লূক লিখিত সুসমাচার ১০:১-৪২
১০ পরে প্রভু আরও ৭০* জনকে নিযুক্ত করলেন এবং তাঁর আগে তাদের দু-জন দু-জন করে সেইসমস্ত নগরে ও জায়গায় পাঠালেন, যেখানে তাঁর নিজের যাওয়ার কথা ছিল।
২ তখন তিনি তাদের বললেন: “সত্যিই, শস্য প্রচুর, কিন্তু মজুরের সংখ্যা অল্প। অতএব, শস্যখেতের প্রভুর কাছে বিনতি করো, যেন তিনি নিজ শস্যখেতে আরও মজুর পাঠান।
৩ যাও! দেখো! আমি যে তোমাদের পাঠাচ্ছি, তা নেকড়ের দলের মধ্যে যেমন মেষ, ঠিক তেমনই।
৪ তোমরা টাকার থলি, খাবারের থলি কিংবা জুতো নিয়ো না এবং পথে কাউকে শুভেচ্ছা জানিয়ো না।*
৫ আর যখন তোমাদের কোনো বাড়িতে গ্রহণ করা হয়, তখন প্রথমে বোলো: ‘এই বাড়ির উপর শান্তি আসুক।’
৬ আর সেখানে যদি কোনো শান্তিপ্রিয় ব্যক্তি* থাকে, তা হলে তোমাদের শান্তি তার উপর থাকবে। কিন্তু, যদি সেইরকম কেউ না থাকে, তা হলে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরে আসবে।
৭ আর যেখানে শান্তিপ্রিয় ব্যক্তি থাকে, তোমরা সেই বাড়িতেই থেকো এবং তারা তোমাদের যা দেয়, সেটাই ভোজন ও পান কোরো, কারণ যে-ব্যক্তি কাজ করে, সে বেতন পাওয়ার যোগ্য। তোমরা থাকার জন্য বার বার বাড়ি পরিবর্তন কোরো না।
৮ “আর কোনো নগরে প্রবেশ করার পর সেখানকার লোকেরা যদি তোমাদের গ্রহণ করে, তা হলে তোমাদের সামনে যা রাখা হবে, তা-ই ভোজন কোরো
৯ এবং তোমরা সেখানকার অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ কোরো এবং সেখানকার লোকদের বোলো: ‘ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে গিয়েছে।’
১০ কিন্তু, কোনো নগরে প্রবেশ করার পর সেখানকার লোকেরা যদি তোমাদের গ্রহণ না করে, তা হলে সেই নগরের রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে এই কথা বোলো:
১১ ‘আমরা এমনকী আমাদের পায়ে লেগে থাকা তোমাদের নগরের ধুলোও ঝেড়ে ফেলছি।* কিন্তু জেনে রাখ, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গিয়েছে।’
১২ আমি তোমাদের বলছি, সেই দিন সদোমের অবস্থা সেই নগরের অবস্থার চেয়ে আরও সহনীয় হবে।
১৩ “কোরাসীন, ধিক তোমাকে! বৈৎসৈদা, ধিক তোমাকে! তোমাদের মধ্যে যে-সমস্ত অলৌকিক কাজ করা হয়েছে, সেগুলো যদি সোর ও সীদোন নগরে করা হতো, তা হলে তারা অনেক আগেই চট পরে এবং ছাইয়ের উপর বসে অনুতপ্ত হতো।
১৪ তাই, বিচারের সময় সোর ও সীদোন নগরের অবস্থা, তোমাদের অবস্থার চেয়ে আরও সহনীয় হবে।
১৫ আর হে কফরনাহূম, তোমাকে কি স্বর্গ পর্যন্ত ওঠানো হবে? তোমাকে কবর* পর্যন্ত নামানো হবে!
১৬ “যে-কেউ তোমাদের কথা শোনে, সে আমার কথাও শোনে। আর যে-কেউ তোমাদের প্রত্যাখ্যান করে, সে আমাকেও প্রত্যাখ্যান করে। আর যে-কেউ আমাকে প্রত্যাখ্যান করে, সে তাঁকেও প্রত্যাখ্যান করে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।”
১৭ পরে সেই ৭০ জন আনন্দের সঙ্গে ফিরে এসে বলল: “প্রভু, আপনার নামে এমনকী মন্দ স্বর্গদূতেরাও আমাদের বশীভূত হয়।”
১৮ তখন তিনি তাদের বললেন: “আমি শয়তানকে ইতিমধ্যেই বিদ্যুতের মতো স্বর্গ থেকে পড়ে যেতে দেখলাম।
১৯ দেখো! আমি তোমাদের সাপ ও কাঁকড়াবিছে পদদলিত করার এবং শত্রুদের সমস্ত শক্তির উপর ক্ষমতা দিলাম আর কোনো কিছুই তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
২০ তবে, মন্দ স্বর্গদূতেরা তোমাদের বশীভূত হয় বলে তোমরা আনন্দ কোরো না, বরং তোমাদের নাম স্বর্গে লেখা হয়েছে বলে আনন্দ করো।”
২১ সেই মুহূর্তেই তিনি পবিত্র শক্তিতে উল্লসিত হলেন এবং বললেন: “হে পিতা, স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু, আমি সকলের সামনে তোমার প্রশংসা করছি, কারণ তুমি এইসমস্ত বিষয় বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান লোকদের কাছ থেকে সযত্নে গোপন রেখে ছোটো ছেলে-মেয়েদের কাছে প্রকাশ করেছ। হ্যাঁ পিতা, তুমি এই উপায়টাই অনুমোদন করেছ।
২২ আমার পিতা সব কিছুই আমার হাতে তুলে দিয়েছেন এবং পুত্র কে, তা পিতা ছাড়া কেউই জানে না, আর পিতা কে, তা পুত্র ছাড়া কেউই জানে না, তবে পুত্র তাঁর সম্বন্ধে যাকে জানাতে ইচ্ছুক, কেবল সে-ই জানতে পারে।”
২৩ পরে তিনি শিষ্যদের দিকে ফিরে তাদের একান্তে বললেন: “সুখী সেই লোকেরা, যাদের চোখ, তোমরা যা দেখছ, তা দেখতে পায়।
২৪ কারণ আমি তোমাদের বলছি, অনেক ভাববাদী ও রাজা, তোমরা যা দেখছ, তা দেখতে চেয়েও দেখতে পাননি আর তোমরা যা শুনছ, তা শুনতে চেয়েও শুনতে পাননি।”
২৫ আর দেখো! একজন ব্যবস্থাবেত্তা উঠে দাঁড়িয়ে যিশুকে পরীক্ষা করার জন্য বলল: “হে গুরু, অনন্তজীবন পেতে* চাইলে, আমাকে কী করতে হবে?”
২৬ তিনি তাকে বললেন: “ব্যবস্থায় কী লেখা রয়েছে? তা পড়ে তুমি কী বুঝতে পেরেছ?”
২৭ উত্তরে সে বলল: “‘তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত শক্তি এবং তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে* ভালোবাসবে’ এবং ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসবে।’”
২৮ যিশু তাকে বললেন: “তুমি সঠিক উত্তরই দিয়েছ; সেই অনুযায়ী কাজ করে চলো, তা হলেই জীবন পাবে।”
২৯ কিন্তু, নিজেকে ধার্মিক দেখানোর জন্য সেই ব্যক্তি যিশুকে বলল: “আমার প্রতিবেশী কে?”
৩০ উত্তরে যিশু বললেন: “একজন ব্যক্তি জেরুসালেম থেকে যিরীহোর দিকে নেমে যাচ্ছিল, এমন সময় দস্যুদের কবলে পড়ল। তারা তার কাপড় খুলে নিল, তাকে মারধর করল। এরপর তাকে আধমরা অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেল।
৩১ ঘটনাক্রমে, একজন যাজক সেই পথ দিয়ে নেমে যাচ্ছিল, কিন্তু তাকে দেখে সে রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে চলে গেল।
৩২ একইভাবে, একজন লেবীয় সেই জায়গায় এসে তাকে দেখে রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে চলে গেল।
৩৩ কিন্তু, একজন শমরীয় সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সেই জায়গায় এল এবং তাকে দেখে তার গভীর সমবেদনা হল।
৩৪ তখন সে তার কাছে এল এবং তেল ও দ্রাক্ষারস* ঢেলে তার ক্ষতস্থান বেঁধে দিল। এরপর তাকে নিজের পশুর উপর চাপিয়ে এক পান্থশালায় নিয়ে গিয়ে তার সেবাযত্ন করল।
৩৫ পরের দিন সে দুটো দিনার* বের করে সেই পান্থশালার মালিককে দিয়ে বলল: ‘এই ব্যক্তির যত্ন নিয়ো আর তোমার অতিরিক্ত যা খরচ হবে, তা আমি যখন ফিরে আসব, তখন মিটিয়ে দেব।’
৩৬ তোমার কী মনে হয়, এই তিন জনের মধ্যে কে দস্যুদের কবলে পড়া সেই ব্যক্তির প্রতিবেশী হয়ে উঠল?”
৩৭ সে বলল: “যে তার প্রতি করুণা দেখিয়েছিল।” তখন যিশু তাকে বললেন: “যাও, তুমিও তা-ই করো।”
৩৮ পরে তারা যাওয়ার সময় একটা গ্রামে প্রবেশ করলেন। সেখানে মার্থা নামে একজন মহিলা তাঁকে তার বাড়িতে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করলেন।
৩৯ মরিয়ম নামে তার এক বোন ছিলেন। তিনি প্রভুর পায়ের কাছে বসে তাঁর কথা শুনছিলেন।
৪০ অন্যদিকে, মার্থা তাঁর জন্য বিভিন্ন আয়োজনের ব্যবস্থা করায় ব্যস্ত ছিলেন। তাই, তিনি যিশুর কাছে এসে তাঁকে বললেন: “প্রভু, আপনি কি দেখছেন না, আমার বোন সমস্ত কাজের ভার আমার উপর ফেলে দিয়েছে? ওকে বলুন, যেন ও এসে আমাকে সাহায্য করে।”
৪১ তখন প্রভু তাকে বললেন: “মার্থা, মার্থা, তুমি অনেক বিষয়ে উদ্বিগ্ন ও ব্যতিব্যস্ত হচ্ছ।
৪২ কিন্তু, অল্প কয়েকটা বিষয় বা কেবল একটা বিষয় প্রয়োজন। মরিয়ম ভালো* বিষয়টাই বেছে নিয়েছে আর সেটা তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে না।”
পাদটীকাগুলো
^ কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে “৭২” রয়েছে।
^ এর সঙ্গে হয়তো এক দীর্ঘ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যুক্ত ছিল, যেটার অন্তর্ভুক্ত চুম্বন করা, আলিঙ্গন করা এবং দীর্ঘসময় ধরে কথাবার্তা বলা।
^ আক্ষ., “কোনো শান্তির সন্তান।”
^ গ্রিক, হেডিস। শব্দকোষ দেখুন।
^ আক্ষ., “অনন্তজীবনের উত্তরাধিকারী হতে।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “ওয়াইন।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “সর্বোত্তম।”