগল। ১৬  তাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য অয়ের সমস্ত লোককে ডাকা হল। তারা যিহোশূয় এবং তার সৈন্যদের পিছু ধাওয়া করতে করতে নগর থেকে অনেক দূর চলে গেল। ১৭  অয় ও বৈথেলে এক জন পুরুষও রইল না, সবাই ইজরায়েলীয়দের পিছু ধাওয়া করতে চলে গেল। তারা নগর অসুরক্ষিত অবস্থায় রেখেই চলে গেল। ১৮  তখন যিহোবা যিহোশূয়কে বললেন: “তোমার কাছে যে-বর্শা রয়েছে, সেটাকে অয়ের দিকে বাড়াও। আমি অয়কে তোমার হাতে সমর্পণ করব।” তখন যিহোশূয় হাত উঠিয়ে সেই বর্শাটা নগরের দিকে বাড়ালেন। ১৯  তিনি হাত বাড়ানোর সঙ্গেসঙ্গে ওত পেতে থাকা সৈন্যেরা উঠে দাঁড়াল আর তারা দৌড়ে নগরে প্রবেশ করে সেটা দখল করে নিল। তারা সঙ্গেসঙ্গে নগরে আগুন লাগিয়ে দিল। ২০  যখন অয়ের লোকেরা পিছনে ঘুরল, তখন তারা দেখল, তাদের নগর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে আর সেই ধোঁয়া আকাশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। তখন তারা আর কোনো দিকে পালাতে পারল না। যে-ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা প্রান্তরের দিকে পালাচ্ছিল, তারা ঘুরে তাদের আক্রমণ করল। ২১  এভাবে যিহোশূয় এবং তার সঙ্গে থাকা সৈন্যেরা যখন দেখলেন, ওত পেতে বসে থাকা সৈন্যেরা নগর দখল করে নিয়েছে আর নগর থেকে ধোঁয়া উঠছে, তখন তারা ঘুরে অয়ের লোকদের আক্রমণ করল। ২২  তাদের মারার জন্য অন্য সৈন্যেরাও নগর থেকে বেরিয়ে এল। এভাবে অয়ের লোকেরা দু-দিক থেকেই আটকা পড়ে গেল। কয়েক জন ইজরায়েলীয় সৈন্য এপাশে ছিল আর কয়েক জন ওপাশে ছিল। তারা অয়ের সমস্ত লোককে মেরে ফেলল, কাউকে জীবিত রাখল না কিংবা কাউকে পালাতেও দিল না। ২৩  কিন্তু, তারা অয়ের রাজাকে জীবিত অবস্থায় ধরে যিহোশূয়ের কাছে নিয়ে এল। ২৪  ইজরায়েলীয়েরা অয়ের সমস্ত লোককে, যারা প্রান্তরে তাদের পিছু ধাওয়া করেছিল, তাদের সবাইকে তলোয়ার দিয়ে মেরে ফেলল, এক জনকেও জীবিত রাখল না। এরপর, তারা সবাই নগরের দিকে ঘুরল। তারা নগরে ঢুকে সেখানে যত লোক ছিল, সবাইকে তলোয়ার দিয়ে মেরে ফেলল। ২৫  সেই দিন অয়ের যত জন পুরুষ ও মহিলা মারা গেল, তাদের সংখ্যা ১২,০০০ জন। ২৬  যিহোশূয় ততক্ষণ পর্যন্ত তার বর্শা বাড়িয়ে রাখলেন, যতক্ষণ না অয়ের সমস্ত লোককে বিনষ্ট করা হল। ২৭  ইজরায়েলীয়েরা লুট করা সমস্ত জিনিস এবং সমস্ত পশুপাল নিজেদের জন্য নিয়ে নিল, ঠিক যেমনটা যিহোবা যিহোশূয়কে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২৮  যিহোশূয় অয় নগরকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিলেন আর সেই নগর চিরকালের জন্য ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল। আজ পর্যন্ত সেটা এই অবস্থাতেই রয়েছে। ২৯  তিনি অয়ের রাজাকে হত্যা করে দণ্ডে* ঝুলিয়ে দিলেন আর বিকেল পর্যন্ত তাকে সেখানেই রেখে দিলেন। সূর্যাস্তের ঠিক আগেই যিহোশূয় আদেশ দিলেন, যেন তার মৃতদেহ দণ্ড থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তারা মৃতদেহ নগরের দরজার সামনে ফেলে দিল আর সেটার উপর পাথরের একটা বড়ো স্তূপ বানিয়ে ফেলল, যেটা আজও সেখানে রয়েছে। ৩০  এরপর, যিহোশূয় ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবার জন্য এবল পর্বতে একটা বেদি তৈরি করলেন, ৩১  ঠিক যেমনটা যিহোবার দাস মোশি ইজরায়েলীয়দের আজ্ঞা দিয়েছিলেন আর মোশির ব্যবস্থার পুস্তকেও লেখা ছিল: “তুমি এমন পাথর দিয়ে একটা বেদি তৈরি করবে, যেগুলোর উপর লোহার যন্ত্রপাতি চালানো হয়নি।” সেই বেদির উপর ইজরায়েলীয়েরা যিহোবার জন্য হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করল। ৩২  এরপর, যিহোশূয় সেখানে পাথরের উপর ব্যবস্থার কথাগুলো লিখলেন, যে-ব্যবস্থা মোশি ইজরায়েলীয়দের সামনে লিখেছিলেন। ৩৩  সমস্ত ইজরায়েলীয়, তাদের প্রাচীনেরা, আধিকারিকেরা ও বিচারকেরা দু-দলে বিভক্ত হয়ে লেবীয় যাজকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াল, যারা যিহোবার চুক্তির সিন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই দলগুলোতে জন্মগত ইজরায়েলীয়ের পাশাপাশি বিদেশিরাও ছিল। একটা দল গরিষীম পর্বতের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল আর আরেকটা দল এবল পর্বতের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, (ঠিক যেমনটা যিহোবার দাস মোশি আজ্ঞা দিয়েছিলেন) যাতে তারা ইজরায়েলের লোকদের আশীর্বাদ করতে পারে। ৩৪  এরপর, ব্যবস্থার পুস্তকে যে-সমস্ত আশীর্বাদ ও অভিশাপ সম্বন্ধে বলা হয়েছিল, যিহোশূয় সমস্তই পড়ে শোনালেন। ৩৫  যিহোশূয় সেই সমস্ত কথা ইজরায়েলের পুরো মণ্ডলীর সামনে পড়ে শোনালেন, ঠিক যেমনটা মোশি তাকে আজ্ঞা দিয়েছিলেন। তিনি কোনো কথাই বাদ দিলেন না। ইজরায়েলীয়দের সেই মণ্ডলীর মধ্যে মহিলা, বাচ্চা এবং তাদের মাঝে বসবাসকারী বিদেশিরাও ছিল।

পাদটীকাগুলো

বা “নীচু সমভূমির।”
বা “গাছে।”